Monday, October 24, 2016

Tagged Under: , ,

শাহী পেঁপে বিস্তারিত ও চাষাবাদ

  • Share The Gag
  • শাহী পেঁপে:::

    বৈশিষ্ট্য : উচ্চ ফলনশীল একলিঙ্গী জাত। গাছের উচচতা ১.৬-২.০ মি., কান্ডের খুব নীচু থেকে ফল ধরা শুরু হয়। ফল ডিম্বাকৃতির, ফলের ওজন ৮০০-১০০০ গ্রাম, ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা ৫০০-৫৫০ টি। শাসের পুরুত্ব ২ সে.মি., রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। ফল মিষ্টি (ব্রিক্সমান ১২%) ও সুস্বাদু।

    উপযোগী এলাকা : দেশের সর্বত্র চাষ উপযোগী।
    বপনের সময় : আশ্বিন(সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এবং পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাস পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময়। বপনের ৪০-৫০ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী হয়।

    মাড়াইয়ের সময়: সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ফলের কষ যখন হালকা হয়ে আসে এবং জলীয়ভাব ধারণ করে তখন পেঁপে সংগ্রহ করা উত্তম। অন্য দিকে ফলের গায়ে যখন হালকা হলুদ রং দেখা দেবে তখন ফল হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

    শাহী পেঁপের রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা::

    রোগবালাই::
    চারা ঢলে পড়া ও কান্ড পঁচা রোগঃ মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে বীজতলায় চারা ঢলে পড়া এবং বর্ষাকালে কান্ডপচা রোগ দেখা দিতে পারে।

    এ্যানথ্রাকনোজঃ এ রোগের কারণে ফলের গায়ে বাদামী পচন রোগ দেখা দেয়। ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।

    পেঁপের মোজাইকঃ এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ হলে পাতায় হলুদ রং এর ছোপ ছোপ দাগ পড়ে, পাতার বোঁটা বেঁকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। বিভিন্ন ধরনের জাব পোকা দ্বারা এ রোগ ছড়ায়।

    পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাসঃ এ রোগ হলে পাতা কুঁকড়িয়ে এবং মুচড়িয়ে যায় এবং পত্রফলক ছোট হয়ে যায়। আক্রমণ তীব্র হলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। জাব পোকার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।

    শিকড়গীট রোগঃ এটি কৃমিজনিত রোগ। আক্রান্ত শিকড় ফুলে উঠে এবং গীটের সৃষ্টি করে। গাছ দূর্বল, খাট ও হলুদাভ হয়ে পড়ে। সাধারণত আক্রান্ত চারা, বৃষ্টি বা সেচের পানি ও কৃষি যন্ত্রপাতির সাহায্যে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

    দমন ব্যবস্থা:

    চারা ঢলে পড়া ও কান্ড পঁচা রোগপ্রতিকারঃ এ রোগ প্রতিকারের তেমন সুযোগ থাকে না। তাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা উত্তম। আশ্বিন (সেপ্টেমবর-অক্টোবর) মাসে বীজতলা তৈরি করতে হলে বীজ বপনের পূর্বে বীজতলার মাটি ভালভাবে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সিকিউর নামক ছত্রাকনাশক ২-৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। জমি তৈরির পর ৬ সে.মি. পুরু করে শুকনো কাঠের গুড়া বা ধানের তুষ বীজতলায় বিছিয়ে পোড়াতে হবে। পরে মাটি কুপিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় হেক্টরে ৫ টন হারে আধাপঁচা মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করতে হবে। বীজবপনের পূর্বে ১৫-২১ দিন জমিতে বিষ্ঠা পঁচানোর পর বীজ বপন করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে সিকিউর মিশিয়ে ড্রেঞ্চিং করে এ রোগের বিস্তার কমানো যায়। চারা লাগানোর ৩ সপ্তাহ পূর্বে হেক্টর প্রতি ৩ টন আধা পঁচা মুরগীর বিষ্ঠা অথবা ৩০০ কেজি খৈল জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশাতে হবে। এতে কান্ডপঁচা রোগের উপদ্রব কম হবে।

    এ্যানথ্রাকনোজ প্রতিকারঃ নোইন/ব্যাভিস্টিন/কেডাজিম প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২/৩ বার ফলের গায়ে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।

    পেঁপের মোজাইক,পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ নিয়ন্ত্রণঃ আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ বিস্তারকারী পোকা দমনের মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।

    শিকড়গীট রোগঃ

    প্রতিকারঃ শুষ্ক মৌসুমে জমি পতিত রেখে ২/৩ বার চাষ দিয়ে মাটি ওলট-পালট করে দেওয়া। রোপণের সময় গর্ত প্রতি ২৫ গ্রাম ফুরাডান ৫ জি প্রয়োগ করা। আধা পঁচা মুরগীর বিষ্ঠা ৩ টন/হেক্টর বা সরিষার খৈল ৩০০ কেজি/হেক্টর চারা লাগানোর ৩ সপ্তাহ পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মিশাতে হবে

    পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা

    পোকামাকড়::

    মিলি বাগঃ সাম্প্রতিক সময়ে মিলি বাগ পেঁপের একটি মারাত্বক পোকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আক্রান্ত পাতা ও ফলে সাদা পাউডারের মত আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ফলে শুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে গাছ মারা যেতে পারে।

    দমন ব্যবস্থা::

    মিলি বাগ প্রতিকারঃ আক্রমনের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা/কান্ড সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে অথবা পুরাতন টুথব্রাশ দিয়ে আঁচড়িয়ে পোকা মাটিতে ফেলে মেরে ফেলতে হবে।আক্রমণ বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবান পানি অথবা এডমায়ার ২০০এসএল ০.২৫ মি.লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

    সার ব্যবস্থাপনা:::

    ভাল ফলন পেতে হলে পেঁপেতে সময়মত সার প্রয়োগ করতে হবে। উপরি হিসেবে গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর হতে প্রতি মাসে গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসার পর এই মাত্রা দ্বিগুণ করতে হবে। মাটিতে রস না থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

    তথ্য সহযোগিতায়: বারি, জয়দেবপুর, গাজিপুর।

    0 comments:

    Post a Comment