Saturday, July 1, 2017

Tagged Under: , , , , , , , , , , , , ,

বাকৃবি গবেষকের সাফল্যঃছাদে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ(অ্যাকোয়াপনিক্স)

  • Share The Gag
  • ছাদে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ

    বাড়ির ছাদে অনেকেই সবজি বা ফলমূলের চাষ করেন। তারা চাইলে সবজি বা ফলমূলের পাশাপাশি মাছ চাষ করতে পারেন। এতে বাড়তি তেমন খরচ নেই। অন্যদিকে আমিষের জোগানও হবে। আবার খুব বেশি ঝামেলারও নয়।
    সম্প্রতি ছাদে সবজির পাশাপাশি মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ সালাম। ২০ বছরের গবেষণায় তিনি ছাদে মাছ ও সবজি চাষবিষয়ক একোয়াপনিক্স পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
    একোয়াপনিক্স হচ্ছে হাইড্রোপনিক্স ও একোয়াকালচারের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি, যেখানে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ করা সম্ভব। এতে কোনো মাটির দরকার হয় না, শুধু পানি ব্যবহার করেই সম্ভব মাছ ও সবজির চাষ।
    এ পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে বা আঙিনায় আয়তনের ওপর নির্ভর করে যে কোনো আকারের প্লাস্টিক ট্যাঙ্ক বা ড্রামের মধ্যে পানি দিয়ে সেখানে তেলাপিয়া, মাগুর, কই, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করা যাবে। আর সবজি চাষের জন্য একটি কাঠের আলনা তৈরি করে তাতে তিন সারিতে উল্টো করে একটির নিচে আরেকটি দুইপাশে কাটা প্লাস্টিকের বোতল বসিয়ে তাতে নুড়ি পাথর দিয়ে সবজির চারা লাগাতে হবে।
    এবার মাছের ট্যাঙ্কের পানি বালতি দিয়ে ওপরে তুলে সেখান থেকে সাইফোন প্রক্রিয়ায় ফোঁটা ফোঁটা করে ওপরের ওই চারা লাগানো বোতলে সরবরাহ করতে হবে। এ পানি পর্যায়ক্রমে ওপর থেকে নিচে আরও দুইটি বোতলের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে একটি পাত্রে এসে জমা হয়, যা আবারও মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে মাছের ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া  সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিণত করে পানিকে দূষণমুক্ত করে এবং ওই পানিকে আবার মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। এ পদ্ধতিতে দেশি-বিদেশি শাকসবজি চাষ করা যায়। তবে টমেটো, শসা, করলা, শিম, ব্রকলি, পুদিনা, বেগুন, দেশি লেটুসসহ আমেরিকান লেটুস ফলন বেশ ভালো হয়।
    এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য বাড়তি কোনো ধরনের সার বা মাটির প্রয়োজন না পড়লেও মাছের আলাদা খাদ্য বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হবে।
    তবে কেউ ইচ্ছা করলে বিনা খরচেই সেই খাবারও তৈরি করতে পারেন ঘরে বসে। চাইলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বা মৎস্য বিভাগে গিয়ে এ পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ নিতে পারেন।



    বাকৃবি গবেষকের সাফল্যঃ বাড়ির ছাদে “মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ”



    বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপকে লাগবের লক্ষ্যে ভার্টিক্যাল (লম্বালম্বি) চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও এখন আর পিছিয়ে নেই। তাই দেশের প্রচলিত হরাইজন্টাল (সমান্তরাল) চাষাবাদের পাশাপাশি নতুন ওই চাষাবাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। এ ক্ষেত্রে বাড়ির ছাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান কৃষি বিজ্ঞানীরা। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে উলম্ব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে খুবই স্বল্প পরিমাণ জমির প্রয়োজন হয় কিন্তু ফলন পাওয়া যায় অনেক বেশি।
    বর্তমানে বাজারে প্রাপ্ত অধিকাংশ শাক-সবজিতে উচ্চ মাত্রার যেসব কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় তার মূল্যও অনেক বেশি। আর তাই কৃষকরা যেমন একদিকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তেমনি ঘটছে মারাতœক স্বাস্থ্যহানী। এসব দিককে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে একই সাথে মাছ ও সব্জির চাষ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর ড. এম এ সালাম।
    গবেষক ড. সালাম জানান, বাড়ির ছাদে কিংবা আঙিনায় সমন্বিত এই পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষ করতে কোন প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদিত মাছ ও সবজি খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। এছাড়া এই পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই সম্ভব হবে সবজি চাষ। সমন্বিত মাছ ও সবজি চাষের এই পদ্ধতিকে বলা হয় একোয়াপনিক্স (Aquaponics)।

     

    অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতির সুবিধাগুলো-
    ১. প্রযুক্তিটি অতি সহজ হওয়ায় বা সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব।
    ২. অ্যাকোয়াপনিক্স একটি জৈব খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সুলভ উপাদান ব্যবহার করে উপাদেয় তথা পুষ্টিকর খাদ্য উৎপন্ন করা যেতে পারে।
    ৩. কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সবজি উৎপাদন সম্ভব।
    ৪. সবজি উৎপাদনে স্বল্প পরিমাণ পানি দরকার হয়। এতে শুধু বাষ্পীভূত পানিটুকুই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
    ৫. পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করে তাতে সারা বছরই মাছ ও সবজি চাষ করা যায়।
    ৬. এ পদ্ধতির জন্য তেলাপিয়া মাছই সর্বাধিক উপযোগী। কেননা, এ মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া, অধিক ঘনত্বেও চাষ করা সম্ভব।
    উপরন্তু, পানির গুণাগুণে কিছুটা হেরফের হলেও তেলাপিয়ার বৃদ্ধিতে কোনো তারতম্য হয় না। লক্ষ করা গেছে, ২০০০ লিটারের ট্যাংক থেকে ৮ মাসে ১০০-১২০ কেজি তেলাপিয়া উৎপাদন সম্ভব। এর সাথে বছরব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণে টমেটো, লেটুস, কচু ও পুদিনা ইত্যাদি উৎপন্ন করা যায়।
    অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে মাটি ছাড়া স্বল্প পরিমাণ পানি ও জায়গার দরকার হয়। এতে শাকসবজি ফলানোর জন্য অতিরিক্ত সারের কোনো আবশ্যকতা নেই। এ পদ্ধতিতে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে খরা ও উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চল যথার্থই সহায়ক। এ ক্ষেত্রে মাছের ট্যাংকের অ্যামোনিয়াসমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ভেঙে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিণত করে এবং পানি দূষণমুক্ত করে পুনরায় মাছের ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। এ পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনা, ভবনের ছাদ ও বারান্দা থেকে অতি সহজেই টাটকা শাকসবজি ও মাছ উৎপাদন সম্ভব।
    অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিগুলো-

    ১. পুকুরে মাচা পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে বাঁশের চটি দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। মাচাটি প্রতিটি আধা লিটার পানি ভর্তি চল্লিশটি বোতল দিয়ে ভাসিয়ে রাখতে হয়। অতঃপর বোতলের তলায় অনেক ছিদ্র করে তার মধ্যে নারিকেলের ছোবড়া ও নুড়ি পাথর স্তরে স্তরে সাজিয়ে তাতে সবজির চারা লাগিয়ে মাছের পুকুরে স্থাপন করতে হয়। প্রতিটি মাচায় চারটি করে কচু, পুদিনা, কলমিশাক, ঢেঁড়স ও টমেটোর সর্বমোট ২০টি চারা ব্যবহার করা যায়।
    ২. প্লাস্টিকের ড্রামে পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ড্রাম লম্বালম্বিভাবে কেটে অর্ধেক করে নুড়ি পাথর ও মাটি স্তরে স্তরে সাজিয়ে কচু, পেঁপে ও বেগুনের চারা রোপণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে মাছের ট্যাংকের ময়লা পানি পাম্প করে প্রতিদিন দুইবার ড্রামের নুড়ি পাথরের মাঝে সরবরাহ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গাছের শেকড় প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে এবং পরিষ্কার পানি পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন অন্য যে কোনো পদ্ধতির চেয়ে ফলপ্রসূ ও আশাব্যঞ্জক প্রতীয়মান হয়েছে।

    বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য মাটি ও সারের দরকার না হলেও মাছকে যথানিয়মে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
    এ পদ্ধতিতে খুবই স্বল্প খরচে বাড়ির আঙিনায় মাছ ও শাকসবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মেটানো যেতে পারে। লক্ষণীয় যে, মাছ ও সবজি চাষের এ সমন্বিত পদ্ধতি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এতে অধিক ঘনত্বে মজুদকৃত মাছের পুকুরের পানিদূষণ হ্রাস করে মাছের উৎপাদন সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

    ৩. আলনা পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল ভবনের ছাদে আলনায় স্থাপন করা হয়। সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি কাঠের আলনায় আনুভূমিকভাবে ৬টি, উপরে নিচে তিন সারিতে ১৮টি এবং উভয় পাশে মোট ৩৬টি বোতল সাজিয়ে রাখা হয়। বোতলগুলোর ছিপির  ভেতরে এক টুকরো স্পঞ্জ দিয়ে তার ওপর নুড়ি পাথর বসিয়ে প্রতি বোতলে দুটি করে সবজির চারা রোপণ করতে হয়। এতে একটি আলনায় ৩৬টি বোতলে ৭২টি চারা লাগানো যায়। এভাবে ৫০০ লিটার পানির ট্যাংকে ৩৫০ লিটার পানি দিয়ে তাতে ৬০টি তেলাপিয়া মাছ মজুদ করা যায়।

    ৪. গ্যালভানাইজড পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজড পাত দ্বারা ৫''x২".৫''x১০" আকারের ট্রে তৈরি করে সেখানে পানি নির্গমনের জন্য একটি ৪ ইঞ্চি লম্বা পাইপ স্থাপন করা হয়। অতঃপর পানিভর্তি একটি ট্রের সাহায্যে ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে এবং অপর একটিতে নুড়ি পাথর সাজিয়ে সবজি চাষ করা হয়। ট্রেগুলোকে একটি ভাসমান বাঁশের মাচার ওপর রাখা হয়। ভাসমান মাচা পদ্ধতিতে চারটি করে টমেটো, লেটুস ও পুদিনার চারা একটি শোলার পাতের মাঝে রোপণ করা হয়। অপর পক্ষে, নুড়ি পাথরের ট্রেতে কচু, টমাটো, লেটুস ও কলমিশাক রোপণ করে যথানিয়মে মাছের ট্যাংকের পানি সরবরাহ করা হয়। এভাবে আরও কিছু পরিচর্যার পরে লক্ষ করা গেছে, উভয় পদ্ধতিতেই সবজির চারা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়।

    দেখা গেছে, মাটিতে উৎপাদিত কচুর তুলনায় বাকৃবি উদ্ভাবিত অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে জন্মানো কচুর বৃদ্ধি প্রায় দশ গুণ বেশি।
    স্মর্তব্য যে, ক্রমবর্ধমান গতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের তথা আপামর জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে। সর্বত্র ভেজাল তথা অনিরাপদে খাদ্যের ছড়াছড়ি। এসব খাদ্য খেয়ে নানা রোগব্যাধির কবলে পড়ে মানুষের জীবন সংকটাপন্ন। এছাড়া, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে শাকসবজির উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতির সাহায্যে শাকসবজি ও মাছ উৎপন্ন করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব।

    বাণির্জিকভিত্তিক এক্যুয়াপনিক্স চাষ ব্যবস্থাপনা
    যন্ত্রচালিত ইলেকট্রিক পাম্পের সাহায্যে মাছের ট্যাংক হতে মল ও উদ্বৃত্ত খাদ্য ও বর্জ্য পদার্থসমূহ পানি পরিশ্রুত কঠিন বস্তুর মধ্য দিয়ে বর্জ্য কণাগুলো ছেঁকে গাছের শিকড়ে অবস্থিত সিমবায়োটিক ব্যাক্টেরিয়াগুলোর সাহায্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পুষ্টিসমৃদ্ধ উৎপাদন গাছের দেহ বৃদ্ধির জন্য গ্রহণ করে থাকে। পরবর্তীতে পরিশ্রুত পানি পরিশোধন হয়ে মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে এবং পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি কিছুক্ষণ পর পর বিরতি দিয়ে চলতে থাকে।
    এক্যুয়াপনিক্স চাষ ব্যবস্থাপনা দুটি ভাগে বিভক্ত-
    ১) এক্যুয়াপনিক্স পর্যায়টি মাছ চাষের জন্য ও
    ২) হাইড্রোপনিক্স পর্যায়টি উদ্ভিদ, বিশেষ করে সবজি চাষের জন্য।
    মাছ চাষ ট্যাংকে মাছের মল ছাড়াও উদ্বৃত্ত খাদ্য পানিতে মিশে অম্লতা বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু এই বর্জ্য পদার্থ গাছের দেহ বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি উপাদান যোগায়। গাছের শিকড়ে যে সিমরায়োটিক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে সেই সব ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ হতে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে তা রূপান্তরিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। গাছের শিকড় পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য উপাদান বিশেষ প্রক্রিয়ায় শোষণ করে গাছকে দেহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যদিও এক্যুয়াপনিক্স চাষ ব্যবস্থাপনাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যা, তবুও বর্জ্যরে বড় বড় কণাগুলোকে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষতর কণায় রূপান্তরের  জন্য বিভিন্ন উপভাগে ভাগ করা যায় যাতে অম্লতা বৃদ্ধি কমিয়ে আনা যায় কিংবা পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অংশগুলো হলো-
    * প্রতিপালন পাত্র (Rearing Tank ঃ মাছ সংরক্ষণ, বৃদ্ধি ও খাবার প্রয়োগের জন্য।
    * উদ্বৃত্ত খাদ্য জমা হওয়ার কক্ষ (Setting Basin) ঃ ট্যাংকের যে অংশে ছোট-বড় খাদ্য কণা জমা হয়।
    * জৈব-পরিশ্রুত যন্ত্র (Bio-Filter)
    * হাইড্রোপনিক অধঃব্যবস্থাপনা (Hydroponic Sub-System) ঃ এই ব্যবস্থাপনায় গাছ তার যে অংশে (শিকড়ে) অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান পানি থেকে শোষণ করে তাকে হাইড্রোপনিক সাব সিস্টেম বলা হয়ে থাকে।
    * পানি নিষ্কাশন কূপ (Sump) ঃ হাইড্রোপনিক সিস্টেমের তলদেশ যেখান থেকে পানি প্রবাহ শুরু হয়ে প্রতিপালন ট্যাংকে ফিরে আসে।
    এক্যুয়াপনিক্স চাষ ব্যবস্থাপনার আধুনিকরণ নির্ভর করে পরিশীলিত কাঠামো নির্মাণ এবং ব্যয়ের ওপর, তবে কঠিন খাদ্য কণা নির্গমন, জৈব পরিস্রাবন অথবা হাইড্রোপনিক্স সাব সিস্টেমকে একটি ইউনিটে রূপান্তরিত করা যেতে পারে, যা পানি প্রবাহ সরাসরি এক্যুয়াকারচার অংশ হতে হাইড্রোপনিক্স অংশে যেতে পারে।
    হাইড্রোপনিক্স অংশে গাছের শিকড় পানিতে নিমজ্জিত থাকে, এর ফলে শিকড় উদ্বৃত্ত খাদ্য ও মল হতে এমোনিয়া পরিস্রাবণ করে, যা মাছের জন্য পানিতে অম্লতা বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে; ফলে মাছের বিপাক ক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে। পানি যখন হাইড্রোপনিক্স সাব-সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় তখন পানি পরিষ্কার ও অক্সজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় পরবর্তীতে এক্যুয়াকালচার মাছের ট্যাংকে পানি পরিশোধিত হয়ে ফিরে আসে। এভাবে পুনঃসঞ্চালন প্রক্রিয়া বারবার ঘটে থাকে।
    ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
    বাংলাদেশে এক্যুয়াপনিক্স চাষ পদ্ধতি নতুন চালু হয়েছে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ পদ্ধতির চাষ এখনো হয়নি। মৎস্য বিজ্ঞানীদের জানামতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদে ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউটের গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আশানুরূপ ফল পাওয়া  গেছে। এই পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো এটি একটি পরিবেশবান্ধব চাষ ব্যবস্থাপনা; যাতে অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করে ট্যাংকের বা পুকুরের পানি দূষণ করে মাছের স্বাভাবিক উৎপাদন (রাসায়নিক সার ছাড়া) বৃদ্ধি করতে সক্ষম। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে মাছ/সবজি চাষ যদিও একটি নতুন ক্ষেত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে, কিন্তু উন্নত দেশে এই পদ্ধতিতে চাষ অনেক আগে থেকে শুর হয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশে এই পদ্ধতিতে চাষ বাস্তবায়ন প্রোটিনের চাহিদা মেটাবার পাশাপাশি ভোক্তার স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য  ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে চাষ করছি তা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রেইসেবিলিটি চাহিদা মোতাবেক চাষ  করা স্বত্ত্বেও অনেক সময় কৃষি জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ওষুধ অধিক বর্ষনের ফলে খামারের পানিতে মিশে যায়। এতে খামারের মাছে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।       বাধ্য হয়ে আমাদেরকে তখন রাসায়নিক সার/ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়।
    বিশ্বের মধ্যে বাংরাদেশ একটি জলবহুল স্বল্প আয়তনের দেশ। আগামী ২০৫০ সালে এদেশে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মেটাতে দেশ হিমসিম খাবে। বর্তমানে আমরা জনপ্রতি ৬০ গ্রাম প্রাণিজ আমিষ পেয়ে থাকি। দেশে বর্তমানে মৎস্য উৎপাদন ৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০৫০ সালে আগামী প্রজন্মের জন্য কমপক্ষে ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা দূরূহ হবে। বিজ্ঞানীদের একথাটি সত্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৩০ সালে প্রাণিজ প্রোটিনের অভাবে ১০ কোটি লোক বিশ্বে মারা যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের আগাম বার্ত ইলনিনো ও লানিনোর (Lanino) প্রভাব বিজ্ঞানীরা ১০০০ বছর আগে থেকে প্রত্যক্ষ করে আসছেন। মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা ও জলবায়ু পরিবর্তন  মৎস্যকুলের জন্য অশনি সংকেত নিয়ে এসেছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে মৎস্যের ওপর প্রভাব নিরসনে এক্যুয়াপনিক্স চাষ ব্যবস্থাপনা একটি নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। আজ আমাদের ঘরে ঘরে বাড়ীর ছাদে কিংবা বারান্দায় কিংবা গাড়ি পার্কিং এলাকায় খালি জায়গায় এক্যুয়াপনিক্স চাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে প্রাণিজ আমিষ ও টাটকা সবজির চাহিদা মিটাতে পারি। যেহেতু এটি একটি পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি সেহেতু ভোক্তার খাদ্য নিরাপত্তার জরুরি প্রয়োজনে টাটকা শাক-সবজি ও মাছ সরবরাহ করার জন্য পদ্ধতিটি কার্যকর হতে পারে। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তাহলো অসময়ে বন্যা, খরা বা প্রতিকূল পরিবেশের প্রভাবকে মুক্ত রেখে এর চাষ কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এখন থেকে এক্যুয়াপনিক চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, প্রচার ও জনসচেতনা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
    কৃতজ্ঞতা স্বীকার
    বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউট বাস্তবায়িত এক্যুয়াপনিক্স প্রকল্পটি স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রবন্ধটি লেখায় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বিশেষ করে এম জি হোসেনের সাথে আলাপক্রমে প্রকল্পের উদ্দেশ্যাবলী গবেষণার বিভিন্ন দিক ও এক্যুয়াপনিক্স চাষের ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিষয়গুলি প্রবন্ধে বিশদভাবে স্থান পেয়েছে। তাই তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
    এক্যুয়াপনিক্স ও হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতির সহায়ক রচনা পুস্তক ও জার্নলসমূহ:
    1.    Brown, Jamie, Backyard Aquaponics , Smashwords Edition (Barnes and Nobles), 2010.
    2.    Kenyon, Stewart, Hydroponics for the home garden, Toronto: Van Nostrand Reinhold 1979. Print.
    3.    Rakocy, James. “Q and A”. Aquaponic Journal, Mach 2010.
    (Dr. James Rakocy is the Director of the University of the Virgin Island Agricultural Experiment station and has been doing research is aquaponics for over 20 years. Rakocy is one of the founds father in the development of this science.)
    4.    Roberts, Keith, How to do Hydroponics, 4th ed, Vol. 1 Farmingdale: Futuregarden, 2003,
    (This book is more of hydroponics basics guide then Hydroponics for the Home Gardener. Its a reference book when anybody building his own  hydroponic system. Great plumping guides and useful parts lists to each system that is displayed in this book.)
    ৫। ড. এ.এ সালাম ও শাহরিয়ার হাশেম, (২০১২); একুয়াপনিক্স মাধ্যমে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ (৭-১৩ জুলাই), পৃষ্ঠা ৭৩-৭৫।
    ৬। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউটের এক্যুয়াপনিক্স প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে
    ৭।  ইন্টারনেট থেকে প্রাসংগিক তথ্যাদি।

     

    পাওয়া সমন্বিত এই পদ্ধতি সমন্ধে ড. সালাম বলেন, বাড়ীর আঙিনায় বা বাসার ছাদের আয়তনের উপর নির্ভর করে যেকোন আকারের প্লাস্টিক ট্যাঙ্ক অথবা ড্রামের মধ্যে পানি দিয়ে সেখানে তেলাপিয়া, মাগুর, কই, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন দেশীয় জাতের মাছ চাষ করেন। আর সবজি চাষের জন্য একটি কাঠের আলনা তৈরী করে তাতে তিন সারিতে উল্টো করে একটির নিচে আরেকটি দুইপাশে কাটা প্লাস্টিকের বোতল বসিয়ে তাতে নুড়ি পাথর দিয়ে সবজির চারা লাগাতে হবে। এবার মাছের ট্যাঙ্কের পানি বালতি করে উপরে তুলে সেখান থেকে সাইফোন প্রক্রিয়ায় ফোটাফোটা করে উপরের ওই চারা লাগানো বোতলে সরবরাহ করতে হবে। এই পানি পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচে আরও দুটি বোতলের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে একটি পাত্রে এসে জমা হয় যা পুণরায় মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে মাছের ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া  সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙ্গে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিণত করে পানিকে দূষণ মুক্ত করে এবং ওই পানিকে পুণরায় মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী শাকসবজি চাষ করা যায়। তবে টমেটো, শসা, করোল্লা, শিম, ব্রকলি, পুদিনা, বেগুন, দেশী লেটুসসহ আমেরিকান লেটুস ফলন বেশ ভাল হয়।
    মাছকে কি রকমের খাবার দিতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সালাম বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য বাড়তি কোন প্রকার সার বা মাটির প্রয়োজন না পড়লেও মাছকে আলাদা খাদ্য বাইরে থেকে সরবরাহ করতে হবে। বাজার থেকে কিনে মাছকে যাতে খাদ্য দিতে না হয়, সেজন্য আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো “কালো সৈনিক” পোকার লার্ভা মাছের প্রিয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি মাছের খুবই প্রিয় খাবার। এতে প্রচুর প্রোটিন, লিপিড এবং বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবন রয়েছে যা মাছের দ্রুত বর্ধনে সাহায্য করে।
    নতুন এই প্রযুক্তি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে ড. সালাম বলেন, যেহেতু প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের চাষাবাদের জন্য জমির পরিমাণ কমছে তাই উলম্ব পদ্ধতিটি অনেকাংশে আমাদের সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করছি। কারণ, উলম্ব পদ্ধতিতে একই জায়গায় অনেকগুলো ফসল একসাথে উৎপাদন করা যায়। এর ফলে একদিকে যেমন জমির পরিমাণের উপর চিন্তা করতে হচ্ছে না, অন্যদিকে কীটনাশক ও রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থেও হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তাছাড়া খরচ ও জায়গা কম লাগায় এই পদ্ধতির মাধ্যমে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

    0 comments:

    Post a Comment