Thursday, February 11, 2016

Tagged Under: , , ,

খরগোশের গোশ্ত হালাল না হারাম?

  • Share The Gag
  • বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল কৃষি প্রধান দেশ, যার লোক সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্য ও প্রাণিজ আমিষের চাহিদা। এ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সর্বাত্বক সচেষ্ট হতে হবে। আমরা সবাই জানি যে, প্রাণিজ আমিষ অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ একটা পুষ্টি উপাদান যা মানুষের দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও বংশবিস্তারের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দেশে প্রাণিজ আমিষের সিংহভাগই আসে পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত ডিম ও গোশ্ত থেকে, কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বার্ড ফ্লু (Avian influenza) এর ভয়াল থাবায় ক্রমাগত ধ্বংশের মুখে পতিত হচ্ছে এ উদীয়মান শিল্পটি; মাত্র এক দশকে ধাঁই ধাঁই করে বেড়ে উঠা সমৃদ্ধশালী এ শিল্পটি বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলশ্র“তিতে, প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদার চাপ আরো বহুগুণে বেড়ে গেছে, দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে এর মারাত্মক প্রভাব। এমতাবস্থায়, ক্রমবর্ধমান আমিষের চাহিদা পূরণে আমাদেরকে বিকল্প প্রাণিজ আমিষের কথা ভাবতে হবে। কিছু দিন পূর্বে  জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বিশ্ববাসীকে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে পোকা-মাকড় খাওয়ার অভ্যাস করতে পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা  বিশ্বের অনেক অনুন্নত দেশেই প্রাণিজ আমিষের অভাবে প্রতি বছর লাখ লাখ লোক মারা যাচ্ছে। সোমালিয়ার মতো মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অনেক অনুন্নত দেশসমূহে এ সমস্যা আরো ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশের লোকজনই পোকা মাকড়, সাপ, বিচ্ছ, কুকুরসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণি যেমন- অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক, হাঙ্গর, শীল, ডলফিন, ইত্যাদি খেয়ে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের লোকজন ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার (হালাল-হারাম) কারণে এসব প্রাণি খেতে পারে না। তবে ১৬ কোটি মানুষের এদেশে আর যাই হোক পোকামাকড় না খেয়েও আমরা বিকল্প হিসেবে খরগোশের গোশ্ত খাওয়ার অভ্যাস করে প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোসহ মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই খরগোশের গোশ্ত দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেননা কোরআন হাদিসের আলোকে খরগোশের গোশ্ত খাওয়া সম্পূর্ন রূপে হালাল (পশু-পাখির হালাল হারাম বিধানের রহস্য, দৈনিক কালের কন্ঠ, তারিখ: ২৮/০৬/২০১৩ ইং)। তবুও, অনেকে খরগোশের গোশ্ত খাওয়াকে হারাম বলে মনে করেন। আবার অনেকে বলেন, শুধু মাত্র বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট (ছাগল বা হরিণের পায়ের মত) খরগোশের গোশ্ত খাওয়া হালাল, আর বিড়ালের পায়ের মত থাবা বিশিষ্ট খরগোশ হারাম। যা একটা প্রচলিত কুসংস্কার ব্যতীত আর কিছুই নয়। Canadian Executive Service Organization (CESO)  এর বর্ণনা মতে, বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট খরগোশের অস্তিত্ব নিছক একটা কাল্পনিক ও ভৌতিক গল্প, তাদের মতে Lagomorphs শ্রেণীর ইউরোপিয়ান বন্য খরগোশের (Oryctolagus cuniculus) পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট নয়, থাবা বিশিষ্ট। প্রকৃতিগত ভাবেই খরগোশ বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট প্রাণি নয়। প্রকৃত পক্ষে ছাগল বা হরিণের পায়ের মত বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট কোন জাতের খরগোশের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নাই বা কোন কালে ছিলও না। প্রাকৃতিক ভাবে বা কৃত্রিম উপায়ে যদি হরিণের সঙ্গে খরগোশের মিলন ঘটানো (Species hybridization) হয়, তবেই কেবলমাত্র হরিণ ও খরগোশের মাঝামাঝি এক ধরনের বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট উদ্ভট প্রাণির জন্ম হতে পারে, যা খচ্চর জাতীয় প্রাণির মতই বন্ধ্যা হয় (ছবি-১)। অন্যদিকে, পৃথিবীর অনেক দেশের মত আমাদের দেশের বনজঙ্গলেও এক সময় ছোট জাতের হরিণ (Pudu) বাস করত যারা

    এরা শিকারী প্রাণির হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কান দু’টো খাড়া রেখে সদা সতর্ক থাকত। এরা কখনো কখনো খরগোশের মতো চুপিসারে বসে বসে ঘাস, লতাপাতা খেত।

    এমতাবস্থায় দূর থেকে দেখে হয়তবা কেউ কেউ এদেরকে খরগোশ ভেবে ভুল করতে পারেন।

    সাম্প্রতিক কালে মারা নামের ইঁদুর গোত্রীয় এক ধরনের প্রাণির অস্তিত্ব মিলেছে, যাদের পিছনের পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট এবং দেখতে কিছুটা খরগোশের মত (ছবি-৩)। যা হোক, কোন প্রাণির পায়ের গঠনের উপর ভিত্তি করে হারাম-হালাল নির্ধারিত হয় না। কেননা শুকরের পা বিভক্ত ক্ষুর বিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের জন্য এর গোশ্ত খাওয়া হারাম করা হয়েছে। মাছ ব্যতীত মৃত প্রাণির গোশ্ত, শুকর ও গৃহপালিত গাধার গোশ্ত এবং প্রাণির রক্ত, ইত্যাদি খাওয়া হারাম (সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং ৫৩)। এছাড়াও যেসব হিং¯এর পশু পাখি লম্বা ছেদন দাঁত  বা বিষ দাঁত অথবা থাবা বা নখর দ্বারা অন্য পশু পাখি শিকার করে বা পঁচা গলা জীবজন্তু ভক্ষন করে বেঁচে থাকে তাদের গোশ্ত খাওয়া সম্পূর্ণ রূপে হারাম। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে খরগোশ একটা অত্যন্ত শান্ত ও নিরিহ প্রকৃতির প্রাণি যা মোটেই হিং এর নয়। এরা ছাগল ভেড়া ও গরু মহিষের মতই সম্পূর্ণ তৃণভোজী প্রাণি অর্থাৎ ঘাস, লতাপাতা, গাছের কচি অংশ, শাক সবজি খেয়ে জীবন ধারণ করে। এরা কখনোই অন্য কোন পশু পাখি শিকার করে না, এমনকি পোকা মাকড় পর্যন্তও খায় না। সুতরাং উপরোক্ত যুক্তি প্রমাণাদি বিশ্লেষণে বলা যায় যে, ইসলামী শরিআহ্ মোতাবেক আল্লাহর নামে জবাই করা খরগোশের গোশ্ত খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল।

    লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান

    জেনেটিক্স এন্ড এ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগ

    হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

    1 comments:

    1. আব্দুল্লাহ আল বাংগালীJune 21, 2017 at 4:49 AM

      পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের সীমান্তবর্তী পাহাড়ে ছাগখরগোশ পাওয়া যায়। মুর্খ ও অলস ব্যক্তিদের মত না জেনে মন্তব্য করা উচিত। কিতাবী বক্তব্য বাদ দিয়ে মাঠে সরজমিন যাচাই করুন। সফল না হলেও বাথের ব্যাথা উপশম হবে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।

      ReplyDelete