সৌদি আরবের মরুভূমির ফসল কোচা ও স্কোয়াশ বাংলাদেশের মাটিতে চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছেন মানিকগঞ্জের সিংগাইরের কৃষক আনোয়ার হোসেন। এই সবজি আবাদ করে মাত্র তিন মাসেই লাখপতি হয়ে নতুন ফসল চাষাবাদে আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি।
এ নিয়ে আনোয়ার হোসেন সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ কোচা লাগানো সম্ভব। পূর্ণবয়স্ক একটি কোচা গাছ অল্প জায়গা দখল করে। কোচা ও স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি।
দেশের উচ্চ ফলনশীল ফসলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সিংগাইর উপজেলার বড় কালিয়াকৈরের এ কৃষক। তিন মাসে এ ফসল আবাদ করে তিনি খরচ বাদে ১০ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে একটি চালানে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
১৫ বছর আগে সৌদি আরব থেকে কোচা সবজির বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে রোপন করেন আনোয়ার। ওই আবাদে সফল হয় আনোয়ার। পরের বছর ১ বিঘা, এরপর দুই বিঘা জমিতে কোচা ও স্কোয়াশ চাষ করেন। এরপর আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি তাকে।
এখন আনোয়ার ও তার ভাই আবুল হোসেন ৩ একর জমিতে এই অধিক উৎপাদনশীল সবজি চাষ করেন। চলতি বছর খরচ বাদে ১০ লাখ টাকা আয় করার টার্গেট নিয়ে ৩ একর জমিতে কোচা ও স্কোয়াশ আবাদ করে করেছেন তিনি।
আনোয়ারের মতে, ২ থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন অনেক বেকার যুবক। এসব বেকার যুবক বিদেশে গিয়ে যে অর্থ উপার্জন করেন তার চেয়ে অধিক অর্থ উপার্জন করা যাবে উচ্চ ফলন শীল এই ফসল আবাদ করে।
তিনি জানান, কোচা ও স্কোয়াশ এক সঙ্গে আবাদ করা যায়। তিন মাস পর ওই ফসল উঠে যাওয়ার পর জমি পতিত থাকে না। কোচা বা স্কোয়াশ উঠার সঙ্গে ওই জমিতে মিষ্টি কুমড়া, শশাসহ সাথী ফসল চাষ করা যায় বাকি ৯ মাস। এতে জমির মাটির কোনও গুনাগুণ নষ্ট হয় না। আনোয়ারের সফলতায় এ ফসল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কৈতড়া, বাইতরা, কালিয়াকৈর, বাংগালা, কাস্তাসহ আশপাশের গ্রামের অসংখ্য কৃষক। ভাল বীজের নিশ্চিয়তা ও চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ মিললে এটি এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হতে পারে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
বাজারে প্রতি কেজি কোচা ও স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। কোচা দেখতে অনেকটাই শশার মত সাদা, আর স্কোয়াশ লাউ আকৃতির। উচ্চ ফলনশীল এই দুই জাতের ফসল ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। এটা খেতেও সুস্বাদু। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবজি এবং সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সফলতার গল্প বলতে গিয়ে আনোয়ার হোসেন জানান, মাত্র আড়াই লাখ টাকা খরচ করে বীজ রোপনের দেড় মাস পর থেকেই ক্ষেত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকার কোচা তোলা শুরু হয়। এ হিসেবে দেড় মাসে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা কোচা ও স্কোয়াশ বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খরচ বাদে সব মিলে তার ১০ লাখ টাকা আয় হবে।স্কোয়াশ চাষে তিনি একাই সাবলম্বী হবেন এমনটা নয়। তার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার প্রায় ২০ জন শ্রমিককেও সাবলম্বী করা হয়েছে।
সিংগাইর উপজেলার কালিয়াকৈর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র মন্ডল জানান, কোচা বা স্কোয়াশ সবজি জাতীয় ফসল। যা কুমড়া ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের ক্রস। দেশের প্রচলিত কোনও সবজির এমন উৎপাদন ক্ষমতা নেই। তাই এই কোচা চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি জানান, লাভজনক ফসল ও ভোক্তাদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কোচা আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার বেশ কয়েকজন চাষী। তাই সরকারিভাবে বীজ সরবরাহের দাবি জানান তিনি। কেননা কোচার বীজ এখনও সরকার কিংবা দেশের কোনও কোম্পানি আমদানি কিংবা তৈরি করছে না। সৌদি আরব কিংবা দেশের মাটিতে যদি এর বীজ তৈরি করা যায় তাহলে চাষীরা কাঙ্ক্ষিত সফলতার মুখ দেখতে পারবেন।
Wednesday, February 24, 2016
Tagged Under: কৃষি তথ্য, মরুভূমির ‘স্কোয়াশ’ আবাদে সফল মানিকগঞ্জের আনোয়ার, সাম্প্রতিক পোষ্ট
মরুভূমির ‘স্কোয়াশ’ আবাদে সফল মানিকগঞ্জের আনোয়ার
By:
এক ঘরে সব কিছু
On: 8:28 AM
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment