জীবাণু সার সাধারণত উপকারী অণুজীব দিয়ে প্রস্তুত করা হয় যা বীজের উপর, শিকড় অথবা মাটিতে প্রয়োগ করলে তাদের জৈবিক কার্যকলাপ দ্বারা পুষ্টির প্রাপ্যতা বাড়ায়।
তারা মাটিতে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটায় এবং মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
জীবাণু সারের উপকারিতা :
১. মাটি সমৃদ্ধিকরণ করতে সাহায্য করে।
২. বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে।
৩. মাটি বৈশিষ্ট্য উন্নত করে এবং মাটির উর্বরতা ধরে রাখে।
৪. উর্বরতা স্থায়ীকরণের উপযুক্ত জীবাণু প্রতিরোধক হিসাবে বা জৈব আবর্জনার পচন ঘটিয়ে বা হরমোনের সাহায্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে।
৫. দীর্ঘদিন মাটির উর্বরতা বজায় থাকে।
৬. এরা পরিবেশের বন্ধু সাথে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করেনা।
৭. পুষ্টি উপাদেয় দ্রবনীয়তা বা শোষণের জন্য তা গ্রহণ যোগ্যতা বাড়ে ও সহজলভ্য হয়।
৮. কম দামে পাওয়া যায় ফলে চাষের খরচও কমে।
৯. অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের যোগান হ্রাসে সাহায্য করে।
জীবাণু সারের প্রকারভেদ
১. নাইট্রোজেনের জন্য
- শিম্বগোত্রীয় ফসলের জন্য রাইজোবিয়াম।
- অশিম্বগোত্রীয় ফসলের জন্য আজোসপিরিল্লাম এবং আজোতোব্যাক্টর।
- আখের জন্য শুধুমাত্র এসিটোব্যাক্টর।
- নীচু জমির ধানের জন্য নীল সবুজ শ্যাওলা এবং অ্যাজোলা।
- ঝাউ এবং আলনাস গাছের জন্য ফ্র্যাংকিয়া।
রাইজোবিয়াম
রাইজোবিয়াম মাটির বসবাসকারী একটি ব্যাকটেরিয়া। এরা বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে।
তারা শিম্বগোত্রীয় এবং অশিম্বগোত্রীয় মিথোজীবী সংস্থা গঠন করে যেমন, পারসপোনিয়া।
শিকড়ের শাখাপ্রশাখা দিয়ে মূল শিকড়ের মধ্যে রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। তারা শিকড় থেকে একপ্রকার উদ্দীপক রস নিঃসৃত করতে কর্মক্ষম।
এই রঞ্জক পদার্থ গুলি ব্যাকটেরিয়ায় অক্সিজেন সরবরাহ করে নাইট্রোজেনে পরিণত হয় এবং গুটি তৈরী করে।
এই গুটির ভেতর রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে ও নাইট্রোজেনকে নাইট্রোজেনাস আবদ্ধ গুটিতে পরিণত করে।
ব্যাকটেরিয়া বা গাছ কেউই আলাদা ভাবে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারেনা।
এই গুটি তৈরীকারী ব্যাকটেরিয়া দুইটি জাতের - যেমন রাইজোবিয়াম ও ব্রাডিরাইজোবিয়াম এবং দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রাইজোবিয়াকে রাইজোবিয়াম বলে।
টেবিল : বিভিন্ন ফসলের জন্য উপযুক্ত রাইজোবিয়াম স্পিসিস
রাইজোবিয়াম স্পিসিস | শস্য |
আর. লীগুমিনোসেরাম | মটর (পাইসাম), খেসারী, ভিসিয়া, মুসুর (লেন্স) |
আর. ট্রিফলি | বারসীম (ট্রিফলিয়াম) |
আর. ফাসিওলি | কিডনী বিন (ফাঁসিওলাস) |
আর. লুপিনি | লুপিনাস, অর্নিথোপাস্ |
আর. জেপোনিকাম | সয়াবিন (গ্লাইসিন) |
আর মেলিলোটি | মেলিলোটাস, লুসার্ন (মেডিকাগো), মেথি গাছ (ট্রাইগোনেল্লা) |
রাইজোবিয়াম স্পিসিস | বরবটি, ক্লাস্টার বিন, মুগ বিন, কলাই, অড়হর, চীনাবাদাম, মথবিন, ধৈঞ্চা, তিসি, গ্লাইরিসিডিয়া, বাবলা ইত্যাদি |
রাইজোবিয়াম টিকাকরণ পদ্ধতি :
রাইজোবিয়ামের টিকা করণের দ্বারা বীজ শোধন করা সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি। সংযুক্তির জন্য একপ্রকার আঠা ব্যবহার করা হয়।
এক হেক্টর জমিতে শিম্ব গোত্রীয় ফসলের বীজ চাষের জন্য ৯০০ গ্রাম এই ব্যাক্টেরিয়া মিশ্রিত মাটি প্রয়োজন হয়।
১০ শতাংশ গুড়ের সংমিশ্রন সাধারণত বীজের উপর আঠা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। প্রথমে এই গুড়ের মিশ্রণ বীজের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফলে বীজের উপর একটি পাতলা স্তরের সৃষ্টি হয়। স্তরের গুড় মিশ্রিত ফাইবারের ঘনত্ব যথোপযুক্ত হলে ব্যাকটেরিয়ার টিকাকরণের জন্য বীজের উপর তা ছিটিয়ে দিতে হবে এবং
ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। পরে টিকাকৃত বীজগুলি একটি পলিথিনের উপর বিছিয়ে একরাত্রির জন্য ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে ।
অ্যাজোটোব্যক্টর :
অ্যাজোটোব্যক্টর ব্যাকটেরিয়া পরভোজী ও মুক্তভাবে বসবাসকারী। এটি ক্ষারীয় কিংবা নিরপেক্ষ মাটিতে থাকে।
ভারতবর্ষের সমস্ত আবাদি জমিতে অ্যাজোটোব্যক্টর কোরাক্কমের উপস্থিতি সাধারণ ভাবে লক্ষণীয়। পরিবেশের মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ করা ছাড়াও
এটি বিভিন্ন ধরণের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন যেমন অক্সিন, জিব্বারেলিন এবং বিভিন্ন ভিটামিন প্রভৃতির সমন্বয় সাধন করে।
অ্যাজোটোব্যক্টর ব্যাকটেরিয়া কিছু প্রজাতির মধ্যে কিছু কিছু ছত্রাকের উপর ছত্রাকনাশক কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়।
ধান, ভুট্টা, তুলা, আখ, যব, সবজি ও বিভিন্ন বাগিচা ফসলের উপর অ্যাজোটোব্যক্টরের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
অনাবাদি জমিতে এই ব্যাকটেরিয়াটির উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু মাটিতে জৈব সারের উপস্থিতি ব্যাক্টেরিয়াটির গুণন ক্ষমতা ও
নাইট্রোজেন অবদ্ধিকরণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
মাঠে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে পেঁয়াজ, বেগুন, টমেটো অথবা বাঁধাকপি প্রভৃতি শস্যের বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে চাষ করার সময় যদি
এই ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা বীজ অথবা চারা গাছের টিকাকরণ করানো যায় তাহলে সুফল পাওয়া যায়।
অ্যাজোটোব্যক্টরের টিকাকরণ দ্বারা সাধারণ জমিতে নাইট্রোজেন সারের পরিমান ১০-২০ শতাংশ হ্রাস করানো যায়।
অ্যাজোসপাইরিলাম :
এরা মুক্ত অমিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া (গুটি তৈরী করতে পারে না কিন্তু শিকড়ে বসবাসকারী জীবাণুর সাথে একটি সংযুক্তি করে।
অ্যাজোসপাইরিলাম প্রজাতির বিশেষত যেমন ভুট্টা, জোয়ার, আখ ইত্যাদি C4 উদ্ভিদ অনেক উদ্ভিদের সাথে একটি সংযুক্তি প্রতিষ্ঠা করে।
এরা অন্যান্য জীবাণুর সাথে খুব সহজেই সংযুক্ত হতে পারে। উচ্চ প্রজাতির গাছের সাথেও একটা সংযুক্তি স্থাপন গাছের সাথে করতে পারে।
এটা শিকড় দিয়ে ঢোকে বা শিকড়ে বসবাস করে, কিন্তু কোনো গুটি দেখতে পাওয়া যায়না। এই ব্যাকটেরিয়াটি প্রতি হেক্টরে ২০ থেকে ৪০ কেজি নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।
এই ব্যাক্টেরিয়াটি গাছের দৈহিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং নিম্নলিখিত প্রজাতিগুলি ২৫-৩০ শতাংশ নাইট্রোজেন সারের সঞ্চয় করে।
অ্যাসিটোব্যক্টর :
অ্যাসিটোব্যক্টর ডিয়াজোট্রফিকস একটি সদ্য আবিষ্কৃত নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়া যা আখের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।
আখের পাতা, কুঁড়ি এবং কাণ্ডের নমুনার পরীক্ষার মাধ্যমে এটিকে আলাদা করে দেখা হয়েছে।
এটি অম্লিক এবং লবণাক্ত এবং সুক্রোজ পছন্দকারী ব্যাকটেরিয়া, যা প্রতি হেক্টরে ২০০ কেজি পর্যন্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ রাখতে পারে।
জমিতে টিকা দেওয়ার পর আখের ফলন বৃদ্ধি পায়। অ্যাসিটোব্যক্টর প্রয়োগ করার পর অক্সিন এবং এন্টিবায়োটিক জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
নীলাভ সবুজ শৈবাল :
নীলাভ সবুজ শৈবালের কয়েকটি প্রজাতি বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।
অ্যানাবিনা ও নষ্টক নামে দুইটি প্রজাতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নীলাভ সবুজ শৈবাল প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫-৪৫ কেজি নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।
নীলাভ সবুজ শৈবালের ভালো বৃদ্ধির জন্য জমিতে ২ থেকে ১০ সেমি জল সবসময় প্রয়োজন।
২৫-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতে এটি বৃদ্ধি পেতে পারে।
উজ্জ্বল সূর্যালোক বৃদ্ধির হার বাড়ে কিন্তু বৃষ্টিপাত এবং মেঘলা আকাশ বৃদ্ধির হার কমায়।
মাটির পিএইচ এর মান যদি ৭ থেকে ৮ এর মধ্যে হয় এবং মাটিতে বেশি পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকলে এই শ্যাওলার বৃদ্ধি ভালো হয়।
২ মি X ২ মি X ০.২৫ মি আকারের লোহার ট্রে তে নীল সবুজ শৈবালের টিকা মিশ্রিত করা হয়।
এই ট্রে গুলো পলিথিনের চাদর মোড়া থাকে।
প্রতিটি ট্রে তে ২০ কেজি মাটি এবং ৪০০ গ্রাম সুপারফসফেট দিয়ে ভরে নিতে হবে।
ট্রে তে নীল সবুজ শৈবাল টিকা থাকে এবং এটা জলে ডোবানো থাকে।
ট্রে তে সাধারণত ৫ - ১০ সেমি জল সব সময় জমিয়ে রাখতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে, একটি পুরু শ্যাওলার গাদ তৈরী হবে।
এই পর্যায়ে, জল বের করে দিয়ে মাটি শুকিয়ে দিতে হবে।
শুকনো নীল সবুজ শৈবালগুলি উঠিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে এবং চাষের জমিতে ব্যবহার করা হয়।
জমিতে ধান রোপনের পর নীল সবুজ শৈবাল টিকা জমিতে প্রয়োগ করা হয়।
প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ কেজি / টিকার প্রয়োজন হয়।
বেশি পরিমানে নাইট্রোজেন স্থায়ীকরণের জন্য, খামারসার ৩-৪ টন/ হেক্টর এবং সুপারফসফেট ২০০ কেজি / হেক্টর প্রয়োগ করা দরকার।
অ্যাজোলা :
অ্যাজোলা পরিষ্কার জলের মুক্ত ভাসমান একধরণের ফার্ন। ভারতের প্রচলিত প্রজাতি হলো অ্যাজোলা পিনাটা। অ্যাজোলা ফার্নের পাতার ভাগের মধ্যে অবস্থিত নীল সবুজ শৈবালের আনাবেইনা প্রজাতি নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে।
অ্যাজোলার একটি পুরু স্তর প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ - ৪০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। নীল - সবুজ শ্যাওলাগুলি কম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারেনা।
২০ - ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অ্যাজোলার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। বর্ষাকালের যখন তখন বৃষ্টি ও মেঘাছন্ন আবহাওয়াতে এই শ্যাওলার বৃদ্ধি ভালো হয়।
অ্যাজোলা চাষের জন্য মাটির পিএইচ ৫.৫ - ৭ হওয়া জরুরি।অ্যাজোলা নার্সারি গাছের ছায়াতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। ৪ মি x ২ মি এর ছোট খন্ডে ৩০-৪০ সেমি উচ্চতার আল দিয়ে চারিধার ঘিরে নার্সারি প্রস্তুত করা হয়।
প্লট থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া আটকাতে বাঁধ গুলি প্লাস্টিক - পলিথিন দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। প্লটটির মধ্যে জল দ্বারা পরিপূর্ণ রাখতে হয় এবং প্রতি বর্গমিটার ০.১ - ০.৫ কেজি অ্যাজোলা প্রয়োগ করতে হবে।
পাতা খাওয়া শুককীট এবং অন্যান্য পোকা দমনের জন্য কার্বোফুরণ দানা ১.২ গ্রাম/মিটার২ মাত্রাতে প্রয়োগ করতে হবে।
অ্যাজোলা সবুজ সার হিসাবে এবং দ্বিতীয় ফসল হিসাবে চাষের জমিতে প্রয়োগ করা হয়।
রোপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে প্লাবিত জমিতে অ্যাজোলা সবুজ সার হিসাবে ফসল বৃদ্ধির জন্য চাষ করা হয়।
পরে, জল নিষ্কাশিত করে ভালো ভাবে চাষ দিয়ে অ্যাজোলা মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় ফসল হিসাবে, চারা রোপনের ১ সপ্তাহ পর প্রতি হেক্টর জমিতে ১০০০ - ৫০০০ কেজি অ্যাজোলা প্রয়োগ করলে ভালো হয়।
যখন অ্যাজোলার একটি পুরু চাদর তৈরী হবে তখন পা দিয়ে মাড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
আবার জমিতে অ্যাজোলা দেখা দিলে তা একই ভাবে পা দিয়ে মাড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
অ্যাজোলার ভালো বৃদ্ধির জন্য জমিতে ৫-১০ সেমি জল দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুপারফসফেট ২৫-৫০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ফ্রাঙ্কিয়া :
ফ্রাঙ্কিয়া একধরণের অ্যাকটিনোমাইসিটিস। এরাও বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে।
মিথোজীবি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এরা কয়েকটি অশিম্বগোত্রীয় গাছের শিকড়ে গুটি বা অর্বুদ তৈরী করতে পারে।
যেমন - ঝাউ বা অ্যালনাস। পতিত জমিতে ঝাউ চাষ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ানো যায়।
কৃষি বনায়ন পদ্ধতিতে নাইট্রোজেনের অভাব রয়েছে এমন জমিতে ঝাউগাছ লাগানো যথেষ্ট উপকারী।
ফ্রাঙ্কিয়ার শিকড়ে গুটি তৈরির শুরুতে একটি ছোট ফোলা ভাব দেখা যায় যা শেকড়ের আগায় পরে খাঁজ তৈরী করে এবং থোকা থোকা গুটি আকৃতির সৃষ্টি হয়।
এই অ্যাকটিনোমাইসেটিসের টিকাকরণের ফলে ঝাউ ও অ্যালনাস গাছের বৃদ্ধি, গুটি তৈরী, গুটির নাইট্রোজেন উৎসেচকের কার্যকারিতা ও গুটির শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
২. ফসফরাসের জন্য :
ফসফরাস দ্রবীভূতকারী ছত্রাক : এসপারজিলাস, পেনিসিলিয়াম
ফসফরাস দ্রবীভূতকারী ব্যাকটেরিয়া : ব্যাসিলাস, সিউডোমোনাস
ফসফরাস শোষণকারী : ভেসিকুলার আরবাসকুলার মাইকোরাইজা (ভি এ এম)
বহিঃ মাইকোরাইজা : পিসোলিথাস, রাইজোপোগন
আন্তঃ মাইকোরাইজা: গ্লোমাস, গিগাসপোরা
ফসফরাস ধারণকারী অণুজীব (পি এস এম) :
নাইট্রোজেনের পরের প্রাথমিক খাদ্যমৌল হিসাবে ফসফরাস অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ। বাইরের থেকে প্রয়োগ করা ফসফরাসের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গাছের দ্বারা উদ্ধৃত করা যায়।
বাকি অংশ মাটিতে আবদ্ধ হয়। এই আবদ্ধ ফসফরাস কখনোই সহজলভ্য নয়। এই আবদ্ধ ফসফরাসকে কতগুলি পরভোজী জীবাণু দ্রবীভূত করে এবং জৈব অ্যাসিড ও
উৎসেচক তৈরী করে ফলে দ্রবণীয় ফসফরাস উদ্ভিদ দ্বারা সহজে গৃহীত হয়। এই ধরণের অণুজীবগুলিকে ফসফরাস দ্ৰবীভূতকারী অণুজীব বলা হয়।
যেমন ব্যাসিলাস, অ্যাসপারজিলাস, পেনিসিলিয়াম এবং ট্রাইকোডারমা প্রভৃতি। যখন রক ফসফেটের উপর এই অণুবীজ গুলি বিক্রিয়া ঘটায়, তখন দ্রবণীয় ফসফরাস ও
সাইট্রেটে পরিণত হয়। এই অনুজীবগুলি জৈব আবর্জনায় অবস্থিত জৈব ফসফেট যৌগগুলির ধাতব পরিণতিতে সাহায্য করে।
কম্পোস্ট তৈরির সময় থার্মোফিলিক ধাপের পর এই সব অণুজীবের ব্যবহার কম্পোস্ট প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
নিরপেক্ষ ও ক্ষারীয় মাটিতে এই ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার ও অম্লিক মাটিতে ছত্রাকের ব্যবহার করে বাইরে থেকে প্রয়োগ করা ফসফরাসের গ্রহণ ক্ষমতা উন্নতি ঘটানো যায় এবং
ফসফরাস আবদ্ধিকরণ ও বোধ করা যায়।
ভ্যাসিক্যুলার আরবাসকুলার মাইকোরাইজা :
ছত্রাক ও গাছের শিকড়ের মধ্যে যে পারস্পরিক সংযুক্তি দেখা যায় তা মাইকোরাইজা নামে পরিচিত। একে যে কোনো একটি বাস্তুতন্ত্রে এই মাইকোরাইজার সংহতিগুলি সমস্ত গাছের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।
বিভিন্ন প্রকার ডালজাতীয় ও ঘাস জাতীয় পরিবারের গাছের ক্ষেত্রে এবং ভিএএম এর উপনিবেশন অত্যন্ত সমর্থন যোগ্য।
ভিএএম ফসফরাস, জিঙ্ক এবং সালফারের বদল ঘটাতে সাহায্য করে। এছাড়াও তামা, পটাশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদানের মাটি থেকে শেকড়ে পরিবহন ঘটায়।
এরা গাছের শেকড়ে প্রবেশ করে এবং শেকড় ও আন্তঃকোষের সাথে ছত্রাকের একটি বাধ্যতামূলক আন্তঃসংহতি স্থাপিত হয়।
এরপর একটি থলি তৈরী হয় যেখানে উদ্ভিদ খাদ্য উপাদানগুলি জমা হয় এবং একটি অর্বাসকুলার তৈরী করে সমস্ত পুষ্টি উপাদান গুলি ফানেলের দ্বারা শিকড়ে প্রবেশ করে।
ভিএএম ছত্রাকের হাইফি গুলি অদ্রবণীয় সহজলভ্য নয় এমন ফসফরাসকে দ্রবীভূত করতে পারেনা, অধিকন্তু এই অদ্রবণীয় ফসফরাসের নিজেদের প্রয়োজনে আত্তিকরণ ঘটায়।
এমনকি এই উপাদানগুলির বিভিন্ন ধরণের বদল ঘটিয়ে আশ্রয়দাতার শিকড়ে সরবরাহ করে। ভিএএম ছত্রাক শিকড় দ্বারা গাছের জলশোষণ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটায়।
দুই ধরণের মাইকোরাইজা দেখা যায় : বহিঃ মাইকোরাইজা ও আন্তঃ মাইকোরাইজা।
বহিঃ বা আন্তঃ মাইকোরাইজার ক্ষেত্রে ছত্রাকের হাইফিগুলি শিকড়ের এপিডারমিস ও কর্টেস কোষের মধ্যে বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়। উদ্ভিদ এক্ট মাইকোরাইজার দ্বারা সংক্রামিত হয়।
এন্ডো বা অন্তঃ মাইকোরাইজার তিনটি উপবিভাগ দেখা যায়। এগুলির মধ্যে ভিএএম কৃষি ক্ষেত্রে সব থেকে প্রচলিত একটি নাম।
এরা শিকড়ের কর্টেস অঞ্চলে একটি অভ্যন্তরীণ জালক তৈরী করে যা পরে মাটিতে বিস্তার লাভ করে এবং জল ও পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে।
এই ভিএএম মাইকোরাইজা একবীজপত্রী, বাৎসরিক বা বহুবর্ষজীবি প্রভৃতি গাছের সাথে সংহতি স্থাপন করতে পারে।
খাদ্যশস্য ও ডালজাতীয় শস্যের পর্যায়ক্রমে খামারজাত সারের প্রয়োগ দ্বারা ভিএএম এর কর্ম ক্ষমতা তরান্বিত করা যায়।
আবার রাসায়নিক ছত্রাকনাশকের ব্যবহারে ভিএএম এর স্থায়িত্ব হ্রাস করে।
জৈব সার দ্বারা বীজের টিকাকরণ :
জৈব সার দ্বারা বীজের টিকাকরণের সাথে সাথে উপযুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন শস্যের মূলেও টিকাকরণ করা যায়। মাটিতেও সরাসরি জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জৈব সারের প্রয়োগ পদ্ধতিগুলি নিম্নে বলা হল -
বীজের টিকাকরণ :
এটি অতি প্রচলিত পদ্ধতি। গুড়ের ১০ শতাংশ দ্রবণে জৈব সার মিশিয়ে বীজের টিকাকরণ করা হয়।
মিশ্রিত কাথ বীজের উপর ছড়িয়ে একটি সিমেন্টের মেঝেতে বিছিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া হয় এবং দেখতে হবে বীজের গায়ে চারিদিকে যেন একটি পাতলা আস্তরণ থাকে।
এরপর এই বীজগুলি ছায়ায় সারারাত্রি ধরে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত এক হেক্টর জমিতে ডাল শস্য বীজের জন্য ৭৫০ গ্রাম জৈব সারের প্রয়োজন।
শেকড় ও চারা গাছের টিকা ব্যবস্থাপনা :
চারা রোপনের পূর্বে, চারা গাছের শেকড় ৩০ মিনিট ধরে বায়োফার্টিলাইজার দ্রবণে ডুবিয়ে তারপরে রোপণ করতে হবে।
একএকর জমিতে চারা রোপনের জন্য ২ - ২.৫ কেজি বায়োফার্টিলাইজারের প্রয়োজন হয়।
প্রথমে একটি বালতিতে প্রয়োজন মতো জল নিয়ে বায়োফার্টিলাইজার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর চারা গাছের শেকড়গুলি এই মিশ্রিত জলে ডুবিয়ে টিকাকরণ করে নিতে হবে। এরপরেই মূল জমিতে চারা রোপন করতে হবে।
টমেটো, ধান, পেঁয়াজ এবং বিভিন্ন ধরণের শীতকালীন সবজির (ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি প্রভৃতি) চাষ এই পদ্ধতিতে করলে সুফল পাওয়া যায়।
মাটিতে প্রয়োগ :
সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো শস্যের নির্দিষ্ট স্থানে জীবাণু সার প্রয়োগের প্রয়োজন হলে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ফল, আখ এবং অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়।
ফলের গাছ রোপনের সময় ২০ গ্রাম জীবাণু সার কম্পোস্টের সাথে মিশিয়ে গাছের চারিদিকে রিং বরাবর মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
গাছের পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি ঘটলে আমরা আরো কিছু পরিমাণ জীবাণু সার গাছের রিং বরাবর প্রয়োগ করতে পারি।
জীবাণু সার সরাসরি মাটিতে প্রয়োগ করলে পরিমানে ৪ - ২০ গুন বেশি প্রয়োজন হয়।
জীবাণু সার প্রয়োগের পূর্বে তা ভালোভাবে বিয়োজিত পরিমান মতো খামার সারের সাথে মিশিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে পুষ্টিসাধন করে নিতে হয়।
খামার সার জীবাণু সারের বাহক ও খাদ্য হিসাবে কাজ করে।
স্বটিকাকরণ বা কন্দের টিকাকরণ :
এই পদ্ধতির দ্বারা অ্যাজোটোব্যক্টরের টিকাকরণ সহজে করা যায়। প্রথমে একটি ড্রামে করে ৫০ লিটার জল নিয়ে ৪ - ৫ কেজি জীবাণু সার ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
এক একর জমিতে চারা রোপনের জন্য প্রয়োজনীয় চারা এই মিশ্রিত দ্রবণে ডুবিয়ে নিতে হবে।
ঠিক এই ভাবে, আলু রোপনের পূর্বে উক্ত মিশ্রণে তা ডুবিয়ে নিয়ে ছায়ায় শুকনো করে জমিতে রোপন করতে হবে।
0 comments:
Post a Comment