Wednesday, July 20, 2016

বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সারাবছর শাকসবজি চাষ

  • Share The Gag
  • সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকতে পুষ্টিকর খাবার খেতেই হবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের দৈনিক ২১৩ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা গড়ে মাত্র ৫৩ গ্রাম শাক-সবজি  গ্রহণ করি। এর কারণে এদেশের কোটি কোটি মানুষ দৈহিক ও মানসিক অসুখে ভুগছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে শিশু এবং নারী। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ, বিশেষ করে মহিলারা লৌহের অভাবে রক্তশূন্যতার শিকার। একমাত্র ভিটামিন-এ’ র অভাবে বছরে ৩০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায়।  এসব সমস্যা সমাধানে শাক-সবজি খাওয়ার বিকল্প নেই। কারণ শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে সে সবজি হতে হবে অব্যশই বিষমুক্ত। যেহেতু সব বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কম বেশি খোলা জায়গা থাকে। তাই সেসব স্থানে শাকসবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা করা যায়।




    সবজি উৎপাদন মডেলঃ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ  ক’টি সবজি মডেল উদ্ভাবন হয়েছে, যার মধ্যে কালিকাপুর সবজি উৎপাদন মডেল অন্যতম। পাবনা জেলাধীন ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুরে অবস্থিত ফার্মিং সিস্টেম গবেষণা এলাকায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে এ সবজি উৎপাদন মডেল উদ্ভাবন করা হয়। এ মডেল’র সবজি বিন্যাস অনুসরণ করে চাষাবাদের মাধ্যমে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের সারাবছরের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য বসতবাড়ির রোদযুক্ত উঁচু স্থানে ৬ মিটার লম্বা ও ৬ মিটার চওড়া জমি নির্বাচন করে পাঁচটি বেড তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি বেডের প্রস্থ হবে ৮০ সে.মিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে নালা থাকবে ২৫ সে. মিটার।




    সবজি বিন্যাসঃ


























    ১) প্রথম খন্ডের বিন্যাস

    : মুলা/টমেটো-লালশাক-লালশাক-পুঁইশাক

    ২) দ্বিতীয় খন্ডের বিন্যাস

    : লালশাক + বেগুন-লালশাক-ঢেঁড়শ

    ৩) তৃতীয় খন্ডের বিন্যাস

    : পালংশাক-রসুন/লালশাক-ডাঁটা-লালশাক

    ৪) চতুর্থ খন্ডের বিন্যাস

    : বাটিশাক-পেঁয়াজ/গাজর-কলমীশাক-লালশাক

    ৫) পঞ্চম খন্ডের বিন্যাস

    : বাঁধাকপি-লালশাক-করলা-লালশাক


































































































































    সবজি নাম

    মাটি

    বপন/ রোপণ সময়

    বপন/ রোপণ

    দূরত্ব ( সে.মি.)

    বীজহার/ শতাংশ বা ৪০ ব. মি. (গ্রাম)

    জাত

    ডাঁটা শাক

    বেলেমাটি ছাড়া যে কোন ধরনের মাটি। কিন্তু দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ উত্তম।

    সারা বছর চাষ করা যায়। তবে মার্চ- জুলাই বপনের জন্য উত্তম।

    গাছ-গাছ: ৫-৮ (পাতলাকরণের পর)

    ১০-১৫ গ্রাম

    কান্ডের জন্য: কাটোয়া সবুজ, সুরেশ্বরী, দক্ষিণবাশ পাতা। পাতার জন্য: আমনী, পুশাবারী

    গীমাকলমী শাক

    যে কোন ধরনের মাটিতে জন্মে, দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ উত্তম, জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।

    বছরের যে কোন সময় জন্মানো যায়। উপযু্ক্ত সময় হচ্ছে ফেব্রুয়ারি -জুলাই

     সারি-সারি: ৩০

     গাছ-গাছ: ১৫

    ৪০-৫০ গ্রাম বীজ এবং শাখা কাটিং থেকে জন্মানো যায়।

    বারি গীমা কলমী-১ এভাবগ্রীণ, এলপি-১

    লাল শাক

    সব ধরনের মাটি। কিন্তু বেলে দো-আঁশ উত্তম।

    সারা বছর

    ছিটিয়ে কিংবা সারিতে বপন করা যায়।

    গাছ-গাছ:১০-১৫

    (পাতলাকরণের পর )

     ২০ গ্রাম

    আলতা, পেটী, রক্তলাল, ললিতা

    পালং শাক

    দো-আঁশ,বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ। কিন্তু দো-আঁশ মাটি উত্তম।

    সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি

    গাছ-গাছ:১০-১৫   (পাতলাকরণের পর)


    ১২৫-১৫০ গ্রাম

    পালং ও পুষা জয়তি

    বাটি শাক

    প্রায় সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়। তবে বেলে ও বেলে দো-আঁশ উত্তম।

    সারা বছরই চাষ করা যায়।

    বীজ উৎপাদনের  উপযুক্ত সময়: শীতকাল

     গাছ-গাছ:২০-২৫

    (পাতলাকরণের পর)

     ১০-১২

    বারি বাটি শাক ১

    পুঁই শাক

    সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ। পর্যাপ্ত সূর্যালোক দরকার।

    ফেব্রুয়ারি-জুন সবচে’ উপযোগী সময়

    সারি-সারি: ৪০-৫০

    গাছ-গাছ:২০   (পাতলাকরণের পর)

     ১০-২০

     ৩-৪ টি বীজ

    (মাদা প্রতি)

    প্রধানত: দুটি সাদা বা সবুজ কান্ড ও লাল কান্ড বিশিষ্ট। এছাড়া বারিপুঁইশাক-১, বারিপুঁইশাক-২, মাধুরী, মনিষা

    মুলা

    প্রায় সব ধরনের মাটিতেই উৎপন্ন হয়। কিন্তু দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি সবচে’ উত্তম।

    জুলাই-ডিসেম্বর, কিন্তু বপনের উত্তম সময় ১৫ই নভেম্বর

    সারি সারি: ২০-৩০

    গাছ-গাছ:৮-১০  (পাতলাকরণের পর)


     ২৫-৩০


    গুরুত্বপূ জাত, তাসকিসান, মিনো আর্লি মিয়াসিকি, রেড বোম্বাই, এভারেস্ট

    বেগুন

    যে কোন ধরনের দো-আঁশ মাটি যেখানে সেচ ও নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে।

    সারা বছরই জন্মানো যায়। বীজ তলায় বীজ বপনের সর্বোত্তম সময়:১৫ জুলাই-সেপ্টেম্বর (শীতকাল) নভেম্বর-ডিসেম্বর (গ্রীষ্মকাল)

     ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল (বর্ষাকাল)

    সারি সারি:৭৫

    গাছ-গাছ: ৪৫

    ঝোপলো জাতের ক্ষেত্রে:

    গাছ গাছ: ৫৫-৬০

    বীজ: ২

    চারা:৭০-৮০টি

    ইসলামপুরী, খটখটিয়া, সিংনাথ, উত্তরা, মুক্তাকেশরী, নয়নকাজল, বিজয় চমক-১ কাজলা, তারা পুরী, বারি বিটি বেগুন-১,২,৩,৪।

    ঢেঁড়শ

    সুনিষ্কাশিত যে কোন ধরনের মাটিতে উৎপন্ন হয়। দো-আঁশ মাটি সবচে’ উত্তম।

    সারা বছরই জন্মানো যায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি-মে উপযুক্ত সময়। সরাসরি বীজ বপন করাই ভাল।

    সারি সারি: ৬০-৭৫

    গাছ-গাছ : ৪৫

    ২৫-৩০

    পুষা শাওনী, পেন্টা গ্রীণ,     কাবুলী ডোর্য়াফ, প্যাথিফিক গ্রীণ, বারি ঢেঁড়শ-১ ও অনামিকা

    টমেটো






    সব রকমের মাটিতে জন্মে।                      তবে সুনিষ্কাশিত উর্বর দো-আঁশ মাটি উত্তম।

    বীজবপন:

    ১৫-৩০ আগস্ট (আগাম)

    সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (মধ্যম) নভেম্বর (নাবী)

    চারা রোপণ:  ১-১৫সেপ্টেম্বর (আগাম) অক্টোবর- নভেম্বর (মধ্যম) ডিসেম্বর (নাবী)

    সারি সারি : ৬০-৮০

    গাছ-গাছ : ৪৫-৫০

    বীজ:১.৫

    চারা: ৯০-১০০ টি

    রোমোরিও, টিপু সুলতান, পুষারুবী, মানিক, রতন, রোমা ভি এফ, মারগ্লোব, অক্র্হার্ট, মানি মেকার (শীতকালীন জাত)

    বারি টমেটো-১০ বারি টমেটো-১৩, ওবারি হাইব্রিড টমেটো (গ্রীষ্মকালীন জাত)


    বরবটি


    পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ যে কোন মাটিতে জন্মে। মাটি সুনিস্কাশিত হতে হবে। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ উত্তম।

    ফেব্রুয়ারি-জুলাই। তবে মার্চ-এপ্রিল বপনের সবচেয়ে উপযোগী সময়

    সারি-সারি: ১০০

    মাদা-মাদা: ৫০

    মাদার আকার:

    ৩৮´৩৮´৩৮

    ২০

    ৪-৫ টি বীজ

    (মাদা প্রতি)

    গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় জাত- কেগর নাটকি। এছাড়া লালবেনী, তকি ঘৃত সুন্দরী, বারি বরবটি-১

    বাঁধাকপি

    সেচ ব্যবস্থা আছে এমন প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ উত্তম।

    ১৫আগস্ট-অক্টোবর (আগাম)

    সেপ্টেম্বর-নভেম্বর (মধ্যম)

     নভেম্বর-জানুয়ারি (নাবী)

    সারি-সারি:৬০

    গাছ-গাছ:৪৫

    ১.৫-২.০

    বা

    ১২০-১৫০

    টি চারা

    গ্রীণ এক্রপ্রেস, কে ওয়াই ক্রস, প্রভাতি, অগ্রদূত, এটলাস-৭০, ড্রামহেড


    করলা

    সুনিস্কাশিত উর্বর বেলে দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ বা দো-আঁশ

     সারা বছরই জন্মে। তবে উপযু্ক্ত সময় হচ্ছে

    চৈতালী: জানুয়ারি-মার্চ, বর্ষাতি: এপ্রিল-জুন,

    রবি: অক্টোবর- ডিসেম্বর

    সারি-সারি: ১০০

    মাদা-মাদা: ১০০

    মাদার আকার:

    ৪৫´৪৫´৩০

    ২৫

    ৪-৫টি বীজ

    (মাদা প্রতি)

    বারি করলা ১, বুলবুলি, টিয়া, গ্রীণ স্টার, গৌরব, গ্রীণ রকেট

    গাজর

    সুনিস্কাশিত দো-আঁশ

    বীজ বপন: অক্টোবর-১৫ ডিসেম্বর



    সারি-সারি:২০-২৫

    গাছ-গাছ: ৬-৭

    ১২-১৪


    বিইউ ক্যারট ওয়ান, পুশাকেশর, করোডা রেড, করোডা সানটিনি, সাইন করোডা, রয়েল করস, কোরেল করম, কিনকো সানটিনে রয়েল, স্কারলেট নান্টেস




    সার প্রয়োগঃ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় চাষযোগ্য জমি যেহেতু কম তাই জৈব সার ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষ করা উত্তম। এক্ষেত্রে সবজির ধরন অনুযায়ী শতাংশ প্রতি ৬০-১০০ কেজি জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে অল্প পরিমাণ ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার দেয়া যেতে পারে।




    পরিচর্যাঃ আগাছা শাকসবজির অন্যতম শত্রু। এরা একদিকে যেমন খাদ্যের ভাগ বসায়, অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই আগাছা দেখামাত্র তুলে ফেলতে হবে। প্রয়োজনমতে সেচ এবং পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে।




    বালাই ব্যবস্থাপনাঃ শাকসবজি প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার মধ্যে কুমড়া জাতীয় সবজির ফলের মাছি পোকা, বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, টমেটো-বেগুন-ঢেঁড়শ’র সাদা মাছি, শিম-বেগুন-লাউ-বাঁধাকপি-টমেটো-শশা-কুমড়া’র জাব পোকা উল্লেখযোগ্য। এসব পোকা আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে পোকা ধরে মেরে ফেলা, ফেরোমোন ফাঁদ, বিষটোপ এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলেই কেবল অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক সময়ে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত।




    শেষ কথাঃ এ ধরণের একটি পারিবারিক পুষ্টি বাগান পরিবারের সব সদস্যদের অংশগ্রহণে সহজেই গড়ে তোলা যায়। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বাড়তি সবজি বিক্রি করে নগদ টাকাও পাওয়া যায়। তাই প্রত্যেকটি বসতবাড়িতেই এ ধরণের বাগান তৈরি করলে আমরা সবাই লাভবান হতে পারব।

    ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন

  • Share The Gag
  • এদেশে প্রাপ্ত প্রায় ২০ মিলিয়ন ছাগলের প্রায় ৯৩ ভাগ পালন করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারী ধরণের খামারীরা। বাংলাদেশে প্রাপ্ত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু চামড়া তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত। তাছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অধিক এবং তারা দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী। এসব গুনাবলী থাকা সত্ত্বেও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাণিজ্যিক উৎপাদন এদেশে এখনো প্রসার লাভ করেনি। এর অন্যতম কারণ ইন্টেনসিভ বা সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব।




    ঘরঃ ছাগল সাধারণত: পরিষ্কার, শুষ্ক, দুর্গন্ধমুক্ত, উষ্ণ, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ূ চলাচলকারী পরিবেশ পছন্দ করে। গোবরযুক্ত, স্যাঁত স্যাঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও পুতিগন্ধময় পরিবেশে ছাগলের রোগবালাই যেমন: নিউমোনিয়া, একথাইমা, চর্মরোগ, ডায়রিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন জাতীয় সংক্রামক ও পরজীবীয় রোগ হতে পারে। সেই সাথে ওজন বৃদ্ধির হার, দুধের পরিমাণ এবং প্রজনন দক্ষতা কমে যায়।




    ঘর নির্মাণের স্থানঃ পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বী, দক্ষিণ দিক খোলাস্থানে ঘর নির্মাণ করা উচিৎ। খামারের তিন দিকে ঘেরা পরিবেশ বিশেষ করে উত্তর দিকে গাছপালা লাগাতে হবে। ছাগল খামারে স্থান নির্বাচনে অবশ্যই অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং উত্তম পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ৮-১০ বর্গ ফুট জায়গা প্রয়োজন। প্রতিটি বাড়ন-বাচ্চার জন্য গড়ে ৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। ছাগলের ঘর ছন, গোল পাতা, খড়, টিন বা ইটের তৈরী হতে পারে। তবে যে ধরণের ঘরই হউক না কেন ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরী করে তার উপর ছাগল রাখতে হবে। মাচার উচ্চতা ১.৫ মিটার (৫ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ১.৮-২.৪ মিটার (৬-৮ ফুট) হবে। গোবর ও প্রগ্রাব পড়ার সুবিধার্থে বাঁশের চটা বা কাঠকে ১ সেঃ মিঃ (২.৫৪ ইঞ্চি) ফাঁকা রাখতে হবে। মাচার নিচ থেকে সহজে গোবর ও প্রগ্রাব সরানোর জন্য ঘরের মেঝে মাঝ বরাবর উঁচু করে দুই পার্শ্বে ঢালু (২%) রাখতে হবে। মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালি মাটি দিতে হবে। ছাগলের ঘরের দেয়াল, মাচার নিচের অংশ ফাঁকা এবং মাচার উপরের অংশ এম.এম. ফ্ল্যাক্সিবল নেট হতে পারে। বৃষ্টি যেন সরাসরি না ঢুকে সে জন্য ছাগলের ঘরের চালা ১-১.৫ মিঃ (৩.২৮-৩.৭৭ ফুট) ঝুলিয়ে দেয়া প্রয়োজন। শীতকালে রাতের বেলায় মাচার উপর দেয়ালকে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। শীতের সময় মাচার উপর ১০-১২ সেঃ মিঃ (৪-৫ ইঞ্চি) পুরু খড়ের বেডিং বিছিয়ে দিতে হবে। বিভিনড়ব বয়সের এবং বিভিনড়ব ধরণের ছাগলকে ভিনড়ব ভিনড়ব ঘরে রাখা উচিৎ। পাঁঠাকে সব সময় ছাগী থেকে পৃক করে রাখা উচিৎ। দুগ্ধবতী, গর্ভবতী ও শুষ্ক ছাগীকে একসাথে রাখা যেতে পারে। তবে তাদের পৃক খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতকালে বাচ্চাকে রাতের বেলা মায়ের সাথে ব্রম্নডিং পেনে রাখতে হবে। ব্রম্নডিং পেন একটি খাঁচা বিশেষ যা কাঠের বা বাঁশের তৈরী হতে পারে। এর চারপার্শ্বে চটের ব্যবস্থা দিয়ে ঢাকা থাকে।




    খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাই খামারের অন্যতম প্রধান বিষয়। ইন্টেনসিভ এবং সেমি-ইন্টেনসিভ পদ্ধতিতে ছাগলের খাদ্যের পরিমাণ ও গুনগত মান নির্ভর করে চারণ ভূমিতে প্রাপ্ত ঘাসের পরিমাণ ও গুনগত মানের উপর।



    • ছাগলের বাচ্চাকে কলষ্ট্রাম (শাল দুধ) খাওয়ানোঃ সাধারণত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চার ওজন ০.৮-১.৫ কেজি (গড়ে ১.০০ কেজি) ওজন হয়। বাচ্চা জন্মের পরপরই পরিস্কার করে আধা ঘন্টার মধ্যেই মায়ের শাল দুধ খেতে দিতে হবে। ছাগলের বাচ্চার প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম শাল দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। এই পরিমাণ দুধ দিনে ৮-১০ বারে খাওয়াতে হবে। শাল দুধ বাচ্চার শরীরে এন্টিবডি তৈরী কওে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। দুই বা ততোধিক বাচ্চা হলে প্রত্যেকেই যেন শাল দুধ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ছানা সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যে দুধ ছাড়ে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দুধ উৎপাদন কম হওয়ায় ২-৩ ছানা বিশিষ্ট মা ছাগীর দুধ কখনো কখনো বাচ্চার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারেনা। এক্ষেত্রে ছানাকে পরিমাণমত ৩৭-৩৮ সেঃ তাপমাত্রায় অন্য ছাগলের দুধ বা মিল্ক রিপ্রেসার খাওয়ানো উচিত। ছাগলের বাচ্চার দানাদার খাদ্য মিশ্রণ কম আঁশ, উচ্চ প্রোটিন, উচ্চ বিপাকীয় শক্তি সম্পন্ন হতে হয়।

    • ছাগলের বাচ্চাকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোঃ ছাগল ছানা প্রথমে মায়ের সাথেই দানাদার খাবার খেতে অভ্যস্থ হয়। ছাগলের বাচচাকে জন্মের প্রথমে সপ্তাহ থেকে ঘাসের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে। সাধারণত শুরুতে মায়ের সাথেই বাচ্চা ঘাস খেতে শিখে। অভ্যস্থ করলে সাধারণত দুই সপ্তাহ থেকেই বাচচা অল্প অল্প ঘাস খায়। এ সময়ে বাচ্চাকে কচি ঘাস যেমন: দুর্বা, স্পেনডিডা, রোজী, পিকাটুলাম, সেন্টোসোমা, এন্ড্রোপোগন প্রভৃতি ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া, ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, ধইনচা ইত্যাদি পাতা খাওয়ানো যেতে পারে।



    বাড়ন্ত ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ৩-১২ মাস সময়কালকে মূল বাড়ন্ত সময় বলা যায়। এ সময়ে যেসব ছাগল প্রজনন বা মাংস উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হবে তাদের খাদ্য পুষ্টি চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। দুধ ছাড়ানোর পর থেকে পাঁচ মাস পর্যন- সময়ে ছাগলের পুষ্টি সরবরাহ অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে থাকে। এ সময়ে একদিকে ছাগল দুধ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন ও বিপাকীয় শক্তি থেকে যেমন বঞ্চিত হয় তেমনি মাইক্রোবিয়াল ফার্মেন্টেশন থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি সরবরাহও কম থাকে। এজন্য এ সময়ে পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার ও আঁশ জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। ঘাসের পরিমাণ ও গুনগত মান বেশি হলে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ কমবে এবং পরিমাণ ও গুনগত মান কম হলে উপরোক্ত পরিমাণ দানাদার খাদ্যেই চলবে।





















































    ছাগলের ওজন (কেজি)

    দানাদার খাদ্য দৈনিক সরবরাহ (গ্রাম)

    ঘাস সরবরাহ/চরানো (কেজি)


    ১০০

    ০.৪


    ১৫০

    ০.৬


    ২০০

    ০.৮

    ১০

    ২৫০

    ১.৫

    ১২

    ৩০০

    ২.০

    ১৪

    ৩৫০

    ২.৫

    ১৬

    ৩৫০

    ৩.০

    >১৮

    ৩৫০

    ৩.৫




    প্রজননক্ষম পাঁঠার খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ পাঁঠার খাদ্য ব্যবস্থাপনা বাড়ন্ত ছাগলের মতই। তবে প্রজননে সহায়তার জন্য প্রতিটি পাঁঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম ভিজানো ছোলা দেয়া প্রয়োজন। একটি পাঁঠা ১০ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে। কোনভাবেই পাঁঠাতে বেশি চর্বি জমতে দেয়া উচিত নয়। ২৮-৩০ কেজি ওজনের পাঁঠার জন্য দৈনিক ৪০০ গ্রাম পরিমাণ দানাদার খাবার দেয়া প্রয়োজন।




    দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ দুগ্ধবতী ছাগল তার ওজনের ৫-৬ শতাংশ হারে শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে। একটি তিন বছর বয়স্ক ২য় বার বাচ্চা দেয়া ছাগীর গড় ওজন ৩০ কেজি হারে দৈনিক ১.৫-১.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ১-১.৫ কেজি পরিমাণ শুষ্ক পদার্থ ঘাস থেকে (৩-৫ কেজি কাঁচা ঘাস) বাকি ০.৫-০.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ দানাদার খাদ্য থেকে দেয়া উচিত। যেহেতু ছাগী বাচ্চা দেয়ার ১.৫- ২.০ মাসের মধ্যে গর্ভবতী হয় সেজন্য প্রায় একই পরিমাণের খাবার গর্ভাবস্থায়ও ছাগলকে দিতে হবে।




    সারণী-২: ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ (%)












































    গম/ভূট্টা ভাঙ্গা/চাল

    ১২.০০

    গমের ভূষি/আটা কুড়া

    ৪৭.০০

    খেসারী/মাসকালাই/অন্য ডালের ভূষি

    ১৬.০০

    সয়াবিন খৈল

    ২০.০০

    শুটকি মাছের গুড়া

    ১.৫০

    ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট

    ২.০০

    লবণ

    ১.০০

    ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স

    ০.৫০

    মোট

    ১০০.০০




    ছাগলের চরানোঃ ঘাস সরবরাহের জন্য নেপিয়ার, স্পেনডিডা, পিকাটুলুম, রোজী, পারা, জার্মান ইত্যাদির চাষ করা যেতে পারে। মাঠের চারপার্শ্বে ইপিল ইপিল গাছ লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া বর্ষাকালে চারণ ভূমিতে ঘাসের সাথে মাসকালাই ছিটিয়ে দিলেও ঘাসের খাদ্যমান অনেক বেড়ে যায়। শীতকালে অনেক সময় পর্যাপ্ত ঘাস পাওয়া যায় না। এজন্য এ সময়ে ছাগলকে ইউএমএস (ইউরিয়া ৩%, মোলাসেস ১৫%, খড় ৮২%)-এর সাথে এ্যালজির পানি খাওয়ানো যেতে পারে।




    প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ একটা পাঁঠা সাধারণত: ৩/৪ মাস বয়সে যৌবন প্রাপ্ত হয় কিন্তু আট/নয় মাস বয়সের পূর্বে পাল দেবার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। কোন পাঁঠার শারীরিক দুর্বলতা, পঙ্গুত্ব বা কোন যৌন অসুখ সমস্ত পালকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই সেদিকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে। দশটি ছাগীর জন্য একটা পাঁঠাই যথেষ্ট। ছাগী যখন প্রমবারে (৫-৬ মাস বয়সে) গরম (Heat) হয় তখন তাকে পাল না দেওয়াই ভাল। এক্ষেত্রে এক/দুইটি হিট বাদ দিয়ে মোটামুটি ১১-১২ কেজি ওজনের সময় পাল দেয়া উচিত। ছাগীর হিটে আসার লক্ষণগুলো হচ্ছে- মিউকাস নিঃসরণ, ডাকাডাকি করবে, অন্য ছাগীর উপর উঠা ইত্যাদি। ছাগী হিটে আসার ১২-৩৬ ঘন্টার মধ্যে পাল দেওয়া উচিত। অর্থাৎ সকালে হিটে আসলে বিকেলে এবং বিকেলে হিটে আসলে পরদিন সকালে পাল দিতে হবে।




    স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাঃ ছাগলের খামারে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য নিয়মিত পিপিআর টিকা, কৃমিনাশক ইত্যাদির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। ছাগলের সবচেয়ে মারাত্ক রোগ পি.পি.আর এবং গোটপক্সের ভেক্সিন জন্মের ৩ মাস পরে দিতে হয়। বছরে দুবার বর্ষার প্রারম্ভে (এপ্রিল-মে) কৃমিনাশক এবং বর্ষার শেষে (অক্টোবর-নভেম্বর) ব্রডসেপ্রকট্রাম ক্রিমিনাশক যেমন: নেমাফেক্স, রেলনেক্স ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া যকৃত কৃমির জন্য ফেসিনেক্স, ডোভাইন ইত্যাদি ব্যবহার করা প্রয়োজন। কোন ছাগলের চর্মরোগ দেখা দিলে তা ফার্ম থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যে কোন নূতন ছাগল খামারে প্রবেশ করানোর আগে কমপক্ষে এক সপ্তাহ অন্যস্থানে রেখে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। খামারের সকল ছাগলকে ১৫-৩০ দিন পর পর ০.৫% মেলাথায়ন দ্রবণে ডিপিং করানো (চুবানো) উচিত। তাছাড়া ম্যাসটাইটিসসহ অন্যান্য সংক্রমক রোগের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়।







    • বাচ্চা বয়সে ডায়রিয়া বাচচা মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এজন্য বাচ্চাকে সব সময় পরিচ্ছন্ন জায়গায় এবং পরিমান মত দুধ খাওয়াতে হবে। ফিডার ও অন্যান্য খাদ্য পাত্র সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

    • জন্মের পর পর বাচ্চাকে পরিস্কার করে নাভি থেকে ৩-৪ সেঃ মিঃ নিচে কেটে দিতে হবে।

    • যে বাচ্চার মায়ের দুধের পরিমাণ কম তাদেরকে বোতলে অন্য ছাগলের দুধ/বিকল্প দুধ (মিল্ক রিপেসার) খাওয়াতে হবে।

    • শীতের সময়ে বাচ্চাকে মায়ের সাথে ব্রুডিং পেনে রেখে ২৫-২৮ সেঃ তাপমাত্রায় রাখতে হবে।

    • বাচ্চা যেন অতিরিক্ত দুধ না খায় তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

    • যেসব পাঁঠা বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহৃত হবে না তাদেরকে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে খাসি করাতে হবে।

    সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা

  • Share The Gag
  • সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা



    আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বলতে পরিবেশকে দুষণমুক্ত রেখে প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ বালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমার নিচে রাখাকে বুঝায়, যাতে করে পরিবেশ দূষিত না হয়। উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণ, বালাই সহনশীল জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার এবং সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বালাই নাশকের সময়োচিত ও যুক্তি সঙ্গত ব্যবহারকে নিশ্চিত করে।

    উপকারিতা


    • আই পি এম গ্রহনের ফলে উপকারী পোকা মাকড়, মাছ, ব্যাঙ, পশু, পাখি ও গুই সাপ প্রভৃতি সংরক্ষণ করা যায়।

    • বালাইনাশকের যুক্তি সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, যথেচ্ছ ব্যবহার না হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমে।

    • বালাইনাশকের পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধ করা সম্ভব হয়। এতে করে বালাইনাশক জনিত দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো যায়।

    • ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় বালাইনাশক সহনশীলতা অর্জন করার সুযোগ পায় না।

    • বালাই- এর পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা কম।

    • সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দুষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।



    উপাদান সমূহ

    আইপিএম এর পাঁচটি উপাদান।

    উপকারী পোকামাকড় ও প্রাণী সংরক্ষণ


    • জৈবিক দমনে ব্যাঙ, চিল, পেঁচা, গুইসাপ, মাকড়সা, লেডী বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল, বোলতা, মিরিড বাগ, ওয়াটার বাগ, ড্যামসেল ফড়িং প্রভৃতি উপকারী পোকামাকড় ও অন্যান্য প্রাণী ক্ষতিকারক পোকা দমনে যথেষ্ট সাহায্য করে।

    • উপকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য :




    • ধান ক্ষেতের আইলে শিম ও শসা জাতীয় ফসল আবাদ করা।

    • জমিতে পরিমিত পরিমাণ পানি রাখা।

    • ফসল কাটার অন্তত: ৪/৫ ঘন্টা পর জমিতে লাঙল দেওয়া।

    • ফসল কাটার পর আইলে কিছু খরকুটা বিছিয়ে দেওয়া।

    • জমিতে বাঁশের বুষ্টার স্থাপনের মাধ্যমে বোলতা প্রতিপালন করা।

    • বালাইনাশকের এলোপাতাড়ি ব্যবহার পরিহার করা।



    বালাই সহনশীল জাতের চাষাবাদ

    ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ অনেকাংশে রোধ করতে পারে। যেমন-


    • বি আর ২৬: সাদা-পিঠ গাছ ফড়িং ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধশীল এবং পাতাপোড়া রোগ, বাদামি গাছ ফড়িং সবুজ পাতা ফড়িং আক্রমণে মধ্যম প্রতিরোধশীল।

    • বাদামী গাছ ফড়িং ও সবুজ পাত ফড়িং আক্রমণে মধ্যম প্রতিরোধশীল ।

    • ব্রি ধান ২৭: সাদা পিঠ গাছ ফড়িং এর আক্রমণে প্রতিরোধশীল।

    • টুংরো, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া রোগ এবং বাদামি গাছ ফড়িং ও পামরী পোকার আক্রমণে মধ্যম প্রতিরোধশীল।

    • ব্রি ধান ৩১: বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণে প্রতিরোধশীল এবং পাতা পোড়া ও টুংরো রোগে মধ্যম প্রতিরোধশীল ।

    • ব্রি ধান ৩৫: বাদামি গাছ ফড়িং প্রতিরোধশীল এবং টুংরো রোগ মধ্যম প্রতিরোধশীল ।



    আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার

    সুস্থ বীজ, সঠিক দূরত্বে রোপন, সবল চারা, সুষম সার, আগাছা মুক্ত জমি, সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা, সারিতে রোপণ ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহনে অধিক ফলন পাওয়া যায়।

     

    যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি


    • হাত জালের সাহায্যে পোকা ধরে মারা।

    • আলোর ফাঁদে পোকা ধরা।

    • আক্রান্ত পাতার আগা কেটে দেওয়া।

    • পাখি বসার জন্য ডাল পুঁতা।

    • হাত দিয়ে পোকার ডিম সংগ্রহ করে ধংশ করা।

    • এসব পদ্ধতি ব্যবহারে বালাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।



    রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা


    • নিয়মিতভাবে অপকারী ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা।

    • সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কেবল আক্রান্ত জমিতে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা।



    প্রথম ৪টি উপাদানের সাহায্যে ও যদি ক্ষতিকারক পোকা- মাকড় ও রোগের আক্রমণ দমিয়ে রাখা সম্ভব না হয়, কেবল তখনই সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বালাইনাশক ব্যবহার করা র্অথাৎ পোকার সংখ্যা অর্থনৈতিক দ্বারপ্রান্তে (ইটিএল) পৌঁছে গেলে তখনই বালাইনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার।