Saturday, April 30, 2016

জলাবদ্ধতা নিরসনে দিনরাত্রি কাজ করছে ময়মনসিংহ পৌরসভা

  • Share The Gag
  • ময়মনসিংহ পৌরসভার অবৈধভাবে দখল হওয়া খালগুলোকে দখলমুক্ত ও পুনরুদ্ধার করতে সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু।

    পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে মেয়র টিটুর নির্দেশে ছোট বড় সকল ধরনের ড্রেন ও খাল খনন কার্যক্রম ২ মাস যাবত কাজ চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল ড্রেন ও খাল খনন কাজ চলবে বলেও জানিয়েছেন।

    খনন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এমন উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে- সেহড়া খাল, মাকরজানী খাল, বাগমারী খাল, গোহাইলকান্দি খাল, কাটাখালী খাল, গাঙ্গিনাপাড় দুই পাশের ড্রেন খনন, সি, কে ঘোষ রোড দুই পাশের ড্রেন খনন, দূর্গাবাড়ি রোড দুই পাশের ড্রেন খনন, ট্রাংক পট্রি দুই পাশের ড্রেন খনন, ক্রস কালভাট ৪টি খনন ও পাইপলাইন সহ খনন কাজ , ব্রাক্ষপল্লি দুই পাশের ড্রেন খনন, বাগমারা রবির দোকান হইতে ডলি পট্রি বাক্ষপল্লি পর্যন্ত ড্রেন খনন, চড়পাড়া নয়াপাড়া হইতে মেডিকেল কলেজ গেইট এর সামনে দিয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান কলেজের সামনে হয়ে নয়াপাড়া হয়ে সেহড়া খাল পর্যন্ত ড্রেন খনন, মিতা ক্লিনিক এর মোড় হতে সেহড়া খাল পর্যন্ত ড্রেন খনন, জে,সি গুহ রোড হারুন কমিশনারের চেম্বার হইতে রেলী মোড় পর্যন্ত ড্রেন খনন,কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সী রোডের দুই পাশের ড্রেন খনন, চরপাড়া মোড় হতে ব্রিজ মোড় পর্যন্ত ড্রেন খনন, নিউ কলোনী হইতে ব্রিজ মোড় পর্যন্ত ড্রেন খনন উল্লেখযোগ্য।

    কলেজ রোডের কে, সি রায় রোডের ড্রেনটি দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকা ড্রেনটি ব্যাপক হারে খনন কাজ চালানো হয়েছে যাতে কলেজ রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে এ খাল ভূমিকা পালন করবে। কলেজ রোডের মত ফুলবাড়িয়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেনটি পুনরায় খনন কাজ চলছে।

    উল্লেখ্য যে, পৌর এলাকার অনেক খাল ও ড্রেন বেদখল হওয়ায় খাল ও ড্রেন সচল ছিল না। এবার ড্রেন ও খাল দখল মুক্ত করা হচ্ছে। নগরের মাকরজানি, সেহড়া ও গোহাইালকান্দি খালসহ ড্রেনগুলোর খনন কাজ চলছে।

    শুকিয়ে মাঠ-ঘাট চৌচির, খাবার পানির তীব্র সঙ্কট

  • Share The Gag
  • দিনে দিনে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এ সমস্যা আরো বেশি বাড়ছে। ১০ বছর আগেই বরেন্দ্র অঞ্চলের বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কুয়াগুলো পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানির সঙ্কট আরো চরমে পৌঁছেছে। তীব্র দাবদাহে এ অঞ্চলের খাল-বিল, পুকুর-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।

    গভীর নলকূপের সরবরাহ করা পানিই এখন এ অঞ্চলের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ১৮০টি গভীর নলকূপও পানির অভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়া হওয়ার পথে আরো অনেক গভীর নলকূপ।

    মাত্র এক দশক আগেই বরেন্দ্র অঞ্চলের খাল-বিল, নদী-নালাগুলো সারা বছরই পানিতে পরিপূর্ণ ছিল। প্রতিটি বাড়িতে ছিল নলকূপ ও কুয়া। তবে এসব এখন অতীত।

    বরেন্দ্র অঞ্চলের উচু এলাকা হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা উপজেলায় এক যুগ আগে ৭০ থেকে ৮০ ফিট নিচে পানির স্তর থাকলেও বর্তমানে তা নেমে ১৪০ থেকে ১৬০ ফিট নিচের স্তরে চলে গেছে। পানির স্তর নিচে নামার ফলে বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো এখন টিউবওয়েলের বিপরীতে গ্রামে বিদ্যুৎ চালিত সার্ব-মার্সেবল পাম্প বসাচ্ছেন।

    এছাড়াও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বরেন্দ্র অঞ্চলে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপের পাশে বড় বড় পানির ট্যাংকি বসিয়ে গ্রামে গ্রামে সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে।

    বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প (বিএমডি) ১২৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ১০৫টি গভীর নলকূপ বসিয়েছে। এর মধ্যে ১৮০টি পানির অভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আর ১৩০টি অল্প পরিসরে পানি উঠছে বা নাজুক অবস্থায় আছে এবং ১২০ টি পুনোরায় আরো বেশি গভীর করে ঠিক করা হয়েছে।

    শুধু তানোর উপজেলায় বিএমডিএ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর নলকূপের সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬২টি ট্যাংকের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা এলজিএসপি, এডিপি, সুশিলোন, ডাসকো ও শরিফ মিলে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গ্রামে ৩০৭টি সার্ব-মার্সেবল পাম্প দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করে গ্রাম উন্নয়নে কাজে করে চলছে।

    এছাড়াও এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানায় আরো ২৫০টি মত সাব-মার্সেবল পাম্প রয়েছে। এখন পুরো উপজেলায় সাপ্লাই পানি উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নিজামপুর গ্রামের রবিন জানান, গ্রামের টিউবওয়েল ১০ বছর আগেই পানির অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। খাবার পানিতে তাদেরও গভীর নলকূপের উপরে নির্ভর হতে হচ্ছে।

    এদিকে, চৈত্রের দাবদাহ ও প্রচণ্ড খরায় নওগাঁর সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। এদের মধ্যে সাপাহারের অবস্থা আরো বেশি নাজুক। উপজেলা সদরের নিকটবর্তী মানিকুড়া দিঘীপাড়া গ্রামে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অত্যাধিক হারে নিচে নেমে যাওয়ায় ওই গ্রামের কূপগুলির পানি শুকিয়ে গেছে।

    নিয়মিত আঙু্র খেলে আর অন্ধ হওয়ার ভয় থাকবে না

  • Share The Gag
  • আঙুর ফল টক। গল্প কথায় আঙুরের এমন বদনাম শোনা গেলেও, আসলে আঙুর ফল টক নয়, বরং তাঁর গুণ কিছু বেশি মিষ্টি। ছোট্ট এই ফলটিকে প্রতিদিনের মেনুতে রাখলে পাওয়া যাবে একটি বড় উপকার। আঙুর খেলে থাকবে না আর অন্ধ হওয়ার ভয়। নতুন একটি সমীক্ষায় দেখা দেখা গেছে যে, আঙুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। আর এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হেলদি সেলগুলোর ডিএনএর নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। চোখের রেটিনা এমন একটি অংশ যার পুরোটাই কোষ দিয়ে তৈরি। এই অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলেই অন্ধত্ব সৃষ্টি হয়। আঙুর যখন এই কোষগুলোকে রক্ষা করে তখন অনেকটাই কমে যায় অন্ধত্বের প্রবণতা। শুধু এখানেই শেষ নয় আঙুরের গুণ। যত বেশি আঙুর খাবেন তত কমবে মোটা হওয়ার চিন্তা। আঙুর শরীরে মেদ জমতে দেয় না।

    কৃষকপ্রতি সর্বোচ্চ ৭৫ মণ ধান কিনবে সরকার

  • Share The Gag
  • মধ্যস্বত্বভোগী ফরিয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে চলতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে সরকার। একজন কৃষক সর্বনিম্ন এক বস্তা ৪০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন ৭৫ মণ ধান বিক্রয় করতে পারবে। আসন্ন বোরো মৌসুমে ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান ২৩ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হবে বলে জানা গেছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আগামী ৫ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ধান সংগ্রহ। এর আগে গত বছর সরকার ১ লাখ টন ধান কিনেছিল। ওই বছর প্রতিকেজি ধান ২২ টাকা দরে কেনা হয়। তাই কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম এবার কেজিতে এক টাকা বেড়েছে।

    খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, এবার মোট ১৩ লাখ টন ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৭ লাখ টন ধান, বাকিটা চাল। তিনি বলেন, ধান-চাল সংগ্রহে এবার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। কৃষকদের সরাসরি প্রণোদনা দিতে এবং ফরিয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে বেশি করে ধান সংগ্রহ করা হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত মৌসুমে এক লাখ টন বোরো ধান কেনা হলেও এবার কৃষকের কথা মাথায় রেখে ৭ লাখ টন ধান কেনা হবে।

    এবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবেকৃষকরা কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে, তারা যেন ন্যায্যমূল্য পায় তারজন্য এবার অধিক পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা হবে বলে তিনি জানান। জানা গেছে, এবার কৃষি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত তালিকা অনুযায়ী স্থায়ী কৃষকের নাম, আইডি কার্ড, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন করা জমির খতিয়ান নম্বর, জমির আয়তনের ভিত্তিতে উৎপাদনের পরিমাণ এসবের ভিত্তিতে একাউন্ট পে চেক প্রদান করা হবে। চেক প্রদানের পূর্বে উপরোক্ত সবকিছু যাচাই করবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক

    কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার প্রবণতা পরিহার করে ফরিয়াদের কাছ থেকে ধান কেনার যে সিস্টেম চালু আছে তা বন্ধ করতেই এ নিয়ম চালু করা হবে। এছাড়াও ধান সংগ্রহের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। কার্যক্রম সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা প্রকাশ্যে এবং গোপনে মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে বলেও জানা গেছে। পাশাপাশি নীতিমালা পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালার মাধ্যমে প্রত্যেকটি জেলার জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও এর মাধ্যমে তদন্ত ও তদারকি করা হবে।

    সরকার দেশে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে : প্রধানমন্ত্রী

  • Share The Gag
  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
    প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম আখতার জাহানের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

    তিনি বলেন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘উচ্চ ফলনশীল (ঊফশী) পাট ও পাট-বীজ উৎপাদন এবং উন্নত পাট পচন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, দেশের পাট উৎপাদনকারী ৪৪টি জেলার ২শ’টি উপজেলাকে উক্ত প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর পাট উৎপাদনের জন্য ২ লাখ এবং পাট-বীজ উৎপাদনের জন্য ৫০ হাজার মোট ২ লাখ ৫০ হাজার জন চাষিকে বিনামূল্যে ভিত্তি ও প্রত্যায়িত পাট-বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হ্যান্ড-স্প্রেয়ার ও রিবনার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া প্রতি বছর ২০ হাজার জন চাষিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সনাতন পদ্ধতিতে পাটের একর প্রতি ফলন ছিল ১৮-২০ মণ। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি এবং উচ্চ ফলনশীল পাট-বীজ ব্যবহার করায় পাটের একর প্রতি ফলন ৩০-৩৫ মণে উন্নীত হয়েছে।

    তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দেশী ও তোষা পাটের ‘জেনোম সিকোয়েন্সিং’ অর্থাৎ জীবন রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ৫শ’ ফসলের ক্ষতিকারক একটি ছত্রাকেরও জীবন রহস্য উৎঘাটন করা হয়েছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া গত ৫ বছরে পাট জাতীয় ফসল অর্থাৎ কেনাফ, মেস্তার ৫টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যান্ত্রিক রিবনার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পাট পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ইতোপূর্বে দেশে গড় ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হতো। তবে ২০১০ সাল থেকে দেশে পাট আবাদের জমি এবং ফলন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে গড়ে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়ে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হচ্ছে। পাটের জেনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সুফল কৃষক পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছানোর লক্ষ্যে ‘পাটের মৌলিক ও ফলিত গবেষণা’ নামে একটি প্রকল্পে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত জমিতে পাট চাষ সম্প্রসারণে ও গবেষণাকে আরও জোরদারকরণের জন্য ‘পাট ও পাট জাতীয় ফসলের কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তর’ প্রকল্প চলমান রয়েছে। আগামী ৩ বছরের প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পাট চাষ এলাকার নির্বাচিত ৯ হাজার পাট চাষিকে উন্নত প্রযুক্তিতে পাট আঁশ, বীজ উৎপাদন এবং উন্নত পচন পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে উক্ত পাট চাষি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। স্বল্প পানি যুক্ত এলাকায় পাট আঁশের মানোন্নয়নের জন্য চাষিদের বিনামূল্যে যান্ত্রিক রিবনার বিতরণ করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশে পাট উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘পাটনীতি’ প্রণয়ন করছে। এটি বাস্তবায়িত হলে উচ্চ ফলনশীল ও উন্নতমানের পাটচাষে পাট চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্বুদ্ধকরণ, উন্নত পাট-বীজসহ অন্যান্য উপকরণ যথাসময়ে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা ও পাট-চাষির উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
    শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের বন্ধ কলকারখানা চালুকরণ নীতির আওতায় বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীনে খালিশপুর জুট মিলস লিঃ খুলনা, জাতীয় জুট মিলস লিঃ সিরাজগঞ্জ, দৌলতপুর জুট মিলঃ খুলনা, কর্ণফুলী জুট মিলস এবং ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম পূর্ণ মাত্রায় চালু হওয়ায় প্রায় ৯ হাজার ৩৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটকল শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পরিশোধ করে পাটকলে কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৮ হাজার ৯৬৭ জন দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিককে স্থায়ী করা হয়েছে এবং শ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজেএমসি প্রোডাক্টিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট কোর্সের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৭৭১ জন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে বর্তমান সরকার চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ধোলাই ভাতা, উৎসব ভাতা, টিফিন ভাতা, উত্তম হাজিরা বোনাস, শিক্ষা সহায়ক ভাতা বৃদ্ধি ও মৃত্যু বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সময়ে সময়ে সরকার পাট কেনাসহ শ্রমিকদের গ্র্যাচুয়িটি ও অন্যান্য পাওনা বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে থাকে।

    শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সমূহের দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনকল্পে সরকার সম্প্রতি এখানে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, অবসর সুবিধার টাকা যেমন পরিশোধ করা যাবে তেমনি আসন্ন পাট মওসুমে বাজার মূল্যে পাট কেনা সম্ভব হবে।

    সোর্স-বাসস

    পটুয়াখালীতে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর চাষ

  • Share The Gag
  • পটুয়াখালীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সূর্যমুখীর চাষ। সরিষা ও তিলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবদেহের জন্য এ তেল বেশ উপকারী।

    পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী। অনুকূল আবহাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যায় ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কৃষকের ক্ষেত। সবুজ পাতার মাঝে হলুদ রঙের বাহারি দৃশ্যে জুড়িয়ে যায় চোখ। মাথা নিচু করে হাল্কা বাতাসে দোল খায় প্রতিটি ফুল।

    এসব ফুল থেকে তৈরি হয় স্বাস্থ্যকর তেল। চিনা বাদাম, সরিষা ও তিলের বিপরীতে মাত্র ৩ মাসেই সূর্যমুখীর ফলন পায় চাষিরা। আর এ কারণে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের।

    কোলেস্টেরল মুক্ত হওয়ায় সূর্যমুখী তেল স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদ ডিন প্রফেসর মো. হামিদুর রহমান।

    পটুয়াখালীর মাটি সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ উপযোগী বলে জানালেন পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মাতুব্বর।

    কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৫শ' ৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে।

    ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ: তদন্তে প্রমাণ মিলেছে

  • Share The Gag
  • চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে এই পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত করতে এসে ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ও ইটের খোয়ার পরিবর্তে সুরকি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

    পাঁচ সদস্যের দলের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর, গাইবান্ধা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন, সংসদ সচিবালয়ের উপ-সচিব মফিজুল ইসলাম, স্থাপত্য অধিদফতরের কর্মকর্তা আহম্মেদ বসির উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলী অমিত কুমার দে।
    তদন্তের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ।

    তদন্তের পর কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সংবাদিকদের বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ভবন নির্মাণে যে অনিয়ম হয়েছে তা বোঝা গেছে। এই নির্মাণাধীন ভবন সিলগালা করে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ভবনের ভীতসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি পরীক্ষা করা হবে।

    তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী কেমন তা আপনারা জানেন। উনারা দুর্নীতি ও অনিয়ম বরদাস্ত করেন না। দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য যখন বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে ঠিক তখনই এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটলো। আমরা বিশেষজ্ঞ নই। তবে এ নির্মাণ কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখা হবে।

    তিনি আরও বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে মামলা হয়েছে সেহেতু মামলার পর তদন্তের কাজটিও সেভাবে দেখা হচ্ছে।’

    উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ ফাইটোসেনেটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র ভবন নির্মাণকল্পে গত ১২/০৭/২০১৫ তারিখে ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দরপত্র মূল্যায়ণ করে প্রকল্প মূল্যায়ণ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনাল, ৬৪/এ মনিপুরী পাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালকের স্মারক নং-ফাইটো-৪১/২০১৫ (অংশ)/৭৮৪ তারিখ ২৫/১০/২০১৫ মোতাবেক মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয় (পরিশিষ্ট-১)। কাজের চুক্তিমূল্য ধার্য হয় ২ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ২২৭ টাকা ২২ পয়সা। চুক্তি অনুযায়ী ১২ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা।

    এ নির্মাণ কাজের ডিজাইন, স্থাপত্য নকশা, কাঠামোগত ডিজাইন তৈরি ও নির্মাণ চলাকালীন সব প্রকার কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লি. (ইসিএল) ৮৭০ শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের সকল প্রকার ক্রয় কার্যক্রমে প্রকল্প পরিচালককে সহায়তা করার জন্য মো. আয়ুব হোসেনকে এই প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইংয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইসিটি ব্যবস্থাপনা শাখার পক্ষ থেকে উক্ত নির্মাণ কাজটি দেখাশোনার জন্য উপ সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

    নির্মাণ কাজটি গত ০৫/১১/২০১৫ তারিখে শুরু হয়ে ইতিমধ্যেই নির্মাণ কাজের মূল ভবনসহ ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থায় বিগত ৬/০৪/২০১৬ তারিখে নির্মাণাধীন ওই ভবনের সামনের অংশে ডিজাইন উপেক্ষা করে অনুমোদিত রডের বদলে বাঁশের কাবারি ও ইটের খোয়ার বদলে সুরকি ব্যবহারের বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিভিন্ন মিডিয়ায় তারা ঘটনাটি তুলে ধরেন। এ ঘটনায় দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা হয়েছে।

    Thursday, April 28, 2016

    ক্ষুরা রোগ

  • Share The Gag
















  • ইহা সকল বয়সের গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়ার ভাইরাসজনিক একটি মারাত্মক অতি ছোঁয়াছে রোগ।








    লক্ষণঃ



















    শরীরের তাপমাত্রা অতি বৃদ্ধি পায়। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, সম্পূর্ণ মুখ গহ্বর, পায়ের ক্ষুরের মধ্যভাগে ঘা বা ক্ষত সুষ্টি হয়। ক্ষত সৃষ্টির ফলে মুখ থেকে লালা ঝরে, সাদা ফেনা বের হয়। কখনও বা ওলানে ফোসকার সৃষ্টি হয়। পশু খোঁড়াতে থাকে এবং মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। অল্প সময়ে পশু দূর্বল হয়ে পরে। এ রোগে গর্ভবর্তী গাভীর প্রায়ই গর্ভপাত ঘটে। দুধালো গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পায়। বয়স্ক গরুর মৃত্যুহার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
    করণীয়ঃ
    আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ পশুর ক্ষত পটাশ বা আইওসান মিশ্রিত পানি দ্বারা ধৌত করে দিতে হবে। ফিটকিরির পানি ১০ গ্রাম (২ চা চামচ) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। সোহাগার খৈ মধু মিশিয়ে মুখের ঘায়ে প্রলেপ দিতে হবে। নরম খাবার দিতে হবে। পশুকে শুস্ক মেঝেতে রাখতে হবে কোন অবস্থায়ই কাদা মাটি বা পানিতে রাখা যাবেনা। সুস্থ অবস্থায় গবাদিপশুকে বছরে দুইবার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। খাওয়ার সোডা ৪০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পায়ের ঘা পরিষ্কার করে সালফানাসাইড পাউডার লাগাতে হবে। সালফানামাইড / টেট্রাসাইক্লিন অথবা উভয় ঔষধ ৫- ৭ দিন ব্যবহার করা যাবে।



    ১৩ লাখ টন ধান-চাল কিনবে সরকার

  • Share The Gag
  • বরাবরের মতো আসন্ন বোরো মৌসুমে সরকার ধান-চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী এবার ৭ লাখ টন ধান ও ৬ লাখ টন চাল কেনা হবে। গত বছর ধান কেনা হয়েছিল এক লাখ টন। এবার ৭ লাখ টন ধান কেনা হবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এবং চাল কেনা হবে চাতাল মালিকদের কাছ থেকে। আগামী ৫ মে থেকে দেশের সবচেয়ে বড় এই খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। শেষ করার কথা রয়েছে আগামী আগস্টের মধ্যে। মাঠপর্যায়ের চিত্র বলছে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে ধানের দাম পড়ে গেছে। এ অবস্থায় কৃষকরা যাতে ধানের বাড়তি দাম পায় এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যেই প্রণোদনা হিসেবে সরকারের এই ক্রয় অভিযান।

    এদিকে, এই ধান-চাল কিনে গুদামজাত করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা বর্তমানে সরকারি গুদামে নেই। জায়গা আছে মাত্র ৮ লাখ টনের। বাকি ৫ লাখ টনের জায়গা দখল করে আছে পুরনো খাদ্যশস্য। ফলে ঘোষণা দিলেও সরকার স্থানের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল কিনতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

    সাবেক কৃষি সচিব ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জা এ. জলিল গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ক্রয় প্রক্রিয়া শুরুর আগেই জায়গা বের করা অপরিহার্য। আর তা না হলে সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে চাল নয়, ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে এবং সব সময় তা-ই করে থাকে। কিন্তু তাতে কৃষকের কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশে সিংহভাগ কৃষকই বর্গাচাষি। তারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ধান উৎপাদন করে। অভিজ্ঞতা বলে, ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে মহাজনও দাদনের টাকা সুদ-আসলসহ আদায় করতে হাজির হয় কৃষকের বাড়িতে এবং কৃষকও বাধ্য হয়ে তাদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে এসেছে। এখনো তা-ই হবে বলে আমি মনে করি।

    কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত উৎপাদিত ধান সংরক্ষণের সুযোগ কৃষকের নেই। দ্বিতীয়ত, মহাজনের টাকা শোধ করা। সমাধান হিসেবে সাবেক এই কৃষি সচিবের পরামর্শ, সরকার যদি প্রান্তিক পর্যায়ে মিনি কোল্ডস্টোরেজ অথবা খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে মৌসুমের শুরুতে কৃষকের ধান সংরক্ষণ করে তাদের (কৃষকের) মহাজনের টাকা শোধের ব্যবস্থা করে এবং পরে দাম বাড়লে ধীরে ধীরে কৃষকের মজুদ করা ধান বিক্রি করে, তবেই তারা ন্যায্যমূল্য পাবে। আক্ষেপ করে এই কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করি কিন্তু বলি না যে কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

    খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, সরকার চাহিদামতো ধান কিনতে পারলেও চাল রাখার প্রয়োজনীয় জায়গা গুদামে নেই। অতীতেও স্থান সংকটের কারণে ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে দেরিতে। আর দেরির কারণে প্রান্তিক চাষির হাত বদলে ধান চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। ফলে ধান কেনার পরিমাণ বেশি হলেও তা এবার কৃষককে কতটা লাভবান করবে সে প্রশ্ন কৃষি বিশেষজ্ঞদের। তাদের অভিমত, ধান পাওয়া যাচ্ছে না এমন অজুহাতে ক্রয় মৌসুমেই ধানের বদলে চাল কেনার ঘোষণা আসার সম্ভাবনা উজ্জ্ব¡ল। ফলে আগের মতোই লোকসানের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হচ্ছে কৃষকদের।

    খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ’৯২ সালের পর এবারই সরকার বেশি পরিমাণে (৭ লাখ টন) ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, ৭ লাখ টন ধান সরকারি গুদামের সাড়ে ১০ লাখ টন পণ্যের স্থান দখল করে। বর্তমানে খাদ্য বিভাগের মালিকানায় ৬৩৫টি এলএসডি, ১২টি সিএসডি, ৫টি সাইলো ও ১টি মাল্টি স্টোরেড কোল্ডস্টোর রয়েছে। এতে সর্বসাকল্যে ১৭ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা সম্ভব। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের হাতে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ রাখার কথা। সেই হিসাবে সন্তোষজনক মজুদ রয়েছে বলে খাদ্য বিভাগের দাবি।

    লালপুরে কৃষি প্রশিক্ষনের সনদ বিতরণ

  • Share The Gag
  • নাটোরের লালপুর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত দরিদ্র বিমচনের লক্ষে বিআরডিবি হল রুমে ‘অপ্রধান শস্য উৎপাদন, সংরক্ষন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ’ বিষয়ে ৫ দিন ব্যাপি প্রশিক্ষন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়।
    ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সনদ বিতরণ উপজেলা বিআরডিবি সহকারী কর্মকতৃা হারুনর রশিদ। ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসুচির ২১ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী প্রশিক্ষন গ্রহন করে। ৫ দিনের এ প্রশিক্ষন কর্মসুচি পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম।

    উল্যেখ্য, গত রবিবার হতে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষন প্রদান করেন উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুল ইসলাম খান।

    রংপুরের কৃষি ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • Share The Gag
  • অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ফুঁসছে রংপুর তাজহাট কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

    তাজহাট কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।

    তাজহাট কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মহানগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা হয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে শিক্ষার্থী আল আমিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, চয়ন হাসান, মনিরা আক্তার, আশা মনি মিশু প্রমুখ।

    শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাজহাট কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান তার ‘নিজস্বার্থে’ প্রথম বর্ষের ৬ জন ও তৃতীয় বর্ষের ১০ জন শিক্ষার্থীকে ব্যবহারিক এবং তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখান। এতে ইনস্টিটিউটের ১৬ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

    পরে শিক্ষার্থীদের ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ, শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ, ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের নিয়ম বহালের দাবিতে ইনস্টিটিউট প্রশাসনকে স্মারকলিপি প্রদান করে।

    প্রশাসনের সোমবারের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে আসেন।

    বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা জানায়, সোমবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও, ছাত্র ধর্মঘটের মতো আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

     

    Tuesday, April 26, 2016

    সফল কৃষাণী শিউলি

  • Share The Gag
  • মানবকুলকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবার জন্য বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে নরসিংদী জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সাবিকুন্নাহার শিউলি।

    জৈব সার কেঁচো কম্পোষ্ট উদ্ভাবনে ২০১২ সালে তিনি পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ কৃষির উপর একক বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার।

    জানা যায়, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোখছেদ আলী ও উপজেলা কৃষি অফিসের বিশেষ সহযোগীতায় জৈব সার কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরীতে উৎসাহিত হন কৃষাণী শিউলি।

    এ জৈব সার নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা, পাশ্ববর্তী বেলাব ও শিবপুর উপজেলার প্রায় আড়াইশ বিঘা জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা। তিনি নিজেও জৈব সার কেঁচো কম্পোস ব্যবহার করে ৫ বিঘা জমিতে শিম, আড়াই বিঘা জমিতে আলু ও ৪ বিঘা  সরিষা করেছেন।

    এ সার ব্যবহারের ফলে জমিতে কোন রকম রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না বলে বাড়তি কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। যার ফলে ফলনও ভাল। তার এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন তাদের ফসলি জমিতে এ জৈব সার কেঁচো কম্পোস ব্যবহারের উপর।

    বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষাণী শিউলির এ অবদান দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি সরকারী/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা কামনা করেছেন কৃষাণী শিউলি।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. শেফায়েত আহমেদ সিদ্দিক বলেন, "জৈব সার কেঁচা কম্পোস ব্যবহারের ফলে জমির পানি ধারন ক্ষমতা, উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি জমিতে ফলনও ভাল হয়।"

    মুন্সীগঞ্জে কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ির রেণু জব্দ

  • Share The Gag
  • মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরি ঘাট থেকে ৪০ ড্রাম ভর্তি বাগদা চিংড়ির রেণুসহ ২ জনকে আটক করেছে পাগলা কোস্টগার্ড। এ সময় রেণু বহনকারী ট্রাকটি আটক করেন তারা। সোমাবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার রেণু জব্দ করেন।

    সেই সাথে ট্রাকের চালক ঝালকাঠির করিম হাওলাদারের পুত্র নাসির হাওলাদার ও হেলপার বাগেরহাটের মজিদ মিয়ার পুত্র বক্কর মিয়াকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত চিড়ির রেণুগুলো পরে লৌহজং উপজেলা ভূমি অফিসের সামনের পদ্মার শাখা নদীতে জনসম্মুখে অবমুক্ত করা হয়।

    বিশাল এই চালান আটকের তত্ত্বাবধানকারী পাগলা কোস্টগার্ডের লে. কমান্ডার সায়ীদ এম কাসেদ জানান, ফেনির মাতামুহরী সমুদ্র উপকুল থেকে ৪০টি ড্রামে ভর্তি গলদা চিংড়ির রেণু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজ ও ঢাকার পোস্তাগোলা ব্রীজ হয়ে ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণ বঙ্গের বাগেরহাটের একটি হেচারিতে যাচ্ছিল এই চিংড়ির রেণু। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার রাতে ফেনি থেকে সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে সোমবার সকালে শিমুলিয়া ঘাটে ট্রাকটি আটক করে কোস্টগার্ড। বর্তমান মৎস্য আইনে এই চিংড়ি ধরা ও বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে এই রেণু সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করে বাগের হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বিক্রির জন্য। পরে ট্রাক চালক হেলপারসহ চিংড়ির রেণুগুলো জব্দ করা হয়। পরে তা মুন্সিগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগের কাছে হস্তানান্তর করা হয়।

    জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আতিউর রহমান জানান, এ ধরনের চিংড়ির রেণু ধরা বর্তমানে নিষিদ্ধ রয়েছে। আটককৃত ট্রাক চালক ও হেলপাররের নিকট থেকে মুসলেকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে প্রতিটি বাগদা চিংড়ির পিএল বা রেণুর মূল্য প্রায় ৫ টাকা। সে হিসেবে প্রায় ২০ লাখ রেণুর মূল্য এক কোটি টাকা।

    জিরা চাষে খুশি কৃষক

  • Share The Gag
  • কৃষি বিভাগের উদ্যোগে যশোরের শার্শা উপজেলায় শুরু হয়েছে জিরার আবাদ। শার্শা উপজেলায় এবারই প্রথম জিরার চাষ করা হয়। জিরার ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখে আগামীতে এর চাষ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে কৃষি বিভাগ।

    নড়াইল থেকে ইরানি জিরার বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছেন জেলার কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, পোকা ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় জিরা গাছে ফুল এসেছে প্রচুর। আর কীটনাশক প্রয়োগ না করায় অবাধে বিচরণ করছে মৌমাছি।

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা পাচ্ছেন কৃষক।

    যশোর শর্শা, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘এ বছর ৪২৫ হেক্টর জমিতে মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৫ শতক জমিতে এই প্রথম জিরা চাষ করায় ফলনও ভালো হয়েছে। এক একর জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ২০ মণ জিরা উৎপাদন করা সম্ভব। যা থেকে কৃষকের লাভ হবে ২ লাখ টাকা।

    মোস্তাফিজুর রহমান আরোও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে জিরা চাষ বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।

    প্রতি কেজি জিরা তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’টাকায় বাজারে বিক্রির আশা করছেন কৃষকরা।

    শেকৃবিতে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধী উদ্ভিদ

  • Share The Gag
  • ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। কেমো থেরাপির মতো ব্যয়বহুল ও যন্ত্রণাময় চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ক্রমেই বাড়ছে প্রাকৃতিক খাদ্য ও উদ্ভিদের ভেষজ গুণের গ্রহণযোগ্যতা। এ বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছেন গবেষকরাও। তেমনই কিছু ভেষজ গুণসমৃদ্ধ উদ্ভিদ রয়েছে ঢাকার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিভিন্ন দেশ থেকে এই উদ্ভিদ সংগ্রহ করে তার গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করছেন এখানকার গবেষকরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে ইতোমধ্যেই জানা গেছে শেকৃবিতে থাকা রুকোলা (Rucola) এমনই একটি উদ্ভিদ, যা ডায়াবেটিস এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

    গবেষকরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে সবুজ রুকোলা গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও রক্তনালী সংক্রান্ত রোগের বিরুদ্ধে আমাদের দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

    রুকোলার গুণাগুণ

    এর সবুজ পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সহায়ক রাসায়নিক উপাদান, যেমন-সালফিউরাফ্যান, থায়োসায়ানেটস, আইসো-থায়োসায়ানেটস, ইনডলস ও আলফা-লিপোইক অ্যাসিড। এরা সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন-প্রোস্টেট, ব্রেস্ট, সারভিক্যাল, কোলন ও ওভারিয়ান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। ‘হিস্টোন ডিঅ্যাসিটাইলেজ’ নামক এনজাইমের কার্যকারিতা ব্যাহত করার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এই সালফিউরাফ্যান।

    অস্ট্রেলিয়ান ‘রুরাল ইন্ডাস্ট্রিজ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলাপমেন্ট কর্পোরেশন (আরআইআরডিসি)’ এর মতে, সবুজ রুকোলা পাতার ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা সরিষা পরিবারের অন্যান্য শাক-সবজি থেকে অনেক বেশি। রুকোলার সবুজ পাতা যেহেতু সরাসরি পিজা এবং সালাদে ব্যাবহৃত হয়, সেহেতু সবুজ পাতায় থাকা ক্লোরোফিল, হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইনস (যা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় তেলে ভাজলে বা ঝলসালে নিঃসৃত হয়) এর কার্সেনোজেনিক প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

    আমেরিকার ‘ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডেটাবেস (স্ট্যান্ডার্ডরেফারেন্স)’ অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ রুকোলা পাতাতে শক্তি রয়েছে মাত্র ২৫ কিলো ক্যালরি; কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড (৯৭ মাইক্রোগ্রাম), ভিটামিন-এ (২৩৭৩ আইইউ), ভিটামিন-সি (১৫ মিলিগ্রাম), ভিটামিন-কে (১০৮.৬ মাইক্রোগ্রাম) এবং ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স।

    গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রয়েছে ফ্লাভোনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক, ফুসফুস এবং মুখ-গহ্বরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। রুকোলা পাতাতে প্রচুর পরিমাণে কপার ও আয়রন জাতীয় খনিজ উপাদানও রয়েছে। রয়েছে স্বল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস।

    রুকোলাতে বিদ্যমান আলফা-লিপোইকঅ্যাসিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও নিয়মিত রুকোলা পাতা গ্রহণ করলে হৃদপিণ্ড এবং রক্ত নালীর রোগের ঝুঁকি কমে।

    উৎপাদন ও ব্যবহার

    রুকোলা একটি শীত পছন্দকারী উদ্ভিদ। শীতকালে দ্রুত পাতার বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু বসন্তকালে গরম আবহাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী ফুলের স্টক তৈরি করে এবং বীজ ধারণ করে। এ উদ্ভিদটি প্রায় ২০-১০০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

    বীজ বপনের একমাস পরেই পাতা সংগ্রহ করা যায়। রুকোলার পাতা রসালো, লম্বাটে ও খাঁজযুক্ত। শিকড় ছাড়া এ উদ্ভিদের সব অংশই, যেমন-পাতা, ফুল, অপরিপক্ক পড ও বীজখাবার উপযোগী।

    তবে পাতাই খাদ্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। রুকোলার সবুজ সতেজ পাতা সরাসরি কাঁচা সালাদ হিসেবে টমেটো, জলপাই ও পনিরের সাথে, পিজা তৈরির পর পরিবেশনের সময় পিজা টপিং হিসেবে, পাস্তার সাথে এবং মাছ ও মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এ ছাড়াও এর বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদন করা যায়। কখনো কখনো এটা শাক হিসাবে পালং শাকের মতোই রান্না করা হয়।

    বংশপরিচয়

    পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন- ইতালিতে ‘রুকোলা’, আমেরিকাতে ‘আ রুগুলা’, জার্মানিতে ‘সালাট্রুকা’, স্পেনে ‘ইরুকা’ এবং ফ্রান্সে ‘রকেট’। রুকোলার উৎপত্তি স্থান হচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। ইতালিতে রুকোলা রোমান কাল থেকে চাষ করা হচ্ছে, তাই ধারণা করা হয় যে ইতালিই এর উৎপত্তি স্থান। এ অঞ্চল থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ ও মহাদেশে এটি বিস্তার লাভ করে।

    বর্তমানে এটি বাণিজ্যিকভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ (ইতালি, ফ্রান্স,পর্তুগাল ও চেকপ্রজাতন্ত্র), মিশর, তুরস্ক ও আমেরিকাতে (ইন্ডিয়ানা এবং মিডওয়েস্ট) চাষ হচ্ছে।

    রুকোলা হচ্ছে সরিষা পরিবারের (Brassicaceae) একাটি বর্ষজীবি, দুর্বলকাণ্ড ও সবুজ পাতাবিশিষ্ট উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Eruca sativa এই প্রজাতির দেহগত ক্রোমোসোম সংখ্যা ২n = ২২ এবং বীজই হচ্ছে বংশ বিস্তারের একমাত্র মাধ্যম।

    বাংলাদেশে রুকোলা চাষের সম্ভাবনা

    আমাদের দেশে এ পর্যন্ত কোথাও রুকোলা চাষের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইতালি থেকে বীজ সংগ্রহ করে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে এই উপকারী উদ্ভিদটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।

    গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, এটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর জন্মানোর উপযোগী। তবে পাতার বৃদ্ধি ও উৎপাদন শীতকালে সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু পাতার মতো সারা বছর বীজ উৎপাদন করা যায় না, শুধুমাত্র শীতের শেষে-বসন্তের শুরুতে এ উদ্ভিদটি ফুল ও বীজ উৎপাদন করে। বাংলাদেশে রুকোলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

    যেহেতু সারা বছর রুকোলার পাতা উৎপাদন সম্ভব, তাই গ্রামে বাড়ির আঙিনায় সামান্য একটু জায়গায় এবং শহরে ৪-৫টি টবে বাসার ছাদে কিংবা ঝুল-বারান্দায় জন্মিয়ে সারা বছর সতেজ পাতা পাওয়া সম্ভব।

    লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

    জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিকল্প উপায়ে পোকা দমন

  • Share The Gag
  • দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৃষিক্ষেতে বিকল্প উপায়ে পোকা দমন। দির্ঘদিন থেকে কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষিক্ষেতে পোকা দমন করলেও সম্প্রতি বরেন্দ্র বহুমুখি প্রকল্প ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ এর উদ্যেগে কৃষকদের কীটনাশক ছাড়াই বিকল্প উপায়ে কৃষিক্ষেতে পোকা দমন শুরু হয়েছে।

    উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বোরো ক্ষেতে গাছের ডাল, বাশের কঞ্চি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পাখিরা বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ধরে ধরে খাচ্ছে।

    কৃষকেরা জানায়, জমিতে গাছের ডাল ও বাশের কঞ্চি স্থাপন করা হলে সেখানে নিয়মিত পাখি বসে এবং ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ধরে খায়। এতে করে ফসল পোকার হাত থেকে রক্ষা পায়। এ কারন্ইে ফসলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না ।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হামিম আশরাফ জানান, কৃষিক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করে পোকা দমন করলে জমিতে থাকা ব্যাটটেরিয়া ও পোকামাড়ক ধ্বংস হয়ে যায়। এতে করে জমির উর্বরা শক্তি ও কমে যায়। অপরদিকে বিষাক্তযুক্ত ফসল মানবদেহের ক্ষতি করে । কিন্তু বিকল্প উপায়ে জমির ক্ষেতে পার্চিং করলে সেখানে পাখিরা বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলে এতে ফসল পোকার হাত থেকে রক্ষা পায় । পক্ষান্তরে জমির উর্বরা শক্তি ধরে রাখে । এ কারনে কৃষকদেরকে বিকল্প উপায়ে পোকাদমনে উদ্বূদ্ধ করা হয়েছে।

    উপজেলা বরেন্দ্র কর্মকর্তা ও বরেন্দ্র বহুমুখি প্রকল্পের সহকারি প্রকৌশলী আজমল হোসেন জানান, বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় বোরো চাষীদেরকে বিকল্প উপায়ে পোকা দমন করতে উদ্ভুব্দ করতে প্রথমে বরেন্দ্র প্রকল্পের উদ্যেগে প্রতিটি বোরো ক্ষেতে পার্চিং করা হয়েছে। পার্চিং এর সুবিধা কৃষকেরা বুঝতে পেরে এখন তারা নিজেরাই পার্চিং শুরু করেছেন। তিনি বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্প শুধু জমিতে সেচই দেয়না কৃষকদেরকে ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য উদ্ভুব্ধ করায় এবং জমিতে সেচ দেয়ার পাশাপাশি উপজেলার ৯টি গ্রামে প্রায় ২হাজার পরিবারকে বিশুদ্ধ সরবরাহ করছে। এতে শুস্ক মৌসুমে যখন পানির তিব্র সংকট থাকে তখন ওই আশপাশের জনসাধারনের একমাত্র ভরসা হয়ে দাড়ায় বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের সরবরাহকৃত বিশুদ্ধ খাবার পানি।

    Monday, April 25, 2016

    বগুড়াতে বিনাচাষে ধান আবাদে লাভবান কৃষক

  • Share The Gag
  • উত্তাল যমুনা এখন মরা নদী। কূলে জেগে ওঠেছে বিশাল চর। চরের কোথাও সমতল, আবার কোথাও উঁচু-নিচু। কিছু জায়গায় ছোট ছোট গর্ত। সেখানে রয়েছে ছোপ ছোপ জমে থাকা পানি। চরের এইসব গর্তে জমে থাকা পানিতে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান।

    এ ধান রোপণে জমিতে কোনো চাষ দিতে হয়নি। এ কারণে উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। আর তাই এ ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চরের কৃষকরা।

    বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বহমান যমুনা নদীর কূলে জেগে ওঠা বালু চরে আগাম জাতের কালো বোরো ধান চাষের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

    স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে এ বছর যমুনা নদীর কূলে জেগে ওঠা চরে বোরো ধান চাষ করেছেন শত শত কৃষক। নদীর কূলে ধানের সবুজ চারাগাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে।

    প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদী পানি শূন্য হয়ে যায়। তবে, উজান থেকে নেমে আসা সাম‍ান্য পানিতেই নদীর কূলের ভূমিহীনরা প্রতি বছর চাষ করেন বোরো ধান। এবারও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ধান চাষ করেছেন তারা।

    চর এলাকার বোরো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজস্ব জমি না থাকায় তারা কোনো ফসলই চাষাবাদ করতে পারেন না। অপরদিকে সেচ দেওয়া পানির চেয়ে নদীর চুয়ে আসা পানিতে বোরো চাষ অনেক বেশি উপকারী। তাই নদীর কূলে চরের নরম পলিমাটিতে বোরো ধান লাগানো হয়। এতে সার ও সেচসহ প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সাশ্রয় হয় চাষিদের। এ জাতের ধানের ফলন প্রতি বিঘায় প্রায় আট-নয় মণ করে পাওয়া যায়।

    ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদীর তীরবর্তী দরিদ্র জনগোষ্ঠী কালো বোরো ধান চাষ করেছেন। আগে এসব বালুচর পতিত থাকতো। নদীর এসব পতিত জমিতে বোরো ধান চাষ করে চাষিরা স্বচ্ছলতা পাচ্ছেন।

    এদিকে, চরের কৃষকদের বোরো ধান চাষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় সহায়ক ভূমিকা এবং চাষাবাদে ভূমিহীনদের আর্থিক অনটন ঘোচার পাশাপাশি এলাকার খাদ্য চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    চিলমারীতে বোরোর বাম্পার ফলন

  • Share The Gag
  • কুড়িগাম জেলার চিলমারী উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সল্প মেয়াদী আগাম জাতের ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এবারে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুঠে উঠেছে হাঁসির ঝিলিক। মনে আনন্দ নিয়েই মাঠে মাঠে নেমে পড়েছে কৃষকগন। শিলা ও অতি বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে বৈশাখের শুরুতেই স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের ধানগুলো পাকতে শুরু করায় ধান কাটতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। গত আমন মৌসুমের শুরুতে তিন দফা বন্যায় বড় ধাক্কার মুখে পড়েন চাষীরা। তাই আর কোন দুর্যোগের কবলে যেন না পরতে হয় সেটা ভেবেই অনেকেই আবার আধা-পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন।

    চিলমারীর কৃষকরা লাভের আশায় দিনরাত পরিশ্রম করেন ধান চাষ করেন। কৃষকের পরিশ্রমে ইরি-বোরো মৌসুমের বিআর-২৮ ধান বেশ ভালো ফলন হয়েছে। তাই আর দেরী না করে বোরো ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষকরা। ঠগেরহাট এলাকার হাবিব, মাছাবান্দা গ্রাামের কৃষক খয়বর হোসেন ও বাদশা জানান, আগাম জাতের বোরো ধান কাটতে শুরু করেছি।

    আবহাওয়াতো এখন ভালো আবার কখন যে কি হয় কে জানে। বৈশাখী ঝড় বা শিলাবৃষ্টি যখন তখন হতে পারে। রাত হলেই গা ছম ছম করে তাই অাগাম সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। থানাহাট, রমনা ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক জন কৃষক জানান, ধানের দাম কম। তাই লোকসান গুনতে হবে তাদের। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। এই পরিমান টাকা খরচের পর কৃষকের ঘরে বিঘা প্রতি ধান উঠছে ১৩ থেকে ১৫ মণ। বাজারে সাড়ে চারশ’ থেকে ৫ শ’ টাকার উপরে ধানের দাম উঠছে না। যার ফলে লাভ তো দূরের কথা-উৎপাদন খরচ তোলাও কষ্ট কর হয়ে পড়েছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন। এরপরও তাদের মনে আনন্দ ফলন হয়েছে বাস্পার। তারা আরো জানান তবে শুনতেছি সরকার ধানের দাম বৃদ্ধি করবে বৃদ্ধি হলেই আমাদের আশা পূরন হবে।

    উপজেলা কৃষি অফিসার, খালেদুর রহমান জানান, এবার উপজেলায় ইরি-বোরো মৌসুমে ৬হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করার লক্ষ মাত্রা ছিলো । তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলে চলতি ইরি-বেরো মৌসুমে বোর আবাদের বেশ ফলন ভালো হয়েছে।

    দিনাজপুরে ১ যুগে দ্বিগুণ বেড়েছে ভূট্টার চাষ

  • Share The Gag
  • ভূট্টা বর্তমানে দিনাজপুর জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে একটি। গত এক দশকে এ জেলায় ভূট্টার চাষ কয়েক গুণ বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ফলনও হচ্ছে বাম্পার।

    এক সময় যে সব জমিতে কখনো চাষাবাদ করতে দেখা যেতনা, বর্তমানে সেসব জমিতে ভূট্টা চাষে মেতে উঠেছেন চাষিরা।

    শুধু অব্যবহৃত জমিই নয়, বোরো, গম, শাকসবজি ইত্যাদি ফসলের জমিতেও এখন ভূট্টার চাষ করা হচ্ছে।

    এ বিষয়ে সাধারণ চাষিরা বলেন, স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনান্য ফসল চাষ না করে বর্তমানে ভূট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।

    দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সাল বা এর আগে থেকে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভূট্টার চাষ শুরু হয়। কিন্তু ২০০৫ থেকে ব্যাপক হারে এর চাষ বাড়তে থাকে যা বর্তমানে ২০১৬ সালে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা এ বিষয়ে আমার সংবাদকে বলেন, এক যুগে এ জেলায় ভূট্টা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। দিন দিন যে হারে ভূট্টার চাষ বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আগামীতে রপ্ত‍ানিও করা যাবে। ভূট্টা বর্তমানে দিনাজপুরের প্রধান অর্থকারী ফসলের একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    এ বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে উৎপাদনও ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। চলতি মৌসুমে ৬৫ হাজার ১৭ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলেও ৬৭ হাজার ২৩৫ হেক্টরে ইতোমধ্যে ভূট্টা বীজ রোপণ করা হয়েছে। এখনো ভূট্টা বীজ রোপণ অব্যাহত রয়েছে। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫৫ হাজার হলেও আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    দিনাজপুরের বিরল উপজেলার নাড়াবাড়ি এলাকার ভূট্টা চাষি ইউসুফ আলী আমার সংবাদকে বলেন, ভূট্টার উৎপাদন খরচ কম ও বিক্রিতে লাভ বেশি হওয়ায় এর চাষে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। আমি গত বছর ১০ বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘায় গম ও পাঁচ বিঘায় ভূট্টার আবাদ করেছিলাম। ভূট্টায় যে পরিমাণ লাভ পেয়েছি সে পরিমাণে গম চাষে লাভ পাইনি। তাই এবার পুরো জমিতেই ভূট্টার আবাদ করছি।

    [paypal_donation_button]

