
পাইশকা গ্রামের স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে একস্থানে কৃষকরা গরুর গোবর জমাতেন আর বাড়ির ময়লা-আবর্জনা, লতাপাতা, এখানে-সেখানে ছুঁড়ে ফেলতেন। আর এখন বাড়ির এক কোণে একটি-দুটি গর্ত করে পাড় বেঁধে তার ওপর টিন কিংবা পলিথিন কাগজের ছাউনি দিয়ে কম্পোস্ট চালা তৈরি করা হচ্ছে।
গোবর ছাড়াও ওইসব গর্তে একস্থানেই বাড়ির সব ময়লা-আবর্জনা, লতাপাতা, চুলার ছাই, খড় ফেলা হচ্ছে। এতে বাড়ির পরিবেশ যেমন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে তেমনিভাবে সেই কম্পোস্ট চালার ময়লা-আজর্বনা থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। এই জৈব সার কৃষকরা তাদের আবাদি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করছেন।

আর এভাবেই আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করছে কম্পোস্ট গ্রাম। বর্তমানে নকলার ওই দুটি গ্রামে প্রায় ৪০০ কৃষক পরিবারে কম্পোস্টে জৈব সার ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পোস্টে জৈব সার তৈরির সফলতা স্থানীয় কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের আশাবাদী করে তুলেছে। তারা অন্যান্য এলাকাতেও এ প্রক্রিয়াটি বিস্তারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
পাইশকা গ্রামের কৃষক মো. বজলুর রহমান (৪৫) বলেন, আমি বোরো আবাদে এবং তার আগে সরিষা আবাদে এই কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করেছি। এতে আমার ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে রাসায়নিক সার অনেক কম লাগায় অনেক টাকাও সাশ্রয় হয়েছে।
তিনি জানান, জৈব কম্পোস্টের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এটা আমাদের খুব কাজে লাগছে। আমি কম্পোস্ট সার তৈরি করছি। আমার দেখাদেখি আরো অনেকেই কম্পোস্ট তৈরি করছে। আমাদের গ্রামে এখন বাড়ি বাড়ি কম্পোস্ট সার তৈরি হচ্ছে।
গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, বাড়ির ময়লা-আবর্জনা, ছাই-কুড়া না ফালাইয়া এক জায়গায় ফেলানো হয়। এতে বাড়ির পরিবেশও ভালো থাকে আবার জৈব সারও হয়। ওই সার জমিতে আবাদের সময় কাজে লাগে। কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে আমরা এসব জৈব সার তৈরি কইরা ভালো উপকার পাইতাছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ছয় মাস আগে নকলা উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তা থাকাকালে কৃষিবিদ মো. আশরাফ উদ্দিন স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় পাইশকা ও পূর্বলাভা গ্রামে কম্পোস্ট সার বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেন। ফসল উৎপাদনে দিন দিন অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। এজন্য জৈব সার ব্যবহারের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় কম্পোস্ট সার তৈরির জন্য স্থানীয় ‘মডেল’ হিসেবে গৌরদ্বার ইউনিয়নের পাইশকা ও পূর্বলাভা গ্রামে দু’টিকে বেছে নেওয়া হয়।
বিষয়টি উপজেলাা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে উন্থাপন করা হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হীরা এগিয়ে আসেন। তিনি কর্মসৃজন কর্মসূচির অর্থ দিয়ে কম্পোস্টের জন্য কৃষকদের বাড়িতে গর্ত ও পলিথিনের চালা তৈরি করে দেওয়ার আগ্রহ দেখান। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এলাকার কৃষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে উদ্ধুদ্ধকরণ করা হয়। প্রথমে ৪০টি কম্পোস্ট চালা তৈরি হলেও এখন ওই দুই গ্রামে প্রায় ২০০ কৃষক পরিবারে কম্পোস্ট তৈরি হচ্ছে। কৃষকরা নিজেরাই এখন বাড়ি বাড়ি কম্পোস্ট সার তৈরি ও ব্যবহার করছেন এবং এর সুফল পাচ্ছেন।
শেরপুর খামারবাড়ীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশরাফ উদ্দিন এ ব্যাপারে বলেন, আমরা জানি মাটির প্রাণ হলো জৈব সার। আর জৈব সারের উৎস হলো গোবর বা আবর্জনা পচা সার। আমরা আর্বজনা পচা সারকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কর্মসৃজন কর্মসূচির ক্ষুদ্র অর্থ দিয়েও যে অনেক ভালো কাজ করা যায় তার বাস্তব উদাহরণ গৌড়দ্বার ইউনিয়নের দুটি কম্পোস্ট গ্রাম। অন্যান্য ক্ষেত্রেও স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে গৌড়দ্বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান হীরা বলেন, ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির অর্থ দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য কম্পোস্ট চালা ও গর্ত করে প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে যে সার উৎপাদন হবে তাতে রাসায়নিক সারের আর প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিকভাবে আমার ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ডে করেছি। এতে করে কৃষকরা উপকৃত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
0 comments:
Post a Comment