Thursday, April 28, 2016

Tagged Under: , , , , , ,

১৩ লাখ টন ধান-চাল কিনবে সরকার

  • Share The Gag
  • বরাবরের মতো আসন্ন বোরো মৌসুমে সরকার ধান-চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী এবার ৭ লাখ টন ধান ও ৬ লাখ টন চাল কেনা হবে। গত বছর ধান কেনা হয়েছিল এক লাখ টন। এবার ৭ লাখ টন ধান কেনা হবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এবং চাল কেনা হবে চাতাল মালিকদের কাছ থেকে। আগামী ৫ মে থেকে দেশের সবচেয়ে বড় এই খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। শেষ করার কথা রয়েছে আগামী আগস্টের মধ্যে। মাঠপর্যায়ের চিত্র বলছে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে ধানের দাম পড়ে গেছে। এ অবস্থায় কৃষকরা যাতে ধানের বাড়তি দাম পায় এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যেই প্রণোদনা হিসেবে সরকারের এই ক্রয় অভিযান।

    এদিকে, এই ধান-চাল কিনে গুদামজাত করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা বর্তমানে সরকারি গুদামে নেই। জায়গা আছে মাত্র ৮ লাখ টনের। বাকি ৫ লাখ টনের জায়গা দখল করে আছে পুরনো খাদ্যশস্য। ফলে ঘোষণা দিলেও সরকার স্থানের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল কিনতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

    সাবেক কৃষি সচিব ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জা এ. জলিল গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ক্রয় প্রক্রিয়া শুরুর আগেই জায়গা বের করা অপরিহার্য। আর তা না হলে সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে চাল নয়, ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে এবং সব সময় তা-ই করে থাকে। কিন্তু তাতে কৃষকের কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশে সিংহভাগ কৃষকই বর্গাচাষি। তারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ধান উৎপাদন করে। অভিজ্ঞতা বলে, ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে মহাজনও দাদনের টাকা সুদ-আসলসহ আদায় করতে হাজির হয় কৃষকের বাড়িতে এবং কৃষকও বাধ্য হয়ে তাদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে এসেছে। এখনো তা-ই হবে বলে আমি মনে করি।

    কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত উৎপাদিত ধান সংরক্ষণের সুযোগ কৃষকের নেই। দ্বিতীয়ত, মহাজনের টাকা শোধ করা। সমাধান হিসেবে সাবেক এই কৃষি সচিবের পরামর্শ, সরকার যদি প্রান্তিক পর্যায়ে মিনি কোল্ডস্টোরেজ অথবা খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে মৌসুমের শুরুতে কৃষকের ধান সংরক্ষণ করে তাদের (কৃষকের) মহাজনের টাকা শোধের ব্যবস্থা করে এবং পরে দাম বাড়লে ধীরে ধীরে কৃষকের মজুদ করা ধান বিক্রি করে, তবেই তারা ন্যায্যমূল্য পাবে। আক্ষেপ করে এই কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেন, আমরা বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করি কিন্তু বলি না যে কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

    খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, সরকার চাহিদামতো ধান কিনতে পারলেও চাল রাখার প্রয়োজনীয় জায়গা গুদামে নেই। অতীতেও স্থান সংকটের কারণে ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে দেরিতে। আর দেরির কারণে প্রান্তিক চাষির হাত বদলে ধান চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। ফলে ধান কেনার পরিমাণ বেশি হলেও তা এবার কৃষককে কতটা লাভবান করবে সে প্রশ্ন কৃষি বিশেষজ্ঞদের। তাদের অভিমত, ধান পাওয়া যাচ্ছে না এমন অজুহাতে ক্রয় মৌসুমেই ধানের বদলে চাল কেনার ঘোষণা আসার সম্ভাবনা উজ্জ্ব¡ল। ফলে আগের মতোই লোকসানের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হচ্ছে কৃষকদের।

    খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ’৯২ সালের পর এবারই সরকার বেশি পরিমাণে (৭ লাখ টন) ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, ৭ লাখ টন ধান সরকারি গুদামের সাড়ে ১০ লাখ টন পণ্যের স্থান দখল করে। বর্তমানে খাদ্য বিভাগের মালিকানায় ৬৩৫টি এলএসডি, ১২টি সিএসডি, ৫টি সাইলো ও ১টি মাল্টি স্টোরেড কোল্ডস্টোর রয়েছে। এতে সর্বসাকল্যে ১৭ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা সম্ভব। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের হাতে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ রাখার কথা। সেই হিসাবে সন্তোষজনক মজুদ রয়েছে বলে খাদ্য বিভাগের দাবি।

    0 comments:

    Post a Comment