Saturday, June 17, 2017

Tagged Under: , , , , , ,

ছাদে বাগান করার বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরিচর্যা করার উপায়

  • Share The Gag
  • ছাদে বাগান করার বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরিচর্যা করার উপায়

    জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ নগরে বসবাস করে। ১৯৫০ সালে এর হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। ভবিষ্যতে নগরমুখী মানুষের স্রোত আরো বেগবান হবে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর প্রায় ৬৬ শতাংশ লোক নগরে বসবাস করবে। ততদিনে আরও অনেক শহর ও মেগা শহর গড়ে উঠবে। তাই বর্তমান নগরগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অতিরিক্ত মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে নগর উন্নয়নে যুগোপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নগরায়ণ হচ্ছে উত্তর আমেরিকায়। সেখানে বর্তমানে ৮২ শতাংশ মানুষ নগরে বসবাস করে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। সেখানে ৮০ শতাংশ লোক নগরে বাস করে। সেই তুলনায় আফ্রিকা ও এশিয়ায় নগরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম, যথাক্রম ৪০ও ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ২০২০ সালে শতকরা ৫০ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে আট কোটি লোক নগরে বাস করবে এবং ২০৫০ সালে ১০০% অথাৎ ২৭ কোটি লোক নগরে বসবাস করবে। তখন গ্রাম ও নগর মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে নগরকে পরিকল্পিত আকারে গড়ে তুলতে হবে। আর তাই ছাদে বাগান অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।Roof Gardening 300x211 ছাদে বাগান করার বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরিচর্যা করার উপায়
    প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
    * একটি খালি ছাদ;
    * হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, ষ্টিল বা প¬াস্টিক ট্রে;
    * ছাদের সুবিধা মত স্থানে স্থায়ী বেড ( ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে।);যা
    * সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি, করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি;
    * দোঁআশ মাটি, পঁচা শুকনা গোবর ও কম্পোষ্ট, বালু ও ইটের খোয়া ইত্যাদি;
    * গাছের চারা / কলম বা বীজ ।
    চাদে চাষ উপযোগী গাছ ঃ
    * আমঃ বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী)
    * পেপে, কলা
    * পেয়ারাঃ বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১
    * কুলঃ বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল), থাই কুল-২
    * লেবুঃ বারি লেবু -২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১
    * আমড়াঃ বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১
    * করমচাঃ থাই করমচা
    * ডালিম (দেশী উন্নত)
    * কমলা ও মাল্টাঃবারি কমলা-১, বারি মাল্টা – ১
    * জামরুলঃবাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি।
    * সবজিঃলাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, কলমী শাক, পুইঁশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।
    পদ্ধতিঃ
    * হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
    * ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
    * ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
    * সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিযে ভর্তি করে নিতে হবে।


    • ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড় সমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন ভেঙ্গে না যায়।

    • রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।

    • রোপনের পর গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।

    • সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমনব্যবস্থা নিতে হবে।

    • রোপনের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।

    • গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

    • গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দপেষ্ট লাগাতে হবে।



    পরিচর্যাঃ
    ডাল-পালা ছাঁটাই ঃ
    কুল খাওয়ার পর ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি গাছের সমস্ত ডাল কেঁটে দিতে হবে। তাছাড়াও মরা ও রোগাক্রান্ত ডাল গুলো কেটে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
    কুল গাছ ছাটাই
    টব বা ড্রামের মাটি পরিবর্তনঃ
    প্রতি বছর না হলেও ১ বছর অন্তর অস্তর টবের পুরাতন মাটি পরিবর্তন করে নতুন গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে পুনরায় টবটি/ ড্রামটি ভরে দিতে হবে। এ সময় খেয়াল বাখতে হবে গাছ যেন বেশী ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। তাই এক স্তর বিশিষ্ট ড্রামের পরিবর্তে দ্বিস্তর বিশিষ্ট ড্রাম ব্যবহার করা উত্তম।
    বালাই দমন ঃ
    বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম বা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাই নাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও-১ ব্যাবহার করা যেতে পারে।

    মিলি বাগ ঃ
    পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
    লক্ষনঃ
    * পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়।
    * পোকা উড়তে পারেনা।
    * টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে।
    * গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায় ।
    * অনেক সময় পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।

    দমনঃ
    হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
    পেয়ারায় মিলি বাগ লেবু গাছে মিলি বাগ কুল গাছে মিলি বাগ

    সাদা মাছি ঃ
    পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
    লক্ষনঃ
    * পাতার নিচে সাদা তুলার মত মাছি পোকা দেখা যায়।
    * পোকা উড়তে পারে।
    * গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ঝরে পড়ে, পরবর্তী
    মৌসুমে ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়।
    * পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
    দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হুইল পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
    সাদা মাছি স্যুটি মোল্ড
    শুটি মোল্ডঃ
    ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। পাতার ওপর কাল কাল পাউডার দেখা দেয়। গাছের ফলন ব্যহত হয়। আক্রমর ব্যাপক হলে পাতা ও ফল ঝরে যায়।

    দমনঃ
    টিল্ট-২৫০ ইসি, প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

    0 comments:

    Post a Comment