Sunday, February 28, 2016
পুষ্টিগুণে ও স্বাস্থ্যসুরক্ষায় বরই সেরা
লাউয়ের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে আছে, কার্বোহাইড্রেট- ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন- ০.২ গ্রাম, ফ্যাট- ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন-সি- ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২০ মি.গ্রা.,ফসফরাস- ১০ মি.গ্রা.,পটাশিয়াম- ৮৭ মি.গ্রা., নিকোটিনিক অ্যাসিড- ০.২ মি.গ্রা.। এছাড়াও লাউয়ে রয়েছে খনিজ লবন, ভিটামিন বি-১, বি-২, আয়রন।
ওজন কমাতে
আপনি যদি ওজন কমানোর কথা ভেবে থাকেন তাহলে খাবার তালিকায় লাউ রাখুন। লাউ একটি কম ক্যালোরি সম্পন্ন ডায়েট। লাউয়ের ৯৬% হলো পানি। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে এবং খুবই কম ক্যালোরি থাকে যা ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। তাই ওজন কমানোর চিন্তা করছেন যারা তাঁরা বেশি করে লাউ খান। তাহলে শরীরে কম ক্যালোরি যুক্ত হবে এবং পেটও ভরবে।
হজমে সাহায্য করে
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় এবং অদ্রবনীয় ফাইবার আছে। দ্রবণীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে এবং হজম সংক্রান্ত সকল সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এছাড়াও নিয়মিত লাউ খেলে অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান করে। অদ্রবণীয় ফাইবার পাইলসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
শরীর ঠান্ডা করে
যেহেতু লাউ এর মূল উপাদান হলো পানি তাই লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। যারা নিয়মিত সূর্যের আলোতে কাজ করে অথবা দীর্ঘক্ষন ধরে রোদে কাজ করার পর লাউ তরকারী খেলে শরীর বেশ ঠান্ডা হয় এবং শরীরের ভেতরের অস্বস্তি লাগা কমে। গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে যে পানি বের হয়ে যায় লাউ সেটার অনেকটাই পূরণ করে ফেলে। ফলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়।
ত্বক ভালো করে
লাউয়ে আছে প্রাকৃতিক প্রোটিন ও ভিটামিন। তাই নিয়মিত লাউ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ত্বক ভেতর থেকে ভালো হয়। এছাড়াও যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ত্বকের তৈলাক্ততার সমস্যা অনেকটাই কমে যায় লাউ খেলে। এছাড়াও লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার রাখে। ফলে মুখে ব্রণ ওঠার প্রবণতাও কমে যায় অনেকটাই।
পানিশূন্যতা দূর করে
জ্বর, ডায়রিয়া ও অন্যান্য বড় ধরণের অসুখে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় বলে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং তা কিডনির উপর প্রভাব ফেলে। তাই এ ধরণের অসুখের সময় প্রচুর পরিমাণে লাউ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়ে যায় এবং শরীর সতেজ থাকে।
প্রসাবের জ্বালা পোড়া কমায়
লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। তাই যাদের প্রসাবে জ্বালা পোড়ার সমস্যা আছে কিংবা প্রসাব হলদে হয় তাদের নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত। নিয়মিত লাউ খেলে এধরণের সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।
ব্রণ থেকে বাঁচাবে ত্রিফলা
তবে সবচেয়ে নিরাপদ হল যদি শুষ্ক ফল এর মত অবস্থায় ত্রিফলা ব্যববার করেন। ত্রিফলা হল ৩ টি ফলের মিশ্রন।
এতে থাকে আমলকি, হরিতকি, বিভিতকি। ব্রণের সমস্যা দূর করতে এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
যেভাবে খাবেন:
ত্রিফলার মিশ্রণের একটি অংশ (যাতে অন্তত ১ টি হরিতকি, ১ টি বিভিতকি ও ২ টি আমলকি থাকে) গুড়া করে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে খালি পেটে রসটুকু ছেঁকে খেয়ে নিতে হবে। খাওয়ার পর অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে নাস্তা করার জন্য।
ব্রণ দূর করার আরো একটি উপায়:
ব্রণের দাগ ও ব্রণের উপর লবঙ্গ বেটে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখবেন। ১ দিন পর পর টানা ১ মাস এভাবে লাগালে দাগ কমে যাবে। লবঙ্গে ঝাঁঝ থাকে বলে লাগানোর প্রথম ৫-৭ মিনিট ত্বক জ্বলবে, কিন্তু এতে ঘাবড়ে যাবেন না। কিছুক্ষণ পর জ্বলা ঠিক হয়ে যাবে। প্রতিবারই এমন হবে। লবঙ্গ বাটার সময় এতে একটু পানি মিশিয়ে নিবেন।
সূত্রঃ ভোরের কাগজ
নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পানের কয়েকটি উপকারিতা
লবঙ্গের বিস্ময়কর ১১ গুণ
১। বদহজম দূর করতে লবঙ্গ খুব ভালো কাজ করে। এনজাইম বৃদ্ধি করে পেটের গ্যাস, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা কমিয়ে দেয়। লবঙ্গের গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
২। হঠাৎ শুরু হওয়া দাঁতের ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা এই লবঙ্গ। লবঙ্গের তেল এক টুকরো তুলোতে লাগিয়ে ব্যথার দাঁতের উপর রেখে দিন। এটি দাঁতের ব্যথা দূর করে ইনফেকশন হওয়া থেকে দাঁতকে রক্ষা করবে।
৩। উচ্চ ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য লবঙ্গ অনেক উপকারি। এটি শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রেখে শরীরের রক্ত থেকে কোষের মধ্যে বাড়তি চিনি পরিবহন করতে সাহায্য করে, নিয়মিত লবঙ্গ খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
৪। গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গে ইউজিনল এবং ইউজিনল ডেরিভাটিভস যা হাড়ে ঘনত্ব এবং মিনারেল বৃদ্ধি করে থাকে। নারীরা এবং বয়স্ক মানুষদের নিয়মিত লবঙ্গ খেলে হাড়ের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
৫। পেশীর প্রদাহ এবং বাতের ব্যথা দূর করতেও লবঙ্গের জুড়ি নেই। বাতের ব্যথার স্থানে লবঙ্গের তেল ম্যাসাজ করুন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যথা কমে গেছে।
৬। এক গ্লাস দুধে লবঙ্গের গুঁড়ো এবং লবণ মিশিয়ে পান করুন। এটি মাথা ব্যথা দ্রুত দূর করে দিবে।
৭। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ লবঙ্গ লিভার আক্রান্ত হতে পারে এমন উপাদানসমূহ ধ্বংস করে থাকে। ফলে নিয়মিত লবঙ্গ খেলে লিভার সুস্থ থাকে। এছাড়া লবঙ্গ ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।
৮। তুলসি, পুদিনা, এলাচ ও লবঙ্গ মেশানো পানির শরবত মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে।
৯। লবঙ্গ ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ব্রণের দাগ দূর করতেও লবঙ্গের পেস্ট খুব কার্যকর।
১০। লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে।
১১। লবঙ্গের তেলের জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে। এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে খুবি কার্যকর।
চুল পড়া রোধে কার্যকরী পাতা
অনেকেই ঝরে পড়া চুল নতুন করে গজানোর আশায় বিভিন্ন কোম্পানির উর্ভরজাত পণ্য বা ওষুধ ব্যবহার করেন। চুল না থাকা সত্ত্বেও মাথার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য ধরে রাখতে কেউ কেউ নকল চুলও ব্যবহার করেন। যাহোক, চুল পড়া ঠেকাতে পেয়ারা পাতা বেশ কার্যকরী বলে একদল বিজ্ঞানীর মত। চুল পড়া রোধে পেয়ারা পাতার ব্যবহার সবচেয়ে কার্যকরী এবং প্রাকৃতিক উপায় বলে বর্ণনা করেছেন তারা।
গবেষকদের দাবি, পেয়ারা পাতা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মাথার চুলের ঝরে পড়া রোধ হয় এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পেয়ারা পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি যা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য খুবই উপকারী।
তাদের আরো দাবি, পেয়ারা পাতা অবশ্যই মাথার চুল ঝরে পড়া রোধ করবে। সেইসঙ্গে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। এটি চুলের সংযুক্তিস্থল অর্থাৎ গ্রন্থিকোষ ও শিখড়কে অনেক শক্ত করে।
ব্যবহারের বিধিমালা :
কয়েকটি পেয়ারা পাতা পরিষ্কার পানিতে ২০ মিনিট সিদ্ধ করার পর এর সঙ্গে ঠাণ্ডা পানির মিশ্রণ দিতে হবে। এরপর তা মাথার খুলিতে দিয়ে এক ঘণ্টা পর মাথা পরিষ্কার করতে হবে। এই পদ্ধতিতে ভালো ফল পাওয়ার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে করাই শ্রেয়।
Source-bd24live
Friday, February 26, 2016
আলু সংরক্ষণ পদ্ধতি
কলা সংরক্ষণ
Wednesday, February 24, 2016
মানিকগঞ্জে শসা চাষে সফল কৃষক মুন্নাফ
মুন্নাফ খান জানান, বীজ, সার, কীটনাশক আর পরিচর্যার মজুরি মিলিয়ে খরচ পড়েছে আড়াই লক্ষাধিক টাকা। বীজ লাগানোর দেড় মাসের মধ্যেই হাইব্রীড (অল রাউন্ডার-২) প্রজাতির শসা গাছে ফলন ধরে। কার্তিক থেকে শুরু করে মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত শসা বিক্রি করে লাভ হবে ৫ লক্ষাধিক টাকার ওপরে। উৎপাদিত শসা ঢাকার কারওয়ান বাজার ও আশুলিয়ার বাইপাইল কাঁচা বাজারে পাইকারী বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
পাশের ৮০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন কৃষক গোপাল ও দীলিপ সরকার। তারাও বাম্পার ফলনে বেশ লাভবান। দীলিপ সরকার জানান, সরকারী পর্যায়ে কৃষি ঋণ ও কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ প্রদান করেন তাহলে শসা চাষে আরো অনেকেই এগিয়ে আসবে। ফলনও বৃদ্ধি পাবে।
মুন্নাফ খান অনেকটা অভিযোগের সুরে বলেন, বীজ লাগানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত কোনো কৃষি কর্মকর্তা শসা ক্ষেত পরিদর্শনে আসেননি। বালাই দমনে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টির কারনে শসার ডগায় ও জালিতে পঁচন ধরে ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও শালিক, ফিঙে পাখির অত্যাচার থেকে ফলন রক্ষা করতে শসার মাচায় জাল দিয়ে আবৃত করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফউজ্জামান বলেন, মুন্নাফ খানের সফলতায় এলাকার অনেক চাষি শসা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। শশা চাষে তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অন্যান্য শস্য ফলনেও কাজে লাগবে। কোন সমস্যার ব্যাপারে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবো।
টমেটোর দাম কমায় বিপাকে ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের চাষিরা
এদিকে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাও বলছেন, টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
সবজি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিতি ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে এবার মাচা পদ্ধতিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। তাতে বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে দাম কমে গেছে কয়েকগুণ। বর্তমান বাজার দরে উৎপাদন খরচই উঠবেনা বলে জানান তারা। আর স্থানীয় বাজারে টমেটো নিয়ে বসে থাকলেও দেখা মিলছে না পাইকারের।
ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হলেও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হয় এই অঞ্চলের কৃষকদের। এ অবস্থায় একটি সবজির পাইকারি বাজার ও হিমাগার স্থাপনের দাবি স্থানীয়দের।
প্রতিবছরই অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে বিপুল কৃষি জমি
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- এ পরিস্থিতিতে দ্রুত কৃষি ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করা হলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। অথচ ৬ বছর ধরে ঝুলে আছে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন। তবে সরকার ২০১৭ সালের মধ্যে ভূমি জোনিংয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর ভূমিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন দ্রুত পাশ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি কৃষি চিহ্নিত করার কথা বলেছেন। ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভূমি ও কৃষি জমি রক্ষায় রাষ্ট্রের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাপক হারে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে বাড়ি। নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার দোকানসহ বিভিন্ন রকমের স্থাপনা। হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। ফলে গ্রামের কৃষি জমি দ্রুত অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এমনকি দেশে সংরক্ষিত ভূমি বলতেও এখন কিছু নেই। যদিও দেশে জলাধার, বন রক্ষায় আইন ও নীতিমালা রয়েছে কিন্তু সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে কেউ তার তোয়াক্কা করছে না।
অথচ বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এখন ওই জমির এক-চতুর্থাংশই হুমকির মুখে। কারণ বাণিজ্যিক কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৯৬ বিঘা বা ৬৯২ একর কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। রূপান্তরিত জমির পুরোটাই অকৃষি খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জলাশয় ভরাট করে প্রতিদিন মোট কৃষি জমি কমছে ৯৬ বিঘা। পাশাপাশি তামাক চাষের কারণে প্রতিদিন ৯ হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১১ বছরে মোট ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। অথচ এদেশের মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী দেশে বছরে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাড়ছে। আর প্রতিবছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এক হাজার হেক্টর জমি।
তাছাড়া ৮০ শতাংশ সরকারি খাস জমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্মাণ কাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে ৩ হাজার হেক্টর জমি। গত ৩৭ বছরে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে। অথচ বিগত ৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০।
সূত্র জানায়, কৃষি অর্থনীতির সাথে এদেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষই সরাসরি জড়িত। কৃষি উৎপাদন ও কৃষিবিপণন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত থেকে ওসব মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। কিন্তু এদেশে বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমগত কমছে। পরিসংখ্যান মতে- দেশে মোট ৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি আছে। ওই জমিতেই দেশের কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকেন এবং দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়। অথচ তা থেকে প্রতিবছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।
১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৭৬২ মিলিয়ন হেক্টর। গত ৩৮ বছরের এ জমির পরিমাণ কমেছে ১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন হেক্টর। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য কৃষি জমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে। অথচ দেশে কৃষি জমি অকৃষি খাতে ব্যবহার করা যাবে না এমন আইন রয়েছে। কৃষি জমি অন্য খাতে ব্যবহার করতে হলে সরকারি অনুমোদনের বিষয় আছে। তাছাড়া জলাধার সুরক্ষা আইন, বনভূমি ও পাহাড় রক্ষায়ও আইন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো আইনেরই যথাযথ প্রয়োগ নেই।
সূত্র আরো জানায়, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) গবেষণার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিকক পর্যায়ের কৃষক। কৃষিজমি অকৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ায় ওই প্রান্তিক কৃষকরা সংসারের হিসাব মিলাতে পারছে না। এসআরডিআই হিসাব অনুযায়ী বিভাগওয়ারি অকৃষি খাতে জমি চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগেই সবচেয়ে বেশি। ওই বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১ হেক্টর, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬ হেক্টর, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১ হেক্টর, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমি প্রিিতবছর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে।
তাছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে আবাদযোগ্য জমি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ২৭৮ দশমিক ১৪ হেক্টর। সেচকৃত জমি ৭১ লাখ ২৪ হাজার ৮৯৫ দশমিক ৪১ হেক্টর। তাছাড়াও আবাদযোগ্য পতিত জমি রয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬ দশমিক ২৪ হেক্টর। বর্তমানে দেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন হেক্টর। যার প্রায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ জুড়ে বনভূমি। ২০ দশমিক ১ শতাংশে স্থায়ী জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি, অবশিষ্ট ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ জমি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। জমি কমায় আগামী ১০ বছরেই দেশে খাদ্যনিরাপত্তা সঙ্কট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কারণ দেশে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে মোট ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর বা ৮০ লাখ ৩৩ হাজার বিঘা কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। এই হিসেবে বছরে এই রূপান্তরের পরিমাণ ৭ লাখ ৩০ হাজার ৩২৬ বিঘা জমি। আর প্রতিদিন কমছে ২ হাজার বিঘা কৃষি জমি। বিপুল পরিমাণ এ কৃষি জমির ৮০ শতাংশই বাড়ি নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। দোকানপাট নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ আর অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে কারখানা স্থাপন, তামাক ও চিংড়ি চাষ, ইটভাঁটি নির্মাণ প্রভৃতি।
এদিকে প্রস্তাবিত কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কৃষিজমিতে আবাসন, শিল্পকারখানা, ইটভাঁটি বা অন্য কোনো রকম অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেন তা কৃষি জমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। দেশের যে কোনো স্থানের কৃষি জমি এ আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে এবং কোনোভাবেই তা ব্যবহারে পরিবর্তন আনা যাবে না। এমনকি কোনো অবস্থাতেই উর্বর জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতিও দেয়া যাবে না। যে কোনো ধরনের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। আইনে বিচার ও দণ্ড হিসেবে বলা হয়েছে- আইন লঙ্ঘনকারী বা সহায়তাকারীর অনুর্ধ ২ বছর কারাদ- বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয়দের দণ্ডিত হবে। এ আইনের অধীনে অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোসযোগ্য হবে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা কিংবা বন ও মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা করতে পারবেন।
অন্যদিকে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এদেশের ভূমি ব্যবহারের সমন্বিত কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে রাষ্ট্র জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন দিন জমির পরিমাণ কমছে। দেশ এগিয়ে চরম সঙ্কটের দিকে। এর ফলে ভবিষ্যতে এদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ হবে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা। গ্রামে জমি রক্ষায় বিচ্ছিন্নভাবে বাড়ি নির্মাণ না করে গ্রামগুলোকে ছোট ছোট শহরে পরিণত করা যেতে পারে। জমি রক্ষায় বহুতল ভবনে একাধিক পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা করা এখন জরুরি। তাহলে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও হ্রাস করা সম্ভব হবে।
কৃষি জমি সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন- কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার আইন শিগগিরই চূড়ান্ত হচ্ছে। এর ফলে ভূমির যথেচ্ছা ব্যবহার রোধ হবে এবং কৃষক তাদের সোনালি ফসল ঘরে তুলে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ বিদেশে খাদ্য রফতানি করতে সক্ষম হবে। অযৌক্তিকভাবে যাতে কৃষি জমির ব্যবহার না হয় সেজন্যই এই আইন করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল নাগাদ ভূমি জোনিং করা হবে। তাছাড়া প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এবং জনস্বার্থে ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে বলেও ভূমিমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
কৃষি সুরক্ষা বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী আরো বলেন- জনবহুল এদেশে ভূমি বাড়ছে না। তবে সমুদ্র ও নদী থেকে কিছু জমি বাড়ছে। এদেশে ভূমি সমস্যা অনেক দিনের। ঔপনিবেশিক সরকার আমলেও সমস্যা ছিল। এ কারণে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
মরুভূমির ‘স্কোয়াশ’ আবাদে সফল মানিকগঞ্জের আনোয়ার
এ নিয়ে আনোয়ার হোসেন সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ কোচা লাগানো সম্ভব। পূর্ণবয়স্ক একটি কোচা গাছ অল্প জায়গা দখল করে। কোচা ও স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি।
দেশের উচ্চ ফলনশীল ফসলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সিংগাইর উপজেলার বড় কালিয়াকৈরের এ কৃষক। তিন মাসে এ ফসল আবাদ করে তিনি খরচ বাদে ১০ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে একটি চালানে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
১৫ বছর আগে সৌদি আরব থেকে কোচা সবজির বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে রোপন করেন আনোয়ার। ওই আবাদে সফল হয় আনোয়ার। পরের বছর ১ বিঘা, এরপর দুই বিঘা জমিতে কোচা ও স্কোয়াশ চাষ করেন। এরপর আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি তাকে।
এখন আনোয়ার ও তার ভাই আবুল হোসেন ৩ একর জমিতে এই অধিক উৎপাদনশীল সবজি চাষ করেন। চলতি বছর খরচ বাদে ১০ লাখ টাকা আয় করার টার্গেট নিয়ে ৩ একর জমিতে কোচা ও স্কোয়াশ আবাদ করে করেছেন তিনি।
আনোয়ারের মতে, ২ থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন অনেক বেকার যুবক। এসব বেকার যুবক বিদেশে গিয়ে যে অর্থ উপার্জন করেন তার চেয়ে অধিক অর্থ উপার্জন করা যাবে উচ্চ ফলন শীল এই ফসল আবাদ করে।
তিনি জানান, কোচা ও স্কোয়াশ এক সঙ্গে আবাদ করা যায়। তিন মাস পর ওই ফসল উঠে যাওয়ার পর জমি পতিত থাকে না। কোচা বা স্কোয়াশ উঠার সঙ্গে ওই জমিতে মিষ্টি কুমড়া, শশাসহ সাথী ফসল চাষ করা যায় বাকি ৯ মাস। এতে জমির মাটির কোনও গুনাগুণ নষ্ট হয় না। আনোয়ারের সফলতায় এ ফসল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কৈতড়া, বাইতরা, কালিয়াকৈর, বাংগালা, কাস্তাসহ আশপাশের গ্রামের অসংখ্য কৃষক। ভাল বীজের নিশ্চিয়তা ও চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ মিললে এটি এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হতে পারে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
বাজারে প্রতি কেজি কোচা ও স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। কোচা দেখতে অনেকটাই শশার মত সাদা, আর স্কোয়াশ লাউ আকৃতির। উচ্চ ফলনশীল এই দুই জাতের ফসল ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। এটা খেতেও সুস্বাদু। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবজি এবং সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সফলতার গল্প বলতে গিয়ে আনোয়ার হোসেন জানান, মাত্র আড়াই লাখ টাকা খরচ করে বীজ রোপনের দেড় মাস পর থেকেই ক্ষেত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকার কোচা তোলা শুরু হয়। এ হিসেবে দেড় মাসে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা কোচা ও স্কোয়াশ বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খরচ বাদে সব মিলে তার ১০ লাখ টাকা আয় হবে।স্কোয়াশ চাষে তিনি একাই সাবলম্বী হবেন এমনটা নয়। তার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার প্রায় ২০ জন শ্রমিককেও সাবলম্বী করা হয়েছে।
সিংগাইর উপজেলার কালিয়াকৈর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র মন্ডল জানান, কোচা বা স্কোয়াশ সবজি জাতীয় ফসল। যা কুমড়া ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের ক্রস। দেশের প্রচলিত কোনও সবজির এমন উৎপাদন ক্ষমতা নেই। তাই এই কোচা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি জানান, লাভজনক ফসল ও ভোক্তাদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কোচা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার বেশ কয়েকজন চাষী। তাই সরকারিভাবে বীজ সরবরাহের দাবি জানান তিনি। কেননা কোচার বীজ এখনও সরকার কিংবা দেশের কোনও কোম্পানি আমদানি কিংবা তৈরি করছে না। সৌদি আরব কিংবা দেশের মাটিতে যদি এর বীজ তৈরি করা যায় তাহলে চাষীরা কাঙ্ক্ষিত সফলতার মুখ দেখতে পারবেন।
কৃষি খাতে অবদানের জন্য অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০১৬
হাজী দানেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি অনুষ্ঠান
উপাচার্য মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে ও সহকারী অধ্যাপক মো. সাদেকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দিনাজপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য মো. ফরিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এম সাইফুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবালুর রহিম বলেন, শিক্ষার মান, পাঠদানপদ্ধতি, শিক্ষা ও গবেষণায় এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে উন্নত জাতি গঠনে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন মো. আনিস খান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বলরাম রায়, হল সুপার কাউন্সিলের আহ্বায়ক মো. নাজিমউদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম শফিকুল ইসলাম, শিক্ষার্থী রুবেল হক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বস্তিকা খতিয়ারি প্রমুখ।
পার্বতীপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ, আধা বেলা ধর্মঘট পালন
শুভ দিনাজপুর সংবাদদাতা:প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বিরুদ্ধে জমি দখলের ‘অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে তাঁর নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহীদ মিনারে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। গত সোমবার বিকেলে ওই কর্মসূচি পালন করা হয় পূজা উদ্যাপন কমিটি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পার্বতীপুর শাখার উদ্যোগে। এর আগে আধা বেলা ধর্মঘট পালন করা হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে বাংলাদেশ পূূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ অভিযোগ করেন, মন্ত্রীর খালাতো ভাই এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী পার্বতীপুরের চন্ডীপুর ইউনিয়নের ৫৫টি হিন্দু পরিবারের জমি দখল করেছেন।
গতকালের সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাংসদ ফিজার হিন্দুর জমি দখল করতে পারেন না। হিন্দুদের সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টির জন্যই একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পার্বতীপুর শাখার সভাপতি শচীন্দ্রনাথ সাহা, সাধারণ সম্পাদক নীলকান্ত মোহন্ত, পূজা উদ্যাপন কমিটির পার্বতীপুর শাখার সভাপতি বিদেশ রায় প্রমুখ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বলেন, চন্ডীপুরের ২৫ দশমিক ৭৮ একর সম্পত্তি হিন্দুর নয়। আদালতের রাযের ওই সম্পত্তি যে এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর তা ২০০২ সালেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কাজেই এ নিয়ে জল ঘোলা করার সুযোগ আর নেই।
পার্বতীপুরে প্রতিবাদের ঝড়
মানববন্ধন
দিনাজপুর সংবাদদাতা:প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে বেশকিছু জাতীয় দৈনিকে মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় পার্বতীপুরে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। পূজা উদযাপন কমিটি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সোমবার বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও বদনাম দেয়ায় প্রতিবাদ জানায়। এ উপলক্ষে সোমবার দুপুর ২টায় স্থানীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হন। বাস, ট্রাক, রিক্সা, ভ্যান অটোবাইক চালকরা সমাবেশস্থলে আসেন। এমনকি শহরের হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ করে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিলে মানববন্ধন বিশাল আকার ধারণ করে। এতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি স্বপন কুমার সাহা ছাড়াও শচীন্দ্রনাথ সাহা, নীলকান্ত মহন্ত, দীপেশ চন্দ্র রায়, কৈলাস প্রসাদ সোনার বিকাশকান্তি রায় প্রমুখ বক্তব্য দেন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে তারা বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তারা বিস্মিত হয়েছেন।
তারা বলেন, মিথ্যা বক্তব্য দিলে কি প্রতিক্রিয়া হয় পার্বতীপুরে এসে তা দেখে যান। মান সম্মানহানির জন্য যে কোন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন। মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সেটাই করেছেন। এটা তার অপরাধ হতে পারে না। সাত দিনের মধ্যে উকিল নোটিস প্রত্যাহার না করলে আবারও আন্দোলন শুরু হবে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে এ ধরনের উস্কানিমূলক ও হুমকির ভাষায় বক্তব্য দিয়ে তারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান তা আমাদের বোধগম্য নয়। একই সংগঠনের হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারপরও তারা ঘটনাস্থলে সরেজমিন সবকিছু দেখে মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রীকে এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর কাল্পনিক খালাত ভাই বানিয়ে ভূমিহীন হিন্দু ৫৫ পরিবারের জায়গা দখল করছেন- এমন বক্তব্য দেয়া হাস্যকর। এ ছাড়াও পদ্মাবতী দেবীকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উল্লেখ করে নিজেরা মিথ্যার জালে জড়িয়েছেন। একই সময়ে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ করে স্থানীয় শহীদ মিনারে। পৌরসভাসহ ১০ ইউনিয়ন থেকে আগত দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীতে শহীদ মিনার চত্বর ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
দলের মুখপাত্র হিসেবে হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য অধ্যক্ষ নূরুল আমিনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর মৌজায় ২৫.৭৮ একর সম্পত্তি এমদাদুল ইসলাম চৌধুরীর কেনা। ১৯৬৭ সাল থেকে সাবজজ থেকে সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত রেকর্ড সংশোধনী মামলা চলার পর ২০০২ সালে তার পক্ষে মালিকানা হিসেবে চূড়ান্ত রায় হয়। এ রায়ের পরে যে কোন ব্যক্তির এতে হস্তক্ষেপ করার কী সুযোগ থাকে? মোস্তাফিজুর রহমান গণমানুষের নেতা। অন্যায়ভাবে কোন পক্ষে পক্ষ নিতে পারেন না। যারা এসব কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের দৃশ্যপট থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দলের সভাপতি হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, আমজাদ হোসেন, অধ্যক্ষ আ. রাজ্জাক, সৈদুল আলম শান্ত প্রমুখ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
আশুগঞ্জ সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ
মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানার সিঙ্গেস কমপ্রেসারের ব্রয়লারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ১কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ১২’শ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হবে।
আশুগঞ্জ সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) ওমর খৈয়াম জানান, মঙ্গলবার সকালে কারখানার সিঙ্গেস কম্প্রেসারের বয়লারের পাইপে লিকেজ হওয়ার কারণে কারখানার ইউরিয়া সরা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধের পর থেকেই কারখানার নিজস্ব প্রকৌশলীরা মেরামত কাজ শুরু করেছে।
মেরামত কাজ শেষ করে কখন কারখানাটি ইউরিয়া সার উৎপাদনে আসতে পারে তা নিশ্চিত করে জা
শতবর্ষী গাছ সংরক্ষণে আইন আসছে
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের পুরনো ও ঐহিত্যবাহী গাছ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা হিসেবে বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জীববৈচিত্র্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বনভূমির পুরান গাছের আবর্তনকাল উত্তীর্ণ হওয়ার পরও রাখার ব্যবস্থার জন্য আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে। আমাদের কোন কোন গাছ আছে শতবর্ষী।’
‘আইনটি মন্ত্রিসভায় ব্যাপক পর্যালোচনার পর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর এটি আবার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় আনা হবে’ বলেন শফিউল আলম।
চা আইন চূড়ান্ত অনুমোদন
‘চা আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আগে গত বছরের ২৬ জানুয়ারি আইনটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
সামরিক শাসনামলের ‘টি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৭’ প্রণয়ন করা হয়, এরপর ১৯৮৬ সালে এটি সংশোধন করা হয়। এটিকে যুগোপযোগী করে আইনে পরিণত করতে খসড়াটি উপস্থাপন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নতুন আইনে তেমন কোন পরিবর্তন নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সামরিক শাসনামলের আইনগুলো নিষিদ্ধ করায় আগের আইনটি সামান্য পরিমার্জনসহ বাংলায় নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। মূলত চা বোর্ডের ব্যবস্থাপনার জন্য এ আইন।’
বর্তমান আইনে শাস্তির বিধান বিস্তৃতভাবে বলা নেই। শাস্তির পরিমাণও কম। খসড়া আইনে এটি যুগোপযোগী করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বেশিরভাগ চা বাগানই বেসরকারি মালিকানায়। চা আবাদের জন্য ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি বরাদ্দ রয়েছে এবং ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘খসড়া আইনে সর্বোচ্চ দু’বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ বড় বাগানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ও ছোট বাগানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘মূল অধ্যাদেশে উপকরণ, কমিটি, চা বর্জ্য, কর্মচারীর সংজ্ঞা নেই। নতুন আইনে এ সংজ্ঞাগুলো যুক্ত করা হয়েছে। চা-এর সংজ্ঞা বিস্তৃত করা হয়েছে খসড়ায়।’
অধ্যাদেশ প্রণয়ণের সময় সিলেট বিভাগ হয়নি তাই খসড়া আইন অনুযায়ী চা বোর্ডে সিলেট বিভাগের কমিশনার অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
বাকৃবি’র সমাবর্তন মঞ্চে রাষ্ট্রপতি
এর আগে সোমবার জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা থেকে হেলিকপ্টার যোগে বিকেল পৌনে পাঁচটায় ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজ হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন রাষ্ট্রপতি। সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন করেন তিনি।
সমাবর্তন শেষে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টার যোগে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর উদ্দেশে রওনা দেবেন রাষ্ট্রপতি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।
এছাড়াও আরও উপস্থিত রয়েছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
Tuesday, February 23, 2016
পেপে চাষে করণীয়
বীজের পরিমাণ: ১২-১৫ গ্রাম/প্রতি বিঘা।
কখন চারা উৎপাদন করবেন ?
কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে পৌষের মাঝামাঝি এবং মাঘের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি বীজ বপনের উপযুক্ত সময়
কোথায় চারা উৎপাদন করবেন ?
পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করবেন। এজন্য ১৫১০ সে.মি. আকারের পলিথিন ব্যাগে ২ ভাগ পচা গোবর + ২ভাগ মাটি + ১ভাগ বালি দ্বারা ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। বীজ বপনের আগে রিডোমিল স্প্রে করুন।বীজ বপনের আগে হালকা রোদে বীজগুলি -২ ঘন্টা রেখে দিন অত:পর বপনের ২৪ ঘন্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে,পানি ঝরিয়ে ভেজা কাপড়ে মুড়ে উষ্ণ স্থানে রাখুন।২-৩ ঘন্টা পর প্রতিটি পলি ব্যাগে টাটকা সংগৃহীত বীজ হলে ১টি করে আর পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ (তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেনো সু¯্য’ সবল ও রোগমুক্ত হয়) বপন করে হালকা পানি দিয়ে ছায়াযুক্ত ও বাতাস চলাচল করে এমনস্থানে রাখুন। ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়। ২০-২৫ দিন বয়সের চারার ১-২% ইউরিয়া ¯েপ্র করলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়।নিয়মিত হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
মাদায় সার প্রয়োগ ও চারা রোপন পদ্ধতি
মাদায় চারা রোপণ:
পলিথিন ব্যাগে উৎপাদিত ৩০-৪০ দিন (৪-৬ ইঞ্চি উচ্চতা) বয়সের চারা জমিতে মাদা বা গর্ত করে রোপণ করতে হবে।
মাদা তৈরির সময় এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব রাখতে হবে ২ মিটার এবং মাদার আকার হবে দৈর্ঘ, প্রস্থ ও গভীরতায় প্রায় ৬০ সে.মি. ।
মাদায় সার প্রয়োগের ২- ৩ সপ্তাহ পর প্রতি মাদায় ৩টি করে চারা ত্রিভুজাকারে রোপণ করতে হবে। দু’সারির মাঝামাঝি ৪৫ সেমি. নালার ব্যবস্থা রাখলে সেচ বা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নিকাশের সুবিধা হবে।
চারা লাগানোর ১ দিন পূর্বে হালকা পানি দিয়ে পরদিন জো অবস্থায় ভালভাবে কুপিয়ে রিডোমিল স্প্রে করুন।চারা যাতে হেরে না পড়ে সে ব্যবস্হা করতে হবে।হালকা পানি দিতে হবে।
মাদায় প্রয়োগ
সারের নাম পরিমাণ
ভার্মি কম্পোষ্ট ২ কেজি
পচা গোবর সার ৬ কেজি
সরিষার খৈল ৫০ গ্রাম
টি.এস.পি ৪০০ গ্রাম
জিপসাম ২৫০ গ্রাম
বোরণ ৩০ গ্রাম
জিংক সালফেট/দস্তা সার ২০ গ্রাম
উপরি সার প্রয়োগ
গাছে নূতন পাতা আসলে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
ইউরিয়া ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
এম.ও.পি ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
গাছে ফুল আসলে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
ইউরিয়া ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
এম.ও.পি ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
অন্তর্বর্ত্তীকালীন পরিচর্যা
পেঁপে গাছ পুরুষ, স্ত্রী কিংবা উভয় লিঙ্গের মিশ্রণ হতে পারে। প্রতি মাদায় ৩টি করে পেঁপের চারা ত্রিভুজাকারে করে রোপণ করতে হয়। পরে গাছে ফুল আসলে প্রতি মাদায় একটি করে স্ত্রী অথবা উভয় লিঙ্গ গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। পরাগায়নের জন্য প্রতি ১০-১৫টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
বেশি করে পেঁপে ফলানোর জন্য অনেক সময় কৃত্রিম পরাগায়ন দরকার হয়। সকাল বেলায় সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে এর পাঁপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে পুংকেশর স্ত্রী ফুলের গর্ভ কেশরের উপর ধীরে ধীরে, ২-৩ বার ছোঁয়ালে পরাগায়ন হবে। এভাবে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫-৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা যেতে পারে।
পেঁপে গাছ ঝরে পড়ে যেতে পারে অথবা বেশি পরিমাণে ফল ধরলে কাত হয়ে যেতে পারে বা ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই গাছকে রক্ষা করার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে কান্ডের সাথে বেঁধে দেয়া দরকার।
শীতকালে প্রতি ১০-১২ দিন এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৮ দিন অন্তর পেঁপের জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেচের অতিরিক্ত পানি যাতে নালা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পেঁপে বাগান সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
Sunday, February 21, 2016
গরু মোটাতাজা করন ও ওজন বের করার নিয়ম
গরু মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় ধারাবহিকভাবে যে সকল বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে হব তা নিম্নরুপ।
০১. পশু নির্বাচন, ০২. কৃমিমুক্তকরন ও টিকা প্রদান , ০৩. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং ০৪. বাজারজাতকরন।
০১. পশু নির্বাচন : মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীর জন্য গরু ক্রয়ের সময় প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো বয়স ও শারীরিক গঠন।
ক. বয়স নির্ধারন: মোটতাজা করার জন্য সাধারনত ২ থেকে ৫ বছরের গরু ক্রয় করা যেতে পারে, তবে ৩ বছরের গরু হলে ভাল।
খ.
শারীরিক গঠন : মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত গরুর দৈহিক গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। এজন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রেখে গরু নির্বাচন করা জরুরী।
• দেহ হবে বর্গাকার ।
• গায়ের চামড়া হবে ঢিলা ( দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে টান দিয়ে দেখতে হবে)।
• শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো।
• পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত।
• পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটে ও মিলানো ।
• গরু অপুষ্ট ও দূর্বল কিন্তু রোগা নয়।
০২. কৃমিমুক্তকরন : পশু ডাক্তারের নির্দেশনা মত কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করা উচিত। তবে প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম টাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৩. টিকা প্রদান : পূর্ব থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।
০৪. ঘর তৈরী ও আবসন ব্যবস্থাপনাঃ আমদের দেশের অধিকাংশ খামারী ২/৩ টি পশু মোটাতাজা করে থাকে, যার জন্য সাধারনত আধুনিক সেড করার প্রয়োজন পড়েনা। তবে যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের মল- মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিস্কার করা যায় সে দিকে খেয়াল রেখে ঘরে তৈরী করতে হবে।
০৫. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ গরু মোটতাজাকরনে দুই ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রশদ (রেশন) তৈরী করা হ হয়।
• আঁশ জাতীয়ঃ শুধু খড়, ইউ এম, সবুজ ঘাস ইত্যাদি । তবে এই প্রক্রিয়ায় খামারীদেরকে শুধু খড়ে পরিবর্তে ইউ এম এস খাওয়াতে হবে।
• দানারারঃ খৈল, ভূষি, চাষের কুড়া , খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া, লবন ইত্যাদি। খাওয়ানের পরিমানঃ গরুকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, অর্থাৎ গরু যে পরিমান খেতে পারে সে পরিমান ইউ এম এস সরবারাহ করতে হব।
• কোন খামারী সবুজ ঘাস খাওয়াতে চাইলে প্রতি ১০০ কেজি কাঁচা ঘাসের সাথে ৩ কেজি চিটাগুড়ে মিশিয়ে তা গরুতে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে কাঁচা ঘাসেও গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ করতে হবে।
খ . দানাদর মিশ্রণঃ খামারীদের সবিধার জন্য নীচের সারনীতে একটি দানাদার মিশ্রণ তৈরীর বিভিন্ন উপাদান পরিমান সহ উল্লেখ করা হল। নিম্নের ছক অনুযায়ী অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী খামারীগণ বিভিন্ন পরিমান মিশ্রণ তৈরী করে নিতে পারবেন।
• খাওয়ানের পরিমানঃ গরুকে তার দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পাশের দানাদার মিশ্রণটি গরুর ওজনের শতকরা ০.৮-১ ভাগ পরিমান সরবরাহ করলেই চলবে।
• খাওয়ানোর সময়ঃ দানাদার মিশ্রণটি এবারের না খাইয়ে ভাগে ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে।
• পানিঃ গরুকে পর্যান্ত পরিমানে পরিস্কার খামার পানি সরবরাহ করতে হবে।
• ০৬. দৈহিক ওজন নির্ণয়ঃ মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে।
গরুর ওজন নির্নয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল জায়গায় দাড় করাতে হবে এবং ছবির নির্দেশিকা মোতাবেক ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য ও
বুকের বেড়ের মাপ নিতে হবে। এই মাপ নীচের সূত্রে বসালে গরুর ওজন পাওয়া যাবে।
দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় (ফুট) × বুকের বেড় (ফুট)
....................................... = ওজন (কিলোগ্রাম) ৬.৬০
উপসাংহারঃ উপরে বর্নিত পদ্বতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু মোটাতাজাকরন করে বাজারজাত করা সম্ভব
Thursday, February 18, 2016
৩য় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ডেইরী, মৎস্য ও পোষা পাখি ২০১৬ ইং
যারা যারা ভিজিট করতে চান ঘুরে আসুন খুব শিগ্রই। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে আগামীকাল ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ইং পর্যন্ত। যারা ডেইরী খামার করেছেন বা করার পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য এই প্রদর্শনী টা খুব জরুরী এছাড়াও মৎস্য খামারি, বাড়ী পোষা পাখীদের রোগ বালাই তথ্য এবং ঔষধ নিয়েও থাকছে অনেক অনেক টিপস। যারা আগ্রহী তারা ঘুরে আসুন- প্রদর্শনীতে প্রবেশের কোন টাকা লাগবে না যদি পাড়েন সাথে আপনার ভিজিটিং কার্ড অথবা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করে প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতে পাড়বেন। আগ্রহী বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিন।
হাঁস পালন
আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী। সমস্যা হচ্ছে হাঁসের মাংস ও ডিম মুরগির মাংসের চেয়ে জনপ্রিয় কম। তবে বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এখন হাঁস চাষ লাভজনক একটি প্রযুক্তি। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস চাষে এগিয়ে আসছেন এবং প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন হাঁস চাষ। মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। হাঁস চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন- মাছের জন্য পুকুরে তেমন বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না । হাঁস থাকলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
হাঁস পালনে সুবিধা : হাঁসের রোগবালাই তুলনামুলক খুবই কম। তাছাড়া খাবারের তেমন অভাব হয় না। দেশি মুরগি যেখানে গড়ে বছরে ৫৫টি ডিম দেয়, দেশি হাঁস সেখানে ৯০টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। আর উন্নত জাত হলে বছরে ২৫০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
যেভাবে শুরু করতে পারেন : এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে আপনার ৪০-৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর লাগবে। ১০০-২০০টি হাঁস এবং হাঁসের ঘর তৈরি করে নিতে হবে। এসব পরিকল্পিতভাবে করলে ভালো হবে। পাহারাদারের ঘরটি হাঁসের ঘরের দক্ষিণ পাশে হলে ভালো হয়।
উন্নত হাঁসের জাত : হাঁসের জাত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় সে জাতের হাঁস নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে খাকি ক্যাম্পেবেল, ইন্ডিয়ান রানার, সিলেট মিটি ও নাগেশ্বরী জাত নির্বাচন করা যেতে পারে। এ জাতের হাঁস ৫ মাস বয়স থেকে ২ বছর পর্যন্ত ডিম দেয়।
যেভাবে হাঁস পালন করবেন : হাঁস বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ২৫-১০০টি হাঁস মুক্ত পুকুরে, লেকে অথবা ধান কাটার পর পরিত্যক্ত জমিতে পালন করা যায়। অপরটি হচ্ছে ইনটেনসিভ হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ১-১০ লাখ হাঁস পালন করা সম্ভব। দিনের বেলায় হাঁস পানিতে থাকতে পছন্দ করে। শুধু রাতযাপনের জন্য ঘরের প্রয়োজন।
হাঁসের ঘর তৈরি : পুকুরপাড়ে কিংবা পুকুরের ওপর ঘরটি তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট হলে ভালো হয়। ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইট দিয়ে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হবে। ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শহরে বিভিন্ন মাপের চৌবাচ্চায় হাঁস পালন করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে প্রশস্ত ছাদ থাকলে সুবিধা বেশি। ছাদের একপাশে ঘর অপর পাশে চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হবে। প্রজননের জন্য আটটি হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখা দরকার। এরপর দেশি মুরগির সাহায্যে অথবা ইনকিউবেটরে হাঁসের ডিম ফোটানো যায়।
কোথায় পাবেন হাঁসের বাচ্চা : দৌলতপুর হাঁস খামার, নারায়ণগঞ্জ হাস প্রজনন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাঁস-মুরগির খামার ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাঁস বা হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন।
হাঁসের খাদ্য : হাঁস চাষে সুবিধা হলো হাঁস খাল-বিল-পুকুর থেকে তার কিছু খাবার সংগ্রহ করে নেয়। তাছাড়া বাজারে হাঁসের তৈরি খাবার কিনতে পাওয়া যায়। শুকনো খাদ্য না দিয়ে হাঁসকে সবসময় ভেজা খাদ্য দেয়া উচিত। খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত। হাঁস দানা, খইল, ভূষি, ঝিনুকের গুঁড়ো, ডিমের খোসা, কেঁচোসহ অন্যান্য খাবার বেশি পছন্দ করে।
মাছের পুকুরেও হাঁস পালন
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মাছের পুকুরে হাঁস পালন করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হন। এ চাষে হাঁস বেশি প্রোটিন পায়। মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
সম্ভাব্য আয়-ব্যয়
২০-৪০ শতাংশের একটি পুকুরে ১০০-২০০টি হাঁসের জন্য এ প্রকল্প শুরু করলে সব মিলে খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন নিতে পারলে প্রথম বছরে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ২০-৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
রোগমুক্ত, উন্নত জাতের হাঁস আধুনিক পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করুন। যে কোনো পরামর্শের জন্য আপনার উপজেলা বা জেলা মৎস্য ও পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাজহাঁস পালন ও তার পরিচর্যা
কিছু গৃহপালিত পাখি আছে যাদের নিয়ে সরকারি, বেসরকারিভাবে বেশ ঢাক-ঢোল পেটানো হয় তার সুখ্যাতির ও গুণাগুণের জন্য।'মানুষ ও কাকে নিয়ে গেল কান' শুনেই নিজের কানে হাত না দিয়ে কাকের পেছনে ছুটলো। ফলে কান যেখান থাকবার সেখানেই রইলো। শুধু কাকই যা পালিয়ে গেলো।
