Tuesday, March 29, 2016
প্রথমবারের মত আয়োজন করা হলো “বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস ফেস্টিভাল ২০১৬” ইং
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটি (বিএফএস) কর্তৃক আয়োজনে ইউ এস এইড এর আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মত উদযাপিত হলো হলো বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস ফেস্টিভাল ২০১৬ ইং। অনুষ্ঠানটির উদ্ভোদন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চোধুরী -এম পি।
আজ ২৯ মার্চ থেকে শুরু করে ৩০ মার্চ পর্যন্ত থাকবে এই ফেস্টিভাল টি। নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে এই ফেস্টিভাল বিশেষ আকর্ষন হিসাবে আজ হচ্ছে ফ্যাশন সো। দেশে খাদ্য চাহিদার স্বয়ং সম্পূর্নতার আসার পাশাপাশি এখন দেশে কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক ফুল কে এমন টাই আয়োজকদের প্রস্তাবনা এছাড়াও তুলে ধরা হয় আগামীতে বাংলাদেশে ফুল চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। এই ফেস্টিভাল থেকেই যাত্রা শুরু করলো দেশের প্রথম ফুল বিক্রির অনলাইন শপ - deshiphool.com আর এই ওয়েবসাইটি আজকে থেকে সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে যে কেউ চাইলেই অনলাইনে কিনতে পাড়বে ফুল।
Sunday, March 27, 2016
বানিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বেদানা বা আনার চাষ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও বেদানা চাষ সম্ভব। বীজ ও কলম থেকেই জন্ম নেয় বেদানা গাছ ।
দিনাজপুর থেকে চারা সংগ্রহ নাভারন কুলপালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ২০১৩ সালে বেদানার চাষ ২ বিঘা জমিতে ২শ ৭৭টি চারা রোপন করেন। প্রতিটি চারা ১২০ টাকা দরে ক্রয় করে চাষ করেছেন তিনি। ২ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। এখন বিশাল আকৃত্তির ঝাড়ে রুপান্তরিত হয়েছে বেদানা গাছের। ফুল ও ফল ধরেছে প্রচুর । দেখলে চোখ ফেরানো ভার। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ গাছের চারা রোপন করতে হয়। চারা রোপনের দেড় থেকে দু’ বছর পর বেদানার ফলন আসতে শুরু হয়।
বেদানা গাছ দেখতে সবুজ অনেকটা পাতা বাহার ফুল গাছের মত। তবে একটি গাছ ৬/৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। চলতি মৌসুমে প্রতিটি গাছের কান্ড থেকে বিপুল পরিমান বেদানার ফুলও ফল ধরেছে। দু’ধরনের জাতের বেদানা উৎপাদন হয়েছে এই জমিতে। এক ধরনের জাত সাদা আর এক ধরনের জাতের ফলন হচ্ছে গাঢ় লাল। এর মধ্যে বিশ্বের সর্বত্র লাল রঙের বেদানার কদর বেশি।
গাছ থেকে বেদানা সংগ্রহ করে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে বেদানার কদর বেশী। বেদানা চাষের প্রসার বৃদ্ধি করতে এ বছর বেদানা গাছের দেড় হাজার গুটি কলম ২ লাখ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার হিরক কুমার সরকার জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও বেদানা চাষ সম্ভব। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বানিজ্যকভাবে এই চাষ বৃদ্ধি করে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।
Saturday, March 26, 2016
দেশেই ফলবে বেঁটে প্রজাতির ‘ম্যাজিক নারিকেল’
চারা লাগানোর দুই বছর পরই নারিকেল ধরা শুরু হবে। নারিকেল ঝুলবে মাটিতে। গাছে না উঠেই হাত দিয়ে শিশুরাও নারিকেল পাড়তে পারবে। এমনকি দেশি জাতের চেয়ে এই নারিকেলের ফলন হবে চার গুণ বেশি। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় ভিয়েতনাম থেকে এই ‘ম্যাজিক নারিকেল’-এর ২০ হাজার চারা আমদানি করেছে। চলতি বছর আরো ৭৫ হাজার চারা আমদানি করা হবে। এই চারা দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের জন্য ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের অধীন প্রথম ধাপে ভিয়েতনাম থেকে ২০ হাজার নারিকেলের চারা আনা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরো সাত লাখ ৫০ হাজার চারা আনা হবে।
প্রকল্প পরিচালক মেহেদী মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বছরে দেশি একটি গাছে ৫০ থেকে ৬০টি নারিকেল ধরলেও আমদানিকৃত এই গাছে গড়ে ২০০টি নারিকেল ধরবে। বেঁটে প্রজাতি হওয়ার কারণে ঝড়ে এই গাছ ভাঙার কোনো ভয় নেই। শুধু নারিকেল উত্পাদনই নয়, এই জাতটি নারিকেলজাত শিল্পেরও সম্প্রসারণ ঘটাবে বলে জানান তিনি।
সূত্র আরো জানায় এ দেশে থাই পেয়ারার প্রবক্তা কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান ভিয়েতনামে গিয়ে সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও সিয়াম গ্লু কোকোনাট নামে উচ্চ ফলনশীল নারিকেলের দুটি জাত শনাক্ত করেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশে ভিয়েতনামের মাঠ-ঘাট চষে নিবিড় অনুসন্ধানের পর ওই দুটি উচ্চ ফলনশীল নারিকেলের জাত শনাক্ত করেন তিনি। এর বৈশিষ্ট্য হলো—নারিকেল থেকেই চারা হবে। দুই থেকে আড়াই বছরে গাছে নারিকেল ফলবে। প্রতিটি ডাব থেকে ৩০০ মিলিলিটার পানি পাওয়া যাবে। এবং পানি খুবই মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত। বেঁটে প্রজাতির হওয়ার কারণে গাছ থেকে নারিকেল পাড়াও সহজ হবে।
মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এখনো বেঁটে প্রজাতির নারিকলের কোনো জাত নেই। এই ম্যাজিক নারিকেল জাতটির খবর পেয়ে অনেকেই আমাদের কাছে চারা কেনার জন্য আসছেন। আমরা কৃষক পর্যায়ে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে চারা বিক্রি করছি। নিজেরাও চারা লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে চারা তৈরি করব।’
মৌমাছি পালন ও মধু চাষ
ভূমিকা
আদিকাল থেকে মৌমাছি মানুষের নিকট অতি পরিচিত এক প্রকার ক্ষুদ্র, পরিশ্রমী ও উপকারী পতঙ্গ। সাধারণত দলবদ্ধভাবে বাস করে বলে এদেরকে সামাজিক পতঙ্গ বলা হয়। মৌমাছি থেকে আমরা মধু ও মোম পাই। মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে বনজ, ফলদ ও কৃষিজ ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। কোন কোন প্রকার মৌমাছি বাক্সবন্দী করে লালন-পালন বা চাষ করা যায়। এবং অধিকতর লাভবান হওয়া যায়।
মৌমাছির প্রজাতি
আমাদের দেশে সাধারণত তিন প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায়, যথা:
- পাহাড়ী মৌমাছি,
- ভারতীয় মৌমাছি ও
- ক্ষুদে মৌমাছি।
পাহাড়ী মৌমাছি : এরা আকারে সবচেয়ে বড়। বড় বড় গাছের ডালে, পাহাড়ের গায়ে এরা চাক বাঁধে। চাক প্রতি মধুর উৎপাদন প্রতিবারে গড়ে প্রায় ১০ কেজি। এরা পোষ মানে না তাই বাক্সে লালন-পালন করা যায় না।
ভারতীয় মৌমাছি : এরা আকারে মাঝারি ধরনের। অন্ধকার বা আড়াল করা স্থান গাছের ফোকর, দেওয়ালের ফাটল,আলমারি, ইটের স্তুপ ইত্যাদি স্থানে এরা চাক বাঁধে। চাক প্রতি মধুর উৎপাদন প্রতিবারে গড়ে প্রায় ৪ কেজি। এরা শান্ত প্রকৃতির। তাই বাক্সে লালন-পালন করা যায়।
ক্ষুদে মৌমাছি : এরা আকারে সবচেয়ে ছোট। এরা ঝোপ জাতীয় গাছের ডালে, পাতায় ও শুকনো কাঠি প্রভৃতিতে চাক বাঁধে। চাকার আকার খুব ছোট। বাঁধে। চাক প্রতি মধুর উৎপাদন প্রতিবারে গড়ে প্রায় ২০০ গ্রাম । এরা শান্ত প্রকৃতির। তবে এক স্থানে বেশিদিন থাকে ন।
মধু ও মোম
মধু একান্তভাবে মৌমাছির তৈরী এক প্রকার উপাদেয় খাদ্য। শ্রমিক মৌমাছিরা ফুলের মিষ্টি রস শুষে নেয় এবং তা জমা করে পাকস্থলীর উপরে এক বিশেষ অঙ্গে যাকে মধুথলি বলে। ফুলের মিষ্টি রস মধুথলিতে জমা করার সময় এর সঙ্গে লালা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন উৎসেচক মেশায়। এর ফলে মিষ্টি রস পরিবর্তিত হয়ে আংশিক মধু তৈরী হয়, যা চাকে এনে ঢেলে দেয় মধু রাখার খোপগুলোতে। তরুণ শ্রমিক মৌমাছিরা এ সময় ছুটে এসে ঐ মধু আবার মুখে ভরে এবং তাদের লালার সংগে মিশিয়ে তৈরী করে আসল মধু এবং তা জমা করে খোপে। শ্রমিক মৌমাছিরা জোরে ডানা নেড়ে খোপে রক্ষিত মধু থেকে বাড়তি পানি সরিয়ে দেয়। ফলে এক সময় ফুলের মিষ্টি রস হয়ে যায় ঘন মধু, যা জমা রাখে নিজেদের ও বাচ্চাদের খাবার হিসাবে। মধু জমা রাখার পর খোপগুলোর মুখ মোম দিয়ে বন্ধ করে দেয়। শ্রমিক মৌমাছির পেটের তলায় পকেটের মত ভাজ থাকে মোমগ্রন্থি। সেখানে তৈরী হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতের মত মোম কণা। এ মোম দিয়ে শ্রমিকেরা বানায় বাসা।
মৌমাছি সংগ্রহ ও কৃত্রিম খাবার
প্রকৃত থেকে ভারতীয় মৌমাছি (রাণী ও কিছু শ্রমিক) সংগ্রহ করে অথবা প্রতিষ্টিত মৌচাষীর নিকট থেকে ক্রয় করে মৌচাষ কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়। বাক্সবন্দীর প্রথম ৩/৪ দিন কৃত্রিম খাবার যথা চিনির ঘন সরবত বা সিরাপ দেবার প্রয়োজন হয়। এরপর মৌমাছিরা নিজেদের খাবার নিজেরা সংগ্রহ করে থাকে। কখনো কখনো পরিবেশে খাবার ঘাটতি পড়লে ও কৃত্রিম খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
মধু সংগ্রহ
মধু সংগ্রহ করার সময় আস্ত চাক হাত দিয়ে চিপে মধু বের করা হয়। এ মধুতে মৌমাছির দেহাংশ ও বজ্য পদার্থ বিদ্যমান থাকে। এছাড়া এ ধরনের মধু অশ্প দিনের মধ্যে পচে নষ্ট হয়ে যায়। অপর দিকে বাক্সে লালন-পালন করা মৌমাছির চাক থেকে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্য মধু বের করা যায়। এতে চাক থেকে শুধু মধু বের হয়ে আসে, অথচ চাক নষ্ট হয় না এবং তা আবার ব্যবহার করা যায়।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক মৌমাছি পালন কর্মসূচী
চট্রগ্রামস্থ বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বন রক্ষণ বিভাগ ২০০০-২০০১ অর্থ বছরে “কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাপনা প্রকল্প” এর আর্থিক সহায়তা অত্র প্রতিষ্ঠানের “খামার পদ্ধতি গবেষণা ও উন্নয়ন” কর্মসূচীর আওতায় মৌমাছি পালন কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ কর্মসূচীর মাধ্যমে বান্ধরবান পার্বত্য জেলার মার্মা, মুরং, তংচইংগা, হিন্দু ও মুসলমান ও ফাইতং নামক তিনটি স্থানে মৌমাছি পালনকে একটি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক কর্মকান্ড হিসাবে তুলে ধরার এক প্রয়াস নেওয়া হয়।
মৌমাছি পালনের উপকারী দিকসমূহ
দেশে খাটি মধুর চাহিদা পূরণ করে পুষ্ঠিহীনতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ মধু শর্করা জাতীয় খাদ্য। যা বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, এনজাইম ও খনিজ পদার্থ থাকে।
মধু রোগ (যথা: সর্দি, কাশি, বাত, ব্যাথা ইত্যাদি) জীবানুনাশক হিসাবে ব্যবহার করে।
মোম, মোমবাতি, প্রসাধন (কোল্ড ক্রীম, সেভিং ক্রীম, স্নো ইত্যাদি) ঔষধ বিভিন্ন মলম তৈরী ব্যবহার হযে থাকে।
মধু ও মোম বিক্রয় করে বাড়তি আয়ের সংস্থানের মাধমে পারিবারিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করে যা সার্বিকভাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির দারিদ্র্য দূরীকরনের সাহায্য করে।
ফুলের পরাগায়নের মাধ্যমে কৃষিজ, ফলদ ও বনজ গাছ-পালার ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি করে ও জীব বৈচিত্রে সংরক্ষনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মৌমাছি পালনের আয়-ব্যয়
উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌমাছি পালন করলে এবং এলাকায় পর্যাপ্ত সহায়ক গাছ-পালা থাকলে একটি বাক্স থেকে মধূ (শীতকালে) ৭/৮ কেজি এবং বছরে ১৮/২০ কেজি খাটি মধু সংগ্রহ করা যায়।
আয় :
উৎপাদিত মধু = ১৫ কজি
কেজি প্রতি টাকা ৩০০.০০ হিসেবে
মোট (১৫x৩০০.০০) = ৪,৫০০.০০
ব্যয়:
মৌমাছির বাক্সের দাম = টাকা ৭০০.০০
মৌমাছির দাম = টাকা ৭০০.০০
কৃত্রিম খাদ্য = টাকা ৫০.০০
অন্যান্য = টাকা ৫০.০০
মোট = টাকা ১,৫০.০০
লাভ:
= আয়-ব্যয়
= টাকা ৪,৫০০.০০
= টাকা ৩,০০০.০০
কেস স্টাডি:
মধুর ব্যবসায় ভাগ্য ফেরান ফাতেমা
জীবনের বাঁকে বাঁকে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে মধুর ব্যবসায় ভাগ্য ফেরানোর যুদ্ধে জয়ী কানিজ ফাতেমা। সংসার চালানো থেকে শুরু করে ছেলের লেখাপড়া পর্যন্ত সবকিছুই চলে মধুর ব্যবসায়। জীবনে সমস্যা অনেক থাকবে। তার পরও প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পেশায় এসে যে কেউ সফলতার মুখ দেখতে পারেন বলে অভিমত ফাতেমার।
নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে সফল নারী উদ্যোক্তা মধু ব্যবসায়ী কানিজ ফাতেমা গাজীপুর জয়দেবপুরে গড়ে তুলেছেন ‘মৌ মধুবন’ নামে মধু উৎপাদনের খামার। একক প্রচেষ্টায় যেমন ফিরিয়েছেন নিজের ভাগ্য, তেমনি তার প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করছেন অনেক মানুষ। খামারে কাজ করে ওই মানুষগুলোও পেয়েছেন বেঁচে থাকার পথ। কানিজ ফাতেমার জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে সংগ্রামের ইতিহাস। অনেক কষ্ট করেও জীবনে যে সফলতার মুখ দেখা যায়, তার দৃষ্টান্ত হয়েছেন তিনি। শিক্ষা জীবনেই কিছু একটা করার মানসিকতা ছিল তার। সে কারণে ১৯৮২ সালে জয়দেবপুর সরকারি গার্লস স্কুলে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালেই বাবামাকে না জানিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বিসিকের সহায়তায় মধু তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এই প্রশিক্ষণই দুর্দিনে তাকে মধু উৎপাদনের খামার প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে।
ফাতেমা এসএসসি পাস করে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন জয়দেবপুর কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে। সাফল্যের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েটও পাস করেন। ১৯৮৭ সালে খুলনার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর ঢাকার মিরপুরে বাসা নিয়ে ফাতেমার নতুন জীবন শুরু হয়। ভালো চলছিল সংসার। ফাতেমার কোল জুড়ে আসে পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় শাহরিয়ার ফয়সাল। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়া এই ছেলের মাত্র চার বছর বয়সেই মোশারফ হোসেনের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্য দিয়ে ফাতেমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। একদিকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে, অন্যদিকে সংসারের অভাব-অনটন। উভয় সঙ্কটে চোখে অন্ধকার দেখছিলেন ফাতেমা। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে দেন এতিমখানায়। আর নিজে বেছে নেন আরেক সংগ্রামের পথ। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি খুঁজতে শুরু করেন ফাতেমা। এক এক করে একাধিক স্থানে কাজ করেন। কিন্তু কোনো স্থানেই বেশিদিন কাজ করা সম্ভব হয়নি। নিজেই একটা কিছু করার মানসিকতা থেকে ফাতেমা মাসিক রোজগার থেকে জমিয়ে ফেলেন ২০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই নিজের জন্মস্থান জয়দেবপুরে মধু উৎপাদনের খামার করেন। এই খামার স্থাপনে কাজে লাগে তার সেই মধু তৈরির প্রশিক্ষণ। ২০ হাজার টাকায় ৪টি মধুর বাক্স ক্রয়ের মধ্য দিয়ে ফাতেমার জীবনে আরেক অধ্যায় শুরু। একটি দোকান ভাড়া নেন পাঁচ হাজার টাকায়। ফুলের মৌসুমে বাক্সগুলো বাগানের পাশে রেখে দিতেন। তাঁবু টাঙিয়ে সেগুলো পাহারা দেয়ার জন্য লোকও রাখেন। এভাবেই তার মধু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শুরুর দিকে নিজের হাতেই বাসায় মধু তৈরি করেন তিনি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পাননি। এভাবে পর্যায়ক্রমে ফাতেমার মধু উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হতে থাকে।
মৌচাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে আদিবাসী নারীরা
ক্রমেই উজাড় হচ্ছে শেরপুর ও জামালপুর জেলার গারো পাহাড়ের বনজঙ্গল। ফসলি জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক। এতে মৌমাছির খাদ্য আর বাসস্থানের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে হারিয়ে গেছে পরিশ্রমী বন্য মৌমাছি। মাত্র দু’যুগ আগেও আদিবাসী অধ্যুষিত এ গারো পাহাড় ছিল মৌমাছির অভয়ারণ্য। প্রায় ঘরেই দেখা যেত মধু, কিন্তু এখন তা বিলুপ্তির পথে।
মাত্র পাঁচ-ছয় বছর আগেও গারো পাহাড়ের মালাকোচা ডুমুরগাছ ও বালিজুরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত শত শত মৌচাক। বছরে চার-পাঁচ মাস চলত মধু আহরণ। সে সময় মৌয়ালিদের ছিল পোয়াবারো। আজগর আলী, নিতেন মারাক, লবকোশ মারাকসহ ক’জন মৌয়ালির হিসাবমতে, গারো পাহাড় থেকে বছরে অন্তত এক হাজার লিটার মধু আহরণ করা হতো। এসব মধু স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি হতো। সে সময় ছিল ফুল আর পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ। এজন্য গারো পাহাড়ের গ্রামগুলোতে দেখা যেত অসংখ্য মৌচাক। এখনও গৃহবধূরা বিশ্বাস করেন, যদি বাড়ির ওপর দিয়ে মৌমাছির দল উড়ে যায়, তাহলে ঢেঁকিতে পাড় দিতে হয়। ঢেঁকির শব্দে ওই বাড়িতে মৌচাক করে মৌমাছিরা। এমনকি ভালোমন্দ বা সুখ-দুঃখ বুঝেও মৌমাছি চাক করে বলে তাদের ধারণা। মৌমাছি আর মৌচাক এখন নতুন প্রজন্মের কাছে কবির কবিতার মতোই, যা এখন বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম শুধু দেখবে চাষাবাদের মৌমাছি।
এমনই এক সঙ্কটময় সময়ে মৌমাছির চাষাবাদে ঝুঁকে পড়ছেন আদিবাসী নারীরা। দিনবদলের প্রচেষ্টায় এটি যেন নতুন হাতিয়ার। তাদের এ প্রচেষ্টাকে সফল করতে সহযোগিতা করছেন কারিতাসের প্রমোশনাল অব লাইভলি হোড অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স (পিএলএইচআর) প্রকল্প। আদিবাসীদের জীবনমান আর মানবসম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে শুরু হয়েছে সমন্বিত ফসলের চাষাবাদ। এর মধ্যে অল্প পুঁজি আর কম পরিশ্রমে বেশি আয় হচ্ছে মৌমাছির চাষাবাদে। এ মৌমাছির চাষাবাদ যেন ফিরিয়ে আনছে গারো পাহাড়ে মৌমাছির বসবাসের আগের সেই ঐতিহ্য। ধর্মীয় উৎসবসহ যে কোনো উৎসব আর অতিথি আপ্যায়নে চা-বিস্কুটের আগে পরিবেশনে স্থান পাচ্ছে মধু। এ ছাড়া দুর্বলতাসহ নানা রোগেও ওষুধ হিসেবে অনেকে সেবন করছেন মধু। উৎপাদিত মধু বিক্রি করে নিজেদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন তারা। এরই মধ্যে শুধু মৌমাছির চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আদিবাসী নারী আইরস দালবত্সহ অনেকে। সম্প্রতি গারো পাহাড়ের মৌয়ালি, আদিবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তে গারো পাহাড়। এখানে প্রায় অর্ধশত গ্রাম রয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা এ পাহাড়ে আদিকাল থেকে আদিবাসীদের বসবাস। গভীর অরণ্যের এ গ্রামগুলোতে আগে মৌচাক ছিল আনাচেকানাচে। মাঘফাল্গুন থেকে শুরু হতো মধু আহরণ, চলত আষাঢ়শ্রাবণ পর্যন্ত। বন্য প্রাণীর হামলা উপেক্ষা করে মধু আহরণ করতেন মৌয়ালিরা। যিনি বেশি বড় বৃক্ষে বা ঝোপজঙ্গলের গাছে উঠে মধু আহরণ করতে পারতেন, তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ত চারদিকে। গারো পাহাড়ের মাইনদ্দিন, বিল্লাল মিয়া, কছিম উদ্দিন, সাইদুর ও সনু সাংমাসহ অনেক মৌয়ালি জানান, এ সীমান্তে গারো পাহাড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে মৌয়ালি ছিলেন ১০-১২ জন। তারা একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত চষে বেড়াতেন। যে বাড়িতে মৌচাক ছিল, সে বাড়ির মালিকরাই বেশি মধু পেয়েছেন। এখন আর পাহাড়ে মৌচাক নেই। তবে আগের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চলছে নীরব প্রচেষ্টা। গারো পাহাড়ের আদিবাসী নারীরা ফলমূল আর পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ রোপণ করছেন। এর পাশাপাশি শুরু করছেন মৌমাছির চাষাবাদ। এরই মধ্যে আইরস দালবত্সহ অনেক আদিবাসী নারী মৌমাছির চাষ করে দেখছেন সোনালি স্বপ্ন। শ্রীবরদীর গারো পাহাড়ের আদিবাসী গ্রাম বাবেলাকোনা। এখানে মৌমাছির চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা আনছেন সার্টিন মারাকের স্ত্রী আইরস দালবত্। তার সাফল্যের সংবাদ এখন গারো পাহাড়ের টক অব দ্য ভিলেজ। তিনি জানান, তার সাফল্যের নেপথ্যের নানা কথা। তার এক ছেলে তিন মেয়ে। তার পরিবারে সদস্যসংখ্যা ছয়। ক’বছর আগে চরম দুর্দিনে ঢাকা ছিল পরিবারটি। সেই দুর্দিনের ভয়াবহ চিত্র মনে হলে এখনও চোখে জল আসে তার। তিনি জানান, তাদের আট-নয় একর জমি ছিল। তারা পাহাড়ি এ জমিতে জুম চাষ করত। একই জমিতে ধান আর শাকসবজিসহ সমন্বিত ফসলের চাষে উৎপাদিত ফসলে চলত সারা বছর। কিন্তু বন বিভাগ পাহাড়ের ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার করে গড়ে তোলেন একাশি ও আকাশমণিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের নানা বৃক্ষ। অন্যদিকে ভারতের সীমান্ত থেকে আসতে থাকে বন্য হাতি। প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর বন্য হাতির অব্যাহত হামলায় ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম দুর্ভিক্ষে দিন কাটান তারা।
আইরস দালবত্ বলেন, যখন দুঃসময়ে কোনো উপায় ছিল না, তখন কারিতাসের পিএলএইচআর প্রকল্প থেকে ২৫ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছি। তাছাড়া তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এমনকি তাদের সার্বিক সহযোগিতায় শুরু করি সমন্বিত ফসলের চাষাবাদ। পুকুরে মাছ চাষ, হাঁসমুরগির খামার, মৌমাছির চাষ ও শাকসবজির চাষাবাদ করে আসছি। এর মধ্যে মৌমাছির চাষে বেশি লাভ হচ্ছে। তার স্বামী সার্টিন মারাক জানান, ২০১২ সালের মে মাসে তাদের এ প্রকল্প শুরু হয়। শুরুতে মৌমাছির বাক্স ছিল একটি। এখন তার খামারে পাঁচটি মৌমাছির বাক্স রয়েছে, যার মূল্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তাদের এ থেকে দুই মাস পরপর আয় হচ্ছে চার-পাঁচ হাজার টাকা। তিনি বলেন, মৌমাছি চাষাবাদে তেমন পরিশ্রম নেই। অন্যান্য কাজের ফাঁকেও এটি করা যায়। তবে আয় বেশি বলে মৌচাষের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আশপাশে ফুল আর ফলের গাছ বাড়ছে। এতে মধুর উৎপাদন বাড়বে। আইরস দালবতের মৌচাষের সাফল্য দেখে রিনি ম্রং, আঞ্জেলা মৃসহ এলাকার অনেকে মৌচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কারিতাসের আইসিডিপির পিএলএইচআর প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হলে গারো পাহাড় হবে দেশের অন্যতম মৌচাষ এলাকা। এখানকার আদিবাসী নারীসহ শত শত মানুষ মৌচাষ করে খুঁজে পাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও রফতানি করতে পারবে এখানকার মধু। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা। কারিতাসের আইসিডিপির প্রজেক্ট সুপারভাইজার হিলারি ম্রং বলেন, সমন্বিত ফসলের চাষাবাদের মধ্যে মৌচাষে তারা বেশি লাভ পাচ্ছেন। তাই অনেকে মৌচাষে আগ্রহী।
Friday, March 4, 2016
বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় পাম গাছ এখন গলার কাঁটা
এসব পাম গাছে ফল এসেছে। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থা ও তেল উত্পাদনের মেশিন না থাকায় গাছ থেকে পাম ফল পাড়ছেন না কৃষকরা।
গাছেই নষ্ট হচ্ছে ফল। আবার অনেক কৃষক হতাশ হয়ে লোকসান এড়াতে গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইতিমধ্যে গাছের পরিচর্যা ছেড়ে দিয়ে অনেক কৃষক পাম গাছ কেটেও ফেলেছেন। কেউ কেউ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন পাম গাছগুলো কেটে ফেলবেন না রেখে দেবেন। এদিকে, উপজেলা কৃষি অফিসও পাম চাষীর সঠিক কোন তথ্য এখনও দিতে পারেনি।
জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ উপজেলার শত শত কৃষক ও যুবক ভাগ্য বদলাতে ১৫০ থেকে ৩২০ টাকা মূল্যের চারা কিনে ঘরের আঙ্গিনায় পাম গাছ রোপণ করে পরিচর্যা শুরু করে।
আবার অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে পাম চাষাবাদ শুরু করে। এর মধ্যে ভালুকঘর, বাঁশবাড়িয়া, তেঘরী, ভাণ্ডারখোলা, ফতেপুর, খোপদই, টিটাবাজিতপুর, সুফলাকাটি, পাঁজিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে।
চারা রোপণের পর সঠিক পরিচর্যা করায় চার বছর যেতে না যেতেই ফল আসা শুরু করে। কিন্তু দেশে পাম ফলের বিপণন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় এবং ফল থেকে তেল বের করার মেশিন না থাকায় কৃষক পাম ফল নিয়ে বিপাকে পড়েন।
ফলে চাষীরা লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে পাম গাছের পরিচর্যাও বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় গাছ থেকে ফল সংগ্রহ না করায় তা গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ভালুকঘর গ্রামের টুকুল জানান, একটি পাম গাছ থেকে একটি পরিবারের সারা বছরের তেল উত্পাদন করা সম্ভব। পাম গাছের চারা বিক্রি করতে আসা ব্যক্তিদের এমন আশার বাণী শুনে তিনি ২০০৮ সালে ১৮ শতক জমিতে ২৪টি পাম গাছ রোপণ করেন।
এ পর্যন্ত অর্ধ লাখ টাকা ব্যয় করে চারাগুলোর পরিচর্যা, সার, কীটনাশক ও পানি দিয়ে বড় করেছেন। ফল আসা শুরু করলে এগ্রো লিমিটেড নামের একটি এনজিও ভালো মূল্যে তার কাছ থেকে ফল ক্রয় করবেন বলে জানান।
কিন্তু ওই কোম্পানিও এখন লাপাত্তা। ফল বিক্রি করতে না পারায় গত ৪ বছর ধরে তার জমির গাছের ফল কাদিতেই নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কয়েক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তারা পাম গাছ কেটে ফেলতে বলেছেন।
টুকুল কারো কাছ থেকে ভালো কোন পরামর্শ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি গাছ কেটে ফেলবেন কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। শুধু টুকুল নয় তার গ্রামের হাফেজ শহিদুল ইসলাম, এরশাদ আলী, মনিরুজ্জামান, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামও পাম গাছের চাষ করে বিপাকে পড়েছেন।
এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক হাবিবুর রহমান তাদের বুঝিয়ে ছিল মালয়েশিয়ায় পাম চাষ করে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। এখানে পাম চাষ করেও ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব। গতকাল রবিবার লিটনের পাম বাগান পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। কিন্তু ফল সংগ্রহ না করায় তা গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস গাছগুলো না কাটার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পাম চাষ আমাদের দেশে নতুন হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তবে কৃষি বিভাগ পাম চাষের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সূত্রঃইত্তেফাক
সুপারিতে আয় ৩০০ কোটি টাকা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার অধিকাংশ লোকজন নিজেদের বসতভিটায় সুপারি বাগান করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হওয়ায় এখানকার চাষি বেজায় খুশি। বর্তমানে জেলার দালালবাজার, মোল্লারহাট, রাখালিয়া বাজার, জকসিন বাজার, চন্দ্রগঞ্জ বাজার ও ভবানীগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সুপারি কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এখানকার উৎপাদিত সুপারি জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু দেশে নয়, এ জেলার সুপারির বিদেশেও ব্যাপক কদর রয়েছে। এখানকার সুপারি রফতানি হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালোয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরিসহ বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কাওন (১৬ পোন) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, যার পাইকারি বাজার মূল্য ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বছর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রায়পুর উপজেলায় ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৭৫ হেক্টর, কমলনগরে ৩৫০ ও রামগতি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমি। এ বছর জেলায় সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। তবে গেল বছরের তুলনায় সুপারির বাজারদর কম হওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কিছুটা হতাশ। তাদের অভিযোগ, একটি চক্র সিন্ডিকেট করে সুপারির দাম কমিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, জেলায় উৎপাদিত সুপারি থেকে এ বছর ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আয় হবে। এখানে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থাকলে সুপারি বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো। সরকার এ অঞ্চলে সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র গড়ে তোলে সুপারি ব্যাবসাকে আরও সম্প্রসারণ ও গতিশীল করে তুলবেন- এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
রাতে অক্সিজেন দেয় যে গাছ
এখন জানতেই হয় কী সেই গাছ যার এত গুণ? বিশেষ করে রাতে অক্সিজেন দেয়?
এর নাম স্নেক প্ল্যান্ট। আবার অনেকে ‘শাশুড়ির জিভ’ও বলেন। পাতার আকৃতির জন্যই এ ধরনের নাম গাছটির। এক ধরনের বাহারি গাছ। ঘর সাজানোর কাজে আমরা হামেশাই ব্যবহার করে থাকি। সৌন্দর্য বাড়াতে বেডরুমেও অনেকে এদের রাখেন। খুব অল্প আলোতেও এবং কম পানিতেও এরা জীবিত থাকে। এই গাছ যদি ঘরে রাখা যায়, তা হলে ঘরে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না। নাসার বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষা করে দেখেছেন যে ঘরের ভিতর এই গাছ রাখা হয় নাইট্রোডেন ডাই অক্সাই এবং ফর্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসকে শোষণ করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখে।
পাটের তৈরি পণ্য রপ্তানিতে ভাটা
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওই অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে আয় হয়েছিল ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম ৭ মাসের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এই সময়ের মধ্যে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। একইসঙ্গে গত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি আয় ১ দশমিক ০৪ শতাংশ কমেছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১১ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার; পাটের সুতা ও কুণ্ডলী রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাঁচা পাট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার; পাটের সুতা ও কুণ্ডলী রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯ কোটি মার্কিন ডলার এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ কোটি মার্কিন ডলার।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওই অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে আয় হয়েছিল ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে প্রথম ৭ মাসের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এই সময়ের মধ্যে আয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। একইসঙ্গে গত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি আয় ১ দশমিক ০৪ শতাংশ কমেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে কাঁচা পাট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এই সময়ের মধ্যে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে এই খাতে।
ইপিবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে পাটের সুতো ও কুণ্ডলী রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩০ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। একইসঙ্গে গত অর্থবছরের তুলনায় এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ কমেছে।
আলোচ্য সময়ে পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই খাতে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে পাটের অন্যান্য দ্রব্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এই খাতের আয় ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে রাক্ষুসে শোল চাষ
কম খরচে অল্প কিছুদিনেই প্রায় পাঁচ মণ মাছ পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর মাস কয়েক আগে ভাসমান অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক জোড়া শোল মাছ। সযত্নে মাছ দুটিকে ছেড়ে দেন নিজের পুকুরে। গত বছরের ১০ আগস্ট ডিম ছাড়ে মা মাছটি। তারপর পোনা বের হয়। এই পোনাই তাঁর পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সবচেয়ে ছোট একটি শোল মাছেরও ওজন হয়েছে আটশ’ গ্রাম।
বছর পুরতেই তা এক কেজি ছাড়িয়ে যাবে। পুকুরে কোনো সার দেননি জাকির। চুন কিংবা কোনো রাসায়নিক খাবারও নয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মাছগুলো বেড়ে উঠছে। বাজারের ছোট মাছই মাছগুলোর প্রধান খাদ্য। প্রতিদিন সকাল-বিকাল তাদের খাবার দেন জাকির। শোল মাছকে রাক্ষুসে মাছ হিসেবে সবাই এড়িয়ে চলেন। কারণ এরা অন্য সব ছোট মাছ খেয়ে ফেলে। অথচ জাকির শোল মাছের সঙ্গে চিতল, রুই, কাতলের চাষও করেছেন। তাদের বেড়ে ওঠাও নজর কাড়ার মতো।
মানুষ যে মাছকে পুকুরে মাছের জন্য শত্রু মনে করেন, জাকির তাকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শোল মাছের পোনা পরিচর্যার পর একটু বড় হলেই পোনা লালনের দায়িত্ব নেয় মা মাছটি। এজন্য বাড়তি কোনো কাজেরও দরকার হয় না। জাকির তাঁর বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গুড়পুকুরের রিসার্চ ইনস্টিটিউিট। পুকুরে শোল মাছের চাষ এ প্রতিষ্ঠানেরই অধীনে চলছে। পুরনো জোড়া শোলের ওজন এখন দুই কেজি ছাড়িয়ে গেছে। তিনি পাশেই নতুন আরও একটি পুকুর খনন করেছেন। সেখানে ওই পুরুষ ও মা মাছ দুটো ছেড়ে দেবেন। সেখানে আবারও শুরু হবে নতুন মাছের আবাদান।
জাকিরের পুকুরের পানি ছয় ফুটের বেশি গভীর নয়। চকচকে পানি। কারণ সবই প্রাকৃতিক। তবে এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। মাছ চাষের পুকুরে হাঁস নামানো নিষেধ। কিন্তু মানুষের গোসল করা নিষেধ নয়। জাকিরের মতো আরও অনেক শিক্ষিত যুবক এভাবে মাছ চাষে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের দেশি জাতের মাছই হতে পারে বিশ্বসেরা মাছ। জাকিরের সাফল্যে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে মাছ চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।
দেশি জাতের মাছ যাতে হারিয়ে না যায়, সে উদ্যোগই নিতে হবে আমাদের সবাইকে। এ ব্যাপারে আশাবাদী জাকির নিজেও। কিছুদিন আগে জাকির প্রথম দফায় তাঁর পুকুরের মাছ তুলেছেন। এ সময় জেলা মৎস্য অফিসার ও উপজেলা মৎস্য অফিসারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জাকিরকে পুরস্কৃত করার কথা ভাবছেন।
মৎস্য বিভাগও তাঁকে সব ধরনের সহায়তা দিতে ইচ্ছুক। পরিশ্রম করলে, কোনো কাজকেই ছোট মনে না করে, একনিষ্ঠভাবে নিয়ম মেনে চললে, তাতে সাফল্য আসবেই। জাকির হোসেন এটাই আরেকবার প্রমাণ করলেন।
ডা. মুহিদার রহমান সাতক্ষীরা
Thursday, March 3, 2016
বিলুপ্ত চুকুর চাষ ও সম্ভাবনা
১৯৮৮ সালের বন্যার পর অনেক স্থান থেকে এ ফসলটি বিলীন হয়ে যায়। বিগত ২০১৩ সালে সজাগ কর্তৃক ১০০ গ্রাম চুকুর বীজ পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে কাওয়ালীপাড়া, ধানতারা, দেওহাটা, সজাগ অফিসে এবং স্থানীয় উৎসাহী ব্যক্তিদের মাধ্যমে চাষ শুরু করা হয়। কাওয়ালীপাড়া, ধানতারা ও দেওহাটা অফিস প্রাঙ্গনে চাষ করে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়ার অভ্যাস করা হয়। খাদ্য হিসেবে চুকুর চাষে অনেকেই উৎসাহ প্রকাশ করেন। বিগত ২০১৪ সালে পুনরায় পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ কেজি চুকুর বীজ সংগ্রহ করা হয় এবং সজাগের প্রত্যেক শাখা ও কৃষকের মাঝে বীজ বিতরণ করা হয়। চুকুর চাষ ধামরাই অঞ্চলে ব্যাপক সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রত্যাশায় বিলুপ্ত ফসল (চুকুর) চাষ প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে সম্প্রসারণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামি ২-৩ বৎসরের মধ্যেই উন্নত জাতের ভিএম-১ চুকুর চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে এবং ব্যবসা ভিত্তিক চাষ সম্প্রসারিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে প্রচেষ্টা চালানো হবে। কেননা চুকুরের পাতা ও ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে। চুকুরের বীজ থেকে ২০% খাবার তৈল উৎপাদন হয়।
চুকুর চাষে জমি তৈরি :
ধামরাই উপজেলার যেকোন উঁচু জমি ও বসত ভিটায় চুকুর চাষ করা যায়। জমির প্রকার ভেদে ২-৩টি চাষ মই দিয়ে অথবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। নি¤েœ শতক প্রতি সারের পরিমাণ দেওয়া হলো।
এক শতকে গোবর ৮ কেজি
এক শতকে ইউরিয়া সার ২৫০ কেজি
এক শতকে টিএসপি সার ১০০ কেজি
এক শতকে এমওপি সার ১৫০ কেজি
উক্ত সার মাটির সাথে মিশিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে।
বীজ বপনের ১ মাস পর শতক প্রতি ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপন : ফাল্গুন থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। প্রতি শতক জমিতে ৫০ গ্রাম বীজ (২-২.৫০ফুট) দূরত্বে সারি করে বপন করতে হবে । চুকুর পানি সহ্য করতে পারে না। কাজেই বৃষ্টির পানি যাতে না জমতে পারে সেজন্য জমিতে পর্যাপ্ত নালা রাখতে হবে। নাবীতে বীজ বপন করলেও বীজ উৎপাদন করা যাবে। আগাম বীজ বপনে পাতা, বৃতি খাওয়া যাবে ও বীজ উৎপাদন করা যাবে। তবে রোগ পোকা দেখা দিলে দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফলন : ১৩০-১৪০ দিনের মধ্যেই ফুল আসা শুরু হবে। কচি অবস্থায় টক হিসেবে কচি পাতা খাওয়া যাবে। পাতা মসৃণ এবং স্বাদেও সুস্বাদু। ফলের উপযোগী বৃতি দিয়ে জ্যাম, জেলি, জুস, তৈরি করা যায়। অনেক দেশে বৃতি দিয়ে কনফেকশনারির খাবার সামগ্রী তৈরি করে থাকে। প্রতি গাছে ৫০-৬০টি ফল ধরে। শতক প্রতি ৫-৭ কেজি ফলন হতে পারে। ফল পাকলে বীজ কেটে ২-৩ দিন রোদে শুকালে বীজ ফেটে যায়। লাঠি দিয়ে হালকাভাবে পিটিয়ে সহজেই বীজ সংগ্রহ করা যায়। পরবর্তী মৌসুমে বপনের জন্য শুকনো বীজ ঠান্ডা করে প্লাষ্টিক অথবা টিনের পাত্রে ভালভাবে রেখে বীজ সংরক্ষন করা যায়। বীজ সংগ্রহের পর শুকনো গাছ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
চুকুরের নানা সম্ভাবনা :
ক) চুকুরের সবুজ পাতার টক উত্তম খাবার।
খ) পানিতে সিদ্ধ করে লবণ দিয়েই সবুজ চুকুর পাতা খাওয়া যায়।
গ) সবুজ চুকুর পাতা ধুয়ে সিদ্ধ করে লবণ, ঝাল, রসুন দিয়ে বেটে বাটা চুকুর পাতা ভাত দিয়ে খাওয়া যায়।
ঘ) চুকুর পাতার পাপড়ি ধুয়ে সিদ্ধ করে চিনি, তেজপাতা, গরম মশলা দিয়ে জ্বাল দিলেই লাল রংয়ের জেলি তৈরি করা যায়।
ঙ) চুকুর গুটার জেলি দেখতে সুন্দর ও সুস্বাদু।
চ) ব্যাপক চুকুর চাষ করে জেলি উৎপাদন কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।
ছ) ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যাবে।
জ) পারিবারিকভাবে জেলী তৈরী করেও আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ঝ) চুকুর গাছ পানিতে পঁচিয়ে আশ তৈরি করা যায়। যা দিয়ে রশি, ছিকা গৃহে ব্যবহার্য বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা সম্ভব।
চুকুরের চাষের প্রেক্ষাপট :
ক) ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর স্থানীয় জাতের চুকুর চাষ সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে যায়।
খ) ২০১৩ সালে প্রথমে পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকা থেকে ১০০ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করে সজাগের শাখা অফিস ধানতারা ও কাওয়ালীপাড়া এবং নির্বাচিত ২-৩ জন কৃষকের মাধ্যমে প্রথম চাষ শুরু করা হয়।
গ) উভয় শাখায় আশাব্যঞ্জক ফসল পাওয়া যায় এবং বীজ উৎপাদন করা যায়।
ঘ) অত:পর ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বার পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকা থেকে ৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করা হয়।
ঙ) সজাগ কর্তৃক উৎপাদিত ১ কেজি বীজ তৈরি করা হয়।
চ) ২০১৪ সালে সজাগের প্রত্যেক অফিস এবং সজাগভূক্ত নির্বাচিত কৃষক ও অন্যান্য আগ্রহী কৃষকের মাধ্যমে ধামরাই উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে চুকুর বীজ বিতরণ করা হয়।
ছ) সজাগভূক্ত অফিসসমূহে চুকুর উৎসাহজনকভাবে চাষ করা হয় এবং বহুবিধভাবে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
জ) চুকুর বীজ প্রাপ্ত কৃষকগণও তাদের আঙ্গিনায় চুকুর চাষ ও নানাবিধ খাবার তৈরি করে উৎসাহবোধ করেন এবং প্রায় সকলেই বীজ উৎপাদন করেছেন।
ঝ) সজাগ থেকে চলতি ২০১৫ সালে ১০ কেজি উৎপাদিত বীজ কৃষকদের মাধ্যমে বিতরণ করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঞ) এছাড়াও পাট গবেষণা থেকে চলতি বৎসর ২০১৫ সালে আরও ১০ কেজি বীজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে।
ট) চলতি ২০১৫ সালে ধামরাই উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে ও সজাগভূক্ত সংযোগ কৃষকদের মাধ্যমে চুকুর চাষ সম্প্রসারণে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ঠ) সম্পূর্ণ বিলুপ্ত প্রাপ্ত চুকুর চাষে ধামরাই উপজেলায় কৃষকদের মনে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।
ঢ) চুকুর চাষে কুটির শিল্প তৈরি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহ বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও কৃষিকাজে নারীদের সম্পৃক্ত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শেরপুরে এক জমিতে বছরে চার ফসল
মাত্র ৮২ দিনেই সেই সরিষা ঘরে তুলে এবার বোরো রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা সরিষা আবাদে খরচ হয়েছে। দেড় একরে সরিষার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৫ মণ। বাজারে বর্তমানে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি হচ্ছে। সরিষার এমন লাভ পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। এবার সরিষার লাভের টাকাতেই সেই জমিতে তিনি বিআর-২৮ ধান রোপণ করবেন। আগে থেকেই বীজতলা তৈরি করে রেখেছেন। এখন কেবল সরিষা তোলা জমিতে বোরো রোপণ করবেন। ১৪০-১৪৫ দিনেই বিআর-২৮ ধানের ফলন আসে।
বাংলাদেশ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বারি) শেরপুর সরজমিন গবেষণা বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষক রফিকুল ইসলামের জমিতে এভাবে এক জমিতে পর্যায়ক্রমে চারটি ফসল ফলানো সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া সবগুলো ফসল উচ্চ ফলনশীল জাতের হওয়ায় এসব ফসলের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এলাকার কৃষকরা একই জমিতে বছরে চার ফসল আবাদ হওয়ায় বিষয়টি দেখে বেশ আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন।
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে বিষয়টি আমার বিশ্বাস হতে চায়নি। কিন্তু নিজের জমিতে বছরে চার ফসল করে এখন মনে হচ্ছে, এটা অসম্ভব কিছু না। এতে উৎপাদন খরচ যেমন কম হয়েছে, তেমনি ফলনও ভালো হয়েছে।” পাশের জমির কৃষক মাহবুব আলী বলেন, “রফিকুলের ক্ষেতের অবস্থা আমি সবসময় দেখেছি। দেখলাম আবাদের অবস্থা খুব ভালো। আগেতো কেবল বোরো আর আমন ধানই করতাম। এবার চিন্তা করছি, চলতি বোরো মৌসুম থেকে আমার দুই একর জমিতেও বছরে চার ফসল কীভাবে করা যায়, সেই ব্যবস্থা নেব।”
আজ শনিবার শহরের পশ্চিম শেরী এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলামের চার ফসলভিত্তিক শস্য আবাদের সরিষা ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন বারি গাজীপুরের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল হাসান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শহীদুজ্জামান, ড. এম আব্বাস আলী, জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নারায়ণ চন্দ্র বসাক, শেরপুর সরজমিন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুর রহমান প্রমুখ। তাঁরাও এ সরিষা ক্ষেত দেখে ভুয়শী প্রশংসা করেন। এ উপলক্ষে ওই সরিষা ক্ষেতের পাশে আয়োজিত মাঠ দিবসে সদর উপজেলার শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বারি গাজীপুরের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, “ফসল নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণে চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাস উদ্ভাবন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশের ১৫টি জেলায় এখন সরজমিন গবেষণা কার্যক্রম চলছে। গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত খুব ভালো। আশা করি আগামী বছর থেকে এক জমিতে চার ফসল আবাদের এ কর্মসূচি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।”
বারি শেরপুরের সরজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুর রহমান বলেন, “আমরা শেরপুরে যেভাবে চার ফসলের শস্য বিন্যাস করে আবাদ করেছি তাতে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৩৫ দিনেই চারটি ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছে। বিষয়টি খুবই আশা জাগানিয়া। এতে শস্যের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে।”
সূত্র: কালের কন্ঠ
পরিবেশবান্ধব ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছে কৃষক
মঙ্গলবার সকালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিত্তিপাড়া গ্রামের আদর্শ জৈবচাষি উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কৃষকরা এমন মন্তব্য করেন।
কৃষকরা রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে ক্রমশ ঝুঁকে পড়েছেন জৈব সার ও কীটনাশক তৈরির দিকে। স্থানীয় ভাবে নিজেদের প্রস্তুতকৃত জৈব সার, কেঁচো সার, তরল কীটনাশক ও বালাইনাশক ইত্যাদি দেখান এবং ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করে তারা লাভবান হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের কৃষি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কোরিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করে যাবে বলে জানান, আরডিএর অরগানিক এগ্রিকালচার ডিভিশন এর উর্ধ্বতন বিজ্ঞানী জিহুন শিন।
কোরিয়ার ন্যাশনাল একাডেমি অব এগ্রিকালচার সাইন্স আরডিএর অরগানিক এগ্রিকালচার ডিভিশন এর উর্ধ্বতন বিজ্ঞানী জিহুন শিন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটএর হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম নাজিম উদ্দিন, সোয়ালোজ সুইডেনের ইন্টার্ণ আলবিন গুষ্টাফসন, পন্টাস উইলিয়াম ও উন্নয়নধারা নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কোরিয়ার ন্যাশনাল একাডেমি অব এগ্রিকালচার সায়েন্স, আরডিএর অরগানিক এগ্রিকালচার ডিভিশন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট লাগসই ও টেকসই কৃষি উন্নয়নে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।
যত্রতত্র পোলট্রি করা চলবে না
বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচন ও প্রাণি সম্পদের উন্নয়ন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে এম ফজলুল হক ভূঁইয়া।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এ খাতের উন্নয়ন করতে হলে যত্রতত্র পোল্ট্রি খামার করা যাবে না। পোল্ট্রি ব্যবসায়িরা একত্রে আসুন প্রয়োজনে আপনাদের জন্য স্পেশাল জোন করে দেয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু এ শিল্প কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তার প্রধান সমস্যা হলো এ খাতের সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারছে না। এ খাতে একেক সময় একেক গ্রুপ সৃষ্টি হয়। বড় এবং ছোট কোনো খামারী না বলে সবাই যখন এক হয়ে আসতে পারবে তখন এ খাত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে সরকার যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমাদের কাছে পাইভেট পাবলিক পাটনারশিপ ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রস্তাব দিন। আমরা তা অনুমোদন করে দেবো।’
তিনি বলেন, ‘পিপির আওতায় এ খাত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারবে। একই সঙ্গে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে পোল্ট্রি শিল্প।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘২০৩০ সালে দেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত করবো। আর তাই লাইভস্টক সেক্টরকে আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আসলে আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি। অথচ এ খাতের সঙ্গে ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। এ শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র নিরসন সম্ভব হবে। যা টেকসই উন্নয়ন অংশীদার হতে পারে।’
ড. কাজী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ খাতে জনবলের ব্যাপক সঙ্কট রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অ্যানিমেল হেলথ খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’
মসিউর রহমান খান বলেন, ‘পোল্ট্রি শিল্পে বর্তমানে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। আগামী ২০২০ সালে এই শিল্প ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য খাতের উন্নয়নে পিপি প্রকল্পের বিকল্প নেই।’
খাদ্যাভাসে দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর
বাঁধাকপি
নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে লিভারের ক্ষতিকারক পদার্থ দূর হয়। বাঁধাকপির গুণ লিভারকে সুস্থ-স্বাভাবিক ও কলেস্টোরলমুক্ত রেখে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও বাঁধাকপি আমাদের হজমের ক্রিয়া উন্নত করে। ফলে আমাদের দেহের বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে ক্ষতিকরক পদার্থ বের করে দেয়।
কাঁচা রসুন
খাবারের সঙ্গে অনেকে কাঁচা রসুন খেতে অভ্যস্ত, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর গন্ধের জন্য কাঁচা কেউ খেতে চান না। তবে প্রতিদিন অন্তত দুই কোয়া করে কাঁচা রসুন খেলে দেহের নানা রকম ব্যথাসহ ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দিতে সহায়তা করে থাকে।
আদা
আদাকে ওষুধ হিসেবে অনেক প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার করে আসছেন চীনের মানুষজন। এখনো তারা সুস্বাস্থ্যের কামনায় নিয়মিত আদা চা পান করে থাকেন। আদা চায়ের পাশাপাশি কাঁচা আদা খেলে আমাদের লিভার থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর হয় এবং লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে।
লেবু
লেবুর রস আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। সকালে মাত্র ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলে আমাদের লিভারের কর্মক্ষমতা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আমাদের লিভার ও কিডনি পরিষ্কার করে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদের রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। কাঁচা হলুদে থাকা উপাদান আমাদের দেহের নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে। কাঁচা হলুদ ভালো করে ব্লেন্ড করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আমাদের লিভারের টক্সিন দূর করা সম্ভব। তাই হলুদকে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
ব্রোকলি
পুষ্টিগুণ অন্যান্য যেকোনো সবজি থেকে ব্রোকলি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। ব্রোকলির সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে এটি আমাদের লিভারের ভেতর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। তাই খাদ্য তালিকায় ব্রোকলি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
গ্রিন টি
চা কফির মধ্যে গ্রিন টি সবচেয়ে কার্যকরী পানীয়। গ্রিন টির উচ্চতর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের লিভার ও কিডনিকে পরিষ্কার রাখে। তাই চা বা কফি পানের অভ্যাসটাকে বদলে গ্রিন টি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ।
পানি
আমাদের লিভার ও কিডনির সুরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান হচ্ছে পানি। একমাত্র পানিই আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পৌঁছে দেহের ক্ষতিকারক উপাদান বয়ে এনে মুত্র থলিতে জমা করে। তাই প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করে উচিৎ।
Wednesday, March 2, 2016
চা উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্বল্প সুদে ঋণ দেবে সরকার
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত চা বিশ্বমানের। সরকার চায়ের চাহিদা পূরণ করতে আমদানির বদলে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আন্তরিক। তিনি বলেন, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চাঁদপুরে স্পেশাল ইকনমিক জোনের কারনে যাতে চা বাগানের কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের চায়ের গৌরব উজ্জল অতীত রয়েছে। এ মুহূর্তে প্রায় এক লাখ শ্রমিক চা বাগানে সরাসরি কাজ করছে। এ চা শিল্পের সাথে দেশের প্রায় দশ লাখ মানুষ জড়িত। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের মাটি উন্নত চা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। এখানে উন্নত মানের চা উৎপাদিত ও বিদেশে রপ্তানি হয়। আমাদের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। চা সংসদের পক্ষ থেকে বিদেশ থেকে নিম্নমানের চা আমদানি বন্ধ বা উচ্চ শুল্কহার আরোপ, চা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদানের জন্য স্বল্প সুদে লোন প্রদান এবং চুনারুঘাট উপজেলায় চা বাগান নষ্ট করে স্পেশাল ইকনমিক জোন তৈরি বন্ধের আহবান জানালে মন্ত্রী বিষয়গুলো সহানুভূতির সাথে বিবেচনার জন্য আশ্বাস দেন। চা বাগানের নামে ইজারা প্রদত্ত জমি স্পেশাল ইকনমিক জোন নির্মাণে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, চা শিল্প রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। চা শিল্প বিকাশে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের যা যা করনীয় আছে সবকিছুই করা হবে। চা বাগান সষ্ট করে কিছু করার উদ্দেশ্য সরকারের নেই। বিষয় গুলো পরিক্ষা- নীরিক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। চা শিল্পের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সরকার স্বজাগ রয়েছে।
বৈঠকে সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশী চা সংসদের সিনিয়ন ভাইস চেয়ারম্যান এম শাহ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান কামরান টি রহমান, কমিটি মেম্বার ওয়াহিদুল হক, মো. সাপওয়ান চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান এ কিউ আই চৌধুরী, সিলেট প্ল্যানটার্স লি. -এর এমডি এ কে আজাদ, সাবাজপুর টি কোম্পানী লি. -এর পরিচালক তপন চৌধুরী, ফিনলে টি-এর চেয়ারম্যান আজম জে. চৌধুরী এবং হালদা ভেলি টি কোং লি. -এর এমডি নাদের খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।