Saturday, February 13, 2016

Tagged Under: , ,

ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন ও ব্যবসা

  • Share The Gag
  • মুরগির জাত বা ধরনঃ


    ব্রয়লার মুরগি কি?

    ব্রয়লার হলো মুরগির মাংস উৎপাদনের জন্য এক বিশেষ ধরনের মুরগি যাদের দেহের ওজন ৩০ থেকে ৩৫ দিনে দেড় থেকে পৌনে দু’কেজি হয়। ঐ সময়ে এরা এক কেজি দেহের ওজনের জন্য মোটামুটিভাবে দেড় কেজি খাবার খাবে। এদের মাংস খুব নরম ও সুস্বাদু।

    হাইব্রিড ব্রয়লারঃ

    ভারী ওজন বিশিষ্ট বিভিন্ন মোরস্তমুরগির মধ্যে মিলন ঘটিয়ে, ছাটাই বাছাই করে দীর্ঘ গবেষণার পর কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে অধিক মাংস উৎপাদনশীল হাইব্রিড ব্রয়লার তৈরি করা হয়।

    ব্রয়লার জাতের নামঃ

    হাইব্রো পিএন, হাববার্ড ক্লাসিক, কব ৫০০, হাইব্রো পিজি + আরবার একর ও ষ্টারব্রো, ইত্যাদি।

    ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ


    • গুণগতমানের ব্রয়লার বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে;

    • ব্রয়লারের জন্য খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এমন মুরগির জাত সঠিক ভাবে নির্বাচন করতে হবে। কারণ সব মুরগি সমান ভাবে ওজন বাড়ে না।


    লেয়ার মুরগির সংজ্ঞাঃ লেয়ার মুরগি হলো ডিম উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের মুরগি যাদেরকে একদিন বয়স থেকে পালন করা হয়, যারা ১৮ থেকে ১৯ সপ্তাহ বয়সে ডিম দিতে শুরু করে এবং উৎপাদনকাল ৭২ থেকে ৭৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ডিম উৎপাদনকালীন সময়ে এরা গড়ে প্রায় সোয়া দু’কেজি খাবার খেয়ে এক কেজি ডিম উৎপাদন করে।

    হাইব্রিড লেয়ারঃ ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন ধরনের মোরস্তমুরগির মিলন ঘটিয়ে ক্রমাগত ছাঁটাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ গবেষণার পর সৃষ্ট অধিক ডিম পাড়া মুরগিকে হাইব্রিড লেয়ার বলে।

    লেয়ার জাতের নামঃ ডিমের প্রকৃতি বা রং অনুসারে লেয়ার মুরগি দুই ধরনের:


    • সাদা ডিম উৎপাদনকারীঃ এরা তুলনামূলক ভাবে আকারে ছোট। তুলনামূলকভাবে কম খাদ্য খায়, ডিমের খোসার রং সাদা। যেমন: ইসা হোয়াইট, সিভার কার্প, লোহম্যান হোয়াইট, নিকচিক, ব্যবকক-বিভি-৩০০, হাবার্ড হোয়াইট, হাই সেক্স হোয়াইট, শেভার হোয়াইট, হাইলাইন হোয়াইট, বোভান্স হোয়াইট।

    • বাদামী ডিম উৎপাদনকারীঃ তুলনামূলকভাবে আকারে বড়, খাদ্য বেশি খায়, ডিমের আকার বড়, ডিমের খোসার রং বাদামী। যেমন: ইসা ব্রাউন, হাই সেক্স ব্রাউন, শেভার ৫৭৯, লোহম্যান ব্রাউন, হাই লাইন ব্রাউন, ব্যবকক-বিভি-৩৮০, গোল্ড লাইন, ইসা রোজ, ব্যবলোনা টেট্রা, ব্যবালোনা হারকো, হাবার্ড ব্রাউন।


    লেয়ার মুরগি নির্বাচনঃ


    • লেয়ারের জন্য সঠিকভাবে ভাল উৎপাদনশীল স্ট্রেইন নির্বাচন করতে হবে। কারণ সব মুরগি সমান ডিম দেয় না;

    • গুণগতমানের লেয়ার বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে;

    • কাঙ্খিত  বৈশিষ্ট্যের সুনাম রয়েছে এমন বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে;

    • সুনাম রয়েছে এমন হ্যাচারী থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।


    বাচ্চা গ্রহণের প্রস্ততিঃ

    বাচ্চা খামারে আসার পরের কাজঃ জন্মের প্রথম সপ্তাহে পরিবহনজনিত কারণে বাচ্চা পানি শূন্যতায় ক্লান্ত হয়। তাই এদের জন্য ব্রুডার ঘরে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দ্রুত পানি পান করা শেখাতে হবে। পানির সাথে শতকরা ৫ ভাগ হারে গস্নুকোজ মিশিয়ে দিলে সহজে এরা সেখান থেকে শক্তি পেতে পারে। একইসাথে যে কোন উন্নমানের মাল্টিভিটামিন ও ইলেক্ট্রোলাইট প্রস্ততকারী কোম্পানীর নির্দেশ মতো পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। দূরের হ্যাচারী বা বিক্রয়কেনদ্র থেকে বাচ্চা পরিবহন করে খামারে আনলে মাল্টিভিটামিন ও ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হলে পরিবহনজনিত ক্লামিত্ম ও পানি শূণ্যতা দূর করে বাচ্চাকে দ্রুত স্বাভাবিক করে তোলে।

    টিকাদান কর্মসূচি

    টিকা প্রদান ও তার গুরুত্বঃ টিকা প্রদান কর্মসূচি অনুসারে বিভিন্ন রোগের টিকা প্রদান করলে


    • শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি সৃষ্টি হয় এবং

    • সংক্রামক রোগ হতে মুরগিকে রক্ষা করা যায়। টিকাদান ফলপ্রসূ হলে রোগের প্রাদুর্ভাব খুব কম হবে এবং মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায় রাখা যাবে।


    লেয়ার মুরগির টিকাঃ মারেক্স, রাণীক্ষেত, গামবোরো, ব্রংকাইটিস, বসন্ত, সালমোনেলা, করাইজা

    ব্রয়লার মুরগির টিকাঃ মারেক্স, রাণীক্ষেত, গামবোরো

    টিকা প্রদানের পূর্বে সতর্কতাঃ


    • মুরগি ধরার সময় যত্ন সহকারে ধরতে হবে;

    • মুরগির যে কোন ধরনের ধকল মুক্ত অবস্থায় টিকা প্রয়োগ করতে হবে;

    • অসুস্থ মুরগিকে টিকা দেয়া যাবে না;

    • টিকা প্রদান উপকরণ ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে;

    • আবহাওয়া যখন ঠান্ডা সেসময়ে টিকা প্রদান করতে হবে।


    টিকা ব্যবহারের সাধারণ নিয়মাবলীঃ


    • প্রতিষেধক টিকা সবসময়ই সুস্থ পাখিকে প্রয়োগ করতে হয়;

    • সংক্রামক রোগ বা কৃমিতে আক্রান্ত পশু-পাখিকে টিকা প্রয়োগ করা যাবে না। তাতে কাঙ্খিত মাত্রায় প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয় না বরং পাখির আরও ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে;

    • টিকা বীজ কোন অবস্থাতেই সূর্যালোকের সংস্পর্শে আনা যাবে না;

    • ব্যবহারের সময় মিশ্রণ এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাত্র, সিরিঞ্জ-নিড্‌ল, ব্যবহৃত তরল পদার্থ, টিকা ব্যবহারকারীর হাত ইত্যাদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও বীজাণুমুক্ত হওয়া প্রয়োজন;

    • জীবাণুমুক্তকরণের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না;

    • প্রতিষেধক টিকা সকালে বা সন্ধ্যার সময় ঠান্ডা আবহাওয়ায় প্রয়োগ করা ভাল;

    • ব্যবহারের জন্য গোলানোর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা ব্যবহার করে ফেলা উচিত। গোলানোর পর গরমের দিনে ১ ঘন্টা এবং শীতের দিনে ২ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করে ফেলতে হবে;

    • মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা টিকার সাধারণ রং পরিবর্তিত হয়ে গেলে সে টিকা আর ব্যবহার করা যাবে না;

    • টিকা পরিবহনের ক্ষেত্রে ঠান্ডা অবস্থায় পরিবহন নিশ্চিত করা প্রয়োজন;

    • তাপ প্রতিরোধক পাত্রের মধ্যে বরফ দিয়ে টিকা বীজ পরিবহন করতে হয়। বরফ গলে গেলে পুনরায় বরফ দিতে হয়;

    • ব্যবহারের সময় টিকা মিশ্রণের পাত্র ছায়াযুক্ত স্থানে বরফ দেওয়া বড় পাত্রের মধ্যে রাখা যাবে না;

    • ভাইরাস জনিত রোগ প্রতিরোধক টিকা প্রয়োগকালে টিকা প্রয়োগ স্থান পরিষ্কার পানি দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে এবং এই জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না;

    • গোলানো অব্যবহৃত টিকা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য রাখা যাবে না।


    টিকা প্রদান কর্মসূচী (লেয়ার মুরগির জন্য)

















































































































    বয়স

    রোগের নাম

    ভ্যাকসিনের নাম

    টিকা প্রদানের পদ্ধতি

    ১ দিন

    মারেক্স রোগ

    মারেক্স ভ্যাকসিন

    চামড়ার নীচে ইজেকশন

    ২ দিন

    গামবোরো রোগ

    গামবোরো ভ্যাকসিন (লাইভ)

    চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা না থাকলে)

    ৩-৫ দিন

    রানীক্ষেত রোগ

    বি, সি, আর, ডি, ভি

    দুই চোখে ফোঁটা (প্যারেন্ট মুরগির টিকা প্রদান করা থাকলে ৭ থেকে ১০ দিন বয়সে)

    ৭ দিন

    ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস

    আই, বি,

    চোখে ফোঁটা

    ১০-১৪ দিন

    গামবোরো রোগ

    গামবোরো ভ্যাকসিন

    এক চোখে ফোঁটা

    ২১-২৪ দিন

    রানীক্ষেত রোগ

    বি, সি, আর, ডি, ভি

    দুই চোখে ফোঁটা

    ২৪-২৮ দিন

    গামবোরো রোগ

    গামবোরো ভ্যাকসিন

    এক চোখে ফোঁটা

    ৩০ দিন

    ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস

    আই, বি,

    চোখে ফোঁটা

    ৩৫ দিন

    মুরগি বসন্ত

    ফাউল পক্স ভ্যাকসিন

    চামড়ার নীচে সুঁই ফুঁটিয়ে

    ৫০ দিন

    কৃমি

    কৃমির ঔষধ

    খাদ্য অথবা পানির সাথে

    ৬০ দিন

    রানীক্ষেত রোগ

    আর, ডি, ভি

    চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন

    ৭০ দিন

    ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস

    আই, বি

    চোখে ফোঁটা বা পানির সাথে

    ৮০-৮৫ দিন

    কলেরা

    ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন

    চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন

    ৯০-৯৫ দিন

    ইনফেকসাস করাইজা

    আই, করাইজা ভ্যাকসিন

    চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন

    ১১০-১১৫ দিন

    কলেরা

    ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন

    চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন

    ১৩০-১৩৫ দিন

    ইনফেকসাস ব্রংকাইটিস, রানীক্ষেত, এগড্রপসিনড্রম

    সমন্বিত টিকা

    চামড়ার নীচে বা মাংসে ইনজেকশন

    ১৩০-১৩৫ দিন

    কৃমি

    কৃমির ঔষধ

    খাদ্য অথবা পানির সাথে

    তবে খেয়াল রাখতে হবে: প্রয়োজনবোধে খাদ্যের সাথে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধের জন্য ককসিডিওস্ট্যাট ব্যবহার করতে হবে। ৫০ দিন বয়সে কৃমির ঔষধ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ১৩০ থেকে ১৩৫ দিন বয়সে ঐ ঔষধ পুনরায় খাওয়াতে হবে।

    তবে এই তালিকা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রোগের প্রার্দুভাবের ইতিহাস, টিকার প্রাপ্যতা ও স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নিজ নিজ খামারের জন্য নিজস্ব তালিকা প্রস্তত করতে হবে। টিকা সবসময় প্রস্ততকারীর নির্দেশমত ব্যবহার করতে হবে। সকল প্রকার টিকা ও ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
    ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা

    মুরগীর বাসস্থান

    মুরগির ঘরের আবশ্যকতাঃ

    ১. প্রতিকুল আবহাওয়া, বন্যপ্রাণী ও দুস্কৃতিকারী হতে রক্ষা করতে হবে;

    ২. সুস্বাস্থ্যের অনুকুল ও আরামদায়ক পরিবেশ রাখতে হবে;

    ৩. বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।

    আদর্শ ঘরের গুণাগুণঃ

    ১. খোলা মেলা থাকতে হবে;

    ২. আলো ও বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে;

    ৩. প্রয়োজনীয় আর্দ্রতাযুক্ত হতে হবে;

    ৪. সহজে ঘরের গ্যাস বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে;

    ৫. পরিচ্ছন্ন পরিবেশ হতে হবে।

    ঘরের স্থান নির্বাচনঃ

    ১. বন্যার পানি ওঠে না এমন উঁচু ভূমি;

    ২. জনবসতি হতে দূরে;

    ৩. হাট-বাজার, কল-কারখানা হতে নিরাপদ দূরে;

    ৪. যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল;

    ৫. উন্নত বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা;

    ৬. নিকটতম স্থানে বাজারজাতকরণের সুবিধা।

    মুরগির ঘরের পরিবেশঃ

    ১. বিশুদ্ধ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে;

    ২. গ্যাস বের করার সুবিধা রাখতে হবে;

    ৩. দূর্গন্ধ মুক্ত রাখতে হবে;

    ৪. আর্দ্রতা ও তাপ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকতে হবে।

    সুস্থ পরিবেশের গুরুত্বঃ

    ১. মুরগির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য;

    ২. উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য;

    ৩. পালক দ্বারা শরীর পরিপূর্ণ রাখতে;

    ৪. খাদ্য ও পানি গ্রহণ স্বাভাবিক রাখার জন্য।

    অসুস্থ পরিবেশের বিপদঃ

    ১. খাদ্য ও পানি পান স্বাভাবিক থাকে না;

    ২. বিপাকীয় কার্যাবলীতে বিঘ্ন ঘটে;

    ৩. ডিমের খোসা পাতলা হয়;

    ৪. শারীরিক বৃদ্ধি ঠিক মতো হয় না;

    ৫. উৎপাদন কমে যায়;

    ৬. রোগ বালাই বেড়ে যায়।

    সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির পদ্ধতিঃ

    ১. তাপ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে;

    ২. টিনের ঘর হলে সিলিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে;

    ৩. ঘরের উপর ছায়া তৈরি করতে হবে;

    ৪. ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করতে হবে;

    ৫. ঠান্ডা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাত্রে চটের পর্দা ব্যবহার করতে হবে;

    ৬. লিটার পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।

    মুরগীর বাসস্থান নির্মাণ প্রস্ততি এবং ঘরের বৈশিষ্ট্যঃ

    মুরগীর ঘরের প্রকৃতি

    উন্মুক্ত বা দো চালা ঘর:

    ১. ঘরের অবস্থান: উত্তর-দক্ষিণমুখী;

    ২. ভিতরে: এক দেড় ফুট উঁচু, বেলে দো-আঁশ মাটি;

    ৩. মেঝে: পাকা হতে হবে;

    ৪. আয়তন: মুরগির জাত ও সংখ্যানুযায়ী;

    ৫. প্রস্থ: ৩০ ফুটের মধ্যে;

    ৬. দৈর্ঘ্য: প্রয়োজন ও সুবিধানুযায়ী;

    ৭. দূরত্ব: একটি হতে অপরটির দূরত্ব ঘরের প্রস্থের কমপক্ষে দেড় গুণ;

    ৮. উচ্চতা: পার্শ্ব উচ্চতা ৭ ফুট, মধ্য উচ্চতা ১২ থেকে ১৪ ফুট (দু’চালা ঘরের);

    ৯. চালা: কাঁচা, পাকা, টিনের। টিনের হলে সিলিং থাকতে হবে। বৃষ্টির ছাট ঝাপ্টা রোধে ঘরের চালা নীচের দিকে বাড়িয়ে দিতে হয়;

    ১০. বেড়া বা দেয়াল: ভিতর হতে উপরে এক ফুট বদ্ধ দেয়াল বা বেড়া, বাকি অংশ শক্ত তারের জাল দ্বারা করতে হবে;

    ১১. খাঁচা পদ্ধতির ঘর হলে সম্পূর্ণ তারের নেট বা জাল দ্বারা করতে হবে;

    ১২. ব্রুডার ঘর হলে ভিতরের উপর ৩ থেকে ৪ ফুট আবদ্ধ বেড়া এবং বাকি অংশে তারের  নেটের তৈরি;

    ১৩. ঘর তৈরির উপকরণ: সামর্থ অনুযায়ী ইট, সিমেন্ট, রড, টিন, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি।

    পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ঘর


    • এই ঘরে কৃত্রিম উপায়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেমন- বাতাস চলাচল ব্যবস্থা করা;

    • প্রয়োজনে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা;

    • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা;

    • ঘরের ভেতর আলোর ব্যবস্থা করা;

    • রোগ সংক্রমণ প্রতিকার ব্যবস্থা করা;

    • কেনদ্রীয়ভাবে ঔষধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা।


    অধিক উচ্চতার ঘর:

    এই ঘর উন্মুক্ত অথবা পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।

    ঘরের বৈশিষ্ট্য:


    • এই ঘর দুই তলা হতে হবে। উপর তলাতে মুরগি থাকে এবং নীচের তলায় মুরগির বিষ্ঠা জমা হয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় তলাতে মুরগি রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়;

    • উচ্চতা: প্রতি তলার উচ্চতা সাত ফুট;

    • নীচ তলার মেঝের বৈশিষ্ট্য: নীচ তলায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে মুরগির বিষ্ঠা যেন ভিজে না যায়  তার জন্য নীচ তলার মেঝে এক ফুট উঁচু করা হয়;

    • বাতাস চলাচল ব্যবস্থা: ঘরের গরম বাতাস নীচ তলার ভেন্টিলেটরে ব্যবহৃত একজাস্ট ফ্যানের সাহায্যে বের করার ব্যবস্থা থাকে। এ সময় গরম বাতাসের সংস্পর্শে নীচে জমে থাকা বিষ্ঠার আর্দ্রতা কমে যায়;


    খামারে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও উপকরণসমূহ:

    ব্রুডার

    বাচ্চা পালন করার জন্য ব্রুডার ব্যবহার করা হয়। ব্রুডারের তিনটি অংশ। যেমন:

    ক) হোভার : ব্রুডারের ছাতার মতো অংশকে হোভার বলে। ব্রুডারে যে তাপ সৃষ্টি হয় তাকে বাচ্চার দিকে নিম্নমুখী করার জন্য হোভার ব্যবহার করা হয়। হোভার ৩ থেকে ৮ ফুট ব্যাসযুক্ত হতে পারে।

    হোভার তৈরিতে সাধারণত: গ্যালভানাইজড টিন শিটের মাধ্যমে হোভার তৈরি করা হয়।

    খ) ব্রুডার গার্ড : হোভারকে কেনদ্র করে ব্রুডার গার্ড স্থাপন করা হয়। ব্রুডার গার্ড বাচ্চাদের তাপের উৎসের কাছাকাছি রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত: হোভারের ২ থেকে ৩ ফুট দূরত্বে হোভারকে বেষ্টন করে ব্রুডার গার্ড দেয়া হয়।

    ব্রুডার গার্ড তৈরিতে হার্ড বোর্ড, বাঁশের তৈরি চাটাই বা গ্যালভানাইজড আয়রন (জিআই) শিটের সাহায্যে তৈরি করা হয়। এছাড়া তারজালও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তারজাল নিরাপদ হতে হবে যাতে মুরগির বাচ্চা আঘাত না পায়। ব্রুডার গার্ডের উচ্চতা: সাধারণত: ১৪ থেকে ২০ ইঞ্চি।

    গ) ব্রুডার হিটার :

    ১. বৈদ্যুতিক হিটারঃ তাপের উৎস: ১০০ থেকে ২০০ ওয়াটের ৩ থেকে ৪টি বৈদ্যুতিক বাল্ব হোভারের সাথে যুক্ত করা থাকে। আধুনিক ব্রুডারে বিশেষ ধরনের ফ্যান ব্যবহার করে গরম বাতাস সমান ভাবে বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা অনুসারে থার্মোমিটারের সাহায্যে পরীক্ষা করে বয়স অনুসারে বাল্‌বের সংখ্যা কমানো বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া থার্মোস্ট্যাট নিয়ন্ত্রণ যুক্ত বৈদ্যুতিক হিটারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

    ২. কেরোসিন হিটারঃ তাপের উৎস: বিশেষ ধরনের বার্ণার বা কেরোসিন স্টোভের উপর হোভার স্থাপন করা হয়।

    ৩. গ্যাস হিাটরঃ তাপের উৎস: গ্যাস বার্ণার হোভারের সাথে সংযুক্ত থাকে অথবা প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে কেনিদ্রয়ভাবে তাপ উৎপাদন করে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

    ৪. গরম পানির হিটারঃ গরম পানি পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে ঘর গরম রাখা হয়। ঘরের মধ্য বরাবর মেঝের উপর ১২ ইঞ্চি উঁচুতে গরম পানির পাইপ স্থাপন করে তাপ উৎপাদন করা হয়। ঘরের এক প্রামেত্ম ব্রয়লারে পানি গরম করে লাইনে সরবরাহ করা হয়। গরম পানির পাইপের উপরিভাগে হোভার স্থাপন করা হয়।

    ব্রুডারে তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাঃ হোভার উঁচু-নীচু করে প্রয়োজনীয় তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

    আকর্ষনীয় আলো

    ব্রুডারে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক আলো দ্বারা বাচ্চা খাদ্য ও পানির স্থান দেখতে পায়। যে সমস্ত ব্রুডারে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার হয় না সেখানে প্রথম ৩ দিন হোভারের সাথে ৭.৫ থেকে ১০ ওয়াটের বাল্ব ব্যবহার করা হয়।

    পানির পাত্র:

    পস্নাস্টিক অথবা টিনের তৈরি পাত্র ব্যবহার হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার স্বয়ংক্রিয় পাত্রও ব্যবহার করা হয়।  ১. নিপল ড্রিংকার    ২. কাপ ড্রিংকার    ৩. বেল টাইপ ড্রিংকার    ৪. ট্রাফ ড্রিংকার।

    খাবার পাত্র:

    পস্নাস্টিক, কাগজ অথবা টিনের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পস্নাস্টিক বা কাঠের তৈরি ট্রাফ ফিডার, গ্রিল যুক্ত ট্রাফ ফিডার, টিউব পাত্র, অটোম্যাটিক প্যান ফিডার ব্যবহার করা হয়।

    মুরগি ধরার সরঞ্জাম

    ১. ক্যাচিং হুক: ১৪ গেজি তারের সাহায্যে ৪ ফুট লম্বা ক্যাচিং হুক তৈরি করা যায়। এই হুকের অগ্রভাগ মুরগির পা ধরার জন্য বাঁকা থাকে।

    ২. হার্ডল: হার্ডলের সাহায্যে মুরগি একস্থানে জমা করে ধরতে সুবিধা হয়। পস্নাস্টিক, জিআই, কাঠ বা বাঁশের সাহায্যে হার্ডল তৈরি করা হয়। এটি স্থানান্তরযোগ্য একধরনের বেড়া যাতে দরজা থাকে। সেই দরজায় হাত ঢুকিয়ে মুরগি ধরা হয়। সাধারণত: ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়। মুরগির প্রতিষেধক টিকা দেয়ার সময় এবং বাছাই ও বাজারজাত করার সময় হার্ডল ব্যবহার করা যায়।

    মুরগির ক্রেট:

    মুরগির পরিবহনের জন্য ও বাজারজাতকরণের জন্য ক্রেট ব্যবহার করা হয়। ক্রেট সাধারণত: পস্নাস্টিক বা তার দ্বারা তৈরি করা হয়।

    খাদ্য পরিবশন সামগ্রী: বালতি, মগ, বেলচা, খাদ্য পরিবহন ট্রলি।

    মুরগি পরিমাপক যন্ত্র : ওজন মাপার যন্ত্র (ওয়েয়িং স্কেল )।

    থার্মোমিটার : ঘরের তাপমাত্রা মাপার কাজে ব্যবহার করা হয়।

    হাইগ্রোমিটার : এটি ঘরের আপেক্ষিক আর্দ্রতা মাপার কাজে ব্যবহৃত হয়। হাইগ্রোমিটার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

    থার্মো-হাইগ্রোমিটার : এটি এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে একইসাথে তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা মাপা যায়। বর্তমান সময়ে প্রাপ্ত স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল থার্মো-হাউগ্রোমিটার বাণিজ্যিক খামারগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

    লিটার পরিষ্কার ও পরিচর্যার জন্য ব্যবহৃত সামগ্রী

    কোদাল, বেলচা, ঝুড়ি, আঁচড়া, ট্রলি। বাণিজ্যিক খামারে সরাসরি ট্রাকটর বা ভ্যান ঢুকিয়ে লিটার অপসারন করা হয়।

    ব্রুডিং ঘর, সরঞ্জামাদি, হ্যাচারী নির্বাচন

    ব্রুডিং কি: বাচ্চা জন্ম গ্রহণের পর অন্তত: প্রথম ৪ সপ্তাহ তাদেরকে গরম পরিবেশে পালন করতে হয়। পালক না গজানোর কারণে এরা ঐ সময় দেহের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ অবস্থায় যথাযথ পরিবেশের মাধ্যমে বাচ্চার ঘরে তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থাপনাকে ব্রুডিং বলে। বাণিজ্যিকভাবে বাচ্চা ব্রুডিংয়ের জন্য কৃত্রিম উপায়ে তাপ প্রদান করা হয়।

    ব্রুডিং ঘরঃ লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে তিন ধরনের ব্রুডিং ঘর ব্যবহার করা হয়:

    ১. ব্রুডার হাউজ: এই ঘরে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা পালন করা হয়।

    ২. ব্রুডারড় কাম গ্রোয়ার হাউজ: এই ঘরে ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা ব্রুডিং করা হয় এবং ১৫ থেকে ১৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাড়ন্ত বাচ্চা পালন করা হয়।

    ৩. ব্রুডার-গ্রোয়ার-কাম-লেয়ার হাউজ: এই ঘরে বাচ্চা ব্রুডিং থেকে শুরু করে ডিম পাড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত (৭৬ থেকে ৮০ সপ্তাহ বয়স) মুরগি পালন করা হয়।

    ব্রয়লারের ক্ষেত্রে: বাচ্চা ব্রুডিং ও গ্রোয়িং এর জন্য একই ঘর ব্যবহার করা হয়।ড় ব্রুডার হাউজ বা তাপঘর আলাদা করা যেতে পারে। আলাদা ঘর তৈরি করলে ঘরের বেড়ার নীচের অংশ ৩ থেকে ৪ ফুট বদ্ধ এবং উপরের অংশ খুপরীযুক্ত বা তারের জাল দ্বারা ঘিরে দিতে হয়। ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চার জন্য সাধারণত: ০.৫ বর্গফুট মেঝে প্রয়োজন হয়। বাণিজ্যিক খামারে সাধারণত: ব্রুডিং-কাম-গ্রোয়ার ঘর ব্যবহার করা হয়। ব্রুডার-কাম-গ্রোয়ার ঘরে বাচ্চা ব্রুডিং করার জন্য পর্দা দ্বারা ঘিরে ব্রুডার স্থান পৃথক করা হয়। এই ঘরে প্রতি গ্রোয়ার বা বাড়ন্ত মুরগীর জন্য ১ বর্গফুট বা ০.০৯২ বর্গমি. মেঝের প্রয়োজন হয়।

    হ্যাচারী নির্বাচন:

    ১. হ্যাচারীর বাচ্চা উৎপাদন হার

    ২. ব্রিডার স্টকের গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য যেখান থেকে ডিম এনে ফুটানো হয়

    ৩. বিক্রয়ের সময় অতিরিক্ত বাচ্চা প্রদানের হার

    ৪. প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা মৃত্যুর হার

    ৫. হ্যাচারীতে ডিমের উৎস

    ৬. সেনিটেশন ব্যবস্থা

    ৭. হ্যাচারীর সুনাম

    ব্রুডিং প্রস্ততি:


    • চিক বাকসে বাচ্চা রাখা

    • বাক্সের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী বাচ্চা রাখা হয়।


    বাচ্চা পরিবহন:

    বাচ্চা পরিবহনে সতর্কতা:

    ১. পরিবহন বাক্স জীবাণুমুক্ত কিনা পরিবহনের পূর্বে তা নিশ্চিত হওয়া;

    ২. শীতকাল হলে দুপুরে পরিবহন করা;

    ৩. গ্রীষ্মকাল হলে সকালে পরিবহন করা;

    ৪. রোদ ও ঝড় বৃষ্টি হতে রক্ষা করা;

    ৫. অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ঠান্ডা হতে রক্ষা করা;

    ৬. সমস্ত প্রকার ধকল হতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

    বাচ্চা আনার পূর্বে ব্রুডার ঘর প্রস্ততকরণ:

    ১. পুরাতন ব্রুডিং ঘর হলে ঘর পরিষ্কার করা;

    ২. ঘর জীবাণুমুক্ত করা;

    ৩. ব্রুডিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা;

    ৪. লিটার বিছানো;

    ৫. ব্রুডার স্থাপন করা;

    ৬. ঘর ফিউমিগেশন অথবা ফরমালডিহাইড সেপ্র করা;

    ৭. ব্রুডার চালু করা (ব্রুডারে বাচ্চা প্রদানের ৩ ঘন্টা পূর্বে ও পরীক্ষাকরণ)।

    বাচ্চার সংখ্যা নির্ধারন:

    ১. খামারের প্রয়োজন, ব্রুডার এর তাপ দেয়ার ক্ষমতা ও ঘরের ধারণ ক্ষমতা অনুসারে বাচ্চার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে;

    ২. ৪ ফুট ব্যাসের হোভারের নীচে সাদা লেয়ার বাচ্চা ৫০০টি, রঙিন লেয়ার বাচ্চার ৪৭৫টি এবং ব্রয়লার বাচ্চা ৪৫০টি পালন করা যেতে পারে;

    ৩. পালনের সময় খামারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত শতকরা ৫টি ব্রয়লার বাচ্চা পালন করা উচিত এবং লেয়ার বাচ্চার ক্ষেত্রে শতকরা অন্তত ১০টি বেশি বাচ্চা নিয়ে শুরু করতে হবে।

    খামারে বাচ্চা আসার পর করণীয়:

    ১. বাচ্চা ছাড়ার পূর্বে ব্রুডারের তাপ পরীক্ষা করা;

    ২. পানিতে ভিটামিন সি ও গস্নুকোজ মিশানো;

    ৩. ভিটামিন সি ও গস্নুকোজ মিশ্রিত পানি সরবরাহ করা;

    ৪. বাচ্চার বাক্সে মৃত বাচ্চা থাকলে সরিয়ে ফেলা;

    ৫. বাচ্চার সংখ্যা বা গড় ওজন লিখে রাখা;

    ৬. যত্নসহকারে ব্রুডার ঘরে বাচ্চা ছাড়া;

    ৭. বাচ্চার আচরণ খেয়াল করা;

    ৮. বাচ্চার আচরণ অনুযায়ী ব্রুডারের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা;

    ৯. বাচ্চার পানি পান শেষ হলে ৪ ঘন্টা পর খাদ্য (গম ও ভুট্টাভাঙ্গা, চালের ক্ষুদ) প্রদান করা।

    লেয়ার বাচ্চা পালন ব্যবস্থাপনা

    বাচ্চার আচরণ পরীক্ষা

    ১. বাচ্চা চঞ্চল ও স্বতস্ফূর্ত হবে;

    ২. পানি, খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা স্বাভাবিক থাকবে;

    ৩. বাচ্চার চোখ উজ্জ্বল হবে;

    ৪. নাভি শুকনো হবে এবং দুই পায়ে সমান ভাবে দিয়ে দাঁড়াবে।

    তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

    ১. তাপ কম-বেশি হলে হোভার উঁচু নীচু করে

    ২. হোভারে সংযুক্ত বাল্বের সংখ্যা কমিয়ে বা বাড়িয়ে

    আর্দ্রতা বজায় রাখাঃ মুরগির ঘরের মেঝেতে যে লিটার বিছানো হয় তার আর্দ্রতা শতকরা ২০ ভাগ থাকা উচিত। লিটারের আর্দ্রতা কমে গেলে মুরগির দেহের জলীয় অংশ শুষে নেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। লিটারের আর্দ্রতা বেশি হলে ঘরে এ্যামোনিয়ার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং মুরগির শ্বাস্তকষ্টজনিত সমস্যা হয়।

    পানি প্রদান

    ১. প্রাথমিভাবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা গস্নুকোজ বা চিনি মিশ্রিত পানি প্রদান;

    ২. পরবর্তিতে ৩ দিন ভিটামিন মিশ্রিত পানি প্রদান;

    ৩. ব্রুডারের তাপে পানি গরম হতে দেওয়া (কখনও ঠান্ডা পানি প্রদান করা উচিত নয়)।

    খাদ্য প্রদান:

    ১. প্রথম দুই দিন বিছানো কাগজের উপর গম বা ভূট্টা ভাঙ্গা বা চালের ক্ষুদ;

    ২. তৃতীয় দিন হতে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সুষম বা সম্পূর্ণ ষ্টার্টার খাদ্য;

    ৩. তৃতীয় দিন পাত্রে ষ্টার্টার রেশন দেয়া শুরু;

    ৪. চতুর্থ দিন কাগজের উপর খাদ্য দেয়া বন্ধ করতে হবে।

    লিটার ব্যবস্থাপনা:

    ১. শুকনো মেঝেতে ১ থেকে ২ ইঞ্চি পুরু করে লিটার সামগ্রী বিছানোর পর ব্রুডার গার্ড, হোভার এবং হিটিং সরঞ্জাম বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে;

    ২. খাঁচায় বাচ্চা ব্রুডিং করলে মেঝেতে লিটার বসানোর প্রয়োজন নেই। সরাসরি ব্রুডার খাঁচা স্থাপন করতে হয়;

    ৩. ভিজা লিটার তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেয়া;

    ৪. লিটার জমাট বাঁধতে না দেয়া;

    ৫. প্রতিদিন লিটার নাড়া চাড়া করা।

    বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা:

    ১. ঘরের দূষিত বাতাস বের হওয়া এবং বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশের জন্য বাতাস চলাচলের প্রয়োজন;

    ২. ছোট ঘরের উপরিভাগে দূষিত বাতাস বের হওয়ার জন্য ফাঁকা জায়গা রাখা হয়;

    ৩. বাচ্চার যাতে ঠান্ডা না লাগে সে জন্য সীমিতভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়;

    ৪. শীতের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ব্রুডার ঘরের চতুর্পাশে পরিবেশের তাপমাত্রা অনুসারে চট লাগিয়ে দেয়া যেতে পারে। ঘরের ভিতরের তাপমাত্রার উপর এই চট উঠা-নামা করতে হবে। তবে কোন অবস্থাতেই পলিথিন সীট ব্যবহার করা যাবে না।

    আলোক ব্যবস্থাপনা

    লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রেঃ লেয়ার বাচ্চার জন্য খোলা ঘরে দিনের আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রথমে ২৩ ঘন্টা এবং ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে ১৮ থেকে ১৯ ঘন্টা এবং পরবর্তী সময়ে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ থেকে ১৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা আলো প্রদান করতে হয়। ডিম পাড়া শুরু হলে ক্রমান্বয়ে আলোক ঘন্টা বাড়িয়ে ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা করা উচিত।

    বাড়ন্ত লেয়ার বাচ্চা পালন পদ্ধতি

    পুলেট বা বাড়ন্ত বাচ্চা


    • ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম পাড়া শুরু করা পূর্ব পর্যন্ত বাড়ন্ত বাচ্চা হিসেবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়;

    • ব্রুডিংয়ের পর খামারে মজুদের জন্য ভাল গুণাগুন সম্পন্ন পুলেট করা হয় যাতে ভবিষ্যতে বেশি ডিম পাওয়া যায়;

    • ভাল ডিম উৎপাদনের জন্য পুলেট পালন ও নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


    বাণিজ্যিক লেয়ার থেকে ডিম উৎপাদন :

    ক) শতকরা ৫ ভাগ ডিম: বাণিজ্যিক পুলেট সাধারণত: ২০ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে শতকরা ৫টি ডিম পাড়ে।

    খ) শতকরা ১০ ভাগ ডিম: ২১ সপ্তাহ বয়সে শতকরা ১০টি ডিম পাড়ে।

    গ) সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিম উৎপাদন: ২৬ সপ্তাহ থেকে ৩০ সপ্তাহের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিম পাড়ে। অবশ্য বয়সের বিষয়টি ষ্ট্রেইন ভেদে তারতম্য হতে পারে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিম পাড়তে শুরু করার পর কিছুদিন স্থিতিশীল থাকে এবং পরবর্তী সময়ে ডিম উৎপাদনের হার খুবই আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

    ঘ) ডিমের স্থিতিশীল পর্যায়: ডিম উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে ডিমের আকার বড় হতে থাকে এবং ৪০ সপ্তাহ বয়সের পর মুরগির ওজন বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয় এবং ৫০ সপ্তাহ বয়সের পর ডিমের ওজন স্থিতিশীল পর্যায়ে আসে।

    বাড়ন্ত মুরগি পালন পদ্ধতি ও এগুলোর সুবিধা-অসুবিধা

    ১. অল-ইন অল-আউট পদ্ধতি:

    খামারে এক ব্যাচ বাচ্চা পালন করে ডিম উৎপাদন শুরু পর্যন্ত আর কোন বয়সের বাচ্চা পালন করা হয় না। প্রতি ব্যাচ বাচ্চা পালনের পর পরবর্তী ব্যাচ বাচ্চা পালনের পূর্বে হাতে অনেক সময় থাকে।

    সুবিধা

    ১. ঘর পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত ও সংস্কার করা যায়;

    ২. খামারে একই সাথে বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা না থাকায় পরষ্পরের মধ্যে রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা থাকে না।

    অসুবিধা

    ১. ডিম উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় না;

    ২. স্থানের অপচয় হয়।

    ২. মালটিপল রিয়ারিং পদ্ধতি:

    খামারে একই সাথে বিভিন্ন শেডে বিভিন্ন বয়সের মুরগি পালন করা হয়। যেমন-

    ক) ব্রুডার শেডে বাচ্চা

    খ) গ্রোয়ার শেডে বাড়ন্ত বাচ্চা ও পুলেট

    গ) লেয়ার শেডে ডিম পাড়া মুরগি

    সুবিধা

    ১. খামার সমপ্রসারণ ও ডিম উৎপাদনের ধারাবহিকতা বজায় থাকে:

    ২. বিভিন্ন বয়সের মুরগি পালন করা যায়।

    অসুবিধা

    ১. বিভিন্ন বয়সের মুরগি থাকায় রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা বেশি থাকে;

    ২. প্রতি ব্যাচ মুরগি পালন শেষে শেড সম্পূণর্রুপে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব হয় না।

    ৩. আইসোলেশন রিয়ারিং পদ্ধতি

    ব্রুডারে বাচ্চা প্রতিপালনের পর স্বতন্ত্র গ্রোয়ার শেডে স্থানান্তর করা হয়।

    সুবিধা

    ১. রোস্তজীবাণুর বিস্তার কম হয়;

    ২. স্বতন্ত্র ব্রুডার ঘর ব্যবহারের ফলে কম খরচে বাচ্চা ব্রুডিং করা যায়।

    অসুবিধা

    রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা কম থাকলেও বাচ্চা স্থানান্তরের সময় কিছুটা ধকল সৃষ্টি হয়।

    ৪. সিজনাল রিয়ারিং পদ্ধতি

    সিজন বা মৌসুমের উপর নির্ভর করে বাচ্চা পালন করা হয়। সিজনাল বাচ্চা এমন সময় উৎপাদন করা হয় যেন বাড়ন্ত পুলেট পর্যাপ্ত আলো পেয়ে থাকে। সাধারণত: ৮ সপ্তাহ বয়স থেকে ১৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পুলেটের ঘরে ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা আলো প্রয়োজন। সিজনাল রিয়ারিং এমন সময় করা হয় যেন বাচ্চার বাড়ন্ত বয়স ডিসেম্বর মাস হয়।

    সুবিধা

    ১. সিজনাল বা মৌসুমী বাচ্চা অনেক বেশী উৎপাদনশীল থাকে;

    ২. প্রাকৃতিক আলোর সাহায্যে বাচ্চা উৎপাদন করা হয় বলে উৎপাদন খরচ কম হয়।

    অসুবিধাঃ বছরে পুলেট উৎপাদন মাত্র একবার করা যায়।

    ঠোঁট কর্তনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি:

    ১. মুরগির ঠুকরা-ঠুকরি বন্ধ করা;

    ২. খাদ্য অপচয় রোধ করা;

    ৩. বাচ্চা মুরগির ৮ থেকে ১০ দিন বয়সে ঠোঁট কর্তন করা;

    ৪. বাড়ন্ত বাচ্চার ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ বয়সে ঠোঁট কর্তন করা;

    ৫. বাচ্চার নাকের ০.২ সেমি এবং বাড়ন্ত মুরগির ০.৪৫ সেমি সম্মুখে উপরে ঠোঁট কাটা;

    ৬. উভয় ঠোঁট আলাদা কাটতে হয়;

    ৭. ঠোঁট কাটার জন্য ক) ব্লক চিক ট্রিমিং মেশিন, খ) হাই স্পিড ট্রিমিং মেশিন (গ) ডিবিকার ব্যবহার করা হয়।

    কখন ঠোঁট কাটা উচিত নয় :

    ক) ভ্যাকসিন প্রদানের দুই দিন আগে বা পরে বা ভ্যাকসিন প্রদানের দিন বা ঐ দিন;

    খ) সালফার জাতীয় ঔষধ সেবনের দুই দিন আগে বা পরে;

    গ) মুরগির ধকল সৃষ্টি হলে;

    ঘ) আবহাওয়ার পরিবর্তন বেশি হলে;

    ঙ) মুরগি ডিম পাড়তে শুরু করলে।

    ঠোঁট কাটার সময় সতর্কতা:

    ক) ঠোঁট কাটার দুই থেকে তিন দিন পূর্ব থেকে পানিতে মিশিয়ে ভিটামিন ‘কে’ খাওয়ানো এবং কাটার পর অন্তত এক থেকে দুই দিন তা তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা;

    খ) ঠোঁট কাটার যন্ত্র ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করা;

    গ) বেস্নডের ধার ও তাপমাত্রা পরীক্ষা করা;

    ঘ) মুরগির চোখের এবং জিহবার যেন কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা;

    ঙ) দিনের মধ্যে ঠান্ডা সময়ে ঠোঁট কাটা;

    চ) অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে ঠোঁট কাটা।

    ঠোঁট কাটার পরবর্তী পরিচর্যা:

    ক) গভীর পাত্রে পানি সরবরাহ করা;

    খ) খাদ্যের সাথে সামান্য অতিরিক্ত আমিষ ব্যবহার করা।

    বাড়ন্ত মুরগির খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

    ১. ডিম উৎপাদন শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহ আগে থেকে খাদ্যের শতকরা ২ ভাগ ক্যালশিয়াম ব্যবহার করা উচিত;

    ২. ওজন কাঙ্খিত  না হলে সর্বাধিক ৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত স্টার্টার রেশন প্রদান করা যায়;

    ৩.পরবর্তীতে ১৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ২ ধাপ বা ৩ ধাপে খাদ্য প্রদান;

    ৪. ডিম উৎপাদন শুরুর পর ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত দ্রুত খাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে

    ৫. বয়সের পরিবর্তে ওজন অনুসারে খাদ্য প্রদান;

    ৬. ডিম পাড়ার সময় ওজন বেশি হলেও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

    পানি ব্যবস্থাপনা:

    ১. পানি খাওয়ার পরিমানের উপর মুরগির স্বাস্থ্য নির্ভর করে;

    ২. পানি বিশুদ্ধ করার জন্য প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম বিস্নচিং পাউডার মিশাতে হয়;

    ৩. পানির পাত্রের জন্য নির্ধারিত স্থান নির্বাচন করতে হয়;

    ৪. গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমের সময় ঘন ঘন ঠান্ডা পানি সরবরাহ করতে হয়।

    পুলেটের ওজন বৃদ্ধির কুফল:

    ১. বাণিজ্যিক ভাল ব্যবস্থাপনায় মুরগি ১৮ থেকে ১৯ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে;

    ২. ওজন বেশি হলে চর্বি জমে ডিম পাড়া কমে যেতে পারে;

    ৩. ডিমের আকার ছোট হয়;

    ৪. ফ্লকের মধ্যে সমতার অভাব হয়।

    পুলেটের ওজন কমার কুফল :

    ১. নির্দ্ধারিত সময়ের পরে ডিম পাড়ে;

    ২. মুরগি দূর্বল হয় ও মৃত্যুহার বেশি হয়;

    ৩. ডিম উৎপাদন হার কম হয়;

    ৪. বয়স অনুসারে ফ্লকের সমতা থাকে না।

    পুলেটের ওজন নিয়ন্ত্রণ: পুলেটের ওজন কম-বেশি হলে খাদ্যের পরিমাণ, খাদ্যে আমিষের হার কম-বেশি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

    পুলেটের আলোক ব্যবস্থা:

    আলোর কাল ও তীব্রতা বেশি হলে-

    ১. মুরগি কম বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে;

    ২. ডিম পাড়ার সময় বেশি হয় না;

    ৩. ডিমের আকার ছোট হয়;

    ৪. খোলা ঘরে বাড়ন্ত মুরগির ঘরে রাত্রিকালীন আলো প্রদান ক্ষতিকর এবং দিনের প্রাকৃতিক আলোই যথেষ্ট।

    গুণগত মান সম্পন্ন পুলেটের বৈশিষ্ট্য:

    ১. দেহ সুগঠিত

    ২. পালকে পরিপূর্ণ

    ৩. সঠিক ওজন

    ৪. পারষ্পারিক দৈহিক সমতা বিশিষ্ট

    ৫. উজ্জ্বল ঝুটি

    ৬. উজ্জ্বল চক্ষু

    ৭. সাদা চঞ্চল

    সঠিক ওজন বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা

    ১. বয়স ও জাত অনুসারে খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে সঠিক ওজন বৃদ্ধি করা যায়;

    ২. খাদ্যে প্রয়োজনমতো ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন, এ্যামাইনো এসিড ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ ব্যবহার করতে হবে;

    ৩. পানি বিশুদ্ধ করার জন্য বিস্নচিং পাউডার বা ক্লোরিন ব্যবহার করতে হবে।

    স্বাস্থ্য বিধি পালন ও প্রতিষেধক টিকা

    স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের গুরুত্ব

    ১. ঘর জীবানুমুক্ত করা;

    ২. ঘরে রোগ জীবাণুর প্রবেশ রোধ করা;

    ৩. রোগ জীবাণুর বংশ বিস্তার রোধ করা;

    ৪. খামার রোগমুক্ত রাখা।

    ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়:

    ১. বাণিজ্যিক মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করা;

    ২. সঠিক খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা;

    ৩. যথাযথভাবে লিটার পরিচর্যা;

    ৪. মুরগিকে কৃমি মুক্ত রাখা;

    ৫. অধিক তাপমাত্রা হতে মুরগিকে রক্ষা করা;

    ৬. ষ্ট্রেইন অনুসারে ডিম পাড়ার বয়সে নির্ধারিত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা;

    ৭. ঘরে পরিমাণমত আলো প্রদান করা;

    ৮. ঘরে যথেষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

    ৯. সকল প্রকার ধকল পরিহার করা;

    ১০. গ্রীট খাদ্য ব্যবহার করা। প্রতি ১০০ মুরগির জন্য ৪৫০ গ্রাম গ্রীট বা কাঁকর ১ সপ্তাহের জন্য আলাদা পাত্রে দিতে হয়।

    ডিম পাড়ার সময়: বাণিজ্যিক প্রায় সব ধরনের মুরগি ১৮ থেকে ১৯ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়তে শুরু করে। বেশির ভাগ মুরগি সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ডিম পাড়ে। সঠিক সময়ে ডিম পাড়তে অভ্যস্ত করার জন্য যথাযথভাবে আলোক নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

    ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

    ১. শীতের সময় দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৪ থেকে ৪.৩০ এ ডিম সংগ্রহ করতে হয়;

    ২. গরমের সময় সকাল, দুপুরে, বিকাল একবার করে ডিম সংগ্রহ করা হয়;

    ৩. ডিম সংগ্রহের সময় ডিমের ট্রে-তে ডিম সংগ্রহ করা উচিত;

    ৪. পরিচর্যাকারীকে ডিম সংগ্রহের কৌশল প্রশিক্ষণ দিতে হয়।

    অতিরিক্ত আলোক সময় ও আলোর তীব্রতার ফলে -

    ১. মুরগির ক্যানাবলিজম বা ঠুকরা ঠুকরি অভ্যাস সৃষ্টি হতে পারে;

    ২. বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি পায়;

    ৩. খাদ্য রূপান্তর হার কমে যায়।

    বাণিজ্যিক ব্রয়লার মুরগির ব্যবস্থাপনা

    খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

    ১. গ্রীষ্মকালে দিনের ঠান্ডা সময়ে (সকাল-সন্ধ্যা) খাদ্য প্রদান করার উপর গুরুত্ব দিতে হয়;

    ২. সম দূরত্বে পর্যাপ্ত সংখ্যক খাদ্য পাত্র স্থাপন করতে হয়;

    ৩. খাদ্য পাত্র অর্ধেকের উপর ভর্তি হলে খাদ্য অপচয় বৃদ্ধি পায়;

    ৪. খাদ্য পাত্রের তল মুরগির পিঠ সমান উচ্চতায় রাখতে হয়;

    ৫. খাদ্যে প্রয়োজনমতো আমিষ, শক্তি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, এমাইনো এসিড সরবরাহ করে খাওয়াতে হবে।

    পানি ব্যবস্থাপনা:

    ১. মুরগি সাধারণ তাপমাত্রায় তার খাদ্যের দ্বিগুণ পরিমাণ পানি পান করে;

    ২. পর্যাপ্ত সংখ্যক পানি পাত্র সরবরাহ করা জরুরী;

    ৩. গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা পানি সরবরাহ খাদ্য রূপান্তর হার বৃদ্ধি করে;

    ৪. পানির পাত্র মুরগির চোখ সমান উচ্চতায় স্থাপন করতে হয়;

    ৫. আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে মুরগির পানি পিপাসা ও পানি গ্রহণের হার অধিক হয়;

    ৬. সামান্য সময়ও পানি ছাড়া থাকলে মুরগির ভীষণ ধকল হয়;

    ৭. পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য পানির সাথে বিস্নচিং পাউডার বা ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়।

    আলোক ব্যবস্থাপনা:

    বাণিজ্যিক ব্রয়লারকে ২৩ ঘন্টা আলো সরবরাহ করতে হয়। এই আলো দিনের আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবস্থাপনা করতে হয়।

    ব্রয়লার পালন পদ্ধতি:

    ১. ব্রয়লার পালনের জন্য অল-ইন-অল-আউট পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত;

    ২. অনেক ক্ষেত্রে মাল্টিপল রিয়ারিং পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়।

    ব্রয়লারের খাদ্য রূপান্তর হার বৃদ্ধির গুরুত্ব:

    ১. অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিমাণ খাদ্য ব্যবহারে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়;

    ২. মাংস উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়;

    ৩. স্বল্পসময়ে ব্রয়লার বাজারজাত করা যায়;

    ৪. তুলনামূলক কম সময়ে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়;

    ৫. উন্নতমানের মাংস উৎপাদন করা যায়।

     ব্রয়লারের সাপ্তাহিক ওজন গ্রহণের গুরুত্ব:

    ১. খাদ্য পুষ্টি বিন্যাস বা পরিবর্তন করা যায়;

    ২. ব্যবস্থাপনা ত্রুটিসমূহ প্রতিকার করা যায়;

    ৩. ওজন বৃদ্ধির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়;

    ৪. ওজন বৃদ্ধির কারণে দেহে পানি জমে বিধায় সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।

    ব্রয়লারের ওজন হ্রাসের কারণ ও প্রতিকার:





















































    কারণ

    প্রতিকার

    কম পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ

    পরিমাণমত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

    খাদ্যের গুণগত মানের অভাব

    গুণগতমানসম্পন্ন খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

    আরামদায়ক বাসস্থানের অভাব

    বাসস্থান আরামদায়ক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

    ঘরে গ্যাস সৃষ্টি

    এমনভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ঠান্ডা না লাগে।

    লিটার পরিচর্যার অভাব

    সঠিকভাবে লিটার পরিচর্যা করতে হবে।

    অধিক তাপমাত্রা, অধিক ঠান্ডা

    গরমের সময় যে সমস্ত ব্যবস্থাপনা করা দরকার তা করতে হবে এবং ঠান্ডার সময় ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।

    প্রয়োজনীয় মেঝের স্থানের অভাব

    প্রয়োজনীয় স্থান অবশ্যই রাখতে হবে।

    সার্বক্ষণিক খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা না থাকা

    খাদ্য ও পানি সরবরাহকারীকে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

    খাদ্য ও পানি পাত্রের সংখ্যা কম থাকা

    অবশ্যই সঠিক সংখ্যক খাদ্য ও পানির পাত্রের সংস্থান করতে হবে।

    যে কোন প্রকার রোগের আবির্ভাব

    রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা মাত্র বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

    যে কোন প্রকার ধকলের সৃষ্টি

    ধকলের প্রকৃতি নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

    ব্রয়লার মুরগি প্রক্রিয়াজাতকরণ:

    ব্রয়লার জবাই করার পূর্বে করণীয়

    ১. ব্রয়লার ধরার অন্তত: ২ থেকে ৩ ঘন্টা পূর্বে খাদ্য বন্ধ করতে হয়;

    ২. ধরার পর ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পর্যন্ত অভূক্ত রাখা যায়;

    ৩. অভূক্ত রাখার ফলে কিছুটা ওজন কমলেও প্রক্রিয়াজাত করা সহজ হয়;

    ৪. ব্রয়লার চিলিং বা ঠান্ডা করার পর শতকরা ২ থেকে ৩ ভাগ ওজন বৃদ্ধি পায়।

    ব্রয়লার ধরা :

    ১. ঠান্ডা সময়ে ধরা উচিত;

    ২. ব্রয়লার ধরার সময় ঝাপাঝাপি করা ঠিক নয়;

    ৩. ধরার জন্য ক্যাচিং হুক বা হার্ডল ব্যবহার করতে হয়;

    ৪. রাত্রিবেলায় ডিমলাইট জ্বালিয়ে ব্রয়লার ধরা ভাল;

    ৫. দিনে ঘর অন্ধকার করে নেওয়া;

    ৬. ধরার পূর্বে ঘরের সরঞ্জামাদি সরিয়ে ফেলা।

    মাংস থেতলানো পরিহার:

    ১. ব্রয়লার ধরার জন্য দৌড়াদৌড়ি, ঝাপাঝাপি পরিহার করতে হয়;

    ২. ধরার পর জবাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত আরমদায়ক তাপমাত্রায় রাখতে হয়;

    ৩. পরিবহনকালে খাচায় অধিক গাদাগাদি পরিহার করতে হয়;

    ৪. ধরার সময়, পরিবহন কালে ও প্রক্রিয়াজাত করার সময় যত্নবান হলে মাংস থেতলানো পরিহার করা যায়।

    মুরগির খামারের বর্জ্য অপসারণ

    খামারের বর্জ্য

    ১. মুরগির মল-মূত্র মিশ্রিত লিটার

    ২. মৃত মুরগি

    ৩. ব্রয়লার মুরগির রক্ত, নাড়িভুড়ি, পালক ইত্যাদি

    ৪. ভাঁঙ্গা ডিম, হ্যাচারী উপজাত ও দ্রব্যাদি

    খামারের বর্জ্য অপসারণের গুরুত্ব:

    ১. রোগ জীবাণু সৃষ্টি রোধ করা;

    ২. দূর্গন্ধ দূর করা;

    ৩. খামারের পরিবেশ সুস্থ রাখা;

    ৪. বর্জ্য পদার্থ সার ও মাছের খাদ্য হিসেবে প্রস্তত করা;

    ৫. বর্জ্য হতে আয় সৃষ্টি করা।

    কম্পোষ্ট কি: প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বর্জ্য পদাথের্র মধ্যে তাপ সৃষ্টি করে রোগ জীবাণু ধ্বংস এবং বর্জ্য পদার্থের জলীয় অংশ দূর করে হালকা পাতলা ব্যবহার যোগ্য (সার) বস্ততে রূপান্তর করা।

    কম্পোষ্ট পদ্ধতি:

    ১. মুরগির লিটার, মল ইত্যাদির সঙ্গে চার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ খড়, তুষ বাতিল খবরের কাগজ বা কাঠের গুড়া মিশিয়ে সামান্য পানি দ্বারা ভিজাতে হয়;

    ২. মিশ্রিত এ বর্জ্য স্তপাকারে জমা রাখলে এর ভিতর অধিক তাপ সৃষ্টি হয়ে রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়;

    ৩. ৬ থেকে ৭ দিন পর এ স্তপ ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী স্থানে এ সকল বর্জ্য দ্বারা পুনরায় স্তপ তৈরি করতে হয়;

    ৪. এভাবে ৩য় ধাপে কম্পোষ্ট ব্যবহার যোগ্য হয়;

    ৫. বৃষ্টির পানি হতে রক্ষা করতে কম্পোষ্টের স্তপের উপর চালা বা পলিথিনের ঢাকনা ব্যবহার করতে হয়।

    কম্পোষ্টের ব্যবহার:

    ১. ফুল, ফল, ফসল চাষের জন্য সার হিসাবে;

    ২. মাছের খাদ্য হিসাবে।

    খামারের জীব নিরাপত্তা:

    বায়োসিকিউরিটি (জীব নিরাপত্তা):

    মোরস্তমুরগিকে রোগ জীবাণুর হাত থেকে নিরাপদে রাখাই হচ্ছে বায়োসিকিউরিটি বা জীব নিরাপত্তার মূল কথা। যে ফামের্র বায়োসিউিরিটি যত ভাল সে ফামের্র সমস্যা তত কম হবে, আর যে ফামের্র বায়োসিকিউরিটি ভাল না সে ফার্মে সব সময় সমস্যা লেগেই থাকবে।

    বায়োসিকিউরিটির ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়গুলো হচ্ছে :


    • বাহির থেকে যাতে কোন জীবাণু শেডে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য খামারকে বহিরাগত মানুষ, কীটপতঙ্গ, বন্য পাখি, গাড়ি, ইদুঁর ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে হবে;

    • খামারের প্রবেশ পথে ও শেডের দরজার সম্মুখে সব সময় একটি বড় পাত্রে বা ফুটবাথে জীবাণুনাশক ঔষধের মিশ্রিত পানি রাখতে হবে যাতে খামারের কাজে নিয়োজিত সকলেই শেডে ঢুকার সময় পা ডুবিয়ে জুতা বা স্যান্ডেল জীবাণুমুক্ত করতে পারে;

    • শেডের ভিতর জীবাণু, জীবাণুনাশক দিয়ে ধ্বংস করতে হবে;

    • খামারে বিভিন্ন বয়সের মুরগি রাখা যাবে না। সব সময় ‘‘অল ইন অল আউট’’ পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। একটি ফার্মে একই বয়সের একই ষ্ট্রেইনের  বাচ্চা পালন সবচাইতে ভাল;

    • কার্যকরী টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে;

    • খামারের সব যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে ধৌতকরণ এবং ফিউমিগেশনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে;

    • মৃত মুরগি এবং মুরগির বর্জ্য পদার্থ খামার থেকে দূরে মাটিতে গর্ত করে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা পৃথক চূলায় করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে;

    • এক খামারের লোক অন্য খামারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না;

    • খামার পরিচালনায় দক্ষ পরিচালক এবং দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে।


    জীবাণুমুক্তকরণ :

    জীবাণুমুক্তকরণের জন্য বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ও ফিউমিগেশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।

    ক) রাসায়নিক দ্রব্যাদির জন্য ক্লোরিন, আয়োডিন, কষ্টিক সোডা, লাইম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

    খ) ফিউমিগেশনের জন্য ১ ভাগ পটাশিয়াম-পার-ম্যঙ্গানেটের সাথে ২ ভাগ ফরমালিন মিশালে ফলমালডিহাইড গ্যাস ও ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় এবং রোস্তজীবাণু ধ্বংস হয়।

    ব্রয়লার বাজারজাতকরণ:

    ব্রয়লার বাজারজাতকরণের সময় লক্ষ্যনীয় বিষয়:

    ১. ব্রয়লার উৎপাদনের সাথে সাথে বাজারজাত করতে না পারলে খামারের ক্ষতি হয়। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত একদিনের জন্যও খামারে মুরগি থাকার অর্থ ঐ দিনের অতিরিক্ত খাদ্য ও শ্রম খরচ এবং পরবর্তী কর্মসূচীতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়;

    ২. এক ব্যাচে সমস্ত ব্রয়লার একইসাথে বিক্রি করতে হয়। পুরুষ ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি হয় এবং এক সপ্তাহ পূর্বে নির্দিষ্ট ওজনের হয়;

    ভোক্তার চাহিদা:

    ১. ভোক্তার রুচি ও পছন্দের প্রতি সম্মান রেখে মুরগি জবাই, ভাল ব্রয়লার মাংস উৎপাদন ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে;

    ২. বর্তমানে ব্যস্ততার মাঝে মানুষ বাজার থেকে মুরগি কেনা, জবাই করা, কাটা-বাছা ইত্যাদিতে সময় কম দিতে পারে। এজন্য প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী গুণাগুণ বজায় রেখে ব্রয়লার প্রক্রিয়াজাত করা উচিত।

    বর্তমান বাজার ব্যবস্থা

    ১. পাইকারী ব্যবসায়ীগণ সরাসরি খামার থেকে জীবন্ত ব্রয়লার কিনে এনে নিজেরাই দাম নির্ধারণ করে বাজারে খুচরা বিক্রি করে;

    ২. কোন কোন খামারীদের নিজস্ব প্রক্রিয়াজাত কারখানা আছে এবং নিজস্ব বিক্রয় কেনেদ্রর মাধ্যমে সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা আছে;

    ৩. বিভিন্ন সময় ও পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ব্রয়লারের মূল্য কম-বেশি হয়;

    ৪. বাজারে খুচরা বিক্রয়ের জন্য অনেকে মুরগির পালক ছাড়ানোর (ডি-ফিদারিং) যন্ত্র রাখে।

    বর্তমান বাজার ব্যবস্থার অসুবিধা

    ১. ক্ষুদ্র খামারীগণ তাদের উৎপাদিত ব্রয়লারের সঠিক মূল্য পায় না;

    ২. বিক্রেতাগণ একই হাতে জীবন্ত মুরগি ধরা, জবাই করা, পালক ছাড়ানো এবং মাংস প্রক্রিয়াজাত করে যা কখনও স্বাস্থ্য-সম্মত নয়;

    ৩. তাছাড়া মুরগির পায়খানা, নাড়িভূড়ি ইত্যাদিতে পরিবেশ আরও নোংরা হয়;

    ৪. বিক্রয়ের সময় মুরগির পেট খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকে। ফলে পাকস্থলিতে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি বেশি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

    বর্তমান বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন

    ১. ছোট খামারগুলো সমবায় ভিত্তিতে প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপন করতে পারে;

    ২. ছোট খামারগুলো জীবন্ত ব্রয়লার নির্দিষ্ট মূল্যে বিক্রি করতে পারে;

    ৩. মুরগির ধরা থেকে শুরু করে প্রকিয়াজাতকরণ পর্যন্ত স্বাস্থ্য-সম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।

    বাণিজ্যিক ব্রয়লার ও লেয়ারের ডিম উৎপাদনের সমস্যা ও সমাধান























    ঠোঁকরা-ঠুঁকরির
    (ক্যানাবলিজম ) কারণ

    প্রলাপসের কারণ

    মুরগির তলপেটে পানির কারণ

    ভেন্ট-পেষ্টিং এর কারণ

    - খাদ্যে আমিষের হার কম

    - ক্ষত, ডিম্বাশয়ের প্রলাপস্

    - খাদ্যে খনিজের পরিমাণ কম

    - সময়মত খাদ্য প্রদান না করা

    - মেঝের স্থান কম

    - ঝাঁকে সমতার অভাব

    - আলোর তীব্রতা

    - বাতাস চলাচল অপর্যাপ্ত

    - অত্যাধিক গরম

    - ঘরে অধিক গ্যাস সৃষ্টি

    - খাদ্য ও পানির পাত্রের স্বল্পতা

    -বংশগত

    - বাড়ন্তকালে বেশি আলোক সময়

    - অধিক ওজন

    - বাড়ন্তকালে আলোর অধিক তীব্রতা

    - স্নায়বিক দূর্বলতা

    - কম বয়সে ডিম আসা

    - বাড়ন্তকালে রোগ



    - ব্রম্নডিং কালে কম তাপ

    - বাতাস চলাচলের অভাব

    - ষ্টার্টার খাদ্যে অধিক ক্যালরী

    - আলোক সময় দীর্ঘ

    - ফিনিশার খাদ্যে অধিক আমিষ

    - লিটারের আর্দ্রতা বেশি



    - খাদ্যে আমিষের আধিক্য

    - খাদ্যে ম্যাগনেশিয়ামের আধিক্য

    - আমিষ ও বিপাকীয় শক্তির সঠিক অনুপাত না থাকা

    - বাচ্চার পাতলা পায়খানা



    প্রতিকার: কারণ অনুসারে প্রতিকার


    প্রতিকার: কারণ অনুসারে প্রতিকার


    প্রতিকার: কারণ অনুসারে প্রতিকার

    প্রতিকার: কারণ সমূহ দূরীকরণ এবং প্রথম দু’দিন বাচ্চাকে শুধুমাত্র গম, ভূট্টা ভাঙ্গা বা ক্ষুদ খেতে দেওয়া।

























    অপর্যাপ্ত পালক গজানো

    ডিমের আকার বিকৃত বা খোসা নরম

    মুরগির পাতলা পায়খানা

    মুরগির হিসটেরিয়া

    - খাদ্যে খনিজের ঘাটতি

    - খাদ্যে অতিরিক্ত আঁশ

    - অতিরিক্ত ককসিডিওষ্ট্যাট ব্যবহার

    - বেশী আর্দ্র লিটার

    - বাতাস চলাচলের অভাব

    - খাদ্যে ফলিক এসিডের ঘাটতি


    - খাদ্যে ক্যালসিয়াম বা ম্যাঙ্গানিজ ঘাটতি

    - আলোর অধিক তীব্রতা

    - ভিটামিন ডি এর ঘাটতি

    - ক্যালসিয়াম-ফসফরাসের অনুপাত সঠিক না হওয়া

    - হরমোনজনিত সমস্যা

    - আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি

    - আমিষের ঘাটতি

    - অধিক বয়স

    - খাদ্যে কপারের ঘাটতি

    - খাদ্যে অতিরিক্ত আঁশ

    - পেটে কৃমি

    - অধিক লবণ

    - ভাইরাসজনিত রোগ

    - অধিক আমিষ

    - আবহাওয়ায় তাপমাত্রা  বৃদ্ধি

    - আমিষ ও শক্তির অনুপাতের গরমিল

    - পচা, বাসি খাদ্য



    - অতিরিক্ত ভীড়

    - বণ্য প্রাণীর আবির্ভাব

    - অপর্যাপ্ত বাতাস চলাচল

    - আলোর ঝলক

    - অধিক তাপমাত্রা

    - বিকট শব্দ


    প্রতিকার: কারণ সমূহ দূরীকরণ

    প্রতিকার: কারণ অনুসারে

    প্রতিকার: কারণ সমূহ দূরীকরণ। ইলেকট্রোলাইট ব্যবহার।

    প্রতিকার: কারণ সমূহ দূরীকরণ। ভিটামিন, ট্রাংকুলাইজার ও ইলেকট্রোলাইট ব্যবহার।


    মুরগির খামার লাভজনক করার শর্তাবলী : খামারকে লাভজনক করতে প্রয়োজন-


    • আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর বাসস্থান;

    • গুণগত মান সম্পন্ন বাচ্চা/পুলেট সংগ্রহ;

    • সুনাম রয়েছে এমন হ্যাচারী থেকে গুণগত মান সম্পন্ন বাচ্চা সংগ্রহ;

    • উন্নতমানের পুলেট উৎপাদন;

    • স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ;

    • সময়মত প্রতিষেধক টিকা প্রদান;

    • নিয়মিত ও সুষ্ঠু পরির্চর্যা;

    • বয়স ও উৎপাদন ধাপ অনুসারে পৃথকভাবে মুরগি পালন;

    • অনুৎপাদনশীল ও অন্যান্য ত্রুটি যুক্ত মুরগি বাছাই করা;

    • ঘরে অনুকূল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ;

    • ঘরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলোক সময় ও তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা;

    • পরিমাণমত বিশুদ্ধ পানি পান করতে দেওয়া;

    • বয়স, ওজন ও উৎপাদন অনুসারে বিভিন্ন ধাপে খাদ্য প্রদান;

    • খাদ্যের গুণগতমান নিশ্চিতকরণ;

    • বাচ্চা মুরগির জন্য খাদ্য ও ব্যবস্থাপনায় সর্বাত্মক মনোযোগী হওয়া;

    • খাদ্য খরচ খামারের মোট খরচের ৭০ ভাগের নীচে রাখা;

    • খাদ্য অপচয় কমানো;

    • মুরগির ধকল রোধ করা;

    • সৎ ও দক্ষ পরিচর্যাকারী নিয়োগ করা;

    • সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ;

    • বাজার চাহিদানুসারে উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ;

    • খামারে সুষ্ঠু আয় ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ ও পর্যালোচনা;

    • গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন ও অপচয় রোধ;

    • আপদকালীন সময়ে উৎপাদিত দ্রব্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ;

    • খামারে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ;

    • মুরগির মল বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহার;

    • লিটার, মুরগির মল, বায়োগ্যাসের উপজাত, মৃত মুরগি ইত্যাদি কম্পোষ্ট করে উন্নত মানের সার ও মাছের খাদ্য উৎপাদন এবং পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ।


    মৌসুমের উপর ভিত্তি করে ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা পরিচালনা :

    ক. গ্রীষ্ম (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ): পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করলে মুরগির শ্বাসনালী থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শরীর হতে তাপ বের হয়। ফলে মুরগি হা করে শ্বাস নেয় এবং রোগজীবাণু-ধূলাবালি প্রবেশ করে ফুসফুস সংক্রামিত হয়।

    এ সময় করণীয়-

    ১. শেডে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ফ্যান দিতে হবে;

    ২. হাল্কা পানির সেপ্র দিতে হবে, ঘন ঘন ঠান্ডা পানি সরবরাহ ও পানির পাত্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে;

    ৩. ঘরে মুরগির ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে।

    খ. বর্ষা (আষাঢ়-শ্রাবন): অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মুরগির সেড সংলগ্ন এলাকা ভিজে গিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং জীবাণু বংশবিস্তার করে, ফলে মুরগি রক্ত আমাশয়ে আক্রান্ত হয়। এ সময় খাদ্যে ছত্রাক (ফাংগাস) জন্মাতে পারে।

    এ সময় করণীয়-

    চারিপাশ্বের্র পানি যেন সেডে প্রবেশ করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেড সংলগ্ন এলাকায় পানি যেন জমে না থাকে। এলাকা যেন কর্দমাক্ত না হয়।

    গ. শীত (পৌষ-মাঘ:) ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা হলে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ব্রুডিং ঘরে বাচ্চা আক্রান্ত হয়, অনেক সময় রোগ দেখা দিতে পারে।

    এ সময় করণীয়

    সেডের চারিপার্শ্বে চটের বস্তা ঝুলিয়ে দিতে হবে এবং হালকা গরম পানি সরবরাহ করতে হবে। সীমিত বায়ুচলাচল রেখে বাচ্চার জন্য কাঙ্খিত তাপমাত্রা বজায় রাখতে যথাযথভাবে ব্রুডিং করতে হবে।

    0 comments:

    Post a Comment