Tuesday, July 18, 2017

Tagged Under: , , , , , , ,

আধুনিক পদ্ধতিতে বছরে দুই শতাধিক ডিম দেবে দেশি জাতের মুরগি

  • Share The Gag
  • আধুনিক পদ্ধতিতে বছরে দুই শতাধিক ডিম দেবে দেশি জাতের মুরগি



     

    আধুনিক পদ্ধতিতে লালন পালন করে দেশি জাতের মুরগির কাছ থেকে বছরে দুই শতাধিক ডিম পাওয়া যাবে। এই নতুন দেশি জাতের মুরগির উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। 

    আজ রোববার সকালে খুলনার ডুমুরিয়ায় দেশি মুরগি সংরক্ষণ  ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো নারীদের মধ্যে মুরগি প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

    ডুমুরিয়া উপজেলা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. তালুকদার নুরুন্নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন  প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায়, খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুভাষ চন্দ্র সাহা প্রমুখ।

    এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডুমুরিয়া উপজেলার  ৫০টি  পরিবারের গৃহিণীদের চারটি করে নতুন দেশি জাতের মুরগি প্রদান করা হয়।

    দেশি জাতের এই মুরগি লালন-পালন করে অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্যরা পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারবে। বাংলাদেশে এই প্রথম ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলো।

    দেশী মুরগি পালন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন ও খামারীদের মাঝে মুরগি বিতরণ:



    ডুমুরিয়া, খুলনায় আধুনিক পদ্ধতিতে “দেশী মুরগি পালন শীর্ষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ও খামারীদের মাঝে মুরগি বিতরণ’’ বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ, এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় জনাব অজয় কুমার রায় এবং খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা বিভাগ।উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মহোদয় ড. তালুকদার নুরুন্নাহার ।

    “দেশী মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ণ” শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মিসেস শাকিলা ফারুক তাঁর স্বাগত বক্তব্যে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ উপস্থিত সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, খামারী এবং ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে- উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশী মুরগি পালন করে দেশের মুরগি ও ডিমের চাহিদা মিটিয়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নতিকল্পে ডুমুরিয়া, খুলনা-সহ দেশের ৬ টি জেলায় উক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

    উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহোদয় তাঁর বক্তব্যে বলেন দেশী মুরগির চাহিদা অতি প্রাচীনকাল থেকেই ছিল বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। অনেক মানুষের কাছে বাণিজ্যিকভাবে পালিত ব্রয়লার মাংসের তুলনায় দেশী মুরগি অধিক গ্রহণযোগ্য যার ফলে বাজারে ক্রেতা সাধারণ অধিক মূল্যে দেশী মুরগি ক্রয় করতে ইচ্ছুক। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার, তাই দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নে এবং জনসাধারণের পুষ্টির যোগান দেওয়ার জন্য এই গবেষণা প্রকল্পটি হাতে নিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় তার বক্তব্যে বলেন চলমান প্রকল্পটির পরিকল্পিত কার্যক্রমগোলো সফলভাবে সম্পাদন করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

    সভার সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালক ড. তালুকদার নুরুন্নাহার মহোদয় তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, আমাদের নিজস্ব মুরগির জাতগুলো বিলীন হওয়ার পথে। এই মূল্যবান জেনেটিক রিসোর্সগুলো সংরক্ষণ এবং এর উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশী মুরগি পালন বিষয়ক আলোচনায় তিনি ৪টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন; যেমন- মুরগির জাত, ডিম উৎপাদন, ডিমের ওজন ও প্রথম ডিম পাড়ার বয়স। তিনি বলেন যে দেশী মুরগি উন্নয়নের জন্য উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিবেচনায় আনতে হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং এভাবে দেশের ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। পরিশেষে, সভাপতি মহোদয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, বিজ্ঞানী, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, খামারী এবং ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

     

    এবার দেশি মুরগির স্বাদ পাওয়া যাবে ব্রয়লার (গোশত উৎপাদনকারী) মুরগিতে



    বার দেশি মুরগির স্বাদ পাওয়া যাবে ব্রয়লার (গোশত উৎপাদনকারী) মুরগিতে। শুধু তাই নয়, ব্রয়লারের গোশত হবে দেশি মুরগির মতো শক্ত ও সুস্বাদু। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্রয়লার উৎপাদনেও কমবে খরচ, বাড়বে উৎপাদন। এমন গুণাগুণ নিয়ে ‘বাউ-ব্রো-হোয়াইট’ ও ‘বাউ-ব্রো-কালার’ নামে উন্নত জাতের ব্রয়লারের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের এক দল গবেষক। ব্রয়লারের বাচ্চা উৎপাদনে আমাদের নিজস্ব কোনো প্যারেন্ট স্টক না থাকায় বাইরের দেশ থেকে তা আমদানিতে প্রতিবছর ব্যয় হয় প্রায় ৯০ কোটি টাকা। দেশি মুরগির জার্মপ্লাজম ও প্রচলিত উন্নত জাতের সিনথেটিক ব্রয়লারের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত নতুন ব্রয়লার দুটি দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করলে ওই আমদানি খরচ সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া নতুন জাতগুলোর রোগবালাই ও মৃত্যুহার কম হওয়ায় দেশি লালনপালন ব্যববস্থাপনায় কম খরচে বিদেশে সিনথেটিক ব্রয়লারের মতোই উৎপাদন পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী ও ড. বজলুর রহমান মোল্লা।

    বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এসপিজিআর প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিচালিত ‘দেশে প্রাপ্ত মুরগির জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক উদ্ভাবন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে চার বছর গবেষণা শেষে ‘বাউ-ব্রো-হোয়াইট’ ও ‘বাউ-ব্রো-কালার’ নামে ব্রয়লারের জাত দুটি উদ্ভাবনে সাফল্য পান গবেষকরা। নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর এক দিনের বাচ্চার ওজন, খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা, ৩৫ দিনে ওজন (১.৫ কেজি) বাজারে প্রচলিত ব্রয়লারের মতোই। অন্যদিকে মৃত্যুর হার কম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং লালনপালন ব্যবস্থাপনা প্রচলিত ব্রয়লারের চেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী। এ গবেষণাকাজে সহযোগিতা করেন পিএইচডি শিক্ষার্থী গোলাম আজম।

    উদ্ভাবিত ব্রয়লার সম্পর্কে গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক বাইরের দেশ থেকে আমদানি করে বাচ্চা উৎপাদন করে। অন্যদিকে বাইরে থেকে আমদানি করা প্যারেন্ট ব্রয়লার শীতপ্রধান দেশের উপযোগী করে তৈরি হওয়ায় এ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হয়। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ওই সব প্যারেন্ট স্টক লালনপালন করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে বাচ্চার দাম তুলনামূলক বেশি পড়ে। অন্যদিকে ওই সব স্টক দেশের বাইরে থেকে আনার ফলে বিভিন্ন রোগের জীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (বার্ড ফ্লু)। এ ছাড়া বাজারে প্রচলিত ওই সব ব্রয়লারের গোশত অত্যধিক নরম ও দেশি মুরগির মতো সুস্বাদু না হওয়ায় অনেকে পছন্দ করে না। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের নিজস্ব ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে চার বছর দেশি মুরগির জার্মপ্লাজম ও প্রচলিত উন্নত জাতের সিনথেটিক ব্রয়লারের মোরগ-মুরগি থেকে ক্রমে গুণগত বাছাই ও প্রজননের মাধ্যমে নতুন দুটি ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক অর্থাৎ জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছি। যার উৎপাদন ক্ষমতা আমদানি করা অন্যান্য উন্নত মানের ব্রয়লার প্যারেন্টের সমকক্ষ। মজার ব্যাপার হলো, উদ্ভাবিত প্যারেন্ট স্টকগুলো দেশে প্রচলিত মুরগির ঘরেই লালনপালন করে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যাবে। কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন নেই কোনো ব্যয়বহুল টিকাদান কর্মসূচির। অন্যদিকে প্রচলিত ব্রয়লারের মতোই আমাদের উদ্ভাবিত ব্রয়লার পাঁচ সপ্তাহে দেড় কেজি ওজনের হয়ে থাকে।’

    গবেষণার সহযোগী গবেষক ড. বজলুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমাদের দেশে বেশির ভাগ ভোক্তাই বাজারে গিয়ে রঙিন মুরগি অর্থাৎ দেশি মুরগি খোঁজে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা দুই ধরনের গোশতউৎপাদনকারী (ব্রয়লার) মুরগির জাত উদ্ভাবন করেছি। দেশি মুরগি ও বাজারে প্রচলিত উন্নত মানের সিনথেটিক ব্রয়লারের সঙ্গে মিল রেখেই জাত দুটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাউ-ব্রো-কালার মুরগির গোশত অনেকটা দেশি মুরগির মতো স্বাদ ও শক্ত প্রকৃতির। অন্যদিকে বাউ-ব্রো-হোয়াইটেরও গোশত প্রচলিত ব্রয়লারের গোশত থেকে তুলনামূলক শক্ত ও সুস্বাদু। তবে নতুন উদ্ভাবিত ব্রয়লার ও প্রচলিত ব্রয়লারের গোশত পুষ্টিমানের কোনো পার্থক্য নেই। বর্তমানে ব্রয়লারের জাত দুটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত।’ বাজারে প্রচলিত ব্রয়লারের বাচ্চার চেয়ে কম দামে উদ্ভাবিত ব্রয়লারের বাচ্চা খামারিদের হাতে শিগগিরই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

    ড. বজলুর রহমান জানান, বর্তমানে জাত দুটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে জেনেটিক্সের মলিকুলার পর্যায়ে কিছু কাজ করা হচ্ছে। মূলত উদ্ভাবিত জাতগুলোর বৈশিষ্ট্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম অটুট থাকবে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে অর্থায়নের অভাবে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের খ্যাতনামা খামারি ও হ্যাচারি মালিকরা যদি আমাদের গবেষণায় অর্থায়নে এগিয়ে আসেন, তাহলে উদ্ভাবিত ব্রয়লার জাতগুলোর মাধ্যমে দেশের আমদানিনির্ভর ব্রয়লার শিল্পকে রপ্তানি শিল্পে রূপান্তর করা সম্ভব।

    0 comments:

    Post a Comment