Friday, July 21, 2017

Tagged Under: , , , ,

রংপুরে ১০ বছরে পোলট্রি শিল্প ১০ গুণ

  • Share The Gag
  • রংপুরে ১০ বছরে পোলট্রি শিল্প ১০ গুণ

    রংপুর বিভাগে পোলট্রি শিল্পের গত ১০ বছরে প্রসার হয়েছে ১০ গুণের বেশি। এ অঞ্চলের বর্তমান বাজারে যে পরিমাণ ডিম, মুরগি, বাচ্চা ও ফিডের প্রয়োজন তার প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জোগান হচ্ছে এখান থেকে। এ শিল্পে বিভাগে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪০০ কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ হয়েছে। তবে চলতি বাজেটে পোলট্রি শিল্পের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করায় এ শিল্পের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

    রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বিভাগে মুরগির খামার রয়েছে ৬ হাজার ১৩৯টি। এর মধ্যে লেয়ার ২ হাজার ৩৭৯টি এবং ব্রয়লার ৩ হাজার ৭৬০টি। একটি মাঝারি মানের মুরগির খামার করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। রক্ষণাবেক্ষণ করতে কমপক্ষে ১৫ জন জনবল কাজ করে। সে হিসাবে এ শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৪০০ কোটি টাকার ওপর। কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখ মানুষের।

    এ বিভাগে মোট মুরগির সংখ্যা ২ কোটি ৮৮ লাখ ১ হাজার ৭৭৯টি এবং হাঁসের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪২টি। আমিষের চাহিদা পূরণ ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে একজন মানুষের বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। বিভাগে ডিমের চাহিদা রয়েছে ১৬২ কোটি পিস। গত অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪৩ কোটি পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪০ কোটি পিস। ১০ বছর আগে এর উৎপাদন ছিল ১০ ভাগের এক ভাগ। এসব বিষয় জানিয়েছেন রংপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

    অপরদিকে এ বিভাগের ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষের মাংসের চাহিদা রয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার টন। প্রতিদিন একজন মানুষের মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১১০ গ্রাম। বছরে এ অঞ্চলে মাংস উৎপাদন হচ্ছে ৬ লাখ ২ হাজার টন। এর মধ্যে মুরগির মাংস খায় বছরে গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৬৫ কেজি। একজন মানুষের প্রতিদিন দুধের চাহিদা প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম। সেই হিসাবে বছরে দুধের চাহিদা ১৪ লাখ টন। গত অর্থবছরে রংপুরে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ টন। দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে এ শিল্প এই অঞ্চলে অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

    খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে বার্ড ফ্লুর ভয়াবহ সংক্রমণে রংপুরে এ শিল্পের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খামার বন্ধ হয়ে গেলেও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে। পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে পরিচালনা, পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ এবং খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমের সুবাদে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ব্যবসা পরচিালনা করে হাজার হাজার উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

    কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে পোলট্রি শিল্পে ১০ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করায় এ শিল্প অগ্রসরে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পোলট্রি মুরগির মাংসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব চেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে প্যাকেটজাত পোলট্রি ফিডের। মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির পর মধ্যবিত্তের খাবার হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল পোলট্রি মুরগির মাংস। ভ্যাট নির্ধারণ ও দাম বৃদ্ধির ফলে প্যাকেটজাত পোলট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ, যারা মাংসের স্বাদ পেতে পোলট্রিনির্ভর হয়ে পড়েছিল এখন অনেকেই মুরগির মাংসের স্বাদ নিতে ভুলে যাবে। ঝুঁকিতে পড়বে পোলট্রি শিল্প। এর বিপরীতে যেসব সাধারণ মানুষ পোলট্রির ওপর নির্ভর করত তাদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বিকল্প উৎসের খোঁজ করতে হবে।

    রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের উপপরিচালক মীর ফারুক হোসেন জানান, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত ১০ বছরে পোলট্রি শিল্প এ অঞ্চলে ১০ গুণ বেড়েছে। এ শিল্পের বিকাশের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পোলট্রি খাদ্য থেকে শুরু করে এ শিল্পের ওপর নির্ভর সব ধরনের পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত।

    রংপুর পোলট্রি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আকবর হোসেন জানান, সরকার অযৌক্তিকভাবে বাজেটে এ শিল্পের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট চাপিয়ে দিয়েছে। এতে উদীয়মান শিল্পটি হোঁচট খাচ্ছে। তিনি সরকারের প্রতি এই ভ্যাট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

    0 comments:

    Post a Comment