Friday, February 12, 2016

Tagged Under: , , , ,

ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসে ৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

  • Share The Gag
  • টানা হরতাল, ধর্মঘট আর অবরোধের কারণে যশোরের হতাশাগ্রস্ত ফুল চাষীরা তাদের লোকশান পোষাতে ‘ভালবাসা দিবস’ ও ২১ শে ফেব্র“য়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় জন্ম নেওয়া সব ক্ষত মুছে ফেলে দিবস দুটোকে সামনে রেখে নতুন করে মাঠে নেমেছেন ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালির ফুল চাষীরা। তারা আশা করছেন, আর যদি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি না দেয়া হয় তাহলে তারা অন্তত ভালবাসা দিবসের বাজারটি ধরতে পারবেন। এর পরপরই ২১শে ফেব্র“য়ারি আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস রয়েছে ফুলের বাজারের আর একটি বড় দিন। সব ঠিক থাকলে প্রায় ৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম।

    প্রতি বছর ১৪ই ফেব্র“য়ারি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে পালিত হয়ে আসছে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালবাসার দিন। এ ধারা থেকে পিছিয়ে নেই আমাদের বাংলাদেশের মানুষও। সারা পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে ভালবাসা দিবসকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বাঙালিরাও। এ দিনে প্রিয়জনকে ফুল, মিষ্টি, চকলেট, কার্ড এবং অনান্য উপহার দিয়ে থাকেন সবাই। তবে ফুলের উপহারটাই বেশি, আর তার জন্য যশোরের গদখালির ফুল চাষিরা ফুল কেটে চালান শুরু করার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে। এরপর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী ফুলের চাহিদা তো রয়েছে।

    এমনই মনোরম ছবির অনবদ্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকা। বর্তমানে ওই এলাকার ২০টি গ্রামে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। বছরে প্রায় ৩শ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। ৫ হাজার কৃষক রঙ-বেরঙের ফুল উৎপাদন করে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রাখছেন। যশোরের এ ফুলকে কেন্দ্র করে সারা দেশের ১০ লাখ লোক ফুল বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। যশোরের উৎপাদিত ফুল বিক্রি হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের ৫৫টি জেলায়। সামান্য কিছু ফুল বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

    গদখালী এলাকার কৃষক শের আলী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে রজনীগন্ধা ফুলের চাষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং বেশকিছু বীজ নিয়ে আসেন। সেটা ১৯৮৩ সাল। পানিসরা গ্রামের শের আলী সর্বপ্রথম ৩০ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুল উৎপাদনের মাধ্যমে এদেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি অন্য ভাইয়েরা ও গ্রামবাসী ফুলচাষে এগিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন এলাকার কৃষকরা শুধু রজনীগন্ধারই চাষ করেছেন। এরপর শুরু হয় গোলাপ ও গ¬াডিউলাস ফুলের চাষ। গত ৩ বছর ধরে জারবেরা ও অল্পস্বল্প লিলিয়াম ফুলের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, জিপসি, রডস্টিক ফুল ওই এলাকায় চাষ হচ্ছে।

    গদখালী ফুলের হাটে দেখা যায়, গ্লাডিউলাস, গোলাপের পাহাড় জমে রয়েছে। পাতলা পলিথিনের আবরণ দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, মেরুন, গোলাপিসহ হরেক রঙের জারবেরা। হলুদ গাঁদার ¯তূপ পড়ে রয়েছে হাটের কিনারে। নছিমন, করিমন, ভ্যান, পিকআপ, বাসের ছাদে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে হাটে পাইকারি রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে প্রতিশ’ ৪শ থেকে ৫শ টাকা, গ্ল¬াডিউলাস প্রকারভেদে ৭শ থেকে ৯শ, গোলাপ ৮০ থেকে ১শ, গাঁদা প্রতি হাজার ৪০ থেকে ৫০, জারবেরা প্রতিটি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা।

    ফুলচাষিরা জানান, শীত মৌসুমে বাজার চাঙ্গা থাকে। বর্ষায় বাজার পড়ে যায়। গদখালী, পানিসরা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, কানার আলী, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিপুকুর, বাইসা, নারাঙ্গালী গ্রামে দেখা গেছে, শুধুু ফুলের বাগান। এসব গ্রামের বেশিরভাগ জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। নারী-পুরুষ কৃষিশ্রমিক ফুল ক্ষেতের যতœ করছেন। কেউ ফুল কাটছেন। কেউ ফুলে সার ছিটিয়ে দিচ্ছেন।
    ফুলচাষী আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি বর্তমানে সবধরনের ফুল মিলিয়ে ১৯ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ফুলে ফুলে বাংলাদেশকে রাঙিয়েছি। এখন শহর-গ্রামে ফুল বিক্রি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ফুলের মাধ্যমে আমরা ভালোবাসাকে জাগিয়ে তুলেছি। কিন্তু আমরা ফুলচাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাচ্ছি না। পাচ্ছি না কৃষি উপকরণ।

    ’ গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফুল বিক্রির জন্য আমাদের স্থায়ী পাইকারি বাজার নেই। ঢাকা শহরের ফুটপাতে ফুটপাতে বিক্রি করতে হয়। চাষিরা চাঁদাবাজির সম্মুখীন হন। ঢাকার গাবতলীর কেন্দ্রীয় কৃষি মার্কেটে ফুলের স্থায়ী বাজারের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গা চেয়েছি। আমরা উন্নতমানের ফুল উৎপাদন করলেও বিদেশ থেকে ফুল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। ভালো ফুল ফোটানোর জন্য কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রয়োজন রয়েছে একটি গবেষণাগারের।’ এছাড়া, রয়েছে ভালো বীজের অভাব। বীজ সংরক্ষণের বিশেষায়িত হিমাগার নেই। গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহমদ বললেন, বর্তমানে দেশের বাজারে ফুলের দাম কম হওয়াতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার যদি তাদের ফুল বাইরে রফতানির সুযোগ করে দেয় তাহলে ফুলচাষিদের জীবনে ফুলের সুঘ্রাণ মিলবে।

    যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ মহাপরিচালক শেখ হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সরকার যশোরের ফুল চাষীদের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত জাতের ফুল চাষেও অণুপ্রাণিত করা হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া তিনি বলেন, ফুল সংরক্ষণের জন্য একটি ভালো মানের কোল্ড স্টোরেজ দরকার। বাসস

    0 comments:

    Post a Comment