Tuesday, July 25, 2017

হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরি

  • Share The Gag







  • হাঁস মুরগির খাদ্য তৈরি








    বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস-মুরগি পালন শুরু হয়েছে। বর্তমানে হাঁস-মুরগির খামার (পোল্ট্রি ফিড) বেশ লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। আবার হাঁস-মুরগির খাবার তৈরি করে এসব খামারে সরবরাহ করাও বেশ লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। আমাদের দেশে পোলট্রি ফার্মের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মুরগির রোগবালাই এবং সুষম খাদ্যের অভাব। বাজারে বিক্রির জন্য চালের খুদ, গমের ভূষি, চালের কুড়া, খৈল ইত্যাদি মিশিয়ে হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরি করা হয়ে থাকে।





    বাজার সম্ভাবনা 

    বাজারে বর্তমানে বেশ কয়েক ধরণের পোলট্রি ফিড তৈরি অবস্থায় পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে যাদের উৎপাদনসামগ্রী মান বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের পণ্যের মান নির্ধারিত মানের অনেক নীচে। দেখা যায়, খাদ্য উৎপাদনের সময় যে মান থাকে ব্যবহারের সময় পর্যন্ত সে মান আর অক্ষুণ্ন থাকে না। ফলে ওই সব খাবার খেয়ে মুরগির স্বাস্থ্যহানী ঘটে। অনেক ছোট ছোট হাঁস-মুরগির খামারী খাদ্য তৈরিকে ঝামেলা মনে করেন। তারা বাজার থেকে তৈরি খাদ্যদ্রব্য কিনে থাকেন। এ ধরণের খামারীর সংখ্যা কম নয়। সেদিক বিবেচনা করলে পোলট্রি ফিড (মুরগির খাদ্য) তৈরি একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। আবার খামারীদের সাথে যোগাযোগ করে খামারে গিয়ে এসব খাদ্য সরবরাহ অথবা বাড়িতেও বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। 



    মূলধন 

    আনুমানিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার স্থায়ী উপকরণ এবং ১৮০০-২৩০০ টাকার কাঁচামাল কিনে হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যবসা শুরু করা যায়। হাঁস-মুরগি ব্যবসা শুরু করতে যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তাহলে স্থানীয় ঋণদানকারী ব্যাংক(সোনালী ব্যাংকজনতা ব্যাংক , রূপালী ব্যাংকঅগ্রণী ব্যাংকবাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক)বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশাগ্রামীণ ব্যাংকব্রাকপ্রশিকা) থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে।



    প্রশিক্ষণ

    পোলট্রি ফিড তৈরির জন্য আলাদা কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবে স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ে যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে সেখান থেকে হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যাপারে ধারণা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকেও ধারণা নিয়ে কাজ শুরু যেতে পারে।  



    প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 

    • স্থায়ী যন্ত্রপাতি 


















































    উপকরণ   পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা) প্রাপ্তিস্থান 
    বড় পাত্র১টি২০০-২৫০তৈজসপত্রের দোকান
     টিন৫/৬টি৩০০-৩২০তৈজসপত্রের দোকান
    দাঁড়িপাল্লা১ সেট২৫০-৩০০হার্ডওয়ারের দোকান
    চট বা পলিথিনের বস্তা৭/৮টি৮০-১০০হার্ডওয়ারের দোকান
    কাঠের চামচ (বড়)১টি২০-২৫কাঠের পণ্য বিক্রির দোকান
    খাদ্য উপাদান

    শুকানোর জন্য চট (বড়)
    ১টি৩০-৩৫হার্ডওয়ারের দোকান
    মোট=৮৮০-১০৩০ টাকা


    তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

    • কাঁচামাল 
























































    উপকরণ  পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা) প্রাপ্তিস্থান 
    গম/ভূট্টা ভঙ্গা/চালের খুদ৪০ কেজি(৪০X ১৫-১৮)=৬০০-৭২০মুদি দোকান
    গমের ভূষি৫ কেজি(৫X ১০-১৫)=৫০-৭৫মুদি দোকান
    চালের কুড়া২৫ কেজি(২৫X ১০-১৫)=২৫০-৩৭৫মুদি দোকান
    তিলের খৈল১২ কেজি(১২X ২০-২২)=২৪০-২৬৪মুদি দোকান
    শুটকি মাছের গুড়া১০ কেজি(১০X ৫৫-৬০)=৬৫৫০-৬০০মুদি দোকান
    ঝিনুকের গুড়া৭.৫ কেজি(৭.৫X ২০-২৫)=১৫০-১৮৭-৫০মুদি দোকান
    লবণ০.৫ কেজি(০.৫X ১৫-১৭)=৭.৫-৮.৫মুদি দোকান
    মোট=১৮৪৮-২৩০৫ টাকা


    তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯। 



    খাদ্য তৈরির নিয়ম 

    1. উপরের তালিকা অনুযায়ী খাদ্য উপাদানগুলো মেপে নিতে হবে।

    2. উপাদানগুলো রোদে দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।

    3. উপাদানগুলো গুঁড়া করে নিতে হবে। এগুলো গমভাঙ্গা মেশিনে গুঁড়া করা যায়। আবার ঢেঁকিতেও গুঁড়া করা যায় তবে এতে খুব বেশি মিহি হবে না, আবার সময়ও বেশি লাগবে।

    4. উপাদানগুলো চালুনীতে চেলে নিতে হবে।

    5. মাপটি সঠিক হবার জন্য প্রত্যেকটি গুড়া আলাদা আলাদা মেপে নিতে হবে।

    6. এরপর একটি বড় পাত্রে সবগুলো খাদ্য উপাদান একত্রে ঢালতে হবে। কাঠের হাতা দিয়ে এগুলো ভালোভাবে মেশাতে হবে।



    আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 

    • খরচ 
















    যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ১০০-১৫০ টাকা
    কাঁচামালের মূল্য১৮৪৮-২৩৫০ টাকা
                                    মোট= ১৯৪৮-২৫০০ টাকা


    তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

    • আয় 








    ১ কেজি খাদ্য বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা

    ১০০ কেজি বিক্রি হয় ৪০০০-৪৮০০ টাকা


    তথ্যসূত্র : চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

    • লাভ 











    ১০০ কেজি খাদ্য বিক্রিতে আয় ৩০০০-৩৫০০ টাকা

    ১০০ কেজি খাদ্য তৈরিতে খরচ ১৯৪৮-২৫০০ টাকা
    লাভ=১০৫২-১০০০ টাকা 

    অর্থাৎ লাভ হয় ১০০০-১০৫২ টাকা। তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে।





    চীনার উৎপাদন প্রযুক্তি

  • Share The Gag
  • চীনার উৎপাদন প্রযুক্তি

    মাটি

    পানি জমে না এমন বেলে দোআঁশ মাটি চীনা চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

    বপনের সময়

    মধ্য-কার্তিক থেকে পৌষ মাস (নভেম্বর থেকে মধ্য-জানুয়ারি)।

    বীজের হার

    চীনা বীজ ছিটিয়ে এবং সারিতে উভয় পদ্ধতিতেই বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ১৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সারিতে বীজ বুনলে ২ সারির মাঝে দূরতব হবে ২০-৩০ সেমি। সারিতে চারা গজানোর পর ৬-৮ সেমি দূরতব একটি করে চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।

    সারের পরিমাণ

    সাধারণত অনুর্বর জমিতে চীনার চাষ করা হলেও সার প্রয়োগ করে ফলন বাড়নো যায়। চীনা চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি নিমণরূপ হারে সার প্রয়োক করা যায়।




















    সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
    ইউরিয়া৮০-১০০ কেজি
    টিএসপি৬৫-৭৫ কেজি
    এমপি৩০-৪০ কেজি


    সার প্রয়োগ পদ্ধতি

    সেচবিহীন চাষে সম্পূর্ণ সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

    পানি সেচ

    মাটিতে রসের অভাব হলে ১-২টি হালকা সেচ দেওয়া যেতে পারে।

    সংগ্রহ

    শীষ খড়ের রং ধারণ করলে তখন বুঝতে হবে ফসল কাটার সময় হয়েছে।

    গবাদিপশুর গলাফুলা রোগ ও প্রতিকার

  • Share The Gag
  • গবাদিপশুর গলাফুলা রোগ ও প্রতিকার





    গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। বর্ষাকালে গলাফুলা রোগ বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে বর্ষার শুরুতে এবং বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।
    চিত্র-১ গলাফুলা রোগে আক্রান্ত পশুর মুখমন্ডলসহ গলা ফুলে উঠেছে

    এপিডেমিওলজি ও রোগজননতত্ত্ব 
    গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা মূলত গরু ও মহিষের রোগ হলেও শুকর, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, বাইসন, উট, হাতী এমনকি বানরেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ বছরের যে কোনো সময় হতে পারে তবে বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। বাহক পশুর টনসিল ও ন্যাজো-ফ্যারিনজিয়াল মিউকোসায় এ রোগের জীবাণু থাকে। অনুকূল পরিবেশে রক্তে এ রোগের জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে septicemia করে। এই বৃদ্বিপ্রাপ্ত জীবাণু মরে গিয়ে এন্ডোটক্সিন নিঃসৃত হয় যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রক্তের ক্যাপিলারিস নষ্ট করে; ফলে এডিমা হয়। এছাড়া এন্ডোটক্সিন একদিকে কোষ কলা বিনষ্ট করে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্যদিকে টিস্যু বিনষ্টের ফলে টিস্যুর প্রোটিন ভেঙ্গে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে, এডিমার সৃষ্টি হয়। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ফুলে যায় ও রক্তে জীবাণুর উপস্থিতির (septicemia) কারণে পশুর দ্রুত মৃতু্য হয়।

    লক্ষণ
    এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুই ভাবে হতে পারে। অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর (১০৬-১০৭০ ফা) হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃতু্য ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিসতৃত হয়।
    গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয় যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়। মারা যাবার সাথে সাথে পেট খুব ফুলে উঠে এবং নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পোস্টমর্টেম করলে পেরিকার্ডিয়াল স্যাক (pericardial sac) এ রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ দেখা যায়, যা থোরাসিক (thoracic) এবং এবডোমিনাল ক্যাভিটি (abdominal cavity) তে বিসতৃত হতে পারে। ফ্যারিনজিয়াল এবং সার্ভাইক্যাল লিম্ফনোডে বিন্দু আকৃতির (petechial) রক্তক্ষরণ পরিলক্ষিত হয়।

    অর্থনৈতিক গুরুত্ব 
    গলাফুলা রোগের যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে বিশেষত, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু দেশে। এশিয়াতে ৩০% গবাদিপশু এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। ভারত দুগ্ধ উৎপাদনে এশিয়াতে সর্বোচ্চ যেখানে ৫০% দুধ আসে মহিষ থেকে, যারা এ রোগের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ভারতে গত চার দশক ধরে গলাফুলা রোগে মৃত্যু হার গবাদিপশুর মৃত্যুহারের ৪৬-৫৫%। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতে গবাদিপশুর ৫টি মহামারীতে আক্রান্ত গবাদিপশুর ৫৮.৭% মারা যায়। এই ৫টি মহামারী হল ক্ষুরারোগ, রিন্ডারপেষ্ট, বাদলা, এনথ্রাক্স এবং গলাফুলা। শ্রীলংকায় ১৯৭০ এর দশকে পরিচালিত একটি অপঃরাব সারভ্যাইল্যান্স স্টাডিতে দেখা গেছে গলাফুলা আক্রান্ত স্থানসমূহে বছরে প্রায় ১৫% মহিষ এবং ৮% গরু গলাফুলার কারণে মারা যায়। পাকিস্তানে একটি রির্পোটে দেখা গেছে সেখানে গবাদিপশুর মোট মৃত্যুর ৩৪.৪% মারা যায় গলাফুলা রোগে। মায়ানমারে পশু রোগ নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দকৃত মোট বাজেটের ৫০ ভাগ ব্যয় হয় গলাফুলা রোগ দমনে। গলাফুলা রোগে শুধু গবাদিপশুর মৃত্যুই ঘটে না, সাথে সাথে বেশ কিছু অপ্রত্যক্ষ ক্ষতিও হয়। যেমন -
    উৎপাদন হ্রাসঃ মাংস, দুধ, জোয়াল টানা, হালচাষের বিকল্প উপায়ের জন্য মোট ব্যয় ইত্যাদি। পশুর প্রজনন ক্ষমতা বিঘি্নত হওয়া, চিকিংসা খরচ ইত্যাদি।

    প্রতিরোধ
    এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
    • রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
    • মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
    • হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
    • টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত এল.আর. আই কতৃর্ক প্রস্তুতকৃত টিকার নাম গলাফুলা টিকা। লোকাল স্ট্রেইন দ্বারা প্রস্তুতকৃত এই অয়েল এডজুভেন্ট টিকা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক (৬ মাস বয়সের উপরে) গবাদিপশুকে ২ মিলি মাত্রায় ও ছাগল ভেড়াকে ১ মিলি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। এ রোগের প্রাদুর্ভাব আছে এরূপ এলাকায় ৬ মাস বা তদুধর্ব বয়সী বাছুরে প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর অর্ধেক মাত্রায় টিকা দিতে হয়। এলাম অধঃপাতিত (Alum precipitated) টিকা মাংসে প্রদান করা হয়। যেহেতু দুই ধরনের টিকাই মাঠপর্যায়ে ব্যবহার হয় তাই বিষয়টির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ অয়েল এডজুভেন্ট টিকা তেল থেকে প্রস্তুতকৃত বিধায় এই টিকা ভুলক্রমে মাংসে প্রদান করলে মাংসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসের ক্ষতি হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টিকা প্রদানের ২-৩ সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ১ বৎসর কাল পর্যন্ত বজায় থাকে। এই টিকা মৃত জীবাণুর দ্বারা প্রস্তুত বিধায় এই টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের কোনো সম্ভাবনা নাই। টিকা প্রয়োগের স্থান ২/৩ দিন পর্যন্ত ফোলা থাকতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনজেকশনের কারণে এই ফোলা স্বাভাবিক এর চেয়ে কয়েকদিন বেশি থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এনাফাইলেকটিক শক দেখা দিতে পারে। কোনো এলাকায় বা খামারে টিকা প্রদানের পূর্বে অল্প কয়েকটি গবাদিপশুকে টিকা প্রদানের পর ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা শ্রেয়। যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তবে উক্ত বোতলের টিকা পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। অয়েল এডজুভেন্ট টিকা বেশ ঘন হওয়ায় এই টিকা প্রদানে মোটা বারের নিডল ব্যবহার করা সুবিধাজনক।

    রোগ নির্ণয় 
    হঠাৎ মৃত্যু হয় এ ধরনের রোগ যেমন বজ্রপাত, সাপে কাটা, বাদলা রোগ, রিন্ডারপেস্ট, এনথ্রাক্স ইত্যাদি থেকে গলাফোলা রোগকে আলাদা করতে হবে। সেরোলজিক্যাল টেস্ট যেমন Indirect hemagglutination test এ উচ্চ টাইটার লেভেল (১:১৬০ বা তার বেশি) পাওয়া গেলে এ রোগ সমন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।

    চিকিৎসা
    আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় সালফোনামাইড গ্রুপ যেমন সালফাডিমিডিন (৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫-৩০ মিলি হিসেবে প্রত্যহ একবার করে তিনদিন শিরা বা ত্বকের নিচে), ট্রাইমিথোপ্রিম-সালফামেথাক্সাসোল কম্বিনেশন (৪৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩-৫ মিলি), অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন ও ক্লোরামফেনিকল জাতীয় ঔষধ অধিক কার্যকর।

    Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide জাতীয় ইনজেকশন গভীর মাংসে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। Sulphadimidin ঔষধ শীরায় প্রয়োগ করে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এ চিকিত্সাটা বেশি ব্যবহূত হয়। Oxytetracycline/Streptophen ইনজেকশন গভীর মাংসে প্রয়োগ করে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়। টিকার ব্যবহার মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি: বাংলাদেশের মহাখালীর খজও -এ টিকা পাওয়া যায়- ১. অয়েল এ্যাডজুভেন্ট টিকা: গরু/মহিষ- ২ মি.লি চামড়ার নিচে দিতে হয়। ছাগল/ভেড়া- ১ মি.লি চামড়ার নিচে দিতে হয়। (অয়েল এ্যাডজুভেন্ট টিকা ঘন হওয়ায় মোটা বোরের নিডল ব্যবহার করতে হবে)।

    প্রতিরোধ 
    ভ্যাকসিনই এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায়। মূলত তিন ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো হল প্লেইন ব্যাকটেরিন, এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং অয়েল এডজুভেন্ট ব্যাকটেরিন। এর মধ্যে ৬ মাস বিরতিতে এলাম অধ:পাতিত ব্যাকটেরিন এবং ৯ থেকে ১২ মাস অন্তর অয়েল এডজুভেন্ট ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভালো ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খামারে বাছুরকে ৩ থেকে ৬ মাস বয়সে প্রথম, ৩ মাস পরে বুস্টার এবং এরপর বছরে একবার টিকা দিতে হয়। উন্মুক্ত খামারে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাৎসরিক টিকার কোর্স শুরু করতে হয়।

    Monday, July 24, 2017

    কবুতর পালনের আধুনিক কলাকৌশল

  • Share The Gag
  • কবুতর পালনের আধুনিক কলাকৌশল



    গৃহপালিত বা পোষা পাখিদের মধ্যে কবুতর অন্যতম। সুপ্রাচীনকাল থেকে সুস্বাদু মাংস, সংবাদ প্রেরণ ও শখের জন্য কবুতর পালন করা হচ্ছে। ইদানিং অনেক লোক কবুতর পালনকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করেছেন।

    কবুতর পালনের গুরুত্ব ঃ কবুতর অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত প্রাণী এবং সহজে পোষ মানে। আমাদের দেশের জলবায়ু ও বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত কবুতর পালনের উপযোগী। কবুতর পালনের গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে তুলে ধরা হলো-


    1. এক জোড়া কবুতর ১২ মাসে ১৩ জোড়া পর্যন্ত বাচ্চা দেয়

    2.  কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও বলকারক বলে সদ্য রোগমুক্ত ও প্রসব পরবর্তী ব্যক্তির জন্য উপকারী

    3. কোন মহৎ কাজের শুরুতে ‘শান্তির প্রতিক’ কবুতর ছেড়ে দেয়া হয়

    4. প্রজনন, শরীরবৃত্তিয় ও অন্যান্য অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা কর্মে কবুতর ব্যবহার করা হয়

    5. স্বল্পখরচ উৎকৃষ্ট মানের মাংস ও আয়ের উৎসরূপে কবুতর পালন লাভজনক উদ্যোগ; কবুতর পালন কার্যক্রম ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে

    6. বেকার যুবক এবং দুস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থানের উপায়

    7. কবুতরের রোগবালাই কম ক্স এরা পোকা মাকড় ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ক্স কবুতর পালন আনন্দদায়ক।



    কবুতরের জাত ঃ বাংলাদেশে কবুতরের প্রায় ২০টি বিভিন্ন জাত রয়েছে। উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে- গিরিবাজ, রোলার লোটন, জালালি, গোলা ও সিরাজি। বিদেশি জাতগুলো হলো- কিং, ফ্যানটেল (ময়ূরপঙ্খি), জাকোবিন, মুকী, টিপলার, ফ্রিলব্যাক ও গ্যালাতী রোলার। উল্লেখ্য যে, কবুতর পালনে প্রাপ্যতা অনুযায়ী যেকোন জাত ব্যবহার করা যায়। সপ্তাহকাল একত্রে রাখলে এদের মধ্যে ভাব ও মিলন হয় এবং একত্রে জোড় বাঁধে। একটি স্ত্রী কবুতর প্রতিবার দু‘টি করে ডিম দেয়। কবুতরের ডিম ফুটে ছানা বের হতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। কবুতর সাধারণত ১৬-২০ বছর বেঁচে থাকে।

    কবুতরের বাসস্থান ঃ মুক্ত জীবন-যাপনকারী আপোষা কবুতর পুরনো দালানকোঠা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, দরগাহ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাঁক ফোকরে বা সিলিং- এ বাসা করে। পোষা কবুতরের জন্য ঘরের বারান্দায় বা কার্নিশে টিন বা কাঠের বাক্স অথবা মাটির হাঁড়ি বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা যায়। ৮-১০ জোড়া কবুতর পালনের জন্য বারান্দার কোনায়, বহু স্তরবিশিষ্ট মাটির খোপ তৈরি করা যায়।

    কবুতরের বাসস্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় ঃ


    •  উঁচু, সমতল ও শুস্ক জায়গা

    • খোঁপ ঘরের উঁচু স্থানে স্থাপন করতে হবে। যাতে শিয়াল, কুকুর, বেজি, ইঁদুর, ইত্যাদির হাত থেকে কবুতরকে নিরাপদ রাখা যায়

    • ঘর/খোঁপ সহজে পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করার সুবিধা সম্পন্ন স্থানে স্থাপন করতে হবে

    • ঘরে যাতে পর্যান্ত সূর্যালোক পবেশ ও বায়ু চলাচল করার সুযোগ পায়

    • একজোড়া কবুতরের জন্য খোঁপের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা হবে যথাক্রমে ৪৫, ৩০ ও ৩০ সে.মি. (১৮, ১২, ও ১২ ইঞ্চি)।



    কবুতরের খাদ্য ঃ কবুতরের সুষম খাবারে শর্করা, চর্বি, আমিষ, খনিজ ও বিভিন্ন ভিটামিন উপাদান থাকা প্রয়োজন। এরূপ মিশ্রিত সুষম খাদ্যে ১৫-১৬ % ক্রুড প্রোটিন থাকবে। প্রতি কেজি খাদ্যে বিপাকীয় শক্তি ২৫০০-২৬০০ ক্যালোরি থাকা বাঞ্চনীয়। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। সাধারণত একটি কবুতর দৈনিক তার দেহের ওজনের দশ ভাগের একভাগ পরিমান খাবার খায়। এ হিসাবে বিভিন্ন বয়সে কতবুতর দৈনিক ২০-৯০ গ্রাম খাবার খায়।
    কবুতর সাধারণত ধান, গম, মশারি, খেসারি, মটর, ভূট্টা, সরিষা, বিভিন্ন কলাই ইত্যাদি দানা শস্য খেয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে কবুতর ছাড়ার আগে প্রতিদিন গম, কলাই ও সরিষার মিশ্রণের খাবার তৈরি করে দৈনিক ২০ গ্রাম হারে খাওয়ালে উৎপাদন ভালো হয়।
    কবুতর ছানার দ্রুতবৃদ্ধি, হাড় শক্ত ও পুষ্টি প্রাপ্তির জন্য এবং পূর্ণবয়স্ক কবুতরের ও ডিমের খোসাশক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের খোসা, চূন, চুনাপাথর, শক্ত কাঠ কয়লা চূর্ণ, হাড়ের গুঁড়া, লবণ এসব একত্রে মিশিয়ে গ্রিট মিকচার তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিদিন কিছু কাঁচা শাকসবজি কবুতরকে খেতে দিতে হবে।

    সারণি ঃ কবুতরের জন্য বিভিন্ন দানাদার খাদ্য মিশ্রণ ঃ
    ক্রমিক নং ।খাদ্য উপাদান । মিশ্রণের শতকরা হার (%)
    ০১.               ভূট্টা ভাঙ্গা              ৩৫ গ্রাম
    ০২.              গম ভাঙ্গা                ২০ গ্রাম
    ০৩.              সরিষা দানা             ১৫ গ্রাম
    ০৪.               ছোলা ভাঙ্গা            ২০ গ্রাম
    ০৫.               সয়াবিন মিল          ০৫ গ্রাম
    ০৬.               চালের কূঁড়া           ০৪.৫ গ্রাম
    ০৭.                লবণ                       ০.৫ গ্রাম
    মোট =                    ১০০.০০ গ্রাম

    কবুতরের রোগ ব্যবস্থাপনা ঃ আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ রোগই খাবার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত। স্বাস্থ্যসম্মত খামার ব্যবস্থাপনার মৌলিক বিষয়গুলো হচ্ছে-


    •  সঠিকভাবে সেড তৈরি করতে হবে ক্স কবুতর উঠানোর পূর্বে সব যন্ত্রপাতি জীবানুমুক্ত করতে হবে

    • রোগমুক্ত খামার থেকে সুস্থ সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে ক্স জীবানুমুক্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে

    • খামারে অযাচিত মানুষের যাতায়ত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, শেড ও খোঁপ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে

    • অসুস্থ কবুতর তড়িৎ আলাদা করে ফেলতে হবে।



    কবুতরের কয়েকটি রোগ ও তার প্রতিকার ঃ


































    ক্র: নং রোগের নামরোগের লক্ষণরোগের প্রতিকার
    ০১

     
     বসন্তপালকহীন স্থানে ফোস্কা দেখা যায়। চোখের পাতা ও চোখ ফুলে যায়। খাওয়ার অসুবিধা হয়। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। না খেয়ে অবশেষে কবুতর মারা যায়। এ রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত স্থান ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অথবা পটাশ দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। Renamycin Powder ১ গ্রাম সামান্য গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে ২০-২৫ টি কবুতরকে খাওয়ানো যায়। Renamycin oinment আক্রান্ত স্থানে লাগলে ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায় ৪ সপ্তাহ বয়সে পিজিয়ন পক্স ভ্যাকসিন বুকের বা পায়ের পালক তুলে ছিদ্রযুক্ত সূচের সাহায্যে এ টিকা দিতে হয়।
    ২. কলেরাসবুজ বা হলুদ ডায়রিয়া দেখা দেয়, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, শ্বাসকষ্ট, অরুচি, পানি পিপাসা বৃদ্ধি পায়। ট্যারামাইসিন ক্যাপসুল, কসুমিন প্লাস ক্যাপসুলের ভেতরের ঔষধ ৮ ভাগ করে দিনে ৩ বার পর পর ২-৩ দিন খাওয়াতে হবে। রেনাকুইন বা সুলটিক্স যে কোন একটি মুখে ব্যবহার করতে হবে।
    ৩.রক্ত আমাশয় বা ককসি ডিওসিসরক্ত মিশ্রিত মল, ক্ষুদামন্দা, পালক ফ্যাকাসে দেখায়, পালক ঝুলে পড়ে।  ইএসবি-৩ অথবা এমবাজিন ১ লিটার পানিতে ২-৫ গ্রাম মিশিয়ে পর পর ৩ দিন খাওয়াতে হবে।
    ৪.রানীক্ষেত/ নিউক্যাসলসবুজ ডায়রিয়া বা টুথ পিকের মতো পায়খানা, হা করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। পাখা ও পায়ে প্যারালাইসিস দেখা দেয়। মাথা ঘোরাসহ মাথায় কাঁপনি দেখা দেয়।  সিপ্রোফ্লক্স/ সিপ্রো-১০/ রেনাফক্স ইত্যাদির যেকোন একটি ব্যবহার করতে হবে। রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন কবুতরের রানের মাংসে ১ মিলি করে প্রয়োগ করতে হবে প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর।

    জীবাণু সার

  • Share The Gag
  • জীবাণু সার 

    জীবাণু সার সাধারণত উপকারী অণুজীব দিয়ে প্রস্তুত করা হয় যা বীজের উপর, শিকড় অথবা মাটিতে প্রয়োগ করলে তাদের জৈবিক কার্যকলাপ দ্বারা পুষ্টির প্রাপ্যতা বাড়ায়।

    তারা মাটিতে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটায়  এবং মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

     

    জীবাণু সারের উপকারিতা :

    ১. মাটি সমৃদ্ধিকরণ করতে সাহায্য করে।

    ২. বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে।

    ৩. মাটি বৈশিষ্ট্য উন্নত করে এবং মাটির উর্বরতা ধরে রাখে।

    ৪. উর্বরতা স্থায়ীকরণের উপযুক্ত জীবাণু প্রতিরোধক হিসাবে বা জৈব আবর্জনার পচন ঘটিয়ে বা হরমোনের সাহায্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে।

    ৫. দীর্ঘদিন মাটির উর্বরতা বজায় থাকে।

    ৬. এরা পরিবেশের বন্ধু সাথে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করেনা।

    ৭. পুষ্টি উপাদেয় দ্রবনীয়তা বা শোষণের জন্য তা গ্রহণ যোগ্যতা বাড়ে ও সহজলভ্য হয়।

    ৮. কম দামে পাওয়া যায় ফলে চাষের খরচও কমে।

    ৯. অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের যোগান হ্রাসে সাহায্য করে।

     

    জীবাণু সারের প্রকারভেদ 

    ১. নাইট্রোজেনের জন্য 


    • শিম্বগোত্রীয় ফসলের জন্য রাইজোবিয়াম।

    • অশিম্বগোত্রীয় ফসলের জন্য আজোসপিরিল্লাম এবং আজোতোব্যাক্টর।

    • আখের জন্য শুধুমাত্র এসিটোব্যাক্টর।

    • নীচু জমির ধানের জন্য নীল সবুজ শ্যাওলা এবং অ্যাজোলা।

    • ঝাউ এবং আলনাস গাছের জন্য ফ্র্যাংকিয়া।



    রাইজোবিয়াম 

    রাইজোবিয়াম মাটির বসবাসকারী একটি ব্যাকটেরিয়া। এরা বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে।

    তারা শিম্বগোত্রীয় এবং অশিম্বগোত্রীয় মিথোজীবী সংস্থা গঠন করে যেমন, পারসপোনিয়া।

    শিকড়ের শাখাপ্রশাখা দিয়ে মূল শিকড়ের মধ্যে রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। তারা শিকড় থেকে একপ্রকার উদ্দীপক রস নিঃসৃত করতে কর্মক্ষম।

    এই রঞ্জক পদার্থ গুলি ব্যাকটেরিয়ায় অক্সিজেন সরবরাহ করে নাইট্রোজেনে পরিণত হয় এবং গুটি তৈরী করে।

    এই গুটির ভেতর রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে ও নাইট্রোজেনকে নাইট্রোজেনাস আবদ্ধ গুটিতে পরিণত করে।

    ব্যাকটেরিয়া বা গাছ কেউই আলাদা ভাবে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারেনা।

    এই গুটি তৈরীকারী ব্যাকটেরিয়া দুইটি জাতের - যেমন রাইজোবিয়াম ও ব্রাডিরাইজোবিয়াম এবং দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রাইজোবিয়াকে রাইজোবিয়াম বলে।

     

    টেবিল : বিভিন্ন ফসলের জন্য উপযুক্ত রাইজোবিয়াম স্পিসিস 




































    রাইজোবিয়াম স্পিসিসশস্য
    আর. লীগুমিনোসেরামমটর (পাইসাম), খেসারী, ভিসিয়া, মুসুর (লেন্স)
    আর. ট্রিফলিবারসীম (ট্রিফলিয়াম)
    আর. ফাসিওলিকিডনী বিন (ফাঁসিওলাস)
    আর. লুপিনিলুপিনাস, অর্নিথোপাস্
    আর. জেপোনিকামসয়াবিন (গ্লাইসিন)
    আর মেলিলোটিমেলিলোটাস, লুসার্ন (মেডিকাগো), মেথি গাছ (ট্রাইগোনেল্লা)
    রাইজোবিয়াম স্পিসিসবরবটি, ক্লাস্টার বিন, মুগ বিন, কলাই, অড়হর,

    চীনাবাদাম, মথবিন, ধৈঞ্চা, তিসি, গ্লাইরিসিডিয়া,

    বাবলা ইত্যাদি



    রাইজোবিয়াম টিকাকরণ পদ্ধতি : 


    রাইজোবিয়ামের টিকা করণের দ্বারা বীজ শোধন করা সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি। সংযুক্তির জন্য একপ্রকার আঠা ব্যবহার করা হয়।

    এক হেক্টর জমিতে শিম্ব গোত্রীয় ফসলের  বীজ চাষের জন্য ৯০০ গ্রাম এই ব্যাক্টেরিয়া মিশ্রিত মাটি প্রয়োজন হয়।

    ১০ শতাংশ গুড়ের সংমিশ্রন সাধারণত বীজের উপর আঠা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। প্রথমে এই গুড়ের মিশ্রণ বীজের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

    ফলে বীজের উপর একটি পাতলা স্তরের সৃষ্টি হয়। স্তরের গুড় মিশ্রিত ফাইবারের ঘনত্ব যথোপযুক্ত হলে ব্যাকটেরিয়ার টিকাকরণের জন্য বীজের উপর তা ছিটিয়ে দিতে হবে এবং

    ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। পরে টিকাকৃত বীজগুলি একটি পলিথিনের উপর বিছিয়ে একরাত্রির জন্য ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে ।

     

    অ্যাজোটোব্যক্টর :

    অ্যাজোটোব্যক্টর ব্যাকটেরিয়া পরভোজী ও মুক্তভাবে বসবাসকারী। এটি ক্ষারীয় কিংবা নিরপেক্ষ মাটিতে থাকে।

    ভারতবর্ষের সমস্ত আবাদি জমিতে অ্যাজোটোব্যক্টর কোরাক্কমের উপস্থিতি সাধারণ ভাবে লক্ষণীয়। পরিবেশের মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ করা ছাড়াও

    এটি বিভিন্ন ধরণের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন যেমন অক্সিন, জিব্বারেলিন এবং বিভিন্ন ভিটামিন প্রভৃতির সমন্বয় সাধন করে।

    অ্যাজোটোব্যক্টর ব্যাকটেরিয়া কিছু প্রজাতির মধ্যে কিছু কিছু ছত্রাকের উপর ছত্রাকনাশক কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়।

    ধান, ভুট্টা, তুলা, আখ, যব, সবজি ও বিভিন্ন বাগিচা ফসলের উপর অ্যাজোটোব্যক্টরের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

    অনাবাদি জমিতে এই ব্যাকটেরিয়াটির উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু মাটিতে জৈব সারের উপস্থিতি ব্যাক্টেরিয়াটির গুণন ক্ষমতা ও

    নাইট্রোজেন অবদ্ধিকরণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

    মাঠে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে পেঁয়াজ, বেগুন, টমেটো অথবা বাঁধাকপি প্রভৃতি শস্যের বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে চাষ করার সময় যদি

    এই ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা বীজ অথবা চারা গাছের টিকাকরণ করানো যায় তাহলে সুফল পাওয়া যায়।

    অ্যাজোটোব্যক্টরের টিকাকরণ দ্বারা সাধারণ জমিতে নাইট্রোজেন সারের পরিমান ১০-২০ শতাংশ হ্রাস করানো যায়।

     

    অ্যাজোসপাইরিলাম :

    এরা মুক্ত অমিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া (গুটি তৈরী করতে পারে না কিন্তু শিকড়ে বসবাসকারী জীবাণুর সাথে একটি সংযুক্তি করে।

    অ্যাজোসপাইরিলাম প্রজাতির বিশেষত যেমন ভুট্টা, জোয়ার, আখ ইত্যাদি C4 উদ্ভিদ অনেক উদ্ভিদের সাথে একটি সংযুক্তি প্রতিষ্ঠা করে।

    এরা অন্যান্য জীবাণুর সাথে খুব সহজেই সংযুক্ত হতে পারে। উচ্চ প্রজাতির গাছের সাথেও একটা সংযুক্তি স্থাপন গাছের সাথে করতে পারে।

    এটা শিকড় দিয়ে ঢোকে বা শিকড়ে বসবাস করে, কিন্তু কোনো গুটি দেখতে পাওয়া যায়না। এই ব্যাকটেরিয়াটি প্রতি হেক্টরে ২০ থেকে ৪০ কেজি নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।

    এই ব্যাক্টেরিয়াটি গাছের দৈহিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং নিম্নলিখিত প্রজাতিগুলি ২৫-৩০ শতাংশ নাইট্রোজেন সারের সঞ্চয় করে।

     

    অ্যাসিটোব্যক্টর :

    অ্যাসিটোব্যক্টর ডিয়াজোট্রফিকস একটি সদ্য আবিষ্কৃত নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়া যা আখের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।

    আখের পাতা, কুঁড়ি এবং কাণ্ডের নমুনার পরীক্ষার মাধ্যমে এটিকে আলাদা করে দেখা হয়েছে।

    এটি অম্লিক এবং লবণাক্ত এবং সুক্রোজ পছন্দকারী ব্যাকটেরিয়া, যা প্রতি হেক্টরে ২০০ কেজি পর্যন্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ রাখতে পারে।

    জমিতে টিকা দেওয়ার পর আখের ফলন বৃদ্ধি পায়। অ্যাসিটোব্যক্টর প্রয়োগ করার পর অক্সিন এবং এন্টিবায়োটিক জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

     

    নীলাভ সবুজ শৈবাল :

    নীলাভ সবুজ শৈবালের কয়েকটি প্রজাতি বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।

    অ্যানাবিনা ও নষ্টক নামে দুইটি প্রজাতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

    নীলাভ সবুজ শৈবাল প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫-৪৫ কেজি নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।

    নীলাভ সবুজ শৈবালের ভালো বৃদ্ধির জন্য জমিতে ২ থেকে ১০ সেমি জল সবসময় প্রয়োজন।

    ২৫-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতে এটি বৃদ্ধি পেতে পারে।

    উজ্জ্বল সূর্যালোক বৃদ্ধির হার বাড়ে কিন্তু বৃষ্টিপাত এবং মেঘলা আকাশ বৃদ্ধির হার কমায়।

    মাটির পিএইচ এর মান যদি ৭ থেকে ৮ এর মধ্যে হয় এবং মাটিতে বেশি পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকলে এই শ্যাওলার বৃদ্ধি ভালো হয়।

    ২ মি X ২ মি X ০.২৫ মি আকারের লোহার ট্রে তে নীল সবুজ শৈবালের টিকা মিশ্রিত করা হয়।

    এই ট্রে গুলো পলিথিনের চাদর মোড়া থাকে।

    প্রতিটি ট্রে তে ২০ কেজি মাটি এবং ৪০০ গ্রাম সুপারফসফেট দিয়ে ভরে নিতে হবে।

    ট্রে তে নীল সবুজ শৈবাল টিকা থাকে এবং এটা জলে ডোবানো থাকে।

    ট্রে তে সাধারণত ৫ - ১০ সেমি জল সব সময় জমিয়ে রাখতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে, একটি পুরু শ্যাওলার গাদ তৈরী হবে।

    এই পর্যায়ে, জল বের করে দিয়ে মাটি শুকিয়ে দিতে হবে।

    শুকনো নীল সবুজ শৈবালগুলি উঠিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে এবং চাষের জমিতে ব্যবহার করা হয়।

    জমিতে ধান রোপনের পর নীল সবুজ শৈবাল টিকা জমিতে প্রয়োগ করা হয়।

    প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি / টিকার প্রয়োজন হয়।

    বেশি পরিমানে নাইট্রোজেন স্থায়ীকরণের জন্য, খামারসার ৩-৪ টন/ হেক্টর এবং সুপারফসফেট ২০০ কেজি / হেক্টর প্রয়োগ করা দরকার।

     

    অ্যাজোলা :

    অ্যাজোলা পরিষ্কার জলের মুক্ত ভাসমান একধরণের ফার্ন। ভারতের প্রচলিত প্রজাতি হলো অ্যাজোলা পিনাটা। অ্যাজোলা ফার্নের পাতার ভাগের মধ্যে অবস্থিত নীল সবুজ শৈবালের আনাবেইনা প্রজাতি নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে।

    অ্যাজোলার একটি পুরু স্তর প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ - ৪০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। নীল - সবুজ শ্যাওলাগুলি কম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারেনা।

    ২০ - ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অ্যাজোলার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। বর্ষাকালের যখন তখন বৃষ্টি ও মেঘাছন্ন আবহাওয়াতে এই শ্যাওলার বৃদ্ধি ভালো হয়।

    অ্যাজোলা চাষের জন্য মাটির পিএইচ ৫.৫ - ৭ হওয়া জরুরি।অ্যাজোলা নার্সারি গাছের ছায়াতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। ৪ মি x ২ মি এর ছোট খন্ডে ৩০-৪০ সেমি উচ্চতার আল দিয়ে চারিধার ঘিরে নার্সারি প্রস্তুত করা হয়।

    প্লট থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া আটকাতে বাঁধ গুলি প্লাস্টিক - পলিথিন দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। প্লটটির মধ্যে জল দ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হয় এবং প্রতি বর্গমিটার ০.১ - ০.৫ কেজি অ্যাজোলা প্রয়োগ করতে হবে।

    পাতা খাওয়া শুককীট এবং অন্যান্য পোকা দমনের জন্য কার্বোফুরণ দানা ১.২ গ্রাম/মিটার২ মাত্রাতে প্রয়োগ করতে হবে।

    অ্যাজোলা সবুজ সার হিসাবে এবং দ্বিতীয় ফসল হিসাবে চাষের জমিতে প্রয়োগ করা হয়।

    রোপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে প্লাবিত জমিতে অ্যাজোলা সবুজ সার হিসাবে ফসল বৃদ্ধির জন্য চাষ করা হয়।

    পরে, জল নিষ্কাশিত করে ভালো ভাবে চাষ দিয়ে অ্যাজোলা মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

    দ্বিতীয় ফসল হিসাবে, চারা রোপনের ১ সপ্তাহ পর প্রতি হেক্টর জমিতে ১০০০ - ৫০০০ কেজি অ্যাজোলা প্রয়োগ করলে ভালো হয়।

    যখন অ্যাজোলার একটি পুরু চাদর তৈরী হবে তখন পা দিয়ে মাড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

    আবার জমিতে অ্যাজোলা দেখা দিলে তা একই ভাবে পা দিয়ে মাড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

    অ্যাজোলার ভালো বৃদ্ধির জন্য জমিতে ৫-১০ সেমি জল দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুপারফসফেট ২৫-৫০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

     

    ফ্রাঙ্কিয়া :

    ফ্রাঙ্কিয়া একধরণের অ্যাকটিনোমাইসিটিস। এরাও বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।

    মিথোজীবি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এরা কয়েকটি অশিম্বগোত্রীয় গাছের শিকড়ে গুটি বা অর্বুদ তৈরী করতে পারে।

    যেমন - ঝাউ বা অ্যালনাস। পতিত জমিতে ঝাউ চাষ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ানো যায়।

    কৃষি বনায়ন পদ্ধতিতে নাইট্রোজেনের অভাব রয়েছে এমন জমিতে ঝাউগাছ লাগানো যথেষ্ট উপকারী।

    ফ্রাঙ্কিয়ার শিকড়ে গুটি তৈরির শুরুতে একটি ছোট ফোলা ভাব দেখা যায় যা শেকড়ের আগায় পরে খাঁজ তৈরী করে এবং থোকা থোকা গুটি আকৃতির সৃষ্টি হয়।

    এই অ্যাকটিনোমাইসেটিসের টিকাকরণের ফলে ঝাউ ও অ্যালনাস গাছের বৃদ্ধি, গুটি তৈরী, গুটির নাইট্রোজেন উৎসেচকের কার্যকারিতা ও গুটির শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

     

    ২. ফসফরাসের জন্য :

    ফসফরাস দ্রবীভূতকারী ছত্রাক : এসপারজিলাস, পেনিসিলিয়াম

    ফসফরাস দ্রবীভূতকারী ব্যাকটেরিয়া : ব্যাসিলাস, সিউডোমোনাস

    ফসফরাস শোষণকারী : ভেসিকুলার আরবাসকুলার মাইকোরাইজা (ভি এ এম)

    বহিঃ মাইকোরাইজা : পিসোলিথাস, রাইজোপোগন

    আন্তঃ মাইকোরাইজা: গ্লোমাস, গিগাসপোরা

     

    ফসফরাস ধারণকারী অণুজীব (পি এস এম) :

    নাইট্রোজেনের পরের প্রাথমিক খাদ্যমৌল হিসাবে ফসফরাস অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ। বাইরের থেকে প্রয়োগ করা ফসফরাসের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গাছের দ্বারা উদ্ধৃত করা যায়।

    বাকি অংশ মাটিতে আবদ্ধ হয়। এই আবদ্ধ ফসফরাস কখনোই সহজলভ্য নয়। এই আবদ্ধ ফসফরাসকে কতগুলি পরভোজী জীবাণু দ্রবীভূত করে এবং জৈব অ্যাসিড ও

    উৎসেচক তৈরী করে ফলে দ্রবণীয় ফসফরাস উদ্ভিদ দ্বারা সহজে গৃহীত হয়। এই ধরণের অণুজীবগুলিকে ফসফরাস দ্ৰবীভূতকারী অণুজীব বলা হয়।

    যেমন ব্যাসিলাস, অ্যাসপারজিলাস, পেনিসিলিয়াম এবং ট্রাইকোডারমা প্রভৃতি। যখন রক ফসফেটের উপর এই অণুবীজ গুলি বিক্রিয়া ঘটায়, তখন দ্রবণীয় ফসফরাস ও

    সাইট্রেটে পরিণত হয়। এই অনুজীবগুলি জৈব আবর্জনায় অবস্থিত জৈব ফসফেট যৌগগুলির ধাতব পরিণতিতে সাহায্য করে।

    কম্পোস্ট তৈরির সময় থার্মোফিলিক ধাপের পর এই সব অণুজীবের ব্যবহার কম্পোস্ট প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

    নিরপেক্ষ ও ক্ষারীয় মাটিতে এই ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার ও অম্লিক মাটিতে ছত্রাকের ব্যবহার করে বাইরে থেকে প্রয়োগ করা ফসফরাসের গ্রহণ ক্ষমতা উন্নতি ঘটানো যায় এবং

    ফসফরাস আবদ্ধিকরণ ও বোধ করা যায়।

     

    ভ্যাসিক্যুলার আরবাসকুলার মাইকোরাইজা :

    ছত্রাক ও গাছের শিকড়ের মধ্যে যে পারস্পরিক সংযুক্তি দেখা যায় তা মাইকোরাইজা নামে পরিচিত। একে যে কোনো একটি বাস্তুতন্ত্রে এই মাইকোরাইজার সংহতিগুলি সমস্ত গাছের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।

    বিভিন্ন প্রকার ডালজাতীয় ও ঘাস জাতীয় পরিবারের গাছের ক্ষেত্রে এবং ভিএএম এর উপনিবেশন অত্যন্ত সমর্থন যোগ্য।

    ভিএএম ফসফরাস, জিঙ্ক এবং সালফারের বদল ঘটাতে সাহায্য করে। এছাড়াও তামা, পটাশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের মাটি থেকে শেকড়ে পরিবহন ঘটায়।

    এরা গাছের শেকড়ে প্রবেশ করে এবং শেকড় ও আন্তঃকোষের সাথে ছত্রাকের একটি বাধ্যতামূলক আন্তঃসংহতি স্থাপিত হয়।

    এরপর একটি থলি তৈরী হয় যেখানে উদ্ভিদ খাদ্য উপাদানগুলি জমা হয় এবং একটি অর্বাসকুলার তৈরী করে সমস্ত পুষ্টি উপাদান গুলি ফানেলের দ্বারা শিকড়ে প্রবেশ করে।

    ভিএএম ছত্রাকের হাইফি গুলি অদ্রবণীয় সহজলভ্য নয় এমন ফসফরাসকে দ্রবীভূত করতে পারেনা, অধিকন্তু এই অদ্রবণীয় ফসফরাসের  নিজেদের প্রয়োজনে আত্তিকরণ ঘটায়।

    এমনকি এই উপাদানগুলির বিভিন্ন ধরণের বদল ঘটিয়ে আশ্রয়দাতার শিকড়ে সরবরাহ করে। ভিএএম ছত্রাক শিকড় দ্বারা গাছের জলশোষণ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটায়।

    দুই ধরণের মাইকোরাইজা দেখা যায় : বহিঃ মাইকোরাইজা ও আন্তঃ মাইকোরাইজা।

    বহিঃ বা আন্তঃ মাইকোরাইজার ক্ষেত্রে ছত্রাকের হাইফিগুলি শিকড়ের এপিডারমিস ও কর্টেস কোষের মধ্যে বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়। উদ্ভিদ এক্ট মাইকোরাইজার  দ্বারা সংক্রামিত হয়।

    এন্ডো বা অন্তঃ মাইকোরাইজার তিনটি উপবিভাগ দেখা যায়। এগুলির মধ্যে ভিএএম কৃষি ক্ষেত্রে সব থেকে প্রচলিত একটি নাম।

    এরা শিকড়ের কর্টেস অঞ্চলে একটি অভ্যন্তরীণ জালক তৈরী করে যা পরে মাটিতে বিস্তার লাভ করে এবং জল ও পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে।

    এই ভিএএম মাইকোরাইজা একবীজপত্রী, বাৎসরিক বা বহুবর্ষজীবি প্রভৃতি গাছের সাথে সংহতি স্থাপন করতে পারে।

    খাদ্যশস্য ও ডালজাতীয় শস্যের পর্যায়ক্রমে খামারজাত সারের প্রয়োগ দ্বারা ভিএএম এর কর্ম ক্ষমতা তরান্বিত করা যায়।

    আবার রাসায়নিক ছত্রাকনাশকের ব্যবহারে ভিএএম এর স্থায়িত্ব হ্রাস করে।

    জৈব সার দ্বারা বীজের টিকাকরণ :

    জৈব সার দ্বারা বীজের টিকাকরণের সাথে সাথে উপযুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন শস্যের মূলেও টিকাকরণ করা যায়। মাটিতেও সরাসরি জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জৈব সারের প্রয়োগ পদ্ধতিগুলি নিম্নে বলা হল -

    বীজের টিকাকরণ :

    এটি অতি প্রচলিত পদ্ধতি। গুড়ের ১০ শতাংশ দ্রবণে জৈব সার মিশিয়ে বীজের টিকাকরণ করা হয়।

    মিশ্রিত কাথ বীজের উপর ছড়িয়ে একটি সিমেন্টের মেঝেতে বিছিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া হয় এবং দেখতে হবে বীজের গায়ে চারিদিকে যেন একটি পাতলা আস্তরণ থাকে।

    এরপর এই বীজগুলি ছায়ায় সারারাত্রি ধরে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত এক হেক্টর জমিতে ডাল শস্য বীজের জন্য ৭৫০ গ্রাম জৈব সারের প্রয়োজন।

    শেকড় ও চারা গাছের টিকা ব্যবস্থাপনা :

    চারা রোপনের পূর্বে, চারা গাছের শেকড় ৩০ মিনিট ধরে বায়োফার্টিলাইজার দ্রবণে ডুবিয়ে তারপরে রোপণ করতে হবে।

    একএকর জমিতে চারা রোপনের জন্য ২ - ২.৫ কেজি বায়োফার্টিলাইজারের প্রয়োজন হয়।

    প্রথমে একটি বালতিতে প্রয়োজন মতো জল নিয়ে বায়োফার্টিলাইজার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

    এরপর চারা গাছের শেকড়গুলি এই মিশ্রিত জলে ডুবিয়ে টিকাকরণ করে নিতে হবে। এরপরেই মূল জমিতে চারা রোপন করতে হবে।

    টমেটো, ধান, পেঁয়াজ এবং বিভিন্ন ধরণের শীতকালীন সবজির (ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি প্রভৃতি) চাষ এই পদ্ধতিতে করলে সুফল পাওয়া যায়।

     

    মাটিতে প্রয়োগ :

    সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো শস্যের নির্দিষ্ট স্থানে জীবাণু সার প্রয়োগের প্রয়োজন হলে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

    সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ফল, আখ এবং অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়।

    ফলের গাছ রোপনের সময় ২০ গ্রাম জীবাণু সার কম্পোস্টের সাথে মিশিয়ে গাছের চারিদিকে রিং বরাবর মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

    গাছের পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি ঘটলে আমরা আরো কিছু পরিমাণ জীবাণু সার গাছের রিং বরাবর প্রয়োগ করতে পারি।

    জীবাণু সার সরাসরি মাটিতে প্রয়োগ করলে পরিমানে ৪ - ২০ গুন বেশি প্রয়োজন হয়।

    জীবাণু সার প্রয়োগের পূর্বে তা ভালোভাবে বিয়োজিত পরিমান মতো খামার সারের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে পুষ্টিসাধন করে নিতে হয়।

    খামার সার জীবাণু সারের বাহক ও খাদ্য হিসাবে কাজ করে।

     

    স্বটিকাকরণ বা কন্দের টিকাকরণ :

    এই পদ্ধতির দ্বারা অ্যাজোটোব্যক্টরের টিকাকরণ সহজে করা যায়। প্রথমে একটি ড্রামে করে ৫০ লিটার জল নিয়ে ৪ - ৫ কেজি জীবাণু সার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

    এক একর জমিতে চারা রোপনের জন্য প্রয়োজনীয় চারা এই মিশ্রিত দ্রবণে ডুবিয়ে নিতে হবে।

    ঠিক এই ভাবে, আলু রোপনের পূর্বে উক্ত মিশ্রণে তা ডুবিয়ে নিয়ে ছায়ায় শুকনো করে জমিতে রোপন করতে হবে।

    ইউরিয়ার বিকল্প জীবাণু সার : সাশ্রয় হবে ১৩০০ কোটি টাকা

  • Share The Gag
  • ইউরিয়ার বিকল্প জীবাণু সার : সাশ্রয় হবে ১৩০০ কোটি টাকা



    কৃষিপণ্যের উধর্বমূল্যের বাজারে আশার আলো দেখাবে জীবাণু সার। ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে এ সার ব্যবহার করলে ইউরিয়ার দরকার হবে না। পাশাপাশি ধানের জমিতে জীবাণু সার ব্যবহার করলে ইউরিয়ার সাশ্রয় হবে শতকরা ২৫ ভাগ। প্রায় ৫০ কেজি ইউরিয়া সারের কাজ করে দেয় মাত্র এক কেজি জীবাণু সার যার উৎপাদন খরচ হয় মাত্র ৭৫ টাকা। বাংলাদেশের ধান ও ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে জীবাণু সার প্রয়োগ নিয়মিত করলে রাষ্ট্রের ইউরিয়া সারের আমদানি সাশ্রয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এমনই আশাবাদ পোষণ করেন কৃষি বিশেজ্ঞরা।

    প্রতি বছর বাংলাদেশে ডাল জাতীয় শস্য চাষে প্রায় ২৮ হাজার মেট্টিকটন এবং ধান চাষে প্রায় ২৩ লাখ মেট্টিকটন ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়। ধান চাষে ব্যবহৃত হলে প্রায় ছয় লাখ ২৮ হাজার মেট্টিকটন ইউরিয়া সাশ্রয় হবে। এ পরিমাণ ইউরিয়ার আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর উল্লেখিত পরিমাণ ইউরিয়া সাশ্রয় করতে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে মাত্র সাড়ে ৬ হাজার মেট্টিকটন জীবাণু সার, যার মূল্য পড়বে ৫০ কোটি টাকা। অথার্ৎ, জীবাণু সার ব্যবহার করলে রাষ্ট্রের প্রতি বছর প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

    জীবাণু সার: যে জীবাণু সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের যোগান দিতে পারে সেটা হল জীবাণু সার। প্রধানত পাঁচ প্রকারের জীবাণু রয়েছে_ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যাকটিনোমাইসিটিস, শেওলা এবং প্রোটোজোয়া। জীবাণু ব্যবহার করে সাধারণত তিন ধরনের জীবাণু সার তৈরি করা যায়। সারগুলো হচ্ছে- নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী জীবাণু সার, ফসফরাস দ্রবীভূতকারী জীবাণু সার এবং কমপোস্ট তৈরিকারী জীবাণু সার।

    জীবাণু সার নিয়ে গবেষণা করছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রায় চার দশকের গবেষণায় বিনার উদ্ভাবন ৭টি ডাল জাতীয় শস্যের জীবাণু সার। এসব জীবাণু সার ২০০১ সালে সরকারের অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে এ সার কৃষক পর্যায়ে বিপণন করা হচ্ছে। এছাড়া ধানের জন্য যে জীবাণু সার এ প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবন করেছে তা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চীনাবাদাম ও সয়াবিনের জন্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসুরের জন্য জীবাণু সার উদ্ভাবন করলেও এখন পর্যন-- তা কৃষক পর্যায়ে পৌছায়নি।

    বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর জীবাণু সার বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. এম. এ. সাত্তার জানান, হেক্টর প্রতি মসুরের জন্য ৫০, ছোলার জন্য ৫০, মুগ ডালের জন্য ৩০, মাষকলাইয়ের জন্য ৩০, বরবটির জন্য ৪০ এবং সয়াবিনের জন্য ৬০ থেকে ৭০ কেজি ইউরিয়া লাগে। অপরদিকে একই পরিমাণ জমিতে মসুরের জন্য ১.৫, ছোলার জন্য ২, মুগ ডালের জন্য ১.৫, খেসাড়ির জন্য ২, বরবটির জন্য ১.৬ কেজি জীবাণু সারের প্রয়োজন হয়।

    বাংলাদেশে প্রথম জীবাণু সারের উদ্ভাবক বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোশাররফ হোসেন মিঞা জীবাণু সার বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থ কম এবং তা দিন দিন আরও কমছে। এ অবস্থায়, শুধুমাত্র ইউরিয়ামুখী না হয়ে জীবাণু সারের প্রসারে মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন কৃষি উপকরণে ভর্তুকি কমাতে পারে অন্যদিকে মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।

    জীবাণু সার তৈরিতে আগ্রহীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। সরকারিভাবে জীবাণু সার কারখানা প্রতিষ্ঠা অথবা বে-সরকারিভাবে সার কারখানা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে হবে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের আদলে ডিলারশিপের মাধ্যমে কৃষকের নাগালে জীবাণু সার পৌছে দিতে হবে। দেশে বর্তমানে ডাল জাতীয় শস্যের জীবাণু সারের চাহিদা প্রায় এক হাজার মেট্টিকটন। আগামী বছর ধান ও গমের জীবাণু সার সরকারি অনুমোদন পেলে এর চাহিদা বছরে ২০ হাজার মেট্টিকটন ছাড়িয়ে যাবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কাজে এখনই হাত দেয়া দরকার।

    লেখক: গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
    তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

    ফলন ও উর্বরতা বাড়াতে জীবাণু সার



    বিনা’র মৃত্তিকা বিজ্ঞানীগণ রাইজোরিয়াম জীবাণু ব্যবহার করে উদ্ভাবন করেছেন জীবাণু সার। যা ব্যবহার করলে ডাল এবং তৈল জাতীয় ফসলে ইউরিয়ার ব্যবহার সর্ম্পূণরূপে সাশ্রয় হবে। জীবাণু সার তৈরি হয় জীবাণু বা অণুজীব এবং বাহক পদার্থ সমন্বয়ে। অণুজীব হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ব্যবহৃত হয়ে থাকে জীবাণু সারে। কার্যকারিতা অনুসারে জীবাণু সারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নাইট্রোজেনের বিকল্প জীবাণু সার, ফসফরাসের বিকল্প জীবাণু সার এবং পচনকারক জীবাণু সার।

    নাইট্রোজেনের বিকল্প জীবাণু সার:
    জীবাণু সারে নাইট্রোজেন সংবদ্ধনকারী জীবাণু হিসেব ব্যবহৃত হয়। এ জীবাণু বাতাস থেকে তাদের শরীরে এনজাইমের মাধ্যমে নাইট্রোজেন সংবদ্ধন করে এবং তা ফসলকে দিয়ে থাকে। এ জীবাণু দু’ প্রকারের- সিম্বায়োটিক এবং নন-সিম্বায়োটিক। সিম্বায়োটিক হল যে সকল জীবাণু বাতাস থেকে তাদের শরীরে নাইট্রোজন সংবদ্ধন করে ও গাছকে সরাসরি যোগান দেয় এবং সাথে সাথে গাছের শরীর থেকে অন্যান্য আবশ্যকীয় উপাদান গ্রহণ করে থাকে, যেমন রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া শিম জাতীয় গাছের শিকড়ে নডিউলের মাধ্যমে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংবদ্ধন করে গাছকে দেয়। নন-সিম্বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া মুক্তভাবে মাটিতে বসবাস করে এবং বাতাসের নাইট্রোজেন নিজ শরীরে সংবদ্ধন করে মাটিতে সরবরাহ করে। গাছ মাটি থেকে এ নাইট্রোজেন নিয়ে থাকে। অ্যাজোটোব্যাকটার, এ্যাজোস্পিরিলাম, সিউডোমোনাস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া মুক্তভাবে নাইট্রোজেন সংবদ্ধনকারী জীবাণু।

    ফসফরাস দ্রবীভূতকারী জীবাণু সার:
    মাটিতে বসবাসকারী অনেক জীবাণু আছে যারা বিভিন্ন রকমের এনজাইম ও বিভিন্ন প্রকারের বায়োকেমিক্যাল পদার্থ নিঃসরণ করে যা মাটিতে আবদ্ধ ফসফরাস জাতীয় যৌগকে উদ্ভিদের গ্রহণযোগ্য আকারে পরিণত করে। ফলে উদ্ভিদ তা গ্রহণ করতে পারে। এ সকল জীবাণুকেই বংশবৃদ্ধি করে এ প্রকারের সার তৈরি করা হয়। এ প্রকারের জীবাণু হল- সিউডোমোনাস, অ্যাজোটোব্যাকটার, পেনিসিলিয়াম, এসপারজিলাস ইত্যাদি।

    পচনকারক জীবাণু সার:
    খড়, গোবর, শস্যের অবশিষ্টাংশ, বাড়ির আবর্জনা, শহরের আবর্জনা, কচুরীপানা, আগাছা ইত্যাদি পচানোর জন্য এক ধরনের জীবাণু সার ব্যবহার করা হয়। এ সারই আবর্জনা পচনকারক জীবাণু সার হিসেবে পরিচিত। এ পচনকারক জীবাণু সার খড়কুটা ও বিভিন্ন প্রকার আবর্জনা ইত্যাদি সাথে মিশিয়ে স্তুপ আকারে রেখে দিলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে জীবাণু আবর্জনাকে পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে অথচ জীবাণু ব্যতীত পচতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ মাস।

    জীবাণু সারের উপকারিতা:
    ১) জীবাণু সার বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংবদ্ধন করে আবর্জনা পচনের কাজ সমাধা করে ফলে ফসল উক্ত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে ফলন বৃদ্ধি করে। শিম জাতীয় ফসল যথা- মসুর, ছোলা, মুগ, মাষ, সয়াবিন ইত্যাদি ফসলে জীবাণু সার প্রয়োগ করলে ফলন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
    ২) জীবাণু সারে ব্যবহৃত অনুজীবসমূহ বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ বৃদ্ধিকারী হরমোন নিঃস্মরণ করে যাতে গাছের শিকড় বৃদ্ধি পায় এবং বেশি পরিমাণ খাদ্য আহরণ করে ও পানি পরিশোষণ করে। এতে গাছের উচ্চতা, ডালপালা বৃদ্ধি, ফসলের বৃদ্ধি ঘটায়।
    ৩) বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ায়।
    ৪) ফসলের ক্ষতিকর জীবাণু বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ফলে তাদের সংখ্যা হ্রাস পায় ও রোগবালাই কম হয়ে থাকে ও ফলন বৃদ্ধি পায়।
    ৫) রাসায়নিক সার যথা ইউরিয়া, টিএসপি ইত্যাদির চেয়ে দামে সস্তা।
    ৬) জীবাণু সার পরিবেশ দূষণ ও মানুষের শরীরের কোন ক্ষতি করে না।
    ৭) মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

    জীবাণু সার ব্যবহারে ফলন বৃদ্ধি:
    মসুর, ছোলা, বরবটি, মুগ, মাষ এবং তেল জাতীয় ফসল সয়াবিন, চিনা বাদাম, ধান, সূর্যমুখীর বীজ, গম ফসলে জীবাণু সার ব্যবহার করলে ফলন বৃদ্ধি পায়। যেমন মসুর ১৫-৪০, ছোলা ২০-৪৫, মাষ ২০-৪০, মুগ ১৮-৩৫, বরবটি ২৫-৪৫, চীনা বাদাম ২০-৪০, সয়াবিন ৭৫-২০০, ধান ১৫-২৫, গম ১৫-২৫ শতাংশ।

    জীবাণু সার ব্যবহার পদ্ধতি:
    জীবাণু সার সাধারণত বীজের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। এ সার মাটিতে প্রয়োগ করলে বেশি লাগে। প্রথমে বীজের সাথে কোন আঠালো পদার্থ যথা চিটাগুড় বা ভাতের ঠাণ্ডা মাড় মিশিয়ে বীজের পৃষ্ঠদেশ আঠালো করা হয়। তারপর প্রতি কেজি বীজের জন্য ৪০-৫০ গ্রাম জীবাণু সার বীজের সাথে ভালভাবে মেশাতে হবে যাতে প্রতিটি বীজের গায়ে কালো আবরণ তৈরি হয়; এতে করে বীজে প্রচুর পরিমাণ জীবাণু লেগে আছে বুঝা যাবে এবং নডিউল উৎপাদনে সহায়তা করবে। এ জীবাণু সার মিশ্রিত বীজকে জমিতে সারি করে সামান্য ৩/৪ সে.মি গর্তযুক্ত ট্রেন্সে বপন করে মাটি দ্বারা ট্রেন্স ভরাট করে দিতে হবে। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজ যেন মাটির নিচে যায় তার জন্য মই দিতে হবে। জীবাণু সার মিশ্রিত বীজ বপনের জন্য উত্তম সময় সকাল ও বিকাল। রোপা ধানের জন্য জীবাণু সার পানিতে মিশিয়ে সারি তৈরি করে সারিতে ধানের চারার শিকড় আধা ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে রোপণ করতে হবে। তাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবাণু শিকড়ে আটকে যাবে।

    জীবাণু সার ব্যবহারে সর্তকতা:
    জীবাণু সার সংগ্রহ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। সংগ্রহের সময় সঠিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে নিতে হবে। উৎপাদন ও ব্যবহারের শেষ তারিখ লক্ষ্য করতে হবে। বর্তমানে বিনাতে যে জীবাণু সার উৎপাদিত হচ্ছে তা ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। প্যাকেটের গায়ে ফসলের নাম ভাল করে দেখে নিতে হবে।

    মুরগির জটিল রোগ নির্ণয়ে দেশি পদ্ধতি

  • Share The Gag
  • মুরগির জটিল রোগ নির্ণয়ে দেশি পদ্ধতি


     


    মুরগি পালন লাভজনক হলেও বিভিন্ন প্রকার রোগ এ লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। তাছাড়াও রোগ নিরাময়, রোগ নির্ণয় করতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ঔষধ আনতে হয়। মুরগির রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময় করা সহজ হয়। কিন্তু এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আনা হয় বিভিন্ন কিট, যা অনেক ব্যয়বহুল। এসব দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন মুরগির দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ সালমোনেলোসিস ও মাইকোপস্নাজমসিস নির্ণয়ের দেশি প্রযুক্তির কিট। এগুলো ব্যবহার করে খুব কম সময়ে সহজে ও অতি অল্প খরচে নিভর্ুলভাবে রোগ দুটি নির্ণয় করা সম্ভব।

    সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BUA Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।

    মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নিভর্ুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।

    "BUA Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-antigen kit"এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন ("BAU Path Mg-antigen kit") এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।

    বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।

    বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BUA Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-antigen kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

    Sunday, July 23, 2017

    দেশী ছোট মাছের চাষাবাদ ও সংরক্ষণ

  • Share The Gag
  • দেশী ছোট মাছের চাষাবাদ ও সংরক্ষণ



    যেসব মাছ পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৫-২৫ সে.মিআকারের হয় সাধারণত সেগুলোকে ছোট মাছ বলা হয। ইংরেজিতে ছোট মাছ নামে পরিচিত। প্রাচীনকাল হতে মলাপুঁটিচেলাচান্দাচাপিলামেনিবাইমখলিশাটেংরাফলিপাবদাশিংমাগুর ইত্যাদি ছোট মাছ এ দেশের মানুষের বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। বিভিন্ন প্রজাতির এসব ছোট মাছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসহ খাদ্য ও পুষ্টিমান অনেক বেশি। পরিবেশের পরিবর্তনআবাসস্থালেরর সংকোচন পুকুর জলাশয় সম্পূর্ণ সেচ করে সব মাছ ধরে ফেলা ও মনুষ্যসৃষ্ট নানাবিধ কারণে এসব প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন ও প্রাচুর্য্যতায় ছোট মাছের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে তাই আজ দেশীয় ছোট মাছ সংরক্ষণ ও চাষ সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।



    ছোট মাছের গুরুত্ব





    • ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণ আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বিদ্যমান।




    • অনেক ক্ষেত্রে বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছের পুষ্টিমান বেশি। ছোট মাছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়ামফসফরাসলৌহ ও আয়োডিনের মত খনিজ পদার্থ আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।




    • মলা-পুঁটি মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।




    • গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষায় ছোট মাছ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।




    • প্রাকৃতিক জনজ পরিবেশে এরা বংশ বিস্তার করে। ফলে প্রতি বছর আলাদা করে পোনা মজুদ করতে হয় না।




    • সব ধরণের জলাশয়ে এদের চাষ করা যায় এবং চাষে সময়ও কম লাগে।




    • ছোট মাছ ওজনের অনুপাতে সংখ্যায় বেশি হয় বলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বন্টনের সুবিধা হয়।





    চাষ প্রযুক্ত



    মলাচেলা ও পুঁটির চাষঃ



    এ মাছ চাষের বৈশিষ্ট্য,





    • একক ও মিশ্র উভয় পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।




    • প্রাকৃতিকভাবে বছরে ২-৩ বার প্রজনন করে থাকে।




    • সহজ ব্যবস্থাপনায় চাষ করা যায়।




    • যে কোন ছোট জলাশয়ে চাষ করা যায়।





    পুকুর নির্বাচন





    • জলাশয়টি বন্যামুক্ত হতে হবে।




    • পানির গভীরতা ১-.৫ মিটার হলে ভালো হয়।




    • জলাশায়ে আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।





    প্রস্তুতিপোনা মজুদখাদ্য ও সার প্রয়োগ





    • পুকুরের পাড় মেরামত করে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন ও ৪-৫ কেজি গোবর প্রয়োগ করতে হবে।




    • সার প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে ছোট মাছ ছাড়তে হবে।




    • একক চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৪০০-৫০০টি মলা/ঢেলা/পুঁটি চাষ করা যায়।




    • মাছ ছাড়ার পরদিন হতে মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৫-১০হিসাবে চালের কুঁড়াগমের ভূষি ও সরিষার খৈল সম্পূরক খাবার হিসেবে দেয়া যেতে পারে।




    • প্রাকৃতিক খাবার তৈরির জন্য ৭দিন অন্তর অন্তর শতাংশ প্রতি ৫-৬ কেজি গোবর অথবা ২-৩ কেজি হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।





    রুইজাতীয় মাছের সাথে মলা-পুঁটির মিশ্র চাষ



    পুকুর/মৌসুমী জলাশয় নির্বাচন:





    • দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটির পুকুর ভালো।




    • পুকুর/জলাশয় বন্যামুক্ত এবং মাঝারী আকারের হলে ভালো হয়।




    • পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে এমন পুকুর নির্বাচন করা উচিত।




    • পানির গভিরতা ১-.৫ মিটার হল ভালো।





    পুকুর প্রস্তুতি





    • পাড় মেরামত ও আগাছা পরিস্কার করতে হবে।




    • রাক্ষুসে ও ক্ষতিকর প্রাণী অপসারণ করতে হবে।




    • শতাংশে ১ কেজি করে চুন প্রয়োগ করতে হবে।




    • চুন প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর শতাংশ প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার দিতে হবে।





    পোনা মজুদখাদ্য ও সার প্রয়োগ





    • শতাংশ প্রতি ১০-১৫ সে.মিআকারের ৩০-৩২টি রুইজাতীয় পোনা এবং ৫-৬ সে.মিআকারের ৬০টি মলা ও ৬০টি পুঁটি মাছ মজুদ করা যায়।




    • মাছের পোনা মজুদের পরদিন থেকে পোনার দেহের ওজনের শতকরা ৫-১০ ভাগ হারে সম্পূরক খাবার হিসেবে খৈলকুড়াভূষি দেয়া যেতে পারে।




    • গ্রাস কার্পের জন্য কলাপাতাবাধা কপির পাতানেপিয়ার বা অন্যান্য নরম ঘাস দেয়া যেতে পারে।




    • মলা-পুঁটি মাছের জন্য বাড়তি খাবার দরকার নাই।




    • প্রাকৃতিক খাবার জন্মানোর জন্য পোনা ছাড়ার ১০ দিন পর শতাংশ প্রতি ৪-৬ কেজি গোবর১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।





    মাছ আহরণ





    • পোনা মজুদের ২ মাস পর হতে ১৫ দিন পর পর বেড় জাল দিয়ে মলা-পুঁটি মাছ আংশিক আহরণ করতে হবে।




    • ৭৫০-৮০০ গ্রাম থেকে কেজি ওজনের কাতলা ও সিলভার কার্প মাছ আহরণ করে সমসংখ্যক ১০-১২ সে.মিআকারের পোনা পুনরায় মজুদ করতে হবে।




    • বছর শেষে চূড়ান্ত আহরণ করা যেতে পারে।





    পাবদা মাছের চাষ



    পুকুর নির্বাচন





    • এ মাছ চাষের জন্য ৭-৮ মাস পানি থাকে এ রকম ১৫-২০ শতাংশের পুকুর/জলাশয় নির্বাচন করা যায়।




    • পুকুরটি বন্যামুক্ত এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।





    পুকুর প্রস্তুতিপোনা মজুদখাদ্য ও সার প্রয়োগ





    • পুকুরের পাড় মেরামত জলজ আগাছা পরিস্কার করার পর শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।




    • চুন প্রয়োগের ৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ৭-৮ কেজি গোবর প্রয়োগ করতে হবে।




    • শতাংশ প্রতি ৩-৪ গ্রাম ওজনের সুস্থ্য সবল ২০০-২৫০টি পোনা মজুদ করা যাবে।




    • সম্পূরক খাদ্য হিসেবে দেহ ওজনের ৫-১০ ভাগ হারে ২৫-৩০আমিষ সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন ২ বার প্রয়োগ করতে হবে।




    • প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদনের জন্য ১০ দিন অন্তর শতাংশ প্রতি ৪ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।





    মাছ আহরণ ও উৎপাদন





    • -৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে।




    • আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষে শতাংশে ১৫-১৬ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়।





    ধানক্ষেতে ছোট মাছ চাষ



    সাধারণ দুই পদ্ধতিতে ধান ক্ষেতে মাছ করা যায়ঃ



    যুগপৎ পদ্ধতি। পর্যায়ক্রমে পদ্ধতি।



    ধান ও মাছ একই জমিতে একসঙ্গে চাষ করাকে যুগপৎ পদ্ধতি বলে।



    জমি নির্ধারণ





    • এটেল বা দো-আঁশ মাটির জমি সবচেয়ে ভাল।




    • জমি বন্যামুক্ত হতে হবে।




    • জমিতে অন্ততঃ ৩ মাস কমপক্ষে ২০-৩০ সে.মিপানি থাকতে হবে।




    • জমি অপেক্ষাকৃত সমতল হলে ভাল হয়।





    জমি প্রস্তুতি



    জমি ভালভাবে চাষ দেয়ার পর মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে যেন সর্বত্রই গভীরতা সমান থাকে।



    আইল নির্মাণগর্ত ও নালা খনন





    • প্রয়োজনমত পানি ধরে রাখার জন্য ৩০-৪৫ সে.মিউঁচুশক্ত ও প্রশস্থ আইল বাঁধতে হবে।




    • ধানক্ষেতে মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে নালঅ এবং গর্ত বা মিনি পুকুর অবশ্যই থাকতে হবে। জমির অপেক্ষাকৃত ঢালু অংশে শতকরা ৪-৬ ভাগ এলাকায় ০.৭৫-.০ মিটার গভীর করে গর্ত করতে হবে।





    পোনা মজুদ ও খাদ্য সরবরাহ





    • ধানের চারা রোপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা ভালভাবে মাটিতে লেগে গেলে জমিতে ১২-১৫ সে.মিপানি ঢুকিয়ে পোনা ছাড়া যাবে।




    • কমন কার্প/মিরর কার্প এবং থাই-সরপুঁটির সাথে মলার মিশ্রচাষ অথবা মলা-পুঁটি মিশ্রচাষ করা যেতে পারে।




    • মিশ্রচাষে প্রতি শতাংশে মলা ৫০-৬০টিকমন/মিরর কার্প ৬-৮টি এবং থাই সরপুঁটি ১০-১২টি ছাড়া যায়।




    • ধানের সাথে মাছ চাষে বাহির থেকে খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয়না। তবে বেশি উৎপাদন পাওয়ার জন্য মাছের ওজনের শতকরা ২-৩ ভাগ সরিষার খৈল ও চালের কুড়া প্রতিদিন গর্তে বা নালায় প্রয়োগ করতে হবে।





    মাছ আহরণ





    • ধান কাটার পর পানি কমিয়ে ক্ষেত থেকে মাছ ধরতে হবে।




    • প্রতি শতাংশে মলা ০.৫০ কেজি এবং কার্প ২.০ কেজি এবং মলা পুঁটি চাষ করলে প্রতি শতাংশে ০.৬ কেজি মলা-পুঁটি পাওয়া যেতে পারে।





    ছোট মাছ সংরক্ষণ কৌশল



    পুকুর





    • ছোট মাছকে অবাঞ্জিত মাছ হিসেবে গণ্য না করে সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও চাষের আওতায় আনতে হবে। জলজ পরিবেশের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছোট মাছের বংশ বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে এর উৎপাদন বাড়ান।




    • স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ পুকুরে মজুদ ও সংরক্ষণ করা।




    • ছোট মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য পুকুরে নিয়োজিত মাত্রায় কিছু জলজ আগাছা রাখা।




    • জলাশয় বা পুকুর সম্পূর্ণ সেচে সকল মাছ আহরণ না করা।




    • ছোট মাছের প্রজনন মৌসুম (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়সম্পর্কে সংষ্লিষ্ট জনগণকে সচেতন করা এবং সে সময় পুকুর ছোট ফাঁসের জাল টানা থেকে বিরত থাকা।




    • ধানক্ষেতে ছোট প্রজাতির মাছ চাষের ব্যবস্থা করা।





    প্রাকৃতিক জলাশয়ে





    • বিলহাওর ও বাওড়ে অভয়াশ্রম স্থাপন করা।




    • ছোট মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুম বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসএ সময় প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখা।




    • জলাশয়ের পানি সেচে মাছ না ধরা।




    • ছোট মাছের গুরুত্ব ও এর সংরক্ষণ সম্পর্কে জলাশয়ের আশেপাশের জনগণকে সচেতন করা এবং সংরক্ষণ কাজে সম্পৃক্ত করা।




    • মৌসুমী জলাভূমিগুলোর কিছু অংশ খনন করে প্রজননক্ষম মাছ সংরক্ষণ করাযাতে তারা বর্ষা মৌসুমেডিম পাড়তে পারে।



    যশোরের নাভারণে সয়াবিন থেকে দুধ উৎপাদন হচ্ছে

  • Share The Gag
  • যশোরের নাভারণে সয়াবিন থেকে দুধ উৎপাদন হচ্ছে

    সয়াবিন থেকে তেল হয় সবাই জানি, কিন্তু সয়াবিন থেকে যে  দুধ হয় এই ধারণা একেবারেই নতুন। অবিশাস্য হলেও সত্যি যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণ সয়াফুড প্রসেসিং সেন্টারে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সয়াবিন থেকে দুধ তৈরি শুরু হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা জাপান বাংলাদেশ কালচারাল এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিসিইএ) উদ্যোগে এই দুধ তৈরি করা হচ্ছে। এই সংস্থাটির একমাত্র কার্যালয়ই এটি। সয়াদুধ নামে এই দুধের  বাণিজ্যিক উৎপাদন খুব শিগগিরই  শুরু হবে বলে সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স এবং জাপানের কাজাওয়া এডুকেশন ইনস্টিটিউশন অব নিউট্রিশন ও জাপান মিনিস্ট্রিয়াল ফুড সেফটির সূত্র উদ্ধৃত করে জেবিসিইএ জানায়, সয়াদুধে গরুর দুধের চেয়ে আমিষের পরিমাণ ১২ গুণ বেশি। এতে লেসিথিন নামে এক প্রকার উপাদান আছে যা স্মরণ শক্তি বাড়াতে কাজ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আছে ৪৩ দশমিক ২ গ্রাম আমিষ। এই আমিষ আটটি অ্যামানো অ্যাসিড সম্পন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীজ আমিষের সমমানের। এ ছাড়া আছে শরীরে শক্তি উৎপাদনকারী চর্বি, দাঁত ও হাড় গঠন এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধকারী ক্যালসিয়াম, রক্তশূন্যতা, ও শরীরের দুর্বলতা প্রতিরোধকারী লৌহ, রাতকানা ও চক্ষুরোগ প্রতিরোধক ভিটামিন ‘এ’, হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক ভিটামিন ‘বি’। 

    টেক্সাস উইমেনস ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস হাইটন সেন্টারের ডাক্তার জন র‌্যাডেলিফ ইন্টারনেট স্বাস্থ্যবর্তায় বলেছেন, যারা নিরামিষভোগী বা গরুর দুধে যাদের অ্যালার্জি আছে তারা সয়াদুধ খেতে পারেন। এর স্বাদ ভালো। হাড় গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ এই দুধে পাওয়া যায়।

    জেবিসিইএ জানায়, বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষ গরিব হওয়ায় তারা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য কিনে খেতে পারে না। এতে তারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হয়। পাঁচ-সাত বছর বয়সের নিচের ৬৭ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। এ ছাড়াও কিশোর-কিশোরী, গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মা ও গরিব শ্রেণীর মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। গর্ভবতী মায়ের অপুষ্টিজনিত কারণে রুগ্ন দুর্বল ও বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম গ্রহণ করে। মানুষকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে জেবিসিইএ জাপান পোস্টের অর্থায়নে ২০০৩ সালে শার্শা উপজেলার নাভারণে সয়াবিন থেকে দুধ তৈরি শুরু করে।

    সংস্থার চিফ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সনৎ কুমার ভাস্কর জানান, উন্নত প্রযুক্তির অভাবে এতদিন স্থানীয় প্রযুক্তি শিল-পাটায় বেটে দুধ তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু এ পদ্ধতি শ্রমসাধ্য বলে কেউ এ দুধ তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছিল না। ভারত থেকে সংস্থার উদ্যোগে সয়া মিল্ক মেশিন আমদানি করা হয়েছে। এর দাম ছয় লাখ টাকা। এই মেশিনে ঘন্টায় ৩৪ লিটার দুধ উৎপাদন করা হচ্ছে।

    তিনি জানান, ৩৪ লিটার দুধ তৈরিতে সয়াবিন লাগে চার কেজি। প্রতি কেজি সয়াবিনের দাম সর্বোচ্চ ৮০ টাকা হিসেবে চার কেজি সয়াবিনের দাম ৩২০ টাকা। তাদের মেশিনে উৎপাদিত সয়াদুধ নিজেদের দোকান থেকেই ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। যেখানে গরুর দুধের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অবশ্য যশোর শহরের বারান্দীপাড়াস্থ ঢাকা রোডের একটি দোকানে এই সংস্থারই কাচা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা কেজি দরে।

    জেবিসিইএ’র কান্ট্রি ম্যানেজার মনিরুজ্জামান টিটু জানান, মাস খানেকের মধ্যে নতুন সয়াবিন উঠবে। ওই সময়

    থেকে সয়াদুধের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা হবে। গরুর দুধের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম দামের সয়াদুধের প্রতি মানুষের দারুণ আগ্রহ রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাপকহারে মানুষ এ দুধের চাহিদার কথা জানিয়েছেন। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবার আগে দুধ মান সম্পন্ন করার জন্য সংস্থার সাতজন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার হা্‌ই-কিউ সয়াফুড ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম। তিনি সয়া দুধ তৈরি, এর পুষ্টি গুণ ও চাহিদা সম্পর্কে  বলেন, সঠিক ভাবে দুধ তৈরি করে মানুষের কাছে পৌছাতে পারলে দেশের গরিব জনসাধারণ অপুষ্টির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।

    প্রাথমিকভাবে এই সংস্থাটি গবেষনার জন্য দুধ তৈরির কাজ করছে। এ আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুলের বাচ্চাদেরকে বিনামূল্যে সয়াবিন থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন সয়াবিন ডাল থেকে খিচুড়ি, সয়াদুধ, দোনাট, পাপড় ইত্যাদি খাবার পরিবেশন করেছে। শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৫ জন চাষী তাদের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সয়াবিন চাষ করছেন। আর এতে অধিক লাভবান হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সয়াবিন চাষীরা। চাষীদেরকে চাষে ঊদ্বুদ্ধ করতে সয়াবিন বীজ ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহ এবং চাষ প্রণালীর ব্যাপারে সাহায্য করছে সংস্থাটি। আবার তারাই চাষীদের কাছ থেকে মণপ্রতি

    এক হাজার আটশত টাকা করে দর দিয়ে সয়াবিন ক্রয় করছেন।

    গরুর দুধের মতো সয়াদুধ দিয়েও সৌখিন সব ধরণের খাদ্য তৈরি করা যায়। স্থানীয় পদ্ধতিতে এই দুধ তৈরিকরে তা দিয়ে দই বানিয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানী গ্রামের ডা. সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, গরম্নর দুধের দই বানানোর নিয়মেই সয়াদুধ দিয়ে দই বানিয়েছেন। স্বাদে ও বর্ণে কোনো পার্থক্য নেই।

    ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীরামপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক বানিয়েছেন সন্দেশ। তিনি জানান, গরুর দুধের সন্দেশ ও সয়া সন্দেশের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই

    কাঠলিচু বা আঁশফল চাষ

  • Share The Gag
  • ঘাস চাষেই কোটিপতি গফুর শেখ

  • Share The Gag
  • দারিদ্র্যের কাছে পরাজয় না মেনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনেকের কাছেই আদর্শ হয়ে উঠেছেন নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করা আবদুল গফুর শেখ। তার বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুর বাড়াইপাড়া গ্রামে। নেপিয়ার ঘাস চাষ করে এখন তিনি হয়েছেন প্রায় কোটি টাকার মালিক।

    গফুরের পরিবার বলছে, বাবার কাছে থেকে আড়াই বিঘা জমি পেয়েছিলেন তিনি। সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে তার সাত সদস্যের সংসার ঠিকমতো চলত না। এরই মধ্যে ২০০৩ সালে দ্বিতীয় ছেলে ফারুককে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে জমি বিক্রি করে দালালের হাতে টাকা তুলে দেন গফুর। পরে দালাল তার টাকা আত্মসাৎ করে। ছেলের বিদেশ যাওয়া হলো না আর। জমি হারিয়ে অভাবের সংসারে নেমে আসে আরো দুর্বিষহ অবস্থা। প্রতিদিন দিনমজুরি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করতেন গফুর, কিন্তু তাতে তার সংসার চলত না। তাই কখনো কখনো খেয়ে না খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো তাদের।

    ২০০৪ সালের প্রথম দিকে পলাশবাড়ীর শিল্পী হোটেলের মালিক দুলু মিয়ার কাছ থেকে এই নেপিয়ার জাতের ঘাসের বহুমুখী ব্যবহারের কথা শুনে আবদুল গফুর উদ্বুদ্ধ হন এ ঘাস চাষে। এরপর তিনি নেপিয়ার ঘাসের চারা সংগ্রহ করেন। প্রথমে তা নিজের বাড়ির পাঁচ শতক জায়গায় লাগান। একমাস পরপর তিন বছর পর্যন্ত কাটা যায় এই ঘাস। এর আগে পাবলিক সমিতি থেকে ৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ছোট গাভী কেনেন তিনি। গাভীটি একটি বাছুরও দেয়। পরে সেই ঘাস বড় হলে গাভীকে খাওয়ানো শুরু করেন। ফলে গাভীর দুধ বাড়তে থাকে। আবার ঘাসও বিক্রি করে টাকা পান। হাতে বেশ টাকা আসতে শুরু করে তার।

    ধীরে ধীরে ঘাসের জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। তিনি সতের বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। এরমধ্যে আটবিঘা নিজের, নয় বিঘা বন্ধক নেয়া। একবিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিমাসে খরচ বাদে ঘাস বিক্রি করে তার এখন মাসিক আয় ৯০ হাজার টাকা। গফুরের পরিবার আরো জানায়, খরের ঘরের বদলে বর্তমানে ২০ শতক জমিতে এখন ১০৫ হাত লম্বা আধাপাকা ঘর রয়েছে তার। এই ঘরেরই তিনটি কক্ষ, আবার গরুর খামার। বর্তমানে তার খামারে ফ্রিজিয়ান জাতের ১৬টি গাভী আছে। এসব গাভী দৈনিক ১২০ কেজি করে দুধ দিচ্ছে। ঘাসের জমিতে পানি সেচের জন্য দুইটি শ্যালোচালিত মেশিন আছে। এছাড়া ৫০টি হাঁস-মুরগি, পাঁচটি ছাগল রয়েছে তার।

    বাড়িতে বিদ্যুৎ ছাড়াও রয়েছে একটি সৌর বিদ্যুৎ, দু’টি মোটরসাইকেল ও তিনটি ভ্যান। কর্মচারী রয়েছে তিনজন, তাদের প্রতিজনের মাসিক বেতন ৯ হাজার টাকা। তারা প্রতিদিন জমি থেকে ঘাস কেটে পলাশবাড়ী, ঢোলভাঙ্গা, ধাপেরহাট, মাঠেরহাট ও গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।

    আবদুল গফুর বলেন, আমার স্বপ্ন ব্যাপকহারে এই ঘাস চাষ করে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত লাভ করা। যাতে আরো অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ নেপিয়ার ঘাস চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলাতে পারে।

    বাণিজ্যিকভিত্তিতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি চাষের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভূষিত হন আবদুল গফুর। ওই সালের ১৩ই ডিসেম্বর ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে একটি সনদপত্র ও একটি রৌপ্যপদক পুরস্কার হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি।

    গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ বলেন, জেলায় একমাত্র আবদুল গফুরই বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ করছেন। তাকে দেখে এই গ্রামের আরো অনেকেই এই ঘাস চাষ করছেন। এজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে তাকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তার সাফল্য চিত্র ভিডিওতে ধারণ করে বিভিন্ন সেমিনারে প্রদর্শন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।

    নেপিয়ার ঘাসের বীজ পাওয়া যায় কৃষি ষ্টোর - 01971625252

    মরিচ চাষে চরবাসীর ভাগ্য বদল

  • Share The Gag
  • মরিচ আবাদ করে ভাগ্য বদলে গেছে যমুনা চরের অভাবী মানুষগুলোর। ‘মরিচের ব্যাংক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে যমুনার চর। এই সময় যমুনার বুকে জেগে উঠে বিশাল চর। এসব চরে ধানের পাশাপাশি আবাদ হচ্ছে মরিচ। বর্তমানে যমুনার চরে ধুম পড়ে মরিচ আবাদের। চরের অনেক কৃষকের নিজস্ব কোন জমি নেই। জেগে উঠা চরের ফাঁকা জমি কাজে লাগিয়ে মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে চরের অভাবী মানুষেরা।

    এখানে ব্যাপক মরিচ উৎপাদিত হওয়ায় সপ্তাহে তিন দিন বিশাল মরিচের হাট বসছে কাজিপুরের সোনামুখী, চালিতাডাঙ্গা, মাইজবাড়ী, কাজীপুর সদর, মাইজবাড়ী, শুভগাছা, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও মনসুরনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আসেন এখানে মরিচ কিনতে। প্রতি হাটে লাখ লাখ টাকার মরিচ বেচা-কেনা হয় যমুনার চরে।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা ও মরিচ ক্ষেত পরিচর্যার কাজে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার মরিচের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। ইতোমধ্যে জেলার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে নতুন মরিচ। শ্রম মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার মরিচ চাষে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তারপরও বাজারে মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়ায় মরিচ চাষিরা এবার বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা।

    ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার দর গত মৌসুমের চেয়ে এই মৌসুমে বেড়ে গেছে। এবার যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ১শ কোটি টাকার কাচা ও শুকনা মরিচ কেনা-বেচা হবে। যা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।

    সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর চর ঘুরে দেখা গেছে- মরিচ তোলা, পরিচর্যা আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষক-কৃষানী।

    কাজীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, চরাঞ্চলে কৃষকরা এবার মরিচ চাষে ভাগ্যের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন। চলতি মৌসুমে ১৪শ ১০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৮১৫ জন কৃষক মরিচের আবাদ করেছেন। মোট ২ হাজার ৩শ ৯৭ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, ফলন ভালো হওয়ায় প্রতি হেক্টরে ১.৬ মে. টন মরিচ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

    কাজীপুর উপজেলার দুর্গম নাটুয়াপাড়া চর থেকে মরিচ নিয়ে হাটে আসা লোকমান হোসেন জানান, এবার চরের ৮ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা থেকে টোপা মরিচ তুলেছেন ৩০-৩২ মণ।

    ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, এবার মরিচের আবাদ ভালো হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি না হওয়ায় মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়নি। মরিচ বিক্রি করে তিনি এবার জমি কিনবেন।

    কাজীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বকুল সরকার জানান, কাজীপুর চরাঞ্চলের উৎপাদিত লাল মরিচই বগুড়ার লাল মরিচ নামে দেশের নামিদামি কোম্পানিগুলো সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করে আসছে।

    কাওয়াখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ঠান্ডু বলেন, চরের অনেকরই কৃষি জমি নেই। চরের ফাঁকা জমি কাজে লাগিয়ে মরিচ চাষ করে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

    সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, যমুনা চরের মরিচ দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। আগামীতে এর পরিধি আরো বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।

    কেঁচোতে ভাগ্য বদল কৃষকের

  • Share The Gag
  • ল্যাপকিন মারাক, বয়স ৪৮। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বাবেলাকোনা গ্রামে তৈরি করেছেন কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরির কারখানা। এতে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে তার। দিন দিন বাড়ছে সারের চাহিদা। বাড়ছে কারখানার পরিধি। বাড়ছে উৎপাদন। বদলে যাচ্ছে তার সংসারের অবকাঠামো।ক’বছর আগেও কর্মসংস্থানের অভাবে ল্যাপকিন মারাক ছিল সহায় সম্পদহীন। ১৯৯২ সালে বিয়ে করে আসেন বাবেলাকোনায় শ্বশুর বাড়ি। বিয়ের পর অভাবের তাড়নায় বিক্রি করেছিলেন স্ত্রীর ভিটেমাটি। থাকেন অন্যের বাড়িতে। নুন আনতে পানতা ফুরাতো তার সংসারে। এদিকে সংসারে আসে নতুন অতিথি। স্ত্রী ও আর চার সন্তানের ভরণ পোষণে ক্রমাগত নিষ্পেষিত হতেন তিনি। পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে জুম চাষ করে টিকে থাকার প্রচেষ্টা যেন বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছিল। জীবন মানে যে যন্ত্রণা তা যেন তার ভাগ্যেই ভর করেছিল।

    ২০১৪ সালের শেষের দিকে তার দুঃসময় যেন চরমে। এ সময় তার এক প্রতিবেশির কাছে সংবাদ পান একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জৈব সার তৈরির ট্রেনিং দেয়া হবে। সেখানে তিনি অংশ নেন। প্রশিক্ষণ হয় তিনদিনের। পরে ওই সংস্থার মাধ্যমে ট্রেনিং শেষে চীন থেকে আমদানিকৃত ৭৫ টাকায় ২৫টি কেঁচো কিনেন তিনি। এখান থেকেই শুরু হয় তার জৈব সার তৈরি।ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর তার স্ত্রীর সহযোগিতায় মাত্র দু’বছরেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তারা।

    বাড়ছে কেঁচোর সংখ্যা। এখন তার কারখানায় রয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ কেঁচো। ওই সার ব্যবহার হচ্ছে শাক সবজি আর ইরিবোরো চাষাবাদে। ফলন ভাল হওয়ায় বাড়ছে বিক্রি। আলোচিত হয়ে ওঠছে তার জৈব সার কারখানা।অনেকেই বলেন, ল্যাপকিন জৈব সার। কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ল্যাপকিনের এখন মাসিক আয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে আর্থিক সহায়তা পেলে কারখানার পরিধি আরো বাড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।এলাকার কৃষকরা জানান, বাজারের জৈব সারের চেয়ে গুণগত মানের দিক থেকে এ সার অনেক ভাল।

    চাষাবাদের এ সারের ফলন অনেক বেশি। যারা একবার এ সার ব্যবহার করছে তারা কখনো অন্য সার ব্যবহার করবে না।এখন ল্যাপকিনের নিজের ভিটা হয়েছে। তার ঘরে সোলারের বাতিও জ্বলে।উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, এখানে যে সার উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারের সারের তুলনায় অনেক ভাল। তাই স্থানীয় কৃষকেরা এ সার ব্যবহার করছেন।

    কচু চাষে ভাগ্য বদল কৃষকের

  • Share The Gag

  • ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক জিয়াউল ইসলাম ও ফারুক হাওলাদার এ বছর কচু চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তারা দুজনই সৌদি আরব প্রবাসী ছিল। একই স্থানে থেকে জিয়াউল ফারুক সৌদি আরবে ক্ষেতে খামারে কৃষি কাজ করত। দেশে ফেরার পর নিজ জমিতে ধান-পাটের পাশিপাশি পটোল, শসা, কচু চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন।


    এ বছর বেশি জমিতে কচু চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। কচু বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন। কৃষক জিয়াউল জানান, এবারও ১ বিঘা জমিতে ৫ হাজার কচুর চারা রোপণ করি। প্রতিটি কচু পূর্ণাঙ্গ হওয়া পর্যন্ত তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। কচু পোকায় ধরে না এবং শুকনো মৌসুমেও পানিতে ক্ষতি হয় না বলে তিনি জানান। প্রতিটি কচু পূর্ণাঙ্গ হতে ৭ থেকে ৮ মাস সময় লাগে। এর পর শুরু হয় কচু বিক্রির পালা। সদরপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, শিবচর ও জয়পাড়া, নারিশাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে পাইকারদের মাধ্যমে কচু সরবরাহ করে থাকেন। শুরুতে প্রতিটি কচু বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকারও বেশি। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের কচু হাটবাজারে সরবরাহ থাকায় দাম অনেকটা কম পাওয়া যাচ্ছে।


    কৃষক জিয়াউল জানান, ১ বিঘা জমিতে কয়েক হাজার কচুর চারা রোপণ করে প্রতিটি কচু গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হওয়ায় ৩ লক্ষাধিক টাকা লাভ করেছেন। অপর কৃষক ফারুক জানান, অর্ধবিঘা জমিতে ২ হাজার ৫০০ কচুর চারা রোপণ করে এখন পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ করেছেন। এ বছর কচু চাষ করে ভালো লাভ হওয়ার কারণে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে কচুর চাষাবাদ করবেন বলে জানান জিয়াউল ও ফারুক হাওলাদার। স্থানীয় অনেক কৃষকই বলেছেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় দাম বেশি ও ঝুঁকি কম থাকার কারণে এ অঞ্চলে দিনকে দিন কচুর আবাদ বাড়ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলে কৃষকরা আরও বেশি জমিতে কচুর আবাদ করতে পারবেন।



    মাটি খুঁড়ে ১৫ লাখ টাকার হিরে পেলেন কৃষক!

  • Share The Gag
  • নয়া দিল্লী, ২৩ জুলাই- আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে চাষবাস করাই খুব কষ্টের হয়ে যাচ্ছিল সুরেশের। দিন দিন খারাপ হচ্ছিল পরিবারের আর্থিক অবস্থাও। সংসার চালানোটোই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার কাছে। বাধ্য হয়ে ছোট্ট কৃষিজমির দায়িত্ব ছেলেকে দিয়ে হিরের খনির এক টুকরো জায়গা লিজ নিয়ে ভাগ্যপরীক্ষা শুরু করেন সুরেশ।

    অতঃপর দিনের বেলা অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আর রাতে কোদাল নিয়ে মাটি খুঁড়ে হিরের সন্ধান চালাতে থাকেন তিনি। এ ভাবেই চলছিল বেশ কিছু দিন। অবশেষে মাটি খুঁড়ে ভাগ্যবদল হলো কৃষক সুরেশ যাদবের। নাটকীয় ভাবে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে হিরে পেয়ে লাখপতি বনে গেলেন তিনি। মাটির নীচ থেকে পাওয়া সেই হিরের বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

    মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের পান্নায় ঘটনাটি ঘটে। গত সপ্তাহেই নুড়ি পাথরের মাপের হিরেটি খুঁজে পান ওই কৃষক।

    সুরেশ ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে বলেন, ‘বর্ষার সময়েই নাকি হিরে পাওয়ার সম্ভাবনা সব চাইতে বেশি। তবু সবার কপাল খোলে না। কিন্তু ভাগ্য আমার প্রতি সুপ্রসন্ন।’ যদিও প্রথমটায় সেই পাথরের টুকরোটি হিরে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন তিনি। পাথরের টুকরোটিকে নিয়ে যান বিশেষজ্ঞদের কাছে। পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হন যে ওটি হিরেই। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। হাড়-ভাঙা খাটুনির পর ৫ দশমিক ৮২ ক্যারেটের হিরেটি বদলে দিতে চলেছে সুরেশ ও তার পরিবারের ভবিষ্যৎ।

    বুন্দেলখণ্ডের মাইনিং অফিসার সন্তোষ সিংহ জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা এই হিরেটির কোয়ালিটি খুব ভাল বলেই মনে করছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এটিকে নিলামে তোলা হবে। এর আগে ২০১৫ সালে ওই এলাকাতেই অনন্ত সিংহ যাদব নামে এক ব্যক্তি ১২ দশমিক ৯৩ ক্যারেটের হিরে পেয়েছিলেন।

    শুধুই সুরেশ যাদব নন, মাত্র ২৫০ টাকার বিনিময়ে আপনিও আপনার ভাগ্য পরীক্ষা করে নিতে পারেন। ঘুরে যেতে পারে আপনার ভাগ্যের চাকাও। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানাচ্ছে, জেলা প্রশাসনের কাছে ২৫০ টাকা জমা দিলেই বুন্দেলখণ্ডের পান্নায় ৮ মিটার বাই ৮ মিটার জায়গা খোঁড়ার লিজ পাওয়া যায়। এই এলাকাতেই রয়েছে হিরের খনি। তাই খোঁড়াখুঁড়ি করলে পাওয়াও যায় হিরে। যেমনটা পেয়েছেন বছর চল্লিশের সুরেশ যাদব।

    Saturday, July 22, 2017

    লাভ বার্ড পাখি পালন

  • Share The Gag


  • ময়ূর প্রতিপালন সম্ভাবনাময় একটি নতুন ক্ষেত্র

  • Share The Gag
  • ময়ূর প্রতিপালন পোল্ট্রি শিল্পের ন্যায় সম্ভাবনাময় একটি নতুন ক্ষেত্র



    আদিমকাল থেকে মানুষ নিজেদের খাদ্য তালিকায় পাখির ডিম ও মাংসের সংযোজন করে আসছে। রসনা তৃপ্তির পাশাপাশি সৌন্দর্য্য পিয়াসী মানুষ নানা জাতের পাখিও সেই আদিকাল থেকে পালন করে থাকে। পাখি পালনের সাথে সাথে মানুষ অর্থনৈতিক দিক থেকেও উপকৃত হতে থাকে।

    ময়ূর

    মানুষ নিজেদের খাদ্য চাহিদা, শখ ও মনোরঞ্জনের জন্য পাখিকে নিজ আয়ত্বে রাখার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবহিকতায় অনেক পাখিই মানুষের পোষ মেনেছে।

    পালক বিশিষ্ট দ্বিপদ প্রাণিকে পাখি বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, পাখি হচ্ছে ওড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ডানাওয়ালা মেরুদন্ডী প্রাণি যাদের পরিবেশের সাথে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। পোল্ট্রি যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।

    পোল্ট্রি হচ্ছে মূলতঃ ঐ সমস্ত পাখি যারা মানুষের তত্বাবধানে থেকে ডিম পাড়ে ও বাচ্চা উৎপাদন করে এবং অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা প্রদান করে। হাঁস, মুরগি, কবুতর, তিতির, কোয়েল এবং টার্কির মত ময়ূরও পোল্ট্রি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। পোল্ট্রি বিজ্ঞান এসব বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। তাই পোল্ট্রি শিল্প আজও এতো লাভজনক ও আকর্ষণীয়। পোল্ট্রি ছাড়া অন্যান্য পাখি নিয়েও দেশে-বিদেশে গবেষণা চলছে যা অরনিথলজি হিসাবে পরিচিত। এর মাধ্যমে নতুন নতুন পাখি পোল্ট্রি হিসাবে স্বীকৃতি পাবার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।

    পোল্ট্রি শিল্পে ময়ূর

    বর্তমানে লেয়ার, ব্রয়লার ও হাঁসের খামার সকলের নিকট পরিচিত। পোল্ট্রি বলতে অনেকেই শুধু মুরগিকে বোঝেন, আসলে কিন্তু তা ঠিক নয়। বাণিজ্যিক না হলেও পারিবারিক বা শখের বশে আমাদের দেশে কবুতর, তিতির, রাজহাঁস, মাসকোভী হাঁস ও কোয়েল পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু ময়ূর একটি লাভজনক পেশা হওয়া স্বত্বেও আমাদের দেশে এ পাখিটিকে চিড়িয়াখানা ছাড়া অন্য কোথাও পালন করতে দেয়া যায় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ময়ূর বাণিজ্যিকভাবে পালন করা লাভজনক এবং গ্রামে-গঞ্জেও পালন করা যেতে পারে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, বাড়বে আয়- রোজগারের পথ এবং উন্নতি হবে দেশ ও দশের।

    ময়ূরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

    বাংলাদেশে সুন্দরতম পাখি ছিল ভারতীয় ও বর্মী ময়ূর। এ প্রজাতি দু’টি বর্তমানে দেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ময়ূর যেমন সুন্দর পাখি তেমনি এদের অপূর্ব সুন্দর পেখম সকলকে বিমোহিত ও আকৃষ্ট করে। ময়ূরের মাংস বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থকর। যেহেতু এদের মাংস বাজারে বিক্রি হয় না সেহেতু তা পাওয়া গেলেও বাজারে মূল্য হবে অত্যধিক। রসনা তৃপ্তির জন্য এদের মাংসের চাহিদা আছে দেশে। এই প্রেক্ষাপটে কবুতর, মুরগি, কোয়েল ও হাঁসসহ অন্য যে কোনো পোল্ট্রির ন্যায় ময়ূর পালনও অবশ্যই লাভজনক।
    ময়ূরের পালক সবার কাছেই অত্যন্ত সমাদৃত। যারা কোনোদিন ময়ূর দেখেনি তারাও এদের পালকের খুব ভক্ত। মৎস্য শিকারীরা সেই যুগ যুগ ধরে আগে থেকে মাছ ধরার ছিপের সাথ ময়ূরের পালক ব্যবহার করে থাকেন। দেশে-বিদেশে ময়ূরের পালকের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে।

    দেশে ময়ূরের বর্তমান অবস্থান

    ময়ূরের পালকের প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকার জন্য দেশের বহু অভিজাত দোকানে এদের পালক বিক্রি করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে মনে করা যাবে না যে দেশে ময়ূরের সংখ্যা রয়েছে যথেষ্ট।

    দেশে বিদ্যমান চিড়িয়াখানাগুলো ছাড়া আসলে ময়ূর দেশের অন্য কোথাও সাধারণত দেখা যায় না। শোনা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বনে কদাচিৎ বর্মী ময়ূরের দেখা মিলে। এমনও এক সময় ছিল যখন ময়ূর ঢাকা জেলার শালবন থেকে ময়মনসিংহ, ভারতের মেঘালয় ও আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করতো। বাংলাদেশে এ মূল্যবান পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ভারতে যথেষ্ট সংখ্যক ময়ূর পাওয়া যায়। ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি এবং ভারতীয় হিন্দুরা ময়ূরকে কার্তিকের বাহন হিসাবে পূজা করে।
    বাংলাদেশের আবহাওয়া ময়ূর লালন-পালনের উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে তা শুধুমাত্র চিড়িয়াখানা ও বিত্তবানদের পাখি হিসাবে পরিচিতি লাভ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ পাখিটি গ্রামের হত-দরিদ্র মানুষ থেকে অনেক পরিবারই স্বাচ্ছন্দ্যে লালন-পালন করতে পারেন।

    ময়ূরের বৈশিষ্ট্য

    এদের দেহে উজ্জ্বল সবুজ ও নীলাভ পালক থাকে। মাথা, ঘাড়, গলা এবং ডানার পালক কিছুটা নীলাভ। ডানার বাকি অংশ লালচে। পা লালচে। ময়ূরীর পেখম নেই কিন্তু ময়ূরের রয়েছে অপূর্ব আকর্ষণীয় পেখম। ময়ূরের সবুজ পেখমের পালকে অনেকগুলি বড় চৌকাকৃতি ফোঁটা থাকে যা খুবই আকর্ষণীয়। পেখমগুলি লেজের পালক নয়-ওগুলি লেজের গোড়ার উপরের পালক যা অতিমাত্রায় লম্বা। ময়ূরের চূড় আছে। ময়ূর পিঠের উপর পেখম তুলে ডানা ঝুলিয়ে নেচে নেচে ময়ূরীকে আকর্ষণ করে যা নয়ন মনোহর ও অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক।

    ময়ূর

    ময়ূরের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য

    ময়ূর দলবদ্ধভাবে বনে-জঙ্গলে বিচরণ করে। ৫-৬টি ময়ূরীর সাথে এক এলাকায় ১টি ময়ূর থাকে। এরা মাটিতে চলাফেরা করলেও বেশিরভাগ সময় বড় গাছের ডালে থাকে। শস্যদানা, কীটপতঙ্গ, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি এদের প্রিয় খাদ্য। মাটিতে সামান্য গর্ত করে ৩ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলি ধুসরাভ। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২৭-৩০ দিন সময় লাগে। এদের গড় আয়ু প্রায় ৩৫ বছর। ময়ূরের যৌবনপ্রাপ্তি ঘটে সাধারণত ৩-৪ বছরে

    আবদ্ধ অবস্থায় লালন-পালন

    আবদ্ধ অবস্থায় লালন-পালনের ক্ষেত্রে এদেরকে নিয়মিত গম, ধান, সবজি, বীজ ইত্যাদি খেতে দিতে হয়। পেঁপে, তরমুজসহ অন্যান্য পাকা ফলও এদের প্রিয় খাদ্য।

    দৈনিক খাদ্য তালিকা (মাথাপিছু)



    সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

    ময়ূর পালনে করণীয়

    প্রকৃতির সুন্দরতম পাখিটিকে রক্ষা করার দায়িত্ব সকলের। বর্তমানে বনভূমির সঙ্কোচন ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে অন্যান্য প্রাণিকূলের ন্যায় ময়ূরের স্বাভাবিক সংখ্যাও সীমিত হয়ে এসেছে। এমতাবস্থায় এদেরকে রক্ষার জন্য সর্বাত্নক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা আবশ্যক।

    বন্যপ্রাণি রক্ষার জন্য দেশে বেশ কয়েকটি “বনকে” ময়ূর প্রতিপালনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চিহ্নিত করা যেতে পারে। এজন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ময়ূর সংগ্রহ করে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যায়। এছাড়াও সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে স্বতন্ত্রভাবে ময়ূর পালনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট গ্রাম/ইউনিয়ন/থানা এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসাবে ময়ূর পালনে আগ্রহী মানুষকে উদ্যোগী করে প্রশিক্ষিত করে তোলা যেতে পারে।

    দেশে ময়ূর পালন, রক্ষণাবেক্ষণ, বাজারজাতকরণ, ময়ূরকেন্দ্রিক কুটির শিল্প স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, ভোকেশনাল ইনসটিটিউটসমূহে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সবিধা সহজেই সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারী পৃষ্টপোষকতা থাকলে এ শিল্পেরও উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে।

    পোল্ট্রি শিল্পের ক্ষেত্রে উদীয়মান দেশ হিসাবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছ। বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক মুক্ত বাজারে নতুন নতুন পণ্য সৃষ্টি, বিপণন ও বাজার চালুর সম্ভাবনাময় খাতকে উন্মোচিত করার সময় এসেছে। তাই এই শিল্পের প্রসার ও উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো।