Tuesday, December 13, 2016

মাটি সংক্রান্ত

  • Share The Gag
  • মাটি কাকে বলে:



    পৃথিবীর উপরিভাগের যে নরম স্তরে গাছপালা মূল স্থাপন করে রস শোষণ করে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায় তাকে মাটি বলে।

    মাটির গুণাগুণ:



    পৃথিবী পৃষ্ঠের যে অংশ থেকে উদ্ভিদ খাদ্য সংগ্রহ করে তাই মাটি। পুকুরের পানি সংলগ্ন ১৫-২০ সেমি. মাটি পানির সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নিয়ে থাকে। মাটি ও পানির গুণাগুণের ওপরই মাছের উৎপাদন প্রাথমিকভাবে নির্ভর করে। কোন জলাশয়ের পানি ধারণের আধার হলো মাটি। ভাল মাটিতে যেমন ভাল ফসল হয় ঠিক তেমনি ভাল মাটির পুকুরেও মাছের ভাল উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে মাটির ধরনের ওপর নির্ভর করে। উর্বর মাটিতে খনন করা পুকুরে সাধারণভাবে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটির পুকুর মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য অধিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। সুতরাং মাছ চাষে মাটির গুণাগুণের গুরুত্ব অপরিসীম।

    মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাটি ও পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। মাছ তার জীবন ধারণের সব কাজ পুকুর-জলাশয়ের পানির মধ্যেই সম্পন্ন করে থাকে। এসব কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পুকুরের বা জলজ পরিবেশের বিভিন্ন গুণাবলী যথাযথ মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন।

    কোন জলাশয়ের পানি ধারণের আধার হলো মাটি। মাটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ কোন জলাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে ঐ জলাশয়ের মাটির ধরনের ওপর নির্ভর করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাভজনকভাবে মাছ চাষের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জলজ পরিবেশ এবং পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমিত প্রাচুর্যতা। পানির প্রাথমিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রধানত মাটির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ তথা মাটির উর্বরতার ওপর নির্ভর করে।

    মাটি হলো ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের নরম খনিজ এবং জৈব উপাদানের মিশ্রণ যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মাটি প্রধানতঃ ৪ টি প্রধান উপাদান সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো নিচে উল্লিখিত হলোঃ

    stagnogley

    ১। খনিজ পদার্থ – ৪৫%;

    ২। জৈব পদার্থ – ৫%;
    ৩। বায়ু – ২৫ %;
    ৪। পানি – ২৫%;

    সুতরাং মাটি কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় এই তিন ধরণের পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। নিচে মাটির বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলোঃ

    খনিজ পদার্থ ভূ-ত্বক প্রথমে শিলা দ্বারা গঠিত ছিল। পরে তা শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে ছোট খন্ডে বা এককে রূপান্তরিত হয়। মাটির এই অংশ বালি, পলি ও কর্দম কণা দ্বারা গঠিত। শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ার ফলে উপরোক্ত কণা ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান যেমন- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান মাটিতে মুক্ত হয়। মাটিতে খনিজের পরিমাণ হলো ৪৫%।

    জৈব পদার্থ মাটিতে ১-২% জৈব পদার্থ থাকে তবে হিম অঞ্চলের মাটি ২-৫% জৈব পদার্থ ধারণ করে। এই সব জৈব পদার্থ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ ও মলমূত্র হতে মাটিতে আসে। জৈব পদার্থ মাটির আবদ্ধকরণ পদার্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম হলেও এটি ব্যাপকভাবে মাটির গুণাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

    জৈব পদার্থ নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে-

    সমস্ত পুষ্টি উপাদানের গুদাম ঘর হিসেবে কাজ করে;
    মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব গুণাবলী উন্নত করে;
    ভূমি ক্ষয় রোধ করে;

    অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এসব মাছ বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে; ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়;

    পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;

    অণুজীবের প্রধান শক্তি হলো এই জৈব পদার্থ এবং

    মাটিতে নাইট্রোজেনের প্রধান উৎস এ জৈব পদার্থ।

    বায়ু ও পানি প্রবল বর্ষার সময় বা সেচ দিলে মাটির অধিকাংশ রন্ধ্রই পানি দ্বারা পূর্ণ হয়। কিন্তু শুকনা বা খরার সময় ঐ রন্ধ্রগুলো বায়ু দ্বারা পূর্ণ হয়। বায়ুমন্ডলের বায়ু অপেক্ষা মাটির বায়ুতে বেশি পরিমাণ কার্বন ডাই-আক্সাইড ও জলীয়বাষ্প থাকে কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। বায়ুর প্রধান কাজ হলো শ্বসন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। বায়ু ও পানির গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো-

    মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক কার্য নিয়ন্ত্রণ করা;
    শিলা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা;
    সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করা এবং
    দ্রাবক ও পুষ্টি উপাদানের বাহক হিসেবে কাজ করা।

    মাটির প্রকারভেদ:

    বালি, পলি ও কাদা- এই তিনটি স্বতন্ত্র মাটি কণার তুলনামূলক অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে মাটির বুনটসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাটি বিভিন্ন অনুপাতে বালি, পলি ও কাদা কণা ধারণ করে থাকে। কোন মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি, আবার কোনটাতে কাদা কণার পরিমাণ বেশি। এই পরিবর্তনের নির্দিষ্ট সীমারেখায় রেখে মাটিকে ১২ টি গ্রুপ বা দলে বিভক্ত করা হয়। এই দলগুলোই বুনটভিত্তিক শ্রেণী বলে পরিচিত। এই শ্রেণীগুলোর একটির হতে অন্যটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যে মাটিতে অধিক পরিমাণ কাদা কণা থাকে তাকে কাদা মাটি, যে মাটি অধিক পরিমাণ পলি কণা ধারণ করে তাকে পলি মাটি, আর যে মাটিতে বালি কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালি মাটি বলে। যদি কোন মাটি এই তিনটি শ্রেণীর একটিরও প্রভাব বিস্তারকারী ভৌতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন না করে (যেমন-৪০% বালি কণা, ২০% কাদা কণা ও ৪০% পলিকণা যুক্ত মাটি) তবে তাকে দোআঁশ মাটি বলে। দোয়াঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা কণার শতকরা পরিমাণ সমান থাকেনা। কিন্তু এ বালি, পলি ও কাদা কণাসমূহের কাছাকাছি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম প্রদর্শন করে।

    মাটির গুণাগুণ:

    সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় পুকুর তৈরির জন্য দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভাল। এ ধরনের মাটি সহজে পানি ধারণ করে রাখতে পারে। মাটির পিএইচ (PH)-এর মাত্রা ৫.০ এর উপরে থাকা সমীচীন। মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টি পদার্থ ও পিএইচ-এর ওপর ভিত্তি করে মাটিকে সাধারণতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- উচ্চ উৎপাদনশীল, মধ্যম উৎপাদনশীল ও নিম্ন উৎপাদনশীল (সারণি-১)।

    সারণি-১: মাটির পুষ্টিমান ও পিএইচ অনুযায়ী পুকুর-জলাশয়ের শ্রেণিবিন্যাস উৎপাদনশীলতার শ্রেণী পিএইচ মাত্রা পুষ্টি উপাদানের মাত্রা (মিগ্রা/কিলো) নাইট্রোজেন ফসফরাস কার্বন উচ্চ ৭.৫-৬.৫ >৫০ ৬-১২ >১.৫ মধ্যম ৬.৫-৫.৫ ২৫-৪৯ ৩-৫ >০.৫-১.৪ নিম্ন <৫.৫ <২৫ <৩ <০.৫

    প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লাভজনক মাছ চাষের জন্য পুকুরকে উপযোগি করে তোলা যায়। এক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি পড়ে।

    মাটির গঠন, বর্ণ, পিএইচ-র ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মাটিকে সাধারণভাবে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এ ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটির শ্রেণিবিন্যাস ও প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা নিচের সারণিতে দেয়া হলো (সারণি-২)।

    সারণি-২: অঞ্চলভেদে মাটির গুণাগুণ

    ক্র.নং অঞ্চল মাটির প্রকার PH-র ভিত্তিতে মাটির ধরণ মাটির বর্ণ উৎপাদনশীলতা ১ বরেন্দ্র, মধুপুর গড়, সাভার, গাজীপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর অংশ বিশেষ এটেল, কাদা ও বালিযুক্ত কাদা বেশি অম্লীয় লাল ও বাদামী প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম ২ যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশালের কিয়দংশ পলিযুক্ত এটেল ক্ষারীয় হালকা ও বাদামী গাঢ় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বেশি ৩ ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও ফরিদপুরের কিয়দংশ পলিযুক্ত দো-আঁশ নিরপেক্ষ থেকে ক্ষারীয় ধূসর ও গাঢ় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক বেশি ৪ রংপুর-দিনাজপুরের কিয়দংশ, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইলের কিয়দংশ বালি ও বালিযুক্ত পলি কিছুটা অম্লীয় ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম ৫ নদী সন্নিকটস্থ অঞ্চল বালিযুক্ত পলি অম্লীয়/ক্ষারীয়/নিরপেক্ষ ধূসর থেকে কালচে ধূসর প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তুলনামূলক কম ৬ উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ পলি ও কাদার ভাগ বেশি অম্লীয় কালো বা ছাই রং প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা কম

    মাটির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ:

    যে অঞ্চলের মাটি উর্বর সে স্থানে খনন করা পুকুরও সাধারণভাবে উর্বর হয়ে থাকে এবং সে অঞ্চলের পুকুরে মাছের উৎপাদনও ভাল হয়। উর্বর মাটি পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান দেয় এবং পানি দূষণ রোধে ভূমিকা রাখে। সাধারণভাবে মাটি ৪ প্রকারের হয়ে থাকে ক) এটেল মাটি, ২) বেলে মাটি, গ) লাল মাটি এবং ঘ) দোআঁশ মাটি। দোআঁশ মাটির পুকুর মাছ চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম এবং লাল মাটির পুকুরে পানি প্রায় সবসময় ঘোলা থাকে। এজন্য বেলে মাটি ও লাল মাটিতে খনন করা পুকুর মাছ চালের জন্য ততটা উপযোগি হয় না। বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি ধরে রাখা ও আদান প্রদানে দোআঁশ মাটি উত্তম।

    দোআঁশ মাটি মাছ চাষের জন্য উত্তম;
    এটেল মাটি মাছ চাষের জন্য কম উপযোগি;
    বেলে মাটি চাষ চাষের উপযোগি নয়;
    লাল মাটিতে মাছচাষ ব্যয়বহুল।

    ভালো মানের মাটির জন্য যোগাযোগ করুন – ০১৯৮৬২০২৫৮৫

    Thursday, November 10, 2016

    গবাদি পশু-পাখির শীতকালীন রোগবালাই ও প্রতিকার

  • Share The Gag
  • আসছে শীতকাল। এ সময় গরু ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য গবাদিপশু-পাখির নানান রকমের রোগবালাই হয়ে থাকে। গবাদিপশু পাখির শীতকালীন কিছু কমন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রিয় মোহন দাস।



    গামবোরো রোগ


    গামবোরো একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ব্রয়লার, কক, সোনালী ও লেয়ার মুরগি মারা যায়। তাই এ রোগের মুরগির মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্ত ফ্লক ইম্যুনোসাপ্রেশনে ভোগে। আর তাই এ রোগকে মুরগির এইডস বলা হয়। আর এ ধরনের ফ্লক থেকে কখনই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় না।


    রোগের লক্ষণ


    গামবোরো রোগের কিছু কমন লক্ষণ হলো পানি না খাওয়া, খাদ্য না খাওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া ইত্যাদি।


    চিকিৎসা ও প্রতিকার


    এন্টিবায়োটিক হিসেবে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ১০% ব্যবহার করা যায়। এটি রক্তে তাড়াতাড়ি মিশে আর শরীরে থাকেও দীর্ঘক্ষণ। ফলে দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যায়। ১ লিটার পানিতে ১ মিলি পরপর ৩-৫ দিন সবসময়ের জন্য পানিতে দিতে হবে। যে কোনো ভালো অর্গানিক এসিড কোম্পানি নির্দেশিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্গানিক অ্যাসিডগুলো কিডনি হতে ইউরেট দূর করতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।


    গলাফুলা রোগ


    গলাফুলা (hemorrhagic septicemia) এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা Pasteurella multocida দ্বারা সংঘটিত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি।


    পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। কোনো কারণে যদি পশু ধকল যেমন ঠাণ্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদির সম্মুখীন হয় তখনই এ রোগ বেশি দেখা দেয়। গলাফুলা রোগের প্রচলিত নাম ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি।


    রোগের লক্ষণ


    এ রোগ অতি তীব্র ও তীব্র এ দুইভাবে হতে পারে।


    অতি তীব্র প্রকৃতির রোগে হঠাৎ জ্বর হয়ে মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে। পশু অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু ঘটে। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশু ২৪ ঘন্টার অধিক বেঁচে থাকে। এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিস্তৃত হয়।


    গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয়, যা অনেক সময় দূর থেকে শোনা যায়। প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়। মুচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। অনেক সময় কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি দেখা যায়। নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়।


    চিকিৎসা ও প্রতিকার


    আক্রান্ত পশুর চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসায় Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide জাতীয় ইনজেকশন গভীর মাংসে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।


    এ রোগ উচ্ছেদ করা অসম্ভব কারণ এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।




    • রোগাক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে সুস্থ পশুকে টিকা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।






    • মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।






    • হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।






    • টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।




    ক্ষুরারোগ


    এটি ভভইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। দুই ক্ষুরওয়ালা সব প্রাণীই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া এ রোগের শিকার হয় বেশি। বাতাসের সাহায্যে এ রোগের ভাইরাস দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।


    রোগের লক্ষণ




    • প্রথম অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।






    • মুখ দিয়ে লালা ঝরে এবং লালা ফেনার মতো হয়। পশু খেতে পারে না এবং ওজন অনেক কমে যায়।






    • দুগ্ধবতী পশুতে দুধ অনেক কমে যায়। বাছুরের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই বাছুর মারা যেতে পারে।




    চিকিৎসা ও প্রতিকার


    আক্রান্ত প্রাণীর মুখ ও পায়ের ঘা পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট মেশানো পানি বা খাওয়ার সোডা মেশানো পানি দিয়ে দিনে ৩-৪ বার ধুয়ে দিতে হবে। ওষুধ মেশানো পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধোয়ার পরে সালফা নিলামাইড বা এ ধরনের পাউডার লাগাতে হবে। চার ভাগ নারকেল তেলের সাথে ১ ভাগ তারপিন তেল মিশিয়ে লাগালে ক্ষতস্থানে মাছি পড়বে না।


    গরুর বাদলা রোগ


    বাদলা রোগ গরুর ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। ক্লস্ট্রিডিয়াম শোভিয়াই নামক ব্যাকটিরিয়া জীবাণু এ রোগের প্রধান কারণ-


    রোগের লক্ষণ




    • তীব্র রোগে প্রথমে জ্বর হয় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পেছনের অংশে মাংসপেশি ফুলে যায়।






    • ফোলা জায়গায় চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হয়।






    • আক্রান্ত অংশ কালচে হয়ে যায় ও পচন ধরে।






    • রোগাক্রান্ত প্রাণী দুর্বল হয়ে মারা যায়।




    চিকিৎসা ও প্রতিকার


    অ্যান্টিব্লাকলেগ সিরাম প্রতিটি আক্রান্ত পশুর শিরা বা ত্বকের নিচে ১০০-২০০ মিলিলিটার ইনজেকশন দিতে হবে (যদি পাওয়া যায়)  অ্যান্টিহিসটামিনিক জাতীয় ইনজেকশন যেমন- হিস্টাভেট, ডিলারজেন, ফ্লুগান ইত্যাদি দৈনিক ৬ সি.সি. করে ৩ দিন মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। প্রয়োজনে আক্রান্ত ক্ষতস্থান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে টিংচার আয়োডিন গজ প্রয়োগ করতে হবে।
    আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত পশুকে মাটির নিচে কলিচুন সহযোগে পুঁতে ফেলতে হবে। জীবাণুনাশক দিয়ে গোয়ালঘর পরিস্কার করতে হবে।


    ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগ


    গবাদিপশুর যকৃতে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা ও ফ্যাসিওলা হেপাটিকা নামক পাতাকৃমি দ্বারা সৃষ্ট পশুর রোগকে ফ্যাসিওলিওসিস বলে। রক্তস্বল্পতা, ম্যান্ডিবুলের নিচে পানি জমা, যা দেখতে বোতলের মতো, ডায়রিয়া এবং ধীরে ধীরে কৃশকায় অবস্থায় পরিণত হওয়াই এ রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে প্রায় ২১ ভাগ গরুতে এবং সিলেট অঞ্চলে প্রায় ২১.৫৪ ভাগ ছাগলে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা পাতাকৃমিতে হয়।


    রোগের লক্ষণ




    • আক্রান্ত পশুর যকৃতে অপ্রাপ্তবয়স্ক কৃমির মাইগ্রেশনের ফলে যকৃত কলা ধ্বংস হয় এবং যকৃতিতে প্রোটিন সংশ্লেষণ হ্রাস পায়। এতে পশুর হাইপোপ্রিটিনিমিয়া তথা বটল জ্বর হয়।






    • বদহজম ও ডায়রিয়া দেখা দেয়। ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। চোখের কনজাংটিভা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।






    • তীব্র যকৃত প্রদাহ এবং রক্তক্ষরণের ফলে লক্ষণ প্রকাশের আগেই পশুর হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।




    চিকিৎসা ও প্রতিকার


    ট্রাইক্লেবেন্ডাজল বোলাস প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম করে আক্রান্ত পশুকে খাওয়ালে ৯০ থেকে ১০০ ভাগ সুফল পাওয়া যায়। নাইট্রোক্সিলিন ইনজেকশন প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.৫ মিলিলিটার হিসেবে গরু, মহিষ ও ছাগলের ত্বকের নিচে প্রয়োগ করে কার্যকরি ফল পাওয়া যায়। সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে দুর্বলতা ও রক্তস্বল্পতার জন্য ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ইনজেকশন দেয়া এবং মিনারেল মিকচার খাওয়ানো ভালো। পশুকে সন্দেহজনক স্থান যেমন নিচু জায়গা বা ড্রেনের পাশে ঘাস খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে।


    তড়কা রোগ


    তড়কা গবাদিপশুর একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। গবাদিপশু থেকে এ রোগে মানুষেও ছাড়ায়। এ রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত খাদ্য খেয়ে বিশেষ করে নদী-নালার পানি ও জলাবদ্ধ জায়গার ঘাস খেয়ে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়।


    রোগের লক্ষণ




    • দেহের লোম খাড়া হয়। দেহের তাপমাত্রা ১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।






    • নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। পাতলা ও কালো পায়খানা হয়।






    • লক্ষণ প্রকাশের ১-৩ দিনের মধ্যে পশু ঢলে পড়ে মারা যায়।




    চিকিৎসা ও প্রতিরোধ


    পেনিসিলিন/বাইপেন ভেট/জেনাসিন ভেট/ এম্পিসিন ভেট ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও স্ট্রেপটোমাইসিন/এন্টিহিস্টাভেট ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। সুস্থ পশুকে সর্বদা পৃথক রাখতে হবে। মৃতপশুর মল, রক্ত ও ম্রৃতদেহ মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।


    মো. আব্দুর রহমান*




    * শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-২২০২,

    Monday, November 7, 2016

    বৃষ্টিতে বাউফলে ১৪ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি

  • Share The Gag
  • পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টির কারনে আমান ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানে শীষ আসার পূর্ব মূহুর্তে এ ধরনে দুর্যোগ ধান ফলনের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস। এ দুর্যোগের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রান্তিক কৃষকরা।

    উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ৩৭ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ও ১৭ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল আমান চাষ করা হয়। অপর দিকে ৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বেগুন, টমেটো, লাউ, পালনশাক ও লালশাক ইত্যাদি ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে। আহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমন ও সবজির বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বিগত তিন দিনের বিরামহীন ভারি বর্ষনের ফলে ১২৫৬০ হেক্টর আমন ও ৩০০ হেক্টর সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

    সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে টানা বৃষ্টির কারনে জমির ধান গাছের গোড়ালী ভেঙ্গে পড়েছে। কোন উপায় না পেয়ে কৃষরা ক্ষেতের কাছে গিয়ে শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। চর কালাইয়া এলাকার বর্গা চাষী বাদল প্যাদা জানিয়েছেন, তার প্রায় ৩ একর জমির অধিকাংশ ধান টানা বৃষ্টি ও ঝরো বাতাসের কারনে শুয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মহাজনের কাছ থেকে জমি বর্গা ও সুদের ওপড় টাকা নিয়ে ধান চাষে দুর্যোগের কারনে এ বছর ক্ষতির মুখে পড়তে হলো। এক সময়ে ধান চাষী সংকর হাওলাদার জানান, বিগত বছরে ধান চাষে লোকাসান গুনে এ বছর সবজি চাষ শুরু করে ছিলাম। কিন্তু সে আশায়ও সেগুরেবালী।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার জামান সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, আমার মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের এ ধরনের দুর্যোগের পূর্বাভাস দুই দিন আগেই দিয়ে ছিলাম। চাষীদের ক্ষেতের পানি নিস্কাসনের জন্য বলা হয়েছে। তবে যে জমির ধান গাছ শুয়ে পড়েছে তার ৩৫ভাগ ধান নষ্ট হলেও বাকীটা ভালো থাকবে বলে আশা করা যায়।

    কৃষি পরিবেশ রক্ষায় জৈব কৃষি নীতি অনুমোদন

  • Share The Gag
  • মাটির গুণাগুন ও কৃষি পরিবেশ রক্ষায় জৈব কৃষি নীতি করছে সরকার।

    এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় জৈব কৃষি নীতি, ২০১৬’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

    সচিবালয়ে সোমবার (৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।

    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের জাতীয় কৃষি নীতি, ২০১৩ রয়েছে। এটার আওতায় জৈব কৃষির জন্য এ নীতিটি প্রস্তাব করা হয়েছে।’

    ‘এটি কয়েকটি অনুচ্ছেদের ছোট একটি নীতি। এতে মোট ছয়টি অনুচ্ছেদ রয়েছে-ভূমিকা, উদ্দেশ্য, জৈব কৃষি নীতিমালা, প্রতিষ্ঠানিক নীতি, আইনগত কাঠামো ও উপসংহার।’

    পৃথিবীর ১৭২টি দেশে জৈব চাষাবাদ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এরমধ্যে ৭৮টি দেশ নিজ নিজ জৈব নীতি প্রবর্তন করেছে। তাদের অনুসরণে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারত ও ভুটান এটা করে ফেলেছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান ও নেপালে প্রণয়নের কাজ চলছে। আমাদেরটা আজকে অনুমোদনের প্রেক্ষিতে এটা চূড়ান্ত হলো।’

    শফিউল আলম বলেন, ‘এখানে ফোকাস করা হয়েছে রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারের ফলে ভূমির যে অবক্ষয় হয়, উর্বরতা হ্রাস পায় তাকে জৈব ও সুষম সার ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে কমপেনসেট (কমানো) করা যায়। মাটির গুণাগুন ও কৃষির পরিবেশ এগুলো মধ্যে যাতে কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে আঙ্গিকে কাজ করার জন্য কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে নীতিতে।’

    বিমসটেক দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ ভাগাভাগিতে এমওইউ


    শফিউল আলম বলেন, ‘বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গ্রিড কানেকশনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের জন্য খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।’

    তিনি বলেন, ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যান অ্যান্ড ইকনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেক দিন ধরে এটা কার্যকরের জন্য আলাপ হচ্ছে। বিভিন্ন সেক্টরে কো-অপারেশন (সহযোগিতা), এখন বিদ্যুৎ সেক্টেরে আমরা কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি? গ্রিড (বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা) ইন্টারকানেকশনের (এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সংযোগ) জন্য এ এমওইউটা তৈরি করা হয়েছে। বলতে গেলে সদস্যভুক্ত সব দেশই এই এমওইউটার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে ‘

    ‘আমাদের মন্ত্রিসভাও এ এমওইউটা অনুমোদন করেছে, আমরাও একই চুক্তিতে অবদ্ধ হব।’

    এ চুক্তি মিয়ানমার থেকে জলবিদ্যুৎ ও গ্যাস আমদানিতে ভূমিকা রাখবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিমসটেকে গ্রিড কানেককশন যদি স্থাপিত হয় তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ঋতু বৈচিত্রের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সুবিধা হবে। আমাদের দেশে যখন গরম তখন দেখা যাবে অন্য দেশে শীত। তখন তারা বিদ্যুৎ ট্রান্সফার করে আমাদের দিতে পারবে। এ জাতীয় বিষয়গুলো তখন গুরুত্ব পাবে।’


    পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের সংশোধন অনুমোদন

    বৈঠকে ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১৬’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সম্পর্ক রয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার থেকেই ব্যাংকটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।’

    ‘এই আইনে (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন) একটি সমস্যা আছে যে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি বিলুপ্ত হয়ে ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ (একীভূত) হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের বাধা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

    শফিউল আলম বলেন, ‘৩৯ ধারার উপধারা-১ এর (ক) এ পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে যেখানে ৩০ জুন ছিল সেটা উঠে গিয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে উক্ত প্রকল্পগুলো ব্যাংকে চলে আসবে।’

    প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুন থেকে এ সংশোধন কার্যকর হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আরেকটি (সংশোধিত আইনে) প্রভিশন আনা হয়েছে, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন-২০০৬ এর আওতায় (ব্যাংক) থাকবে না। এটা সমবায় ব্যবস্থাপনায় নিজস্বভাবে চলবে।’

    এখন সংসদ অধিবেশন না থাকায় এটা অধ্যাদেশ আকারে জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

    বিদ্যালয়ে থাকবে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত

    ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ আইনটি মূলত ইংরেজি আইনের বাংলা অনুবাদ। ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশ ছিল, যেহেতু এটা সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ এজন্য এটিকে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে সামান্য পরিবর্তন সহকারে নতুন আইন হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।’

    বিদ্যালয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অর্থে আগে মাদ্রাসা ব্যতিত শব্দটি ছিল। এখন তা উঠিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা কোন আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বা স্বীকৃত হোক বা না হোক যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া হয়।’

    ‘পাঠ্যপুস্তকের সংজ্ঞাটি আরও পরিস্কার করে বলা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তক অর্থ প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যে কোন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক।’

    ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ অনুযায়ী প্রাথমিক অষ্টম শ্রেণি ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনগুলো সংশোধন আনা হচ্ছে।

    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সংশোধিত আইনে বোর্ডে সদস্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ জন। এরমধ্যে ৮ জন সদস্য একজন চেয়ারম্যান হবেন। এরমধ্যে কমপক্ষে চারজন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে। চেয়ারম্যান না থাকলে জ্যেষ্ঠ সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করবেন। বোর্ডে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা থেকেও দু’জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করবেন।’

    সূত্রঃ দি রিপোর্ট ২৪

    সাগরে মৎস্য জরিপের কাজে নামছে আরভি মীনসন্ধানী

  • Share The Gag
  • সমুদ্রসীমায় মৎস্য সম্পদ অনুসন্ধান ও জরিপের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে সরকার। মালয়েশিয়া থেকে কেনা গবেষণা জাহাজ ‘আরভি মীনসন্ধানী’ দেশে এসেছে আগেই। নাবিকদের প্রশিক্ষণও শেষ পর্যায়ে। চলছে জাহাজের পরীক্ষামূলক চলাচল। এখন অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের। এর পরই শুরু হবে জরিপ। কার্যত এর মাধ্যমেই উন্মুক্ত হচ্ছে সাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) দুয়ার।
    সরকারের নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র জানায়, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর এই সাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। দেশের সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। ২০০ নৌ-মাইল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ উপকূল থেকে ৬৬৪ নৌ-মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয় দেশের সমুদ্র অঞ্চল। এই অঞ্চলের প্রাণিজ, খনিজ ও অপ্রাণিজ সব সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার।
    সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, মৎস্য জরিপের পাশাপাশি, এ বছরের মধ্যে কিংবা আগামী বছরের গোড়ার দিকেই সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজও শুরু হচ্ছে। সেই কাজে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে অংশ নেবে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সও, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সমুদ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ভারত এবং চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও সই করেছে সরকার।
    এ ছাড়া সাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতি চাঙা করার জন্য কী কী করা দরকার ও সম্ভব তা নির্ধারণ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় দুই বছরের জন্য একটি গবেষণার কাজও শুরু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। তবে সাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের প্রথম মাধ্যম হবে জরিপ জাহাজের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদের অনুসন্ধান, জরিপ ও আহরণ বাড়ানো।
    বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতিবছর আহরিত মোট মৎস্য সম্পদের নগণ্য অংশ বাংলাদেশ আহরণ করছে। বঙ্গোপসাগর থেকে গত বছর মাছ ধরা পড়েছে মোট ৮০ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ আহরণ করেছে ১ লাখ টনেরও কম। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য অনুসন্ধান ও জরিপের তথ্য সম্বল করে মাছ আহরণের পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের লক্ষ্য।
    সেই লক্ষ্যে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও মালয়েশীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় মালয়েশিয়া থেকে ৬৫ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে ‘আরভি (রিসার্চ ভেসেল) মীনসন্ধানী’ নামের জাহাজটি। বাকি টাকা অনুসন্ধান ও জরিপের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যয় সংকুলানের জন্য রাখা হয়েছে।
    গত ৬ জুন জাহাজটি দেশে আনা হয়েছে। এরপর নৌবাহিনী থেকে প্রেষণে আসা ক্রুদের প্রশিক্ষণ, জাহাজটির পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল ক্রুজিং) ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিমূলক কাজ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তারপরই শুরু হবে অনুসন্ধান ও জরিপের কাজ।

    সূত্রঃ প্রথম আলো।

    Friday, November 4, 2016

    দশ বছরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

  • Share The Gag
  • টিলা ঘেরা সবুজ পরিবেশের উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি )। মাত্র ৫০ একর জায়গা নিয়ে সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ থেকে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর দেশের চতুর্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আসছে বুধবার নয় পেরিয়ে দশ বছরে পদার্পণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্ভাবনার নাম। সিলেটের লালচে মাটির গুণগতমান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্নতর। আবার বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে হাজার হাজার একর অনাবাদি উঁচু-নিচু পাহাড়ী  অসমতল ভূমি। আছে হাওর নামের বিস্তীর্ণ জলাশয়। অপার সম্ভাবনাময় এসব প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে গবেষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদ সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর একাডেমিক কার্যক্রম দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে।

    এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রোনমি এন্ড হাওর এগ্রিকালচার  এবং কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স নামে বিশেষ দুটি বিভাগ রয়েছে যা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। একমাত্র সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েই বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে পূর্ণাঙ্গ অনুষদ রয়েছে।এখন পর্যন্ত  সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এবং মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ৫টি করে ১০টি ব্যাচ বের হয়েছে। এদিকে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদ থেকে ইতোমধ্যে ১৭টি ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে বেরোলো আরো তিনটি ব্যাচ। এরা সবাই এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করে আছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সদ্য ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদের ইন্টার্নি ডাক্তার আকাশ খাসনবিস বলেন-“ভাবতে ভালই লাগছে এখন থেকে আমি একজন ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট হতে যাচ্ছি। আমার একাডেমিক জ্ঞানটুকু এবার মাঠে কাজে লাগাবো।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধুর সম্পর্কের কারণেই আমরা সফল হয়েছি। আরো খুশি হচ্ছি যে, এখন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ভেটেরিনারি মেডিক্যাল এসোসিয়েশন তাদের দেশে প্রাকটিস করার জন্য স্টেট সার্টিফিকেট পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিবে বলে জানিয়েছে।” ছোটবড় টিলা পরিবেষ্টিত ৫০ একর আয়তনের মনোরম সিকৃবি ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা, ছোট ছোট টিলা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। “আয়তনে ছোট হলেও এর রূপ-সৌন্দর্য্য আমাদের হৃদয়ে আলাদা একটা টান ও ভালবাসা জন্মায়।”- ক্যাম্পাস সম্পর্কে নিজের অনুভূতি এভাবেই ব্যক্ত করেন কৃষি অনুষদের ছাত্রী নাহিদা আক্তার। তিনি আরো বলেন, “এখানকার বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মননশীল চিন্তা করতে সাহায্য করছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে আর আড্ডা হবে না সেটা কি হয়! কেউ কেউ আবার ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দেয় আড্ডা। এর মধ্যে ফুচকা চত্বর, জালাল মামার চায়ের দোকান, ট্যাংকির তলা, কাঁঠাল তলা, ক্যাফেটেরিয়া, ইকোপার্ক ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। গবেষণা: বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকেই সিকৃবি ক্যাম্পাসে গবেষণা হচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত গবেষণা  হল- গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ। টমেটো বা শিম এখন আর শুধুমাত্র শীতকালে চাষ হবে না।

    সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম একজন প্রথিতযশা কৃষি বিজ্ঞানী। সম্প্রতি তার তত্ত্ববধানে শিমের নতুন দুটি জাত অনুমোদন পেয়েছে। প্রোটিন সমৃদ্ধ এই জাতগুলোর তিনি নাম দিয়েছেন  সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২। শিক্ষক হিসেবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে তিনি ১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করার সময় তিনি লক্ষ্য করেন যে, শিম টমেটোসহ কয়েকটি জনপ্রিয় সবজি শুধুমাত্র শীতকালে উৎপাদিত হয়। তখনি তিনি ভাবলেন এই সবজিগুলো যদি গ্রীষ্মকালসহ সারাবছর পাওয়া যেত তাহলে খুব ভালো হতো। সেই থেকেই তিনি  গ্রীষ্মকালীন শিম ও টমেটো নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। তার সহায়তায় ইপসা শিম-১ সহ আরো কয়েকটি জাত উদ্ভাবিত হয়। ২০১১ সালে তাঁর তত্ত্বাবধানে বারি শিম-৭ নামে একটি গ্রীষ্মকালীন শিমের জাত তিনি উদ্ভাবন করেন। সিলেট এসে তিনি লক্ষ্য করেন এই অঞ্চলে শিম-টমেটোর বেশ কদর রয়েছে।

    তিনি সিলেটের গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রীষ্মকালীন শিম লাগানোর জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি গ্রীষ্মকালীন শিম-টমেটোর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে সারা বাংলাদেশে সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ জাত দুটি আলোর মুখ দেখলো। এই জাত সিলেট অঞ্চলে বছরব্যাপী ধরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের আরেক বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাশেম। হাওর এলাকার ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য তিনি গবেষণা করছেন। তাছাড়া হাওর এলাকায় সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাঠ ফসল, মাছ, গবাদিপশু-পাখির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস গবেষণা করছেন সরিষা ফসল নিয়ে। বিস্তৃর্ণ হাওর এলাকায় কিভাবে উন্নত জাতের সরিষার চাষ করে প্রচলিত ফসল ধারার উন্নয়ন করা যায় সে উদ্দেশ্যে তিনি গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। একই বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ নজরুল ইসলাম গবেষণা করছেন আগাছা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ধানের ফলন বৃদ্ধি নিয়ে। এই গবেষণা সফল হলে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সিলেট অঞ্চলে শীতকালীন ফসল চাষের জন্য পানির স্বল্পতা রয়েছে। কোথাও কোথাও অবশ্য স্বল্প পরিসওে বোরো ধানের চাষ করা হচ্ছে।

    কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের সেচ বিজ্ঞানী ড. সানজিদা পারভীন রিতু তাই ভিন্নধর্মী একটি গবেষণা চালাচ্ছেন। সিলেটের উঁচু জমিতে এমনিতেই সেচ প্রয়োগের সুযোগ তেমন নেই। সেচ সুবিধার অভাবে হেক্টরের পর হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। ড. সানজিদা ভূট্টা ফসলে সেচ বিষয়ে তাঁর গবেষণা শুরু করেছেন। এই গবেষণায় সফল হলে সিলেট অঞ্চলের “ক্রপ রোটেশন” পরিবর্তন হতে পারে। কম পানি দিয়েও বছরে ৩টি ফসল চাষ করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

    বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান অল্প খরচে মাছ দিয়ে কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছেন। এর পাশাপাশি সিলেটের জলাবদ্ধ এলাকায় ভাসমান বেড তৈরি করে প্রাণীর খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে তিনি গবেষণা করে যাচ্ছেন। বিপন্ন মাছ সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করেন মৎস্যবীদ ফিসারিজ বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল। বর্তমানে তিনি হাওর ও নদী অঞ্চলের বিলুপ্ত প্রজাতির আইড় মাছের প্রজনন নিয়ে গবেষণা করছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অর্থায়নে সিলেটের জকিগঞ্জের আমেরিকান ফিস ফার্ম লিমিটেডের সাথে যৌথভাবে তিনি এই গবেষণা কাজ সম্পন্ন করছেন। মাৎস্য-বিজ্ঞান অনুষদের পাশেই ছোট ছোট রিসার্চ পুকুর বানানো হয়েছে। এছাড়াও সারা ক্যাম্পাসের পুকুরগুলোকে গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে। আইড় মাছ ছাড়াও ক্যাম্পাসে ফ্রেশ ওয়াটারে চিংড়ি চাষ এবং তাপ দিয়ে মনোসেক্স তেলাপিয়ার লিঙ্গপরিবর্তন নিয়েও কাজ হয়েছে। মাৎস্য-বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন- “মাছ নিয়ে পড়াশুনা আমার কাছে এখন খুব অবাক লাগছে। এখানে ভর্তি না হলে জানতামই না কাটাওয়ালা এই প্রাণীটির ভেতর এতো রহস্য লুকিয়ে আছে।”

    গবেষণা মাঠ অধিগ্রহণ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃক্যাম্পাস হিসেবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ-তামাবিল বাইপাস সড়ক সংলগ্ন খাদিম নগর এলাকায় ১২.৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। গত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সিলেট জেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জায়গাটি বুঝিয়ে দেন। মাত্র ৫০ একর জমি নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যাত্রা করেছিল যার বেশির ভাগ টিলা ও জঙ্গলবেষ্টিত। উক্ত গবেষণা মাঠ প্রাপ্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এত প্রাপ্তির মাঝেও কিছু না পাওয়ার কথা রয়ে গেছে যেমন, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য অধিগ্রহণকৃত  জায়গাটিতে এখনো পুরোদমে কাজ  শুরু করতে পারেননি গবেষকবৃন্দ। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সিলেট শহরে যাতায়াতের জন্য বাস নিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায় চারহাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৩টি বাস। বাঁদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। ফলে যারা সিলেট শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসেন তারা পড়েন চরম বিপাকে। ডাইনিং এর খাবার নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। নেই ভালো খেলার মাঠ, অডিটরিয়ামটাও ছোট। সবকিছু ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবী হয়ে উঠেছে- গবেষণার জন্য মাঠ। তবে এতো সংকটের ভেতর নতুন করে সম্ভাবনা জাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন কর্মকান্ড। পুরো ক্যাম্পাসকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে নতুন নতুন অবকাঠামোয়।

    উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মকান্ড হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও খেলার মাঠ উন্নয়ন, নতুন ছাত্র ও ছাত্রী হল, উপাচার্য বাসভবন, অধ্যাপক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তা ডরমেটরি, কর্মচারী ডরমেটরি, অতিথি ভবন, নতুন আরেকটি ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ভেটেরিনারি ক্লিনিক, অস্থায়ী খামার বাড়ি, অস্থায়ী মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ। এছাড়া অসম্পূর্ণ ছাত্রহল এবং ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রটিও নির্মাণাধীন বয়েছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ ভবনের কাজ। শেষ হওয়ার পথে কেন্দ্রীয় শহিদমিনার ও কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী অর্থাৎ ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: গোলাম শাহি আলম দেখালেন আশার স্বপ্ন-“মাত্র কয়েক বছরে ছয়টি অনুষদকে সাথে নিয়ে সিকৃবি ঈর্ষণীয় সাফল্যের পথে হাঁটছে। সিকৃবির হাত ধরেই সিলেট তথা সমগ্র বাংলাদেশে কৃষিতে বিপ্লব আসবে যার কর্ণধার হবে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি হওয়া যোগ্য কৃষিবিদ।” স্কুলে ভর্তি হবার পর বাবা-মা তাদের সন্তানদের মাথায় শুধু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ভূত চাপিয়ে দেন। কিন্তু  কৃষিও একটি মহান পেশা। শুধুমাত্র কৃষিবিদদের গবেষণা ও পরিশ্রমের ফলে কৃষক আজ টনকে টন ধান, পুকুর ভরা মাছ ঘরে তুলছে, মাংস ও ডিমের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে। যার সুফল হিসেবে বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়েও বছরে ২-৩ লাখ টন চাল রপ্তানির সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিক থেকে পোশাক এবং জনশক্তির পর এখন মাছ ও শাক-সবজির অবস্থান। উত্তর পূর্বাঞ্চলের তথা দেশের সামগ্রিক কৃষির এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি আশার প্রতিশ্রুতি। ছায়া-সুনিবিড়, সবুজ টিলায় ঘেরা ছোট্ট সুন্দর ক্যাম্পাসের এক দশক পূর্তিতে তাই ক্যাম্পাসের সকলের মনে রঙ লেগেছে।

    লেখক: কর্মকর্তা, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

    Thursday, November 3, 2016

    ড্রাগন ফল চাষ

  • Share The Gag
  • ড্রাগন ফ্রুটঃ ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল সেট্রাল আমেরিকা। সেন্ট্রল আমেরিকাতে এ ফলটি প্রবর্তন করা হয় এয়োদশ সেঞ্চুরীতে। দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে মালেশিয়াতে এ ফলের প্রবর্তন করা হয় বিংশ শতাব্দীর শেষে। তবে ভিয়েতনামে এ ফল ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। তবে বর্তমানে এ ফলটি মেক্সিকো, সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ফল প্রথম প্রর্বতন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার, ২০০৭ সালে। এ সেন্টারের পরিচালক প্র. ড. এম. এ. রহিম এ  ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড থেকে। এখন এ সেন্টার থেকে এ ফলটি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বংশ বিস্তার করা হচ্ছে। ড্রাগন ফল ক্যাকটাস পরিবারের একটি ফল। গাছ দেখে সবাই  একে চির সবুজ  ক্যাক্টাস বলেই মনে করেন। এশিয়ার মানুষের কাছে এ ফল অনেক জনপ্রিয়, হালকা মিষ্টি-মিষ্টি। এ ফলকে ড্রাগন ফল ছাড়াও পিটাইয়া, টিহায়া ইত্যাদিও নামে ডাকা হয়। এ গাছে শুধুমাত্র রাতে ফুল দেয়। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ। যাকে ‘মুন ফ্লাওয়ার’ অথবা ‘রাতের রাণি’ বলে অভিহিত করা হয়। ইহা একটি লতানো গাছ কিন্তু এর কোন পাতা নেই। ইহা একটি স্বপরাগায়িত ফুল। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় এর পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়ন করা যেতে পারে।  এ গাছ উজ্জ্বল আলো পছন্দ করে। এ গাছ ১.৫-২.৫ মিটার লম্বা হয়। তবে এ গাছকে উপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের সাথে উপরের দিকে তুলে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া উপরের দিকে ছোট মোটর গাড়ীর (মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার) চাকা বাঁশের চ্যাগারের মাধ্যে সেট করে খুব সহজেই এ গাছের লতা গুলোকে বাড়তে দেওয়া যায়।




    পুষ্টি ও ব্যবহারঃ সব ডায়েটের জন্য এ ফলটি উপযুক্ত। এটি ফাইবার সরবরাহ করে যা ল্যাক্সটিভ এবং লিভার এর জন্য উত্তম। খাবারের পর ডের্জাট হিসাবে খাওয়া হয়। এ ফলটি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত। এ ফলটি জুস তৈরিতে প্রচুর পরিমানে ব্যবহৃত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে ফাইবার ০.৯ গাম, ফ্যাট ০.৬১ গ্রাম, এ্যাশ ০.৬৮ গ্রাম, ক্যারোটিন ০.০১২ গ্রাম, পানি ৮৩.০ গ্রাম, ফসফরাস ৩৬.১ মি. গ্রাম, এসকোরবিক এসিড ৯.০ মি. গ্রাম, প্রোটিন ০.২২৯ গ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.০৪৫ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮.৮ গ্রাম, নায়াসিন ০.৪৩০ মি. গ্রাম, আয়রন ০.৬৫ মি. গ্রাম থাকে। এ ছাড়া এ ফল উৎপাদিত দেশ গুলোতে ফলের ডিশের সাথে এ ফল না থাকলে যেন ডিশ অপূর্ণ থাকে যা দেখতে অত্যান্ত   আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। একটি তাজা ফল খেয়ে মানব শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখা যায় অনেক খানিই। যে সমস্ত মানুষ ডায়াবেটিক রোগে ভোগেন তারা এ ফল খেয়ে শরীরের রক্তের গ্লুকোজকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ফ্রেশ ফলের চেয়ে শুষ্ক ফল বেশী কার্যকরী। এ ফল সালাদের সাথেও ব্যবহার করা যায়।




    জলবায়ু ও মাটিঃ এ ফলটির জন্য শুষ্ক ট্রপিক্যাল জলবায়ু প্রয়োজন। মধ্যম বৃষ্টিপাত এ ফলের জন্য ভালো। উপযুক্ত বৃষ্টিপাত ৬০০-১৩০০ মি.মি. ও তাপমাত্রা ৩৮-৪০° সে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ফুল ঝরে পরে এবং ফলের পচন দেখা দেয়। ফলে যেখানে পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে এ ফলটি সঠিকভাবে চাষ করা যায়। তবে ক্যাক্টাসের মতো  এ ফলটি শুষ্কুতা সহ্য করতে পারে না। উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে এ ফল চাষের জন্য উত্তম। তবে অবশ্যই পানি সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।




    জাতঃ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য



    • লাল ড্রাগন ফল (লাল ফ্লেশ ও লাল চামড়া যুক্ত)

    • হলুদ ড্রাগন ফল (হলুদ চামড়া ও সাদা ফ্লেশশযুক্ত)

    • লাল ড্রাগন ফল (লাল চামড়া ও সাদা ফ্লেশশযুক্ত)

    • কালচে লাল ড্রাগন ফল (কালো ফ্লেশশযুক্ত ও কালচে চামড়া যুক্ত)।



    ফলঃ গোলাকার থেকে ডিম্বাকার উজ্জ্বল গোলাপী থেকে লাল রংয়ের ফল। যার ওজন ২০০-৭০০ গ্রাম। এ ফল গুলো ৭-১০- সে.মি. চওড়া এবং ৮-১৪ সে.মি. লম্বা হয়। ভিতরের পাল্প সাদা, লাল, হলুদ ও কালো রংয়ের হয়। পাল্পের মধ্যে ছোট ছোট কালো নরম অনেক বীজ থাকে। এই বীজগুলো দাঁতের নীচে পড়লে সহজেই গলে যায়। এ ফলগুলো হালকা মিষ্টি-মিষ্টি। এর মিষ্টতা (টি.এস.এস./ব্রিক্স ১৬-২৪%) । ফলগুলো দেখতে ড্রাগনের চোখের মত রং ও আকার ধারন করে। ফলটির সামনের শেষের দিকে হালকা গর্তের মতো থাকে। এ ফলের চামাড়ার উপরে আনারসের মতো স্কেল থাকে।




    দুরত্ব ও রোপনঃ গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩ মি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩ মি. দিয়ে হেক্সাগোনাল পদ্ধতি ব্যবহার করে  এ গাছ লাগানো উত্তম। তবে অবস্থাভেদে দূরত্ব কম বা বেশি দেওয়া যেতে পারে। গাছ লাগানোর সময ৫০-৭০ ঘন সে.মি. আকারের গর্ত করে, পুরোগর্তের ২/৩ ভাগ পঁচা গোবর দিয়ে ভালোভাবে মিশায়ে এ গাছ লাগানো ভাল। তবে গোবরের পরিমাণ ও গর্তের আকার কম বা বেশী হতে পারে । ক্যাকটেসি পরিবারের গাছ বিধায় বছরের যে কোন সময়ই লাগানো যায় তবে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে লাগানো ভালো।




    বংশ বিস্তারঃ এ ফলের বংশ বিস্তার অত্যান্ত সহজ। বীজ দিয়েও বংশ বিস্তার করা যেতে পারে। তবে এতে ফল ধরতে একটু বেশি সময় লাগে। সেজন্য কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই উত্তম। কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং ফলও তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিংকৃত একটি গাছ থেকে ফল ধরতে ১৮-২৪ মাস সময় লাগে।




    রোগ বালাই ও পোকা-মাকড়ঃ এ ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তবে মূল পচা, কান্ড ও গোড়া পচা রোগ দেখা যায়।




    মূল পচাঃ অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পচে যায়। তবে এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে উঁচু জমিতে এ ফলের চাষ করা ভাল। এ রোগটি ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে।




    কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগঃ ছত্রাক অথবা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গাছের কান্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবতীতে ঐ অংশে পচন শুরু হয় এবং পঁচার পরিমান বাড়তে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাক নাশক (বেভিস্টিন, রিদোমিল, থিওভিট) ইত্যাদি প্রয়োগ করে সহজেই দমন করা যায়।




    পোকা-মাকড়ঃ পোকা-মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।




    এ পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ করে ফলে শুটিমোল্ড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়।  এতে গাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যহত হয়। ফলে ফুল ও ফল ধারন কমে যায়। এ পোকা দমনের জন্য যে কোন কীটনাশক যেমন সুমিথিয়ন/ডেসিস/ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মি.লি./৫ক্যাপ ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।




    ফলনঃ দেড় থেকে দুই বছর বয়সের একটি গাছে ৫-২০টি ফল পাওয়া যায় কিন্তু পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে ২৫-১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় । হেক্টর প্রতি  ফলন ২০-২৫ টন।




    ড্রাগন ফলের চারার জন্য যোগাযোগ করুন - ০১৭৭১৬২৫২৫২, ০১৯৭১৬২৫২৫২

    দেশি শিম চাষ

  • Share The Gag
  • শীমের ইংরেজী নাম Bean।শীতকালে দেশী শিম খুবই জনপ্রিয় সবজি। শীত মৌসুমের শুরুতেই সরবরাহ কম থাকায় দাম থাকে চড়া। আমিষসমৃদ্ধ এই শিম তরকারি হিসেবে দু’ভাবে খাওয়া হয়। দেশী শিম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন সবজি। এটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং সব শ্রেণীর লোকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিমের কচি শুঁটির বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও শ্বেতসার থাকে বলে খাদ্য হিসেবে খুবই উপকারী। তা ছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ থাকে। আমাদের দেহের পুষ্টিসাধনে এসব পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
    শিম সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি দেশী শিম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। পানি জমে না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি শিম চাষের জন্য বেছে নেয়া ভালো।
    বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটিউট উদ্ভাবিত দেশী শিমের জাত বারি শিম-১ ও বারি শিম-২ চাষের জন্য বেশ ভালো। এ ছাড়া বারমাসী সাদা ইপসা-১ ও বারমাসী বেগুনি ইপসা-২ জাত দুটিও প্রায় সারা বছর চাষ করা যায়।

    উপয়োগী জমি ও মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন সবেচেয়ে ভালো হয়।

    জাত নির্বাচন : শিমের বিভিন্ন জাতের মধ্যে ঘৃতকাঞ্চন, নলডক, আশ্বিনা, কার্তিকা, হাতিকান, বৌকানী, রূপবান, বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩, বারি শিম-৪, ইপসা-১ ও ইপসা-২ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

    বীজ বপনের সময় : আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

    মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ : দেশী শিম প্রধাণত মাদা প্রথায় বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুরপাড়ে, পথের ধারে ও জমির আইলে চাষ করা হয়। তবে সারি করে চাষ করা হলে ১ মিটার দূরত্বে সারি করে প্রতি সারিতে ৫০ সেমি পর পর ৪৫ সেমি লম্বা, ৪৫ সেমি চওড়া ও ৪৫ সেমি গভীর করে মাদা তৈরি করতে হয়। তারপর প্রতি মাদার মাটির সাথে ১০ কেজি পচা গোবর, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে মাদা ভরাট করতে হবে। বীজ বপনকালে বর্ষা থাকে, তাই মাদায় যাতে পানি না জমে সে জন্য জমির সাধারণ সমতল হতে মাদার ভরাট মাটি ৫ সেমি পরিমাণ উঁচু রাখতে হয়।

    বীজ বপন : মাদায় সার প্রয়োগের ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় দুই-তিনটি বীজ ফাঁক ফাঁক করে ২.৫-৩.০ সেমি গভীরে বপন করতে হয়। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর প্রতি মাদায় দু’টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে তাড়াতাড়ি চারা গজায়। এক শতক বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে ৪০ গ্রাম (হেক্টরে ৫-৭ কেজি) শিম বীজের প্রয়োজন হয়।

    পরবর্তী পরিচর্যা : সিমের চারা ও তার আশপাশের আগাছা নিড়ানি দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। তা ছাড়া মাঝে মধ্যে নিড়ানি দিয়ে চারার গোড়ার মাটি খুঁচিয়ে আলগা ও ঝুরঝুরে করে রাখতে হবে। শিমের খরা সহ্য করার মতা থাকলেও বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের ঘাটতি হলে পানি সেচ দিতে হবে।

    উপরি সার প্রয়োগ : শিমের জমিতে সার উপরি প্রয়োগের কাজ দুই কিস্তিতে করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারা গজানোর এক মাস পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি গাছে দুই-চারটি ফুল ধরার সময়। প্রতি কিস্তিতে মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গোড়া থেকে ১০-১৫ সেমি দূরে) উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের সময় মাটিতে রসের অভাব হলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।

    মাচা বা বাউনি দেয়া : শিমগাছ বাওয়ার সুযোগ যত বেশি পায়, ফলন তত বেশি হয়। তাই শিমগাছ যখন ১৫-২০ সেমি লম্বা হবে তখন গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা (কঞ্চিসহ) মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। এ ঝড়ে শিমগাছ ছড়িয়ে পড়ে ভালো ফুল ও ফল দিতে পারে। দেশীয় পদ্ধতিতেও বাঁশের মাচা বা ঝিকাগাছে অথবা ছনের ঘরের চালে শিমগাছ তুলে দেয়া যায়। এ ছাড়া বাঁশের চটা ও কঞ্চির সাহায্যে ইংরেজি ‘অ’ অরের মতো কাঠামো তৈরি করে জমিতে মাচা দিয়েও শিমগাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

    রোপনের আগে পরে করনীয় ও পরিচর্যা:
    আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দেশী শিমের বীজ বপন করার সময়। তবে শ্রাবণ মাস উপযুক্ত সময়। যে মাসেই বীজ বপন করা হোক, অগ্রহায়ণের শেষ বা কার্তিক শুরুর আগে কোনো গাছেই ফুল ও ফল ধরে না। ব্যতিক্রম বারমাসী জাত। দেশী শিমে যেহেতু আগাম, মাঝারি ও নাবী জাত আছে, তাই জাতের সঠিক তথ্য না জেনে চাষ করলে সময়মতো ফলন পাওয়া যায় না।
    দেশী শিম ক্ষেত ছাড়াও বসতবাড়ির দেয়ালের পাশে, আঙিনার ধারে ছোট মাচায়, ঘরের চালে, পুকুর ও রাস্তার ধারে এবং ক্ষেতের আইলে চাষ করা যায়। ক্ষেতে চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হয়। এর পর ১০ ফুট দূরত্বে সারি করে সারিতে ৫ ফুট পর পর গর্ত বা মাদা তৈরি করতে হয়। দেড় ফুট চওড়া ও দেড় ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে গর্তের মাটির সাথে ১০ কেজি জৈব বা গোবর সার, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে ৬ থেকে ৭ দিন রেখে দিতে হয়। এতে সার চারাগাছের গ্রহণ উপযোগী হতে পারে। অন্যান্য স্খানে লাগানোর জন্য একই রকম গর্ত ও সার ব্যবহার করতে হয়।
    প্রতি শতক জমিতে ৪০-৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ বপন করতে হয়। চারা গজালে ১ বা ২টি সুস্খ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়। তবে বীজের স্বল্পতা থাকলে বা ভালো চারা রোপণ করতে চাইলে পলিব্যাগে বীজ থেকে চারা তৈরি করে নেয়া যায়। এতে বাছাই করা সুস্খ-সবল রোগ বা পোকামুক্ত শিমের চারা মাদায় রোপণ করা যায়। অন্য দিকে বৃষ্টির কারণে জমিতে বীজ বপন করতে না পারলে কিংবা জমিতে অন্য ফসল থাকলে সময়মতো পলিব্যাগে চারা তৈরি করা ভালো।
    চারা গজানোর পর গাছে শাখা-প্রশাখা না আসা অথবা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা রাখাসহ আগাছা জন্মাতে দেয়া ঠিক নয়। গাছ কিছুটা লম্বা হলে প্রথমে কাঠি ও পরে বাউনির জন্য মাচার ব্যবস্খা করতে হয়। বৃষ্টির পানি যাতে গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সে জন্য নিষ্কাশনের নালা কেটে রাখতে হয়। বৃষ্টিতে গাছের গোড়ার মাটি ধুয়ে গেলে মাটি দিয়ে গোড়ার চার দিক এমনভাবে উঁচু করে দিতে হয় যাতে পানি সহজেই গড়িয়ে যায়। এ সময়ে গাছের গোড়ার দিকের প্রথম ২ থেকে ৩টি পার্শ্ব শাখা ছাঁটাই করে দিতে হয়। এই শাখাগুলো থেকে তেমন একটা ফল পাওয়া যায় না।
    শিমের চারা বড় হতে থাকলে অর্থাৎ মাচায় উঠতে শুরু করলে ১ম বার ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এর পর গাছের বৃদ্ধির ধরন অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর আরো ২ বার একই হারে সার উপরি প্রয়োগ করা যায়। তবে গাছের বৃদ্ধি ভালো হলে বা পাতার সংখ্যা বেশি হলে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ না করাই ভালো।

    শিমের রোগবালাই
    পাতার রোগ : দেশী শিমের পাতায় কালো দাগ ও ফোস্কা পড়া দেখা দিলে মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। আর পাতায় হলুদ মোজাইক রোগ হলে গাছটি তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। রোগটি হয় জ্যাসিড বা সাদা মাছির কারণে। এ জন্য অন্যান্য সুস্খ গাছে ইমিডাক্লোরপিড বা ফেনথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করে জ্যাসিড বা সাদামাছি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

    গোড়া ও শিকড় পচা রোগ :
    শিকড় পচা রোগ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে বাকি গাছে ও মাটিতে ভালো করে কার্বেন্ডাজিম- জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। শিমের গোড়া ও শিকড় পচা রোগ সাধারণত বর্ষার শুরুতে বা অতি বর্ষণের ফলে গোড়ায় পানি জমলে হয়। তবে মাঝে মাঝে আবহাওয়ার আর্দ্রতা বেড়ে গেলে ও উচ্চ তাপমাত্রায় গোড়া পচা রোগের প্রকোপ বাড়ে। গাছের বৃদ্ধির যেকোনো অবস্খাতেই এ রোগ হতে পারে। মাটির ঠিক ওপরে গাছের কাণ্ডে লালচে বাদামি দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে এই দাগ বিস্তার লাভ করে। বেশি হলে শিকড়েও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত অংশ আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়। ফলন কম হয়। কখনো কখনো গাছ মরেও যেতে পারে। চারা অবস্খায় আক্রান্ত হলে চারা মারা যায়। অন্য সুস্খ গাছে বিশেষ করে গাছের গোড়ায় কপারযুক্ত ছত্রাকনাশক বা বাড়িতে তৈরি বোর্দো মিশ্রণ ৭ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।

    মরিচা রোগ :
    দেশী শিমগাছের বয়স্ক অবস্খায় মোজাইক বা মরিচা রোগ দেখা যায়। এটি ছত্রাকঘটিত রোগ। মাঘ মাসের শুরুর দিকে বিশেষ করে এ সময় দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে বা বেশি কুয়াশা হলে এই রোগ দেখা দেয়। শিমগাছের পাতায় বিশেষ করে নিচের দিকের পুরনো পাতায়, কাণ্ডে ও ডগায় বা কখনো কখনো শুঁটিতে মরিচা রোগের আক্রমণ দেখা যায়। এর আক্রমণে ছোট ছোট বাদামি ধূসর রঙের দাগ পড়ে পাতায়। পরে দাগগুলো আকারে বাড়ে, গোলাকার বা কোণবিশিষ্ট হয় এবং গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে। শেষে বড় দাগগুলো কালো রঙে রূপান্তরিত হয়। সাধারণত দাগগুলো একত্রিত হয়ে এক জায়গায় থাকে এবং অনেক সময় পরস্পর মিশে গিয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে। মরিচা রোগ প্রতিকারের ভালো উপায় হচ্ছে রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করা। বারি ও ইপসা জাতের শিমগুলো এই রোগ প্রতিরোধী। একবার এ রোগে গাছ আক্রান্ত হলে রোগ দমন করা যায় না। গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়।

    হলুদ মোজাইক রোগ:
    দেশী শিমের আরেকটি রোগ প্রায়ই দেখা যায়, তা হলো হলুদ মোজাইক রোগ। এ রোগে প্রথমে কচি পাতায় ছাড়া ছাড়াভাবে হলদে দাগ দেখা যায়। দাগগুলো আস্তে আস্তে পুরো পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। হলদে হয়ে যাওয়া পাতার কিছু কিছু অংশ সবুজই থাকতে পারে। আক্রান্ত হওয়ার পর গজানো নতুন পাতায় হলদে ভাব আরো বেশি দেখা যায়। কখনো কখনো পাতার বিকৃতিও ঘটে। পাতা আকারে ছোট হয় ও কিছুটা কুঁচকে যায়। এক ধরনের সাদামাছি এই রোগ ছড়ায়। যেকোনো অন্তর্বাহী কীটনাশক (যেমন-বাইফেনথ্রিন বা ইমিডাক্লোরপিড) ১ থেকে ২ মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে পোকা ও রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। এ ছাড়া রোগমুক্ত মাঠ বা গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয় পরবর্তী ফসলের জন্য। আক্রান্ত ক্ষেতের আশপাশের শিমজাতীয় সব গাছে (ফরাসি শিম, ঝাড় শিম, চওড়া শিম, চারকোনা শিম, তলোয়ার শিম, মটরশুঁটি, সয়াবিন, মেথি, খেসারিশাক, ছোলাশাক ও বরবটি) একই সাথে কীটনাশক স্প্রে করা উচিত। কীটনাশক স্প্রে করার আগে সংগ্রহযোগ্য সব ফল বা শুঁটি সংগ্রহ করে নিতে হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে গাছ থেকে কোনো ফসল সংগ্রহ করা যাবে না।

    জাব পোকা:
    দেশী শিমে জাব পোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। ফুল বের হওয়ার সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। কেরোসিন মিশ্রিত ছাই পাতায় ছিটিয়ে এই পোকা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে গাছের গোড়া ও মাচার খুঁটি, যা মাটি সংলগ্ন থাকে সেখানেও এই ছাই ছিটিয়ে দিতে হয় যাতে পিঁপড়া খুঁটি বা গাছ বেয়ে উঠতে না পারে। পিঁপড়া জাব পোকার গা থেকে নি:সৃত এক প্রকার আঠালো পদার্থকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। তাই শিমগাছে জাব পোকা দেখা দিলে পিঁপড়াও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরপিড- জাতীয় কীটনাশক ১৫ দিন পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হয়।

    শুঁটির মাজরা পোকা:
    দেশী শিমের একটি বড় সমস্যা শুঁটির মাজরা পোকা। বাদামি রঙের পূর্ণ বয়স্ক পোকা ফুল বা কচি শিমের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বা কিড়া বের হয়ে শুঁটির ভেতরে প্রবেশ করে কচি বীজ ও শাঁস খায়। ভেতরেই মল ত্যাগ করে। এ অবস্খায় শুঁটি কিছুটা বড় হয়। কিন্তু শিমের বাণিজ্যিক মূল্য একেবারেই থাকে না। ফুলের কুঁড়িতে ডিম পাড়লে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর পুষ্পমঞ্জরি খেতে থাকে। পরে পাতায় ছোট ছোট জালের মতো তৈরি করে। পাতা, ফুল ও কচি শুঁটি দিয়ে বাসার মতো তৈরি করে সেখানে লুকিয়ে থাকে। এই পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য শস্যপর্যায় অবলম্বন করা উচিৎ। অর্থাৎ পরপর দুই-তিন মৌসুম একই জমিতে দেশী শিমের চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এতে এই পোকার জীবনচক্র বাধাপ্রাপ্ত হয়। ওই সময়ে কোনো ডালজাতীয় শস্যও চাষ করা যাবে না। কারণ ডাল শস্য এই পোকার বিকল্প পোষক। প্রতি গাছে বা প্রতি বর্গমিটারে যদি ১ থেকে ৩টি পোকার আক্রমণ দেখা যায় তাহলে ফেনিট্রোথিয়ন গ্রুপের কীটনাশক (৫০ ইসি) প্রতি লিটারে ২ মিলিলিটার কিংবা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটারে ১ মিলিলিটার হিসেবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। স্প্রে করার আগে সংগ্রহ করার মতো শিম সংগ্রহ করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে কোনো শিম সংগ্রহ করা উচিত নয়।
    দেশী শিম প্রতি সপ্তাহে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে হয়। জাতভেদে কার্তিক মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত শিম সংগ্রহ করা যায়। ভালোভাবে পরিচর্যা করা হলে শতকপ্রতি প্রায় ৪০ কেজি শিম পাওয়া যায়। আবার শুকনো শিম বা শুঁটির বীজ সংগ্রহ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বিঘা দেশী শিম চাষের জন্য পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আগাম শিম বাজারে তুলতে পারলে প্রতি কেজি কমপক্ষে ২০ টাকা হিসেবে ১ বিঘায় উৎপাদিত প্রায় ১৩০০ কেজি শিমের দাম ২৬০০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় প্রায় হাজার বিশেক টাকা লাভ হয়। তবে ভরা মৌসুমে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমে আসে এবং লাভও কমতে থাকে।

    ফসল সংগ্রহ : শিমের কচি শুঁটি, অপক্ব বীজ এবং পরিপক্ব বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একই ফসল থেকে প্রথম দিকে গুঁটি ও শেষের দিকে বীজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। গাছ তিন মাসের বেশি সময়ব্যাপী ফল দিতে থাকে।

    ফলন : প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি (হেক্টর প্রতি ৮-১০ টন) শিম পাওয়া যায়।
    লেখক: খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম, কৃষিবিদ

    পটল চাষ

  • Share The Gag
  • পটল একটি প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি। বাংলাদেশের সবজায়গাতেই পটলের চাষ হয় না। বৃহত্তর রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়া ও যশোর জেলায় ব্যাপকভাবে পটলের চাষ করা হয়। বর্তমানে ফরিদপুর ও খুলনা জেলায় পটল জন্মে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে যখন সবজির অভাব দেখা দেয় তখন পটল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে কাজ করে। জাতভেদে পটোলের ফলন প্রতি হেক্টরে চার টন থেকে ১৫ টন পাওয়া যায়।



     জাত




    বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে পটোলের বিভিন্ন জাত দেখা যায়।  যেমন-লম্বা ও চিকন, খাটো ও মোটা, গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ। ডোরা কাটা ও ডোরা কাটা বিহীন, পুরু ত্বক থেকে হালকা ত্বক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পটলের দুটি জাত আবিষ্কার করেছে। জাত দুটো উচ্চ ফলনশীল ও রোগবালাই সহ্য করতে পারে সেগুলো হলো 'বারি পটল-১' ও 'বারি পটল-২'। হেক্টর প্রতি ফলন ৩০ থেকে ৩৮ টন।



    বংশবিস্তার




    এটি কান্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। শাখা কলমের ক্ষেত্রে পরিপক্ব কান্ড ব্যবহার করা হয়। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কান্ড মরে গেলেও শিকড় জীবিত থাকে। ফলে এই শিকড় থেকেই আবার গাছ জন্মে। রোপণের আগে পটোলের শিকড় গজিয়ে নিলে বেশি ভালো হয়।



    জলবায়ু ও মাটি




    উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু পটল চাষের জন্য বেশি তাপমাত্রা ও সূর্যালোকের প্রয়োজন। বন্যামুক্ত ও পানি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি পটল চাষের জন্য ভাল। নদীর তীরে পলিযুক্ত মাটিতেও পটল চাষ করা যায়।



    রোপণ সময়




    অক্টোবর থেকে  নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পটল রোপণের উপযুক্ত সময়। পটল চাষের কথা চিন্তা করলে অক্টোবর মাসের আগেই জমি তৈরি করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকলে শাখা কলম শুকিয়ে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে পলিব্যাগে শাখা কলম লাগানোর মাধ্যমে চারা গজিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে তীব্র শীত পড়ার আগেই গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি হয়। ফলে মোট জীবনকাল বেশি হলে আগাম ফলন পাওয়া যায় এবং যার বাজার মূল্য তুলনামূলক অনেক বেশি পাওয়া যায়। কারণ এগুলো ফেব্রুয়ারি -মার্চ মাসে বাজারে চলে আসে। ডিসেম্বর মাসেও পটল পাওয়া  সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিব্যাগে চারা তৈরি করে অবশ্যই আগস্ট মাসে তা জমিতে লাগাতে হবে। অন্য দিকে খরিপ মৌসুমের জন্য যেগুলো ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লাগানো হয় সেটা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জীবনকাল তুলনামূলক কম হয়। এদের ফলন তুলনামূলক বেশি হয়।
    বারি পটল-১ ও বারি পটল-২ চাষ করলে গাছ লাগানোর ৯০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে (প্রায় তিন মাস) ফলন পাওয়া যায়। পটল চাষের ক্ষেত্রে কয়েক দফায় শাখাকলম লাগানো যায় এবং গাছ থেকে সারা বছর ফলন পাওয়া যায়।



    জমি তৈরি ও চারা রোপণ




    প্রথমে মাটি ভালো করে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে নেয়া উচিত। জমিকে  ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমান করে নিতে হবে। বেড পদ্ধতিতে পটল চাষ করলে ফলন ভালো হয় এবং বর্ষাকালে ক্ষেত নষ্ট হয় না। সাধারণত একটি বেড ১.০-১.৫ মিটার চওড়া হয়। বেডের মাঝামাঝি এক মিটার থেকে দেড় মিটার বা দু’হাত থেকে তিন হাত পর পর মাদায় চারা রোপণ করতে হয়। এক বেড থেকে আর এক বেডের মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে। মাদা বা পিট তৈরি মাদা বা পিটের আকার- দৈর্ঘ্য- ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থ- ৫০ সেন্টিমিটার গভীরতা- ৪০ সেন্টিমিটার, নালা- ৭৫ সেন্টিমিটার মাদা থেকে মাদার দূরত্ব-১.০-১.৫ মিটার মাদায় গাছের দূরত্ব-৭.০-১০.০ সেন্টিমিটার গভীরতা-৫০ সেন্টিমিটার মোথার সংখ্যা ১০,০০০/হেক্টর স্ত্রী গাছপ্রতি ১০টি স্ত্রী গাছের জন্য ১টি পুরুষ গাছ সুষ্ঠু পরাগায়নের ক্ষেত্রে ১০% পুরুষ জাতের গাছ লাগানো উচিত এবং এসব গাছ ক্ষেতের সব অংশে সমানভাবে ছড়িয়ে লাগানো উচিত। গোবর বা আবর্জনা সার ভালোভাবে পচানো দরকার। পটল দীর্ঘমেয়াদি সবজি ফসল, এ জন্য মে মাস থেকে ফসল সংগ্রহের পর প্রতি মাসে হেক্টরপ্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৪ কেজি এমপি সার উপরি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে ফলন বেশি হবে।



    সারের মাত্রা ও প্রয়োগ




    মাদা প্রতি ১.০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম খৈল, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৭০ গ্রাম টিএসপি, ১৩০ গ্রাম এমওপি, ২০ গ্রাম বোরণ সার এবং ১৫০ গ্রাম জিপসাম সার রোপণের সময় প্রয়োগ করা হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল ধরা কমে গেলে সে ক্ষেত্রে মাদাপ্রতি ৫০০ গ্রাম গোবর সার, ৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৯০ গ্রাম টিএসপি, ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করলে ফলন অনেক বেড়ে যায়। ইউরিয়া ছাড়া সব সার গুলোই শেষ চাষের সময় জমিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজারোর ১৫-২০ দিন পর ১ম কিস্তি, এর ১৫-২০ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ১৫-২০ দিন পর তৃতীয় কিস্তি দিতে হবে।



    মাচা তৈরি




    পটল লতানো প্রকৃতির উদ্ভিদ, তাই এগুলো মাটির ওপর কিংবা খড় বিছিয়ে উৎপাদন করলে গায়ে সাদা সাদা ফ্যাকাসে বা হলুদ বর্ণের হয়ে পড়ে। এতে পটোলের বাজার মূল্য এবং রফতানিযোগ্যতা কমে যায়। মাচা সাধারণত দু ধরনের হয় - বাঁশের আনুভূমিক মাচা ও রশি দিয়ে তৈরি উলম্ব মাচা।



    পানি নিকাশ




    পটল জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টি বা সেচের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সে পানি সময়মতো নালা দিয়ে বের করে দিতে হবে।



    হাত পরাগায়ন




    পটল পরপরাগায়ন জাতীয় সবজি। পটোলের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ ভিন্ন হয়। ১০ ভাগ পুরুষ গাছ জমিতে সুষম দূরত্বে থাকলে অধিক পরাগায়ন হয়। পরাগায়ন না হলে ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। চারা লাগানোর ৯০ দিনের মাথায় পটলের ফুল আসতে শুরু করে। পটলের পরাগায়ন সাধারণত বাতাস এবং কীটপতঙ্গের দ্বারা হয়ে থাকে। তবে জমিতে পুরুষ ফুলের সংখ্যা খুব কমে গেলে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন করা প্রয়োজন হয়। সকাল ৬টা থেকে ৭টা পটলের পরাগায়ন করার উপযুক্ত সময়। কৃত্রিম পরাগায়ন করার জন্য একটি পুরুষ ফুল তুলে নিয়ে পুংকেশর ঠিক রেখে পাপড়িগুলি ছিড়ে ফেলতে হয়। তারপর পুংকেশর দ্বারা সদ্যফোটা প্রতিটি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ড ২-৩ বার স্পর্শ করতে হবে। এর ফলে গর্ভমুখের মাথায় পরাগরেণু আটকে যাবে এবং পরাগায়ন হবে। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৮-১০ টি স্ত্রী ফুল পরাগায়ন করা যায়। এছাড়াও পরুষ ফুল সংগ্রহ করে পরাগরেণু আলাদা করে পানিযুক্ত একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে হালকা ঝাকি দিয়ে পরাগরেণু পানিতে মিশিয়ে পরাগরেণু মিশ্রিত পানি ড্রপার দিয়ে ১ ফোটা করে প্রতিটি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুখে লাগিয়েও পরাগায়ন করা যায়। কৃত্রিম পরাগায়নের ফলে পটলের ফলন অনেক বেড়ে যায়।



    আন্তঃপরিচর্যা
    পটল লতানো জাতীয় গাছ হওয়ায় বাউনী বা মাচা দিলে ফলন অনেক বেশি হয় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম হয়। এছাড়া মাটির উপর খড়-কুটা বা কচুরীপানা দিয়ে তার উপর পটল গাছ তুলে দিলে তা থেকেও ভাল ফলন পাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে মাটির সংস্পর্শে এসে পটল রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, পটলের ফুল ও ফল নষ্ট হয়ে যায়, আগাছা বেশি হয় এবং রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এছাড়া পটলের নীচের দিক সাদাটে রং-এর হয়। প্রতি ৪টি মাদার জন্য একটি করে মাচা দেওয়া হলে ফসলের পরিচর্যা ও পটল সংগ্রহ সুবিধা হয়।




    মুড়িফসল হিসাবে পটল




    পটল মুড়ি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। উঁচু জমিতে পটোলের মুড়ি ফসল করা হয়। এ ক্ষেত্রে অক্টোবর মাসে পটোলের জমির আগাছা ও শুষ্ক পুরনো লতা ছেটে দেয়া হয়। কোঁদাল দিয়ে জমি কুপিয়ে দিতে হয়। এতে গাছ নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হয়। মুড়ি ফসলে মূল ফসলের অনুরূপ সার প্রয়োগ ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে হয়। মুড়িফসলে মূল ফসলের চেয়ে বেশি ফলন হয়। পটল গাছে প্রথম বছর কম ফলন হয়। দ্বিতীয় বছর ফলন বেশি হয়, তৃতীয় বছর ফলন কমতে থাকে। একবার লাগানো গাছ তিন বছরের বেশি রাখা উচিত নয়।



    পটলের পোকামাকড়




    পটলের গাছ ও ফল বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলের মাছি পোকা, কাটালে পোকা, উঁই পোকা, মিলিবাগ, সাদা মাছি ও লাল মাকড় অন্যতম।




    ফলের মাছি পোকা




    ফলের মাছি পোকা কচি ফলের ভেতর ছিদ্র করে ও ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ক্রীড়া বের হয়। এরা ফলের নরম অংশ খেয়ে পূর্ণ বয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে।




    প্রতিকার




    ক্ষেত পরিষ্কার রাখা। পোকা দমনে ফাঁদের ব্যবহারও ব্যাপক জনপ্রিয়। বিষটোপ আরেকটি জরুরি দমন উপাদান। এ ছাড়া সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। আক্রমণ মারাত্মক হলে ডিপটেক্স ৮০ এমপি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর তিন থেকে চারবার স্প্রে করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।



    কাটলে পোকা (এপিল্যাকনা বিটল)




    পূর্ণ বয়স্ক পোকা এবং শুককীট দুই অবস্হায় এরা গাছের ক্ষতি করে থাকে। কাটলে পোকা পূর্ণাঙ্গ ও ক্রীড়া অবস্খায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে জালের মতো ঝাঝড়া করে ফেলে। পাতা শুকিয়ে গাছ পাতা শূন্য হয়ে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে গাছ মারা যেতে পারে। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় পাতাসহ ডিমের গাদা বা পোকার গ্রাব হাত দিয়ে তুলে বা হাতজাল ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে।



    প্রতিকার
    পটলের মাঠ সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম নিমবীজের মিহিগুঁড়া এক লিটার পানিতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পানি ছেঁকে নিয়ে ওই পানি আক্রান্ত পাতাসহ সব গাছে স্প্রে করতে হবে। ডাইক্লোরভস ১০০ ইসি এর ১ থেকে ২ মিলি বা কারবারিল ৮৫ ডব্লিউপি ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে বা ফেনিট্রিথিয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।



    পটলের রোগ ও প্রতিকার




    শিকড়ের গিট রোগ




    পটলের শিকড়ে গিট রোগ মারাত্মক সমস্যা। কৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়। এর আক্রমণে আক্রান্ত গাছে ছোট-বড় অনেক গিঁটের সৃষ্টি হয়। ফলে এদের মূল নষ্ট হয়ে খাবার নিতে পারে না। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গাছ খাটো হয়ে পড়ে। ফলন মারাত্মক কমে যায়।




    প্রতিকার



    পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা। সরিষা, মরিচ, গম, ভুট্টা ইত্যাদি দ্বারা ফসল চক্র করা। ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পতিত রাখা। পটল রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে হেক্টর প্রতি মুরগির বিষ্ঠা ৩ থেকে ৫ টন বা সরিষার খৈল ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়। ফুরাডান ৫ জি বা মিরাল ৩ জি, কুরাটার ৫ জি ৩০ থেকে ৪০ কেজি/হেক্টরও লতা লাগানোর সময় এবং পরবর্তী ৪ মাস পর পুনরায় প্রয়োগ করা হয়।
    পাউডারি মিলডিউ




    এ রোগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে যায়।  পাতার ওপরের দিকে ও কান্ডে পাউডারের মতো ছত্রাকের জীবাণুর প্রলেপ পড়ে। এতে ক্রমান্বয়ে কচি পাতা আক্রান্ত হয়। আক্রমণের প্রথম স্তরে দাগগুলো সাদা ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে সম্পূর্ণ পাতা শুকিয়ে যায়।
    প্রতিকার :
    আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা। পরিমিত সার, সেচ প্রয়োগ। থিওভিট (০.২%) বা টিল্ট (০.১%) রোগ দেখা মাত্র ১৫ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।



    ফসল সংগ্রহ




    কচি অবস্থায় সকাল অথবা বিকালে পটল সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত জাতভেদে ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যে পটল সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফসল এমন পর্যায়ে সংগ্রহ করা উচিত যখন একটি ফল পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু বেশি পরিপক্ব হয়নি। বেশি পরিপক্ব ফলের বীজ বেশি হয় এবং বীজ শক্ত হয়ে যায় ফলে ফসল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। পটল গাছে ফেব্রুয়ারি থেকে ফল ধরা শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত মোট নয় মাস সংগ্রহ করা যায়। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার ফল সংগ্রহ করতে হবে।



    সংগৃহীত ও সংকলিত

    Tuesday, November 1, 2016

    মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য

  • Share The Gag
  • প্রাকৃতিক খাদ্য






    মাছের নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রীকে প্রধানত দু’ ভাগে ভাগ করা যায় — প্রাকৃতিক খাদ্য ও পরিপূরক খাদ্য বা কৃত্রিম খাদ্য।


    প্রাকৃতিক খাদ্য : পুকুরে বা জলাশয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে এক ধরনের খাদ্য উত্পন্ন হয়। এদের প্রাকৃতিক খাদ্য বলে। এরা খুব ছোট ছোট হয় এবং জলের ঢেউ যে দিকে যায়, এদের গতিও সে দিকে হয়। এই প্ল্যাঙ্কটন দু’ ধরনের হয় —

    • (ক) উদ্ভিদকণা (ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন)

    • (খ) প্রাণীকণা (জুপ্ল্যাঙ্কটন)



    • (ক) উদ্ভিদকণা : জলে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ জাতীয়কণাকে উদ্ভিদকণা বলে। পুকুরে জলের রঙ সবুজ হলদে বা সবুজ বাদামি হওয়ার জন্য এই উদ্ভিদকণা। এরা মাছের আদর্শ খাদ্য।

      • (১) সবুজ শ্যাওলা : মাছের খুব পছন্দের খাবার। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল দেহে ক্লোরোফিল বা সবুজ কণার অবস্থান। যে সব জলাশয়ে জল স্থির থাকে ও বাতাস দ্বারা আন্দোলিত হয় না সেখানে এদের প্রাধান্য দেখা যায়। কখনও কখনও এ ধরনের সবুজ শ্যাওলার আধিক্যের জন্য জলের উপরে একটি স্তর সৃষ্টি হয় ও পরে পরে জল দূষিত হয়। বিভিন্ন সবুজ শ্যাওলার মধ্যে ক্লোরেলা, ক্লামাইডোমোনাস, ইউডোরিনা, ভলভক্স, ক্লস্টোরিয়াম, সিনেডেসমাস ও ইউলোইথ্রিকস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের শৈবালের আধিক্য বেশি দিন থাকে না। সামগ্রিক ভাবে সার প্রয়োগ ও পরিপূরক খাদ্য বন্ধ করলে এরা নিয়ন্ত্রিত হয়।



      • ২) ব্লু গ্রিন এ্যাল্গি : এরাও জল ও বাতাসের খাদ্য গ্রহণ করে বংশ বৃদ্ধি করে। জীবন্ত ও মৃত অবস্থায় এগুলিও মাছের খাবার হয়ে যায়।



    • খ) প্রাণীকণা : প্রাণীজাত সব ধরনের প্ল্যাঙ্কটনকে ‘জুপ্ল্যাঙ্কটন’ বলে। এরা আকৃতিতে উদ্ভিদকণা অপেক্ষা বড়। একটি পরিষ্কার স্বচ্ছ বোতলে পুকুরের জল নিয়ে দেখলে দেখা যায় যে এরা নাড়াচড়া করেছে। পুকুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাণীকণা জন্মালে জলের রঙ ধূসর সাদাস হালকা বাদামি বা হালকা কালো দেখায়। এরা ডিমপোনা বা ধানি পোনার প্রধান খাদ্য। রটিফার নামক এক ধরনের অনুবীক্ষনিক নিম্ন প্রাণী জলাশয়ে দেখা যায়। এরা হল মাছের প্রিয় খাদ্য এবং মাছ চাষের পুকুরে যাতে এই সব প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মায় সে দিকে নজর দিতে হবে।




    বাসক পাতার উপকারিতা

  • Share The Gag
  • বাসক পাতা







    বাসক কথাটি অর্থ সুগন্ধকারক। এটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। লোকের মুখে ঘুরে ঘুরে বাসকের নাম পরিণত হয়েছিল ‘বসায়।’ বাসকের অনেক গুণ। বাসকের ছাল, পাতা, রস সবই উপকারী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। সর্দি-কাশির মহা ওষুধ বাসক, একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। গাছটি লম্বায় ১-১৫ মিটার (৩-৫ ফুট) পর্যন্ত হয়। কচি অবস্থায় গাছের গোড়া সবুজ হলেও পরিণত অবস্থায় হাল্কা বেগুনি রঙের মতো দেখায়। পাতাগুলি লম্বায় ৫-১২ সেন্টিমিটারের মতো হয়। ফুল সাদা রঙের এবং গুচ্ছাকারে ফোটে। ফলগুলি ক্যাপসুলের মতো দেখতে।

    বাসকের তাজা অথবা শুকনো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় ‘ভাসিসিন’ নামীর ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়।

    উপকারিতা



    • ১. বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধু-সহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।

    • ২. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘণ্টা আগে মাথায় কয়েক দিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেঁটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

    • ৩. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয় তা হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারী রস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।

    • ৪. প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা থাকলে বাসকের ফুল বেঁটে ২-৩ চামচ ও মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

    • ৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলিলিটার জলে ফোটাতে হবে।
    • ৬. ২৫ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুই-ই চলে যায়।

    • ৭. বাসকের কচি পাতা ১০-১২টি ও এক টুকরো হলুদ এক সঙ্গে বেঁটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।

    • ৮. বাসক পাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১ চামচ-সহ প্রতি দিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।

    • ৯. পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০টি থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।

    • ১o. যাঁদের হাঁপানির টান আছে তাঁরা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে, তার সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।

    • ১১. যাঁদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তাঁরা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।

    • ১২. বাসক পাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রঙ ফরসা হবে।

    • ১৩. এক কলসি জলে তিন-চারটি বাসক পাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই জল বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এর পর ব্যবহার করতে পারেন।

    • ১৪. পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।




    সবুজ শাক-সবজি খান, চিরসবুজ থাকুন

  • Share The Gag
  • সুস্থ, সুন্দর আর স্লিম অর্থাৎ চিরসবুজ থাকতে কে না চায়? সবুজ সবজি, শাক-পাতা খেয়ে খুব সহজেই তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব৷ সবজিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ই, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টি -অক্সিডেন্টসহ নানা উপাদান৷

    পালং শাক

    পালং শাকের উপকারিতার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ ২০১৪ সালে সুইডিশ গবেষকদের করা এক তথ্য থেকে জানা গেছে যে, পালং শাক তাড়াতাড়ি পেট ভরায় এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে৷ এর আঁশ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম – যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও, উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে পেশিকে শক্ত করে রক্তের ঘনত্ব কমাতেও সহায়তা করে৷ শাক সেদ্ধ, স্যুপ বা স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যায়৷ সঙ্গে রসুন, লেবু বা আদা দিলে স্বাদ ও বাড়ে, উপকারও হয় বেশি৷

    সবুজ ক্যাপসিকাম মানেই ভিটামিন সি

    বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাস্টফুড এবং আধুনিক জীবনযাত্রাই নানা অসুখের কারণ৷ ক্যাপসিকামে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম ইত্যাদি৷ কাঁচা ক্যাপসিকাম শুধু ডায়বেটিস বা অবসাদই দূর করে না, ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে৷ মুরগির বুকের মাংস সেদ্ধ করে ছোট করে কেটে এবং একইভাবে ক্যাপসিকাম কেটে, পুদিনা পাতা, লেবুর রস মিশিয়ে দুপুরে খেয়ে ফেলুন৷ ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশযুক্ত কচকচে এই সালাদ খেলে পেট ভরবে, রাখবে চিরসবুজও৷

    শসা

    গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা করতে শসার জুড়ি নেই, কারণ শসার মধ্যে রয়েছে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ পানি৷ তাই পুষ্টিবিদরা গরমকালে বেশি করে শসা খেতে বলেন৷ শসায় খুবই কম ক্যালোরি থাকে, প্রচুর পানিযুক্ত শসা শুধু শরীরকেই হালকা-পাতলা রাখে না, শসার মাস্ক বা স্লাইস করা শসা ত্বককে করে স্নিগ্ধ আর সুন্দর৷ শসা নানাভাবে খওয়া যায়৷ প্রচণ্ড গরমে শসার কুচি ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তা পান করলে শরীর জুড়িয়ে যায়৷

    ব্রকোলি

    সবুজ ফুলকপি বা সবুজ রং-এর ফুলের মতো দেখতে এই সবজিভাজি খেতে খুবই মজা এবং সহজে পেটও ভরে যায়৷ ব্রকোলির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ক্যনসারের টিউমার দমন করে৷ এই তথ্য দিয়েছেন জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের গবেষক ইনগ্রিড হ্যার৷ শুধু তাই নয়, ব্রকোলি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়৷ এছাড়া ডায়বেটিস রোগীদের জন্যও দারুণ উপকারি ব্রকোলি৷

    পুদিনা পাতার গুণ

    ভেষজ উদ্ভিদ পুদিনা পাতার গুণের কথা কাউকে আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই৷ হাজারো বছর ধরে এই পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে গ্যাসট্রিক, পেটের সমস্যা বা ত্বকের নানা সমস্যায়৷ নারীদের সৌন্দর্যচর্চায় পুদিনার পাতা খুবই পরিচিত৷ পুদিনা পাতার রস, চা, চাটনি ইউরোপেও আজকাল বেশ জনপ্রিয়৷ সবুজ ঔষধি পুদিনা পাতা খেয়ে শরীর ও ত্বককে সবুজ রাখুন৷ তেমন যত্ন ছাড়াই পুদিনা গাছ বাগান, টব বা পানিতে হয়৷

    বরবটি

    সবুজ বরবটিতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম ও শর্করা – মানে প্রচুর পুষ্টি গুণ৷ এই কারণে ডায়বেটিস রোগীদের জন্যও বরবটি বেশ উপকারি৷ বরবটি নানাভাবে খাওয়া যায়৷ জলপাইয়ের তেলে সামান্য ভেজে খেতে দারুণ লাগে এই সবজি৷ তাছাড়া পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবুজ সবজির মধ্যে বরবটি একটি, যা অল্প খেলেই পেট ভরে যায় ৷ অর্থাৎ বাড়তি মেদ হবার কোনো সুযোগ নেই বলে ফিট ও সুন্দর থাকা যায় সহজেই ।

    সালাদ পাতা

    বিভিন্ন সবুজ সালাদ বা লেটুস পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক৷ সবজিতে থাকা ভিটামিন সি এবং ই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সহায়তা করে থাকে৷ তাছাড়া শাক বা সালাদ পাতা খাবার সাজানোর জন্যও ব্যবহার করা যায়, যা দেখতে সুন্দর তো লাগেই, খাবারে রুচিও বাড়ায়৷তবে শাক-সবজির ক্ষেত্রে সবচেয়ে যেটা জরুরি হলো, একে হতে হবে একদম টাটকা৷ তা না হলে স্বাদে এবং গুণে হেরফের হবেই৷

    Sunday, October 30, 2016

    কীটনাশক ছাড়াই বেগুন চাষ

  • Share The Gag
  • যখন কৃষকেরা ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছেন ঠিক তখনই কীটনাশক ছাড়া বেগুন উৎপাদন করছেন ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলার পার্বতীপুর গ্রামের কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তারা আইপিএম (ফেরোমনট্রাপ) পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন বলে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

    পার্বত্যপুর গ্রামের বেগুন চাষী আয়ুব হোসেন জানান, এ পদ্ধতি সম্পর্কে যখন আমাকে প্রথম জানানো হয় তখন পদ্ধতি সম্পর্কে যেন কাল্পনিক একটা ঘটনা বলে মনে হয়েছিল। আমরা দুই ভাই পার্বতীপুরের এই মাঠে একএকর জমিতে বেগুন চাষ করেছি। প্রথম দিকে আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করার পরও বেগুন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে গোপনে কীটনাশক স্প্রে করতাম। কিন্তু বেগুনের দাম যখন কমে গেল কীটনাশক স্প্রে করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন দেখি ভালো বেগুন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সবজিতে প্রতিদিনেই কীটনাশক স্প্রে করে অভ্যস্ত। তাই এ পদ্ধতি প্রথমে মেনে নিতে পারছিলাম না।

    একই গ্রামের বেগুন চাষী ইব্রাহীম, সোলাইমান, ইউনুছ আলি জানান, তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। তাদের কীটনাশক ছাড়াই এ  পদ্ধতিতে চাষ করা দেখে অনেকেই করলা, লাউ ও শসা চাষে এ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

    স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা যে কীটনাশক ছাড়াই সবজি বা ভেজাল মুক্ত পণ্য খেতে চাই। তা এ বেগুন চাষের দৃশ্য দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। কারণ তারা বেগুন বাজারে নিয়ে গেলে দাম একটু বেশি হলেও আগে আগেই বিক্রি হয়। প্রতিটি কৃষকেরই উচিত এ পদ্ধতি ব্যবহার করা এবং পোকার আক্রমণ অতিরিক্ত হলে সেই ক্ষেত্রে কৃষি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাছাড়া যারা বেগুন বা সবজি চাষ করেন প্রতিদিনই ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করেন। আর এ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা যে লাভবান হচ্ছেন এটা কৃষকদের জন্য সুখবর।

    এ বিষয়ে হরিনাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিশংকর জানান, এটাকে সেক্স ফেরোমন লেয়ার পদ্ধতি বলা হয়। ওই বক্সের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকার গন্ধ দেয়া থাকে। দূর হতে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে ওই বক্সের মধ্যে চলে আসে এবং বক্সের মধ্যে রাখা সাবান পানিতে পড়ে পোকা মারা যায়। যদি কোনো মাঠের সবজি চাষীরা একত্রিত হয়ে সকলেই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাহলে শতকরা ৭৫/৮০ ভাগ পোকা দমন করা সম্ভব।

    ছারপোকা তাড়াতে করণীয়

  • Share The Gag
  • ছারপোকা যে কী পরিমান ভয়ঙ্কর, তা এই পোকার কামড় যারা না খেয়েছেন তারা ভাবতেও পারবেন না। অন্যদিকে যারা ভুক্তভোগী অর্থাৎ ছারপোকার যন্ত্রণায় জীবন অতিষ্ঠ যাদের, তারাই ভালো বলতে পারবেন এই পোকার অত্যাচার সম্পর্কে। তবে এই দুষ্টু পোকাটি দমন করতেও আছে বেশ কিছু উপায়। চলুন জেনে নিই-

    ছারপোকা মোটামুটি ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রাতে মারা যায়। ঘরে ছারপোকার আধিক্য বেশি হলে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা ও ঘরের ছারপোকা আক্রান্ত জায়গাগুলোর কাপড় বেশি তাপে সেদ্ধ করে ধুয়ে ফেলুন। ছারপোকা এতে মারা যাবে।

    বিছানাসহ অন্যান্য জায়গা থেকে ছারপোকা তাড়াতে সারা ঘরে ভালো করে ভ্যাকুয়াম করুন। ভ্যাকুয়াম করার সময় খেয়াল রাখুন যাতে ঘরের মেঝেও বাদ না পড়ে। এতে করে আপনার ঘরে ছারপোকার আক্রমণ অনেকটাই কমে যাবে।

    এক লিটার পানিতে ডিটারজেন্ট যেমন সার্ফ এক্সেল ঘন করে মিশিয়ে স্প্রে করুন। এ উপায়ে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা সহজেই মারা যাবে।

    ঘরের যে স্থানে ছারপোকার বাস সেখানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন। দুই থেকে তিনদিন এভাবে স্প্রে করার ফলে ছারপোকা আপনার ঘর ছেড়ে পালাবে।

    আপনার ঘরের ছারপোকা তাড়াতে অ্যালকোহল ব্যবহার করতে পারেন। ছারপোকা প্রবণ জায়গায় সামান্য অ্যালকোহল স্প্রে করে দিন দেখেবেন ছারপোকা মরে যাবে।

    আসবাবাপত্র ও লেপ তোশক পরিষ্কার রাখার সাথে সাথে নিয়মিত রোদে দিন। এতে করে ছারপোকার আক্রমণ কমে যাওয়ার সাথে সাথেই ছারপোকা থাকলে সেগুলো মারা যাবে।

    ছারপোকার হাত থেরে রেহাই পেতে আপনার বিছানা দেয়াল থেকে দূরে স্থাপন করুন। শোয়ার আগে ও পরে বিছানা ভালো করে ঝেড়ে ফেলুন।

    সাতকানিয়ায় সবজি ফলছে কীটনাশক ছাড়াই

  • Share The Gag
  • মাঠজুড়ে সবজি। টমেটো, লাউ ও শিমে ভরপুর জমি। চািষরা ব্যস্ত সবজি তোলায়। এ চিত্র সাতকানিয়ার বাজালিয়া ও ছাদাহা ইউনিয়নের। দুটি এলাকার জন্য এ দৃশ্য নতুন নয়। হামেশাই এখানে নানা সবজির আবাদ হয়। কিন্তু এবার ভিন্ন—বিষমুক্ত সবজির চাষ করছেন এখানকার চাষিরা।
    সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজালিয়া ও ছদাহা ইউনিয়নের বুড়ির দোকান, শিশুতল, দক্ষিণ ছদাহা, খোদ্দ কেঁওচিয়া, বিল্লিয়াপাড়া, হোসেনপাড়া ও বাইতুশ শরফপাড়া এলাকার ৩০ হেক্টর জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে কীটনাশক ছাড়াই সবজির আবাদ করা হয়েছে।
    ছদাহা ইউনিয়নের শিশুতল ও বাজালিয়া ইউনিয়নের বুড়ির দোকান এলাকায় দেখা গেছে, টমেটো ও শিমখেতের মাঝে মাঝে বাঁশের খুঁটি দিয়ে প্লাস্টিকের পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব পাত্রের তলায় অল্প পরিমাণ পানিতে মরে আছে কীটপতঙ্গ।
    চাষিরা জানান, পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিবছর সবজিখেতে কীটনাশক ছিটানো হতো। কৃষি বিভাগের লোকজন ঘরে ঘরে এসে অধিক ফলনের উৎসাহ ও ক্ষতির ব্যাপারে অভয় দেওয়ার পর সেক্স ফেরোমন ফাঁদে সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছেন।
    শিশুতল এলাকার সবজিচাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘চলতি বছর সাত কানি (এক একর সমান আড়াই কানি) জমিতে টমেটো চাষ করেছি। টমেটোখেতে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করিনি। শুধু সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়েছে। ওই ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন ক্ষতিকর পোকা মারা যাচ্ছে। ফলে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না।’
    দক্ষিণ ছদাহা এলাকার চাষি আবুল হাশেম বলেন, প্রতি কানি টমেটো চাষে প্রায় এক লাখ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে। তবে এ বছর ওই খরচ অনেক কম পড়বে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পোকার আক্রমণ থেকে সবজি বাঁচাতে প্রতি কানিতে ১০ হাজার টাকার মতো কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু এ বছর কীটনাশক ব্যবহার না করায় ওই খরচটা বেঁচে গেল। সে হিসাবে লাভের পরিমাণ বাড়বে।
    উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিষমুক্ত সবজিখেতগুলো প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিম ও লাউ চাষিরা বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। টমেটো পরিপক্ব হচ্ছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে চাষিরা বিষমুক্ত টমেটো তুলতে পারবেন।
    তিনি জানান, সেক্স ফেরোমন পুরুষ পোকা আকর্ষণের সুগন্ধি। এটির গন্ধ বাতাসে ছড়ালে পুরুষ পোকা এসে পাত্রে পড়ে। এরপর মারা যায়। পুরুষ পোকা মারা গেলে বংশবৃদ্ধি কমতে থাকে।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খাজানুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে উপজেলার কোনো চাষি বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী ছিলেন না। অভয় ও বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়ায় কিছু চাষি পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত টমেটো, লাউ ও শিমের চাষ করেছেন। চাষিরা কীটনাশক ছাড়াই ফেরোমন ফাঁদের মাধ্যমে ভালো সবজি উৎপাদন করতে পারলে ভবিষ্যতে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে বিষমুক্ত সবজি চাষের বিপ্লব ঘটে যাবে।

    সূত্রঃ প্রথম আলো

    পলিথিনের শব্দে পালিয়ে যায় ইঁদুর

  • Share The Gag
  • সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় উপদ্রব। সারা রাত ধরে আমনের খেতে গাছের গোড়া কাটে ইঁদুরগুলো। এদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন কৃষকেরা। কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা।

    নিজেদের অসহায়ত্বের কথা এভাবেই তুলে ধরেন নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার আমনচাষিরা। উপজেলায় এবার আমন মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড খরা আর অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। এ অবস্থায় সেচযন্ত্র ব্যবহার করে আমনের চারা রোপণ করেন কৃষকেরা। পরে বেশ বৃষ্টি হয়। লকলক করে বেড়ে ওঠে আমনের খেত। আশ্বস্ত হতে না–হতেই শুরু হয় ইঁদুরের উপদ্রব।


    কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোকা দমনের কীটনাশক ব্যবহার করেও ইঁদুর তাড়ানো যাচ্ছিল না। সন্ধ্যার পর আমনের খেতে ইঁদুর এসে গাছের গোড়া কেটে দেয়। পরদিন সেই আমনের গাছ গবাদিপশুকে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এমন অবস্থায় কৃষি বিভাগের দ্বারস্থ হন তাঁরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পলিথিনের ঝান্ডা তৈরি করে পুঁতে দেন পুরো খেতে। বাতাসে সেই পলিথিন পতপত করে শব্দ করে। এ শব্দে ইঁদুর মনে করে কেউ আসছে, তাই ভয়ে পালিয়ে যায়। এখন আর ইঁদুর ধান কাটছে না।

    উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বাকডোকরা গ্রামের কৃষক মোজাক্কের বলেন, ‘নদী এলাকার জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি হয়। আমনখেতে ইঁদুরের উপদ্রব থেকে বাঁচতে পলিথিনের ঝান্ডা উড়িয়ে উপকার পেয়েছি।’

    উপজেলার কামারপুকুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর, বাঙালিপুর, বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন ও সৈয়দপুর পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক একর জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।

    সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোমায়রা মণ্ডল বলেন, এ বছর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে প্রায় ৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবাদ হয়েছে আরও বেশি জমিতে। খেতের পোকামাকড় ও ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার জন্য মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

    মাজরা পোকার আক্রমণে ফলন কমছে

  • Share The Gag
  • চলছে আমন ধানের মৌসুম। ধানের এ বাড়ন্ত সময়ে পোকা দমনে উদ্যোগী না হলে ফলন বহুলাংশে হ্রাস পায়। আমন ধানে যতো ধরনের পোকার আক্রমণ হয়, তার মধ্যে হলুদ মাজরা পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর।

    হলুদ মাজরা পোকার অভিযোজন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় আমন মৌসুমে বৃষ্টি বেশি হলেও পানিতে অনায়েসে বেঁচে থাকতে পারে। এ পোকা যে গাছে আক্রমণ করে সেই গাছের শীষ সম্পূর্ণভাবে চিটা হয়। পোকা দমন করা খুবই কষ্টসাধ্য। এর ফলে ফলন কমে যায় শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত। অনেক সময় ফলন নেমে আসতে পারে শূন্যের কোটায়।

    এই পোকা সম্পর্কে বাংলানিউজের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

    ধানের হলুদ মাজরা পোকা আক্রমণের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি জানান,

    শীষ বের হওয়ার আগে: ধানের গোছার মাঝখানের ডিক পাতা হলুদ হয়ে যায়। পোকাটি লার্ভা অবস্থায় কাণ্ডের ভেতরের অংশ খেতে শুরু করে। একপর্যায়ে যখন ডিক পাতা গোড়া থেকে বিছিন্ন হয়ে গেলে পাতাটি মরে যায়। এই মরা ডিগ পাতাটি টান দিলে সহজেই উঠে আসে। যাকে ডেড হার্ট বলে।

    শীষ বের হওয়ার পরে: শীষ আসা অবস্থায় আক্রমণ হলে ধানের শীষগুলো সাদা হয়ে যায়। এ পোকার আক্রমণে শীষের দানাগুলোতে পুষ্টি সরবরাহ হয় না। ফলে শীষের সব দানা চিটায় পরিণত হয়। জুলাই (আষাঢ়) থেকে অক্টোবর (আশ্বিন) মাস পর্যন্ত আমন ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি হয়।

    বিরতিহীন ধান চাষ এ পোকার বংশ বাড়াতে উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া বন্য ধান গাছ ও অন্যান্য ধান জাতীয় আগাছাও বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে। মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগে এ পোকার প্রার্দুভাব ব্যাপক আকার ধারণ করে। জলি আমনে এ পোকার ছয়বার পর্যন্ত বংশ বিস্তার করে।

    এ পোকার আক্রমণে দমন ব্যবস্থা সম্পকে তিনি বলেন, জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা পাঁচ শতাংশ সাদা শীষ দেখা দিলে অতি দ্রুত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত কার্যকরী কীটনাশকের মধ্যে রয়েছে ফুরাডান ৫জি, ফিপরোনিল ৩জি। যা প্রতি হেক্টরে ১০ কেজি দিতে হবে।

    এছাড়া প্রতি হেক্টরে পাঁচ কেজি থায়ামেথোক্সাম ও ক্লোরানট্রানিলি (০.৬ জি) প্রয়োগ করেও এ পোকা দমন করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে ঘাসফড়িং হলুদ মাজরা পোকার ডিম খেয়ে থাকে। এছাড়া পরজীবী ট্রাইকোগ্রামা হলুদ মাজরা পোকার ডিম থেকে পুষ্টি নিয়ে থাকে। ফলে ওইসব ডিম থেকে লার্ভা জন্মাতে পারে না।

    আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণবয়স্ক পোকা দমন করা যায়। এরা গাদা করে ডিম পাড়ে। তাই ডিমের গাদা সংগ্রহ করে এদের ভালোভাবে দমন করা সম্ভব। হলুদ মাজরা পোকা থেকে প্রতিরোধের উপায় প্রসঙ্গে ড. মিজানুর রহমান জানান, বীজতলায় চারা গাছের পাতার আগার দিকে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে। তাই রোপা ধান খেতে চারা গাছ রোপণ করার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বীজ তলায় চারা গাছের পাতার আগা কাঁচি দিয়ে ছাটলে ডিমগুলো আর মূল মাঠে যেতে পারে না। এভাবে প্রায় ৫০ ভাগ হলুদ মাজরা পোকার ডিম ধ্বংস করা যায়।

    সূত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪

    ধানের পোকা দমনে আলোক ফাঁদ

  • Share The Gag
  • ফসলের পোকা দমনে রাসায়নিক সারের বদলে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন নওগাঁর কৃষকরা। জেলার রানীনগর উপজেলায় আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমন করা হচ্ছে। এতে লাভ হচ্ছে দুই দিকে। পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, পাশাপাশি চাষের খরচ কমছে কৃষকের।
    রানীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গেলেই এই আলোক ফাঁদের দেখা মেলে। রাতে অন্ধকারের মধ্যে এই ফাঁদগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উৎসাহেই এই প্রকল্প চলছে এই উপজেলায়।
    আমন ধানের ক্ষেতের আইলে কোথাও পানিভর্তি পাত্রে, কোথাও কাগজের উপর আলো জ্বেলে ধানে আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকা ধরেন কৃষক।
    এই পদ্ধতিতে পোকা দমন শুরু হওয়ার পর থেকে কৃষকদের খরচ যেমন কমে আসছে, তেমনি ধানের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, এই পদ্ধতিতে ধানের জন্য ক্ষতিকারক পোকা দমন হলেও উপকারী পোকাগুলো রয়ে যাচ্ছে।
    উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক লোকমান, জিসারুল, সিরাজ এবং কাশিমপুর গ্রামের কৃষক জাহেদুল, জাহাঙ্গীর, আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই বলেছেন- এই পদ্ধতিতে তারা উপকৃত হয়েছেন। পোকার উপস্থিতি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম গোলাম সারওয়ার বলেন, এটি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধানের ক্ষেতে পোকা মাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন।

    সূত্রঃ ঢাকা টাইমস

    Wednesday, October 26, 2016

    কৃষি বিপন্ন হলে গোটা দেশের বিপদ

  • Share The Gag
  • কৃষি মূলগত ভাবে পাল্টে যাচ্ছে। আগে কৃষিতে যে শক্তির প্রয়োগ হত তার গোটাটাই প্রায় ছিল ভারবাহী পশুশক্তি এবং মানুষের পেশিশক্তি। এখন দেশে কৃষিতে যে শক্তির ব্যবহার হয় তার বড়জোর পাঁচ শতাংশ পশুশক্তি, আরও পাঁচ শতাংশ মানুষের পেশিশক্তি, বাকিটা যন্ত্রশক্তি।

    যখন লাঙ্গল করা, গাড়ি টানা, ঘানি এবং পারসিক জলচক্র ইত্যাদির সাহায্যে সেচের কাজে পশুশক্তির বহুল ব্যবহার চালু হয়, তখন বিশুদ্ধ আর্থনীতিক কারণেই গোমাংস ভক্ষণের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আজকের পরিবর্তিত অবস্থায় কৃষি ও পশুপালনের মধ্যেকার সম্পর্ক একটা সংকটের মধ্যে পড়েছে। আগে চাষিদের ঘরে এঁড়ে বাছুরগুলোকে নির্বীজকরণ করে বলদ হিসেবে রেখে দেওয়া হত। যেহেতু কৃষিতে বলদের চাহিদা ছিল বিপুল, এঁড়ে বাছুরেরও মর্যাদা ছিল সমধিক। এখন কৃষিতে পশুশক্তির ব্যবহার খুবই কম, ফলে বলদের সেই চাহিদাও এখন অতীত। এঁড়ে গরুগুলোর কী হবে?

    কাণ্ডজ্ঞান বলে, গোহত্যা বা গোমাংসভক্ষণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যে আইনগুলো বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে, এখন ভেবে দেখা দরকার যে সেগুলোর আর কোনও প্রয়োজন আছে কি না। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা— গোরক্ষার নামে যে তান্ডব চলছে তা সামাজিক ক্ষেত্র ছাড়াও কৃষিক্ষেত্রেও গভীর সংকট ডেকে আনছে।

    ষাটের দশকে আমরা অনেকেই মনে করতাম যে, কৃষকের হাতে জমি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ১৯৭৭-৭৮ সালে যখন খাসজমি বণ্টন হল, তখন বিলি করার জন্য পাওয়া জমির তুলনায় প্রাপকের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে দেখা গেল অনেক জমিতে লাঙ্গলই ঘোরে না— কোদাল দিয়ে চাষ করতে হয়। যখন অ-কৃষক মালিকদের হাতে জমি ছিল, সেই সময়ের তুলনায় এই ব্যবস্থায় গোটা রাজ্যেই প্রভূত উৎপাদন বাড়ল, কিন্তু সেটা বিঘা-প্রতি উৎপাদনের হিসেবে। শ্রমদিবস পিছু উৎপাদনের হার খুব একটা বাড়ল না। সেই উৎপাদনের হার বৃদ্ধির জন্য কৃষিতে যন্ত্রশক্তির বিপ্লবটি খুবই প্রয়োজন ছিল।

    বর্ণাশ্রম না ভেঙে, ভূমিসংস্কার না করেই ষাটের দশকে ভারতের রাষ্ট্রনায়করা সবুজ বিপ্লবের কথা ভেবেছিলেন। গোড়ায় গলদ। কিন্তু, অস্বীকার করা যাবে না যে তাঁরা কৃষির উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভুমিকার কথাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও, রাষ্ট্র কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছিল। কৃষি গবেষণার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। গবেষণার ফসল চাষিদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বহু বীজ-খামার গড়ে তোলা হয়েছিল। ভারতের কৃষি-অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই খামারগুলির গুরুত্ব অনেক।

    ১৯৯০ দশকের গোড়ায় কেন্দ্রীয় সরকার উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ বন্ধ হল। কৃষি গবেষণার কাজ নাকি করবে বহুজাতিক সংস্থাগুলো। তারাই সরবরাহ করবে বীজ, সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি। এই সংস্কার কর্মসূচির দু’ দশক পরে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের কৃষি এখন হাতে গোনা কয়েকটি বিদেশি বহুজাতিকের মুখাপেক্ষী। কিছু দিন আগে দুটি বড় বহুজাতিক সংযুক্ত হয়ে এক দৈত্যাকার একচেটিয়া ব্যবসায়িক সংস্থার জন্ম হল। সেটা দুনিয়ার বীজ ও কীটনাশকের বাজারের বিপুলাংশই নিয়ন্ত্রণ করবে, ভারতে তাদের প্রায় কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীই থাকবে না। এই একচেটিয়া ক্ষমতাকে তারা ব্যবহার করবে বীজ-সার-কীটনাশকের দাম যথেচ্ছ বাড়িয়ে কৃষকদের লুন্ঠন করার কাজে। এর নীট ফল দাঁড়াবে আরও কৃষকের আত্মহত্যা, আর খাদ্য উৎপাদনে আমরা যেটুকু স্বয়ম্ভরতা অর্জন করতে পেরেছি, তা-ও হারানো।

    এই আগ্রাসন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র রাস্তা কৃষিক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, দেশের চাহিদা ও আবহাওয়ার সঙ্গে সংগতি রেখে বীজ তৈরি করা, বীজ খামারে সে সব বীজের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা, পরীক্ষিত বীজ কৃষকদের সরব্রাহ করা, এবং চাষিদের উৎপন্ন ফসল  ন্যায্যমূল্যে কিনে নেওয়া। এ জন্য যেমন প্রচুর কৃষি-গবেষণাগার লাগবে, তেমনই প্রয়োজন হবে অনেক কৃষি খামারের।

    ষাটের দশকে যে সব কৃষি খামার গড়ে তোলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একটি ছিল গোয়ালতোড়ে। সেই খামারে এখনও বীজের জন্য কিছু পরিমাণে চাষ হয়, যদিও  এর অন্তর্গত এক হাজার একর জমিকে যে-ভাবে বীজ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব ছিল, সেটা করা হয়নি। অথচ, গোয়ালতোড়কে ঘিরে প্রচুর আলুর চাষ হয়, এবং প্রায়ই খারাপ বীজের কারণে উৎপাদন বিপর্যয় ঘটে। এই খামারটিকে ব্যবহার করে আলু বীজের সমস্যাটাকে ভাল ভাবে মোকাবিলা করা যেত।  রাজ্যের আরও অনেক বীজ খামারকে এই রকম নিষ্ফলা ফেলে রাখা হয়েছে, সেগুলিকেও কৃষির উন্নতিতে কাজে লাগানো যেত। বামফ্রন্ট জমানাতেই গোয়ালতোড় কৃষি খামার বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। ২০১১ তে নতুন সরকার আসার পর এটিকে শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, এবং এই জমি ‘ল্যান্ড-ব্যাঙ্কের’ অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করা হচ্ছে।

    ১৯৮০-র দশকে আংশিক ভূমিসংস্কার ছিল বামফ্রন্টের সাফল্য। কিন্তু সেই সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কৃষির উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হত। ছোট ছোট ভূমিখণ্ডকে একত্র করার জন্য সমবায় গঠন করা যেত, এবং রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপে কৃষির আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া যেত। সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও যেটুকু করা যেত, বামফ্রন্ট সেটাও করতে বিফল হয়। আবার বাম-রাজত্বের শেষ দিকে কৃষির আধুনিকীকরণের দায়িত্বটা বহুজাতিকদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ চলে, যদিও সে-প্রস্তাব তখন কার্যকর হয়নি। এখন তৃণমূল সরকার সেই চুক্তি চাষের পথেই এগোবে বলে ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবে ঈষৎ নতুনত্ব আছে, কিন্তু অন্তর্বস্তুতে এটা ঔপনিবেশিক যুগের নীলচাষের থেকে আদৌ আলাদা নয়।

    এই পথে, রাজ্যের উন্নয়নের নামে যে ভাবে কৃষি ও শিল্পকে পরস্পর-বিরোধী হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে, শিল্পস্থাপনের অগ্রাধিকার প্রমাণ করার জন্য কৃষিকে যে ভাবে অবহেলা করা হচ্ছে, এবং লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তার পরিণাম মারাত্মক হতে বাধ্য। শিল্পের প্রয়োজন  অনস্বীকার্য, কিন্তু শিল্পায়নের প্রক্রিয়াতে কৃষিকে বিস্মৃত হওয়া চলে না। ইউরোপের যে উদাহরণ তুলে ধরা হয়, সেখানে কিন্তু শিল্পের পাশাপাশি কৃষিরও আধুনিকীকরণ ঘটেছিল। মুলত কৃষির চাহিদা মেটাতে গড়ে তোলা হয়েছিল রাসায়নিক শিল্প। চিলিতে প্রশান্ত মহাসাগর উপকূল জুড়ে শত শত বছর ধরে জমা হওয়া বাদুড়ের মল থেকে গড়ে উঠেছিল সোডিয়াম নাইট্রেটের পাহাড়, কেমিস্ট্রি বইতে যাকে বলা হয় চিলি সল্টপিটার। নিখরচায় পেয়ে যাওয়া সেই উর্বরকের ব্যবহার করে ইউরোপ কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে ।

    ভারতে কৃষি যে সংকটে পড়েছে তা থেকে বেরোতে গেলে রাষ্ট্রকে কৃষিতে বিনিয়োগ করতেই হবে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চাষিদের উন্নত বীজ সরবরাহ করতে আরও অনেক নতুন খামার গড়ে তুলতে হবে। সে কাজটা সহজ নয়, কারণ বীজ খামার করতে জমি লাগে। তাই রাজ্যের হাতে যে বীজ খামারগুলি আছে তার জমি অন্য কাজে ব্যবহার করাটা সামাজিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত অদূরদর্শিতার কাজ হবে।

    কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কিছু আশা করা বৃথা। সে সরকার এক দিকে গো-রক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাবে, আর অন্য দিকে গোটা কৃষি-ব্যবস্থাটাকে বহুজাতিক একচেটিয়া পুঁজির হাতে তুলে দেবে।

    রাজ্যের হাতে ক্ষমতা সীমিত, কিন্তু সেই ক্ষমতাটুকুও বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করে নতুন দিশা দেখানো যায়। কিন্তু প্রবণতাটি যদি হয় শিল্পের দোহাই দিয়ে পুঁজির একাগ্র আরাধনা, তা হলে কৃষকের সঙ্গে সারা দেশের ভাগ্য-বিপর্যয় এড়ানো কঠিন।

    সুত্রঃ আনন্দবাজার

    নারী কৃষি শ্রমিকরা এখনো মজুরি বৈষম্যের শিকার

  • Share The Gag

  • বাংলাদেশ কৃষি নির্ভরশীল দেশ। ১৬ কোটি মানুষের এদেশে অর্ধেক নাগরিক নারী। সামাজের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি কাজেও নারীরা এখন ছেলেদের সঙ্গে সমান পা মেলাচ্ছেন। ক্ষেতে ধানের বীজ বপন থেকে শুরু করে সার দেয়া, আগাছা দমন, কীটনাশক ছিটানো, ধান কেটে ঘরে তোলাসহ সব কাজ তারাই করছেন।

    অনেকে আবার বাড়ির পাশে কিংবা উঠানে অনাবাদি জায়গায় শাক-সবজি, ফল-ফলাদির আবাদ করে সংসারে বড়তি রোজগারের পথ করে নিচ্ছে। এতে পরিবারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে।

    দেশের চা শিল্পের মতো সমৃদ্ধ খাতের পেছনে নারী চা শ্রমিকদের বিশাল অবদান রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষ, হাঁস-মুরগি পালন থেকে শুরু করে কৃষির প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর অবদান রয়েছে। আমাদের দেশে মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক নারী।

    এছাড়া ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি চাষ, মসলা উৎপাদন, শুঁটকি ও নোনামাছ প্রক্রিয়াকরণ, মাছ ধরার জাল তৈরি, মাছের পোনা উৎপাদনের কাজও নারীরা করে থাকে। বসতবাড়িতে সামাজিক বনায়ন, গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি পালনের কাজও করে নারীরা। কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি নারী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এ উপস্থিতির হিসাব নাই। এমনকি কৃষিকাজে জড়িত এ বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিকের কোনো মূল্যায়নও হয় না।

    এখন গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও চাষের কাজকে নারীর প্রতিদিনের কাজের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়। পুরুষ শ্রমিকের সমপরিমাণ কাজ করেও কৃষি খাতে নারী শ্রমিকের বৈধ পরিচিতি নেই। এছাড়া নিয়মহীন নিযুক্তি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, স্বল্প মজুরি, মজুরি বৈষম্য এবং আরো নানা ধরনের নিপীড়ন তো রয়েছেই। নারী শ্রমিকের ৭২ শতাংশই অবৈতনিক পারিবারিক শ্রমিক। ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত এসব নারীর অবদানের স্বীকৃতি আলোচনার বাইরেই থেকে যায়।

    তবে দেশের কৃষিখাতে নারীর ব্যাপক অবদান থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন নেই। সরকারের নীতি-কৌশলের সঙ্গে নারীর কৃষিশ্রমের যোগসূত্র এখনো স্থাপিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে প্রদত্ত এক কোটি ৩৯ লাখ কৃষক কার্ড বিতরণ করা হলেও নারী কৃষকদের ভাগ্যে তা জোটেনি।

    এদেশের নারী কৃষি শ্রমিকরা এখনো মজুরি বৈষম্যের শিকার। সারাদিন পুরুষের সঙ্গে সমান পরিমাণ শ্রম দিয়ে নারী শ্রমিক আয় করেন মাত্র ১২০ টাকা। একই কাজ করে যেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক মজুরি পান ২০০ টাকা।

    বিশ্বব্যাংক পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন ২০১২ অনুযায়ী অর্থনীতিতে নারীর অবদান সম্পর্কে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা- সব মিলিয়ে এগিয়েছে মানব সভ্যতা। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারী এখনো পিছিয়ে রয়েছে। সামগ্রিক কাজের ৬৬ শতাংশ করে নারী, খাদ্যের ৫০ শতাংশও তারাই উৎপাদন করে অথচ তারা পায় কর্মের মাত্র ১০ শতাংশ।

    এছাড়া, ভূমিতেও নারীর সমঅধিকার নেই। বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রেও তাদের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। অথচ নারীর অবদান ও অংশগ্রহণকে অস্বীকার করে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা কিছুতেই সম্ভব নয়। উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে নারীর কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।






     সূত্র- বিডি লাইভ ২৪

    Monday, October 24, 2016

    ছাদে বাগান করার আগে যা করনীয়

  • Share The Gag
  • বাগান হতে পারে ছাদে, বারান্দায়, সিঁড়ির কিনারায়, জানালার পাশে, টি টেবিলের উপরে অথবা বাথরুমের ভেন্টিলেটরেও।

    শহুরে পরিবেশে বাগান করার বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে কিছু তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম জামাল উদ্দিন।

    ছাদে বাগান করার আগে

    ধারণ ক্ষমতা: আমরা মনে করি মাটির আর কত ওজন হবে। তবে আপনি যদি একটা বাগান বা বড় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেন তাহলে যে পরিমাণে মাটি লাগবে তার ওজন নেহায়েত কম নয়। নিয়মিত গাছে পানি দেওয়ার ফলে ভেজা মাটির ওজন আরও বেড়ে যায়।

    তাই যখন ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা করবেন অবশ্যই জেনে নেবেন ছাদের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু। যেন পরে বাড়ির কোনো ক্ষতি না হয়।

    বাড়ির ধারণ ক্ষমতার উপর নির্ধারণ করতে হবে কোন ধরনের গাছ লাগানো সম্ভব। কোনো কারণে যদি ধারণ ক্ষমতা কম হয় তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। অল্প মাটিতে ছোট গুল্মজাতীয় গাছের বাগান করাও সম্ভব।

    সূর্যের অবস্থান: যে কোনো গাছের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোক একটি অপরিহার্য বিষয়। তাই বাগানের নকশা তৈরি করার আগে ছাদের কোন দিক থেকে রোদ আসে এবং ঋতুভেদে রোদ কোনদিকে সরে যায় ইত্যাদি বিষয় দেখে নেওয়া ভালো।

    বাগানের গাছ বাছাই করতে হবে রোদের অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ছাদে সরাসরি সূর্যের আলো অনেক সময় ধরে পাওয়া যায়। তাই সবজির চাষ করা বেশ সুবিধাজনক। তবে রেলিংযের অবস্থান বা পাশের বাড়ির উচ্চতার কারণে বাগানে ছায়া পড়তে পারে। এক্ষেত্রে সারাদিনে কতক্ষণ এবং কোনদিকে বেশি রোদ পাওয়া যাবে এসব বিবেচনা করে তারপর বাগানের নকশা করতে হবে।

    বাতাসের দিক: সাধারণ বাগানের থেকে ছাদের বাগানে বাতাসের চলাচল একটু বেশিই হয়ে থাকে। এমনিতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল সব ধরনের গাছের জন্যই ভালো। তবে অতিরিক্ত বাতাস গাছের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও ঝড়ো বাতাসে গাছ নুয়ে পড়তে পারে। তাই ছাদে বাগানের নকশায় রোদের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের দিকও বিবেচনায় রাখা দরকার।

    ছাদ যদি খুব উঁচুতে হয় এবং আশপাশে আর কোনো উঁচু দালান না থাকে তবে বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়া দিতে হবে। বাতাস যেন মাটির আর্দ্রতাও কেড়ে না নেয় তা নিশ্চিত করতে মাটির উপর খড়ের বা প্লাস্টিক চাদরের আবরণও দিতে পারেন।

    পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা: বাগানের মাটি থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত পানি ছাদের কংক্রিটের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও ছাদে আগাছা জন্মে ছাদের মেঝেকে পিচ্ছিল ও ক্ষয় করে ফেলে তাই যে গাছই বোনা হোক না কেনো এবং যে পদ্ধতিতেই বোনা হোক না কেনো পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে।

    যদি টবে গাছ বোনা হয় তাহলে এর নিচে আরও একটি মাটির ট্রে রাখা হয়। এটি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু মাটির ট্রে পানি শোষণ করে সেটিকে ছাদের মেঝেতেই পৌঁছে দেয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছাদের মেঝেতে পানি নিরোধক কোনো রং, টাইলস বা আলকাতরার একটা স্তর তৈরি করে তার উপরে যথাযথ একটা নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা করা যায়। নালার উপরে একটা ছাঁকনি রাখা যেতে পারে। এতে পানির সঙ্গে ধুয়ে যাওয়া মাটি নিষ্কাশন নালা বা ছাদে না পড়ে ছাঁকনিতে আটকে থাকবে। এভাবে মাটি এবং ছাদ উভয়ের ক্ষয় রোধ করা যাবে।

    অনেকেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাদের এক কিনারা সামান্য ঢালু রাখেন এটিও বেশ ভালো উপায়। তবে কিছুতেই ছাদের কোনো কিনারা ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাবে না। এতে স্থাপনার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

    বাগান করা

    মাটি দেওয়া: ছাদের বাগানে দুভাবে মাটি স্থাপন করা যায়। কোনো পাত্র বা টবের মধ্যে অথবা ছাদকে পানিরোধী করে সরাসরি মাটি ফেলে।

    দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। প্রথম ক্ষেত্রে ছোট ছোট টব বাছাই না করে বড় ট্রে বা প্লাস্টিকের বাক্স নেওয়া যেতে পারে। অনেকেই সিমেন্টে ঢালাই করা বড় টব বানিয়ে নেন। তবে এ ধরণের টবের ওজন অনেক বেশি হয় ফলে ছাদের ধারণ ক্ষমতার বড় অংশই কংক্রিটের টব দখল করে ফেলে।

    টব বা সরাসরি মেঝে যেভাবেই মাটি ফেলা হোক না কেন, মাটির ধরণ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। ছাদের বাগানের মাটি এমন হতে হবে যেন তা হালকাও হয় এবং পানিও ধরে রাখতে পারে।

    বেলে মাটির সঙ্গে সবুজ সার মিলিয়ে তৈরি করা মাটিই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়।

    গাছ বাছাই: সব কিছু সঠিকভাবে করার পর এখন গাছ বাছাইয়ের পালা। যেহেতু বাগানটা ছাদে হবে তাই অন্য সব কিছুর মতো গাছ বাছতে হবে ভেবে চিনতে। ছাদের বাগানে ফুল, ফল বা সবজি যে ধরণের গাছই লাগান না কেনো গাছের আকার যতটা সম্ভব ছোট রাখবেন। যদি ফল গাছ বোনার পরিকল্পনা থাকে তবে গাছের উচ্চতা কম রেখে, বেশি ডালপালার ঝাড় রাখুন।

    লম্বা কাণ্ডের কম ডালপালার গাছের অসুবিধা হচ্ছে এই ধরনের গাছ অল্প বাতাসেই নুয়ে যাওয়ার বা কাণ্ড ভেঙে যেতে পারে। ছাদে বোনার জন্য লতানো এবং কম উচ্চতার গাছ নেওয়া সবদিক দিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।

    যেসব গাছের শিকড় বেশি গভীরে প্রবেশ করে সেসব গাছও ছাদের বাগানে লাগাবেন না। শিকড় পাশের দিকে বেশি ছড়ায় এমন গাছই ছাদের বাগানের জন্য উৎকৃষ্ট।

    ছাদের বাগানে লাগানোর মতো কিছু গাছ

    ফল: পেয়ারা, পেঁপে, কলা ইত্যাদি হালকা ওজনের গাছ লাগানো যেতে পারে। বড় গাছ যেমন আম বা লিচু লাগালে গাছের আকার যতটা সম্ভব ছোট হতে হবে। এছাড়াও আঙুরের মতো লতানো বা স্ট্রবেরির মতো একদম মাটিতেই জন্মানো গাছ বেছে নেওয়া যেতে পারে।

    সবজি: প্রায় সব ধরনের সবজিই ছাদের বাগানে বোনা যায়। সব ধরনের শাক, লতানো-সবজি যেমন লাউ, কুমড়া, শিম থেকে শুরু করে মূলা, গাজর, ফুলকপি, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, মরিচ বেগুন সবই বোনা সম্ভব।

    ফুল: ফুলের বড় গাছ এড়িয়ে যে কোনো ধরনেরর ছোট ফুলের গাছ লাগানো যায়। গোলাপ, গাদা, বেলির মতো ছোট গাছের ফুল অথবা অপরাজিতা, মর্নিং গ্লোরি ইত্যাদি লতানো গাছ বেড়া তুলে দিয়ে চাষ করা সম্ভব।

    ছাদের গাছের যত্ন

    ছাদের গাছের যত্নের মূল বিষয় হচ্ছে পর্যাপ্ত সূর্যলোক এবং পর্যাপ্ত পানি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মাটির আর্দ্রতা দেখে পানি দিতে হবে। এছাড়াও ছাদের গাছে পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হলেও পাখি এবং বাদুরের উৎপাত খুব বেশি হয়। পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ফল বা সবজির উপর জাল দিয়ে দেওয়া যায়।

    এত পরিশ্রমের পরে নিজের বাগানে যখন ফুল ফল আসে তখন মন খুশিতে ভরে ওঠে। গাছের যত্ন একজন করলেও ফসলের খুশি পৌঁছে যায় সবার কাছে। যান্ত্রিক জীবনে সবুজের আনন্দ ছুঁয়ে যাবে সকলের হৃদয়। ধোঁয়া দূষণের শহরে প্রতিটি বাড়ির ছাদ হবে একটি করে অক্সিজেনের ছোট্ট কারখানা। এভাবেই হয়তো দূষণ থেকে শহরকে রক্ষা করার সামান্য একটি অবদান রাখতে পারি আমরা সবাই।

    শাহী পেঁপে বিস্তারিত ও চাষাবাদ

  • Share The Gag
  • শাহী পেঁপে:::

    বৈশিষ্ট্য : উচ্চ ফলনশীল একলিঙ্গী জাত। গাছের উচচতা ১.৬-২.০ মি., কান্ডের খুব নীচু থেকে ফল ধরা শুরু হয়। ফল ডিম্বাকৃতির, ফলের ওজন ৮০০-১০০০ গ্রাম, ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা ৫০০-৫৫০ টি। শাসের পুরুত্ব ২ সে.মি., রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। ফল মিষ্টি (ব্রিক্সমান ১২%) ও সুস্বাদু।

    উপযোগী এলাকা : দেশের সর্বত্র চাষ উপযোগী।
    বপনের সময় : আশ্বিন(সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এবং পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাস পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময়। বপনের ৪০-৫০ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী হয়।

    মাড়াইয়ের সময়: সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ফলের কষ যখন হালকা হয়ে আসে এবং জলীয়ভাব ধারণ করে তখন পেঁপে সংগ্রহ করা উত্তম। অন্য দিকে ফলের গায়ে যখন হালকা হলুদ রং দেখা দেবে তখন ফল হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

    শাহী পেঁপের রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা::

    রোগবালাই::
    চারা ঢলে পড়া ও কান্ড পঁচা রোগঃ মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে বীজতলায় চারা ঢলে পড়া এবং বর্ষাকালে কান্ডপচা রোগ দেখা দিতে পারে।

    এ্যানথ্রাকনোজঃ এ রোগের কারণে ফলের গায়ে বাদামী পচন রোগ দেখা দেয়। ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।

    পেঁপের মোজাইকঃ এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ হলে পাতায় হলুদ রং এর ছোপ ছোপ দাগ পড়ে, পাতার বোঁটা বেঁকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের জাব পোকা দ্বারা এ রোগ ছড়ায়।

    পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাসঃ এ রোগ হলে পাতা কুঁকড়িয়ে এবং মুচড়িয়ে যায় এবং পত্রফলক ছোট হয়ে যায়। আক্রমণ তীব্র হলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। জাব পোকার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

    শিকড়গীট রোগঃ এটি কৃমিজনিত রোগ। আক্রান্ত শিকড় ফুলে উঠে এবং গীটের সৃষ্টি করে। গাছ দূর্বল, খাট ও হলুদাভ হয়ে পড়ে। সাধারণত আক্রান্ত চারা, বৃষ্টি বা সেচের পানি ও কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

    দমন ব্যবস্থা:

    চারা ঢলে পড়া ও কান্ড পঁচা রোগপ্রতিকারঃ এ রোগ প্রতিকারের তেমন সুযোগ থাকে না। তাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা উত্তম। আশ্বিন (সেপ্টেমবর-অক্টোবর) মাসে বীজতলা তৈরি করতে হলে বীজ বপনের পূর্বে বীজতলার মাটি ভালভাবে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সিকিউর নামক ছত্রাকনাশক ২-৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। জমি তৈরির পর ৬ সে.মি. পুরু করে শুকনো কাঠের গুড়া বা ধানের তুষ বীজতলায় বিছিয়ে পোড়াতে হবে। পরে মাটি কুপিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় হেক্টরে ৫ টন হারে আধাপঁচা মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করতে হবে। বীজবপনের পূর্বে ১৫-২১ দিন জমিতে বিষ্ঠা পঁচানোর পর বীজ বপন করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে সিকিউর মিশিয়ে ড্রেঞ্চিং করে এ রোগের বিস্তার কমানো যায়। চারা লাগানোর ৩ সপ্তাহ পূর্বে হেক্টর প্রতি ৩ টন আধা পঁচা মুরগীর বিষ্ঠা অথবা ৩০০ কেজি খৈল জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশাতে হবে। এতে কান্ডপঁচা রোগের উপদ্রব কম হবে।

    এ্যানথ্রাকনোজ প্রতিকারঃ নোইন/ব্যাভিস্টিন/কেডাজিম প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২/৩ বার ফলের গায়ে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।

    পেঁপের মোজাইক,পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ নিয়ন্ত্রণঃ আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ বিস্তারকারী পোকা দমনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।

    শিকড়গীট রোগঃ

    প্রতিকারঃ শুষ্ক মৌসুমে জমি পতিত রেখে ২/৩ বার চাষ দিয়ে মাটি ওলট-পালট করে দেওয়া। রোপণের সময় গর্ত প্রতি ২৫ গ্রাম ফুরাডান ৫ জি প্রয়োগ করা। আধা পঁচা মুরগীর বিষ্ঠা ৩ টন/হেক্টর বা সরিষার খৈল ৩০০ কেজি/হেক্টর চারা লাগানোর ৩ সপ্তাহ পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশাতে হবে

    পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা

    পোকামাকড়::

    মিলি বাগঃ সাম্প্রতিক সময়ে মিলি বাগ পেঁপের একটি মারাত্বক পোকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আক্রান্ত পাতা ও ফলে সাদা পাউডারের মত আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ফলে শুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে গাছ মারা যেতে পারে।

    দমন ব্যবস্থা::

    মিলি বাগ প্রতিকারঃ আক্রমনের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা/কান্ড সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে অথবা পুরাতন টুথব্রাশ দিয়ে আঁচড়িয়ে পোকা মাটিতে ফেলে মেরে ফেলতে হবে।আক্রমণ বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবান পানি অথবা এডমায়ার ২০০এসএল ০.২৫ মি.লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

    সার ব্যবস্থাপনা:::

    ভাল ফলন পেতে হলে পেঁপেতে সময়মত সার প্রয়োগ করতে হবে। উপরি হিসেবে গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর হতে প্রতি মাসে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

    তথ্য সহযোগিতায়: বারি, জয়দেবপুর, গাজিপুর।