আবার কিছু কিছু পশুপাখি আছে যাদের সম্পর্কে সরকার সব সময় মুখ ঘুরিয়ে থাকে। পিঠে নিয়েছি কুলো। যা করবার করো!" ভাব নিয়ে মুখ গোমড়া করে থাকে। কিন্তু ঐ সব উপকারী গৃহপালিত পশুপাখি কারোর তোয়াক্কা না করে ঠিক নিজের কাজ করে যায়। রাজ হাঁস এই ধরনের একটি পাখি।
রাজহাঁসের সেবামূলক কাজ
কবি বলেছেন- ''কোথায় জলে মরাল চলে। মরালী তার পাছে রে-" রাজহাঁস শুধু শোভাবর্ধন করে না। বাড়ি-ঘর পাহারা দেয়, চোর তাড়ায়। ঘাস কাটার মেশিনের বদলে রাজহাঁস পুষুন, ঘাস সমান করে খেয়ে নেবে।
পোকা-মাকড় খেয়ে জায়গা-জমি ঝকঝকে, তকতকে করে রেখে দেবে।রাজহাঁসের মাংস খাওয়া হয়। ওর পলক দিয়ে লেপ-তোষক, বালিশ তৈরি হয়।ডিম? বছরে খুব কম ডিম দেয়। এই কারণে রাজহাঁস পালনকারী তার ডিম না খেয়ে সেটা থেকে বাচ্চা পয়দা করতেই বেশি উৎসাহী হয়ে থাকেন।
রাজহাঁসের প্রজাতি
রাজহাঁসের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে নিম্ন লিখিত প্রজাতিগুলো সাধারণত দেখা যায়।
(১) টুলুজ- ভারি প্রজাতির পাখি। ফরাসী দেশের পাখি। ভারি পাখিদের মধ্যে এরাই বেশি ডিম দেয়।তবে সব টুলুজ পাখি ডিমে তা দেয় না। ঠোঁট , পা কমলা রঙের। গলা, পেট এবং লেজ সাদা। পুরুষের ওজন- ১৪ কেজি, স্ত্রী- ৯ কেজি।
(২) এমডেনঃ জামর্নির হ্যানোভারে এই পাখি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ভারি জাতের পাখি। ডিমের সংখ্যা ভালো। অন্য প্রজাতির রাজহাঁস থেকে বেশ ঠান্ডা। ঠোঁট জ্বলজ্বলে কমলা রঙের। পায়ে ধবধবে সাদা পালকে ভরা। পুরুষের ওজন ১৪ কেজি, স্ত্রী ৯ কেজি।
(৩) চিনাঃ চিনদেশের রাজহাঁস। টুলুজ এবং এমডেন ছাড়া আকারে ছোট। সংখ্যায় বেশি ডিম দেয়। বছরে ৬০ টির মত। ডিমে তা দিতে অভ্যস্ত। দুটি রংয়ের চিনা রাজহাঁস দেখা যায়। খয়েরি এবং সাদা।খয়েরি রঙা চিনা রাজহাঁসের পা কমলা। ঠোঁট, পালকের রঙও খয়েরি। সাদা রঙের রাজহাঁসের ঠোঁট এবং পা উজ্জ্বল কমলা রঙের। গায়ের পালক ধবধবে সাদা।
ওপরের ঠোঁটের গোড়ার চামড়া ফুলের মতো গোল হয়ে থাকে। পুরুষের ওজন ৯ কেজি, নারীর ওজন ৮ কেজি। পাহারাদার হিসেবে চিনা রাজহাঁসের সুখ্যাতি আছে।
এছাড়া আরো কিছু প্রজাতির রাজহাঁস আছে। যেমন আফ্রিকান। অনুমান করা হয় এরা আদিতে ভারতীয়। কেউ বা বলেন চিনা এবং টুলুজের মধ্যে প্রজননের ফলে এদের সৃষ্টি হয়েছিল।
রাজহাঁসের বাসস্থান
রাজহাসের ঘর খোলা-মেলা, বায়ু চলাচলযুক্ত কিন্তু রোদ - বৃষ্টিতে ওদের কষ্ট দেবে না। মেঝে নানা ধরনের হতে পারে- পাকা, শক্ত অথচ কাঁচা ; মোটা তারের জালের এবং বিছানাযুক্ত (লিটার)। পুরুস্তরের বিছানা (ডিপ লিটার) হলে গভীরতা হবে ১৫ সে. মি. বা ৬ ইঞ্চি। বিছানা সবসময় শুকণো থাকা চাই।
ঘরের রক্ষণব্যবস্থা ভালো হওয়া চাই। অর্থাৎ যাতে চোর না ঢোকে। শেয়াল বা অন্য কোন বন্যপ্রানী এদের ক্ষতি না করে।
ঘরের সামনে বা পিছনে কিছুটা জায়গা তারের জাল দিয়ে ঘিরে দিলে ভাল হয়। এই জায়গাটা ওদের বিচরনের (জঁহ)কাজে আসবে। এই ধরনের জায়গা হাঁস পিছু ৪ বর্গ মিটার দিতে হবে।
রাজহাঁসের ঘরের মধ্যে এবং বাইরে তিনটি হাঁস পিছু একটি করে ডিম পাড়ার বাক্স দিতে হবে। বাক্সে মাপ হবে ৫০ বর্গ সেঃ মিঃ। পানি ও খাবার জন্য আলাদা পাত্র দিতে হবে।
রাজহাঁসের প্রজনন করাতে চাইলে পদ্ধতিগতভাবে এগুতে হবে। যেমন- ভারি জাতের ৩/৪ টি মাদি হাঁস পিছু একটি মর্দা হাঁস রাখতে হবে। চিনে হাঁসের ৪/৫টি মাদির পিছু একটি মর্দ হাঁস রাখতে হবে।
রাজহাঁসদের এক বছর বয়স না হলে প্রজনন কাজে ব্যবহার না করাই ভাল।সবচেয়ে ভাল হয় যদি ওদের দু'বছর বয়সে প্রজনন কাজে লাগানো যায়।
মার্দি হাঁস ১৫ বছর পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে কিন্তু মর্দা সাত বছরে প্রজননে কিছুটা বা অক্ষম হয়ে পড়ে।
ডিম ও ডিম ফোটানো
সাধারনত এরা বসন্ত কালে ডিম দিতে শুরু করে। চিনে রাজহাঁস শুরু করে শীতকালে। এরা সকালের দিকেই ডিম দেয়। প্রথম বছরের তুলনায় এরা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বছরে বেশি ডিম দিয়ে থাকে ২য় এবং তয় বছরের ডিম আকারে ও বেশ বড় হয়ে থাকে।শঙ্কর জাতীয় রাজহাঁস অর্থাৎ অক্সিকান রাজহাঁস বা চিনে এবং টুলুজ বা এমডেনের যৌন সঙ্গমে তৈরি সঙ্কর রাজহাঁস এমডেন বা টুলুজ চিনে রাজহাঁসদের চেয়ে বেশি ডিম দেবে।
ডিমে তা দেওয়া
রাজহাঁস নিজের ডিম ফুটিয়ে থাকে। এবং যখন ডিমে তা দেয় তখন ডিম পাড়া বন্ধ রাখে। সুবিধা থাকলে আপনি টার্কি মুরগি, বা মস্কোডি হাঁস দিয়ে রাজহাঁসের ডিম ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে পারেন।
টাটকা ডিম ( খুব জোর সাত দিনের পুরানো), পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, কোন ফাটাফুটো নেই এবং প্রতিটি ডিমের ১৪০ - ২০০ গ্রাম ওজন হলে সেটা তা দেবার উপযুক্ত বলে ধরা যেতে পারে।
অনেক জায়গায় মুরগি দিয়েও রাজহাঁসের ডিম ফোটানো হয়ে থাকে। যদি মুরগি দিয়ে রাজহাঁসের ডিম ফোটাতে হয় তবে মুরগি প্রতি ৪/৬ টি ডিম এবং রাজহাঁস দিয়ে বসালে রাজহাঁস পিছু ১০-১৫ টি ডিম বসাতে হবে। মুরগির নিচে যদি রাজহাঁসের ডিম বসানো হয় তবে ডিম ঘোরানোর ব্যবস্থা খামারকারীকে নিজেই করতে হবে। কারন ডিম বড় আকারের বলে মুরগি রাজহাঁসের ডিম ঘোরাতে পারে না।
মুরগি যখন খাবার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখনই ডিম ঘুরিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিনই নিজে থেকে এই কাজ করতে হবে। ১৫ দিনের ডিম ঘোরানোর সময় কিছুটা গরম পানি ডিমের গায়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। অবশ্য রাজহাঁসের পানিতে বিচরণ করার সুবিধা থাকলে গরম পানি না ছিটিয়ে দিলে ও চলবে।
কৃত্রিম ডিম ফোটানো
ডিম ফোটানো মেশিনে (ইনকিউবেটার) ডিম ফোটানোর হার বেশ কম। মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ। মেশিনে ডিম বসালে তাপমাত্রা সবসময় ৩৭.৪০ সেঃ (৯৯.৫০ ফাঃ) রাখবেন। ভেজা থার্মোমিটারে তাপ রাখতে হবে ৩২.২০ সেঃ ২৯ দিন পর্যন্ত। তারপর একে বাড়িয়ে করতে হবে ৩৪০ সেঃ। ডিমগুলি দিনে বার বার ঘুরিয়ে দিতে হবে। আর সব পাখির বেলায় যেটা চলে, এখানে ও তাই ডিমের মোটা দিকটা ওপরে রেখে দিতে হবে।
দশ দিনের পরের থেকে ডিমগুলিকে গরম পানি সপ্রে করে দিতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন করে। ২৬ দিনের ডিমগুলিকে নার্সারি ট্রে বা পালক ট্রেতে নিয়ে যেতে হবে। ২৮ দিন হাল্কা জাতের রাজহাঁসের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে যায়। আবার এটাও দেখা গেছে ভারি জাতের রাজহাঁসের ডিম ফুটতে ৩৫ দিন সময় লাগছে। ডিম বসানোর দশ দিনের দিন আলোর সামনে ডিম ঘুরিয়ে ঝুঝে নেওয়া যায় ভ্রূণ হয়েছে রাজহাঁসের একদিনের বাচ্চার লিঙ্গ নির্ণয়ঃ মুরগির বাচ্চার মতো রাজহাঁসের বাচ্চার ও একদিনে বলে দেওয়া যায় কোনটা মাদি আর কোনটা মদ্দা।
রাজহাঁসের বাচ্চা প্রতিপালন
যদি মুরগি বা রাজহাঁস ডিমে তা দিয়ে ডিম ফুটিয়ে থাকে তবে সেই পালিকা মুরগি বা রাজহাঁস ডিম ফোটা বাচ্চাদের যত্ন করবে। সেখানে কৃত্রিম তাপের কোনো দরকার পড়বে না। তবে পালিকা মা বাচ্চা নিয়ে যে জায়গায় ঘুরে বেড়াবে সে জায়গাটা অবশ্যই শুকনো খটখটে হওয়া চাই।
তবে দশদিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চাসহ পালিকা মাকে নরম ঘাসে ছাওয়া উঠোন জাতীয় জায়গায় রাখা উচিত। লনের মাপ হবে ১০ টি বাচ্চার জন্য পালিকা মা সহ ৪ বর্গমিটার । ১৫ দিন বয়স না হলে বাচ্চাদের পানিতে নামনো মুক্তিযুক্তি নয়।
যদি ইনকিউবেটর মেশিনে ডিম ফোটানো হয় তবে রু্রডারের নিচে রেখে অবশ্যই বাচ্চাদের কৃত্রিমভবে তাপ দিতে হবে।
প্রথম সপ্তাহে ব্রুডারের নিচে ৩০ ডি. সেঃ তাপ থাকা উচিত। সপ্তাহ পিছু ৫ ডি. সেঃ তাপ কমিয়ে ঘরের তাপে অর্থাৎ পরিবেশের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে।
প্রথম তিনদিন বাচ্চাদের ধরে খাওয়াতে হবে। তারপর থেকে এরা নিজেরাই খেতে পারবে। বাচ্চারা সহজে ঘাসে চড়ে খেতে পারে। ফলে তৈরি খাবার কম লাগে। একসঙ্গে একটি দলে ১০০ টির বেশি বাচ্চা পালন না করাই উচিত।
রাজহাঁসের বাচ্চাদের খাবার
রাজহাঁসের খাবার মোটামুটি হাঁসের খাবারের মতো। তবে প্রথমে চার সপ্তাহ রাজহাঁসের বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে বলে বাচ্চা হাঁসের তুলনায় ওদের খাবারে আমিষের ভাগ বেশি হওয়া দরকার। ভারি জাতের রাজহাঁসের একদিনের বাচ্চার ওজন প্রায় ৮৫ গ্রাম। এবং ৪ সপ্তাহে এর ওজন ১ কেজি ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত।
তাই রাজহাঁসের বাচ্চার প্রথম চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শতকরা ২০ ভাগ আমিষ আছে এমন খাবার এবং অতিরিক্ত নরম কিছু সব্জি বা চরবার ঘাসে ছাওয়া উঠোন দরকার। ৪ সপ্তাহ পরে ১৬% আমিষ যুক্ত খাবার দিলে চলবে।
ঘাসের চারণভুমিতে রাজহাঁসের বাচ্চা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ৯ কেজি। খাবার খেয়ে থাকে। ঐ বয়সে খাবারকে মাংসে পরিণত করার হার ২.২ কেজি। খাবার পিছু ১ কেজি মাংস। ১৬ সপ্তাহে ওটা দাঁড়ায় ৩ কেজি। খাবার পিছু ২.১ কেজি মাংস।
প্রজননক্ষম রাজহাঁসের যত্নঃ প্রাপ্তবয়স্ক রাজহাঁসদের প্রজনন ঋতুর আগে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো ভাবে ঘাসে চরতে দিতে হবে। ওদের এই সময় প্রতিদিন ১৬৫ গ্রাম সুষম খাদ্য খেতে দিতে হবে যাতে আমিষের ভাগ থাকবে শতকরা ১৬ ভাগ।
রাজহাঁসের রোগঃ রাজহাঁসের পালন তথা ব্যবসায় এটা একটা মস্ত সুবিধা যে এদের তেমন রোগ-ব্যধি হয় না। রোগের মড়ক নেই বললেই চলে। বাজারে বিক্রি করার বয়স পর্যন্ত মৃতু্যর হার শতকরা ২ ভাগ নয়।
তবে রাজহাঁস পালনে এ সমস্ত রোগের সম্বন্ধে সচেতন হওয়া উচিত _ ককসিডিও _ সিস, কলেরা, কোরাইজ, স্পাইরোকিটোসিস, অপুষ্টিজনিত রোগ।
মানুষের সেবায় রাজহাঁস- পাহারাদিরঃ রাজহাঁস তার পারিপার্শ্বিক প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে খুব সহজেই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে এবং সেই সুবাদে যে কোন অপরিচিতি শব্দ, লোকজন, জন্তু, জানোয়ার দেখামাত্র হয়ে পড়ে এবং প্যাঁক-প্যাঁক শব্দ করে আশ পাশের সকলকে তটস্থ করে তোলে। এমনকি প্রবল উত্তেজনায় অনেক সময় আক্রমন পর্যন্ত করে বসে। আগেই বলা হয়েছে সব রাজহাঁসের মধ্যে পাহারাদারি কাজে চীনা রাজহাঁস দক্ষতম।
রাজহাঁসের ডিম এবং মাংস
অনেক দেশে এমন কি আমাদের দেশে ও কিছু কিছু জায়গায় রাজহাঁসের মাংস ও ডিম উপাদেয় খাবার হিসাবে আদর পেয়ে থাকে। ১০ সপ্তাহ বয়সে রাজহাঁস মাংস হিসেবে খাওয়া চলে।এবং সেই সময় ঐ মাংসের ব্যবসা ও ভালো চলে। দশ সপ্তাহ বয়সে রাজহাঁসের ওজন ৪.৫ কেজি হয়।মাংস হিসেবে কাটার আগে রাজহাঁসের পানি ছাড়া সবরকম খাবার খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা আগে। মুরগি কাটার কায়দায় এবং সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রাজহাঁসের জুগুলোর শিরা কেটে দেওয়া হয়। সম্পূর্ন রক্ত বের হয়ে যাবার পর ওর পেট চিরে নাড়িভূড়ি বের করে নেওয়া হয়। পা, মাথা, ঠোঁট, কেটে বাদ দেওয়া হয়। মোটামুটি রাজহাঁস পিছু পালক,মাথা, নাড়ি ভুঁড়ি বাদ দিলে তার দেহের ওনের শতকরা ৭০ ভাগ মাংস পাওয়া যায়।
রাজহাঁসের পালক বিক্রয়
রাজহাঁসের পালক দিয়ে গদি, লেপ, তোষক, তাকিয়া, কুশন এককথায় বসবার এবং হেলান দেবার সব জিনিস তৈরি করা যায়। এই গদিফাদি তৈরির জন্য রাজহাঁসের বুক পিঠ এবং পেটের নরম পালকের খুব চাহিদা।
রাজহাঁসের পালক চাইলে পালক তুলতে হবে রাজহাঁস যখন প্রথম ডিম পাড়া বন্ধ করবে। বছরে তিন থেকে চারবার এই পালক তোলা হয়। শীত কালে পালক তোলা যুক্তিযুক্ত নয়। ৫০ টি পূর্নবয়স্ক রাজহাঁস সাড়ে চার কেজি পালক দিতে পারে।
পালক তোলার পর পালক থরিতে পুরে (কাপড়ের) আলো-বাতাসে এবং রোদে শুকোতে হবে। থলিতে ভরার আগে ফর্মালিন দিতে হবে। পালক খুব বেশি দিনের জন্য শকোতে হলে পালকে খুব ভালো করে গ্যামাক্মিন ( ২৫%) দিয়ে ঝেড়ে রেখে দিতে হবে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন
হাঁস চাষে বা পালনে নিঃশব্দ বিপ্লব নিয়ে এসেছে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস। কেউ আগে কল্পনা ও করেনি হাঁস মুরগির চেয়ে বেশি ডিম দেয় বা দিতে পারে। হাঁস থেকে রীতীমত ব্যবসা করা যায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস এই বিপ্লব নিয়ে এসেছে। গ্রামের মানুষরা যদি সুযোগ পায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুষবার- তাহলে আমাদের গ্রামীন অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটতো। ঘরে ঘরে এতো অভাব আর থাকতো না।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ডিমের একটা পচন্ড সুবিধা হল- এই ডিম খাওয়ার ব্যাপারে ভোক্তার কোন বায়নাক্কা নেই- এ ডিম খাব না, দেশী হাঁসের ডিম খাব। যে অসুবিধা মুরগি ডিমের বেলায় আছে। অনেক মানুষকে হাটে বাজারে ডিম বিক্রেতাকে বলতে শুনা যায়, ''না বাপু আমাকে পোল্ট্রির ডিম দিও না। দেশী মুরগির ডিম দাও!"
'পোল্ট্রির ডিম' মানে উন্নতজাতের ফার্মে পোষা মুরগির ডিম। অথচ হাঁসের ডিমের বেলায় এই কথা কখনও শোনা যায় নি। বরং যে কোন প্রকার হাঁসের ডিমই সকলেই জন্যে সমানভাবে প্রিয়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ব্যবসা তথা পালনে সুবিধার জন্যে আমাদের বর্তমানে সরাকার ও বেশ আগ্রহী। এই কারণে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে যে কেউ ঘরোয়া বা বৃহৎ আকারে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সরকার থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে খামারকে আরও বৃহৎ আকারে সাজতে পারে। এতে তেমনই দেশের প্রোটিন যুক্ত খাবারের অভাব ও মিটবে।
শুধু সরকারই নয়। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক দারিদ্র্য সীমার নিচের মানুষদের ওপরে তোলার জন্য খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস চাষের জন্য অনুদান এবং ঋণ প্রদান করছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বনাম অন্য পাঁচটা মুরগি
আগেই বলেছি, মুরগির থেকে হাঁস পালনে সুবিধা অনেক বেশি। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয়। মুরগি দেয় এর কিছু কম। হাঁস ব্যবসায়ের উপযোগী একনাগাড়ে ২/৩ বছর ডিম দিয়ে যাবে কিন্তু উন্নত জাতের দো-আঁশলা মুরগি লাভের খাতিরে ডিম দেবে মোটে দেড় বছর। খাঁকি ক্যাম্পবের বাচ্চা মাদি ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহে ডিম দেয়। কিন্তু উন্নত জাতের মুরগি ২১ সপ্তাহের আগে লাভজনক ভাবে ডিম দেয় না। আরো সুবিধা হলো- মুরগি সারাদিনে যে কোন সময় ডিম দিতে পারে। হাঁস সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল নয়টার মধ্যে যা ডিম দেবার দিয়ে দেবে। এই কারণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পোষায় পরিশ্রম কম।
খাঁকি ক্যাম্পবেল বাচ্চার প্রতিপালন
বাচ্চা তোলার আগে আপনার প্রথম কাজ হবে বাচ্চা যেখানে থাকবে সেটা ঠিক-ঠাক করা। বাচ্চা হাঁস রাখতে হবে তারের জালের ওপর। এতে বাচ্চারা কম রোগ-ব্যাধিতে ভোগে। তারের জাল মেঝে থেকে দেড়ফুট মতো উঁচুতে থাকবে। ফলে মল মুত্র সহজে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যাবে।
বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় উত্তাপ
প্রথম অবস্থার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁস বাচ্চার জন্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়। জীবনের প্রথম কয়েক দিন ওদের তাপ দিতে হবে ৩০০ সেঃ (৮৫০ ফাঃ) থেকে ৩২০ সেঃ (৯০০ ফাঃ) তারপর প্রতিদিন ২.৮০ সেঃ। (৫০ ফাঃ) করে তাপ কমিয়ে আনতে হবে যতদিন না ২৪০ সেঃ (৭৫০ ফাঃ) তাপমাত্রা হাচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে হাঁসকে মেঝেতে ছাড়া যেতে পারে। মেঝেতে ছাড়ার আগে হাঁসের জন্য পুরু স্তরের বিছানা পেতে দিতে হবে (Deep litter) বিছানা তৈরি করা যাবে ৫" গভীর তুষ আর কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে।
ঘেরার মধ্যে হাঁস পালতে হলে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পিছু তিন বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। যদি ওদের চরে বেড়াবার জন্য ফাঁকা জায়গায় ব্যবস্থা থাকে তবে হাঁস পিছু রাতের আস্তানা হবে দুই বঃ ফুঃ। চরে বেড়াবার জন্যে ফাঁকা জায়গাটির আয়তন হবে হাঁস পিছু ১০ বর্গফুট। হাঁস পিছু জায়গা নিচের মতো হবে।
বয়স (সপ্তাহ) মেঝেতে জায়গার পরিমাণ
০-১ ৪ ভাগের ১ বর্গফুট
১-২ ৩ ভাগের ১ বর্গফুট
২-৩ ২ ভাগের ১ বর্গফুট
৩-৭ দেড় বর্গফুট
হাঁস পালতে পানির প্রয়োজনীয়তা
হাঁস মূলত জলচর জীব। এই কারণে অনেকে মনে করেন পানি ছাড়া হাঁস পোষা সম্ভব নয়। তবে আমি এই বইতে পানি ছাড়া হাঁস পালনের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছি। এতে করে হাঁস পালতে পানির প্রয়োজনীয়তা শুধূ খাবার সময়েই হবে। কারণ, এই ব্যবস্থায় ধরে বেঁধে হাঁস পুষলেও পানির প্রয়োজনীয়তা কথা ভুললে চলবে না।
বিশেষ করে খাবার দেবার সময় পানির ভোলা যাবে না। যখনই খাবার দেয়া হবে। তখনই যেন তার সথে থাকে। মনে রাখতে হবে হাঁস খাবার মুখে দিয়েই পানি মুখে নেয়। পানির আরো দরকার হাঁসের ঠোঁট এবং চোখ পরিষ্কার জন্য। গ্রামীন পরিবেশে বড় মাটির গামলা পানির বিকল্প জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের পানিতে সাঁতার দেবার কোন দরকার হয় না। বরঞ্চ সাঁতার কাটলে ডিমের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবু যারা পানির জন্য নালা করতে চান তারা নালা করবেন এইভাবে- ঘরের সমান লম্বা, ১৫" চওড়া এবং ৯" গভীর নালা। ৩/৪ সপ্তাহ পরে হাঁকে পানিতে ছাড়া যেতে পারে। তবে সেটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করবে।
উক্ত নালায় পানি সরবরাহ করার সময় মনে রাখতে হবে- সেই যেন প্রতিদিন একবার অন্তত বদলানো যায়।
অনেক সময় এই কাজটি করা বেশ কষ্টকর বলে মনে হয়। কারন বদ্ধ খামারের নালা থেকে পানি পরিষ্কার করে নতুন পানি সরবরাহ করা শুধু কষ্টকর নয় বরং বেশ পরিশ্রমের কাজ।
কিন্তু এই কাজটি না করা হলে হাঁস রোগাক্রান্ত হলে পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে, খাঁকি ক্যাম্পবেল অতি উন্নত ধরনের হাঁস। নোংরা পানিতে কেলি করলে ব্যাধি হতে পারে। তার চেয়ে পানি না দেওয়া ভালো।
এই কারনে খামারের মধ্যে একান্ত যদি নালা রাখা প্রয়োজন হয় তবে নালার পানি দিনে অন্তত একবার পাল্টে দিতেই হবে।
পুকুর বা জলাশয়ে খোলা জায়গায় হাঁস পুষলে এই সমস্যা যদি ও থাকে না। কারণ সেখানে প্রতিনিয়ত পানি পাল্টে দেবার সমস্যা নেই। তবু ও নিরাপত্তার খাতিরে এমন খোলাভাবে হাঁস চাষে অনেকেরই আপত্তি।
তবে আমি আগেই বলেছি, পানি হাঁসের জন্যে প্রয়োজনীয় তখনই যখন হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর দরকার হয়ে পড়ে।
কারণ, পানি ছাড়া হাঁস পুষলে সেই হাঁসের ডিম কখনও নিষিক্তি হয় না। আর অনিষিক্ত ডিম থেকে কখনই বাচ্চা ফোটানো যায় না।
হাঁসের প্রজনন কাজে পানি প্রয়োজন হয় জলকেলির জন্য। জলকেলির ছাড়া মাদি- মদ্দা প্রজননে উৎসাহ পায় না। সুতরাং ডিম নিষিক্ত করার জন্যে খামারী তার খামারে পানির ব্যবস্থা করতে পারেন।
তবে আগেই বলেছি, বদ্ধ জায়গায় পানির ব্যবস্থা করলে প্রতিদিন পানি পাল্টে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। একটু পরিশ্রম হবে তাতে। কিন্তু পরিশ্রম না করলে সত্যিকারের ফললাভই বা কবে হয়?
