বাড়ির ছাদে বারমাসী আমড়া চাষ পদ্ধতি
আমড়া চাষ তাও আবার বাড়ির ছাদে। শুনতে অবাক লাগলেও তা থেকে আপনি পেতেপারেন বাড়তি আয়। ছাদে উপর টবে অতি সহজেই বারমাসী আমড়ার চাষ করা যায়। একটি কলমের চারা থেকে মাত্র এক বৎসরের মধ্যেই ফল পাওয়া সম্ভব। আমড়ার চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ। বীজ থেকেও চারা করে টবে লাগানো যায়। এক্ষেত্রে ২-৩ বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় । টবে লাগানোর জন্য কলমের চারাই বেশী ভাল। আমড়াতে প্রচুর ভিটামিন সি বিদ্যমান ।
আমড়ার চাষ পদ্ধতি:
ছাদে আমড়ার চারা লাগানোর জন্য ২০ ইঞ্চি কালার ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে। ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে। যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। টব বা ড্রামের গাছটিকে ছাদের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সবসময় রোদ থাকে। এবার ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২ কেজি কাঠের ছাই এবং ২০০ গ্রাম হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন। অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন একইভাবে রেখে দিতে হবে। মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সবল সুস্থ কলমের চারা সেই টবে রোপন করতে হবে। চারা রোপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়া যেন মাটি থেকে আলাদা না হয়ে যায়। চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে। সেইসঙ্গে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে। যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশি পানি না ঢুকতে পারে। একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর থেকে অল্প অল্প করে পানি দিতে হবে। আমড়া গাছ পানি জমে থাকা একদম পছন্দ করে না। কাজেই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। টবে পানি জমে গেলে তাৎক্ষণিক নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা:
আমড়া গাছের চারা লাগানোর ৬/৭ মাস পর থেকে ৩০-৪০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে। সরিষার খৈল ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। ১ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকরসহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে। মাটি পরিবর্তনের এই কাজটি সাধারণত বর্ষার শেষ এবং শীতের আগে করলেই ভালো হয়। গাছের মরা ডালপালা ছেটে দিতে হবে। ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা খুঁচিয়ে দিতে হবে।
ডাল ছাটাই:
আমড়া গাছের রোগ-বালাই যুক্ত শুকনো ও মরা ডাল কেটে দিতে হবে। এছাড়াও অপ্রয়োজনীয় ডাল কেটে দিতে হবে।
রোগজীবাণু ও পোকামাকড়:
আমড়াগাছে প্রায়ই একধরনের ছোট মাকড়সা আক্রমণ করে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এতে পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। এর জন্য মাঝে মাঝে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। তা ছাড়াও ফল যখন ছোট থাকে তখন মাছি পোকার আক্রমন হতে পারে । এজন্য বিষ টোপ ব্যবহার করা ভাল। বর্ষাকালে ছত্রাক আক্রান্ত যাতে না করতে পারে সেজন্য বর্ষার পূর্বেই কয়েকবার ভাল ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা উচিৎ।
প্রতিকার:
১. পোকার সংখ্যা কম হলে হাত বাছাই করে মারতে হবে।
২. ছের নিচে ঝড়ে পরা মরা পাতা ও আবর্জনা আগুনের পুড়িয়ে নষ্ট করতে হবে।
৩. এছাড়া কীটনাশক ব্যবহার করে এ পোকা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমড়া গাছে যেকোন রোগ বা পোকার আক্রমন দেখা দিলে তা দমন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই নিয়ম মত কাজ করতে পারলে বারমাসী আমড়া গাছে সাড়া বছরই আমড়া পাওয়া যাবে। বারমাসী এ আমড়ার চাষ করে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয় করা সম্ভব।
Thursday, May 11, 2017
Tagged Under: কৃষি তথ্য, কৃষির তথ্য, চাষাবাদ, ছাঁদে বাগান, নগর কৃষি, ফল চাষ, বাড়ির ছাদে বারমাসী আমড়া চাষ, বারমাসী আমড়া
বাড়ির ছাদে বারমাসী আমড়া চাষ
By:
এক ঘরে সব কিছু
On: 2:45 AM
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment