Friday, June 23, 2017

ভিয়েতনাম হাইব্রিড নারিকেল চাষ পদ্ধতি -ভিডিওচিত্র

  • Share The Gag
  • ভিয়েতনাম হাইব্রিড নারিকেল চাষ পদ্ধতি -ভিডিওচিত্র দেখুন। এই চারা বাংলাদেশের প্রায় উপজেলা শহরের হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্ট এর নার্সারি তে পাবেন।

    নিচের ভিডিও ক্লিপ দেখুন।  

    https://youtu.be/zIrZz7enN8s

    Tuesday, June 20, 2017

    দুর্বা ঘাসের চমৎকার কিছু গুন

  • Share The Gag
  • এটি একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত দুর্বা ঘাস দীর্ঘকাল প্রতিকুল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে। মাঠে ময়দানে ঘরবাড়ীর আনাচে কানাচে আপনা আপনি এ ঘাস জন্মায়। এর পাতা সরু, লম্বা। মসৃণ ও সবুজ বর্ণের হয়। মাতির নিচে এর গুচ্ছ মূল থাকে। দুর্বা ঘাস আলাদা ভাবে চাষের কোন প্রয়োজন হয় না।



    দুর্বা ঘাসের পরিচিতি-

    প্রচলিত নাম- দুর্বা ঘাস

    ইউনানী নাম- দুর্বা / দুব

    আয়ুর্বেদিক নাম-দুব

    ইংরেজী নাম- Bermuda grass, Dove grass.

    বৈজ্ঞানিক নাম- Cynodon dactylon Pers.

    পরিবার- Poaceae (Gramineae)

    দুর্বা ঘাসে যে সমস্ত রাসায়নিক উপাদান আছে- টারপিনয়েড যৌগ যেমন অরুনডেইন, লুপিনোন ইত্যাদি বিদ্যমান। এছাড়া দুর্বা ঘাসে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ও বেশ কিছু অর্গানিক এসিড পাওয়া যায়।

    দুর্বা ঘাস সাধারণত রক্তক্ষরন, কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তপাত, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, বমন, চুল পড়া, চর্ম রোগ, দন্তরোগ ও আমাশয়ে কার্যকরী।

    রোগ অনুযায়ী এর ব্যবহার পদ্ধতি-

    # কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তক্ষরনে দুর্বা ঘাস সামান্য পানি মিশিয়ে পিষে কাটা স্থানে বেধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান দ্রুত জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে দুর্বার শিকড় ব্যবহার করলে বেশী উপকার পাওয়া যায়।

    # চুল পড়া রোগের জন্য একটি পাত্রে এক লিটার নারিকেল তেল মৃদু তাপে জ্বাল করে ফেনা দুর করে নিতে হবে। তারপর দুর্বার ঘাসের টাটকা রস ২০০ মিলি সম্পূর্ণ তেলে মিশিয়ে পুনরায় জ্বাল দিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে টা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন গোসলের ১ ঘন্টা আগে ঐ তেল চুলে মাখতে হবে। নিয়মিত২-৩ মাস প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।

    #বমি ভাব বন্ধের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি সহকারে ১ ঘন্টা পর পর খেতে হবে, বমি ভাব কেটে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।


    # অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ প্রতিদিন মধু সহ ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।


    #আমাশয় রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের রস ৪-৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যাবে।

    আমাদের আনাচে কানাচে জন্ম নেয়া দুর্বা ঘাসের কত ঔষধি গুণাবলী। প্রয়োজনে এর ব্যবহার করতে পারেন। আজ এই পর্যন্ত।

    সকলে ভাল থাকুন ও সুস্থ্য থাকুন। সকলকে ধন্যবাদ। ভাল লাগলে মন্তব্য করতে কার্পণ্য করবেন না।
    এটি একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত দুর্বা ঘাস দীর্ঘকাল প্রতিকুল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে। মাঠে ময়দানে ঘরবাড়ীর আনাচে কানাচে আপনা আপনি এ ঘাস জন্মায়। এর পাতা সরু, লম্বা। মসৃণ ও সবুজ বর্ণের হয়। মাতির নিচে এর গুচ্ছ মূল থাকে। দুর্বা ঘাস আলাদা ভাবে চাষের কোন প্রয়োজন হয় না।






    দূর্বাঘাসের গুণাগুণ:

    চিকিৎসায় দূর্বাঘাস ব্যবহারের উপায়:

    • দূর্বাঘাসের রস: ১০-২০ মি.লি.

    • দূর্বা মূল চূর্ণ: ৩-৬ গ্রাম

    • পাতার চূর্ণ: ১-৩ গ্রাম

    • পানি: ৪০-৮০ মি.লি।


    সবগুলো একত্রে মিশিয়ে জুস তৈরি করে পান করবেন।

    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: দূর্বা ঘাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে বিদ্যমান ভাইরাস ও ব্যকটেরিয়ারোধী ক্ষমতা শরীরকে যেকোন ধরনের রোগের বিরুদ্ধেই লড়ার শক্তি প্রদান করে।

    পুষ্টিতে ভরপুর থাকায় দূর্বাঘাস শরীরকে সক্রিয় ও শক্তিপূর্ণ রাখতে সহায়ক। এটি অনিদ্রা, ক্লান্তি, স্ট্রেস ইত্যাদি রোগের জন্য লাভজনক।

    ত্বকের সমস্যা: দূর্বাঘাসে বিদ্যমান প্রদাহরোধী ও জীবাণুরোধী গুণের কারণে তা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চুলকানি, লাল লাল ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। এজন্য দূর্বাঘাস ও  হলুদ পিসে ত্বকে লাগাবেন। দূর্বার রস পান করলে ঘনঘন পিপাসা লাগা থেকে মুক্তি মেলে।

     

    রক্তশূণ্যতা: দূর্বার রসকে সবুজ রক্ত বলা হয়। কারণ রস পান করলে রক্তশূণ্যতার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। এই রস রক্ত পরিষ্কারক এবং লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো ছাড়াও চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সহায়তা করে। এজন্য নগ্ন পায়ে ঘাসের উপর হাঁটতে হয়। শীতের সকালে নরম-কোমল দূর্বাঘাসের উপর হাঁটতে পারেন।

    মানসিক রোগে: দূর্বার রস মৃগী, হিস্টিরিয়া ইত্যাদি মানসিক রোগের চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী। মাথায় দূর্বাঘাস পিসে লেপ দিলে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়!

    হজম শক্তি বৃদ্ধি: দূর্বাঘাস নিয়মিত সেবন করলে পেটের অসুখ থেকে মুক্তি মেলে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এর রস পানে পিত্তজনিত কারণে সৃষ্ট বমি ঠিক হয়ে যায়।

    অন্যান্য ব্যবহার: উপর্যুক্ত উপকারীতা ছাড়াও দূর্বাঘাস নিম্নোক্ত উপকারও করে।

    • দূর্বাঘাসেপ্রচুরফ্লেভিনয়েডসথাকে।যাআলসারপ্রতিরোধেকার্যকর।

    • এটিগ্লুকোজেরপরিমাণকমকরতেসহায়ক।যাডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণকরতেসক্ষম।

    • রক্তেকোলেস্টেরলেরমাত্রাকমকরেহৃদপিণ্ডকেসুস্থরাখে।

    • সর্দি-কাশিরসমস্যাদূরকরে।

    • কেটেগেলেদূর্বাপিসেলাগিয়েদিলেরক্তপাতবন্ধহবে।


    জার্মান ঘাস চাষ পদ্ধতি

  • Share The Gag
  • জার্মান ঘাস চাষ পদ্ধতি

    জার্মান ঘাস এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। এ ঘাসের কান্ডের গিটে শিকড় থাকে এবং পারা ঘাসের মত লাগানোর পর ঘাসের লতা সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘাস গরুর খবু পছন্দনীয়, দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চ ফলন শীল। বাংলাদেশে এ ঘাস আবাদের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।গবাদি পশু পালনের জন্য ঘাস একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যার ফলে ঘাস চাষ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আর জার্মান ঘাস এক ধরনের স্থায়ী ঘাস। এর কাণ্ডের গিটে শিকড় থাকে এবং পারা ঘাসের মতো লাগানোর পর ঘাসের লতা পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘাস গরুর খুব পছন্দ। দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চ ফলনশীল এ ঘাস অাপনিও চাষ করতে পারেন।

    জমি নির্বাচনঃ-

    জার্মান ঘাস পারা ঘাসের মত নিচু ও জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করা যায়। জার্মান ঘাস দাঁড়ানো পানিতে জন্মনো যায়। সে সমস্ত জমিতে সারা বছর পানি থাকে অথবা কিছুকাল ডুবে থাকে, সে সব জমিতে এ ঘাস চাষ করা যায়। এছাড়া খাল, বিল, মজা পুকুর, নদীর ধার, ডোবা, নালাতে এই ঘাস চাষের জন্য উপযুক্ত।

    রোপণের সময়ঃ- মার্চ হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ঘাস চাষের উপযুক্ত সময়।

    রোপণের দূরত্বঃ- সারি থেকে সারি গাছে থেকে ১-১.৫ ফুট।

    বংশ বিস্তারঃ-

    এ ঘাস হতে ভালো বীজ উৎপাদন হয় না। কাজেই কাটিং ও মোথা দ্ধারা বংশ বিস্তার করতে হয়।
    কাটিং বা মোথার প্রাপ্তিস্থানঃ- আপনার জেলা বা উপজালার প্রানী সম্পদ অফিসে। বিনা মূল্যে কাটিং বা মোথা বিতরণ করা হয়।

    চারা তৈরিঃ-

    গাছ পরিপক্ক হলে কান্ডের গিট হতে শিকড় বের হয়। এ রকম পরিপক্ক গাছের কমপক্ষে ৩ টি গিট নিয়ে কাটিং করতে হয়। সমতল শুকনা জমিতে লাগালে কয়েকটা চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে কোদাল দিয়ে গর্ত করে চারা বা কাটিং রোপন করতে হবে। কাটিংগুলি কাত করে অর্থাৎ ৪৫-৬০ ডিগ্রি কোনে এমন ভাবে লাগাতে হবে যেন কাটিং এর একটি গিট মাটির নীচে একটি মাটির সমান এবং অপর গিট মাটির উপরে থাকে।

    সার প্রয়োগঃ-

    জার্মান ঘাস উর্বর জমিতে ভাল হয়। ভাল ফলনের জন্য জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর দিতে হবে এবং চারা লাগানোর ২/৩ সপ্তাহ পর একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া ছিটিয়ে দিতে হবে, প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩৫-৪০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

    ঘাস কাটাঃ-

    জার্মান ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল। রোপণের ৫০-৬০ দিন প্রথম কাটার উপযোগী এবং এর পর প্রতি ৪/৫ সপ্তাহ পর পর কাটা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এ ঘাস মার্চ হতে অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ে। শীতকালে এ ঘাসের তেমন বৃদ্ধি ঘটে না।
    ফলনঃ- জার্মান ঘাস বছরে প্রায় ৫ বার কাটা যায়। উর্বর জমিতে ও ভালো ব্যবস্থাপনায় বছরে একর প্রতি ৩০-৪৫ টন সবুজ ঘাস পাওয়া যায়।

    প্রাপ্তিস্থান

    জার্মান ঘাস থেকে ভালো বীজ উৎপাদন হয় না। তাই কাটিং ও মোথা দ্বারা বংশ বিস্তার করতে হয়। জেলা বা উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসে বিনামূল্যে কাটিং বা মোথা বিতরণ করা হয়। সেখান থেকে সংগ্রহ করে চাষ করতে পারেন।

     

    জার্মান ঘাস নিচু ও জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করা যায়। এমনকী জমানো পানিতে চাষ করা যায়। যে সব জমিতে সারা বছর পানি থাকে অথবা কিছুকাল ডুবে থাকে, সে সব জমিতে এ ঘাস চাষ করা যায়। এছাড়া খাল, বিল, মজা পুকুর, নদীর ধার, ডোবা, নালা এই ঘাস চাষের জন্য উপযুক্ত।

     

    পারা ঘাস চাষ পদ্ধতি

  • Share The Gag
  • পারা ঘাস চাষ পদ্ধতি

    পারা ঘাস এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। দেখতে অনেকটা দল ঘাসের মত। এ ঘাস মহিষ বা পানি ঘাস নামেও পরিচিত। জমিতে লাগানোর পর মাটিতে লতার মত ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প দিনের মধ্যেই সমস্ত জমিতে বিস্তার লাভ করে। এ ঘাস পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং উচ্চ ফলনশীল। এটি জলাবদ্ধ ও লবণাক্ত তা স হয করতে পারে এবং কয়েক দিনের জন্য বন্যার পানিতেও এ ঘাস টিকে থাকতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এ ঘাস চাষ করা যায় এবং উঁচু স্থান অপেক্ষা নিচু জলাবদ্ধ জমিতে ভাল হয়। এ ঘাস গবাদি পশু ছাড়াও গ্রাসকার্প মাছের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। শীতকালের সামান্য সয়ম ব্যতীত অন্যান্য সকল সময়ই এ ঘাস দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

    ​পুষ্টিমানঃ- শুষ্ক পদার্থের ভিত্তিতে নিন্মরূপ।
    ক) ক্রুড প্রোটিন (CP) ৯.৪%
    খ) ক্রুড ফাইবার (CF) ২৯.৩%
    গ) চর্বি (EE) ০.৮%
    ঘ) খনিজ (Ash) ১০.৪%
    ঙ) নাইট্রোজেন ফ্রি এক্সট্রাক্ট (NFE) ৫০.১%
    জমি নির্বাচনঃ- পারা ঘাস প্রায় সব জমিতে আবাদ করা যায়। উঁচু, নিচু, ঢালু জলাবদ্ধ এমন কি লোনা মাটিতেও এ ঘাস ভাল জন্মায় এবং ভাল ফলন দিয়ে থাকে। পারা ঘাস যেহেতু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে তাই যে সমস্ত স্থানে এবং জলাবদ্ধ জায়গা পুকুর, ডোবা ও বাঁধের ধারে এ ঘাসের চাষ করা যেতে পারে।
    রোপণ সময়ঃ- বৈশাখ হতে আশ্বিন এ ঘাস চাষের উপযুক্ত সময়।
    রোপণ দূরত্বঃ- সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছ ১.১.৫ ফুট।
    বংশ বিস্তারঃ- পারা ঘাসের কাটিং বা লতা মাটিতে লাগিয়ে বংশ বিস্তার করা যায়।
    চারা তৈরিঃ- পরিপক্ক গাছের কম পক্ষে তিনটি গিট নিয়ে কাটিং তৈরি করতে হয়।
    চারার পরিমানঃ- চারার পরিমাণ রোপণ ও দূরত্বের উপর নির্ভরশীল। ১.০X১.৫ ফুট দূরত্বে রোপণ করলে একরে প্রায় ২০,০০০ কাটিং প্রয়োজন।
    রোপণের পদ্ধতিঃ- সমতল শুকনা জমিতে প্রথমে ৪/৫ টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এর পর নির্দিষ্ট দূরত্বে গ র্ত করে প্রতি গর্তে ৩/৪ টি কাটিং রোপণ করতে হবে। কাটিং ছাড়া সম্পূর্ণ লতাও রোপণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে লাইন বারাবর ১-১.৫ ফুট দূরত্বে কোদাল দ্বারা সামান্য গর্ত করতে হবে। এরপর ৩/৪ টি লতার গোড়া একত্রে করে প্রথমে গর্তে রেখে ভালভাবে মাটি চাপা দিতে হবে। অতঃপর উক্ত লতা সমূহের গিট অংশ পরবর্তী গর্ত গুলোর উপর বিছিয়ে দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। এভাবে সমস্ত জমিতে ঘাসের লতা রোপণ করতে হবে।
    কাদা জমিতেঃ- কাদা জমিতে লতার গোড়ার অংশ পুঁতে দিয়ে মাঝে পা দিয়ে লতার গিটের অংশ চেপে দিতে হবে। কাদা জমিতে চারা ছিটিয়ে গরু দিয়ে বা পা দিয়ে মারিয়ে দিয়েও পারা ঘাস লাগানো যায়। এ পদ্ধতিতে ঘাস লাগালে প্রতিটি গিট হতে নতুন চারা গজিয়ে দ্রুত ঘাসের বংশ বিস্তার ঘটে।
    অসমতল/ঢালু জমিতেঃ- অসমতল বা ঢালু জমিতে যেমন রাস্তা , বাঁধ ও পুকুর পাড়ের ঢালে লাগালে প্রথমে ভাল ভাবে আগাছা পরিষ্কার করে গর্ত করে প্রতি গর্তে গোবর ও টিএসপি সার দিয়ে ঘাসের কাটিং বা লতা লাগাতে হবে।
    সার প্রয়োগঃ- পারা ঘাসের জমিতে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। পারা ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস এবং বছরে অনেকবার কাটা যায়। সুতরাং এ ঘাসের সারের চাহিদা প্রথমতঃ নাইট্রোজেন (ইউরিয়া সার)। সমতল চাষযোগ্য জমিতে যখন পারা ঘাস লাগানো হয় তখনে চাষের সময় একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার এবং প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।
    ঘাস কাটাঃ- জমিতে চারা লাগানোর প্রায় ৬০-৭০ দিন পর প্রথম বার ঘাস কাটা যায়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪/৫ সপ্তাহ পর ঘাস কাটা যায়। মাটি হতে ৪/৫ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়।
    ফলনঃ- পারা ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল বিধায় একর প্রতি বছরে গড়ে ২৫-৩০ টন সবুজ ঘাস পাওয়া যায়।
    সংরক্ষণঃ- রোদ্রে শুকিয়া।