হাঁসের খাবার
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুকুর/জলাশয়ে ছেড়ে পুষলে খাবারের অনেক সাশ্রয় হয়। কারণ হাঁস তখন জলজ উদ্ভিদ কীট- পতঙ্গ, মাছের ডিমপোনা, গুগলি, শামুক, গেড়ি খেয়ে বেড়ায়। কিন্তু ঘেরার মাঝে হাঁস পালন করলে তখন তাকে পুরো খাবারই খাওয়াতে হবে। পুরো ৮ সপ্তাহের জন্য হাঁস পিছু লাগবে ৪/৫ কেজি সুষম খাদ্য এবং ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত সেটা দাঁড়বে সাড়ে বরো কেজি।
পুর্ণবয়ষ্ক হাঁস হড়ে দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম সুষম খাদ্য খায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে সর্বদা সুষম খাদ্য ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। এই ব্যবস্থায় খাবারের অপচয় কম হয় এবং হাঁস চট করে গিলে নেয়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের দৈনিক খাবার দেওয়ার হার নিচে দেয়া হলো।
০-৪ সপ্তাহ - দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ - দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর - দৈনিক ২ বার।
খাবার জায়গার পরিমাণ
০-২ সপ্তাহ আধা ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
২-৪ সপ্তাহ ১ ইঞ্চির ৪ ভাগের ৩ ভাগ বাচ্চা প্রতি।
৪-৭ সপ্তাহ দেড় ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
হাঁসের সুষম খাবারের তালিকা
ঠিক সময়ে ডিম পাওয়ার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁসের সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খামারকারী নিজেও এই সুষম খাদ্য নিজে তৈরি করে নিতে পারে। এতে দামে যেমন সস্তা হয়, এবং নিজেও প্রচন্ড বল পেতে পারেন যে তিনি তাঁর হাঁসকে ভাল খাবার খাইয়াছেন।
সুষম খাদ্য তৈরির নিয়ম নিচে দেয়া হলো-
প্রতি ১০০ ভাগ খাবারের মধ্যে-
গম - ৩০ ভাগ;
ধান ভাঙ্গা - ৪০ ভাগ;
কালো তিল খোল - ১০ ভাগ;
সয়াবিন খোল - ১০ ভাগ;
শুঁটকি মাছের গুঁড়ো - ৮ ভাগ;
ঝিনুক ভাঙ্গা - ২ ভাগ।
ভিটামিন এ, বি২, ডি৩, ই, কে প্রতি ১০০ কেজি খাবারের ১০ গ্রাম মেশাতে হবে।এবং প্রতি কু্যইন্টাল হিসেবে কোলিন ক্লোরাইড দিতে হবে ৫০ গ্রাম। হাঁস ৬_৮ সপ্তাহ হলে গমের পরিমান কমিয়ে ছত্রাক মুক্ত মেশানো যেতে পারে। কোলিন ক্লোরাইড যেমন দিতে হবে বৃদ্ধির জন্য তেমনি ককসিডিয়া রোড় বন্ধ করার জন্য দিতে হবে ককসিডিওস্ট্যাট।
ককসিডিওস্ট্যাট দিতে হবে হাঁসের ১২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। মেশাবার হার প্রতি ১০০ কেজি খাবারের জন্য ৫০ গ্রাম। হাঁসকে গুগলি দিলে শুঁটকি মাছের পারিমান কমিয়ে দিতে হবে। এতে খাবারের দাম ও কমে যাবে।
মাংস ও ডিম বিপণন
হাঁসের ডিম বিক্রির জন্য খুব একটা কাঠ-খড় পোড়াতে হয় না।কারন, হাঁসের ডিমের বাজার অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে।
তবে মাংস বিক্রির জন্য উদ্যেগ নিতে হবে। ডিম কীভাবে বাজারজাত করা যাবে এই সম্পর্কে ইতি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
এই জাতের হাসের খুব একটা রোগ-ব্যাধি হয় না। তবে একেবারেই যে রোগ-ব্যাধিতে হাঁস আক্রান্ত হয় না। সেটা বলা ভূল। এই রোগ-ব্যাধি নির্ভর করে খামারকারীর পরিচর্যার ওপর।
যদি খামারী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাঁস পালন করেন এবং উপযোগী খাবার খাওয়ান তাহলে এই রোগ-ব্যাধির পরিমান একেবারেই থাকবেনা।
তবে খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকার জন্যই খামারকারী খোঁজ নিতে পারেন নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। তারা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পেতে পারেন।
সুত্র: http://www.udyokta.com/2013/01/blog-post_8975.html
কেস স্টাডি:
হাঁস পালনে নিজেকে বদলে দিয়েছেন জাহানারা বেগম
কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়, কষ্টার্জিত আয়ের দ্বারা সুখের সংসার পরিচালনা করে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জের সফল গৃহবধূ জাহানারা বেগম। স্বামীর অসচ্ছলতা আর সংসারের টানাপোড়েনে জাহানারা তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন। শপথ নেন নিজে একটা কিছু করার। যোগ দেন এনজিও সংস্থা ভার্ডের সমিতিতে। সমিতির সদস্য হিসেবে নিয়মিত জমা দেন সঞ্চয়ের টাকা। ২০০৫ সালে এনজিও সংস্থা ভার্ড সংগঠনভুক্ত দুস্থ মহিলাদের বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি পরিবারকে ভিটেবাড়ি নির্মাণের জন্য ৪০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করে। জাহানারা অনুদানের অর্থ ও জাতীয় মহিলা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ১০ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ এবং তার পালিত কিছু হাঁস, মোরগ, গরু ও ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে তৈরি করেন বসতবাড়ি। অন্য একটি সমিতিতে নিয়মিত সঞ্চয়ী টাকা জমা দিয়ে পাড়া-মহল্লায় টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিনসহ স্যানিটেশন সুবিধা গ্রহণ করেন। সমিতিতে সঞ্চয়ের পাশাপাশি শুরু করেন হাঁস পালন। হাঁসের ডিম বিক্রি করেই মেয়ে মাফরোজা সিদ্দিকা বুশরা ও ছেলে মাহবুব আল মুবাশ্বিরের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচসহ সংসারের খরচ জোগান দেন।
বর্তমানে জাহানারার রয়েছে ৪টি রাজহাঁস, ৩০টি পাতিহাস, একটি গাভী, ছয়টি মোরগ। ন্যূনতম পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেও কঠোর পরিশ্রমী এই নারী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নামক সংগঠনের সদস্য হয়ে নিজেকে বদলে দেয়ার দীক্ষা গ্রহণ করেন। আত্মবিশ্বাসই তাকে কাজে প্রেরণা জুগিয়েছে।
কোনো কিছুর জন্য তাকে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। জাতীয় মহিলা সংস্থার ক্ষুদ্র খণের যাবতীয় পাওনা টাকা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই তিনি পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল।
সুত্র: http://sesu.alokitobangladesh.com/
নাজিরপুরে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী সাজেদা বেগম
নাজিরপুর (পিরোজপুর) সংবাদদাতা : পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাইমহল গ্রামের সাজেদা বেগম হাঁস পালন করে এখন সচ্ছল। স্বামী আল-আমীন দুই মেয়ে ও শশুর-শ্বাশুরী নিয়ে ছয়জনের সংসার তিনি ভ্যান চালিয়ে জবিকা নির্বাহ করেন। ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাজেদা বেগমের স্বামী আল-আমীন। ২০০৯ সালে সিডর পরবর্তী (আইডিবি)-এর অর্থায়নে ফায়েল খায়ের প্রোগ্রামের মাধ্যমে মুসলিম এইড বাংলাদেশের সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার খবর শুনে, সাজেদা বেগম ঋণ নেয়ার জন্য চৌঠাইমহল সমিতির সদস্য হন। প্রথমত ১০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ১শ' হাঁস কিনে খামার শুরু করেন সাজেদা বেগম। কিছু দিন যেতে না যেতেই হাঁসগুলো দেয়া শুরু করে ডিম। সেই ডিমগুলো সাজেদার স্বামী আল-আমীন বাজারে বিক্রী করে কিছু টাকা জমিয়ে আর ১শ' হাঁস ক্রয় করেন বর্তমানে সাজেদা বেগম মোট ২শ' হাঁস পালন করছেন। সাজেদা বেগম তার হাঁসের খামার প্রসার করার জন্য ক্রমান্বয়ে ২য় কিস্তিতে আরো ১৮০০০ এবং ৩য় কিস্তিতে ২০,০০০ সর্ব মোট-৪৮,০০০ টাকার ঋণ নেয়। বর্তমানে সাজেদার হাঁসের খামার থেকে দৈনিক ডিম বিক্রী করে ১৫০-১৮০ টাকা, তার প্রতি মাসে ডিম বিক্রীতে ৫/৬ হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়ের টাকা তার সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে দিয়েছে এবং সাজেদার মুখে হাসিও ফুটেছে; এখন তিনি সচ্ছল। এ ব্যাপারে সাজেদা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাকে সচ্ছলতা করতে সুদমুক্ত ঋণ অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে এবং আমি ওই সংগঠনের উপর খুবই খুশি। কারণ, আমার বিপদকালে আমাকে কেউ একটা টাকা ধারও দেয়নি। মুসলিম এইড আমাকে এক এক করে ৩ কিস্তিতে ৪৮০০০ টাকা দিয়েছে।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সওগাতুল ইসলাম জানান, সুদমুক্ত ঋণ অসহায়দের সচ্ছলতা করতে খুব বেশী সহায়তা করে। মুসলিম এইড-এর নাজিরপুর উপজেলা শাখার ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, সাজেদা বেগম শুধু ঋণ নয় তাকে মুসলিম এইড স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, যৌতুক প্রথা ও বাল্যবিয়ে রোধ এবং সামাজিক সচেতনতাসহ পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছে। মুসলিম এইড বাংলাদেশ নাজিরপুর উপজেলা শাখা থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে অনেক দুস্থ পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
সুত্র: http://www.dailysangram.com/
হাঁসের খামারে রিজিয়ার স্বপ্ন পূরণ
হাঁস পালন করে সচ্ছলতা এসেছে রিজিয়া বেগমের সংসারে। শত শত হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক শব্দে এখন মুখরিত থাকে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের বড়তলি গ্রামের রিজিয়ার বাড়ি। অসচ্ছলতা বলতে যা বোঝায় তা আজ আর রিজিয়া বেগমের সংসারে নেই। হাঁস এনে দিয়েছে রিজিয়ার সংসারে সুখের হাসি। তার খামারে বর্তমানে রয়েছে ৬৫০টি হাঁস। এ হাঁসের খামার করেই রিজিয়া এক এক করে পূরণ করে চলেছে তার জীবনের স্বপ্ন।
প্রায় এক যুগ আগে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে রিজিয়া বেগম একদিন বয়সী ১০০টি হাঁসের বাচ্চার একটি খামার গড়ে তোলেন। প্রথম বছরেই রিজিয়ার এ প্রকল্পটি লাভের মুখ দেখতে পায়। তখন নতুন আশায় বুক বাঁধেন তিনি। অতঃপর দ্বিতীয় দফায় ৮ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে আরও ৩০০টি হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন তিনি। রিজিয়া বেগমের স্বামী তাইজুল ইসলাম এ কাজে তাকে সহায়তা করতে থাকেন। এ অবস্থায় রিজিয়া বেগমের কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। খামারের পরিধি বড় করার জন্য বিভিন্নভাবে মূলধন সংগ্রহের চেষ্টা করতে থাকেন। রিজিয়া বেগম সব বিষয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন। তার আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি দেখে পরিকল্পিত উপায়ে সঠিকভাবে খামার পরিচালনার জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তাকে ৬ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রশিক্ষণের পর ব্যবসার প্রতিটি দিক তার চোখের সামনে আয়নার মতো স্বচ্ছভাবে দৃশ্যমান হয়।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের পর রিজিয়া বেগমকে ২০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। রিজিয়া সফলভাবে উদ্যোক্তা ঋণের প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করে দ্বিতীয় দফায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন রিজিয়া বেগম। এ অবস্থায় রিজিয়া বেগমের খামারে হাঁসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৫০টিতে। সম্প্রতি হঠাৎ করেই অজ্ঞাত রোগে তার খামারের ৭০০ হাঁস মরে যায়। এতে তার হাঁসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫০টিতে। তবু হাল ছাড়েননি রিজিয়া বেগম।
রিজিয়া বেগম জানান, হাঁসের খামারে লাভের টাকা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে তিনি ১২.৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। উদ্যোক্তা ঋণের তৃতীয় দফায় ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে পরিকল্পিত উপায়ে খামারের আকার বৃদ্ধি করেছেন। খামারের আয় থেকে সংসারের বাড়তি আয় করার লক্ষ্যে ভাড়ায় চালানোর জন্য স্বামীকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। খামরের আয় দিয়ে থাকার ঘর পাকা করাসহ কিছু আসবাবপত্র ক্রয় করেছেন। এছাড়াও নিজের জন্য কিছু স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করেছেন রিজিয়া বেগম। তার সংসারে আজ রঙিন টেলিভিশন, খাট, শোকেস, মোবাইলফোনসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে। ক্রয় করেছেন একটি বিদেশি গাভী। গাভীর দুধ ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে বেশ সচ্ছলভাবেই চলছে রিজিয়ার সংসার।
রিজিয়া জানায়, দরিদ্র পিতার সংসারে গ্রামের আর ১০টি ছেলেমেয়ের মতো বেড়ে ওঠা হয়নি তার। নানা রকম সামাজিক বঞ্চনার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেন রিজিয়া বেগম। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলি গ্রামের আবদুল খালেকের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তার বিয়ে হয়। সতিনের ঘরে এসে সুখী হতে পারেননি রিজিয়া বেগম। বিয়ের এক বছর পর রিজিয়ার কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান। অভাবের সংসারে এরপর থেকে রিজিয়া বেগমের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। স্বামী ও সতিনের নির্যাতন সইতে না পেরে বিয়ের দেড় বছরের মাথায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন রিজিয়া বেগম। শুরু হয় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রিজিয়া বেগমের বেঁচে থাকার লড়াই। এর একবছর পর মোহনগঞ্জের বড়তলি গ্রামের মোঃ তাইজুল ইসলাম (বর্তমান স্বামী) রেজিয়াকে বিবাহ করেন। কিন্তু তাইজুলের পিতা তাদের এ বিবাহ মেনে নেয়নি। এ অবস্থায় রিজিয়া বেগম ও তার স্বামী অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
রিজিয়া বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং তার স্বামী রিকশা চালায়; চলতে থাকে তাদের সংসার। এভাবে দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে রিজিয়া বেগমের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের সৃষ্টি হয়।
এ সময় রিজিয়া বেগম জানতে পারেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বড়তলি গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। বড়তলি গ্রামের অনেক মহিলাই ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সমিতিতে সদস্য হয়ে ঋণ গ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকা- বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। রিজিয়া বেগম বড়তলি মহিলা উন্নয়ন সমিতিতে গিয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ফিল্ড অর্গানাইজারকে তার বর্তমান অবস্থার কথা জানান। এভাবে ২০০০ সালে রিজিয়া বেগম ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বড়তলি মহিলা উন্নয়ন দলের সদস্য হন এবং সাপ্তাহিক পাঁচ টাকা করে সঞ্চয় জমা করতে থাকেন।
কয়েক মাস পর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন হাঁস-মুরগি পালনের ওপর তিনদিনের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। রিজিয়া বেগম ওই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গড়ে তোলেন একটি হাঁসের খামার তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
সততা আর অধ্যবসায়ের ফলে একেবারে শূন্য থেকে আজ একটি সচ্ছল জীবন নিশ্চিত করতে পেরেছেন রিজিয়া বেগম। একজন সফল উদ্যোগী নারী হিসেবে তিনি এখন এলাকার অন্য নারীদের কাছে অনুকরণীয়। রিজিয়া বেগমের এ উদ্যোগটির চাহিদা কখনও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রিজিয়া বেগম বিশ্বাস করেন বড় ধরনের ঋণ পেলে আগামীতে তার এ খামার আরও বড় করতে পারবেন।
Wednesday, February 17, 2016
জৈব বালাইনাশক
১. উদ্ভিজ্জ বালাইনাশক পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না;
২. জৈব বালাইনাশকের প্রভাবে ক্ষতিকর পোকার বৃদ্ধি ব্যহত হলেও উপকারী পোকামাকড়ের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই;
৩. মাটির অণুজীব ও কেঁচোর উপর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই;
৪. মাছ, পাখি ও গবাদি পশুর উপর কোন বিষক্রিয়া নেই;
৫. জমিতে স্প্রে করার সাথে সাথে ফসল তোলা ও ব্যবহার করা যায়;
৬. জৈব বালাইনাশকের কোন দীর্ঘ মেয়াদী অবশিষ্টাংশ বিদ্যমান থাকেনা বলে পরিবেশের জন্য নিরাপদ।
জৈব কৃষিতে কীটনাশকরূপে ব্যবহৃত গাছপালা:
ক্রম | গাছের নাম | গাছের কার্যকরী অংশ |
০১. | ধতুরা | পাতা, কান্ড, ফুল, বীজ |
০২. | ভেন্নার তেল | বীজ |
০৩. | তামাক | পাতা |
০৪. | পেঁপে | পাতা |
০৫. | শিয়াল মুথা | পাতা, কান্ড, ফুল |
০৬. | গ্লিরিসিজিয়া | পাতা, কান্ড, ফুল |
০৭. | আফ্রিকান ধৈঞ্চা | মূল |
০৮. | নিম | পাতা, কান্ড, ফুল, বীজ |
০৯. | অড়হর | পাতা, ডাল, ফুল |
১০. | তুলসী পাতা | পাতা, ডাল, ফুল |
১১. | ক্লোরোডেনড্রাম | পাতা, ডাল, ফুল |
১২. | মেক্সিকান গাঁদা | শিকড়, পাতা, ডাল, ফুল |
১৩. | মেহগনী | বীজ |
১৪. | কচু | পাতা. কান্ড |
১৫. | নিশিন্দা | পাতা |
সেক্স ফেরোমোন
পোকা সেক্স হরমোন দিনের বেলায় কোন নির্দিষ্ট সময়ে নিঃসরণ করে থাকে। এই বিশেষ সময় সনাক্ত করে পোকা থেকে সেক্স ফেরোমোন আহরণ করে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করে তার গঠন জেনে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ফসলের পোকা ধরার জন্য ফাঁদে সেক্স ফেরোমোন ব্যবহার করা হয়। ফাঁদ দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ পোকা ধরা হয়। অল্প পরিমাণে পোকা ফাঁদে পড়লে পোকার আক্রমণের সময় ও তীব্রতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবেনা।
একটি ফসলে ধরা পড়া পোকা দেখে অন্য ফসলে কি পরিমাণে পোকা আসবে তার পূর্বাভাস দেয়া যায় না। এমনকি যদি ফসল দু’টি পাশাপাশি ক্ষেতেও থাকে। সেক্স ফেরোমোন ব্যবহৃত ফাঁদ খুবই কার্যকরী ব্যবস্থা হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা ও কুমড়ার মাছি পোকা দমনে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহৃত হচ্ছে যা কিনা কার্যকরীভাবে পোকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং একই সাথে পরিবেশ বান্ধব।
হলুদ চাষ
- পাকস্থলীর গ্যাস নিবারণ করে;
- মুত্রনালীর রোগ নিবারণ করে থাকে;
- ক্ষত শুকাতে ও
- ব্যাথা নিবারণে ব্যবহৃত হয়।
বৈশিষ্ট্য | বারি হলুদ-১ (ডিমলা) | বারি হলুদ-২ (সিন্দুরী) | বারি হলুদ-৩ |
উচ্চতা | ৮৫-৯০ সেমি | ৮৫-৮৭ সেমি | ১১০-১২৫ সেমি |
পাতার সংখ্যা | ৯-১০ টি | - | - |
গোছার সংখ্যা | - | ২-৩ টি | - |
ছড়ার সংখ্যা | ৭-৮ টি | ৭-৮ টি | ৬-১০ টি |
মোথার ওজন | ১২৫-১৩০ গ্রাম | ৮৫-৯০ গ্রাম | ১৫০-১৮০ গ্রাম |
হলুদের ওজন | ৪০০-৪২০ গ্রাম | ৩৭৫-৩৮০ গ্রাম | ৭০০-৮০০ গ্রাম |
ফলন | ৬৮৮৩-৭২৮৭ কেজি/একর | ৪৮৫৮-৫২৬৩ কেজি/ একর | ১০১২১-১২১৪৫ কেজি/একর |
রং | গাঢ় হলুদ | গাঢ় হলুদ | গাঢ় হলুদ |