    বৃষ্টির অভাবে ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি

  • Share The Gag
  • মাগুরা জেলার ৪ উপজেলায় এবার আমের মুকুল ব্যাপক ভাবে দেখা দিলেও পরিচর্যার অভাবে তা ঝরে গিয়ে আমের ফলন বিপর্যয়ের অবস্থা দেখা দিয়েছে। জেলার ৪ উপজেলায় মোট ১ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয় বলে কৃষি বিভাগ থেকে জানান হয়। এর মধ্যে মাগুরা সদর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর, শ্রীপুর উপজেলায় ৩২৫ হেক্টর, মহম্মাদপুর উপজেলায় ১৭৫ হেক্টর এবং শালিখা উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। যার থেকে হেক্টর প্রতি ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের থেকে জানান হয়।বেশ কিছুদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায় ভিত্তিতে আমের চাষ শুরু হয়েছে। তবে আমের পরিচর্যার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকায় মাগুরার আম চাষিরা প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আম গাছের মুকুল দেখলে প্রান ভরে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ মুকুল থেকে পরিচর্যা জ্ঞান না থাকা এবং কৃষি বিভাগের এ ব্যাপারে কোন পরিকল্পনা না থাকায় কৃষকদের ভাগ্যে আম জোটেনা। মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় আমের বাগান গড়ে উঠছে। বিশেষ করে মাগুরায় ফজলী, ল্যাংড়া, হীম সাগর, আ¤্রপালী, গোপাল ভোগ,বোম্বাই, লাখনাই. তোষা প্রভৃতি জাতের আমের আবাদ হয়। জেলার শত্রুজিৎপুর, বিনোদপুর, কুচিয়ামোড়া, ইছাখাদা, হাজরাপুর, রাঘবদাইড়. খালিমপুর, আলাইপুর, হাজীপুর, রাওতড়া, কাশীনাথপুর, বরিশাট, বারইপাড়া, শ্রীকোল, কানুটিয়া, গ্রামে আমের বাগান গড়ে উঠছে।আম চাষীরা এবার আমের মুকুলের ব্যপকতা দেখে উৎফুল্ল হয়ে নানান স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু আমের গুটি আসার আগেই মুকুল ঝরে পড়ায় তাদের আশায় বালী পড়েছে।তার পরও যে আমের গুটি ছিল তা বৃষ্টির অভাবে ঝরে পড়ছে। আম গাছের নিচে গেলে শুধু ঝরে পড়া আমের গুটি দেখা যায়। এ গুটি আম কোন কাজে অসছেনা। গাছ মালিকের সামনে তার ফলান আম ঝওে যাচ্ছে কিন্তু কি কওে আমের গুটি রক্ষা করা যায় সে ব্যাপওে তাদেও কোন জ্ঞান নেই। মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে আম চাষের ওপর তথ্য সংগ্রহে গেলে তারা কোন তথ্য দিতে পারেনা। কেবল গদবাঁধা প্রতি হেক্টরে ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে দিয়ে দায় সারেন। মাগুরা জেলায় আমের চাষকে উৎসাহিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে তাদের ওপর দেয়া সরকারি দায়িত্ব যতাযথ ভাবে পালন করা জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেণ।



     

    কৃষকদের স্থায়ী উন্নয়নের পরিকল্পনা

  • Share The Gag
  • বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। কৃষকদের স্থায়ী উন্নয়নের মাধ্যমেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। আর তাই কৃষকদের উন্নয়নে স্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়দী পরিকল্পনার এনএটিপি-২ দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে অনুমোদন পায় এনএটিপি-২ (ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম-দ্বিতীয় পর্যায়) কর্মসূচিটি।

    প্রকল্পটি ২০২১ সালের মধ্যে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট। পনের বছর মেয়াদী এ পরিকল্পনার প্রথম অংশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। আরো জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্যোগপ্রবণ দেশ।

    এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন মূলত ছোট আকারের মিশ্র খামার প্রকৃতির। ধান ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদনশীলতা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। কৃষকের উৎপাদন ও গবেষণা পর্যায়ের উৎপাদন হারের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। উচ্চ মূল্যের কৃষি পণ্যের উৎপাদন বহুমুখীকরণের আশানুরূপ নয়। এসব সমস্যা হতে পরিত্রাণ পেতে দুর্যোগ সহিঞ্চু কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সামগ্রিক কৃষির উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিজ আয় বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, গবেষণা সম্প্রসারণ, সেবা কার্যকর ও স্থায়িত্বশীলকরণ ও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করবে পরিকল্পনা কমিশন।

    ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২য় পর্যায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। মান সম্পন্ন বীজ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

    ঢেঁড়শ চাষ

  • Share The Gag
  • ঢেঁড়শ এদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন নি ও সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োজিন, ভিটামিন “এ“ ও বিভিন্ন  খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না এবং এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

    মাটি
    দোআশ ও বেলে দোআশ ঢেঁড়শ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা  থাকলে এটেল মাটিতেও চাষ করা যায়

    জাত
    শাউনি,পারবনি কানি-, বারী ঢেঁড়শ, পুশা সাওয়ানী, পেন্টা গ্রীন, কাবুলী ডোয়ার্ফ, জাপানী প্যাসিফিক গ্রীন এসব ঢেঁড়শের চাষ উপযোগী জাত। শেষের দুটো জাত সারা বৎসর ব্যাপী চাষ করা চলে।

    সময়
    সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে এর চাষ করা হয়। ফাল্গুন চৈত্র ও আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

    বীজের পরিমাণ
    প্রতি শতকে  ২০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৪- ৫ কেজি বীজ লাগে।

    বীজ বপন
    বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে চাষের জমি তৈরি করতে হয়। মাটি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৭৫ সেমি.। বীজ সারিতে ৪৫ সেমি. দূরে দূরে ২-৩ টি করে বীজ বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকী চারা গর্ত থেকে উঠিয়ে ফেলতে হবে।

    সারের পরিমাণ
    সার               এক শতকে              হেক্টর প্রতি
    গোবর            ৭৫ কেজি               ১৮ টন
    সরিষার খৈল      ১.৭৫ কেজি            ৪২৫ কেজি
    ইউরিয়া          ২৩০ গ্রাম গ্রাম         ৫৫-৬০ কেজি
    টিএসপি          ৩৫০ গ্রাম গ্রাম         ৮৫-৯০ কেজি
    এমও পি         ২৩০ গ্রাম গ্রাম          ৫৫-৬০ কেজি

    সার প্রয়োগের নিয়ম
    জমি তৈরি করার সময় ইউরিয়া সার বাদে বাকি সব সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানের ১০-১৫ দিন পর জমিতে ঢেঁড়শ বীজ বপন করতে হয়। ইউরিয়া সার সমান দু‘কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তিতে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং ২ য় কিস্তিতে দিতে হবে চারা গজানোর ৪০-৫০ দিন পর।

    পরিচর্যা
    নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরিভাগ মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। মাটির প্রকার ভেদ অনুযায়ী ১০/১২ দিন পর পর সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রতি কিস্তিতে সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।

    পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
    ঢেঁড়শের ফল ছিদ্রকারী পোকাই সবচে বেশি ক্ষতি করে। এ ছাড়া জাব পোকা, সাদা মাছি, ছাতরা পোকা, লাল গান্ধি ইত্যাদিও ক্ষতি করে।

    রোগ ব্যবস্থাপনা
    হলদে শিরা স্বচ্ছতা ঢেঁড়শের প্রধান ক্ষতিকর রোগ। এ ছাড়া মোজেইক ও পাতায় দাগ রোগও দেখা যায়।

    ফসল সংগ্রহ
    বীজ বোনার ৬-৮ সপ্তাহের  মধ্যে এবং ফুল ফোটার ৩-৫ দিনের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। জাত ভেদে ফল ৮-১০  সেমি. লম্বা হলেই সংগ্রহ করতে হয়।

    মুলা চাষ

  • Share The Gag
  • মূলা

    Raphanus sativus

    মূলা একটি পুষ্টিকর সবজি হলেও অনেকেই মূলা খতে পছন্দ করেন না। মূলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। এ দেশে মূলার আবাদ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে অমৌসুমে মূলা আবাদের দিকে চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন।

    জমি ও মাটি

    উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু জমিতে মূলা চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত বেলে দোয়াশ মাটি মূলা চাষের জন্য ভাল। এটেল মাটিতে মূলার বাড় বাড়তি কম হয়। মূলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো করে চাষ করতে হয়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মূলার বাড় বাড়তি ভাল হয়।


    জাত

    একসময় জাপানের বিখ্যাত তাসাকি সান জাতের মূলার মাধ্যমে এ দেশে উচ্চফলনশীল মূলার আবাদ শুরু হলেও এখন মূলার প্রায় ২৫টি জাত চাষ হচ্ছে। আসছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত। উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ হল বারি মূলা ১, বারি মূলা ২, বারি মূলা ৩, এভারেষ্ট, হোয়াইট প্রিন্স, বিপ্লব ৯৪, হিমালয় এফ১, সুপার ৪০, মুক্তি এফ১, তাসাকী, কুইক ৪০, রকি ৪৫, হোয়াইট রকেট, হোয়াইট ৪০, জি চেটকি, সুফলা ৪০, বিএসবিডি ২১০১ এফ১, আনারকলি, দুর্বার, রকেট এফ১, সামার বেষ্ট এফ১, হ্যাভেন এফ১, মিনো আর্লি লং হোয়াই, বরকতি ৪০ এফ১, পাইলট এফ১, সিগমা ৪০ ইত্যাদি। নিচে মূলার বিভিন্ন জাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল-

    বারিমূলা ১ (তাসাকিসান)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ ধবধবে সাদা, বেলুনাকৃতি, লম্বা ও বড়, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ১ কেজি। দেশী মূলার মত অত ঝাঁঝ নেই। প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন।

    বারিমূলা ২ (পিংকী)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ লালচে, নলাকৃতি, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫-৩০ সেন্টিমিটার, মধ্যমাকার, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৯০০ গ্রাম। শাক খাওয়ার উপযুক্ত। প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন।

    বারিমূলা ৩ (দ্রুতি)- ভাদ্র থেকে কার্তিক মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ সাদা, নলাকৃতি। পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো। মূলার অর্ধেক অংশ মাটির উপরে থাকে। প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৪০০-৬০০ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৪৫ টন। জীবনকাল ৪০-৪৫ দিন। রোগ পোকার আক্রমণ প্রতিরোধী। এ দেশের আবহাওয়ায় ভাল বীজ উৎপাদন করা যায়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১.২-১.৩ টন বীজ পাওয়া যায়।

    এভারেষ্ট এফ১- সারা বছর চাষ করা যায়। একই জমিতে একই মৌসুমে ৩ বার চাষ করা যায়। সহজে ফুল আসেনা। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলার রঙ সাদা, নলাকৃতি, ছোট আকারের, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম। শাক খাওয়ার উপযুক্ত। প্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন।

    হোয়াইট প্রিন্স এফ১- মধ্য শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বুনতে হয়। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়।আগাম,দ্রুত বর্ধনশীল, ঝাঁঝহীন ও সুস্বাদু, প্রতিটি মূলার গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। শাক খাওয়ার উপযুক্ত। প্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন।

    মিনো আর্লি লং হোয়াইট- আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বুনতে হয় ও পৌষ ফাল্গুনে মূলা ওঠে। বীজ বোনার ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই মূলা তোলা যায়। মূলা লম্বা, সাদা, গ্রীস্মকালে ভাল হয়। প্রতিটি মূলার গড় ওজন ২৫০-৪০০ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৫০ টন।

    বীজ হার ও বপন

    আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মূলার বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণতঃ ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যার সুবিধে হয়। সারিতে বুনতে হলে এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব দিতে হবে ২৫-৩০ সেমি.।

    সারের মাত্রা

    সারের নাম                   সারের পরিমাণ 

                              প্রতি শতকে          প্রতি হেক্টরে

    ইউরিয়া         ১.২-১.৪ কেজি      ৩০০-৩৫০ কেজি

    টি এস পি      ১.০- ১.২ কেজি     ২৫০-৩০০ কেজি

    এমওপি        ০.৮৫-১.৪ কেজি    ২১৫-৩০০ কেজি

    গোবর           ৩২-৪০ কেজি        ৮-১০ টন

    সার প্রয়োগ পদ্ধতি

    জমি তৈরির সময় সবটুকু জৈব সার, টিএসপি ও অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিস্তিতে ভাগে ভাগ করে বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ছিটিয়ে সেচ দিতে হবে। মূলার বীজ উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ কেজি বোরিক এসিড/বোরাক্স দিলেই চলে।

    পরিচর্যা

    বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। ৩০ সেমি. দূরত্বে একটি করে চারা রাখা ভাল। মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে। প্রতি কিসি-র সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানী দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

    পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা

    অনেক সময় মূলা পাতার বিট্‌ল বা ফ্লি বিট্‌ল পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খেয়ে ক্ষতি করে। এ ছাড়া করাত মাছি বা মাস্টার্ড স’ফ্লাই, বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা পাতা খায়। বীজ উৎপাদনের সময় ক্ষতি করে জাব পোকা।

    রোগ ব্যবস্থাপনা

    মূলা পাতায় অল্টারনারিয়া পাতায় দাগ একটি সাধারণ সমস্যা। এছাড়া হোয়াইট স্পট বা সাদা দাগ রোগও দেখা যায়।

    ফসল সংগ্রহ ও ফলন

    মূলা শক্ত হয়ে আঁশ হওয়ার আগেই তুলতে হবে। অবশ্য এখন হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে এ সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবুও কচি থাকতেই মূলা তুলে ফেলতে হবে। এতে বাজার দাম ভাল পাওয়া যায় এবং স্বাদও ভাল থাকে। জাতভেদে হেক্টও প্রতি ফলন হয় ৪০-৬০ টন।

    ঝিঙ্গা চাষ

  • Share The Gag
  • ঝিঙ্গা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। এর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে ০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ৩৩.৬ মাইক্রো গ্রাম বিটা-ক্যারোটিন, ৫ মিগ্রা ভিটামিন সি, ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ২৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
    জলবায়ু ও মাটি 
    দীর্ঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং প্রচুর সূর্যালোক থাকে এমন এলাকা ঝিঙ্গা চাষের জন্য উত্তম। সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি ঝিঙ্গার সফল চাষের জন্য উত্তম।

    জাত
    বারি ঝিংগা -১

    •    আকর্ষণীয় গাঢ় সবুজ রংয়ের ফল।
    •    লম্বা গড়ে ২৭ সেমি, ওজন ১২৫ গ্রাম।
    •    হেক্টর প্রতি ফলন ১০-১৫ টন।
    •    ২০০৮ সালে অবমুক্ত

    জীবনকাল
    ১২০-১৪০ দিন।

    বীজ বপনের সময়
    ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

    বীজ হার 
    হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি বা শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

    জমি নির্বাচন এবং তৈরিঃ ঝিঙ্গা চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। একই গাছের শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরুপে তৈরি করতে হয়।  এ জন্য জমিকে প্রথমে ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।

    বেড তৈরিঃ বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি। বেডের প্রস্থ হবে ১.২ মিটার এবং লম্বা জমির দৈঘ্য অনুসারে সুবিধামত নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে এবং ফসল পরিচর্যার সুবিধার্থে প্রতি দুবেড পর পর ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা থাকবে।

    মাদা তৈরি ও চারা রোপণঃ মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০ সেমি, গভীর ৫০ সেমি এবং তলদেশ ৫০ সেমি। ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন উভয় বেডের কিনারা হইতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা লাগাতে হবে।

    ঝিংগায় সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি



















































































































     
    সারের নামমোট পরিমাণ
    (হেক্টর প্রতি)
    মোট পরিমাণ (শতাংশ প্রতি)জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি)চারা রোপণের ৭-১০
    দিন পূর্বে
    চারা রোপণের ১০-১৫
    দিন পর
    চারা রোপনের ৩০-৩৫
    দিন পর
    চারা রোপনের ৫০-৫৫
    দিন পর
    চারা রোপনের ৭০-৭৫
    দিন পর
    পচা গোবর২০ টন৮০ কেজি২০ কেজি৫ কেজি----
    টিএসপি১৭৫ কেজি৭০০ গ্রাম৩৫০গ্রাম৩০ গ্রাম----
    ইউরিয়া১৭৫  কেজি৭০০ গ্রাম--১৫ গ্রাম১৫ গ্রাম১৫ গ্রাম১৫ গ্রাম
    এমপি১৫০ কেজি৬০০গ্রাম২০০ গ্রাম২০ গ্রাম১৫ গ্রাম---
    জিপসাম১০০ কেজি৪০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম----
    দস্তা সার১২.৫ কেজি৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম-----
    বোরাক্স১০ কেজি৪০ গ্রাম৪০ গ্রাম-----
    ম্যাগনেশিয়াম১২.৫কেজি৫০ গ্রাম-৫ গ্রাম----
    অক্সাইড


     


    পরবর্তী পরিচর্যা
     সেচ দেওয়াঃ ঝিংগা গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় বলে তখন সবসময় পানি সেচের প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত খুব শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। তখন অনেক সময় কারণ বৃষ্টিই থাকে না। উক্ত সময়ে ৫-৬ দিন অন্তর  নিয়মিত পানি সেচের প্রয়োজন হয়।

    • বাউনি দেওয়াঃ ঝিংগার কাংখিত ফলন পেতে হলে অবশ্যই মাচায় চাষ করতে হবে। ঝিংগা মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজারমূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হওয়ায় ফলন হ্রাস পায়।

    • মালচিং সেচের পর জমিতে চটা বাধেঁ। চটা বাধঁলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

    • সার উপরি প্রয়োগঃ চারা রোপণের পর গাছ প্রতি সারের উপরি প্রয়োগের যে মাত্রা উল্লেখ করা আছে তা প্রয়োগ করতে হবে।

    ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন

    ঝিংগার পরাগায়ন প্রধানতঃ মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশী ফল ধরার জন্য হেক্টর প্রতি তিনটি মৌমাছির কলোনী স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়াও কৃত্রিম পরাগায়ন করে ঝিংগার ফলন শতকরা ২০-২৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

    ঝিংগার ফুল বিকালে ফোটে। বিকাল ৪ঃ০০ সন্ধ্যার মধ্যে ফুল ফোটা শেষ হয়। এর পরাগায়ন ফুল ফোটার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং পরদিন সকালের অগ্রভাগে হয়। ঝিঙ্গার কৃত্রিম পরাগায়নে ভাল ফলন পাওয়া যায়। কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিড়েঁ নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে (যেটি গর্ভাশয়ের পিছনে পাপড়ির মাঝখানে থাকে) ঘষে দেয়া হয়।

    ফসল তোলা (ভক্ষণযোগ্য পরিপক্কতা সনাক্তকরণ)
    •    ঝিঙ্গার ফল পরাগায়নের ৮-১০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়।
    •    ফল মসৃণ ও উজ্জল দেখাবে।

    ফলন
    ভালো জাত উর্বর মাটিতে উত্তমরুপে চাষ করতে পারলে হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন (শতাংশ প্রতি ৪০-৬০ কেজি ) ফলন পাওয়া সম্ভব।

    ধানের বিভিন্ন রোগ

  • Share The Gag
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগ (Bacterial Blight)




    রোগের জীবাণু- Xanthomonas oryzae pv. oryzae


    এটি ঝলসানো রোগ নামেও পরিচিত। পাতাপোড়া রোগের ব্যাকটেরিয়া জীবাণু আক্রান- গাছ বা তার পরিত্যক্ত গোড়া, কুটা ও বীজ এবং আগাছার মধ্যেও থাকতে পারে। শিশির, সেচের পানি, বৃষ্টি, বন্যা এবং ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়া কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের দিকে হলদে পুঁতির দানার মত গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে লেগে থাকে। পরবর্তীকালে পাতার গায়ে লেগে থাকা জলকণা গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে এ রোগের জীবাণু অনায়াসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের ফলে গাছের বিভিন্ন বয়সে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ (ক্রিসেক, পাতা পোড়া ও ফ্যাকাশে হলুদ) দেখা দেয়। বীজতলা থেকে চারা তোলার সময় যদি শিকড় ছিড়ে যায় তখন রোপণের সময় ব্যাকটেরিয়া সে ক্ষতের মধ্য দিয়ে গাছের ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া কচি পাতার ক্ষত স্থান দিয়েও প্রবেশ করতে পারে।


    আক্রান্ত গাছের নিচের পাতা প্রথমে নুয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। এভাবে গোছার সকল পাতাই মরে যেতে পারে। এ অবস্থাকে ক্রিসেক বা নেতিয়ে পড়া রোগ বলা হয়। চারা বা প্রাথমিক কুশি বের হওয়ার সময় গাছের পাতা বা পুরো গাছটি ঢলে পড়ে। মাঝে মাঝে আক্রমণ প্রবণ জাতের ধানে পাতাগুলো ফ্যাকাশে হলদে রঙের হয়। গাছের বয়স্ক পাতাগুলো স্বাভাবিক সবুজ থাকে, কিন্ত কচি পাতাগুলো সমানভাবে ফ্যাকাশে হলদে হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়। পাতা পোড়া রোগের লক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথমে পাতার কিনারা অথবা মাঝে নীলাভ সবুজ রঙের জলছাপের মত রেখা দেখা যায়।


    দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যে কোন জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত পাতাটি ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণ প্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময়ে সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। রোগ সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়লে পুড়ে গেছে বলে মনে হয়।




    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • এ রোগ দমনের জন্য বিআর২ (মালা), বিআর৩ (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর১৪, বিআর১৬, বিআর১৯ (মঙ্গল), বিআর২১ (নিয়ামত), বিআর২৬ (শ্রাবণী), ব্রিধান২৭, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩১, ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮, ব্রিধান ৪০, ব্রিধান৪১, ব্রিধান ৪২, ব্রিধান৪৪, ব্রিধান ৪৫ ও ব্রিধান৪৬ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করা।










      • সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করুন।










      • ক্রিসেক আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে  দেয়া।










      • আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।










      • জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।










      • আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।










      • আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।








    পাতার লালচে রেখা রোগ (Bacterial Leaf Streak)




    রোগের জীবাণু- Xanthomonas oryzae pv. oryzaecola
    এ রোগ সাধারণতঃ পত্রফলকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রথমে পাতার শিরাসমূহের মধ্যবর্তী স'ানে সরু এবং হালকা দাগ পড়ে। সূর্যের দিকে ধরলে এ দাগের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করে এবং পরিস্কার দেখা যায়। আসে- আসে- দাগগুলো বড় হয়ে লালচে রং ধারণ করে এবং পাতার পার্শ্ববর্তী বৃহৎ শিরার দিকে ছড়াতে থাকে। আক্রমণ প্রবণ জাতে ধানের পাতা পুরোটাই লালচে রঙের হয়ে মরে যেতে পারে। রোগ বিস্তারের অনুকুল অবস্থায় সারা মাঠ হলদে কমলা রঙের হয়ে যায়। এ ব্যাকটেরিয়া গাছে ক্ষত বা পাতার কোষের স্বাভাবিক ছিদ্র পথে প্রবেশ করে। পাতা পোড়া রোগের চেয়ে বেশি হলদে গুটিকা পাতার উপর সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি এবং বাতাস এ রোগ বিস্তারে সাহায্য করে।




    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা




    আক্রান্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ না করা।


    এক লিটার পানিতে ৩ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন গুলে তাতে বীজ এক রাত রেখে শোধন করা।


    পোকা দ্বারা পাতায় যেন ক্ষতি হতে না পারে সেজন্য জমিতে পোকা দেখা মাত্র কীটনাশক বা অন্য উপায়ে মেরে ফেলা।


    নাড়া শুকিয়ে জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।


    এ রোগ প্রতিরোধশীল জাত যেমন বিআর৩ (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর৯ (সুফলা), বিআর১০ (প্রগতি), বিআর১৪ (গাজী), বিআর১৬ (শাহীবালাম), বিআর২০ (নিজামী), বিআর২১ (নিয়ামত), বিআর২৪ (রহমত), ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩০, ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮, ব্রিধান৪০,  ব্রিধান৪১, ব্রিধান৪২ ইত্যাদি চাষ করা।




    গুড়িপঁচা রোগ (Foot rot)


    রোগের জীবাণু- Erwinia chrysenthemi rice pathovar


    এ রোগ চারা ও কুশি অবস্থায় সাধারনত দেখা যায়। গাছের প্রাথমিক অবস্থায় পাতার খোল পঁচে বাদামী রঙের হয়ে যায়। রোগের লক্ষণ তাড়াতাড়ি কান্ড, গিঁট এবং গাছের উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। কান্ড নরম হয়ে পঁচে যায় ও সেখান থেকে বেশ দুর্গন্ধ (শামুক পচা গন্ধ) বের হয়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে প্রায় সবগুলো কুশি পচে গিয়ে নুয়ে পড়ে অথবা টান দিলে সহজে উঠে আসে। গুড়িপঁচা সাধারণতঃ কুশি অবস্থা থেকে ফুল হওয়া অবধি দেখা যায়, কিন' যদি জমি জলমগ্ন থাকে তবে এ রোগ গাছের জীবন চক্রের যে কোন সময় হতে পারে।


    ব্যবস্থাপনা






      • সেচ নিয়ন্ত্রণ করে জমি মাঝে মধ্যে শুকিয়ে নিলে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।










      • এ রোগের লক্ষণ কোন একটি গাছে দেখা মাত্র তুলে ফেলা।








    ব্লাস্ট রোগ (Blast)


    রোগের জীবাণু- Pyricularia grisea


    এই ছত্রাক জীবাণু ধান গাছের যে কোন অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে। এ রোগে প্রথমে পত্র ফলকে অতি ছোট ডিম্বাকৃতি দাগ পড়ে। এ দাগের মাঝামাঝি অংশ প্রশস- হয় এবং দু’প্রান- সরু থাকে যাতে দাগটাকে মনে হয় অনেকটা চোখের মত। বড় দাগগুলোর (০-১.৫  ০.৩-০.৫ সেন্টিমিটার) কেন্দ্র ভাগ ধূসর বর্ণের হয়। আক্রমণ প্রবণ ধানের পাতা মরে যেতে পারে। কিন্তু প্রতিরোধক জাতের পাতার মধ্যে আলপিনের মাথার মত ছোট বাদামি দাগকে বাদামি দাগ রোগ বলে ভুল হতে পারে।


    ধানগাছের ব্লাস্ট রোগ কান্ডের গিঁটেও আক্রমণ করতে পারে। গিঁট পঁচে গিয়ে কালচে হয় এবং সহজেই ভেঙ্গে যায়। ছড়া বা শিষের গোড়া আক্রান- হয়। আক্রান- অংশ কালচে হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে যাকে শীষ ব্লাস্ট বলে। অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার এবং বাতাসের আর্দ্রতা এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়। এ ছাড়া রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম ও সকালে শিশির পড়া এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়। মাঠে এ রোগের আক্রমণ ব্যাপক হলে পুড়ে বসে যাওয়ার মত হয়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।










      • সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা।










      • জমিতে সব সময় পানি রাখা।










      • ব্লাস্ট প্রতিরোধক জাতের ধান বিআর৩, বিআর৫, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, বিআর২৫, বিআর২৬ ব্রিধান ২৮, ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৩ ব্রি ধান ৪৪ এবং ব্রি ধান ৪৫ ইত্যাদি চাষ করা










    খোলপোড়া রোগ (Sheath blight)


    রোগ জীবাণু-  Rhizoctonia solani


    এ রোগে প্রাথমিক অবস্থায় পানির উপরিভাগে খোলের উপর পানি ভেজা হালকা সবুজ রঙের দাগ পড়ে। ডিম্বাকৃতি বা বর্তুলাকার এ সব দাগ প্রায় ১ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং বড় হয়ে দাগগুলো ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। কয়েকটি দাগ পরে একত্রে মিশে যায়। প্রত্যেকটি দাগের সীমারেখা এবং রঙের বৈচিত্র্য একটা আক্রান্ত এলাকার বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলে। তখন আক্রান্ত খোলটার উপর ছোপ ছোপ দাগ মনে হয়। অনুকুল এবং আর্দ্র পরিবেশে আক্রান্ত কান্ডের নিকটবর্তী পাতাগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণতঃ ফুল হওয়া থেকে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ স্পষ্ট দেখা যায়। আক্রান্ত জমি মাঝে মাঝে পুড়ে বসে যাওয়ার মত মনে হয় । রোগের প্রকোপ বেশি হলে ধান চিটা হয়ে যায়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা


    রোগ সহনশীল জাত যেমন বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩১ ও ব্রি ধান৩২ চাষ করা যেতে পারে।


    পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করা।


    লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।


    সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করা।


    ধানের জাত অনুসারে সঠিক দুরত্বে চারা রোপণ করা (তবে ২৫x২০ সেন্টিমিটার দূরত্বই ভাল)।


    রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ দুই কিস্তিতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।


    প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক যেমন ফলিকুর এবং কনটাফ ৫০০ মিলি/হেক্টর হারে প্রয়োগ করা।


    রোগ দেখা দিলে পর্যায়ক্রমে পানি দেয়া ও শুকানো।




    ভূয়াঝুল বা লক্ষীর গু (False smut)


    রোগের জীবাণু- Ustilaginoidea virens


    লক্ষীর গু বা ভূয়াঝুল রোগ ধান পাকার সময় দেখা যায়। ছত্রাক ধানে চাল হওয়ার শুরুতেই আক্রমণ করে এবং বাড়ন্ত চালকে নষ্ট করে বড় গুটিকা সৃষ্টি করে। গুটিকার ভেতরের অংশ হলদে কমলা রং এবং বহিরাবরণ সবুজ অথবা কাল হয়। কচি গুটিকাগুলো ১ সেমি এবং পরিপক্ক অবস্থায় আরও বড় আকারের হতে পারে। এক রকমের আঠা জাতীয় পদার্থ থাকার জন্য গুটিকা থেকে ক্ল্যামাইডোস্পোর জাতীয় অনুবীজ সহজে বের হয় না। সাধারণত: কোন শীষে কয়েকটা ধানের বেশী আক্রমণ হতে দেখা যায় না।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা


    আক্রান্ত গাছ বা শীষ তুলে ফেলা এ রোগ দমনের সবচেয়ে ভাল উপায়।


    পূর্বের ন্যায় বীজ শোধন দ্বারাও এ রোগ দমন করা যায়।


    সুস্থ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী মৌসুমে বপন করেও এ রোগ দমন করা যায়।




    বাদামীদাগ রোগ (Brown spot)


    রোগের জীবাণু - Bipolaris oryzae


    এ রোগের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ পাতায় এবং বীজের খোসায় দেখা যায়। প্রথমে পাতার বৈশিষ্ট্যগত দাগগুলো ডিম্বাকৃতি এবং আকারে ও আকৃতিতে তিল বীজের মত হয়। দাগগুলো আকৃতিতে প্রায় অনেকটা একই রকমের এবং পাতার সমস্ত অংশ জুড়েই সমানভাবে দেখা যায়। নতুন দাগগুলো ছোট ০.০৫ থেকে ০.১ সেমি পরিধি বিশিষ্ট গোলাকার এবং সাধারণতঃ গাঢ় বাদামী রঙের হয়। বয়স্ক দাগ ০.৪-১ সেমি x ০.০১-০.২ সেমি আকারের এবং বাদামী রঙের হয়। অধিকাংশ দাগের কিনারা হালকা বাদামী রঙের হয়। দাগগুলো বড় হয় এবং সরু বাদামী দাগের মত লম্বা হয় না। ব্লাস্টের দাগের যেমন কেন্দ্র বেশীর ভাগ ধূসর বা সাদা হয় বাদামী দাগ রোগের কেন্দ্র ভাগের অধিকাংশই থাকে বাদামী রঙের। বেলে জাতীয় মাটিতে এবং যে মাটিতে নাইট্রোজেন ও পটাশ সার কম সে সব জমিতে এ রোগ বেশী হয়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • জমিতে পটাশ, দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা।










      • সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।










      • সুস' গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।










      • থায়োফানেট মিথাইল নামক কার্যকরী উপদান বিশিষ্ট ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করা।










      • বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে রাখা।










      • জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করা।








    সরু বাদামী দাগ রোগ (Narrow brown spot)


    রোগ জীবাণু- Cercospora oryzae


    এ রোগের ফলে পাতার মধ্যে ছোট, সরু ও চিকন লম্বা-লম্বি বাদামী দাগ দেখা যায় (ছবি ৮৬)। এ ছাড়াও পাতার খোলে, বীজের বোঁটায় এবং ধানের তুষের উপর এ রোগের লক্ষণ দেখা যেতে পারে। লম্বা দাগগুলো পাতার শিরার সমান্তরালে থাকে। এ দাগগুলো সাধারণতঃ ২-১০ মিলিমিটার লম্বা এবং ১ মিলিমিটার চওড়া হয়। কিন্ত আক্রমণ প্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা হালকা বাদামী রঙের হয়। দাগের কেন্দ্রটা হালকা রঙের এবং সরু। সাধারণতঃ এই বাদামী দাগ লাল বাদামী এবং দাগের কিনারা হালকা রঙের হয়ে থাকে।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • আক্রান্ত জমি  থেকে বীজ সংগ্রহ না করা।










      • সুষম পরিমিতভাবে সার ব্যবহারে এ রোগ আয়ত্বে রাখা যায়।








    কান্ড পঁচা রোগ (Stem rot)


    রোগের জীবাণু- Sclerotium oryzae


    এ রোগের ছত্রাক সাধারণতঃ জমির পানির উপরের তল বরাবর কুশির বাইরের দিকের খোলে আক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে। প্রথমে গাছের বাইরের খোলে কালচে গাঢ়, অনিয়মিত দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে বড় হয়। পরে ছত্রাক গাছের কান্ডের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং পচিয়ে ফেলে। যার ফলে গাছ হেলে ভেঙ্গে পড়ে এবং ধান চিটা ও অপুষ্ট হয়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • জমি শুকিয়ে নাড়া পোড়ানো।










      • মাঝে মাঝে রোপা জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি শুকানো।










      • ঘন করে চারা না লাগানো।










      • সুষম সার ব্যবহার করা।










      • এ রোগের প্রতি কিছুটা সহনশীল জাতের ধান যেমন- বিআর ১১, বিআর ১৪, বিআর২৯, ব্রিধান ৩০, ব্রিধান ৩১, ব্রিধান ৪০, ব্রিধান ৪২, ব্রিধান ৪৪, ব্রিধান ৪৫, ব্রিধান ৪৬, ব্রিধান ৪৭ ইত্যাদির চাষ করা।










      • হেক্টর প্রতি ২.২৫ কেজি থায়োফানেট মিথাইল নামক কার্যকরী উপাদান বিশিষ্ট ছত্রাকনাশক ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সেপ্র করা।








    খোলপঁচা রোগ Sheath rot)


    রোগ জীবাণু- Sarocladium oryzae


    এ রোগ ধান গাছে থোড় হওয়ার শেষ পর্যায়ে এবং সর্বোপরি খোল অর্থাৎ যে খোল শীষকে আবৃত করে রাখে সেই খোলে হয়। দাগটা প্রথমতঃ গোলাকার বা অনিয়মিত এবং আকারে ০.৫-১.৫ সে মি লম্বা হয়। কেন্দ্র ধূসর এবং কিনারা বাদামী রঙের অথবা দাগটা ধূসর বাদামী রঙের হতে পারে। দাগগুলো একত্রে হয়ে বড় হয় এবং সম্পূর্ণ খোলেই ছড়াতে পারে। আক্রমণ বেশী হলে শীষ বা ছড়া আংশিক বের হয়। শীষ আবৃত খোল পঁচে যায় এবং সাদা রঙের ছত্রাক খোলের উপর মাঝে মাঝে দেখা যায়। আংশিক বের হওয়া শীষে খুব কম সংখ্যক ধান পুষ্ট হয়। সাধারণতঃ আক্রান্ত গাছের নীচের দিকে মাজরা পোকার আক্রমণ বা অন্য কোন আঘাত বা ক্ষত দেখা যায়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা


    সুস্থবীজ ব্যবহার করা।


    খড়কুটা জমিতে পুড়িয়ে ফেলা।


    ইউরিয়া সারের ব্যবহার পরিমিত রাখা।


    বীজ শোধন করা।




    পাতার ফোস্কাপড়া রোগ (Leaf scald)


    রোগের জীবাণু- Macrodochium oryzae


    পাতার ফোস্কাপড়া একটি বীজবাহিত রোগ। এ রোগের লক্ষণ সাধারণত বয়স্ক পাতার আগায় দেখা যায় (ছবি ৯১)। মাঝে মাঝে পাতার মাঝখানে বা কিনারেও হতে পারে (ছবি ৯২)। দাগ দেখতে অনেকটা জল ছাপের মত মনে হয় এবং বড় হয়ে অনেকটা ডিম্বাকৃতি বা আয়তাকার এবং জলপাই রঙের মত মনে হয়। দাগের ভেতর গাঢ় বাদামী চওড়া রেখা এবং হালকা বাদামী রেখা পর পর বেস্টন করে থাকে। তাতে কিছুটা ডোরাকাটা দাগের মত মনে হয়। বেশী আক্রমণে পাতা শুকিয়ে খড়ের রঙের মত হয় এবং দাগের কিনারা হালকা বাদামী এলাকার মত দেখা যায়। দাগের ক্রমাগত বৃদ্ধি পুরো পাতাতেই ছড়াতে পারে। পাতার ফোস্কাপড়া রোগ চেনার সহজ উপায় হলো আক্রান্ত পাতা কেটে স্বচ্ছ পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে যদি পুঁজ বা দুধ জাতীয় পদার্থ কাটা অংশ থেকে বের হয় তবে বুঝতে হবে একা ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগ। আর যদি কোন কিছু বের না হয় তবে সেটা পাতার ফোস্কা রোগ।




    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • সুস্থবীজ ব্যবহার করা।










      • পরিমিত মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করা।










      • বীজশোধন করা।










      • নাড়া জমিতে পুড়িয়ে ফেলা।






     


    টুংরো রোগ (Tungro)


    রোগের কারণ-Tungro virus


    এশিয়া মহাদেশের উঞ্চ অঞ্চলে টুংরোই সবচেয়ে প্রধান ভাইরাস রোগ। বাংলাদেশে প্রায় ২/৩ বছর পর পর বিস-ীর্ণ এলাকা জুড়ে রোগটি দেখা দেয় এবং এতে প্রচুর ফলন কমে যায়।। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর জেলায় টুংরোর প্রাদুর্ভাব হয়ে আসছে। এ রোগ হলে ধান গাছের বাড়তি কমে যায় এবং কুশি কম হয়। আক্রান্ত পাতা ও পাতার খোল খাটো হয়। কচি পাতাগুলো পুরাতন পাতার খোলের মধ্যে আটকে থাকে। নুতন পাতা খাটো ও চওড়া হয় এবং মোচড় খেয়ে যায়। এসব কারণে গাছ বাড়তে পারে না। আক্রান্ত পাতা প্রথমে হালকা হলুদ এবং পরে গাঢ় হলুদ থেকে কমলা বর্ণের হয়ে যায়। ধানের জাত বিশেষ পাতার রং ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পাতা ও কান্ডের মধ্যবর্তী কোন বেড়ে যায়। আক্রান্ত ধান গাছ পাকা পর্যন্ত বাঁচতে পারে তবে আক্রমণ তীব্র হলে গাছগুলো শুকিয়ে মরার মত হয়ে যায়। হালকাভাবে আক্রান্ত গাছ বেঁচে থাকে তবে তাতে ২-৩ সপ্তাহ পর ফুল আসে এবং ফলন অনেক কম হয়। এসব গাছে ধানের ছড়া আংশিক বের হয়, দানাগুলো কালো ও অপুষ্ট হয়। দেরীতে আক্রান্ত গাছে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে ম্লান হয়ে যায়। টুংরো আক্রান্ত ধান গাছ কাটার পর তার মুড়ি ধানেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।


    সবুজ পাতাফড়িং টুংরো রোগ ছড়ায়। বীজতলাতেই প্রথম আক্রমণ শুরু হয়। সবুজ পাতাফড়িং বীজতলার চারাতে ভাইরাস সঞ্চালন করে। এসব চারা রোপণ করার কিছুদিন পরই তাতে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেক সময় বীজতলাতেই টুংরো আক্রমণে হলুদ বর্ণের চারা দেখা যায়। রোপণের পর কুশি বৃদ্ধি অবস্থায় ক্ষেতে বাহক পোকা থাকলে নুতন নুতন গাছে লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই বীজতলায় এবং কুশি বৃদ্ধি অবস্থায় সবুজ পাতাফড়িং দেখা মাত্র দমন করতে হবে। টুংরো রোগের বিশেষ লক্ষণ হলো ক্ষেতের সব গাছেই এক সংগে আক্রমণ হয় না। বরং বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু গাছে প্রথমে হলুদ হয়ে আস্তে আস্তে মরে যায়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা


    রোগ সহনশীল জাত যেমন বিআর২২ বিআর২৩, ব্রিধান২৭, ব্রিধান৩১ ও ব্রিধান৪১ ইত্যাদি চাষ করা।


    হাত জাল দিয়ে বা অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে সবুজ পাতাফড়িং দমন করতে হবে। আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে সবুজ পাতাফড়িং মেরে ফেলা যায়।


    টুংরো আক্রান্ত জমির আশে পাশে  বীজতলা করা থেকে বিরত থাকতে হবে,


    আড়ালি ঘাস, বাওয়া ধান নিধন করতে হবে।


     


    হলদে বামন (Yellow dwarf)


    রোগের কারণ- মাইকোপ্লাজমা


    আক্রান্ত গাছে নতুন প্রসারিত পাতা হলদে বা পাংশু রঙের হয়। পাতার রং হলদে সবুজ থেকে সাদাটে সবুজ অথবা ফ্যাকাশে হলদে হতে পারে। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে আক্রান্ত গাছ বিবর্ণ হয়। গাছ খুব খাটো এবং অত্যধিক কুশি হয়। পাতাগুলো নরম হয়ে ঝুলে পড়ে। আক্রান্ত গাছ মরে যেতে পারে অথবা ধান পাকা পর্যন্ত বাঁচতেও পারে। আক্রান্ত গাছে খুব কম ছড়া হয়। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে লক্ষন বলা যায় না, কিন্ত পরবর্তীতে কাটার পর গোড়া থেকে গজানো গাছে লক্ষণ ভালভাবে প্রকাশ পায়।


    হলদে বামন সংঘটক মাইকোপ্লাজমা সবুজ পাতাফড়িং দ্বারা ছড়ায়। যতদিন জীবিত থাকে বাহক পোকা এ ভাইরাসকে শরীরে ধারণ করতে এবং সুস্থগাছ খেয়ে রোগ ছড়াতে পারে, কিন্ত বাহক পোকা এ রোগ বংশ পরস্পরায় ছড়ায় না।


    দমন ব্যবস্থাপনা


    এ রোগের দমন ব্যবস্থা হিসেবেও টুংরো রোগের অনুরূপ সবুজ পাতাফড়িং দমন করা উচিত।




    উফরা রোগ (Ufra)


    রোগের জীবাণু- Detylanchus angustus


    পানি ও মাটি দ্বারা পরিবাহিত এ কৃমি গাছের উপরের অংশ আক্রমণ করে। এ কৃমি ধান গাছের পাতায় কচি অংশের রস শুষে খায়, ফলে প্রথমত পাতার গোড়ায় সাদা ছিটা-ফোটা দাগের মত দেখায়। সাদা দাগ ক্রমে বাদামী রঙের হয় এবং পরে এ দাগ বেড়ে সম্পূর্ণ পাতাটাই শুকিয়ে ফেলে।  অধিকাংশ ছড়াই মোচড় খেয়ে যায় ও ধান চিটা হয়। কোন কোন ছড়া মোটেই বের হয় না। এ রোগের জীবাণু জল স্রোতের সাথে এক জমি থেকে অন্য জমিতে যায়। বিশেষতঃ জলী আমন ধানে এরূপ হয়ে থাকে।


    দমন ব্যবস্থাপনা


    মৌসুম শেষে চাষ দিয়ে জমি ও নাড়া শুকাতে হবে।


    নাড়া জমিতেই পোড়াতে হবে।


    জলী আমন ধান দেরীতে বুনলে এ রোগ কম হয়।


    শস্য পর্যায়ে ধান ছাড়া অন্য ফসল করা উচিত।


    প্রাথমিক অবস্থায় আক্রমণ শুরু হলে আগা ছেটে দেয়ো যেতে পারে।


    বীজতলা এবং মূলজমিতে এ রোগ দেখা দিলে বিঘা প্রতি ২.৫-৩.০ কেজি হারে ফুরাডান অথবা কুরাটার ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।




    শিকড় গিঁট (Root knot)


    রোগের জীবাণু- Meloidogyne graminicola|


    এ রোগ সাধারণত: বীজতলায় এবং বোনা আউশ ক্ষেতে চারা অবস্থায় দেখা যায়। এই কৃমি ধান গাছের প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো মাটিতে গাছের শিকড়ে আক্রমণ করে। আক্রান্ত গাছ বেঁটে, পাতা হলদে এবং শুকিয়ে যেতে থাকে। আক্রান্ত গাছের শিকড়ের মধ্যে গিঁট দেখা যায়। গাছ বাড়তে পারে না এবং দুর্বল হয়।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • আক্রান্ত বীজতলা বা জমি পানিতে ডুবিয়ে রাখলে আক্রমণ প্রকোপ কমানো যায়।










      • চাষাবাদে শষ্যক্রমে পরিবর্তন আনা।










      • বীজতলা বা আউশ ক্ষেতে বিঘা প্রতি ২.৫-৩.০০ কেজি ফুরাডান অথবা কুরাটার ছিটিয়ে দেওয়া।








    বাকানী বা গোড়াপঁচা রোগ (Bakanae)


    রোগের জীবাণু- Fusarium moniliformae


    এটি একটি বীজবাহিত রোগ। এ রোগের সবচে’ স্পষ্ট লক্ষণ হলো আক্রান্ত চারা স্বাভাবিক চারার চেয়ে প্রায় দ্বিগুন লম্বা হয় এবং আক্রান্ত চারার পাতা হলদে সবুজ হয়। আক্রান্ত চারাগুলো বেশী দিন বাঁচে না। আক্রান্ত গাছের কুশি লিকলিকে হয়। এদের ফ্যাকাশে সবুজ পাতা অন্যান্য গাছের উপর দিয়ে দেখা যায় এবং নীচের দিকে গিঁটে অস্থানিক শিকড়ও দেখা যেতে পারে। আক্রান্ত গাছ যদি কোন রকমে বাঁচে তবে সেগুলো থেকে চিটা ধান হয়। অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার এবং ৩০-৩৫০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এ রোগের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে।


    সমন্বিত ব্যবস্থাপনা






      • ব্যাভিষ্টিন অথবা নোইন নামক ছত্রাকনাশক ৩ গ্রাম ১ লিটার পানিতে গুলে বীজ এক রাত ভিজিয়ে রাখা।










      • একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।










      • আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।










      • কিছুটা প্রতিরোধ সম্পন্ন ধানের জাত যেমন- বিআর ১৪, ব্রিধান ১৮, ব্রিধান ৪২, ব্রিধান ৪৪ ও ব্রিধান ৪৫ এর চাষ করা।










      • বীজতলা আর্দ্র বা ভিজে রাখা।






    {বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট}

    ধানের পোকামাকড়

  • Share The Gag
  • বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির প্রায় ৭৬% জমিতে ধান চাষ করা হয়।এর প্রায় ৭০% জমিতেই আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছ। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব জাতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এসব আধুনিক জাতের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি সার ও সেচ দিতে হয়। এজন্য পোকামাকড়ের আক্রমণও বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৫ সালে এ দেশে ধান ফসলের জন্য ক্ষতিকর ১৭৫ প্রজাতির পোকাকে শক্ত করা হয় (করিম ১৯৮৫)। পরবর্তীতে২০০৩ সালে ২৬৬টি প্রজাতির পোকাকে ধানের ক্ষতিকর পোকা হিসেবে শনাক্ত করা হয়(ইসলাম ও অন্যান্য ২০০৩)।এর মধ্যে সব পোকা সব মৌসুমে বা সব জায়গার ধান ফসলে ক্ষতি করে না।২০ প্রজাতির পোকাকে ধান ফসলের সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বাংলাদেশে মাজরা, পামরি, বাদামী গাছ ফড়িং ধানের প্রধান তিনটি ক্ষতিকর পোকা।


    সূচিপত্র


    ১.        ধানের পোকামাকড়

    ১.১       মাজরা পোকা

    ১.২       নলি মাছি

    ১.৩       পাতা মাছি

    ১.৪       পামরী পোকা

    ১.৫       চুংগী পোকা

    ১.৬       পাতা মোড়ানো পোকা

    ১.৭       লেদা পোকা

    ১.৮       লম্বাশুঁড় উড়চুঙ্গা

    ১.৯       ঘাস ফড়িং

    ১.১০      সবুজ শুঁড় লেদা পোকা

    ১.১১      ঘোড়া পোকা

    ১.১২      সবুজ পাতা ফড়িং

    ১.১৩      আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং

    ১.১৪       থ্রিপস

    ১.১৫      বাদামী গাছ ফড়িং

    ১.১৬      সাদা পিঠ গাছ ফড়িং

    ১.১৭      ছাতরা পোকা

    ১.১৮      গান্ধি পোকা

    ১.১৯      শীষকাটা লেদা পোকা

    ১.২০      উরচুংগা

    ১.২১      গুদামজাত শস্যের পোকা

    ১.২১.১   কেড়ি পোকা

    ১.২১.২   লেসার গ্রেইন বোরার

    ১.২১.৩   অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ

    ১.২১.৪   রেড ফ্লাওয়ার বিট্


    মাজরা পোকা  
    তিন ধরনের মাজরা পোকা বাংলাদেশের ধান ফসলের ক্ষতি করে। যেমন- হলুদ মাজরা। কালো মাথা মাজরা এবং গোলাপী মাজরা । মাজরা পোকার কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। ফলে ডিগ পাতা মারা যায়। একে  ‘মরা ডিগ’ বা ‘ডেডহার্ট ’ বলে। গাছে শীষ আসার পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরা ডিগ দেখতে পাওয়া যায়। থোড় আসার আগে মরা ডিগ দেখা দিলে বাড়তি কিছু কুশী উৎপাদন করে গাছ আংশিকভাবে ক্ষতি পূরণ করতে পারে।

    ক্রিসেক রোগের অথবা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনার সাথে মাঝে মাঝে মাজরা পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত মরা ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা ডিগ টান দিলেই সহজে উঠে আসে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কান্ডে মাজরা পোকা খাওয়ার দরুণ ছিদ্র এবং খাওয়ার জায়গায় পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়।

    শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে ‘সাদা শীষ’, ‘মরা শীষ’ বা ‘হোয়াইট হেড’ বলে। খরায় বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড-এর মত দেখা যেতে পারে। কীড়া যদি পাতার খোলের ভেতরে খায় এবং কান্ডের ভেতরের অংশ সম্পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধানগাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।

    মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কান্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কান্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে। গাছে মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হলুদ মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে ডিম পাড়ে এবং গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।

    মাজরা পোকার কীড়াগুলো ডিম থেকে ফুটে রেরুবার পর আস্তে আস্তে কান্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। কীড়ার প্রথমাবস্থায় এক একটি ধানের গুছির মধ্যে অনেকগুলো করে গোলাপী ও কালোমাথা মাজরার কীড়া জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো কান্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে।

    আলোর চার পাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মথগুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে।
    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    নিয়মিতভাবে ক্ষেত পর্যবেক্ষণের সময় মাজরা পোকার মথ ও ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেললে মাজরা পোকার সংখ্যা ও ক্ষতি অনেক কমে যায়। থোর আসার পূর্ব পর্যন্ত হাতজাল দিয়ে মথ ধরে ধ্বংস করা যায়।
    #    ক্ষেতের মধ্যে ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির বসার সুযোগ করে দিলে এরা পূর্ণবয়স্ক মথ খেয়ে এদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলে।
    #    মাজরা পোকার পূর্ণ বয়স্ক মথের প্রাদুর্ভাব যখন বেড়ে যায় তখন ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে মাজরা পোকার মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়।
    #    যে সব অঞ্চলে হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশী, সে সব এলাকায় সম্ভব হলে চান্দিনার (বি আর ১) মত হলুদ মাজরা পোকা প্রতিরোধ সম্পন্ন জাতের ধান চাষ করে আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
    #    ধানের জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা ৫ ভাগ মরা শীষ পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক   (যেমন- ডায়াজিনন ৬০ ইসি, কার্বোফুরান ৫জি, ফেনিট্রথিয়ন ৫০ ইসি ইত্যাদি) ব্যবহার করা।

    গলমাছি বা নলিমাছি 
    এ পোকার আক্রামণের ফলে ধান গাছের মাঝখানের পাতাটা পিঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এ জন্য এ পোকার ক্ষতির নমুনাকে ‘পিঁয়াজ পাতা গল’ বা ‘নল’ বলা হয়ে থাকে। এ গলের বা নলের প্রথমাবস্থায় রং হালকা উজ্জ¦ল সাদা বলে একে ‘সিলভার শুট’ বা ‘রূপালী পাতা’ বলা হয়। পেঁয়াজ পাতা গল বড় বা ছোট হতে পারে। ছোট হলে সনাক্ত করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। গল হলে সে গাছে আর শীষ বের হয় না। তবে গাছে কাইচ থোড় এসে গেলে গলমাছি আর গল সৃষ্টি করতে পারেনা।

    গাছের মাঝখানের পাতাটা গল বা পিঁয়াজ পাতার মত হয়ে যায়। তারই গোড়ায় বসে গলমাছির কীড়াগুলো খায়। কীড়াগুলো এই গলের মধ্যেই পুত্তলীতে পরিণত হয় এবং এই গলের একেবারে ওপরে ছিদ্র করে পুত্তলী থেকে পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি বেরিয়ে আসে। শুধু পুত্তলীর কোষটা সেখানে লেগে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি দেখতে একটা মশার মত। স্ত্রী গলমাছির পেটটা উজ্জল লাল রঙের হয়। এরা রাতে আলোতে আসে, কিন্তু দিনের বেলায় বের হয় না। স্ত্রী গলমাছি সাধারণতঃ পাতার নীচের পাশে ডিম পাড়ে, তবে মাঝে মধ্যে পাতার খোলের উপরও ডিম পাড়ে।

    গলমাছির বাৎসরিক বংশবৃদ্ধি মৌসুমী আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শুষ্ক মৌসুমে গলমাছি নির্জীব থাকে এবং ঝরা ধান বা ঘাসের মধ্যে পুত্তলী অবস্থায় বেঁচে থাকে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ঘাস জাতীয় বিকল্প গাছের খাদ্য খেয়ে এক বা একাধিক বংশ অতিক্রম করে।  ঘাস জাতীয় গাছে গলমাছির এক একটি জীবনচক্র সম্পূর্ণ হতে ৯-১৪ দিন এবং ধানের ওপর ৯-২৪ দিন সময় লাগে। ধানের চারা অবস্থা থেকে যদি আক্রমণ শুরু হয় তাহলে কাইচ থোড় অবস্থা আসা পর্যন্ত সময়ে এ পোকা কয়েকবার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে। যে সমস্ত অঞ্চলে শুধু শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান, সে সব অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের আগাম ধান ক্ষতি এড়িয়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে রোপণ করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতাভুক্ত ধানক্ষেত আক্রান্ত হতে পারে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক  গলমাছি ধরে ধ্বংস করা।
    #    শতকরা ৫ ভাগ পিঁয়াজ পাতার মতো হয়ে গেলে অনুমোদিত  কীটনাশক ব্যবহার করা।

    পাতামাছি
    পাতা মাছির কীড়া ধান গাছের মাঝখানের পাতা থেকে পুরোপুরি বের হওয়ার আগেই পাতার পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে, ফলে ঐ অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মাঝখানের পাতা যত বাড়তে থাকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ততই স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। পাতামাছির এই ধরনের ক্ষতির ফলে কুশী কম হয় এবং ধান পাকতে বাড়তি সময় লাগতে পারে। চারা থেকে শুরু করে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত ধান গাছ এই পোকা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যে সমস্ত ক্ষেতে প্রায় সব সময়ই দাঁড়ানো পানি থাকে সে সব ক্ষেতেই এই পোকা বেশী আক্রমণ করে।

    পূর্ণ বয়স্ক পাতা মাছি ২ মিলিমিটার লম্বা হয়। এরা পাতার উপরে একটা করে ডিম পাড়ে। ডিম ফোটার পর কীড়াগুলো কান্ডের মাঝখানে ঢুকে কান্ডের ভেতরে অবস্থিত কচি মাঝ পাতার পাশ থেকে খেতে শুরু করে। কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে কচি পাতার রঙের মতোই সবুজ মিশ্রিত হলদে রঙের হয়ে থাকে। এরা গাছের বাইরের পাতার খোলে এসে পুত্তলীতে পরিণত হয়। পাতামাছির জীবনচক্র ৪ সপ্তাহে পূর্ণ হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    আক্রান্ত জমি থেকে দাঁড়ানো পানি সরিয়ে দেয়া।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

    পামরী পোকা
    পূর্ণবয়স্ক পামরী পোকার গায়ের রং কালো এবং পিঠে কাঁটা আছে। পূর্ণবয়স্ক ও তাদের কীড়াগুলো উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে। পূর্ণবয়স্ক পামরী পোকা পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতার ওপর লম্বালম্বি কয়েকটি সমান্তরাল দাগ দেখতে পাওয়া যায়। বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের পাতাগুলো শুকিয়ে পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়। এরা পাতার উপরের সবুজ অংশ এমন ভাবে খায় যে শুধু নীচের পর্দাটা বাকী থাকে। একটি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতে অনেক পূর্ণ বয়স্ক পামরী পোকা দেখা  যেতে পারে। পূর্ণ বয়স্ক পোকাগুলো পূর্ববর্তী ধান ফসল থেকে নতুন ক্ষেত আক্রমণ করে। সাধারণতঃ বাড়ন্ত  গাছ আক্রান্ত বেশী হয় এবং ধান পাকার সময় পোকা থাকে না। স্ত্রী পামরী পোকা পাতার নীচের দিকে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার দুই পর্দার মধ্যে সুড়ঙ্গ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অনেকগুলো কীড়া এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা শুকিয়ে যায়। কীড়া এবং  পুত্তলীগুলো সুড়ঙ্গের মধ্যেই থাকে। পামরী পোকা  ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে জীবন চক্র সম্পূর্ণ করে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    হাতজাল বা গামছা দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলুন ।
    #   গাছে কুশী ছাড়ার শেষ সময় পর্যন্ত পাতার গোড়ার ২-৩ সেমি (প্রায় ১ ইঞ্চি) উপর থেকে ছেটে দিয়ে শতকরা ৭৫-৯২টা পামরী পোকার কীড়া  মেরে ফেলা যায় এবং পরবর্তী আক্রমণ রোধ করা যায়।
    #   শতকরা ৩৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অথবা প্রতি গোছা ধান গাছে ৪টি পূর্ণবয়স্ক পোকা থাকলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন।
    চুংগী পোকা 
    ধানগাছের কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা আসার আগে কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ লম্বালম্বি ভাবে এমন করে কুরে কুরে খায় যে শুধু মাত্র উপরের পর্দাটা বাকী থাকে। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছের পাতা সাদা দেখা যায়। চারা অবস্থায় এ পোকা বেশী ক্ষতি করে।

    পূর্ণবয়স্ক চুংগীপোকা ৬ মিলিমিটার লম্বা এবং ছড়ানো অবস্থায় পাখা ১৫ মিমি চওড়া হয়। চুংগীপোকা রাতের বেলায় তৎপর এবং আলোতে আকর্ষিত হয়। গাছের নীচের দিকের পাতার পিছন পিঠে এরা ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো বড় চারাগাছ এবং নুতন রোয়া ক্ষেতে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা পাতার উপরের দিকটা কেটে চুংগী তৈরী করে এবং এর মধ্যে থাকে। কাটা পাতা দিয়ে তৈরী চুংগীগুলো বাতাসে  বা পানিতে ভেসে ক্ষেতের এক পাশে জমা হয় এবং দেখলে মনে হয় যেন কাঁচি দিয়ে পাতাগুলো কুচি করে কেউ কেটে ফেলেছে। চুংগী পোকা প্রায় ৩৫ দিনে এক বার জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #   চুংগী পোকার কীড়া পানি ছাড়া শুকনো জমিতে বাঁচতে পারে না। তাই আক্রান্ত ক্ষেতের পানি সরিয়ে দিয়ে সম্ভব হলে কয়েকদিন জমি শুকনো রাখতে পারলে এ পোকার সংখ্যা কমানো এবং ক্ষতি রোধ করা যায়।
    #    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
    #    চুংগীকৃত পাতা জমি থেকে সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা ।

    পাতা  মোড়ানো পোকা 
    এরা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে পাওযার মত দেখায়। ক্ষতিগ্রস্থ  পাতার কিনার দিয়ে বিশেষ করে পাতার লালচে রেখা রোগ শুরু হতে পারে।

    পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
    #    জমিতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্যে পূর্ণ বয়স্ক মথ দমন করা।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

    লেদা পোকা 
    লেদা পোকা কেটে কেটে  খায়  বলে ইংরেজীতে এদের কাটওয়ার্ম বলে। এই প্রজাতির পোকারা সাধারণতঃ শুকনো ক্ষেতের জন্য বেশী ক্ষতিকর। কারণ এদের জীবন চক্র শেষ করার জন্য শুকনো জমির দরকার হয়। পার্শ্ববর্তী ঘাসের জমি থেকে লেদা পোকার কীড়া নীচু, ভিজা জমির ধানক্ষেত আক্রমণ করে। প্রথমাবস্থায় কীড়াগুলো শুধু পাতাই খায়, কিন্তু বয়স্ক কীড়া সম্পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলতে পারে। এরা চারা গাছের গোড়াও কাটে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক  মথ ধরে মেরে ফেলুন।
    #    ধান কাটার পর ক্ষেতের নাড়া পুডিয়ে দিলে বা জমি চাষ করে এ পোকার সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
    #    আক্রান্ত ক্ষেত সেচ দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে এবং পাখির খাওয়ার জন্য ক্ষেতে ডালাপালা পুঁতে দিয়েও এদের সংখ্যা কমানো যায়।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

    লম্বাশুঁড় উরচুংগা
    এ পোকার পূর্ণবয়স্ক  ও বাচ্চাগুলো ধানের পাতা এমনভাবে খায় যে পাতার কিনারা ও শিরাগুলো শুধু বাকি থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত পাতাগুলো জানালার মত ঝাঝরা হয়ে যায়।

    ঘাসফড়িং 
    পূর্ণ বয়স্ক ঘাসফড়িং ও বাচ্চা উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে থাকে। এরা ধানের পাতার পাশ থেকে শিরা পর্যন্ত খায়। ঘাসফড়িং  এর বিভিন্ন প্রজাতি এক সাথে অনেক সংখ্যায় ক্ষেত আক্রমণ করে। তাদেরকে ইংরেজীতে লোকাষ্ট এবং বাংলায় পংগপাল বলা হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলা।
    #    ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির সাহায্য নেয়া।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

    সবুজ-শুঁড় লেদা পোকা 
    পূর্ণবয়স্ক  মথ পাতার ওপর ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো সবুজ রঙের এবং মাথার উপর এবং লেজের দিকে শিং এর মতো এক জোড়া করে শুড় আছে। শুধুমাত্র কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেয়ে ক্ষতি করে থাকে।

    ঘোড়া পোকা সবুজ সেমিলুপার 
    এ পোকার কীড়াগুলোও সবুজ-শুঁড় লেদা পোকার মত বড় কিন্তু মাথা বা লেজে শিং নেই। কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খায়। এরা চারা অবস্থা থেকে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত বেশী ক্ষতি করে থাকে। কীড়াগুলো পিঠ কুচকে চলে।

    দমন ব্যবস্থাপনা 
    #    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¯ক মথ ধরে মেরে ফলা।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক ব্যবহার করা।

    কীপার পোকা
    এ পোকার কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেতে খেতে মধ্য শিরার দিকে আসে (ছবি ৩৩)। সবুজ-শুড় লেদা পোকা, সেমিলুপার এবং এ পোকার খাওয়ার ধরন ও ক্ষতির নমুনা একই রকম।

    পূর্ণবয়স্ক কীপার একটি মথ। এর শুঁড় দুটো দেখতে অনেকটা আংটার মত (ছবি ৩৫)। এরা বেশ তাড়াতাড়ি আঁকা-বাঁকা ভাবে ওড়ে। এ পোকার পুত্তলী মোড়ানো পাতার সাথে রেশমী সুতার মত আঠা দিয়ে আটকানো থাকে (ছবি ৩৪)।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    আলোক ফাঁদের সাহায্যে  পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
    #    শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক ব্যবহার করা।

    সবুজ পাতা ফড়িং 
    সবুজ পাতা ফড়িং ধান উৎপাদনকারী প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা ধান গাছের পাতা থেকে রস শুষে খায়। এরা বেটে ধান, ক্ষণস্থায়ী হলদে রোগ, টুংরো এবং হলুদ বেটে নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। সাধারণতঃ টুংরো রোগ বেশি ছড়ায়। পূর্ণবয়স্ক সবুজ পাতা ফড়িং ৩-৫ মিলিমিটার লম্বা এবং গায়ে উজ্জ¦ল সবুজ রঙের সাথে বিভিন্ন কাল দাগ থাকে। এরা পাতার মধ্য শিরায় বা পাতার খোলে ডিম পাড়ে। এদের বাচ্চাগুলো পাঁচ বার খোলস বদলায় এবং এদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের দাগ আছে ।

    আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং
    এরা বেটে গল, টুংরো এবং কমলা পাতা নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায় এবং পাতার রস শুষে খায়। পূর্ণবয়স্ক ফড়িং-এর পাখায় আঁকাবাঁকা দাগ আছে। বাচ্চাগুলো হলদে ধূসর রঙের।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদে সবুজ পাতাফড়িং এবং আঁকাবাঁকা পাতাফড়িং আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
    #    হাতজাল দ্বারা পোকা ধরে মেরে ফেলা।
    #    সবুজ পাতা ফড়িং ও টুংরো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন ধানের জাতের চাষ করা।
    #    হাতজালের প্রতি টানে যদি একটি সবুজ পাতাফড়িং পাওয়া যায় এবং আশেপাশে টুংরো রোগাক্রান্ত গাছ থাকে তাহলে বীজতলা ও ধানের জমিতে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

    থ্রিপ্স 
    বাংলাদেশে ছয়টি প্রজাতির থ্রিপ্স পোকা ধান গাছ আক্রমণ করে। পূর্ণবয়স্ক থ্রিপ্স পোকা এবং তাদের বাচ্চারা পাতার উপরে ক্ষত সৃষ্টি করে পাতার রস শুষে খায়। ফলে পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়ে যায়। পাতায় খাওয়ার জায়গাটা হলদে থেকে লাল দেখা যায়। থ্রিপ্স পোকা ধানের চারা অবস্থায় এবং কুশী ছাড়া অবস্থায়  আক্রমণ করতে পারে। যে সমস্ত জমিতে সব সময় দাঁড়ানো পানি থাকে না, সাধারণতঃ সে সব ক্ষেতে থ্রিপ্স-এর আক্রমণ বেশী হয়।

    পূর্ণবয়স্ক থ্রিপ্স পোকা খুবই ছোট, ১-২ মিলিমিটার লম্বা এবং এদের শুড়ে ৫-৮টা ভাগ আছে। এরা পাখা বিশিষ্ট বা পাখা বিহীন হতে পারে। পাখা বিশিষ্ট পোকার পাখাগুলো সরু, পিঠের উপর লম্বালম্বিভাবে বিছানো থাকে এবং পাখার পাশে কাঁটা আছে। ডিম পাড়ার জন্য এী পোকার পেছনে করাতের মত ধারালো একটা অংগ আছে যা দিয়ে এরা পাতার মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে দিতে পারে। ডিমগুলো সব একই আকারের, খুবই ছোট, এক মিলিমিটারের চার ভাগের এক ভাগ লম্বা এবং দশ ভাগের এক ভাগ চওড়া। প্রথম অবস্থায় ডিমগুলোর রং স্বচ্ছ থাকে এবং ডিম ফোটার আগে আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যায়। ডিম থেকে সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো প্রথমে স্বচ্ছ এবং পরে হলদে রং ধারণ করে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ নিশ্চল থাকে, পরে মাঝখানের কচি পাতা, পাতার খোল এবং নতুন বের হওয়া ধানের শীষ খাওয়া শুরু করে এবং পূর্ণ বয়¯ক পোকায় পরিণত হওয়ার পরও তাদের জীবনকাল সেখানেই কাটায়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    নাইট্রোজেন জাতীয় সার, যেমন ইউরিয়া কিছু পরিমাণ উপরি প্রয়োগ করে এই পোকার ক্ষতি কিছুটা রোধ করা যায়।
    #    থ্রিপ্স পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত জমির শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

    বাদামী গাছফড়িং
    যে সমস্ত ধানের জাতে বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই সে সব জাতের ধানে এরা খুব তাড়াতাড়ি বংশ বৃদ্ধি করে, ফলে এ পোকার সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, আক্রান্ত ক্ষেতে বাজ পড়ার মত হপারবার্ণ - এর সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত গাছগুলো প্রথমে হলদে এবং পরে শুকিয়ে মারা যায়। বাদামী গাছফড়িং গ্রাসিস্টান্ট, র‌্যাগেটস্টান্ট ও উইল্টেডস্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এ সমস্ত রোগ দেখা যায়নি। লম্বা পাখাবিশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক বাদামী ফড়িংগুলো প্রথমে ধান ক্ষেত আক্রান্ত করে। এরা পাতার খোলে এবং পাতার মধ্য শিরায় ডিম পাড়ে। ডিমগুলোর ওপর পাতলা চওড়া একটা আবরণ থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা (নিমফ) বের হতে ৭-৯ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৫ বার খোলস বদলায় এবং পূর্ণবয়¤ক ফড়িং এ পরিণত হতে ১৩-১৫ দিন সময় নেয়। প্রথম পর্যায়ের (ইন¯টার) বাচ্চাগুলোর রং সাদা এবং পরের পর্যায়ের বাচ্চাগুলো বাদামী। বাচ্চা থেকে পূর্ণবয়¯ক বাদামী গাছফড়িং ছোট পাখা এবং লম্বা পাখা বিশিষ্ট হতে পারে। ধানে শীষ আসার সময় ছোট পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাই বেশী থাকে এবং স্ত্রী পোকাগুলো সাধারণত: গাছের গোড়ার দিকে বেশি থাকে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লম্বা পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে, যারা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়ে যেতে পারে।

    দমন ব্যবস্থাপনা 
    #    যে সব এলাকায় সব সময় বাদামী গাছফড়িং এর উপদ্রব হয় সে সব এলাকায় তাড়াতাড়ি পাকে (যেমন চান্দিনা) এমন জাতের ধান চাষ করা।
    #    ধানের চারা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাগানো।
    #    জমিতে পোকা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা।
    #    উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ পরিহার করা ।
    #    বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন জাত  ব্রি ধান-৩৫ চাষ করা।
    #    ক্ষেতে শতকরা ৫০ ভাগ গাছে অন্ততঃ একটি মাকড়সা থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ না করা।
    #    শতকরা ৫০ ভাগ ধান গাছে ২-৪টি ডিমওয়ালা স্ত্রী পোকা অথবা ১০টি বাচ্চা পোকা প্রতি গোছায় পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

    সাদা পিঠ গাছ ফড়িং 
    অধিকাংশ সময় বাদামী গাছ ফড়িং এর সাথে এদের দেখতে পাওয়া যায় এবং সেজন্যে এ দু’জাতের পোকাকে সনাক্ত করতে ভুল হয়। সাদা পিঠ গাছ ফড়িং-এর বাচ্চাগুলো (নিমফ্) সাদা থেকে বাদামী কালো ও সাদা মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক ফড়িংগুলো ৫ মিলিমিটার লম্বা এবং তাদের পিঠের ওপর একটা সাদা লম্বা দাগ আছে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ফড়িংগুলোই শুধু ছোট পাখা বিশিষ্ট। সাদা পিঠ গাছ ফড়িং কোন ভাইরাস রোগ ছড়ায় না কিন্তু গাছের রস শুষে খেয়ে হপারবার্ণ সৃষ্টি করে। এতে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মত হতে পারে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    এ পোকা দমনের জন্য বাদামী গাছ ফড়িংয়ের জন্য উল্লেখিত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে এবং
    #    সাদাপিঠ গাছ ফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন জাত যেমন বিআর ৬, ১৪, ২৩, ২৬ ও ব্রি ধান ২৭, ৩৩ চাষ করা যেতে পারে।

    ছাতরা পোকা
    শুকনো আবহাওয়ায় বা খরার সময়ে এবং যে সমস্ত জমিতে বৃষ্টির পানি মোটেই দাঁড়াতে পারে না সে ধরনের অবস্থায় ছাতরা পোকার আক্রমণ বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা গাছের রস শুষে খাওয়ার ফলে গাছ খাটো  হয়ে যায়। আক্রমণ বেশী হলে ধানের শীষ বের হয় না। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছগুলো জায়গায় জায়গায় বসে গেছে বলে মনে হয়।

    স্ত্রী ছাতরা পোকা খুব ছোট, লালচে সাদা রঙের, নরম দেহবিশিষ্ট, পাখাহীন এবং গায়ে সাদা মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। এরাই গাছের ক্ষতি করে। এক সাথে অনেকগুলো ছাতরা পোকা গাছের কান্ড ও খোল এবং পাতার খোলের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকে। পুরুষ পোকা ¯এী পোকার অনুপাতে সংখ্যায় খুবই কম বলে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। এদের দু’টো পাখা আছে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #  আক্রমণের প্রথম দিকে সনাক্ত করতে পারলে আক্রান্ত গাছগুলো উপরে নষ্ট করে ফেলে এ পোকার আক্রমণ ও ক্ষতি ফলপ্রসূভাবে কমানো যায়।
    #   শুধুমাত্র আক্রান্ত জায়গায় ভাল করে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করলে দমন খরচ কম হয়।

    গান্ধি পোকা 
    গান্ধি পোকা ধানের দানা আক্রমণ করে। পূর্ণবয়স্ক এবং বাচ্চা পোকা (নিম্ফ্) উভয়েই ধানের ক্ষতি করে। ধানের দানায় যখন দুধ সৃষ্টি হয় তখন ক্ষতি করলে ধান চিটা হয়ে যায়। এরপরে আক্রমণ করলে ধানের মান খারাপ হয়ে যায় এবং চাল ভেঙ্গে যায়। পূর্ণবয়¤ক গান্ধি পোকা ধূসর রঙের এবং কিছুটা সরু। পাগুলো ও শুঁড়দুটো লম্বা। এরা ধানের পাতা ও শীষের ওপর সারি করে ডিম পাড়ে। সবুজ রঙের বাচ্চা এবং পূর্ণ বয়¤ক গান্ধি পোকার গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা 
    #    এ পোকার সংখ্যা যখন খুব বেড়ে যায় তখন ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
    #    ধানের প্রতি গোছায় ২-৩টি গান্ধি পোকা দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন। কীটনাশক বিকাল বেলায় প্রয়োগ করতে হবে।

    শীষকাটা লেদাপোকা 
    এ ধরনের পোকার স্বভাব অনুযায়ী এরা একসংগে বহু সংখ্যায় থাকে বলে ইংরেজীতে এদের আর্মি ওয়ার্ম বলে। এরা এক ক্ষেত খেয়ে আর এক ক্ষেত আক্রমণ করে। লেদা পোকা বিভিন্ন জাতের ঘাস খায়। শুধু কীড়াগুলো ক্ষতি করতে পারে (ছবি ৫৫)। কীড়াগুলো প্রাথমিক অবস্থায় পাতার পাশ থেকে কেটে খায়। কীড়াগুলো বড় হলে আধা পাকা বা পাকা ধানের শীষের গোড়া থেকে কেটে দেয় এবং এজন্য এর নাম শীষকাটা লেদা পোকা। বোনা ও রোপা আমনের এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পোকা।

    দমন ব্যবস্থাপনা 
    #   ধান কাটার পর এ পোকার কীড়া ও পুত্তলী ক্ষেতের নাড়া বা মাটির ফাটলের মধ্যে থাকে। তাই ধান কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে দিয়ে বা ঐ ক্ষেত চাষ করে ফেললে পুত্তলী ও কীড়া মারা যায় এবং পরবর্তী মৌসুমে এ পোকার সংখ্যা সামগ্রিকভাবে কমানো যায়।
    #    বাঁশ দিয়ে পরিপক্ক ধান হেলিয়ে বা শুইয়ে দিলে আক্রমণ কমে যায়।
    #    ক্ষেতের চারপাশে নালা করে সেখানে কেরোসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে রাখলে কীড়া আক্রান্ত ক্ষেত থেকে আসতে পারে না।
    #    এ ছাড়া আক্রান্ত ক্ষেতে একটু বেশী করে সেচ এবং পাখির খাওয়ার সুবিধের জন্য ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ডালপালা পুঁতে দিয়ে এ পোকার সংখ্যা কমানো যায়।
    #   ধানের ক্ষেতে প্রতি ১০ বর্গমিটারে ২-৫টি কীড়া পাওয়া গেলে কীটনাশক ব্যবহার করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে  পাকা ধানে যেন কীটনাশক প্রয়োগ করা না হয়।

    উরচুংগা 
    উরচুংগা গাছের গোড়া কেটে দেয়, ফলে গাছ মারা যায়। অনেক সময় এদের ক্ষতি মাজরা পোকার ক্ষতির সাথে ভুল হতে পারে। উরচুংগা গাছের নতুন শিকড় এবং মাটির নীচে গাছের গোড়া খেয়ে ফেলে। কিন্তু মাজরা পোকা কান্ডের ভেতরটা খায়। পানি আটকে রাখা যায় না এমন ধান ক্ষেতে উরচুংগা একটা সমস্যা। এ পোকা তখনই আক্রমণ করে যখন ক্ষেতে আর পানি থাকে না, অথবা স্থানে স্থানে যখন পানি কম বেশী হয় এবং মাটি দেখা যায়। ক্ষেত পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিলে উরচুংগা আইলে বা উঁচু জায়গায় চলে যায়। সেখানে মাটির নীচে শক্ত স্থানে ডিম পাড়ে।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #    সেচ দিয়ে ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়ে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
    #   চালের গুড়া ও কীটনাশকের সংমিশ্রণে তৈরি বিষটোপ ধানের জমিতে বা আইলে ছিটিয়ে দিয়ে উরচুংগা দমন করা যেতে পারে।
    #  বিষটোপের পরিবর্তে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

    গুদামজাত শস্যের পোকা 
    গুদামজাত বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও বীজ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে খাদ্য শস্যের ওজন কমে যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং পুষ্টিমান হ্রাস পায়। এ ছাড়া খাদ্য দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয় এবং বাজারমূল্য হ্রাস পায়। প্রায় ৬০ টিরও বেশী পোকা গুদামজাত শস্যে ক্ষতি করে থাকে। কয়েকটি প্রধান অনিষ্টকারী পোকার বিবরণ দেয়া হলো।

    কেড়ি পোকা
    পূর্ণবয়স্ক ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার  সামনের দিকে লম্বা শুঁড় আছে। এই পোকা শস্যদানাতে শুঁড়ের সাহায্যে গর্ত করে ভিতরের শাঁস খায়।


    লেসার গ্রেইন বোরার 
    কীড়া ও পরিণত পোকা উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে (ছবি ৫৮)। আকারে ছোট, মাথা গোল ও গ্রীবা নিচের দিকে নোয়ানো, তাই উপর থেকে দেখলে চোখে পড়ে না। এ পোকার খুব পেটুক প্রকৃতির এবং শস্যদানার ভিতরের অংশ কুড়ে কুড়ে খেয়ে গুঁড়ো করে ফেলে।

    অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ 
    শুধুমাত্র কীড়া ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকা ছোট, হালকা খয়েরী রংয়ের এবং সামনের পাখার কয়েকটি দাগ দেখা যায় (ছবি ৫৯)। পিছনের পাখার শীর্ষপ্রান্ত বেশ চোখা। শস্যদানার ভিতর ছিদ্র করে ঢুকে শাঁস (বহফড়ংঢ়বৎস) খেতে থাকে এবং পুত্তলী পর্যন্ত সেখানে থাকে।

    রেড ফ্লাউওয়ার বিট্ল 
    পরিণত পোকা ও  কীড়া উভয়ই ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকা আকারে খুবই ছোট এবং লালচে বাদামী রঙের। এ পোকা দানাশস্যের গুঁড়া (আটা, ময়দা, সুজি) এবং ভ্রুণ খেতে বেশী পছন্দ করে। আক্রান্ত খাদ্যসামগ্রী দুর্গন্ধযুক্ত ও খারাপ স্বাদের হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    #   গুদাম ঘর বা শস্য সংরক্ষণের পাত্র পরি¯কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ফাটল থাকলে তা মেরামত করা। গুদামঘর বায়ূরোধী, ইঁদুরমুক্ত এবং মেঝে আর্দ্রতা প্রতিরোধী হতে হবে। নতুন ও পুরোনো খাদ্যশস্য একত্রে রাখা বা মিশানো যাবে না।
    #  খাদ্য মজুদের ২-৪ সপ্তাহ পূর্বে গুদাম পরি¯কারের পর অনুমোদিত  কীটনাশকের দ্বারা গুদামের মেঝে, দেয়াল, দরজা, উপরের সিলিং প্রভৃতিতে স্প্রে করা যেতে পারে।
    #  কিছু দেশীয় গাছ গাছড়া যেমন- নিম, নিশিন্দা ও বিষকাটালীর পাতা শুকিয়ে গুড়া করে খাদ্য শস্যের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়।
    #  কিছুদিন বিরতি দিয়ে গুদামজাত খাদ্য শস্য রৌদ্রে শুকিয়ে পোকা মাকড়ের আক্রমণ রোধ করা যায়।
    # গুদামজাত শস্যে পোকার আক্রমণ তীব্র হলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা ফসটকসিন (৪-৫ টি ট্যাবলেট/টন খাদ্যশস্য) ব্যবহার করে গুদামঘর স¤পূর্ণরূপে ৩-৪ দিন বন্ধ রাখতে হবে। বিষবা®প মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বিষ বড়ি ব্যবহারের পূর্বে প্রয়োজনীয় সতর্কতা প্রয়োজন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে ব্যবহার  করানো উচিত নয়।

    {বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট}