Friday, July 7, 2017

Tagged Under: , , ,

টিস্যু কালচার

  • Share The Gag
  • টিস্যু কালচার





    টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে ফুলের চারা উৎপাদন

     

    বিদেশি ফুল চাষ করার জন্য বাংলাদেশের ফুলচাষিরা বিদেশ থেকে টিস্যু কালচারের ফুলের চারা এনে ফুল চাষ করছেন। দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের কয়েক কোটি চারার চাহিদা রয়েছে। দেশে প্রাপ্যতার অভাবে ফুলচাষিরা ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার ফুলের চারা কিনে আনেন। ফুলচাষিদের চাহিদার কথা ভেবে রাজশাহীতে অ্যাগ্রোব্যাক নামের একটি টিস্যু কালচার ল্যাব বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চারা উৎপাদন করছে।

    রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় অ্যাগ্রোব্যাক ল্যাবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা, ইউস্টোমা, লিলিয়াম, টিউলিপ, চন্দ্রমলি্লকাসহ বিভিন্ন ফুলের চারা উৎপাদন করছে। তারা সেগুলো কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে সারাদেশের ফুলচাষিরা ফুলচাষে টিস্যুকালচার প্রযুক্তির ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। টিস্যু কালচার ল্যাব পরিদর্শন, হার্ডেনিং হাউসে ফুলের চারার সংরক্ষণ, মাঠপর্যায়ে ফুল উৎপাদন যেন ফুলচাষিদের কাছে আশার আলো জুগিয়েছে। এরকম আরও টিস্যু কালচার সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্র্রি ও ল্যাব গড়ে উঠলে ভারত থেকে আর চারা আনতে হবে না বলে তারা জানিয়েছেন দেশের সেরা ফুলচাষি, ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারাদেশে টিস্যু কালচারের ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান যেভাবে সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন ফুলের যে চারা উৎপাদন শুরু করেছে তাতে ভবিষ্যতে আর ভারত থেকে চারা আনতে হবে না। টিস্যু কালচারের চারা ভারত থেকে কেনা দামের চেয়ে অনেক কম মূল্যে চারা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সারাদেশের ফুলচাষিরা লাভবান হবেন।

    বাংলাদেশে ফুল চাষের জনক ও ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি যশোরের ঝিকরগাছার শের আলী বলেন, টিস্যু কালচারের ফুলের চারা উৎপাদন হওয়ায় তিনি খুব খুশি। সারাদেশে যেন প্রতিষ্ঠানটি চারা সরবরাহ করতে পারে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অ্যাগ্রোব্যাক বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিস্যুকালচারের মাধ্যমে বিভিন্ন ফুলের চারা উৎপাদন এবং সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে।

    অ্যাগ্রোব্যাক টিস্যু কালচার ল্যাবের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও পরিচালক মতিউর রহমান বলেন, আমরা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা, ইউস্টোমা, লিলিয়াম, টিউলিপ, চন্দ্রমলি্লকাসহ বিভিন্ন ফুলের চারা উৎপাদন করছি। কৃষকদের মধ্যে সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে অ্যাগ্রোব্যাক ২০২০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে প্লান্ট টিস্যু কালচার ইন্ডাস্ট্রি গঠন করবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি ।

     

    টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদন করে চমক



    চুয়াডাঙ্গায় টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদন করে চমক দেখিয়েছে মডার্ণ সীড্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ভাইরাসমুক্ত এই পদ্ধতির আলু বীজ সম্পর্কে চাষীদেরকে অবহিত করতে রোববার দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচমাইল বাজারে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    মডার্ণ সিড্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক নির্মল কুমার দে, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ, বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা কামরুল হক ও দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফী মো. রফিকুজ্জামান।

    অন্যান্যেদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কৃষক আমানুল্লাহ ও জাহাঙ্গীর আলম, বীজ ডিলার মঙ্গল হোসেন, মার্কেটিং অফিসার সোহেল আকতার, আবু তালেব, আব্দুর রাজ্জাক ও লাল মোহাম্মদ ।

    প্রধান অতিথি নির্মল কুমার দে বলেন,‘ সাধারণ বীজে আলুর আবাদ করে ভাইরাসের কারণে অনেক চাষী নিঃস্ব হয়ে যায়। অথচ, টিস্যু কালচার পদ্ধতির আলু চাষ করে বেশি লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে। তাই, চাষীদেরকে এই ধরণের বীজ ব্যবহার করা উচিত। ’
    অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১২০ বিঘা জমিতে কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড জাতের এবং এক একর জমির ওপর প্লাননেট, প্রিবিডার ও বিডার জাতের আলুবীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিঘা প্রতি আলু উৎপাদন হবে ১১০ মন।

    টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বাঁশের চারা উৎপাদন



    বাঁশ বহুল ব্যবহৃত একটি উদ্ভিদ। এ যাবৎ বাংলাদেশে ৩৫ প্রজাতির বাঁশ শনাক্ত করা হয়েছে। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বাঁশের চারা উৎপাদন অতি হালের খবর। জীবাণুমুক্ত পরিবেশে বাঁশের কচি অংশ, কঞ্চির পর্ব (পর্ব মধ্যসহ) সুবিধামতো কেটে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফাইটো-হরমোনের উপস্খিতিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে বাঁশের চারা উৎপাদন করা হয়। গবেষণাগারে উৎপাদিত চারা পরে মুক্ত পরিবেশে পলিব্যাগে স্খানান্তর করা হয়।

    পল্লী এলাকার ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রসহ শহরাঞ্চলে শৌখিন আসবাবপত্র তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। বাঁশের কচি পাতা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাঁশের অব্যবহৃত অংশ ও ব্যবহার-পরবর্তী অংশ উৎকৃষ্ট মানের জ্বালানি। আমাদের দেশে কাগজ শিল্পে বাঁশের ব্যবহার অনস্বীকার্য। কর্ণফুলী পেপার মিল সম্পূর্ণ বাঁশনির্ভর।

    পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঁশের ভুমিকা অনস্বীকার্য। বাঁশ বাতাসের মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং আমাদের জীবন বাঁচাতে অত্যাবশ্যকীয় গ্যাসীয় উপাদান অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। ভূমিক্ষয়রোধসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য উদ্ভিদের চেয়ে বাঁশের ভূমিকা বেশি বলে ধরে নেয়া যায়। কারণ অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় বাঁশ বেশি স্খিতিস্খাপক। এ ছাড়া বাঁশের শক্ত এবং জট পাকানো শিকড় নদী ভাঙনসহ ভূমিক্ষয় রোধে বেশি কার্যকরী।

    জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বাঁশবন বিশাল ভূমিকা পালন করে। বৃহদাকৃতির বাঁশ বাগানে বকসহ নানা প্রজাতির পাখি বাসা বাঁধে এবং তাদের জন্য বাঁশ বাগানই অভয়ারণ্য। একটি আদর্শ বাঁশবন একটি ইকোসিস্টেম তুল্য।

    বাঁশের ভেষজ গুণাগুণ আছে বলে লোক মুখে শোনা যায়। উল্লেখ্য, কচি বাঁশের সবুজ ত্বক গুঁড়ো করে চুন মিশিয়ে কাটা ঘায়ে লাগালে রক্তক্ষরণ বìধ হয় এবং কাটা ঘা তাড়াতাড়ি শুকায়।

    চাষপদ্ধতি : বাঁশ বাগান তৈরির জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করতে হবে। উঁচু জমি বাঁশ চাষের জন্য উপযোগী। কারণ কুশি গজানোর সময় বন্যা হলে কুশিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সব প্রকৃতির মাটিতেই বাঁশ জন্মে, তবে বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি বাঁশ চাষের জন্য উপযোগী।

    জমি নির্বাচনের পর মার্চ-এপ্রিল মাসে জমি তিন-চারটি চাষ দিয়ে ১০-১৫ দিন ফেলে রাখতে হবে। ওপরের মাটি শুকিয়ে গেলে মই দিয়ে ঢেলা ভেঙে তারপর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ৩ মিটার পরপর এক হাত লম্বা, এক হাত চওড়া ও এক হাত গভীর আয়তনের গর্ত করতে হবে। গর্তটি পাঁচ-সাত দিন রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে। তারপর প্রতিটি গর্তে ১ কেজি পচা গোবর, ৫ গ্রাম টিএসপি ও ৫ গ্রাম এমওপি সার এবং জমির উপরিতলের মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করে ফেলে রাখতে হবে। যখন ভরাটকৃত গর্তের ওপর বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক বা আগাছা জন্মাতে শুরু করবে তখন বাঁশের চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় অবশ্যই পলিব্যাগ খুলে নিতে হবে। গরু-ছাগল যাতে ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বেড়া দিতে হবে।

    রোপণ-পরবর্তী নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে সেচের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। বেশি ফলনের জন্য তৃতীয় বছর থেকে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে সেচ এবং বাঁশঝাড়ের গোড়া মাটি দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিতে হয়। পঞ্চম বা ষষ্ঠ বছর থেকে প্রতি বছর পরিপক্ব বাঁশ আহরণ করা যায়।

    এক একর জমিতে বাঁশ লাগানো যাবে ৫০৭টি। পঞ্চম বছর থেকে প্রতি বছর প্রত্যেক ঝাড় থেকে কমপক্ষে ছয় থেকে আটটি পরিপক্ব বাঁশ পাওয়া যাবে। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে প্রাপ্ত প্রতিটি চারার দাম ২৫ টাকা হলে ৫০৭টি চারার দাম ১২ হাজার ৬৭৫টাকা।

    আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান বাঁশের অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চল থেকে বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমতাবস্খায় এক দিকে বাঁশের বিভিন্ন প্রজাতি রক্ষা যেমন জরুরি হয়ে পড়েছে অন্য দিকে কাগজ শিল্পসহ বাঁশের অন্যান্য ব্যবহার সচল রাখতে বাঁশের উৎপাদন জরুরি হয়ে পড়েছে।

    বাঁশবাগান তৈরির জন্য আস্ত বাঁশই চারা হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত ৭-১০ মাস বয়স্ক বাঁশ চারা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হিসাব করে দেখা গেছে, গতানুগতিক পন্থায় বাঁশ লাগালে বাঁশের প্রতিটি চারার ক্রয় মূল্য হয় প্রায় ২০০-২৫০ টাকার কাছাকাছি। আস্ত বাঁশ চারা হিসেবে ব্যবহার করলে সে চারা পরিবহনের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। রোপণ-পরবর্তী সময়ে ঝড়ঝাপটা থেকে রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য বাঁশের গোড়ার দিকে তিন-চার হাত রেখে বাকি অংশ কেটে ফেলা হয়। এতে বাঁশের চারা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক চারা রোপণের পর মারা যায়। কিন্তু টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে এসব ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা জীবিত থাকার হার ১০০ ভাগ। প্রতিটি চারা উৎপাদনে খরচও হবে কম। মাত্র ২৫ টাকা। তা ছাড়া বৃহত্তর কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গতানুগতিক পদ্ধতিতে একযোগে কয়েক হাজার চারা বাঁশ পাওয়া বেশ কষ্টকর, কিন্তু টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে তা লাঘব করা সম্ভব।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যামল কুমার রায়ের তত্ত্বাবধানে এবং বিজ্ঞান ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বাঁশের চারা উৎপাদনের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে চারা উৎপাদনসহ বাঁশঝাড় তৈরি করা হয়েছে।

    বাংলাদেশের উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য লবণাক্তসহিষ বাঁশের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু অন্যান্য গাছের তুলনায় বাঁশ বেশি ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে পারে সে জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূল এলাকায় পর্যাপ্ত বাঁশ লাগিয়ে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।

    টিস্যু কালচারে কলার চারা উৎপাদন



    কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ন ফল । জমির পরিমান ও উৎপাদনের দিক থেকে কলার স্থান শীর্ষে । দেশে আবাদী জমির একটি বড় অংশ কলার চাষ হয়ে থাকে । তেউরের(Sucker) মাধ্যেমে প্রধানত কলা গাছের বংশবিস্তার করা হয় এবং প্রচলিত পদ্ভতিতে বছরে ১-২ টি অসি তেউর পাওয়া যায় । তাই বানিজ্যিকভাবে চাষের জন্য ভালো চারা প্রাপ্তি হয়ে পড়ে ।তাই অধিক পরিমানে নিরোগ চারা উৎপাদনে টিস্যু কালচার পদ্ধতি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রাথমিক পর্যায়ে চারা ছোট থাকে বিধায়, স্থানান্তরে অল্প জায়গা নেয়, ফলে বহন সহজ ও পরিবহন খরচ কম পরে ।
    নিরোগ গাছ থেকে অসি তেউর সংগ্রহ করে অগ্রাংশ ২ সেমি চওড়া ও ৫ সেমি লম্বা পরিমান আকারে কেটে গাছ ছত্রাকমুক্ত করার জন্য ধুয়ে পরিস্কার করে নিতে হয় । এ কাজটি রোগ মুক্ত বিশেষ ঘরে করতে হবে । কর্তনকৃত অগ্রাংশটি আরও ছোট করে ১০৫ সে মি চওড়া ও ১.০ সেমি উচ্চতায় কেটে কৃত্রিম মিডিয়াতে রাখতে হয় । এমনি একটি অংশ থেকে বছরে অনেক চারা উৎপাদন সম্ভব । একটি কলার তেউড়ের অগ্রাংশ থেকে কৃত্রিম মিডিয়ায় অসংখ্য স্যুট হয় । এভাবে তৈরী চারাগুলো মাটিতে লাগিয়ে কিছুদিন যত্ন নিতে হয় এবং মাঠে লাগাতে হয় ।

     

    প্রচলিত চাষ পাল্টে দেবে টিস্যু কালচার

    কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি। আর টিস্যু কালচার গবেষণায় উত্তরাঞ্চলের মডেল হলো বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ)। এখানকার বায়োটেকনোলজি ল্যাবরেটরি উদ্ভাবিত উন্নতমানের বীজ অধিক ফসল উৎপাদনে সাফল্য এনে দিয়েছে। বিগত কয়েক বছর থেকে এই ল্যাবরেটরি থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত আলুবীজ সরবরাহ করা হচ্ছে মাঠপর্যায়ের কৃষক ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ তৈরি প্রতিষ্ঠানের কাছে। টিস্যু কালচার ব্যবহার করে উত্তরাঞ্চলে আলুর সুপার বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা। এই চারা ভাইরাস ও অন্যান্য রোগজীবাণু মুক্ত হয়। আর টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত আলুবীজ উৎপাদনের সাফল্যের পর এখন আরডিএর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণা চলছে স্ট্রবেরি ফল, কলাসহ আরো কয়েকটি ফসলের চারা তৈরির কাজে। যেভাবে এল টিস্যু কালচার বাংলাদেশে গোল আলুর চাষ শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে। শীত মৌসুমে এ দেশে প্রায় ৫ দশমিক ২০ লাখ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয় এবং উৎপাদন হয় ৯২ দশমিক ৩৭ লাখ টন (ডিএই ২০০৯)। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের আলুর গড় ফলন অত্যন্ত কম। এর অন্যতম কারণ হলো ভাইরাস ও অন্যান্য রোগাক্রান্ত আলুবীজ ব্যবহার করা। বর্তমানে আলুচাষিরা ভালো ও উন্নত বীজ ব্যবহারের উপকারিতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, কিন্তু বীজের সরবরাহ অত্যন্ত অপ্রতুল হওয়ায় চাষিদের চাহিদা মোতাবেক নূ্যনতম উন্নতমানের বীজ আলু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বীজ আলুর চাহিদা প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে মাত্র ১০ শতাংশ বীজ আলু বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সরবরাহ করতে পেরেছে। উপরন্তু ওই সরবরাহকৃত বীজের মান নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়ে গেছে। আলু বিজ্ঞানীদের অভিমত, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রোগমুক্ত আলুবীজ উৎপাদন করে দেশে আলুর ফলন নূ্যনতম ৫০ ভাগ বাড়ানো সম্ভব। আরডিএর গবেষণা বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উন্নতমানের আলুবীজ উৎপাদনের ওপর গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকার ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আরডিএকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে। টিস্যু কালচার প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় উন্নতমানের বীজ আলু উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একাডেমী তার নিজস্ব অত্যাধুনিক ল্যাবে সোলার লাইট কাজে লাগিয়ে দেশে প্রথম উন্নতমানের বীজ আলুর চারা উৎপাদন করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে অধিক মানসম্পন্ন রোগমুক্ত বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এই ব্রিডার মানের আলুবীজ দ্রুত বর্ধন করে কৃষকের মধ্যে সরবরাহের জন্য দেশের অন্যতম বীজ কম্পানি এসিআই (এগ্রো) সিড, মেসার্স বেঙ্গল সিড, মেসার্স সুপ্রিম সিড ও অন্যান্য বীজ কম্পানি আলুবীজ উৎপাদনকারীদের কাছে সরকারি সুলভমূল্যে সরবরাহ করে থাকে।

    শুধু বীজই নয়, আরডিএ কম্পানি ও বীজ উৎপাদকদের আলুবীজ উৎপাদন ও টিস্যু কালচার ল্যাব অপারেশন-সংক্রান্ত প্রযুক্তি শীর্ষক দুটি পৃথক আবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্স নিয়মিত প্রদান করে আসছে। যাতে করে এই প্রযুক্তি দ্রুত দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং আলুবীজ সংকটের বাস্তবভিত্তিক সমাধান করা সম্ভব হয়। গবেষকের মতামত আরডিএর কৃষি বিজ্ঞানী ও টিস্যু কালচার গবেষক ফিরোজ হোসেন জানিয়েছেন, দেশের বিরাজমান বীজ আলু সংকট নিরসনে আরডিএর উদ্ভাবিত আলুবীজ উৎপাদন প্রযুক্তি সমপ্রসারণ করা গেলে এ সমস্যার একটি প্রকৃত সমাধান সম্ভব। তিনি আরো জানান, আরডিএ টিস্যু কালচার ল্যাব স্থাপন ও বীজ আলু উৎপাদনে কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে আসছে। বেসরকারি, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য সংস্থাকেও আমরা এসব সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। এ ছাড়াও ল্যাবে উৎপাদিত প্লান্ট-লেট ও ব্রিডার মানের বীজ সরকারি মূল্যে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন টিস্যু কালচার প্রায় চার দশক আগে ইউরোপে টিস্যু কালচার কলাকৌশল দ্বারা ভাইরাস ও অন্যান্য রোগজীবাণু মুক্ত অনুচারা উৎপাদন শুরু হলেও এ দেশে টিস্যু কালচার শুরু হয়েছে মাত্র এক দশক আগে।

    আলু অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থকরী ফসল। খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আলু বিকল্প খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। অর্থকরী ফসল হিসেবে উত্তরাঞ্চলে আলু চাষের জমির পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণেই বগুড়ায় আরডিএর প্রদর্শনী খামার সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৪ সালে বায়োটেকনোলজি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসল ও ফলের অনুচারা পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ল্যাবরেটরিতে স্বল্প সময়ে মাতা উদ্ভিদ টিস্যু বা অঙ্গ থেকে দ্রুত অধিক পরিমাণ সুস্থ অনুচারা বা অঙ্গজ বীজ উৎপাদন করাই টিস্যু কালচার।

    বর্তমান সময়ে খাদ্য সংকট ও ঘাটতির কারণে বিকল্প খাদ্য হিসেবে আলু জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দেশে আলু চাষের জমির পরিমাণ সাড়ে তিন লাখ একর। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলেই চাষ হচ্ছে এক লাখ ৮০ হাজার একর। গড় আলুর উৎপাদনের পরিমাণ একরে মাত্র সাড়ে চার টন। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা জানান, উচ্চতর আলুর ফলনের প্রধান অন্তরায় নিম্নমানের, রোগাক্রান্ত ও ভাইরাসযুক্ত বীজ। উন্নতমানের বীজের চাহিদা আড়াই লাখ টন। বিএডিসি ও কৃষি বিভাগ বীজ সরবরাহ করে আসছিল মাত্র ২৫ হাজার টন_যা চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ। ৯০ ভাগ বীজ কৃষকের ঘরে সংরক্ষিত বা বেসরকারি সংস্থার সরবরাহকৃত বীজ। চাষ করে এ বীজ থেকে কৃষক ভালো উৎপাদন পায় না। উন্নত, রোগ ও ভাইরাসমুক্ত বীজ ব্যবহার করা হলে উৎপাদন পাওয়া যাবে দ্বিগুণ। এ সংকট থেকে মুক্ত হতেই নতুন দিগন্তের পথ দেখাচ্ছে টিস্যু কালচার পদ্ধতি। আলু চাষের মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলায় টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উৎপাদিত উন্নতমানের রোগ ও ভাইরাসমুক্ত আলুবীজ সরবরাহ করে সুপার বাম্পার ফলন পেয়েছে। মাঠের কৃষকের মতামত বগুড়ার শেরপুর এলাকার কৃষক আজমল হোসেন (৫৫) এসিআই এগ্রো কম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা টিস্যু কালচার বীজে তাঁর পাঁচ বিঘা জমিতে গত বছর আলুর চাষ করেছিলেন। বাজারের প্রচলিত বীজে আলুচাষ করে তিনি ফলন পেয়েছিলেন প্রতিবিঘায় ৮০ থেকে ৮৫ মণ। আর টিস্যু কালচার পদ্ধতির বীজে তিনি ফলন পেয়েছেন ১৬০ মণ। বিষয়টা অনেকটা অবাস্তব মনে হলেও প্রকৃত সত্য এটিই। আর টিস্যু কালচার বীজে কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। যেকোনো ধরনের আবহাওয়া সহ্য করার ক্ষমতা থাকে এই বীজের।

     

    0 comments:

    Post a Comment