    Sunday, June 18, 2017

    ছাদে ঘরে মাশরুম চাষ : ঘরে বসে আয়

  • Share The Gag
  • ছাদে  ঘরে মাশরুম চাষ : ঘরে বসে আয়

     

    ভুমিকা

     

    যেকোনো সমান জায়গায় কম আলোয় মাশরুম চাষ করা যায়। বীজ বোনার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ফলন। আট থেকে দশ হাজার বীজ থেকে দৈনিক ১৫-১৮ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কাঁচা মাশরুম ২০-২৬ টাকা, শুকনা ১৭০-১৮৫ টাকা এবং গুঁড়া ১৭০-১৮৫ টাকা বিক্রি করা যায়। তাই বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারেন মাশরুম চাষ। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ফরহাদ হোসেন একসময় মাশরুমকে ব্যাঙের ছাতা বলে কত হাসাহাসিই না করেছি আমরা। সেই মাশরুম আজ হয়ে গেছে অর্থকরী সবজি। মাশরুম হলো একধরনের ছত্রাক। পৃথিবীর সর্বত্র এই ছত্রাক সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গ্রিক, রোমান ও চীনারা মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসেবে মনে করেন। প্রাচীন দেব-দেবীদের এটি দিয়ে পুজো দেওয়া হতো। এমনকি রাজা-মহারাজাদেরও মাশরুম উপহার হিসেবে পাঠানো হতো। যেকোনো সবজির চেয়ে এর খাদ্যগুণ বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন আছে। সুস্বাদু এই খাবারের স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো। মাশরুম দাঁত ও হাড়ের গঠনে বিশেষ উপযোগী। রক্তহীনতা, বেরিবেরি ও হূদরোগ প্রতিরোধে এবং বহুমূত্র রোগে বিশেষ কার্যকরী। প্রায় তিন লাখ ছত্রাকের মধ্য থেকে মাত্র ১০ প্রজাতির ছত্রাক খাওয়ার উপযোগী।

    মাশরুম চাষ কিভাবে করা যায়, চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিনা, এক বিঘা জমির উৎপাদন খরচ, এর পুষ্টিমান এবং সর্বোপরি এর মাধ্যমে কিভাবে বাড়তি আয় করা সম্ভব, সেই বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

    ‘‘মাশরুম” ব্যাঙের ছাতার মতো এক ধরণের ছত্রাক জাতীয় গাছ। মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা দেখতে একই রকম হলেও এদের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া কোন কোন মাশরুম বিষাক্ত হয় এবং সেগুলো খাওয়া যায় না। সূর্যের আলোয় প্রাকৃতিকভাবে খুব বেশি মাশরুম জন্মাতে পারে না তাই প্রাকৃতিক উপায়ে খাবারের জন্য বেশি করে মাশরুম পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে অনেক স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষকরা মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় বিশেষ করে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর প্রভৃতি স্থানে এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। মাশরুম চাষ করতে আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না।

    বাজার সম্ভাবনা

    আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোর বিভিন্ন হোটেল ও চাইনিজ হোটেলগুলোতে মাশরুমের চাহিদা আছে। তাই আপাত দৃষ্টিতে মাশরুমের বাজার মূলত শহরে গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে। মাশরুম শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এজন্য যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিদেশে সবজি ও কাঁচামাল পাঠায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাশরুম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

    প্রয়োজনীয় মূলধন

    মাশরুম চাষ করার জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

    ব্যাংকঃ
    সোনালী ব্যাংকঃ http://www.sonalibank.com.bd/
    জনতা ব্যাংকঃ http://www.janatabank-bd.com/
    রূপালী ব্যাংকঃ http://www.rupalibank.org/rblnew/
    অগ্রণী ব্যাংকঃ http://www.agranibank.org/
    বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকঃ www.krishibank.org.bd/

    এনজিও
    আশাঃ http://asa.org.bd/
    গ্রামীণ ব্যাংকঃ http://www.grameen-info.org/
    ব্রাকঃ http://www.brac.net/
    প্রশিকাঃ http://www.proshika.org/

    আয়-ব্যয় ও লাভের হিসাব



    অয়েস্টার মাশরুমের পাপড়ি বেশি ছড়ানোর আগেই তুলে গোড়া থেকে সামান্য কেটে ফেলতে হবে। পলি প্রোপাইলিনের প্যাকেটে কয়েকটা ছিদ্র করে এর মধ্যে মাশরুমগুলো ভার মুখ বন্ধ করে এই প্যাকেট বাজারজাত করতে হবে। প্রতিটি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়। সুতরাং ২০০টি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ৪০ কেজি মাশরুম পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মাশরুমের দাম প্রায় ১২০ টাকা।


















    ৪০ কেজির দাম



    ৪৮০০ টাকা।



    কাঁচামাল ও অন্যান্য খরচ প্রায়



    ২৫০০ টাকা।



    সুতরাং ৪০ কেজি মাশরুম বিক্রয় করে লাভ প্রায় ২৩০০ টাকা।




    প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান



    স্থায়ী উপকরণ











































    উপকরণপরিমাণআনুমানিক মূল্য (টাকাপ্রাপ্তিস্থান
    গামলা১টা৬০-৮০থালা-বাটির দোকান
    ছোট চা-চামচ১টা১০-১৫থালা-বাটির দোকান
    ব্লেড১টা২-৫মুদি দোকান
    ছুরি১টা২০-৩০থালা-বাটির দোকান
    পলিপ্রোপাইল ব্যাগ১০টা২০-৩০মুদি দোকান
    মোট খরচ=১১২-১৬০ টাকা


    কাঁচামাল

























    উপকরণপরিমাণআনুমানিক মূল্য (টাকাপ্রাপ্তিস্থান
    মাশরুম বীজ বা স্পন২০০ টা বা ১০০ কেজি২০০০ঢাকা জেলার সাভার
    যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ৫০০
    মোট খরচ=২৫০০ টাকা


     

     

    মাশরুমের উপকারিতা

    মাশরুমে প্রচুর প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন আছে। তাই খাদ্য হিসেবে এটা খুবই পুষ্টিকর। এর উপকারিতাসমূহ হল-




    • রক্তে চিনির সমতা রক্ষা করে ফলে ডায়াবেটিক রোগী এবং যারা স্থুল বা স্বাস্থ্যবান তাদের জন্য উপযুক্ত খাবার।

    • মাশরুম দেহের ক্ষয়পূরণ, হাড় গঠন ও দাঁত মজবুত করে।

    • রক্তহীনতা, বেরিবোধ, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

    • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।



    খাবারের উপযোগী মাশরুম



    আমাদের দেশে সাধারণত খাবারের উপযোগী তিন জাতের মাশরুম চাষ হয় -




    • স্ট্র মাশরুম : ধানের খড়, শিমুল তুলা, ছোলার বেসন ও চাউলের কুড়া ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে স্ট্র মাশরুম চাষ করা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এর চাষ করা যায়।

    • ইয়ার মাশরুম: সাধারণত বর্ষাকালে প্রাকৃতিকভাবে আম গাছে ইয়ার মাশরুম পাওয়া যায়। ইয়ার মাশরুম দেখতে কালচে রঙের। ইয়ার মাশরুম সারাবছর চাষ করা গেলেও সাধারণত বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়।

    • অয়েস্টার মাশরুম: আমাদের দেশে এই জাতের মাশরুম চাষ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। সারাবছরই এই মাশরুম চাষ করা যায় তবে শীত ও বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়। অয়েস্টার মাশরুম খুব সহজে চাষ করা যায় এবং এর জন্য খুব অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়।



    মাশরুম উৎপাদন কৌশল



    চাষের উপযোগী স্থান



    মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই এর জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। মাশরুম চাষ করার জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় ছন বা বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করতে হয়। মাটির দেওয়াল দিয়েও ঘর তৈরি করা যায়। আবার বাঁশের বেড়াও দেওয়া যায়। ঘরের ভেতর যাতে আলো ঢুকতে না পারে সেজন্য বাঁশের বেড়ায় মাটি লেপে দিতে হয়।



    অয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি



    অয়েস্টার মাশরুম বীজ বা স্পন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করে মাশরুম চাষ শুরু করা যাবে। ধাপে ধাপে মাশরুম চাষ করতে হয়।



    ১ম পদ্ধতি




    • মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে মাশরুমের বীজ বা স্পন প্যাকেট সংগ্রহ করতে হবে। বীজ বা স্পনের দুই পাশে কিছুটা গোল করে কেটে চেঁছে নিতে হবে।

    • মাশরুমের প্যাকেট পানিতে ৩০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পরে পানি থেকে মাশরুমের প্যাকেট উঠিয়ে নিতে হবে।

    • অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য মাশরুমের প্যাকেট ৫ থেকে ১০ মিনিট উপুড় করে রাখতে হবে। পানি ঝরে গেলে ঘরের নির্ধারিত জায়গায় রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন এর উপর তিন থেকে চারবার করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।

    • সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন পর কাটা জায়গা থেকে অঙ্কুর গজায়। অঙ্কুর গজানোর পর মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।

    • খাওয়ার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হতে ৫ বা ৬ দিন সময় লাগে। খাবার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হলে তা গোড়া থেকে তুলে নিতে হবে।

    • বীজের যে জায়গা কাটা হয়েছিল তা ব্লেড দিয়ে একটু চেঁছে দিতে হবে। এই বীজ থেকে আবার মাশরুম গজাবে।

    • একটা আধা কেজি ওজনের বীজ বা স্পন প্যাকেট থেকে ৩-৪ বার মাশরুম পাওয়া যায়। এতে মোট ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে।



    ২য় পদ্ধতি




    • মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে বীজ বা স্পন সংগ্রহ করতে হবে। এক কেজি ওজনের একটি বীজের পলিথিন খুলে ভিতরের কম্পোস্ট গুঁড়ো করে নিতে হবে।

    • দুই কেজি পরিমাণ ধানের পরিষ্কার ও শুকনো খড় সংগ্রহ করতে হবে। খড়গুলোকে এক ইঞ্চি মাপে কেটে টুকরা করতে হবে।

    • পরিমাণ মতো পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। খড়গুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত পানিতে খড়ের টুকরোগুলো এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।

    • খড়গুলো পানি থেকে তুলে চিপে পানি শূন্য করে একটি পাত্রে রাখতে হবে।

    • পাঁচটি পলিব্যাগ নিয়ে পলিব্যাগের ভেতরে প্রথমে কিছু খড় বিছিয়ে নিতে হবে। খড়ের উপর মাশরুম বীজের গুঁড়ো দিতে হবে। এভাবে একটি পলিব্যাগে চার স্তরে খড় আর মাশরুম বীজের গুঁড়ো বিছিয়ে দিতে হবে। শেষ স্তরে আবার খড় বিছিয়ে দিতে হবে।

    • খড় বিছানো শেষ হলে খুব শক্ত করে পলিব্যাগ বাঁধতে হবে। এভাবে প্রতিটি পলিব্যাগ বাঁধতে হবে।

    • পলিব্যাগের চার দিকে ১০-১২টি ছিদ্র করতে হবে। এরপর ব্যাগগুলোকে বীজে পরিণত হওয়ার জন্য ১৫-১৮ দিন রেখে দিতে হবে।

    • ১৫-১৮ দিন পরে পলিব্যাগগুলো খুলে বীজের দলাগুলো বের করে নিতে হবে।

    • প্রতিটি বীজের দলা শিকায় করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন ৪-৫ বার করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।

    • ৩-৪ দিন পর চারদিক দিয়ে মাশরুমের অঙ্কুর গজাতে শুরু করবে। ৪-৬ দিন পর খাওয়ার উপযোগী মাশরুম গোড়া থেকে তুলে নিতে হবে।

    • এভাবে মাশরুম চাষে লাভ বেশি হবে। কারণ প্রতিটি পলিব্যাগ থেকে প্রায় আধা কেজি মাশরুম পাওয়া যাবে। সুতরাং পাঁচটি ব্যাগ থেকে প্রায় আড়াই কেজি মাশরুম উৎপন্ন হবে।



    সাবধানতা




    • বীজ বা স্পনে কোনভাবেই সূর্যের আলো পড়তে দেওয়া যাবে না। সবসময় ঘরটি ঠান্ডা রাখতে হবে। খুব বেশি গরম পড়লে ঘরের চারদিকে বস্তা ঝুলিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

    • মাশরুম ঘর ও ঘরের বাইরের চারদিক সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন জায়গায় মাশরুম ফ্লাই নামের পোকা মাশরুমের ক্ষতি করে।

    • কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।



    প্রশিক্ষণ



    সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকা জেলার সাভারে অবস্থিত ‘মাশরুম চাষ কেন্দ্র’ আছে। এছাড়া বাংলাদেশের নানা স্থানে “মাশরুম চাষ কেন্দ্রের” ১৬টি শাখা আছে। মাশরুম চাষ করে ব্যবসা করার জন্য এসব মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে নেওয়া যাবে। এছাড়া মাশরুম চাষ সম্পর্কে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। এসব বই পড়ার মাধ্যমেও মাশরুম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়া অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে মাশরুম চাষের বিস্তারিত জেনে নিলে চাষ করতে সুবিধা হবে এবং উন্নতমানের মাশরুম পাওয়া সম্ভব হবে।



    প্রশিক্ষন প্রদানকারী সংস্থা:



    ব্রাকঃ http://www.brac.net/



    যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরঃ www.dyd.gov.bd



    বিসিকঃ http://www.bscic.gov.bd/



    মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরঃ http://www.dwa.gov.bd/



    মাশরুম মূল্যবান সবজি। বিদেশে এর যথেষ্ট চাহিদা আছে। মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধি গুণের কথা বলে সাধারণ মানুষকে মাশরুম খাওয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। তাহলে সাধারণ বাজারেও এর চাহিদা বাড়বে। আমাদের দেশে এখনও যে খাদ্য ঘাটতি আছে, মাশরুম কিছুটা হলেও তা পূরণ করতে পারে।



    কিছু উল্লেখযোগ্য কেস স্টাডি



    নারীদের কর্মসংস্থান হতে পারে মাশরুম



    http://www.public-post.com/wp-content/uploads/2011/06/women-cultivating-mushroom-Bangladesh.jpg



    এবার শিরোনাম প্রসঙ্গে আসা যাক। মানে কিভাবে নারীরা মাশরুম চাষ করে আয় করতে পারে এবং সাবলম্বি হতে পারে সে প্রসঙ্গ। উপরের আলোচনা থেকেই জানা গেছে যে মাশরুম চাষ খুবই সহজ একটি পদ্ধতিতে করা যায়। জায়গা কম লাগে এবং মাত্র আনুমানিক ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই মাশরুম চাষ শুরু করা যেতে পারে। তবে ব্যবসা শুরুর আগে এ women-cultivating-mushroom-Bangladesh বিষয়ে অবশ্যয় প্রতিক্ষন নিতে হবে। নারীদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। গ্রামের বেশিরভাগ নারীই গ্রিহিনী কেউ কেউ হয়ত হস্তশিল্প বা এ জাতীয় কিছু কাজের সাথে জড়িত। এসব বেকার নারীরা খুব সহজেই মাত্র কিছু দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষের ব্যবসা শুরু করতে পারে।



    ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় মাশরুম চাষ একটি জনপ্রিয় ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং রাজশাহীসহ অনেক জায়গায় মাশরুম চাষ অত্যন্ত জনপ্রিয়। ঢাকা শহরেও বিভিন্ন এলাকায় যেমন গোড়ান, কোর্ট কাচারি, রামপুরা, বনশ্রী, সাভার এবং টঙ্গীতে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ হচ্ছে। এসব জায়গায় পুরুষদের পাশাপশি নারীরাও এগিয়ে। তবে একটি রিপোর্ট থেকে মহিলাদের মাশরুষ চাষের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা জানা যায়। এগুলো বস্তুত অন্যান্য সমস্যার মত পিছিয়ে থাকা মহিলাদের গতানুগতিক সমস্যার সমরূপ। সমস্যগুলোর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিন; সমাধানের চেষ্টা করুন।



    কেস স্টাডি



    ঝালকাঠিতে মাশরুম চাষে ১০ পরিবারের সাফল্য



    http://www.ajkerbangladesh24.com/wp-content/uploads/2013/12/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%AE-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A7%87.jpg



    ঝালকাঠি সদর উপজেলায় দ্বিতীয় শস্য বহুমূখী প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলক মাশরুম চাষে সফলতা অর্জন করেছে ১০ টি পরিবার। প্রান্তিক চাষিরা জানান, সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ মাশরুম চাষ করা হয়। সদর উপজেলার গাবখান ধানসিড়ি ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মাশরুম চাষী মেরিনা বেগম জানান, কৃষি বিভাগের অধীনে ঢাকার সাভারে মাশরুম সেন্টারে গিয়ে মাশরুম চাষ পদ্ধতির বিষয়ে ১ দিনের প্রশিক্ষন দিয়েই আমরা মাশরুম চাষ শুরু করি।



    ঝালকাঠি থেকে মেরিনাদের সাথে প্রশিক্ষনে অংশ নেয় ৩৫ জন নারী। সেখান থেকে প্রশিক্ষন শেষে তারা ১০ জনে মাশরুমের ৫শ’ স্পন (প্যাকেট) নিয়ে প্রত্যেকে ৫০ টি করে স্পন নিয়ে ঘরের বারান্দায় তাকে সাজিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করে।



    চাষের ১০ দিনের মাথায় মাশরুম ফলে শুরু। ৫০ স্পনে ২ থেকে আড়াই কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। কৃষি বিভাগের অফিসার, শিক্ষিত ও সচেতনরাই চাষীদের কাছ থেকে কিনে নেয়।’ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আহম্মেদ খান জানান, মাশরুম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন পুষ্টিকর সবজি জাতীয় একটি খাবার।



    মাশরুম চাষে কোন আবাদি জমির দরকার হয় না এবং স্বল্প সময়ে ৭-১০ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায়। মাশরুমের প্যাকেটে শীতে ২ বার, বর্ষার দিনে ২/৩ বার এবং গরমে ৪/৫ বার স্প্রে করে ভিজা ভিজা ভাব রাখতে হবে। প্যাকেটের বাইরে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ তাপমাত্রার আর্দ্রতা রাখা দরকার।



    তাহলেই ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদটি সবজি আকার ধারণ করে উৎপাদন হতে থাকবে। ১০/১৫ দিন পর পর মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে।’ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় রায় জানান, ‘মাশরুমে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল উঁচু মাত্রায় রয়েছে। এতে আমিষ, শর্করা, সবজি, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে।



    ফলে দেহের ইম্যুন সিস্টেম উন্নত করে। এই প্রোটিনে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ৯ টি এমাইনো এসিডই প্রশংসনীয় মাত্রায় আছে।’ ঝালকাঠিতে মাশরুম চাষে সফলতা অর্জনকারী চাষীরা হল নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের পেরন্ডা গ্রামের ফরিদ বাবুল, চাচৈর গ্রামের আবুল বাশার শরীফ, গাবখান ধানসিড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, সাচিলাপুর গ্রামের মেরিনা বেগম, যোগেশ্বর গ্রামের পেয়ারা বেগম, বাসন্ডা ইউনিয়নের খোকন শরীফ, চামটা গ্রামের মাহমুদা বেগম, কেওড়া ইউনিয়নের পিপলিতা গ্রামের মনোয়ারা বেগম, বিনয়কাঠি ইউনিয়নের মানপাশা গ্রামের কহিনুর বেগম, নবগ্রাম ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের আশিষ কুমার দাস।



     

    পুঁজি যখন এক লাখ

    সাধারণত ১৬ ফুট বাই ৩২ ফুট এবং ১০ ফুট উচ্চতার ঘরে সমতলে ছয়টি মাচা বা তাক (১ ফুট অন্তর অন্তর) তৈরি করত হবে। ৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩ ফুট প্রস্থের একটি তাকে ৮০০-১০০০ বীজ চাষ করা যায়। চাষের জন্য বীজ পাওয়া যাবে পুরনো চাষিদের কাছে এবং সাভারে সোবহানবাগের মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পে। বিভিন্ন জাতের মাশরুমের জন্য বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার প্রয়োজন। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষায় ‘স্ট্র মাশরুম’ এবং শীতকালে ‘ওয়েস্টার’ জাতের মাশরুম চাষ উপযোগী। তা ছাড়া মিল্কী মাশরুমও চাষ করা যায়। মাশরুম চাষের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ২০-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ছনের চালা বা টিনের ঘরে সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঘরটি গাছের নিচে হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। আর তাক তৈরির সময় যাতায়াত, পরিচর্যা ও সংরক্ষণের জন্য নূ্যনতম জায়গা রাখতে হবে। বীজের পরিচর্যা, ফলন তোলা ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকারের উপকরণের প্রয়োজন হবে।

    কম সময়ে দ্রুত ফলন

    প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সব ঠিক করে বীজ আনার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে প্রথম ফলন পাওয়া যাবে। একটি বীজ থেকে তিন-চার দিন অন্তর অন্তর ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি বীজ থেকে দু-তিন মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এভাবে প্রাথমিক অবস্থায় আট থেকে দশ হাজার বীজ থেকে দৈনিক ১৫-১৮ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তবে বীজ পুরনো হলে ধীরে ধীরে ফলন কমতে থাকে। তখন নতুন বীজ সংযোজন করলে আবার ফলন বেড়ে যায়।

    যেখানে বিক্রি করবেন

    বিভিন্ন চেইন শপে (যেমন আগোরা, নন্দন, স্বপ্ন, মিনাবাজার) মাশরুম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। উত্পাদনকারীরা প্যাকেটজাত করে সরাসরি চেইন শপগুলোতে পাইকারি দরে সরবরাহ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন চায়নিজ রেস্তোরা, ফাস্টফুড খাবারের দোকান এবং রাস্তার ধারে মুখরোচক বিভিন্ন খাবারের দোকানে মাশরুম বিক্রি করা যায়। অনেক ক্রেতা সরাসরি খামারে এসেও মাশরুম কেনেন। তিনভাবে মাশরুম বিক্রি হয়- ফ্রেশ বা কাঁচা মাশরুম, শুকনা মাশরুম এবং পাউডার মাশরুম। কাঁচা মাশরুম ১০০ গ্রাম প্যাকেট হিসেবে ২০-২৬ টাকা, শুকনা ১০০ গ্রাম ১৭০-১৮৫ টাকা এবং পাউডার ১০০ গ্রাম হিসেবে ১৭০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়।

    ঝুঁকি

    সঠিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে না পারলে ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়। সঠিক তাপমাত্রার অভাব ছাড়াও বিভিন্ন পোকামাকড় যেমন- তেলাপোকা, মাছি, ইঁদুর, মাকড়সা ইত্যাদি আক্রমণের শঙ্কা আছে। এসব ক্ষতিকর পোকামাকড়কে সঠিক পদ্ধতিতে প্রতিকার করতে হবে।প্রশিক্ষণ সরকারিভাবে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র বিনা খরচে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাশরুম চাষের জন্য বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা করে থাকে। আর প্রশিক্ষণের জন্য বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং খামার তো রয়েছেই। যোগাযোগ মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্প জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয় সোবহানবাগ, সাভার, ঢাকা। ফোন-০২-৭৭৪২৪৯৬, ০২-৭৭১০৬৪৬
    সাক্ষাৎকার

    বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়

    সালেহ আহম্মদ
    প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম উন্নয়ন জোরদার প্রকল্প জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র মাশরুম চাষের ওপর আমরা নিয়মিতই তিন থেকে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করছি। পুরনো উদ্যোক্তা, নতুন উদ্যোক্তা, খামারিদের এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আর সবগুলো প্রশিক্ষণই বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। আগ্রহী যে কেউ এসব প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন। সাভার ছাড়াও বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে আমাদের আরো ১৬টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। সারা বছরের মধ্যে শীতকালে মাশরুমের ভালো ফলন হয়। ১০০ গ্রাম মাশরুমের উত্পাদন খরচ যেখানে মাত্র ২০ টাকা, সেখানে বিক্রয় মূল্য ১১০ টাকা। তাই বাড়তি আয়ের জন্য যে কেউ এ পেশায় আসতে পারেন।

    ব্যবসা ভালো হওয়ায় শিক্ষকতা ছেড়ে মাশরুম চাষ শুরু করি
    মো. ইলিয়াছ স্বত্বাধিকারী,

    ডেইনটি মাশরুম খামার, মিরপুর, ঢাকা জগন্নাথ থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করি। এর পাশাপাশি ছোট আকারে মাশরুম চাষেও জড়িত হই। ২০০৬ সালের দিকে ব্যবসা ভালো হওয়ায় শিক্ষকতা ছেড়ে মাশরুম চাষ শুরু করি। প্রথম দিকে তিন লাখ টাকা নিয়ে শুরু করলেও এখন প্রায় ১৫ লাখ টাকার ব্যবসা। বর্তমানে খামারে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচজন কর্মী কাজ করছে। বেতন বাবদ ২০-২৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আর পরিচর্যা, সরবরাহ, বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা, ভাড়া, বিভিন্ন বিলসহ ৩০-৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে

    প্রতিদিন ১৫-১৮ কেজি পর্যন্ত ফলন পাচ্ছি
    সাইফুল ইসলাম

    সফল মাশরুম চাষি, সাভার, ঢাকা ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর কিছু একটা করতে চাচ্ছিলাম। সে বছরেরই জুন-জুলাইয়ের দিকে প্রথমে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে পারি। সাভারে মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ থেকে স্বল্পমেয়াদি একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নেমে পড়ি। প্রথমে আমার মূলধন ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। স্বল্প পরিমাণে চাষের কারণে এর বাজারজাতকরণ বেশ সমস্যা হচ্ছিল। ২০০৪ সালে ২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নতুন করে আবারও মাশরুম চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার মূলধন বেড়ে হয়েছে তিন লাখ টাকা। আট-দশ হাজার বীজ থেকে প্রতিদিন ১৫-১৮ কেজি পর্যন্ত ফলন পাচ্ছি।

     


    মাগুরার মাশরুম সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি







    Mashroom2014

    মাগুরা জেলার মাশরুম চাষিদের উৎপাদিত ২ কোটি টাকার মাশরুম রপ্তানি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলা মাশরুম ফাউন্ডেশন ও কাজী মাশরুম ফার্মের উদ্যোগে এই রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।

    এ মাশরুম সংগৃহীত হবে জেলার শতাধিক মাশরুম চাষির কাছ থেকে। প্রতি মাসে রপ্তানিযোগ্য মাশরুমের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দেড় টন। ইতিমধ্যে রপ্তানির সমস্ত প্রক্রিয়াই শেষ হয়েছে বলে জেলা মাশরুম ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী ইব্রাহিম জানান।

    কাজী ইব্রাহিম জানান, জেলায় দিন দিন মাশরুম চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। আগে বিচ্ছিন্নভাবে হাতে গোনা কয়েকজন শোখিন চাষি মাশরুম আবাদ করতেন। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও বাজার চাহিদা না থাকায় তারা এ চাষ লাভজনক করতে পারেননি। এতে অনেকেই চাষ ছেড়ে দেন।

    পরবর্তী সময়ে কৃষি বিভাগের সহায়তায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষের উদ্যোগ নেয় মাশরুম ফাউন্ডেশন। মানসম্মত মাশরুম উৎপাদন করায় স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি  তারা বিদেশের বাজারে মাশরুম রপ্তানির সুযোগ পান। ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় খুলে যায় মাশরুম চাষের নতুন দিগন্ত। মাগুরা সদরেই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম আবাদে নেমে পড়েন।

    মাশরুম চাষিরা বলেন, অল্প পুঁজি ও কম বিনিয়োগ করে মাশরুম চাষে বেশি লাভ করা যায়। বাড়ির আশপাশে সামান্য জায়গা ব্যবহার করে মাশরুম চাষ করা যায়। এটা চাষের জন্য আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য। ঘরের তাক বা যেকোনো সমান জায়গায় কম আলোয় মাশরুম চাষ করা যায়। বীজ বোনার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। আট থেকে দশ হাজার বীজ থেকে দৈনিক ১৫-১৮ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়।

    ১০০ গ্রাম কাঁচা মাশরুম ২০-২৬ টাকা, শুকনা ১৭০-১৮৫ টাকা এবং গুঁড়া ১৭০-১৮৫ টাকা বিক্রি করা যায়। তাই বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে মাশরুম চাষ। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি।

    আমাদের দেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ‘স্ট্র মাশরুম’ এবং শীতকালে ‘ওয়েস্টার’ জাতের মাশরুম চাষ উপযোগী।

    মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। বিদেশে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাগুরা থেকে মাশরুম বিদেশে রপ্তানি হবে এটা অত্যন্ত আশার কথা।



     

    Saturday, June 17, 2017

    ছাদে বাগান করার বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরিচর্যা করার উপায়

  • Share The Gag
  • ছাদে বাগান করার বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরিচর্যা করার উপায়

    জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ নগরে বসবাস করে। ১৯৫০ সালে এর হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। ভবিষ্যতে নগরমুখী মানুষের স্রোত আরো বেগবান হবে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর প্রায় ৬৬ শতাংশ লোক নগরে বসবাস করবে। ততদিনে আরও অনেক শহর ও মেগা শহর গড়ে উঠবে। তাই বর্তমান নগরগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অতিরিক্ত মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে নগর উন্নয়নে যুগোপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নগরায়ণ হচ্ছে উত্তর আমেরিকায়। সেখানে বর্তমানে ৮২ শতাংশ মানুষ নগরে বসবাস করে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। সেখানে ৮০ শতাংশ লোক নগরে বাস করে। সেই তুলনায় আফ্রিকা ও এশিয়ায় নগরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম, যথাক্রম ৪০ও ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ২০২০ সালে শতকরা ৫০ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে আট কোটি লোক নগরে বাস করবে এবং ২০৫০ সালে ১০০% অথাৎ ২৭ কোটি লোক নগরে বসবাস করবে। তখন গ্রাম ও নগর মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে নগরকে পরিকল্পিত আকারে গড়ে তুলতে হবে। আর তাই ছাদে বাগান অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।Roof Gardening 300x211 ছাদে বাগান করার বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরিচর্যা করার উপায়
    প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
    * একটি খালি ছাদ;
    * হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, ষ্টিল বা প¬াস্টিক ট্রে;
    * ছাদের সুবিধা মত স্থানে স্থায়ী বেড ( ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে।);যা
    * সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি, করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি;
    * দোঁআশ মাটি, পঁচা শুকনা গোবর ও কম্পোষ্ট, বালু ও ইটের খোয়া ইত্যাদি;
    * গাছের চারা / কলম বা বীজ ।
    চাদে চাষ উপযোগী গাছ ঃ
    * আমঃ বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী)
    * পেপে, কলা
    * পেয়ারাঃ বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১
    * কুলঃ বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল), থাই কুল-২
    * লেবুঃ বারি লেবু -২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১
    * আমড়াঃ বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১
    * করমচাঃ থাই করমচা
    * ডালিম (দেশী উন্নত)
    * কমলা ও মাল্টাঃবারি কমলা-১, বারি মাল্টা – ১
    * জামরুলঃবাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি।
    * সবজিঃলাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, কলমী শাক, পুইঁশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।
    পদ্ধতিঃ
    * হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
    * ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
    * ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
    * সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিযে ভর্তি করে নিতে হবে।


    • ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড় সমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন ভেঙ্গে না যায়।

    • রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।

    • রোপনের পর গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।

    • সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমনব্যবস্থা নিতে হবে।

    • রোপনের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।

    • গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

    • গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দপেষ্ট লাগাতে হবে।



    পরিচর্যাঃ
    ডাল-পালা ছাঁটাই ঃ
    কুল খাওয়ার পর ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি গাছের সমস্ত ডাল কেঁটে দিতে হবে। তাছাড়াও মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল গুলো কেটে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
    কুল গাছ ছাটাই
    টব বা ড্রামের মাটি পরিবর্তনঃ
    প্রতি বছর না হলেও ১ বছর অন্তর অস্তর টবের পুরাতন মাটি পরিবর্তন করে নতুন গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে পুনরায় টবটি/ ড্রামটি ভরে দিতে হবে। এ সময় খেয়াল বাখতে হবে গাছ যেন বেশী ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। তাই এক স্তর বিশিষ্ট ড্রামের পরিবর্তে দ্বিস্তর বিশিষ্ট ড্রাম ব্যবহার করা উত্তম।
    বালাই দমন ঃ
    বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম বা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাই নাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও-১ ব্যাবহার করা যেতে পারে।

    মিলি বাগ ঃ
    পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
    লক্ষনঃ
    * পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়।
    * পোকা উড়তে পারেনা।
    * টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে।
    * গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায় ।
    * অনেক সময় পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।

    দমনঃ
    হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
    পেয়ারায় মিলি বাগ লেবু গাছে মিলি বাগ কুল গাছে মিলি বাগ

    সাদা মাছি ঃ
    পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
    লক্ষনঃ
    * পাতার নিচে সাদা তুলার মত মাছি পোকা দেখা যায়।
    * পোকা উড়তে পারে।
    * গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ঝরে পড়ে, পরবর্তী
    মৌসুমে ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়।
    * পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
    দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হুইল পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
    সাদা মাছি স্যুটি মোল্ড
    শুটি মোল্ডঃ
    ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। পাতার ওপর কাল কাল পাউডার দেখা দেয়। গাছের ফলন ব্যহত হয়। আক্রমর ব্যাপক হলে পাতা ও ফল ঝরে যায়।

    দমনঃ
    টিল্ট-২৫০ ইসি, প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

    ছাদ থেকে সতেজ সবজি

  • Share The Gag
  • ছাদ থেকে সতেজ সবজি

    ছাদে বাগান করার শখ রয়েছে অনেকেরই। ফ্ল্যাটে বা বাসা-বাড়িতে সব সময় শখ পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকে না। থাকলেও ফুলের টবে কয়েকটি ফুল গাছ—ব্যস, এ পর্যন্তই। শাকসবজি করার কথা তাঁরা ভাবতেই পারেন না। ভাবেন, নিশ্চয় বড় জায়গা লাগবে। আর পরিচর্যাই বা কীভাবে করবেন।

    সঠিক প্রক্রিয়া জানা থাকলে এই ভেজাল ও ফরমালিনের দিনে ঘরেই পেতে পারেন সতেজ সবজি। মডেল ও অভিনয়শিল্পী ফারিয়াদের বাসার কথাই ধরা যাক। তাঁর মা এম এ জাহান সারা বছর ছাদেই সবজি ফলান।মৌসুমের প্রায় সব শাকসবজি তাঁর বাগানে রয়েছে।

    তিনি নিজে জৈব সার তৈরি করেন তাঁর বাগানের জন্য। এম এ জাহান বলেন, ‘এখনকার বাজারে যেসব শাকসবজি পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই রাসায়নিক পদার্থ ও ফরমালিনযুক্ত। পরিবারের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই বাগান করা। শুধু শাকসবজি নয়, নানা ধরনের ফলের গাছও রয়েছে আমাদের বাগানে।’ ফারিয়াও সময় পেলে মাকে বাগান পরিচর্যার কাজে সাহায্য করেন।

    কীভাবে করবেন ছাদের বাগান

    প্রশিকার প্রকল্প সমন্বয় সহযোগী ও কৃষিবিদ হাসি রানি বিশ্বাস বলেন, ‘বাড়ির ছাদের ৩০০ বর্গফুট জায়গায় সারা বছরের সবজি উৎপাদন করা যায়। এতে ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না। বাগানের পেছনে প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় দিলেই হবে।’

    ছোট ছোট বেড তৈরির মাধ্যমে অনেক ধরনের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। আর একটা বেডে তিন ধরনের সবজি চাষ করা সম্ভব। যেমন যদি কেউ চান তাহলে একটা বেডে টমেটো, বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাষ করতে পারেন।

    বেডগুলো তৈরি করার জন্য ৮ x ২ ফুট আকারের বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে নিতে হবে। এবার তা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে তাতে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ জৈব মাটি দিতে হবে। জৈব মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা রোপণ বা বীজ বপন করা হয়। গ্রীষ্মকালে এক দিন পর পর পানি দিতে হবে। সকালে বা দুপুরে পানি দেওয়া যাবে না। শুধু বিকেলে পানি দিলেই হবে। চারা লাগানোর এক মাস পর প্রতি গাছে ২৫০ গ্রাম জৈব সার এবং ১০০ গ্রাম ছাই দিতে হবে। যাঁরা টবে করতে চান, তাঁরাও একইভাবে জৈব মাটি দিয়ে বাগান করতে পারেন। মাটি দিয়ে টবের সম্পূর্ণ ভরাট করা যাবে না। টবে করলে দুই দিন পর পর নিড়ানি দিয়ে হালকাভাবে খুঁচিয়ে মাটি আলাদা করে দিতে হবে। বাড়ির আবর্জনা দিয়ে জৈব মাটি তৈরি করা যায়।

    বর্তমানে ঢাকায় প্রশিকা নামক একটি সংস্থা কম খরচে বাড়ির ছাদে অরগ্যানিক ফসল চাষের জন্য প্যাকেজ-সেবা চালু করেছে। এতে প্রতি বেডের তিন বছরের জন্য খরচ পড়বে এক হাজার ৪৪০ টাকা। এর সঙ্গে প্রতি মৌসুমে চারা বাবদ খরচ ১৩০ টাকা।

    সাগর কলা চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত

  • Share The Gag
  • টবে সাগর কলা

    নরসিংদী সদর, পলাশ, ঘোড়াশাল, শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা হয় সাগর কলা । সাগর কলার সমকক্ষ কলা শুধু এ দেশে নয়, বিদেশেও বিরল । মাঝারি আকার ও হলুদ রঙের এ কলার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয় । বাংলাদেশের কলার বাজারে অর্ধেকেরও বেশী স্থান দখল করে আছে অমৃত সাগর কলা । বর্তমানে ছাদেও এর চাষ শুরু হয়েছে । কলা চাষের জন্য অপেক্ষাকৃত একটু বড় টবের প্রয়োজন হয় ।

    @ জমি তৈরি ও চারা রোপন @

    জমি তৈরী

    বারবার চাষ দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরী করে নিতে হয়। অমৃত সাগর কলার জন্য ২ x ২ মি. দূরত্বে কাঠি পুঁতে চারা রোপণের জায়গা চিহ্নিত করা হয়। কাঠিটিকে কেন্দ্র করে ৪৫ x ৪৫ x ৪৫ সে. মি. গর্ত খুড়তে হয়। এ সময় গর্তের উপরের মাটি আলাদা রাখতে হবে। গর্তটি ১০-১৫ দিন উম্মুক্ত ফেলে রাখাই ভাল। প্রথমে জৈবসার উপরের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে ফেলতে হবে। এরপর মাটি দেয়ে গর্তটি সম্পূর্ণ ভরে ফেলতে হবে। মেহের সাগর কলার বেলায় ১.৮ x ১.৮ মি. দূরত্বে রোপণ করা যেতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম দূরত্বে (১.৫ x ১.৫ মি.) বামুন জাতগুলো রোপণ করা চলে।

    @ চারা সংগ্রহ ও রোপণ @

    বেশী পুরানো বাগান হতে চারা সংগ্রহ না করা উত্তম। পুরানো বাগানের কন্দ উইভিল পোকাক্রান্ত হতে পারে। গর্তে সার প্রয়োগের পর চারা রোপণ করতে হয়। সোর্ড সাকার/তরবারি চারা রোপণ করাই উত্তম। প্রতি হেক্টরে ২ x ২ মিটার দূরত্বে ২৫০০টি, ১.৮ x ১.৮ মি. দূরত্বে ৩০৮৬টি ও ১.৫ x ১.৫ মি. দূরত্বে ৪৪৪০টি সাকারের প্রয়োজন হয়।

    @ রোপণ সময় @

    কলার চারা বছরে ৩ মৌসুমেই রোপণ করা যায়। মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ। মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে এবং মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর

    @ সার প্রয়োগ @

    প্রতি কলা গাছে নিন্মরুপে সার ব্যবহার করতে হবেঃ

    সার সারের পরিমান* পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
    জমি তৈরির সময় দেয় (হেক্টর প্রতি) গর্তে দেয় ১ম কিস্তি ২মাস পর ২য় কিস্তি ৪মাস পর ৩য় কিস্তি ৬মাস পর

    গোবর ১২ টন ৬ কেজি – – –
    খৈল – ৫০০ গ্রাম – – –
    ইউরিয়া – ১২৫ গ্রাম ১২৫ গ্রাম ১২৫ গ্রাম ১২৫ গ্রাম
    টিএসপি – ২৫০ গ্রাম – – –
    এমপি – ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
    জিপসাম – ১০০ গ্রাম – – –
    জিংক সালফেট – ১০ গ্রাম – – –
    বোরিক এসডি – ৫ গ্রাম – – –

     


    • মাটির উর্বরতাভেদে সার ও তার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।



    @ অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা @

    সেচ
    শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছ বৃদ্ধির প্রথম অবস্থায় বিশেষ করে রোপণের প্রথম চারমাস কলা বাগান আগাছা মুক্ত রাখা খুব জরুরী । কলা বাগানের জমিতে যাতে পানি না জমে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। প্রয়োজন হলে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা কেটে দিতে হবে ।

    আন্তঃফসল

    চারা রোপণের প্রথম ৪-৫ মাস বলতে গেলে জমি ফাকাই থাকে। যদি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয় তবে কলা বাগানের মধ্যে আন্তঃফসল হিসাবে রবি মৌসুমের সবজি চাষ করা যেতে পারে। তবে এসব আন্তঃফসলের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সার দিতে হবে। জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী (মাঘ) মাসে চারা রোপণ করলেও আন্তঃফসল হিসাবে কুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, শসা ইত্যাদি বাড়তি ফসল উৎপাদন করা যায়।

    ফলের যত্ন

    গাছে থোড় আসার পরপরই গাছ যাতে বাতাসে ভেঙ্গে না যায় সেজন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাতাসের বিপরীত দিক থেকে গাছে ঠেস দেয়া খুবই জরুরী। থোড় থেকে কলা বের হওয়ার আগেই গোটা থোড় স্বচ্ছ বা সবুজ পলি ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেয়া দরকার। পলি ব্যাগের নীচের দিকের মুখ একটু খোলা রাখতে হবে।

    @ পোকা ও রোগ দমন @

    পোকামাকড়

    কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা
    কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা দিনের বেলা পাতার গোড়ায় লুকিয়ে থাকে এবং রাত্রে বের হয়ে কচি পাতার সবুজ অংশের রস চুষে খায়। ফলে অসংখ্য দাগের সৃষ্টি হয়। কলা বের হওয়ার সময় হলে পোকা মোচার মধ্যে ঢুকে কচি কলার রস চুষে খায়। ফলে কলার গায়ে বসন্ত রোগের দাগের মত দাগ হয়। এ পোকা দমনে নিন্মলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
    ক) পোকা আক্রা্ন মাঠে বার বার কলা চাষ না করা।
    খ) কলার মোচা বের হওয়ার সময় পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে এ পোকার আক্রামন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
    গ) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম সেভিন ৮৫ ডব্লিউ পি অথবা ম্যালাথিয়ন অথবা লিবাডিস ৫০ ইসি ২ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর গাছের পাতার গোড়ায় ছিটাতে হবে।

    @ রোগবালাই @

    পানামা রোগ
    এটি একটি ছত্রাক জাতীয় মারাত্নক রোগ। এ রোগের আক্রমণে প্রথম বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রঙ ধারণ করে। পরবতীতে পাতা বোটার কাছে ভেঙ্গে গাছের চতুর্দিকে ঝুলে থাকে এবং মরে যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কচি পাতাটি গাছের মাথায় খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে গাছ মরে যায়। কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বি ভাবে ফেটেও যায়। এ রোগ দমনে নিন্মলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
    ক) আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
    খ) আক্রান্ত গাছের সাকার চারা হিসেবে ব্যবহার না করা।
    গ) পানামা রোগ প্রতিরোধকারী চাম্পা জাত ব্যবহার করা।

    বানচি-টপ ভাইরাস রোগ

    এ রোগের আক্রমণে গাছের পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা আকারে খাটো, অপ্রশস্থ এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে। কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাঁকানো এবং সামান্য হলুদ রঙয়ের হয়। অনেক সময় পাতার মধ্য শিরা ও বোটায় ঘন সবুজ দাগ দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছে কোন সময় মোঁচা আসেনা। নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগ দমন করা যায়।
    ক) ভাইরাস বহনকারী এফিড পোকা দমনে রগর বা সুমিথিন (২ মি.লি./লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।)
    খ) আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
    গ) বানচি-টপ রোগ প্রতিরোধকারী চাম্পা জাত ব্যবহার করা।

    সিগাটোকা রোগ
    এ রোগের আক্রমণে প্রাথমিকভাবে ৩য় বা ৪র্থ পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। ক্রমশ দাগগুলো বড় হয় ও বাদামি রং ধারণ করে। এভাবে একাধিক দাগ বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং তখন পাতা পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়। নিন্মোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগ দমনে রাখা হবে।
    ক) আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
    খ) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট-২৫০ ইসি অথবা ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে

    @ মুড়ি ফসল @

    চারা রোপণের প্রথম ৪-৫ মাস পর সাকার (ফেকড়ি) বের হওয়া শুরু করে। কলাগাছে থোড় বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর মাটির ৫ সে.মি. উপরে ধারালো হাসুয়া দিয়ে সবগুলো চারা কেটে ফেলে দিতে হবে। থোড়া বা ফুল বের হবার পর পছন্দমত জায়গায় কোন একটি চারাকে বাড়তে দেয়া উচিত যেটি মুড়ি ফসল হিসেবে পরবর্তীতে বেড়ে উঠবে ও ফল দিবে। মুড়ি ফসলের জন্য সমান বয়সের চারা নির্বাচন করতে হবে

    Wednesday, June 14, 2017

    খাদ্যে বিষ : আইন আছে প্রয়োগ নেই

  • Share The Gag
  • খাদ্যে বিষ : আইন আছে প্রয়োগ নেই

    সভ্যসমাজে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি একেবারে অকল্পনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটি নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কোথায় ভেজাল নেই, সেটি নিয়েই এখন গবেষণা করা দরকার। অনেকে ভেজাল খাদ্যের ভয়ে মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও চলছে ভেজাল। আমাদের দেশে ভেজালের যে সর্বগ্রাসী আগ্রাসন তাতে মনে করা যেতেই পারে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা সভ্যতার মাপকাঠিতে এদিক থেকে জংলি যুগের চেয়েও পিছিয়ে আছি। কারণ আর যাই হোক, জংলি যুগের অধিবাসীরা ভেজালের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা ভাবতেও পারত না। প্রশ্ন ওঠে, দেশে সরকার, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত থাকা সত্ত্বেও ভেজালের দৌরাত্ম্য কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না। 'নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩' হয়েছে তাতেও কিছুই এসে যায় না, ভেজালকারীদের দাপট চলছেই। এভাবেই কি চলবে?

    মীর আব্দুল আলীম

    দেশে আইনের অভাব নেই। আছে শুধু কার্যকর প্রয়োগের অভাব। তাই নয়া আইন হলেও খাদ্যে ভেজাল বন্ধ হয়নি। 'খাদ্যে ভেজাল রোধে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত' ১২ জুনের জাতীয় দৈনিকর প্রধান শিরোনামের সচিত্র প্রতিবেদন তারই অকাট্য প্রমাণ। ছবিতে প্রকাশ্যেই আমে ফরমালিন মেশাচ্ছে কৃষক। ২০১৫ সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ কার্যকর করা হয়েছে। ১ বছরে এ আইনের কতটা প্রয়োগ হয়েছে। এতটুকুও ভেজাল রোধ হয়নি। রোজা আর মধুমাসে ফলে ফরমালিন ও কারবাইডের দাপটের কথা লিখছে পত্রিকাগুলো। সবকিছুতে এত ভেজাল যে তা রোধ করা যাবে কিনা সে প্রশ্ন সামনে আসে। এ দেশে মাছ, মাংস, দুধ, ফলমূলে ব্যবহৃত হয় ক্ষতিকর ফরমালিন। রঙিন খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সস্তায় প্রাপ্ত কাপড়ের রং, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। মুড়ি ভাজতে ইউরিয়া, কলা পাকাতে কার্বাইড, এমনই আরো কত কী। তেল, মসলা, আটা, ময়দা তথা প্রায় প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যেই ভেজালের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাহলে মানুষ কী খাবে? জেনেশুনেই কি বিষ খাব? খাচ্ছে তো। না খেয়ে উপায় কী। দেশের মানুষকে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব সরকারের। নিরাপদ খাদ্য আইন করা হয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করা হলে ভেজাল রোধ হবে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি মাসেও এ আইনের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়নি। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি 'যেই লাউ সেই কদু' অবস্থায়ই আছে।

    অতিসম্প্রতি খবরের কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে একটি খবর। 'মাছে-ভাতে বাঙালির মাছে ফরমালিন আর ভাতের চালে প্রাণঘাতী ক্যাডমিয়াম!' বাঙালি মাছ-ভাত খেয়েই বাঁচে। সে জায়গায়ও বিষের ছড়াছড়ি। খাদ্যও যদি অনিরাপদ হয়ে পড়ে তাহলে দেশের মানুষ কী খাবে? এ দেশে নিরাপদ খাবার আদৌ কি আছে? কেবল মাছ-ভাত নয়, সব খাবারই তো ভেজালে ভরা। ভেজাল খেয়ে গোটা জাতি আজ রোগাক্রান্ত। অথচ অতিসহজেই এ দেশকে ভেজালমুক্ত করা সম্ভব। সরকারের সদিচ্ছা নেই তাই দেশ ভেজালমুক্ত হচ্ছে না। ভেজাল রোধে কোনো সরকারই সচেষ্ট নয়। তাই ভেজাল খাদ্যে ভরে গেছে দেশ। আমরা যা খাচ্ছি তার অধিকাংশই ভেজালে ভরা। খাদ্যে যে ভেজাল দেয়া হয় আর ভেজাল যে রোজই খেয়ে যাচ্ছি তা আজ অবুঝ শিশুরাও অবগত। শিক্ষকদের কাছে শিখে তারা ভেজাল বিষয়ে সচেতন হলেও কীই বা করার আছে তাদের। সেদিন রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রের প্রশ্ন ছিল এমন_ 'বাবা! কচুতে মাছি, ফলে নেই কেন?' বাবার কাছে প্রশ্নটা করলেও উত্তরটা কিন্তু তার ঠিকই জানা। স্কুল ছুটির পর ফুটপাত ধরে রিকশার সন্ধানে ছেলে হেঁটে যাচ্ছে বাবার সঙ্গে। পথে ফেরিওয়ালাদের নানা ফল আর সবজির দোকান। লোভনীয় ফলে মাছি ভনভন করার কথা কিন্তু কোথাও মাছি নেই। আজব ব্যাপার হলো, পাশের মহিলা সবজি বিক্রেতার কচুশাকে মাছিরা দৌড়ঝাঁপ করছে। তাই দেখে ওই শিক্ষার্থী বাবাকে এমন প্রশ্ন করে বসে। সে জানে বিষাক্ত ফরমালিন আর কার্বাইডের কারণে মাছি নেই ফলে। পত্রপত্রিকা আর টিভি দেখেও সে এসব জেনেছে। তাই বাবার কাছে ছেলের এমন রহস্যজনক প্রশ্ন। আর ওই শিক্ষার্থীর বাবা ছেলের এমন প্রশ্নের জবাব দিতেও বিব্রত।

    বিমানের যাত্রী হয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে যাচ্ছিলাম। আকাশে বিমান উড়তেই সামনের সিটে বসা দুই যাত্রীর ফিসফিস শব্দ কানে এলো। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই অনুচিত হলেও কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম। একপর্যায়ে তাদের রসাল বক্তব্যে আমার কৌতূহল আরো বাড়ল। যাত্রীদ্বয় সুশিক্ষিত এবং সচেতন এ বিষয়ে দ্বিধা নেই। কানে আসা ছন্দময় বাক্যটি ছিল এমন_ 'প্রাণ কি কাড়বে প্রাণ?' প্রাণ কোম্পানির খাদ্যে ভেজাল তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু। প্রাণ কোম্পানির বাজারজাতকৃত খাদ্যে ভেজাল নতুন নয়। অতিসম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও প্রাণের ভেজাল পণ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেবল প্রাণ নয়, ভেজালে ছেয়ে গেছে দেশ। কাজে ভেজাল, কথায় ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, সর্বোপরি খাদ্যদ্রব্যেও ভেজাল আর ভেজাল। বোধ করি এমন ভেজাল আর কোনো দেশেই নেই। ছোটবেলায় আমার চাচা বলতেন, 'বাবারে! কম খাবি তো বেঁচে যাবি।' তার কথা কম খাদ্যে কম ভেজাল আর তাতেই তার দৃষ্টিতে বেঁচে যাওয়া। তিনি বেঁচে নেই কিন্তু তার কথার মর্ম এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
    ভাবী, এসব কী হচ্ছে দেশে। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে না তো? ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেটার মাথার চুলে চোখ পড়তেই চোখ যেন ছানাবড়া। সাদা চুলে আটকে গেল চোখ। অসংখ্য চুলে পাক ধরেছে। ভাগ্নেটার চোখে মোটা পাওয়ারওয়ালা চশমা। বিছানায় কাতরাচ্ছে ক্যান্সারে আক্রান্ত চাচা। খাবারে ভেজালের জন্যই এমনটা হচ্ছে। ভেজাল নেই কোথায়? চিকিৎসায় ভেজাল, কথায় ভেজাল, রাজনীতিতে ভেজাল। কোথাও যেন এক দ- শান্তি নেই। এমন হচ্ছে কেন? আমরা খাবার খাচ্ছি, না বিষ খাচ্ছি? চারদিকে ফরমালিনের জয়জয়কার। মাছ, আম, জাম, কাঁঠাল, তরকারিতে কোথায় নেই এই জীবনহন্তারক ফরমালিন। তেলে ভেজাল, চালে এমনকি নুনেও ভেজাল। কেউ কেউ তো বলেনই বিষেও নাকি ভেজাল। তাই যা হওয়ার নয়, তাই হচ্ছে। কিডনি নষ্ট হচ্ছে, হচ্ছে হাইপ্রেসার, ক্যান্সার আর হার্টস্ট্রোকে অহরহ মরছে মানুষ। আমাদের অতি আদুরে সন্তানরা অকালে ঝরে যাচ্ছে এসব অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে। প্রতিটি খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষ। আর সেই বিষ খেয়ে আমরা আর বেঁচে নেই। জীবিত থেকেও লাশ হয়ে গেছি। এ যেন জিন্দা লাশ। রোগে-শোকে কয়েকটা দিন বেঁচে থাকা এই আর কি। প্রতিনিয়তই তো বিষ খাচ্ছি। কদিন আগে এক বিখ্যাত কলামিস্ট তার লেখায় লিখেছিলেন, 'আমরা প্রতিজনে, প্রতিক্ষণে, জেনেশুনে করেছি বিষপান।' আরেকজন লিখেছেন, 'কত কিছু খাই ভস্ম আর ছাই।'

    জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল এমন 'মাছের বাজারে মাছি নেই, ফলে মাছি নেই'। প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে কোনো এক মাত্রায় বিষ মেশানো আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এ বিষই আমাদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিচ্ছে। কেবল হাসপাতালগুলোয় গেলেই বোঝা যায় কত প্রকার রোগই না এখন মানবদেহে ভর করে আছে। আসলে আমরা জেনেশুনেই বিষ খাচ্ছি। না খেয়ে উপায়ই বা কী? তবে উপায় একটা আছে। না খেয়ে থাকলে এ থেকে যেন নিস্তার মিলবে। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। তাই আমে, মাছে, সবজিতে বিষ মেশানো আছে জেনেও তা কিনে নিচ্ছি। আর সেই বিষ মেশানো খাবারগুলোই সপরিবারে গিলে চলেছি দিনরাত।

    ভেজাল ঠেকাতেই বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন)। জনস্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ বিভাগটির সুফল আশান্বিত হওয়ার মতো নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভেজাল ও অননুমোদিত খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে বিএসটিআই মাঝেমধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। আদায় করে লাখ লাখ টাকা জরিমানাও। কিন্তু তাদের এ কর্মকা- অনেকটাই লোক দেখানোর মতো। ভেজালের দায়ে অভিযুক্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই জরিমানা পরিশোধের পর সবাইকে ম্যানেজ করে আবারো সেই একই অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এর জন্য বিএসটিআইকেই দায়ী বলে মনে করেন। নিধিরাম সর্দারের মতো শুধু মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায়ের মধ্যে সীমিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা। ফলে ভেজালের কারবারিরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাই মাছে মিলছে বিষাক্ত ফরমালিন, ফলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, প্রোফাইল প্যারা টিটিনিয়াম (পিপিটি) পাউডার, বিস্কুটসহ বেকারি দ্রব্যে রয়েছে বিষসমতুল্য রং আর মুড়িতে মেশানো হচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ইউরিয়া সার। এর বাইরেও রয়েছে নানা রাসায়নিক সংমিশ্রণের কারসাজি।

    সভ্যসমাজে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি একেবারে অকল্পনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটি নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কোথায় ভেজাল নেই, সেটি নিয়েই এখন গবেষণা করা দরকার। অনেকে ভেজাল খাদ্যের ভয়ে মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও চলছে ভেজাল। আমাদের দেশে ভেজালের যে সর্বগ্রাসী আগ্রাসন তাতে মনে করা যেতেই পারে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা সভ্যতার মাপকাঠিতে এদিক থেকে জংলি যুগের চেয়েও পিছিয়ে আছি। কারণ আর যাই হোক, জংলি যুগের অধিবাসীরা ভেজালের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা ভাবতেও পারত না। প্রশ্ন ওঠে, দেশে সরকার, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত থাকা সত্ত্বেও ভেজালের দৌরাত্ম্য কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না। 'নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩' হয়েছে তাতেও কিছুই এসে যায় না, ভেজালকারীদের দাপট চলছেই। এভাবেই কি চলবে?

    খাদ্যে বিষ: যন্ত্রের ভুল ফলাফলে বেকায়দায় ডিসিসি ও ব্যবসায়ীরা

  • Share The Gag
  • খাদ্যে বিষ: যন্ত্রের ভুল ফলাফলে বেকায়দায় ডিসিসি ও ব্যবসায়ীরা

     

    নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে রাজধানীর প্রতিটি কাঁচা বাজারে অভিযান চালিয়ে আসছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি)। খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে ব্যবসায়ীদের তারা জেল-জরিমানাও করছেন। কিন্তু যে মেশিন ও কিট দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেগুলোর একটিও সঠিক ফলাফল দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বিক্রেতা তার পণ্যে ফরমালিন থাকার কথা স্বীকার করলেও যন্ত্রে তা ধরা পড়ছে না।

    অন্যদিকে যে ফল বা মাছে ফরমালিনের লেশমাত্র উপস্থিতি নেই, সিটি করপোরেশনের সেই যন্ত্র বলছে- তাতে ফরমালিন রয়েছে। পুরো বিপরীত ফলাফল দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ফরমালিন থাকার অভিযোগে ধ্বংস করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ফল ও মাছ। প্রায়ই বিনা দোষে এই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে বেকায়দায় আছেন দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও।

    সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই সিটি করপোরেশনে ফরমালিন শনাক্তের ২০টি মেশিন রয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) উদ্ভাবিত এ যন্ত্রগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, বিষয়টি আমলে নেন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরপর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে তাদের জানানো হয়।

    রমজান শুরুর পর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে দুই সিটি করপোরেশন ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য কয়েকটি টিম গঠন করে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে কাজ করবে আটটি ভ্রাম্যমাণ টিম। কিন্তু ফরমালিন যন্ত্র ভুল ফলাফল দেওয়ায় ও সঠিক যন্ত্র সংগ্রহ না করায় এবারের রমজান ও ফল মৌসুমে ধারণা বা অভিযোগের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাদের।

    করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শকরা বলছেন, ক্রেতাদের পাশপাশি বিক্রেতারাও নিশ্চিত করেন যে, মাছে ফরমালিন রয়েছে। কিন্তু ওই মাছ পরীক্ষা করলে যন্ত্রের ফলাফলে দেখা যায়, সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত। এভাবে গত দুবছর ধরে চলে আসছে। এসময়ের মধ্যে মাছ ও ফলে কোনও ফরমালিন ধরা না পড়ায়, বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।

    এরপর উচ্চ আদালতে রিট হলে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর খাদ্য ও ফলমূল পরীক্ষার জন্য সঠিক ফরমালিন যন্ত্র নির্বাচন এবং সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু দুবছর ধরে চিঠি চালাচালি হলেও এখনও পর্যন্ত বিসিএসআইআর থেকে কোনও উত্তর পায়নি সিটি করপোরেশন। তাছাড়া যন্ত্রও সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থা দুটি। মূলত এরপর থেকেই সিটি করপোরেশনের ফরমালিন শনাক্ত অভিযান বন্ধ রয়েছে।

    সিটি করপোরেশন থেকে বিসিএসআইআর-কে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত ফরমালিন টেস্ট কিট দিয়ে করপোরেশনের আওতাধীন সব বাজারে সরবরাহকৃত মাছ পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে এই যন্ত্রগুলো দিয়ে মাছে কোনও ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কী উপায়ে ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হবে, সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানাতে অনুরোধ করা হলো।’

    ফল বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আসা ফলে কার্বাইড ও ফরমালিন মেশানো হয়। এ দুধরনের রাসায়নিকের মধ্যে কার্বাইড দিয়ে দ্রুত ফল পাকানো হয়। আর ফরমালিন দিয়ে দীর্ঘদিন তাজা রাখা হয়। এসব রাসায়নিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

    এ বিষয়ে কাওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকার বাগান থেকে ফল পেড়ে ঢাকায় আনি। হঠাৎ দেখি সিটি করপোরেশন, র‌্যাব ও পুলিশের লোকজন এসে পরীক্ষা করে বলে ফরমালিন আছে। এভাবে আমাদের লাখ লাখ মন ফল ধ্বংস করা হয়েছে। পরে আমরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করি। ওই মেশিনগুলো ফরমালিন পরীক্ষার সঠিক যন্ত্র নয় বলে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।’

    এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে মাছ পরীক্ষার জন্য অনেকেই আসতো। কিন্তু এখন সিটি করপোরেশনের কেউ আসে না। যে মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় সেগুলো নষ্ট। তবে মৎস্য অধিদফতরের লোকজনকে মাঝে-মধ্যে দেখা যায়। জাপান থেকে আমদানি করা তাদের প্রায় ১৬টি মেশিন রয়েছে। তারা পরীক্ষা করে মাঝে-মাঝে ফরমালিন পায়। অনেককে জেলও দিয়েছে। তবে রমজান মাসে একবারের জন্যও তারা আসেনি।’

    রামপুরার বাসিন্দা নাহিদা আক্তার ইফতারের সঙ্গে খাবেন বলে মেরাদিয়া হাট থেকে ফল কিনেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা যা-ই বিক্রি করছে আমরা তা-ই কিনছি। কী আছে না আছে জানি না। তবে ফলের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফরমালিন রয়েছে। কারণ, ফরমালিন থাকলে সে ফলে মাছি-মশা বসে না। সরকার যদি এসব ফল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে, তাহলে নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে।’

    এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জেনারেল ডা.এস এম এম সালেহ ভূঁইয়া বলেন, ‘কিট বা যন্ত্রগুলো দিয়ে এখন আর ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে না। আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, এই যন্ত্রগুলো সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না।’

    দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, তাদের কাছে ফরমালিন শনাক্ত করার জন্য ১০টি মেশিন রয়েছে। প্রতি মাসে নগরীর বাজারগুলোতে নিরাপদ খাদ্য আইনে পরিচালিত অভিযানের তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হয়। এই মেশিনগুলো দিয়ে কোনও সফলতা না পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তাছাড়া আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান দুটি ফল ও মাছে ফরমালিন পরীক্ষার সঠিক কোনও যন্ত্রই সংগ্রহ করতে পারেনি।

    তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যন্ত্রগুলো বিকল কিনা তা আমার জানা নেই।’

    যন্ত্রের এই দশা সম্পর্কে ডিএসসিসির একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত দুবছর ধরে মেশিনগুলো দিয়ে পণ্যের ফরমালিন শনাক্ত করা যাচ্ছে না। যন্ত্রগুলো দিয়ে বাজারের ফলমূল ও মাছ পরীক্ষা করলে দেখা যাচ্ছে কোনও ফরমালিন নেই। অথচ যারা বিক্রেতা তারা আমাদেরকে বলছেন, তার কোন মাছে ফরমালিন আছে- আর কোন মাছে নেই।

    চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ মে পর্যন্ত সময়ে নিরাপদ খাদ্য আইনে স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮৫টি মামলা করেছে ডিএসসিসি। এই মামলাগুলোর মধ্যে ফরমালিন বা রাসায়নিক সংক্রান্ত কোনও মামলা নেই।

    নিরাপদ খাদ্য কি এখনো অনিশ্চিত

  • Share The Gag
  • নিরাপদ খাদ্য কি এখনো অনিশ্চিত



    সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখে একটি দৈনিকের প্রধান খবর ছিল, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখনো বহুদূরে। এ খবরের মন্তব্যে বলা হয়েছে যে আইন, বিধি প্রণয়নসহ নিরাপদ খাদ্য সংস্থা স্থাপন করা হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধান বাধা হলো ওই সংস্থার জনবলের অপ্রতুলতা।

    স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০০০ সালের প্রথমার্ধের আগে এ দেশের খাদ্যনীতিতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয় খুব অল্প গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০০ সালের প্রথমার্ধে আবার খাদ্যনীতি প্রণীত হওয়ার সময় নিরাপদ খাদ্য বিষয়টি গুরুত্ব পায়। অতীতের সব খাদ্যনীতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব খাদ্যনিরাপত্তাকেই দেওয়া হয়। তবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে ওই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্যপুষ্ট একটি কারিগরি সমীক্ষা সম্পাদন করার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়। দুজন বিদেশি পরামর্শকসহ দুজন বাংলাদেশি পরামর্শকও এ লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় ওই সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছিল। কারণ সরকারি কর্মসম্পাদন বিধির আওতায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ছিল। ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে প্রণীত বিধিমালায়ও নিরাপদ খাদ্যসংক্রান্ত বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভেজাল খাদ্য ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত খাদ্যের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিক্ষেত্রভুক্ত। কিন্তু বাস্তবে ১৯৫৯ সালে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কিত আইনে খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করা ছিল। অধিক্ষেত্রভুক্ত এ দ্বৈততা নিয়ে কেউ কোনো সময় মাথা ঘামায়নি।
    স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এ ক্ষেত্রেও দুর্বলতা ছিল প্রচুর। প্রয়োজনীয় জনশক্তির অভাব ছাড়াও অন্যান্য দুর্বলতার বিষয় ছিল উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবসহ পরীক্ষাগার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ দায়িত্ব দিলেও একই ধরনের দুর্বলতা তাদেরও ছিল। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে তারা থানা বা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালসহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে এত ব্যস্ততা তাদের ছিল যে বাজারে কী ধরনের খাদ্য বিপণন হচ্ছে তা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপর ছেড়ে দিয়ে তারা নিশ্চিত ছিল। অন্যদিকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব ছিল। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট বা বিএসটিআই। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল এবং এখনো আছে কীটনাশক অতিমাত্রায় ব্যবহার রোধসহ সার, বীজের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনসহ বিপণন প্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিম্নমানের কিছু সারের ব্যবহার, তা ছাড়া অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ কথা অনেকে অনেক সময় বিশেষ করে বলেছেন। এ ছাড়া পানিতে আর্সেনিকের মাত্রাও ঝুঁকিপূর্ণ। আর্সেনিকের মাত্রা সেচের পানিতে বেশি হলে তা খাদ্যশস্যে প্রবেশ করতে পারে। এ নিয়ে অতীতে দেশ-বিদেশে কৃষিবিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন। রান্না করা খাদ্যে এ মাত্রা স্বাস্থ্য হানিকর কি না সে বিষয়টি এখন পর্যন্ত পরিষ্কার বা নিশ্চিত নয়। অনেকটা একই যুক্তি বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এসব ঝুঁকি বন্ধ করার উপায় হিসেবে আইনের মাধ্যমে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে।

    ১৫ বা ২০ বছর আগেও মাছে ও ফলমূলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের কথা শোনা যায়নি। জানা যায়, এসব দ্রব্য ব্যবহার করে পচনশীলতা রোধ করা যায়। এ দ্রব্য অর্থাৎ ফরমালিন ব্যবহার বন্ধ করার জন্য মিডিয়া যথেষ্ট খবর প্রকাশ করে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ এ দ্রব্য মাছ বা ফলে রয়েছে কি না তা নির্ণয় করার সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করে। এ পদ্ধতি যে শতভাগ নির্ভুল নয় সে বিষয়টিও প্রচার করা হয়। এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের খুচরা ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, তাঁরা আড়তদারের কাছ থেকে এসব দ্রব্য ক্রয় করেন। তাঁরা কিভাবে জানবেন এতে ফরমালিন মেশানো রয়েছে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের জরিমানা করেন। কোনো একপর্যায়ে খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে এক বা দুদিনের ধর্মঘটও করেছিলেন। এরপর শীর্ষ ব্যবসায়ী সংস্থার উদ্যোগে রাজধানীর বাজারে বাজারে প্রচারসহ সচেতনতা সৃষ্টি করার কাজ করা হয়। কোনো কোনো বাজারকে ফরমালিনমুক্ত বাজার হিসেবে ঘোষণাও দেওয়া হয়। এরপর এ নিয়ে আর কোনো কথা শোনা যায়নি। ধরে নেওয়া হয়েছে এখন আর মাছ বা ফলে ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। সত্যিই কি তাই? অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের ফল বিদেশ থেকেই আমদানি করা হয়। ওই সব দেশের রপ্তানিকারকরা ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে কি না সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য কারো কাছে নেই। তবে বাস্তবতা হলো, এখন আর এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। ফরমালিন এখন আর মাছ বা ফলে ব্যবহার হয় না বলে ধরে নিলে বলা যায় যে একমাত্র জেল-জরিমানা করে এসব দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য সচেতনতা সৃষ্টিও অপরিহার্য।

    ২০০৬ সালের আগে যেসব খাদ্যনীতি প্রণীত হয় তার মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এরপর খাদ্যনীতিতে নিরাপদ খাদ্যও গুরুত্ব পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিত হলো ১৯৯৬ সালে এফএওর উদ্যোগে রোমে যে বিশ্ব খাদ্য সামিট (World Food Summit) অনুষ্ঠিত হয় সে সামিটে খাদ্যনিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিরাপদ খাদ্যকে গৃহীত সংজ্ঞায় জুড়ে দেওয়া হয়। ওই সময় থেকে এ সংজ্ঞা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় যে নিরাপদ খাদ্যসংক্রান্ত বিষয়ে অতীতের অর্থাৎ ১৯৫৯ সালের পিওর ফুড আইন রদ করে নতুন আইন করা হয়েছে। এর আওতায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সংস্থাও সৃষ্টি করা হয়েছে। আরো জানা যায়, বর্তমানে অন্তত ১৫টি সরকারি সংস্থা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার কাজে লিপ্ত। নতুন আইনে এখন একক কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লিখিত সংস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর জন্য নির্দিষ্ট আদালতও সৃষ্টি করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে বলা যায় যে অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আদালত যেমন দ্রুত বিচার আদালত রয়েছে। কিন্তু ফল আশাপ্রদ নয় বলে অনেকেই বলে থাকেন। এ সম্পর্কিত অন্য উদাহরণ হলো শিশু ও নারী নির্যাতন আদালত। আলোচ্য ক্ষেত্রে খাদ্য আদালতের কথা বলা হয়েছে। ১৯৭১ সাল-পূর্ববর্তী সময়ে, বিশেষ করে পঞ্চাশের দশকে এ ধরনের আদালত ছিল। কিন্তু তা ছিল খাদ্য নিয়ে কালোবাজারি বা চোরাকারবারির জন্য। সে অভিজ্ঞতাও ভালো ছিল না। বিশেষ ও নির্দিষ্ট আদালতের অন্য ঝুঁকি হলো ঢালাওভাবে জেলায় জেলায় এ ধরনের আদালত সৃষ্টি করার ইতিহাস। এ অভিজ্ঞতা অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে। পরে দেখা গেছে বেশির ভাগ জেলায় আদালত মামলাশূন্য বা এত কমসংখ্যক মামলা, যা বিশেষায়িত আদালতের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে না। অহেতুক ব্যয় বাড়ে। যে বিষয়টি প্রয়োজন তা হলো, প্রশাসনিক পরিমণ্ডলে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, যা এ ধরনের অপরাধ অঙ্কুরেই বিনাশ করতে পারে।

    খাদ্যে ভেজালসংক্রান্ত অপরাধ করার প্রমাণের জন্য যেকোনো আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য যুক্তি উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের প্রমাণের অন্যতম উৎস নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাগার। প্রকাশিত খবরে জানা যায় যে বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরীক্ষাগার মহাখালীতে জনস্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত এ পরীক্ষাগারে অন্তত ১৫টি পণ্যে স্বাস্থ্যহানিকর দ্রব্যের অস্তিত্ব নির্ণয় করা হয়েছে। এর অধিকাংশেই অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক কীটনাশক রয়েছে। কিন্তু এরপর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকলে কোনো ফল হবে না। নবসৃষ্ট এ কর্তৃপক্ষের অন্য বাধা হলো আইনটি প্রয়োগ করার জন্য কমপক্ষে সাতটি বিধি প্রণয়ন করতে হবে, যা এখনো করা যায়নি। বিধি ও জনবল না হলে আইনটি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না।

    Tuesday, June 13, 2017

    ছাদ বাগানে জামরুল চাষ

  • Share The Gag
  • ছাদ বাগানে জামরুল চাষ

    হঠাৎ করে কিনে শাড়ি-জামা পরা যায়, গাছ লাগানো যায় না। লাগানোর অন্তত দু-তিন সপ্তাহ আগে থেকে ভাবতে হয়, সে অনুযায়ী গর্ত করে গর্তে সার-মাটি ভরে রাখতে হয়। ছাদে বাগান এখন অনেকেই করছেন। তথ্য মতে, ঢাকায় প্রায় দেড় হাজার ছাদ বাগান রয়েছে। সেসব বাগানে নানা রকম ফল, ফুল ও বাহারি গাছ শোভা পাচ্ছে। তবে ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। বাজার থেকে যেসব ফল কিনছেন তা নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো, যে সবজি কিনছেন তাতে পোকা মারার বিষ দেয়া। তাই ওতে স্বাস্খ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া ফল ও সবজি গাছ থেকে তোলার পরই তার ভিটামিন কমতে থাকে। তাই বিষমুক্ত টাটকা ফল ও সবজি পেতে হলে নিজের আঙিনাতেই একটা ছোট্ট বাগান গড়ে তুলতে হবে। বাড়িতে কোথাও ফাঁকা জায়গা না থাকলে খোলা ছাদটাকে এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তাই ঝটপট পরিকল্পনা করে ফেলুন, এবার ছাদে কী কী গাছ লাগাবেন। ছাদে ভালো হয় এমন ফলের মধ্যে নানা জাতের জামরুল, করমচা, পেয়ারা, কাগজী লেবু, আম্রপালি আম, বারি আম ৪, ডালিম, কামরাঙ্গা, হাইব্রিড জলপাই, বাউকুল ও আপেল কুল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি অন্যতম। এ বছর না হয় এ ১০টি ফল দিয়েই শুরু করুন আপনার ছাদে ফলবাগানের যাত্রা। শুরুটা হোক নানা জাতের রূপবতী জামরুল দিয়ে।
    জামরুলের আদি বাসভূমি আন্দামান-নিকোবর হলেও এখন আমাদের দেশী ফলে পরিণত হয়েছে। কাঁচাপাকা সব অবস্খাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশী ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল।
    সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল।

    জাত বাছাই দেশী জামরুল:
    ফল আকারে ছোট, স্বাদে পানসে। তবে ফল ঝরে কম। দেশী জাতের জামরুলের বেশ কয়েক রঙের জামরুল দেখা যায়। লাল, গোলাপি, গোলাপি সবুজ ইত্যাদি রঙে দেশী জামরুলের কয়েকটি রকম আছে। গাছ বড় হওয়ায় ছাদে না লাগানোই ভালো।

    থাই জামরুল:
    থাই ভাষায় ছেম ফু পা, ফিলিপাইনে টামবিস, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় জামবু এয়ার নামের জামরুল বাংলাদেশে এসে হয়েছে থাই জামরুল। এ দেশে এখন কয়েক জাতের থাই জামরুল দেখা যাচ্ছে। এক জাতের থাই জামরুলের রঙ মোমের মতো সাদা, কিন্ত মুখের কাছে গোলাপি আভা। অন্য এক জাতের থাই জামরুলের রঙ সবুজাভ সাদা, অন্যটির রঙ দুধের মতো সাদা। আবার আরেক জাত আছে যেটার ফলের ওপর সাদা লম্বালম্বিভাবে গোলাপি আঁচড় আছে। আবার বড় লাল ফলও রয়েছে থাই জামরুলের। আছে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকার। লাল রঙের থাই জামরুলের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে সব জাতের সেরা বড় আকারে সাদা রঙের মিষ্টি থাই জামরুল। দশটিতে কেজি হয়। স্বাদে বেশ রসাল, নরম। গ্রীষ্মের প্রথম থেকে ফল ধরতে শুরু কর্ বর্ষাতেও ফল ধরে। বছরে দু-তিন দফায় ফল ধরে। তবে বর্ষার জামরুলের স্বাদ কম হয়। ফল গাছে বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়, চেহারা নষ্ট হয়ে যায় ও পচতে শুরু করে। বেশি বৃষ্টিতেও থাই জামরুলের ক্ষতি হয়।

    রোজ অ্যাপেল:
    থাই জামরুলের মধ্যে ‘রোজ আপেল’ সেরা। বছরে দু’বার ফল ধরে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একবার, এপ্রিল-মে মাসে আরেকবার। ফল আকারে খুব বড়। পাঁচ-ছ’টা জামরুলে এক কেজি হয়। ভেতরে পুরোটাই শাঁস। অত্যধিক মিষ্টি, শাঁসে চিনি বা সুগারের পরিমাণ প্রায় ২৫%। রঙ টকটকে লাল। অন্য জামরুল যেমন পাকার পর পরই গাছ থেকে ঝরে পড়ে, এটা তেমন নয়।

    আপেল জামরুল (বারি জামরুল ১):
    বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এ জাতটির গাছে নিয়মিত প্রতি বছর ফল ধরে। এ জাতের পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয়। ফলের রঙ মেরুণ বলে অনেকে একে আপেল জামরুল নামেও ডাকেন। খেতে সুস্বাদু, মধ্যম রসালো। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসে ফল পাকে। ফল বড়, প্রতিটি ফলের ওজন ৩৫ গ্রাম। এ জাতটি ছাদে ড্রামে লাগানোর জন্য বাছাই করতে পারেন।

    চাষ পদ্ধতি:
    আধুনিক জাতের জামরুলের গাছ হয় ঝোঁপালো ও খাটো। তাই এসব জাতের গাছ ছাদে হাফ ড্রামে লাগানো যেতে পারে। তবে বাড়ির আঙিনায় জায়গা থাকলে টব বা ড্রামের চেয়ে মাটিতে লাগানো ভালো। হাফ ড্রামে মে মাসের মধ্যেই দোঁয়াশ মাটি অর্ধেক ও অর্ধেক গোবর বা জৈব সার মিশিয়ে ভরতে হবে। সাথে প্রতিটি হাফ ড্রামে ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি এবং ৫০ গ্রাম বোরণ সার মিশিয়ে দেবেন। তবে ড্রামের ওপরের কানা থেকে অন্তত দু ইঞ্চি খালি রেখে সারমাটি ভরবেন।
    মাটিতে লাগানো গাছ বাড়ে বেশি। একাধিক কলম লাগালে একটি কলম থেকে অন্য কলমর দূরত্ব দিতে হবে ৩-৪ মিটার। তবে বাগান করতে চাইলে সব দিকে সমান দূরত্ব দিয়ে কলম লাগাতে হবে। জুন-জুলাই মাস কলম রোপণের মোক্ষম সময়। নির্দিষ্ট জায়গায় সব দিকে আধা মিটার মাপ দিয়ে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে গর্ত প্রতি ১৫ কেজি গোবর সার, ১ কেজি কাঠের ছাই ও ৫০০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া। গর্তের মাঝখানে কলম লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। কাঠি পুঁতে ঠেস দিতে হবে। লাগানোর পর হালকা সেচ ও শুকানোর সময় সেচ দিতে হবে। ছোট গাছে ও ফলবান গাছে প্রতি বর্ষার আগে রাসায়নিক সার দিলে উপকার পাওয়া যায়। ফলবান প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর সারের সাথে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম এমওপি ও ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার গোড়া থেকে একটু দূরে চার দিকের মাটি নিড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এসব ঝামেলা মনে হলে ছাদ বাগানে ড্রামের গাছে গাছ প্রতি ৪-৮টি ট্যাবলেট সার গাছের গোড়ার মাটিতে পুঁতে দিয়ে বছর ভর উপকার পেতে পারেন।

    ছাদে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ পদ্ধতি

  • Share The Gag
  • ছাদে মিষ্টি তেঁতুলের চাষ পদ্ধতি

    থাই মিষ্টি তেতুল (Thai Sweet Tamarind ): দ্রুত বাড়ছে মানুষ বাড়ছে বড় বড় দালান কোঠা ।দিন দিন ভরে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত বা ফলের বাগান করার জায়গাগুলি । এক টুকরা জায়গাও আর ফাকা থাকছে না গাছ লাগানোর জন্য । এ ক্ষেত্রে বাড়ির ছাদ কিংবা বেলকনিই একমাত্র ভরসা । শহরের মানুষের জন্য ছাদে বাগানের কোন বিকল্প নেই । গাছ ভালবাসে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না । কিন্তু অনেক সময় ইচ্ছা থাকার পরও জায়গার অভাবে গাছ লাগানো সম্ভব হয়ে উঠে না । তবে সদিচ্ছা থাকলে একটুকরা ছাদ কিংবা একটু বেলকনিতেও দু চারটা ফলের গাছ বা কয়েকটা শাকসব্জির গাছ লাগিয়ে একদিকে যেমন শখ মিটানো যায় তেমনি কিছু টাটকা শাকসব্জি খাওয়া যায় । আর ছাদে যে শুধু কিছু শাক সবজি , লেবু , পেয়ারা জাতীয় কিছু ফল হচ্ছে তা কিন্তু নয় । বর্তমানে ছাদে দেশী ফলের পাশাপাশি বেশ কিছু বিদেশী ফলও বেশ সুনাম অর্জন করেছে । তন্মধ্যে থাই মিষ্টি তেতুল (Thai Sweet Tamarind ), থাই মিষ্টি কামরাংগা ( Thai Sweet Star Fruits ), থাই জাম্বুরা ( Thai Grape Fruits ) , থাই পেয়ারা ( Thai Guava ), রাম্বুটান ( Rambutan ) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক গাছ চিনা সম্ভব হয় না বলে ঠকতে হয় । আজ আমি প্রথমে থাই মিষ্টি তেতুল নিয়ে কয়েকটি কথা লেখব বলে আশা করছি। অরিজিন্যাল থাই মিষ্টি তেতুলের কলমের চারা পাওয়া খুব দুষ্কর । আর পাওয়া গেলেও তা মিষ্টি তেতুল কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে । আবার নার্সারীগুলোতে মিষ্টি তেতুলের বীজের চারা পাওয়া যায় প্রচুর। কিন্তু টবে তেতুলের বীজের চারা লাগালে তা থেকে কতটুকু ভাল ফল পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমি আমার ছাদে বাগানের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি এ থেকে কখনও ভাল ফল পাওয়া যায় না। ঐ বীজের চারা যদি মিষ্টি তেতুলের বীজ থেকেও হয় তবুও সেই গাছের ফল মিষ্টি হবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

    থাই মিষ্টি তেতুলের (Thai Sweet Tamarind ) ফুল থেকে শুরু করে ফল পাকা পর্যন্ত মোট প্রায় সাত মাস সময় নিয়ে থাকে এবং একবার গাছে ফল থাকা অবস্থাতেই পুনরায় ফুল আসে । সে হিসেবে বছরে মোট দুইবার ফল পাওয়া যায় । একবার বর্ষাকালে এবং আরেকবার শীতকালে । ছাদে এর চাষের জন্য বাড়তি কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না । অন্যান্য টবের গাছের মত সাধারণ যত্ন নিলেই ভাল ফল পাওয়া যায়।

    কিভাবে থাই তেতুলের গাছ লাগাবেনঃ দুইভাগ দো-আঁশ / বেলে দো-আঁশ মাটির সংগে এক ভাগ গোবর, ১০০ গ্রাম টি, এস, পি, ১০০ গ্রাম পটাশ, ২৫০ গ্রাম হাড়ের গুড়া এবং ৫০ গ্রাম সরিষার খৈল একত্রে মিশিয়ে একটি কমপক্ষে ২০ ইঞ্চি বড় টব বা হাফ ড্রামে পানি মিশিয়ে রেখে দিন । ১০-১২ দিন পর মাটি খুচিয়ে রেখ দিন আর্ও ৪-৫ দিন । তারপর একটি ভাল কলমের চারা উক্ত টবে লাগান । তবে চারাটি অবশ্যই কলমের ( Grafting ) কিনা এবং থাই মিষ্টি তেতুলের ( Thai Sweet Tamarind ) কিনা তা নিশ্চিত হয়ে লাগাবেন । বীজের চারা টবে লাগিয়ে অযথা দুই-তিন বছর সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই লাভ হবে না । যদিওবা বীজের চারাতে ফল আসে সেই ফল পুষ্ট হবে না এবং মিষ্টি তেতুলের গুণাগুণ পাওয়া যায় না । পরিচর্যাঃ থাই মিষ্টি তেতুলের চারা গাছ লাগানোর পর প্রথম ছয় মাস তেমন কোন যত্ন নিতে হবে না । পরিমিত পানি এবং আগাছা পরিষ্কার করলেই চলবে । ছয় মাস পর থেকে প্রতিমাস অন্তর অন্তর সরিষার খৈল মিশ্রিত পচা পানি দিতে হবে । খৈল এর পানি দেওয়ার পূর্বে মাটি খুচিয়ে নিলে ভাল হয় ।

    রোগজীবাণু ও পোকামাকড়ঃ থাই মিষ্টি তেতুলে সাধারণতঃ পোকামাকড় আক্রমন করে না । তবে বর্ষাকালে তেতুল ফলে ছত্রাক আক্রান্ত করতে দেখা যায় । তাতে তেতুল ফল ফেটে যাবার আশংকা থাকে । কাজেই বর্ষাকাল আসার আগেই যদি ১০ দিন অন্তর অন্তর কয়েকবার একটি ভাল ছত্রাক নাশক ঔষধ স্প্রে করা যায় তাহলে এই সমস্যা থাকে না ।

    ছাদে বাগানের জন্য করনীয়

  • Share The Gag


  • ছাদে বাগান : প্রারম্ভে করনীয়



    বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে বাগান করা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের বাগান দেখা যায়। অবশ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদে যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোন গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। আঙুর, বেদানা, ডালিম, আমড়া, পেয়ারা ইত্যাদি নান ধরনের মৌসুমী ফল ছাড়াও কলমি শাক, কলা, ডাঁটা, লাউ ইত্যাদি অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। কোন গাছের জন্য কি ধরনের মাটি উপযোগী তা নিশ্চিত হয়ে ছাদে বাগান করলে ভাল হয়। এ ছাড়া বেশি রোদ বা গরম সহ্য করতে পারে এমন গাছই ছাদে বপন করা উত্তম। ছাদে বাগান করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নিয়মিত পানি সেচ দেয়া। কারণ, বাগানের গাছগুলো যেহেতু সাধারণ মাটির সংস্পর্শ হতে দূরে থাকে তাই নিয়মিত পানি সেচ না দিলে গাছগুলো যেকোন সময় মারা যেতে পারে। সাধারণত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে গাছ ভাল জন্মে। ছাদে বাগান করতে হলে এ ধরনের মাটি ব্যবহার করলে ভাল হয়।

    শখ করে আমাদের দেশে ছাদে বাগান করার প্রথা শুরু হলেও এখন রীতিমত অর্থনৈতিক খাত হিসেবে চিহ্নিত। অনেকেই আছে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে।

    ছাদে বাগান করতে হলে প্রতিদিন সকাল-বিকাল গাছে পানি দিতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া মাটির ধরণ জেনে বাগান করলে ছাদে যেকোন ধরনের গাছই জন্মানো সম্ভব। ৪-৫ কাঠা জমির উপর বাড়ির ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান করলে পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও বছরে বিক্রি কর যায় ৪০-৫০ হাজার টাকা।

    ইচ্ছে করলেই শহরবাসী ফলের বাগান বা সবজি বাগান করতে জমি পান না। তাই বিকল্প উপায় বের করে আবাদি জমি নষ্ট না করে ছাদকে কাজে লাগিয়ে বাগান করা যায়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে এই ছাদে বাগান যা পরিবারকে করবে স্বচ্ছল।

    ছাদে বাগান: বিস্তারিত তথ্য



    বিশাল বাংলার জমিন যেমন বিস্তৃত, তেমনি লাখোকোটি দালান ঘরের ছাদও অবারিত বিস্তৃত। যদিও বাংলার জমিন এখনো যথোপোযুক্তভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। সেখানে ছাদের কথা তো আরও পরে আসে। কিন্তু এ দেশের কিছু আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা ব্যক্তিগত আগ্রহ আর উদ্যোগে ছাদে বাগান করেন শখের বসে। বিনিয়োগের যেমন হিসাব থাকে না, তেমনি প্রাপ্তির হিসেবেও তেমনভাবে করা হয় না শখের ছাদের বাগানে। অথচ সামান্য আন্তরিকতা আর সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে এ প্রতিশ্রুতিশীল দিকটাকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারি। ছাদে বাগান করে ছাদের সৌন্দর্য যেমন বাড়ে, তার সাথে জায়গাটুকু ব্যবহার করে পরিবারের ফুল, শাকসবজি ও ফলের চাহিদা যথাযথভাবে মেটানো যায়। শুধু কি তাই পরিকল্পিতভাবে ছাদে বাগান করে বাড়তি আয়ও করা যায়। সর্বোপরি ছাদের বাগানে পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত আগ্রহী লোকগুলো দারুণভাবে সময় কাটাতে পারেন। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।

    বাগান পদ্ধতি ছাদে বাগান দু'ভাগে করা যায়। যেমন কাঠ বা লোহার ফ্রেমে এঁটে বেড তৈরি করে এবং অন্যটি হলো টব, ড্রাম, পট কনটেইনার এসব ব্যবহার করে। প্রথম ক্ষেত্রে পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্নিশের পার্শ্বে বা আলাদা ফ্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে সেটিং করা যায়। এ ক্ষেত্রে জল ছাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জল ছাদ না থাকলে আলাকাতরার প্রলেপ দিয়ে তার ওপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মাটি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে মাটির পুরুত্ব যত বেশি হবে। অন্তত দু'ফুট পুরু মাটির স্তর থাকতে হবে। তবে যত বেশি তত ভালো। অতিরিক্ত পানি, সার পাবার সুষ্ঠু পথ রাখতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়েঅজনীয় পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে কাঠ, লোহা, স্টিল, মোটা রবার এসব ব্যবহার করা যায়। তবে যা কিছু দিয়ে বা যে ভাবেই বেড তৈরি হোক না কেন ৩/৪ বছর পর পুরো বেড ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে। এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ছাদে বাগানের জন্য শুরুতেই যদি মাটিকে ফরমালডিহাইড দিয়ে (প্রতি লিটার পানির সাথে ১০০ মিলিলিটার ফরমালডিহাইড) শোধন করে নেয়া যায় মাটি শোধনের কৌশল হলে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি নিয়ে বর্ণিত মাত্রায় ফরমালডিহাইড মিশ্রিত পানি মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে পুরো মাটিকে মোটা পলিথিন দিয়ে ৩/৪ দিন ঢেকে রাখতে হবে। পরে পলিথিন উঠিয়ে সূর্যের আলোর তাপে খুলে রাখতে হবে পরবর্তী ৩/৪ দিন পর্যন্ত। ফরমালিনের গন্ধ শেষ হয়ে গেলেই মাটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতির মধ্যে আছে ড্রাম, বালতি, টব, কনটেইনার এসবের যেকোন একটি বা দুটি নির্বাচন করার পর পাত্রের তলায় কিছু পরিমাণ খোয়া (ইট পাথরের কণা) দিতে হবে। ইটের খোয়া পানি নিষ্কাশন এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া এবং পাত্রের ভেতরে বাতাস চলাচলের সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রেও অর্ধেক মাটি এবং অর্দেক পঁচা জৈব সারের মিশ্রণ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো। কেননা আমাদের বুঝতে হবে ফল গাছের শেকড় প্রকৃতিতভাবে বেশ গভীরে যায়। কিন্তু ড্রাম/টব/পাত্রের সীমিত জায়গার অভাবে যথাযথভাবে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না। সে জন্য ছাদের বাগানে টব/ড্রামের আকার যত বড় হয় তত ভালো হয়। টবে/ড্রামে গাছে/ জাত নির্বাচনের পর য়ৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে। যেমন বড় গাছ পূর্ব ও দক্ষিন পাশে না দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর পাশে দিতে হবে। এতে আলো বাতাস রোদ ভালোভাবে পাবে। তাছাড়া ছোট বড় জাতের মিশ্রণ করে সেটিং করলে গাছের গাত্র বৃদ্ধিসহ বাড় বাড়তি ভালো হয়। আরেকটি জরুরি কথা হলো ছাদে বাগাপন করার ক্সেত্রে ফল চাষাবাদে কলমের এবং হাইব্রিড জাতের ব্যবহার বেশি ফলদায়ক।

    তৃতীয় আরেকটি পদ্ধতি অনেকেই অনুসরণ করে। সুন্দরভাবে বাঁশ/পিলার রড দিয়ে জাংলো বা মাচা বানিয়ে পব/প্লাস্টিকের পাত্রে ফুল, বাহারী গাছ গাছালী, অর্কিড আবাদ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ঝুলন্ত টব/পাত্র মাঝখানে না ঝুলিয়ে পাশে ডিজাইন করে সেটিং করলে জায়গার সদ্ব্যবহার করা যায়, দেখতেও সুন্দর লাগে।

    যেভাবে করবেন মাটি তো নেই, বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের। কিন্তু গাছ তো দরকার। তাই শেষ ভরসা বাড়ির ছাদ। সেখানেই ফুল, সেখানেই ফল। পৃথিবীর অনেক দেশে এখন ছাদে বাগান করা সে দেশের সিটি করপোরেশনের বাধ্যতামূলক আইন। শহরের ইট-পাথর যেন সবুজের স্পর্শ পায়, আমাদের দেশে সেসবের বালাই নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে দুই-একটা ছাদ বাগান হয়েছে। কিন্তু নির্মল পরিবেশের জন্য যা খুবই কম। ছাদে বাগান আর মাটিতে বাগান এক বিষয় নয়, আবার কাজটি যে কঠিন, তাও নয়। জানা দরকার, ছাদের উপযোগী গাছ কোনগুলো। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই গাছটি ছাদ-বাগানের জন্য তা হাফ ড্রাম, টব নাকি চৌবাচ্চা কাঠামো করে লাগানো হবে এবং এসব গাছের জন্য পরিচর্যার ধরন কী হবে, তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। খোলামেলা ছাদ থাকলেই হলো। স্থায়ী বাগান করার জন্য ছাদে সিমেন্টের স্থায়ী টব তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। গরুর নান্দার মতো বাজারে সিমেন্টের টব কিনতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে উত্তম হয় লোহার হাফ ব্যারেল হলে। ব্যারেলের দুই পাশে হাতল থাকতে হবে। এর সুবিধা হচ্ছে টবটি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরানো যাবে। টবের নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি। কয়েকটি ভাঙা চাড়ি ছিদ্রের মুখে দিয়ে মাটি ভরতে হবে। তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার আর এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে টব পূর্ণ করুন। বর্ষার আগে আগে টবে চারা কলম লাগাতে হবে। এই টবে ফুল, ফল, সবজির চাষ করা যেতে পারে। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, দোলনচাঁপা, ডালিয়া, চন্দ্রমলি্লকা, ইউফোরবিয়াসহ মৌসুমি সব ফুলেরই চাষ করা সম্ভব। ছাদ বাগানে সবজিও ফলতে পারে। বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, শসা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, বরবটি, সিম, ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি টবে ফলানো সম্ভব। ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, শরিফা, সফেদা, কামরাঙ্গা, বাতাবিলেবু, জলপাই, কদবেল, ডালিম, পেয়ারা, কমলা, মালটা, কুল ছাদ বাগানকে আকর্ষণীয়, অনন্য করে তুলতে পারে। আজকাল অনেকেই ছাদ বাগান করার জন্য এগিয়ে আসছেন। তবে ছাদে ফল গাছ লাগানোর প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। ছোট একটি টবে ফল ধরলে যেমন দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি ছাদে প্রচুর পরিমাণ রোদ লাগে বলে ফলও ভালো হয়।

    ছাদে কি কি গাছ লাগাবেন : ছাদে বাগান করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছটি বড় আকারের না হয়। অর্থাৎ ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে। আম্রপালি ও মলি্লকা জাতের আম, পেয়ারা, আপেল কুল, জলপাই, করমচা, শরিফা, আতা, আমড়া, লেবু, ডালিম, পেঁপে, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে। ছাদ বাগানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গাছ বাছাই। জেনে, বুঝে, বিশ্বস্ত নার্সারি, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে গাছ সংগ্রহ করতে হবে। বেঁটে প্রজাতির অতিদ্রুত বর্ধনশীল ও ফল প্রদানকারী গাছই ছাদ বাগানের জন্য উত্তম। বীজের চারা নয়, কলমের চারা লাগালে অতিদ্রুত ফল পাওয়া যায়। আজকাল বিভিন্ন ফলের গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড় কলম পাওয়া যাচ্ছে। ছাদ বাগানের জন্য এসব কলমের চারা সংগ্রহ করতে পারলে ভালো হয়। টবে আমের মধ্যে আম্রপালি, আলফানসো, বেঁটে প্রজাতির বারোমেসে, লতা, ফিলিপাইনের সুপার সুইট, রাঙ্গু আই চাষ করা যেতে পারে। লেবুর মধ্যে কাগজিলেবু, কমলা, মালটা, নারকেলি লেবু, কামকোয়াট, ইরানিলেবু, বাতাবিলেবু (অ্যাসেম্বল) টবে খুবই ভালো হয়। এ ছাড়া কলমের জলপাই, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, ডালিম, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল, গ্রিন ড্রপ জামরুল, আপেল জামরুল, আঙ্গুর পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ফলসা, খুদে জাম, আঁশফল, জোড় কলমের কামরাঙা, এমনকি ক্যারালা ড্রফ প্রজাতির নারিকেলের চাষ করা যেতে পারে। সঠিক মানের চারা হলে এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। আজকাল বিদেশ থেকে উন্নত মানের কিছু চারা কলম দেশে আসছে। ছাদ বাগানের সাধ পূরণ করার জন্য এসব সংগ্রহ করে লাগাতে পারেন। বাহারি পাতার জামরুল, পেয়ারা, সফেদা গাছও বিভিন্ন নার্সারিতে এখন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ছাদে এসব গাছ লাগানো হলে ছাদ বাগানের সৌন্দার্য বৃদ্ধি পায়।

    টব : দরকারমতো সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানো যায়। ছাদে টবে গাছ লাগানো অনেকেই পছন্দ করেন। টবে সার-মাটি দেওয়া খুব সহজ। আজকাল অনেকেই পোড়ামাটি এবং প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করেন। আবার টবের গায়ে রং দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। টবে গাছ লাগানোর সময় মনে রাখতে হবে যেন ওই গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টবের অল্প মাটিতে ওই গাছের খাদ্যপুষ্টি থাকে।

    হাফ ড্রাম : বড় আকারের ড্রামের মাঝামাঝি কেটে দুই টুকরো করে বড় দুটি টব তৈরি করা যায়। বড় জাতের এবং ফলের গাছের জন্য হাফ ড্রাম ভালো। এগুলো সরাসরি ছাদের ওপর না বসিয়ে কয়েকটি টুকরো ইটের ওপর বসানো দরকার। অনেকে মনে করেন, ছাদের ওপর হাফ ড্রাম রাখলে ছাদের ক্ষতি হয়। এ ধারণা সঠিক নয়।

    চৌবাচ্চা : ছাদে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু এবং তিন থেকে চারটি পিলারের ওপর পানির ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চা আকারের রিং স্লাব বসিয়ে ইটের টুকরো এবং সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে স্থায়ী চৌবাচ্চা তৈরি করা যায়। এই ধরনের চৌবাচ্চায় মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ চাষ করে ছাদের পরিবেশ সুন্দর রাখা যায় সহজেই।

    স্থায়ী বেড পদ্ধতি : ছাদের কোনো অংশে স্থায়ী বাগান করতে চাইলে সুবিধামতো আকারের স্থায়ী বেড তৈরি করা যায়। তবে চার ফুট দৈর্ঘ্য, চার ফুট প্রস্থ এবং দুই ফুট উচ্চতার বেড তৈরি করা ভালো। এ ধরনের বেড তৈরি করতে নিচে পুরু পলিথিন দিয়ে ঢালাই করলে ছাদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

    টবের টিপস : ফুল কিংবা ফল গাছ যাই হোক না কেন, টব ব্যবহার করার সময় লক্ষ রাখতে হবে, গাছের আকার কত বড় হবে। সেই মতো টবের আকার নির্ধারণ করা দরকার। পানি গড়িয়ে যাওয়ার জন্য টবের নিচে ছিদ্র থাকতে হবে। ছিদ্রের ওপর নারকেলের ছোবড়া বা ইটের টুকরো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। টবে ব্যবহারের আগে টবে ব্যবহার করা ছোবড়া বা ইটের টুকরো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। গরম পানিতে ধুয়ে নিতে পারলে ভালো। যে গাছের চারা লাগানো হবে তা সাধারণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এর ফলে রোগের সংক্রমণ অনেক কমে যায়। চারা কেনার সময় অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের চারা সংগ্রহ করা দরকার। গাছ বড় হলে প্রয়োজনে বড় টবে সাবধানে চারা স্থানান্তর করে নেওয়া যায়। তবে টব ভেঙে চারা গাছ বের করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, চারা গাছটি যেন কোনোভাবেই আঘাত না পায়।

    টবের সার-মাটি : টবের গাছের খাদ্যপুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য মাটিতে দরকারি সার মেশাতে হবে। মাটি, গোবর সার, কম্পোস্ট, পচা পাতা, পরিমাণমতো রাসায়নিক সার মেশাতে হবে। শুকনো দূর্বা ঘাস টবের মাটির মাঝামাঝি দিয়ে তার ওপরে মাটি দিয়ে চারা গাছ লাগানো ভালো।

    গাছ বা চারা নির্বাচন ছাদে বাগান যতটা না বাণিজ্যিক তার চেয়ে বেশি নান্দনিক এবং শখের। উদ্দেশ্য যাই থাক জাত নির্বাচনে সতর্ক সচেতন হওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে সাধারণ জমিতে যে ভাবে চাষ বাস করা যায় ছাদে সে ভাবে করা যায় না। গাছ সাধারণভাবে তাদের বাড় বাড়তির জন্য তেমন জায়গা পায়না। সেজন্য অতিরিক্ত যত্ম সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষভাবে সর্তক থাকতে হবে। মনে রাখা দরকার ছাদের বাগানে কখনো ঝোপ/ঝাড়/বাঁশ টাইপের কোন বড় গাছ/জাত লাগানো যাবে না। এতে হিতের বীপরিত হয়ে যাবে। লেবু, পেয়ারা, আম, জামরুল, ডালিম, আমড়া, লিচু, কামরাঙ্গা, জলপাই, করমচা এসব ফল বেশী উপযোগী। ফলের ক্ষেত্রে হাইব্রিড বা দেশীয় যে কোন জাত থাকনা কেন কেন কলমের চারা ব্যবহার করা বেশি ভালো। এতে নানন্দিকতা ভালোভাবে রক্ষা পায়, কম জায়গা খরচ হয়। ফুল এবং সবজির ক্ষেত্রে জাতের কোন বালাই নেই। কেননা ফুল এবং সবজি কখনো বেশি জায়গা নেয় না। আমাদের দেশের প্রচলিত জাতের ফুল, শাকসবজির সবটাই সহজে উৎপাদন করা সম্ভব। বাড়ির বারান্দায় মালতি লতা, দোপাটি, হাসনাহেনা। উঠোনে লাউয়ের মাচা, ঘি কাঞ্চন মরিচ। একটু দূরেই ডালিম, প্রবীণ আম বৃক্ষ। এসব স্মৃতি হয়ে গেছে। স্মৃতি হয়ে গেছে দলিজ ঘরের বারান্দার বাগান, নিকানো উঠোন। কংক্রিটের দেয়াল, বহুতল ভবন ওইসব স্মৃতি গিলে খেয়েছে। নগর সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটি। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। তারপরও অনেকে বাগান করার স্বপ্ন দেখেন। জানালায় ঝুলিয়ে দেন মানিপ্লান্টের লতা। তবে স্বপ্ন থাকলে, ইচ্ছা থাকলে কংক্রিটের দালানকোঠার মধ্যেও বাগান করা সম্ভব। ফিরিয়ে আনা সম্ভব শৈশবের স্মৃতিঘেরা সেই হারানো লতা, ফুলের খশবু। ছাদে বাগান করে ফুল, ফল, সবজির সব স্বাদই পূরণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রথম প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি আর বাগানের প্রতি প্রেম।

    যত্ম সেবা যেহেতু সীমিত আকারে সীমিত জায়গায় উৎপাদন করা হয় সেজন্য অতিরিক্ত যত্ম সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিভিন্ন পরিচর্যায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। কেননা সার কমবেশি হলে, গাছের সাথে লেগে গেলে গাছ মরে যাবে, পরিমাণ মতো না হলে অপুষ্টিতে ভুগবে।
    টবের ক্ষেত্রে ছোট গাছ বড় হলে পট/টব বদল, ডিপটিং (পুরানো টবকে আলতো করে মাটিতে শুইয়ে গড়াগড়ি দিলে গাছটি টব থেকে বেড়িয়ে আসবে। পরে অতিরিক্ত মূল কেটে মাটি বদলিয়ে সার প্রয়োগসহ নতুনভাবে গাছ বসানো) করতে হবে সময়মতো। বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলিয়ে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে। ইদানিং বাজারে টবের মাটি কিনতে পাওয়া যায়। মানসম্মত মাটি কিনে টবে/পটে/ড্রামে ভরতে হবে।
    খুব সাবধানতার সাথে টব/পটে/ড্রামে/চারা/কলম/বীজ লাগাতে হবে। ঠিক মাঝখানে পরিমাণ মতো মাটির নিচে রোপন করতে হবে। চারা বা কলমের সাথে লাগানো মাটির বল যেন না ভাঙ্গে সেদিকে নজর রাখতে হবে। চারা বা কলমের ক্ষেত্রে বীজতলা/নার্সারিতে যতটুকু নিচে বা মাটির সমানে ছিল ততটুকু সমানে ছাদে লাগাতে হবে। বীজতলার থেকে বেশি বা কম গভীরে লাগালে গাছের বাড়বাড়তিতে সমস্যা হবে। মাঠে ফলমুল সবজি চাষের চেয়ে ছাদে সবজি চাষের অনেক পার্থক্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। চাদের বাগানে প্রতিদিন পরিষ্কার কার্যক্রম অনুসরণ করতে হবে। সেজন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে ফলনে সুবিধা হবে। ফুল এবং সবজিতে প্রয়োজন মাফিক সার প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে অন্তত দু'বার একবার বর্ষার আগে একবার বর্ষার পরে সাবধানে পরিমাণমত সার দিতে হবে। সার প্রয়োগের সময় মাটির আর্দ্রতা দেখে নিতে হবে। কেননা বেশি আর্দ্র বা কম আর্দ্র কোন টাইপের সার প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু কিছু সার পানিতে মিশিয়ে গাছ ছিটিয়ে দিতে হবে। গুঁটি সারও এ ক্ষেত্রে বিশেষ উপযোগী।
    আমাদের দেশের আবহাওয়ায় কোন ফলে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতি ২/৩ বার যদি চাদের বাগান পরিদর্শন করা যায় তাহলে বালাই আক্রমণ যেমন কম হবে তেমনি ফসলও পাওয়া যাবে অনেক। সুতরাং লাভ বেশি হবে। যদি হঠাৎ বেশি মারাত্মক আক্রান্ত হয়ে যায় তখন উপযুক্ত বালাইনাশক সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে হবে। আলোচ্য নিবন্ধে ছাদের কথা বলা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরন করে স্থানকালপাত্র অনুযায়ী ঘরের ভেতরে, সিঁড়ি, ব্যালকনি, বারান্দা, কার্নিশ এসব জায়গায় ও অনায়াসে গাছ লাগানো যায়।

    সেচ নিস্কাশন ছাদে/টবে সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মাটির আর্দ্রতার জন্য সহজেই গাছপারা নেতিয়ে যাবে তেমনি অতি পানি বা পানির আর্দ্রতার জন্যও গাছ নেতিয়ে পড়ে মরে যেতে পারে। তাই অবশ্যই ছাদের বাগানে প্রতিনিয়ত সেচের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ছাদের বাগানে সেচের জন্য ক্সিকিলার অর্থাৎ ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দেয়া ভালো। তাছাড়া প্লাস্টিকের চিকণ পাইপ দিয়েও পানি সরবরাহ বা দেয়া যায়। এক্ষেত্রে ডেলিভারি পাইপের মাথায় চাপ দিয়ে ধরলে পানি হালকাভাবে ছিটিয়ে পরে সুতরাং ইচ্ছে করলে ঐ পদ্ধতিও অনুসরণ করা যায়। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ অনেক নতুন তথ্য প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। শখের বিলাশী ঘটনাও সময়ের ব্যবধানে আবশ্যকীয় হয়ে যায় এবং সর্বজনবিদিত উপকারি ও জনপ্রিয় হয়ে যায়। ছাদের বাগানও তেমন। সময়ের প্রয়োজনে জীবনের প্রয়োজনে সবাই এক চিলতে জায়গাও খালি রাখতে চায় না। প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে যৌক্তিকভাবে ব্যবহার করতে চায়। দিন বদলের পরিক্রমায় অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ছাদের বাগান একটি আবশ্যকীয় প্রযুক্তি পদ্ধতি হয়ে স্থান পাবে। সবচেয়ে বড় কথা ছাদে বাগানকে একটি অতিরিক্ত লাভ হিসেবে পরিগণিত করা যায়।

    তাই আমাদের যার যার সুযোগ আচে সে সুযোগকে যৌক্তিকভাবে কার্যকর ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের বহুমুখী লাভ হবে। আসুন আমরা সবাই এ সুযোগের আওতায় সর্বোচ্চ লাভ ঘরে তুলি, কৃষিকে সমৃদ্ধ করি দেশেকে সমৃদ্ধ করি।

    ছাদে বাগানের কিছু জরুরি টিপস
    ১) লম্বা গাছকে ছোট গাছকে সামনে রাখতে হবে।
    ২) টবে বা ফ্রেমে খৈল দেয়া যাবে না, এতে পিঁপড়ার উপদ্রব বাড়তে পারে।
    ৩) বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ভালো।
    ৪) বছরে একবার নতুন মাটি দিয়ে পুরাণ মাটি বদলিয়ে দিতে হবে। এটি অক্টোবর মাসে করলে ভালো।
    ৫) ছাদে বাগানের জন্য মিশ্র সার, গুঁটি ইউরিয়া, খৈল, হাড়ের গুঁড়া (পচিয়ে) ব্যবহার করা ভালো।
    ৬) বাজারে স্টিল লোহার ফ্রেম পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে অনায়সে ছাদে বাগান করা যায়।
    ৭) অবস্থা বুঝে গাছের গোড়ায় চুনের পানি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করা যায়।

    নড়াইলে চালু হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা কেন্দ্র

  • Share The Gag
  • খামার যান্ত্রিকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার তিন উপজেলায় চালু হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা কেন্দ্র। এ সেবাকেন্দ্র স্থাপনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে একই জমিতে বছরে একাধিকবার বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন। প্রাথমিকভাবে নড়াইল সদর উপজেলায় উজিরপুর অর্গানিক বহুমুখী সমবায় সমিতিতে, লোহাগড়ার ইশানগাতি আইপিএম কৃষি ক্লাবে এবং কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী সিআইজি (কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) কৃষি ক্লাবে ১টি করে কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।




    নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রকৌশলী এ এম হেলালুর রহমান জানান,কৃষি ফসলের নিবিড়তা রক্ষায় উৎপাদন খরচ কমানো, সময় বাঁচানো ও শ্রমের অপচয় রোধ কল্পে কৃষক বান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।এসব সেবা কেন্দ্রে ধান ও গম কর্তন যন্ত্র (রিপার), পাওয়ার টিলার চালিত সিডার যন্ত্র (বীজ বপন যন্ত্র),কম্বাইন্ড হারভেস্টর (ধান,গম কর্তন ও মাড়াই শেষে পরিষ্কার করে বস্তাবন্দী), ট্রান্সপ্লান্টনার (ধান রোপণ যন্ত্র) ও পাওয়ার থ্রেসার যন্ত্র (ধান ও গম মাড়াই-ঝাড়াই যন্ত্র ) কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে।




    একটি সেবা কেন্দ্রের আওতায় কমপক্ষে ১০ একর জমি ও ২০ থেকে ২৫ জন কৃষক সদস্য থাকতে হবে বলে জানালেন কৃষি প্রকৌশলী এ এম হেলালুর রহমান।একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টর প্রতি ঘণ্টায় ৩৬ জন লোকের সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারে বলে জানান ওই কৃষি প্রকৌশলী।




    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি সেবা কেন্দ্রে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের কৃষি যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।এসব কেন্দ্রের বাইরের কৃষকরা একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদানপূর্বক কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।




    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন,ফসল উৎপাদন, কর্তন ও মাড়াইয়ে যে শ্রমিকের প্রয়োজন হয় তা থেকে অনেক কম খরচে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষকরা ধান,গম উৎপন্ন করে ঘরে তুলতে পারবেন।পাশাপাশি একই জমিতে একাধিকবার বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদনও সম্ভবপর হবে বলে তিনি জানান।




    সূত্রঃ বাসস।

    ১১১৩ জন নিয়োগ দেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

  • Share The Gag
  • জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজধানীর খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এক হাজার ১১৩ জন প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিককে ১১ ধরনের অস্থায়ী পদে এই নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রার্থীরা পদগুলোতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন না। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অন্যান্য জেলা কোটা অনুসরণ করা হবে।

    পদসমূহ:
    স্টোরকিপার ৪২ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ৪০৪ জন, ক্যাশিয়ার ১৩ জন, ড্রাইভার পাঁচজন, প্লাম্বিং মিস্ত্রি ছয়জন, স্প্রেয়ার মেকানিক ১৬৮ জন, অফিস সহায়ক সাতজন, ফার্মলেবার ১৫২ জন, নিরাপত্তা প্রহরী বা অফিস গার্ড ২১৯ জন, বাবুর্চি (কুক) ৩২ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৬৫ জনসহ মোট এক হাজার ১১৩ প্রার্থী এই নিয়োগ পাবেন।

    যোগ্যতা:
    পদগুলোতে আবেদনের জন্য পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাস যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক পাস পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পদের জন্য অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতাসম্পন্ন হতে হবে।

    বয়স:
    ১৪ জুন, ২০১৭ তারিখে প্রার্থীদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩২ বছর।

    বেতন:
    পদমর্যাদা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রতি মাসে আট হাজার ২৫০ থেকে ২৪ হাজার ৬৮০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হবে।

    আবেদন প্রক্রিয়া:
    বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করে টেলিটকের ওয়েবসাইট (dae.teletalk.com.bd) থেকে পদগুলোতে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সুযোগ থাকছে ১৪ জুন, ২০১৭ সকাল ১০টা থেকে ১৩ জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত দেখুন :





    DAE

    তিস্তা নদীতে সিবিজি খাঁচায় মাছ চাষ প্রশিক্ষণ

  • Share The Gag
  • তিস্তা নদীতে সিবিজি খাঁচায় মাছ চাষ প্রশিক্ষণ
    নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীতে সিবিজি খাঁচায় মাছ চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    দুই দিন ব্যাপী (১১-১২ জুন) উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ও মুক্তিযোদ্ধা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির আয়োজনে এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন উক্ত সমিতির ২০ জন মৎস্যজীবিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক তিস্তা পাড়ের মানুষ।

    এ প্রশিক্ষণটি টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামের তিস্তা নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) এর আওতায় দুই দিন ব্যাপী তিস্তা নদীতে সিবিজি খাঁচায় মাছ চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

    এ পর্যায়ে আমরা পাউবো’র সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে তিস্তা নদীতে সিবিজি খাঁচায় এ মৎস্য চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় দুইটি (সুন্দরখাতা ও তিস্তানদী) প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী বলেন, তিস্তা নদীতে আপাতত ২০টি সিবিজি খাঁচা স্থাপন করা হয়েছে।

    আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে প্রকল্পটি আরো সম্প্রসারণ করা হবে। প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী ও ১ম দিনে আলোচনা সভায় সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তবিবুল ইসলাম, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম শাহিন।

    প্রশিক্ষণ ও আলোচনা সভায় সমিতির সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়ার উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ হামিদুল ইসলাম, খালিশা চাপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ সোহরাব হোসেন, টেপাখড়িবাড়ী ইউপি’র সদস্য আলহাজ্জ আমজাদ হোসেন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোঃ আব্দুল মজিদ, ওয়াহেদুর রহমান মহুবার রহমান, ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি বাদশা সেকেন্দতার ভূট্ট, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রেজা ও দপ্তর সম্পাদক ও সীমান্ত টাইমস ২৪.কমের প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ ফরিদুল ইসলাম ফরিদ প্রমুখ।

    ডিমলা প্রতিনিধি

    Monday, June 12, 2017

    কেন খাবেন ডালিম রস? পাতা থেকে শিকড় সবই উপকারী

  • Share The Gag
  • কেন খাবেন ডালিম রস?



    ডালিম মোটামুটি সবারই পছন্দের ফল। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে অনেকেই নিয়মিত ডালিম খান। ডালিমদানা খাওয়ার পাশাপাশি এর জুসও খেতে পারেন। কারণ, ডালিমের জুসও অনেক উপকারী। জেনে নিন এর উপকারিতা সম্পর্কে: রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখে: ডালিম রসে ফ্রুক্টোজ থাকলেও এটি অন্য ফলের রসের মতো রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডালিম রস খেলে রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক থাকে।
    ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: শরীর থেকে মুক্ত ক্ষতিকর উপাদান কমিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই মুক্ত উপাদান অন্যান্য রোগ সৃষ্টি করে। তাই রোগব্যাধি দূর করতে ডালিম রস উপকারী।
    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণাগুণ আছে ডালিমে। শরীরের ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ডালিমের রস।

    হজমশক্তি বাড়ায়: ডালিমে আছে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশ থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের নড়াচড়া নিয়মিত করে।

    হিমোগ্লোবিন বাড়ায়: আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা এক গ্লাস ডালিমের রস খান।

    পাতা থেকে শিকড় সবই উপকারী :

    ডালিম নিয়ে নানা গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ডালিম শুধুমাত্র একটি মাজাদার ফল নয়, বরং মানব শরীর গঠন ও সুরক্ষায় ডালিমের রয়েছে বহুমুখি ঔষধি গুণ। এতদিন আমরা ডালিমের স্বাদ নিয়েছি, কিন্তু পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত পুরো ডালিম গাছিটিই যে মানুষের পরম উপকারী বন্ধু তা আমাদের অনেকেরই আজানা। অথচ উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় ডালিম গাছের নানা ভেষজ গুণের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই এদেশে এলোপ্যাথির ব্যাপক প্রসার শুরু। পাশাপাশি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে হোমিওপ্যাথিও দিন দিন প্রসার ঘটছে। কিন্তু এমন একটা সময় ছিল, এদেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা বলতে বুঝতেন ইউনানী এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসা। গাছ-পালা, লতা-পাতা অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানই ইউনানী এবং আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূল উৎস। এখনো দেশের প্রত্যন্ত ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর চিকিৎসার উপর নির্ভর করে থাকেন। প্রকৃতির সৃষ্টি ডালিম গাছ মানুষের বহুরকম জটিল ও কঠিন রোগের আরোগ্য বিধানে সক্ষম। নিম্নে তার কয়েকটির বিবরণ তুলে ধরা হল।



    রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত কার্যকরী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের কোন অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে গেলে বা কেটে রক্তপাত হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভাল কাজ করে।



    হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্ত ঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়। আঘাত, পলিপ বা কোন কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।



    আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভল ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভাল।



    ডালিম গাছের ছাল গুড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোন স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভাল কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।



    গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোন কোন মহিলার একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশংকা দুর হয়।



    ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমি নাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগেন। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।



    ডালিম গাছ- ফল, ফলের খোসা, পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কোনটাই ফেলনা নয়। আগাগোড়া মানুষের উপাকরী। ডালিম গাছের চাষ কোন কঠিন কাজ নয়, এর জন্য বেশি পরিশ্রম এবং অধিক যত্নও প্রয়োজন হয় না। যে কোন রকম মাটিতেই ডালিমের চাষ হয়। এর জন্য বড় জায়গাও লাগে না। ঘরের আঙ্গিনা এমনকি বাড়ির ছাদেও সহজে ডালিমের চাষ করা যায়। ঘরে একটি ডালিম গাছ থাকা মানে ঔষধের একটি ফ্যাক্টরি থাকা।